তুমি আমার অভিমান পর্ব ২

0
2887

#তুমি_আমার_অভিমান❤
|| পর্ব – ২ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

পরদিন অফিসে নীরা সঠিক সময়ে এসে পৌঁছায়। সবার সাথে বসে নিজের কাজ করতে ব্যস্ত সে। অন্যদিকে অভিক এখনো আসেনি। নীরা অভিকের চিন্তা মাথা থেকেই বের করে দিয়েছে।
.
অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর একজন দৌড়ে এসে সবাইকে বলতে লাগলো,

‘অভিক স্যার! অভিক স্যার এসেছেন।’

নীরা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে সবাই পরিপাটি হয়ে চুপচাপ নিজের কাজে মন দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর অভিক আসলেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নীরা দাঁড়ায় না। অভিক আজ ব্ল্যাক জিন্স আর ব্ল্যাক ইন করা শার্ট পড়ে অফিসে এসেছে। চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস তো আছেই। অভিককে এতটা সুদর্শন লাগছে যে অফিসের মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে। অভিক সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে যাবে, এসময় অভিকের চোখ গেল নীরার দিকে। সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর নীরা বসে আছে। অভিক নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘হেই ইউ! তুমি এক্ষুণি আমার কেবিনে আসবে। সাথে এক কাপ হট কফি।’

একথা বলেই অভিক লিফট দিয়ে উঠে উপরে উঠে যায়। নীরা ভেংচি কেটে মনে মনে ভাবছে অভিককে কি করে জব্দ করা যায়। ভাবতে ভাবতে উপায় পেয়েই গেল।

নীরা কফি নিয়ে অভিকের কেবিনে গিয়ে দরজায় নক করে। অভিক ভিতরে আসতে বলে৷ নীরা কফি নিয়ে অভিকের সামনের ট্রবিলে রেখে বলে,

‘স্যার, আপনার কফি।’

অভিক নীরাকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,

‘নীরা রাইট?’

নীরা অভিকের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘জি।’

অভিক কফি হাতে নিয়ে বলে,

‘তোমার জন্য একটা সু-খবর আছে।’

নীরা শুনেই বলে,

‘আমি এই চাকরি ছেড়ে দিতে পারবো?’

নীরার আনন্দে এক বালতি পানি ঢেলে দিল অভিক। ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,

‘চাকরি তো তুমি ছাড়তেই পারবে না।’

হতাশ হয়ে নীরা বলে,

‘তাহলে?’

‘আজ থেকে তুমি আমার পিএ।’

নীরা অবাক হয়ে বলে,

‘মানে? আমিতো আপনার পিএ হওয়ার জন্য আবেদন করিনি। তাহলে? সব কিছু কি আপনার ইচ্ছেতেই হবে নাকি? কি পেয়েছেন টা কি? আমি আপনার পিএর চাকরি করবো না।’

‘করতে হবে। এটাই ফাইনাল।’

অভিক কফিটি মুখে দিয়েই ফেলে দেয়। তারপর নীরার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

‘কফিতে কি দিয়েছ?’

নীরা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

‘কেন? ভালো লাগেনি? নোনতা কফি খেলে বলুন। আর এক কাপ বানিয়ে দিব।’

অভিক টেবিলের উপর এক থাপা দিয়ে বলে,

‘ইডিয়েট! তোমার একটুও ভয় করে না আমাকে?’

নীরা কিছু বলতে যাবে এসময় অভিকের গার্লফ্রেন্ড ঢুকে পড়ে। আর সে সোজা অভিকের কোলে গিয়ে বসে। নীরা মনে মনে বলছে,

‘অসভ্য মেয়ে একটা।’

নীরা চলে যেতে নিলে অভিক নীরাকে বলে,

‘কফির কাপটা নিয়ে যাও।’

নীরা গোমড়া মুখ করে কফির কাপটা নিয়ে আসতে লাগলে অভিক নীরার হাত ধরে রাখে। নীরা অবাক হওয়ার সাথে সাথে রেগে গেল খুব। এদিকে অভিকের গার্লফ্রেন্ড অভিককে বলছে,

‘বেইবি! চলোনা আজ কোথাও ঘুরতে যাই।’

নীরা হাত মোচড়ামুচড়ি করছে ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু অভিক আরো শক্ত করে নীরার হাত ধরে রাখে। অভিকের গার্লফ্রেন্ড অভিকের দিকে ফিরে ছিল বিধায় সে খেয়াল করেনি যে অভিক নীরার হাত ধরে আছে। অভিক নীরার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে।

‘ইয়েস বেব! ঘুরতে তাও যাবই। কিন্তু তার আগে আমার একটা হট কিস চাই।’

নীরা চোখ বড়বড় করে অভিকের দিকে তাকায়। মনে মনে বলে,

‘শয়তান লোক। কিস দে আর যাই কর। আমাকে আটকিয়ে রেখেছিস কেন?’

অভিকের গার্লফ্রেন্ড ওকে কিস করার জন্য এগিয়ে যেতেই নীরা চট করে বলে উঠে,

‘স্যার, হাতটা ছাড়ুন আমাকে আটকিয়ে রেখেছেন কেন?’

নীরার কথা শুনে অভিকের গার্লফ্রেন্ড নীরার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘এই তুমি? তুমি এখানে কি করছ?’

অভিক তার গার্লফ্রেন্ড এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,

‘ও আমার পিএ।’

‘পিএ তো ও এখানে কি করছে?’

অভিক কপালে আঙুল চুলকাতে চুলকাতে বলে,

‘পিএ তো বসের সাথেই থাকে।’

অভিকের গার্লফ্রেন্ড রেগে বলে,

‘হোয়াট রাবিশ অভিক? আমাদের পার্সোনাল টাইমে ও কেন আসবে? আর তুমি ওর হাত ধরে আছো কেন? ছাড়ো ওর হাত।’

অভিক নীরার হাত ছেড়ে দেয়। নীরা দ্রুত ওখান থেকে চলে যায়। অভিকের গার্লফ্রেন্ড অভিকের সাথে অনেক কথা কাটাকাটি করে চলে যায়। অভিক সেসবে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।

.
এদিকে নীরা ওয়াশরুমে এসেই কান্না শুরু করে দেয়। অভিক এতো জোরে নীরার হাত চেপে ধরেছিল যে ব্যথায় চিৎকারও করতে পারেনি। হাত লাল করে দিয়েছে। নীরা চোখে মুখে পানি দিতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে চলে যায়৷ ওখানে বসে নিজের পড়ে থাকা কিছু কাজ করে।
,
লাঞ্চের সময় অভিক নিচে নেমে দেখে নীরা ডেস্কে বসে ঘুমুচ্ছে। অভিক ওখানে গিয়ে বলে,

‘অফিস কি ঘুমোনোর জায়গা?’

কারো ধমক শুনে নীরা ধড়ফড়িয়ে উঠে গেল। অভিককে দেখেই সে ভয় পেয়ে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। কারণ এখন লাঞ্চের সময় সবাই অফিস ক্যান্টিনে খেতে চলে গেছে। অভিক নীরাকে ভয় পেতে দেখে বলে,

‘পিএর কাজ তার সিইও মানে বসের পাশে পাশে থাকা। আর তুমি কি করছ?’

নীরা বলে,

‘শাস্তিস্বরুপ আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিন।’

অভিক খানিক হেসে বলে,

‘চাকরি ছাড়ার এতো তাড়া? আমিতো শাস্তি দিবই। কিন্তু চাকরি থেকে বরখাস্ত করে না। আমার মতো করে।’

নীরা চোখ গোল গোল করে অভিকে দিকে তাকিয়ে আছে। অভিক এক চোখ টিপে বলে,

‘আজ তোমার ছুটি। দেখে তো মনে হচ্ছে ক্লান্ত হয়ে গেছ। বাসায় যাও। কাল তোমার ডিউটি শুরু, আমার পাশে হাটার ডিউটি। বায়।’

অভিক ওখান থেকে চলে যায়। নীরা ভেবে পাচ্ছেনা অভিক তাকে কি শাস্তি দিবে এবার?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here