শ্যামাঙ্গণা-২৩
————-
ফাহমানের আগমনের খবর পেয়ে মনোয়ারা বেগম ছুটে এসেছেন। ঘরের দরজা চাপানো দেখে মৃদু শব্দে দরজায় আঘাত করলেন। ঝুমুর আসার অনুমতি দিতেই মনোয়ারা বেগম দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন। দেখলেন ফাহমান বিছানায় বসে কপালে আঙ্গুল ঘষছে। মনোয়ারা বেগমকে ঝুমুর ইশারায় পড়ার টেবিলের চেয়ার টেনে বসতে বললো। মনোয়ারা বেগম চেয়ার টেনে বসলেন।
মুহূর্ত কয়েক পড়ে ফাহমান সটান হয়ে বসলো। মনোয়ারা বেগমের মুখোমুখি বসে বললো ‘ আপি আমি ঝুমুরকে এই বাসায় রাখতে সাহস পাচ্ছি না। ঝুমুর এখানে থাকা মানেই ওর আশেপাশে বিপদ ঘোরা। আপনি অনুমতি দিলে আমি আজই ওকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো আর এটাও খেয়াল রাখবো যাতে ওর কোনো অসুবিধা না হয়। ‘
ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর হতবাক চেয়ে বললো ‘ এসব কি বলছেন আপনি ? আমি এই বাসায় থাকবো না মানে ? আপনি এরকম করতে পারেন না আমার সাথে। না আমি কোথাও যাবো না। এই বাসা ছেড়ে কোথাও যাবো না। ‘
ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান শান্ত গলায় বললো ‘ আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি না, এটা আমার অর্ডার যেটা তুমি মানতে বাধ্য। আমি তোমার হাসব্যান্ড কাজেই আমি যেটা বলবো তুমি সেটাই করবে। আমি তোমার ভালো চাই এবং আমি নিশ্চই চাইবো না আমার বউয়ের কোনো ক্ষতি হোক। ‘
ঝুমুর ও ফাহমানের কথা শুনলেন মনোয়ারা বেগম। নাতনীর নিরাপত্তার জন্যই উনি ফাহমানের সিদ্ধান্ত মেনে ঝুমুরকে তিন তলায় নিয়ে যেতে রাজি হলেন। ফাহমান ও মনোয়ারা বেগমের কথায় বাধ্য হয়ে কাদতে কাদতেই রাজি হলো ঝুমুর। তবে অভিমানে সে ঠিক করলো ফাহমানের সঙ্গে কথা বলবে না।
ঝুমুরের আপত্তি করার ব্যাপারটাতে অসন্তুষ্ট ফাহমান। রাগে সে নীরবে ঝুমুরের লাগেজে কাপড় ভরছে। সে চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব ঝুমুরকে নিয়ে এই বাসা থেকে বের হবে। বাইরের শত্রুদের মোকাবেলা করা যায় কিন্তু শত্রু যদি নিজেরই পরিবারের সদস্য হয় তাহলে তখন বিশ্বাস ভঙ্গের আঘাত ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না।
ঝুমুর জানে তার পায়েসে আঞ্জুম আরা বাদাম দিয়েছেন। সেই সূত্রেই সে ধরেছে সকালে চায়ের কাপের নিচে গ্লাভস পাওয়াও কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। যদিও সে আঞ্জুম আরার এইসব কাজে খুবই মর্মাহত তবে এই বাসা ছেড়ে যেতে তার মন চাইছে না। আবার আঞ্জুম আরাকে এখন থেকে আর দেখতে পারবে না জেনে তার আরও খারাপ লাগছে। ঝুমুর ফাহমানকে যতটা চিনে তাতে ঝুমুরের ক্ষতি হবে এমন কিছুর আশেপাশেও সে ঝুমুরকে যেতে দিবে না।
তানিয়া শাহজাহান থাকলে হয়তো আজ পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। উনি ছেলে মেয়েদের নিয়ে কাছের এক বান্ধবীর বাড়ি গেছেন। বাড়িতে কি ঘটে গেছে তার কিছুই জানেন না উনি। জানলে টেনশন করবেন বলে মনোয়ারা বেগম ফোন করে তাকে কিছু বলেননিও। তবে ঝুমুর বড্ড কষ্ট পেয়েছে আজ। তাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর এত তাড়া সবার। আঞ্জুম আরা ওর পায়েসে বাদাম মিলিয়ে দিয়েছেন। মনোয়ারা বেগম তার নিরাপত্তার জন্য তাকে তিন তলা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সবাই যে তাকে তাড়াতেই ব্যস্ত।
ফাহমান ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। তাফিম নিজ হাতে ঝুমুরের বই খাতাগুলো তিন তলায় ফাহমানের ঘরে দিয়ে এসেছে কয়েক দফায়। পরীক্ষা এলেই রাজ্যের টেস্ট পেপার পড়ার অভ্যাস ঝুমুরের। যার কারণে ঝুমুরের এতগুলো বই খাতা তাফিম কয়েক দফায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে।
নিজের মায়ের এই কীর্তিতে তাফিমও লজ্জিত। আজ স্বয়ং নিজে সাক্ষী হয়েছে সে। নিজের চোখে দেখেছে আঞ্জুম আরাকে বাদাম গুঁড়ো পায়েসে মেশাতে। প্রথমে সে বুঝেনি কিন্তু ঝুমুরের বেগতিক অবস্থা দেখে সে বুঝতে পেরেছে ওটা বাদাম গুঁড়ো ছিল। সে এখন জানে আঞ্জুম আরা তার বোনদের কখনোই পছন্দ করেননি তাইতো এতকাল তার কানে ওদের বিরুদ্ধে অনেক কথা তুলেছেন। কিছু কথা সে বিশ্বাস করেছে আর কিছু করেনি। কিন্তু আজ সে বুঝে গেছে তার মায়ের মন ভরে আছে কূটচাল বুদ্ধিতে।
ফাহমান লাগেজ গুছিয়ে মেঝেতে নামিয়ে নিলো। ঝুমুরকে ডাক দিল কারণ এখন তাদের বেরোতে হবে। কিন্তু ঝুমুর তার ডাকের উত্তর তো দিলই না উল্টো জায়গা থেকেও নড়লো না। ফাহমান এই প্রথম যেন ঝুমুরের এসব কার্যকলাপে সত্যিকার অর্থে রেগে গেলো। ঝুমুরের হাত টেনে দাঁড় করালো তাকে। এক হাতে লাগেজ আর অন্য হাতে ঝুমুরকে টেনে নিয়ে এলো সদর দরজার কাছে।
সদর দরজার কাছে আগেই দাড়িয়েছিলেন আঞ্জুম আরা। ঘটনা এতদূর গড়াবে উনি জানতেন না তবে ঝুমুর চলে যাবে এই খুশিতে উনি বাকবাকুম। যাক এতদিনের নাটকের অবশেষে অবসান ঘটতে চলেছে। ফাহমান আর ঝুমুরকে দেখে উনি মস্ত বড় হাসলেন। তার ওই গা জ্বালা হাসি দেখে ফাহমানের ইচ্ছে করলো যদি পারতো মহিলাকে জেলের ঘানি টানতে। কিন্তু সে জানে ঝুমুর তাতে কখনোই রাজি হবেনা। এখনই তার এই অবস্থার পিছনে যে আঞ্জুম আরা দায়ী সেটা মানতে নারাজ আর তো জেলের ঘানি টানাবে।
মনোয়ারা বেগম, আজমাঈন সাহেব, সামি, তাফিম সকলে ঝুমুর ও ফাহমানকে বিদায় দিল। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফাহমান ঝুমুরকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু ঘরের বাইরে এক পা রেখেও ঝুমুর ফিরে এলো। ঘরে ঢুকে আঞ্জুম আরাকে জড়িয়ে ধরলো। কান্না ভেজা গলায় বললো ‘ আমি চলে যাচ্ছি মামী। আপনার সব বিরক্তির অবসান ঘটিয়ে চলে যাচ্ছি। এখন আর কেউ মাথায় তেল দিয়ে দিতে বলবে না। কেউ আর বলবে না পাস্তা রেধে দিন মামী। আমি আসলেই চলে যাচ্ছি মামী। সবসময়ের জন্য চলে যাচ্ছি। ‘
ঝুমুর চলে যাবে এই খুশিতে এতক্ষণ আনন্দে মনে মনে নাচলেও আঞ্জুম আরা এবার যেন ঝুমুরের কথা শুনে একটা ধাক্কার মতো খেলেন। এই মা মরা মেয়েকে নাকি উনি এত কষ্ট দিয়েছেন। যেই মেয়ে উনাকে নিজের মায়ের মতো মনে করে তাকে উনি কষ্ট দেওয়ার জন্য পায়েসে বাদাম গুড়ো দিয়েছেন, গ্লাভস ছাড়া থালা বাসন ধুয়ে যাতে এলার্জি হয় তার জন্য গ্লাভসও সরিয়ে রেখেছেন সঙ্গে আরও কত কিছু। এক মুহূর্তের জন্য উনি স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ভাবলেন নিজের স্বার্থের জন্য এতটা নিচে নেমে গেছেন।
আঞ্জুম আরা কিছুটা লোভী ধরনের। নিজের স্বার্থ আগে দেখেন। নিজের জন্য উনি সবকিছু করতে পারেন। তবে আজ মনে হলো তার মধ্যে এখনও কিছুটা মনুষ্যত্ব বেচেঁ আছে। সেই মনুষ্যত্ব বোধ থেকেই উনি অনুধাবন করলেন এত বছর নিজের স্বার্থের জন্য কতকিছু করেছেন অথচ সামান্য ভালোবাসার নাটক করে উনি এই মা মরা মেয়েটার কাছে মায়ের মতোই একজন হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অথচ সেই জায়গাটা আজ যেন নিজ হাতে হারালেন।
অপরাধ বোধে জর্জরিত আঞ্জুম আরা মাথা নামিয়ে ফেললেন। ঝুমুর উনাকে ছেড়ে ফাহমানের দিকে এগিয়ে গেলো। ফাহমান ওর দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ঝুমুর জানে এই দৃষ্টি তার অবাধ্য হওয়ার জন্য। ফাহমান ও ঝুমুর যখন লাগেজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই তানিয়া শাহজাহান তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠলেন। ফাহমান ও ঝুমুরকে লাগেজ নিয়ে বেরোতে দেখে তানিয়া শাহজাহান বললেন ‘ ঝুমুর আর লাগেজ নিয়ে কোথায় যাচ্ছ ফাহমান ?’
‘ আমার কাছে আমার অঙ্গণাকে তুলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আন্টি। কিন্তু আমার ওয়াইফের সেফটি এখন আমাকেই দেখতে হবে। তাই ওকে আমার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। ‘
ফাহমানের কথায় তানিয়া শাহজাহান অবাক চোখে চেয়ে রইলেন ওর দিকে। ঝুমুরকে চলে যেতে দেখে অনামিকা নিঃশব্দে কাদঁছে। ছোট অনিল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ঝুমুরের দিকে। ঝুমুরকে অপরিচিত লোকের সঙ্গে দেখে সে হতবাক। ফাহমান আর দাড়াল না। ঝুমুরকে নিয়ে তিন তলায় উঠে গেলো।
‘ এসব কি হচ্ছে মা ? ফাহমান ঝুমুরকে নিয়ে গেলো কেন ? ঝুমুর না ওর পরীক্ষা শেষে যাবে ? ‘
মেয়ের প্রশ্নে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মনোয়ারা বেগম। বিস্তারিত সবটা খুলে বললেন যে তানিয়া শাহজাহানের অগোচরে কতকিছু ঘটে গেছে। তানিয়া শাহজাহান সবকিছু শুনে হায় হায় করে উঠলেন। বললেন ‘ তাই বলে ওকে নিয়ে যাবে ? যার দোষ তাকে তুমি বের করে দিতে পারলে না ? যাদের কোনো দোষই ছিল না তারাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো। ‘
মনোয়ারা বেগম ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললেন। বললেন ‘ এখন বের করে দিলে বাগান বাড়ির সম্মান নষ্ট হবে। ঝুমুর চায় না এমন কিছু হোক। তাই ও নিজেই রাজি হয়েছে ফাহমানের সঙ্গে যেতে। ‘
মায়ের কথায় তানিয়া শাহজাহান সন্তুষ্ট হলেন না। রাগত স্বরে বললেন ‘ আমার বোনের অবর্তমানে তার মেয়েদের সঙ্গে যা হচ্ছে এর প্রত্যেকটা অন্যায়ের শাস্তি পাবে সবাই। আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। ‘
কথাগুলো বলে তানিয়া শাহজাহান ছেলে মেয়েদের নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলেন। অবশ্য রুমে ঢোকার আগে আঞ্জুম আরার দিকে ঘৃনা ভরা দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে গেলেন। আঞ্জুম আরা সেই দৃষ্টি দেখে চোখ নামিয়ে নিলেন। ঝুমুরকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করে উনি যে কি হারিয়েছেন ভালো করেই বুঝতে পারছেন এখন।
বাড়ির সবার চোখে নিচে নেমে গেছেন আঞ্জুম আরা। ভাগ্নির প্রস্থানের কথা জানতে পেরে হয়তো উনার স্বামীও উনাকে ছেড়ে দিবেন না। এটা ঠিক উনার স্বামী উনার প্রত্যেকটা কথা মেনে নেন কিন্তু ভাগ্নির প্রস্থানের কথা জানতে পারলে ব্যাপারটা কিরকম গুরুতর আর আসল দোষী কে সেটা বুঝতে সময় লাগবে না তানিম সাহেবের।
—-
ঝুমুরকে রুমে পৌঁছে দিয়েই বেরিয়ে গেছে ফাহমান। ঝুমুরের এলার্জি দ্রুত সেরে উঠার জন্য ওষুধ আনা প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মনোয়ারা বেগম ক্রিম লাগিয়ে দিলেও সঙ্গে ওষুধও খাওয়া প্রয়োজন। এর জন্য ফাহমান তার শশুর মোতালেব সাহেবকে ফোন করে ওষুধের নাম জেনে নিয়েছে। মেয়ের এই দুরবস্থার কথা শুনে মোতালেব সাহেব অবাক হননি। এত বছর ঝুমুরের তার নানুর বাড়ির থাকার দরুন এসব ঘটনার সাক্ষী উনি আগেও হয়েছেন।
মোতালেব সাহেব অর্থ বিত্তে অনেক গুণী একজন মানুষ। অথচ মেয়ের মানসিক শান্তির জন্য ধন দৌলত, প্রতিপত্তি থাকার পরও একজন অসহায় বাবার মতো সব মেনে নিচ্ছেন। ফাহমান আসলেই মোতালেব সাহেবকে এতটা ঠান্ডা দেখে অবাক। ঝুমুরের এহেন অবস্থা দেখে তার মেজাজের পারদ চড়ছে অথচ বাবা হয়ে মোতালেব সাহেব কতটা ঠান্ডা মাথার। এসব নতুন বলে ফাহমান রেগে যাচ্ছে অথচ মোতালেব সাহেব নয় বছর ধরে এসব সহ্য করছেন।
ঝুমুরের এই অবস্থা দেখে মিস মারিয়াম আর হৈমন্তী দিশেহারা। পুত্র বধূর এই অবস্থা দেখা মাত্র সঙ্গে সঙ্গে উনি পানিতে পর্যাপ্ত বেকিং সোডা মিশিয়ে ঝুমুরকে গোসল করতে পাঠালেন। বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করলে গায়ের জ্বালা পোড়া খানিকটা হলেও কমবে। ঝুমুর গোসল সেরে বেরিয়ে আসলে মিস মারিয়াম ওর চুলগুলো ভালো করে মুছে দিলেন। তারপর আলতো হাতে হাতে পায়ে জলপাইয়ের তেল দিয়ে দিতে লাগলেন।
মিস মারিয়াম যখন ঝুমুরের হাতে পায়ে তেল দিতে ব্যস্ত তখনই ফাহমান রুমের দরজা খুলে ঢুকলো। হৈমন্তী ফাহমানকে দেখে বের হয়ে গেলো। মিস মারিয়ামের তেল দেওয়া তখনও শেষ হয়নি। কিন্তু ছেলেকে ফিরতে দেখে ছেলের হাতে জলপাই তেলের শিশি ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন ‘ ভালো করে তেল দিয়ে দে ‘।
ফাহমানকে দেখে ঝুমুর অভিমানে গায়ের জামা ঠিক করে উঠে বসলো। দ্রুত শরীরে ওড়না পেঁচিয়ে বসলো। ফাহমান ওর এত ওড়না পেঁচানো দেখে বললো ‘ এত পেঁচাপেঁচির কি আছে ? তোমার সবই ত দেখা আছে। নতুন করে শরীর ঢেকে লাভ কি ? ‘
ফাহমানের কথায় ঝুমুর ওর দিকে হতবাক চোখে তাকালো। যেই ছেলে সবার সামনে এত ভদ্র এমনকি বিয়ের আগে ও অপবিত্র হয়ে যাবে বলে একলা পেয়ে সামান্য ছুঁয়েও দেখেনি সে এখন ওকে বউ হিসেবে পেয়ে এসব কথা বলছে।
‘ অসভ্য ‘ বিড়বিড় করে কথাটা বললো ঝুমুর।
ঝুমুর বিড়বিড় করে বললেও ফাহমান ঠিকই শুনতে পেলো। সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ঝুমুরের ওড়না টান দিয়ে বললো ‘ অসভ্য হলে অসভ্য। বউয়ের সেবা করতে হলে যদি অসভ্য হতে হয় তাহলে তাই হবো। এখন ম্যাডাম আপনি আপনার সমস্ত লজ্জা বিসর্জন দিয়ে রেডি হন। ফোলা জায়গাগুলোতে তেল লাগানো প্রয়োজন। ‘
ঝুমুর মুখ কালো করে বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ল। ফাহমান তার আগে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে এলো। ফাহমান এগিয়ে এসে ঝুমুরের পিঠের জামা তুললো। ঝুমুরের পিঠের উপর থেকে জামা সরাতেই ফাহমান পিঠের অবস্থা দেখে আশাহত হলো। খুবই জঘন্য অবস্থা। জায়গায় জায়গায় ফুলে পুরো পিঠ লাল হয়ে আছে। তবে কোনো কারণে ফোলা ভাবটা একটু কমেছে মনে হয়।
‘ কিছু করেছো নাকি ? মনে হচ্ছে এলার্জি সামান্য কমেছে ‘
ঝুমুর ফাহমানের কথার জবাবে বললো ‘ হুম, মণি বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে দিয়েছিলো। ওটা দিয়ে গোসল করলাম। এখন মনে হচ্ছে একটু ভালো লাগছে। ‘
ফাহমান আর কথা বাড়ালো না। ঝুমুরের ফুলে যাওয়া জায়গাগুলোতে জলপাই তেল দিয়ে দিলো। রাতের খাবার শেষে একটা ওষুধও খেতে হবে মোতালেব সাহেব বলেছেন।
ফাহমান তেল দেওয়া শেষে উঠে দাড়াল। আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করলো চিরুনি দিয়ে। ঝুমুর তখন উল্টো হয়ে শুয়ে। ফাহমানকে আয়নার সামনে দাড়াতে দেখে ঝুমুর হাসলো। ফাহমান ওকে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো ‘ কি ব্যাপার ? হাসি কিসের ? ‘
‘ আচ্ছা আপনার বন্ধু আছে ? ‘
‘ হুম আছে তো। তিন চারজন মেবি। ‘
‘ তাহলে তো আই থিঙ্ক আপনার ফ্রেন্ডদের মধ্যে আপনিই একমাত্র এত কম বয়সে বিয়ে করেছেন। তাও আবার কাকে বিয়ে করেছেন ? পিচ্ছি ইন্টারের মেয়ে। ‘ কথাগুলো বলে ঝুমুর হো হো করে হাসলো।
‘ এটা ঠিক আমার ফ্রেন্ডদের মধ্যে আমিই আগে বিয়ে করেছি কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক ওদের দীর্ঘ সময়ের। একেকজনের দুই তিন বছরের সম্পর্ক। তাছাড়া আমি যে কেমন পিচ্ছি বিয়ে করেছি সেটা তো বিয়ের রাতেই টের পেয়েছি। ‘
ফাহমানের কথায় ঝুমুরের গাল দুটো লজ্জায় আরও ফুলে গেলো। আগেই তো এলার্জিতে ফুলে ছিল এখন যেন আরও ফুলে উঠলো। ঝুমুর এদিক ওদিক তাকিয়ে ফাহমানের থেকে দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ফাহমান ওর মনের কথা ধরতে পেরে হাসলো।
ঝুমুর যেন আবারও কুপোকাত হলো ফাহমানের হাসিতে। ফাহমান খুবই সাধারণ একটা মানুষ। রূপ,সৌন্দর্যে যে অসাধারণ কিছু নয়। আর পাঁচটা ছেলের মতোই ওর হাসিও আহামরি নয়। তবুও ভালোবেসে প্রতিবার ওর ওই সাধারণ হাসির প্রেমেই অসাধারণভাবে পড়ে ঝুমুর।
চলবে….
মিফতা তিমু
( রেসপন্স ভালো থাকলে আজ রাত ৯.০০-১০.০০ আবারও কালকের মতোই পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে। সবশেষে অবশ্যই মন্তব্য আশা করছি। )