অভিক একজন কমবয়সী এবং আকর্ষণীয় যুবক এবং ওর নিজের কোম্পানির সিইও। তাই অভিকের চারপাশে মেয়েদের কোনো অভাব নেই। অভিকও এই সুযোগ পুরোমাত্রায় উপভোগ করে। মেয়েরা যেন ওর জন্য খেলার সামগ্রী। দিন দিন অভিক যেন অন্ধকারে জগতে তলিয়ে যাচ্ছে। এর শেষ কোথায় সে নিজেও জানে না।
.
অন্যদিকে, নীরা খুব সুন্দরী অথচ অসহায় একটি মেয়ে। নীরার গোটা শৈশব কেটেছে অনাথ আশ্রমে। নীরা অভিকের অফিসে জয়েন করার পর দশ দিন কেটে গেছে, অথচ এখন পর্যন্ত সিইও সাহেবের নজর ওর দিকে পড়েনি। সেও দেখেনি অভিককে। নতুন বলে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও পাচ্ছেনা নীরা। একমনে নিজের কাজ করে যাচ্ছে সে।
অফিসের ম্যানেজার এসে নীরাকে বললেন উপরের তলায় কিছু পুরোনো ফাইল আছে, সেগুলো নিয়ে আসতে। নীরা বাধ্য মেয়ের মতো লিফট দিয়ে উপরে যাচ্ছিল। একি লিফটে করে অভিক তার এক গার্লফ্রেন্ড এর সাথে উপরে যাচ্ছিল তার কেবিনে। নীরা লিফটে ঢুকে দেখে অভিক তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে আছে। নীরাকে ঢুকতে দেখেই অভিকের গার্লফ্রেন্ড চিৎকার করে বলে,
‘হেই ইউ! পারমিশন ছাড়া লিফটে ঢোকার সাহস কে দিয়েছে তোমাকে হ্যাঁ?’
নীরা তেড়ে এসে বলে,
‘আপনারা অফিসে কাজ করতে এসেছেন নাকি এসব করতে এসেছেন? দাড়ান এক্ষুণি ম্যানেজারকে সব বলছি আর উনি বসকে জানাবেন। ছিঃ অফিসে নোংরামি করতে আসে।’
অভিক মেয়েটির দিকে এক নজর তাকালো। নীরার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল তার। একটা মেয়ে এতটা সুন্দর হয় কিভাবে? শুধু সুন্দরী না স্নিগ্ধ, প্রানবন্ত। কাজল কালো চোখ যেন মায়ার সমুদ্র।
অভিকের গার্লফ্রেন্ড অভিককে ধাক্কা দিয়ে বলে,
‘অভিক তুমি শুনতে পাচ্ছ ও কি বলছে? তুমি কে ও জানে না নিশ্চয়ই?’
নীরা বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ভুল করে ফেললো না তো? এদিকে অফিসের ম্যানেজার ছুটে এসেছেন চিৎকার শুনে। নীরা ম্যানেজারকে ওদের বিরুদ্ধে সব কিছু বলতে লাগলো। ম্যানেজার নীরাকে ধমক দিয়ে বললেন,
‘চুপ কর। তুমি জানো কার সম্পর্কে কি বলছ তুমি? উনি আমাদের কোম্পানির সিইও। এই চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক। আর উনি তার গার্লফ্রেন্ড।’
নীরা চোখ বড় বড় করে ওদের দিকে তাকালো। অভিকের গার্লফ্রেন্ড যেন নীরাকে এক্ষুনি খেয়ে ফেলবে। আর অভিকের দিকে তাকাতেই অভিক এক চোখ টিপে দেয় নীরাকে। নীরা অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে যায়। অভিক ম্যানেজারকে বলে,
‘ম্যানেজার? এ কি নতুন? তাকে একটু আমার কেবিনে পাঠিয়ে দিন।’
নীরা খুব ভয় পেয়ে যায়। অভিক তার গার্লফ্রেন্ড কে চলে যেতে বলে।
ম্যানেজার নীরাকে নিয়ে তাদের কেবিনে আসে। অভিক বলেছে এক কাপ কফি যেন নীরার হাত দিয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়।
.
ভয়ে ভয়ে অভিকের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীরা। ভিতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। অনেক সাহস নিয়ে দরজায় নক করে নীরা। অভিক ভিতরে আসার অনুমতি দেয়।
নীরা কফি নিয়ে ভিতরে ঢুকে বলে,
‘আপনার কফি।’
কফি টেবিলের উপরে রেখে নীরা দ্রুত পালিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু দরজার সামনে আসতেই দেখে দরজা বন্ধ। রিমোট সিস্টেম এই দরজাটা ভিতর থেকে অভিক’ই বন্ধ করে দিয়েছে। নীরা দরজা খোলার বৃথা চেষ্টা করলে অভিক বলে,
‘এ দরজা খুলবে না, যতক্ষণ না আমি চাইবো।’
নীরা পিছনে তাকিয়ে দেখে অভিক তার দিকেই এগিয়ে আসছে। নীরা ভয়ে কয়েকটি ঢোক গিলে। অভিক নীরার পুরোপুরি কাছে চলে আসতেই নীরা দু পা পিছিয়ে যায়। অভিক নীরার কোমরে হাত দিয়েই এক টানে নীরাকে কাছে টেনে নেয়। নীরা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে,
‘ছাড়ুন!’
অভিক নীরার দু ঠোটে আঙুল রেখে বলে,
‘শশশ, কোনো আওয়াজ নয়। চাকরি করো, অথচ নিজের বসকেই চিনো না। অদ্ভুত।’
নীরা অভিকের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
‘আমি যদি জানতাম এ অফিসের বস একটা নোংরা বদলোক। তাহলে আমি জীবনেও এই কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আসতাম না।’
অভিক নীরার কথা শুনে আশ্চর্য হয়। অভিকের অফিসে চাকরি করার জন্য কতশত মেয়ে আগ্রহী দেখায়। কত মেয়েই অভিককে এক নজর দেখার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। আর সেখানে এই মেয়ে? ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। বিষয়টা অপমানজনক মনে হলো।
অভিক নীরাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,
‘ইউ ষ্টুপিড গার্ল। তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে বদলোক বলার?’
নীরা ভয়ে একদম জমে যায়। এবার কি অভিক ওর সাথে খারাপ কিছু করবে? ভেবেই বুক কেঁপে উঠে নীরার।
‘ইউ আর ভেরি বিউটিফুল লেডি, বাট টু মাচ ষ্টুপিড।’
‘আমার ঘেন্না লাগছে, ছাড়ুন আমাকে। আমি এক্ষুণি আপনার চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি।’
নীরার কথা শুনে অভিক হো হো করে হেসে দেয়। অভিককে এক মুহুর্তের জন্য পাগল মনে হলো নীরার। অভিক নীরাকে বলে,
‘কন্ট্রাক্ট পেপারে কি লেখা ছিল পড়োনি? এসেছ মাত্র ১০ দিন। এরমধ্যেই চাকরি ছেড়ে দিবা? এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী তোমাকে আগামী দু বছর এখানে চাকরি করতে হবে। নয়তো জেল কিংবা ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে।’
নীরার মনে পড়ে সত্যি তো। কন্ট্রাক্ট পেপারে তো এসবই লেখা ছিল৷ নীরা অসহায় চোখে অভিকের দিকে তাকায়। অভিক যেন তাতেই গলে যায়। নীরার চাহনি অভিকের চোখে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। কফি খাওয়া তো বাহানা ছিল মাত্র। নীরাকে পর্যবেক্ষণ করতেই কফির বাহানা দিয়ে এখানে নিয়ে আসা। খুটিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি নীরাকে দেখে নিয়েছে অভিক। তারপর রিমোট দিয়ে দরজা খুলে দেয় অভিক।
‘কাল ঠিক টাইমে আমার কেবিনে কফি নিয়ে এসো। আজ তোমার ছুটি।’
নীরা ছুটে ওখান থেকে চলে যায়। অভিক নীরার কান্ড দেখে হেসে দেয়।
.
বাসায় এসে অভিক ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বারবার তার ঘুমের মধ্যে ব্যঘাত ঘটছে। অভিকের চোখের সামনে নীরার স্নিগ্ধ মুখটাই ভেসে উঠছে বারবার। অভিক বুঝতে পারছেনা কেন নীরাকে ও বারবার দেখছে?
অভিক আর ঘুমায় না৷ সে উঠে তার রং তুলি হাতে নিয়ে বসে। অনেকদিন ধরেই ছবি আঁকা হয়নি তার। ভাবছে আজ আঁকবে। অভিক কিন্তু ভালো ছবি আর্ট করতে পারে। আনমনে রং তুলি নিয়ে এক রমনীর ছবি এঁকে নিল অভিক৷ কিন্তু একি! এই রমনী যে তার ঘুমে ব্যঘাত ঘটানো সেই নারী৷ অভিক আনমনে নীরার ছবিই এঁকেছে। অভিক রং তুলি সাইডে রেখে রুম থেকেই বেরিয়ে গেল।
.
নীরা তার বুড়ো দাদুকে বলছে তাকে যেন কিছু টাকা দেয়।
‘জানো দাদু, ২০ লক্ষ টাকা লাগবে আমার৷ প্লিজ কই পাবো বলো। এই টাকা দিলেই আমার চাকরি থেকে ছেড়ে দিবে।’
‘মানুষ চাকরি করে টাকা রোজগার করার জন্য আর তুমি ছাড়ার জন্য চাইছ?’
নীরা নিজের আত্মসম্মান কারো কাছে বিক্রি করবে না। তার অফিসের বসকে সে কালই মজা বুঝাবে।
চলবে…
#তুমি_আমার_অভিমান❤
|| পর্ব – ১ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি
[আসসালামু আলাইকুম। এ গল্পটি প্রতিলিপিতে “অফিসের সিইওর সাথে প্রেম” নামে প্রকাশ করা হয়েছে। ফেসবুকে নাম পরিবর্তন করেছি বলে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। আশা করি আপনাদের রেস্পন্স পাওয়া যাবে।]