#তুমি_আমার_অভিমান❤
|| পর্ব – ২৩ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি
তিন সাপ্তাহ ধরে অভিক নিখোঁজ। হঠাৎ একদিন না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় অভিক। তারপর আর তার দেখা মেলেনি। ফাহাদ থানায় ডায়েরি করে এসেছে। কিন্তু পুলিশরা এখনো অভিকের খোঁজ পায়নি। নীরা কেঁদে কেঁদে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। বারবার অভিকের শার্ট জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। নীরা এখন ফাহাদের বাসায়। অভিক নিখোঁজ হওয়ার দিন বারবার নীরার দিকে তাকিয়ে ছিল। নীরাকে শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরে চলে গেল।
নীরা অভিকের জামা কাপড় নিয়ে বসে আছে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না। প্রীতি নীরাকে দেখতে এসে দেখে নীরা একমনে কি যেন ভাবছে। প্রীতি নীরার কাছে গিয়ে বলে,
‘এভাবে নিজের ক্ষতি করে কি পাচ্ছ তুমি? তুমি কি এখন একা? তোমার মধ্যে আর একজনের অস্তিত্ব আছে। তার কথা তোমাকে ভাবতে হবে। নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করলে বেবির কি হবে?’
নীরা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
‘কিচ্ছু খাবো না আমি।’
‘আপু জেদ করো না। অভিক ভাইয়া ফিরে আসবে তুমি দেখো।’
‘আমি জানি উনি আসবেন। কিন্তু এভাবে আমাকে কষ্ট না দিয়ে মেরে ফেলে যেতেই তো পারতেন।’
‘আপুউউ!’
ফাহাদের মা এসে বুঝিয়ে নীরাকে খাইয়ে দেয়। রাতে ঘুমানোর সময় অভিকের শার্ট বুকে জড়িয়ে ঘুমায় নীরা। চোখের পানি বাঁধাহীন পড়ে।
এদিকে অভিকের অফিসের নতুন ম্যানেজার এসে নীরার কাছ থেকে সাইন নিতে যায়৷ অফিসের বিষয়ে কথা বলতে আসে। কিন্তু নীরা তাকে জানায় অফিসের দায়িত্ব এখন সে নিতে পারবে না। যতদিন না সে দায়িত্ব নিচ্ছে, ততদিন যেন ম্যানেজার সব দেখে রাখে। ম্যানেজারও নীরার কথায় শুধু চেক সাইন করাতে নিয়ে আসে।
.
দেখতে দেখতে আজকে নীরার প্রেগন্যান্সির ৯ মাস সাতাশ দিন। ইয়া বড় একটা পেট নিয়ে বসে আছে সে হসপিটালের কেবিনে। প্রচন্ড পেইন উঠায় তাকে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। আজ তার ডেলিভারি করানো হবে। এই মুহুর্তে অভিককে বড্ড বেশি মনে পড়ছে তার। এই সময় মেয়েরা তার স্বামীকেই পাশে খুঁজে। স্বামীর দিকে তাকিয়ে মরতেও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু এখন নীরার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তার বেবিকে কে দেখবে? অভিককে কি আর এই জন্মেও দেখা হবে না তার? তবুও নীরা আশা ছাড়ে না। নীরা বিশ্বাস করে অভিক একদিন ঠিক তার কাছে ফিরে আসবে। আর এর জন্য নীরাকে বেঁচে থাকতেই হবে।
.
নীরার কোল আলো করে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়। নরমাল ডেলিভারি হয়েছে নীরার। নিজের ছেলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। চোখগুলো একদম অভিকের মতো হয়েছে। নাকটা নীরার মতো। ঠোঁট আর মুখটাও অভিকের মতো। নীরা মুচকি হাসে।
এদিকে ফাহাদ ছোটাছুটি করছে কেবিনে কেবিনে। নীরার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে অনেক খুশি হয় ফাহাদ। ফাহাদ বলে,
‘আমি চাচু হয়েছি! এই দেখো নীরা অভিকের মতো দেখতে হয়েছে একদম।’
নীরা হাসে। তাদের বেবিকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল অভিকের। অভিক এটাও বলেছিল যে সে খুব যত্ন নিবে। কিন্তু তার আগেই তো সব শেষ হয় গেল। অভিক হারিয়ে গেল। নীরা এসব ভেবে চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি ফেলল।
.
দু মাস পর নীরা তাদের বাসায় চলে আসে। ফাহাদকে বলে দুটো ভালো সার্ভেন্ট ঠিক করে রেখেছে সে। নীরা চায় বাকি জীবনটা এই বাড়িতে থেকেই কেটে যাক। এ বাড়িতে অভিকের সব স্মৃতি আছে। নীরা ভাবে যে সে এবার থেকে অভিকের অফিসে যাবে। অভিকের অফিসের দায়িত্ব নিবে।
.
আজ নীরা অফিসে যাবে। একটা শাড়ি পরেছে পিনাপ করে। বেবিকে ঘুম পাড়িয়ে সার্ভেন্ট এর কাছে দায়িত্ব দিয়ে যায় দেখে রাখার। বেবির নাম রেখেছে শুভ্র।
অফিসে যেতেই সবাই তাকে ফুল দিয়ে অভর্থনা জানায়। নীরা আস্তে করে অভিকের কেবিনে ঢুকে। চারদিকে চোখ বোলাতেই তার মনে পড়ে যায় অভিকের সাথে কাটানো সব মুহুর্তের কথা। এই কেবিনে তাদের কত ঝগড়া হয়েছিল। কত রাগ অভিমান আর খুনসুটির মাঝে কেটেছিল তাদের দিন। নীরা অভিকের চেয়ারে গিয়ে বসে।
অফিসে বসে কাজ করছিল নীরা। তখনই অফিসের ম্যানেজার এসে নীরাকে একটা খবরের কাগজ এগিয়ে দেয়। নীরা ভ্রু কুচকে তাকায়। ম্যানেজার বলে,
‘আপনাদের আগের ম্যানেজারকে যে খুন করেছে তাকে কেউ জঘন্যভাবে মেরে কেটে টুকরো টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে।’
নীরা এ কথা শোনা মাত্রই ধপ করে চেয়ার থেকে উঠে যায়। নীরা পেপার পড়তে থাকে। একজন মাফিয়াকে কে বা কারা যেন কেটে জঙ্গলে ফেলে এসেছে। নীরা জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি কিভাবে জানলেন যে আমাদের ম্যানেজারকে ইনি মেরেছেন?’
‘শুধু ম্যানেজার নয়। শুভ্র স্যার কেও ইনি মেরেছিলেন। অভিক স্যার আর আপনার উপর ইনিই আক্রমণ করেছেন।’
‘এসব কি বলছেন আপনি? আপনাকে এসব কে বলেছে?’
‘অভিক স্যার যাওয়ার আগে সব তথ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু কে মেরেছে তা জানতাম না। পরে বের করেছি।’
‘আচ্ছা, এখন যিনি এই লোকটা কে মেরেছেন তিনি কি আবারও আমাদের ক্ষতি করবেন?’
‘সেটা বলতে পারছিনা। তবে আপনাদের উপকারই করেছেন জানা মতে। আর একটা জিনিস আপনাকে দেখানোর আছে ম্যাম।’
‘কি?’
‘আপনার ড্রয়ারটা খুলে দেখুন।’
নীরা ড্রয়ার খুলে একটা খাম দেখতে পায়। খামটা খুলে কয়েকটা ছবি পায়। ওগুলোতে চোখ পড়তেই নীরা চোখ বন্ধ করে ফেলে। কি বিশ্রী! পুরাতন ম্যানেজার এর গলা কাটা লাশেত ছবি সেগুলো। নীরা ওগুলো ফেলে দেয়। নতুন ম্যানেজার বলে।
‘ভয় পাবেন না ম্যাম। এখন থেকে একটিভ থাকবেন। অফিসের কাজ করবেন। এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। অভিক স্যার একদিন ঠিক ফিরে আসবেন।’
ম্যানেজার এসব বলেই চলে গেল। নীরা তার কাজে মন দিল। তাকে অভিকের স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। এই কোম্পানিকে সে অনেক দূর নিয়ে যাবে। অভিক একদিন ফিরে আসবেই।
চলবে…
( কেমন দিলাম? এখনো আরও প্যাঁচ লাগানো বাকি। 😚)