#সেই_তমসায় (শেষ পর্বের শেষ)
নুসরাত জাহান লিজা
২৯.
মৃদুলাকে ভেতরে রেখেই ময়ূখ বেরিয়ে এলো। মশিউরকে আনানো হয়েছে। মঈদুলও এসেছে। মশিউরকে কিছু না জিজ্ঞেস করে প্রথম প্রশ্নটা রমজানকে করল ময়ূখ,
“উকিল সাহেব, আপনি তো ভীষণ রকম শৌখিন মানুষ ভাই। পারফিউমের কালেকশনের পাশাপাশি ড্রা/ /গে/র সাপ্লাইও ভালো দেন।”
“আপনাকে তাহলে কী বলব গো/য়ে/ন্দা সাহেব, গো/য়ে/ন্দা/গি/রি/র পাশাপাশি গল্প বানানোতেও ভালো দখল আছে আপনার। তবে সেটা খুব একটা উঁচুদরের গল্প হবে না৷ বরং কিছু ব/স্তা/পঁ?চা বাংলা সিনেমার প্রডাকশন হাইজ সেটা লুফে নেবে।”
“আমাকে আমার আরেকটা প্রতিভা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আমার ইনকামের আরেকটা পথ করে দিলেন, সেজন্য ধন্যবাদ। এবার আমারও উচিত উপকার ফেরত দেয়া। আমি বরং বলি আপনি কোথায় ফ্লপ খেয়ে গেলেন!” ময়ূখের খানিকটা রসবোধ যে রমজান আলীর জন্য তিক্ততা বয়ে আনল তা তার মুখ দেখেই বোঝা গেল।
“আপনার কোথায় ভুল হয়েছে জানেন রমজান সাহেব?” একগাল হেসে প্রশ্ন করল ময়ূখ। মঈদুলকে ইশারা করল রমজানের অজ্ঞাতে।
এরপর খুব ধীরে ধীরে ওর অভিব্যক্তি পরিবর্তন হতে থাকল। চোখে বাজপাখির দৃষ্টি আর দৃঢ় চোয়াল ময়ূখকে যেন সহসাই অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দিল। আত্মবিশ্বাসী স্বরে সে বলল,
“সুপ্ত আ/গ্নে/য়/গি/রি/কে কখনো উ/স্কে দিতে নেই।”
মাথার পেছনটায় হাত রেখে বিদ্রুপাত্মক হেসে ময়ূখ আবার বলল, “পেছন থেকে আ/ক্র/ম/ণ করা কা/পু/রু/ষ/দে/র জন্য আমার খুব করুণা হয়। আপনি আমার পেছনে না লাগলে হয়তো কে/স/টা এত সহজ হতো না। এরপর কখনো এমন ভুল করবেন না, খুবই নি/র্বু/দ্ধি/তা হয়েছে। আপনার কীর্তিকলাপের অনেকটাই এখন আমি জানি। কোথায় কী আছে সেটার সন্ধানে পু/ /লি/ শ চলে গেছে অনেক আগে। তাই বাকিটা নিজেই বলুন।”
রমজান আলী পকেটে হাত দিল সহসা, কিন্তু বের করার আগেই মঈদুল তাকে পেছন থেকে জা/প/টে ধরল, ময়ূখ নিজের পি/ /স্ত/ /ল বের করে সেদিকে উঁচিয়েছে ততক্ষণে,
“আপনি ঠিকই বলেছিলেন রমজান সাহেব, রাগ হলে আপনার বু/দ্ধি লো/প পায়। তাই অযথা রাগ না করে চুপচাপ বসুন, আর বলুন।”
রমজান আলী ফুঁ/সে উঠে বলল, “আমি মশিউরকে ডাকিনি। ওর শুরুটাও আমার হাতে হয়নি। সে কলেজের কিছু ব/খা/টে/র সঙ্গে পড়ে নে/শা করা শুরু করে। প্রথমে ম/ /দ, এরপর.. আমি তো চাইবই আমার ব্যবসা বাড়াতে। সেই সুযোগে কাজে লাগিয়ে ওকে নিজের দলে টানলাম। বেশ ভালোই চলছিল। মশিউর আর ওর কয়েকজন সঙ্গী মিলে মাসে যেটুকু নিত তাতে আমার বেশ ভালো আয় হতো। কিন্তু বুড়ো মশিউরকে দূরে পাঠিয়ে দিল। ওর কয়েকজন সঙ্গীও ততদিনে অন্য ঠিকানায়। আমার আয় কমে গেল। আমার ব্যবসা খুব বেশি বড় না। তাই প্রভাব পড়ল। আমি সুযোগ খুঁজছিলাম। এরমধ্যে একদিন শিরিন আর মৃদুলকে বাড়ির পেছনের ঝোঁ/পে/র দিকে যেতে দেখে কান পাতি। মনে হলো ট্রা/ম্প/কা/র্ড আমার হাতে পেয়ে গেছি। এরপর মুনিমের ঘরে গিয়ে সা/র্চ করলাম, কিছু পেলাম না। একদিন কাজের বাহানায় শিরিনের বাড়িতে গেলাম। সে তখন দুইদিনের ছুটি নিয়েছিল। ভাগ্য প্রসন্ন হলো, শিরিন চা বানাতে রান্নাঘরে গেল, আমি উঠে ভেতরের ঘরে ঢুকলাম। টেবিলের উপরেই পেলাম এ্যালবামটা। উল্টে পাল্টে দেখার সময় নেই। কোনোরকমে দেখতে গিয়ে তাদের একসাথে এই ছবিটা পেয়ে গেলাম। চু/রি/ করলাম। হয়তো পারিবারিক এ্যালবাম সে মাঝেমধ্যেই দেখে বের করে। ওই বাডিতে তাদের কেউ সন্দেহ করে কিছু খুঁজতে যাবে ভাবলে হয়তো এভাবে রাখত না।” নিজেই ব্যাখ্যা দিল রমজান আলী।
“কিন্তু আমি সরাসরি জড়াতে চাইনি। মৃদুলাকে দেখলাম ভাইয়ের শোকে সে মুহ্যমান। আবারও একটা সুযোগ। ওকে দিয়ে দিলাম ছবিটা। আমি ভেবেছিলাম এটা পেলে সে ভাইকে ফেরানোর পাশাপাশি টাকার দাবি করবে, সেখান থেকে আমি খানিকটা পাবো। কিন্তু সেটা সে করল না। এবার মশিউর ফিরলে ওকে উ/স্কে দেই। বলি ও একটা বড় অংকের টাকা দিলে ওকে পার্টনার করে নেব। কিছুদিন ফ্রি তেই দিলাম ওকে। সে প্র/লু/ব্ধ হলো। কাজে নেমে পড়ল। কয়েকমাস পরে কীভাবে যেন মৃদুলা জেনে গেল, আমি ওর ভাইকে ড্রা/গ সাপ্লাই দিচ্ছি। আমাকে হু/ /ম/ /কি দিল। মশিউর ততদিনে পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রণে। তাই আমি ধরা খেলে বেচারা মশিউরও রক্ষা পাবে না ভেবে কিছু বলত না। কিন্তু সে অবশ্যই আমাদের জন্য ভ/য়ং/ক/র। তাই ফাঁক খুঁজছিলাম অনেকদিন ধরে। ওদিকে বুড়োও ম/রা/র মাস খানেক আগে জেনে গেল আমার কীর্তি। আমি হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইলাম। এরমধ্যে একদিন দেখলাম মৃদুলা বুড়োর ঘরে, খুব মন কষাকষি চলছে মামা-ভাগ্নিতে। মুনিম আর শিরিনের কথোপকথন শোনার দিন থেকে আমার খুব আফসোস হতো যে কেন সেটার প্রমাণ রাখতে পারলাম না। এরপর থেকে সবসময় আমার প্রফেশনাল কাজের ব্যবহৃত রেকর্ডার সাথে রাখতাম সবসময়। কখন কোন সুযোগ চলে আসে! একটা বড়সড় দান পাওয়া যায়। আমি আবারও একটা বিশাল সুযোগ দেখলাম। সেটা রেকর্ড করে নিলাম।”
থেমে ময়ূখের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করল, “এক ঢি/লে দুই পাখি শি/কা/রে/র সুযোগ। কিন্তু কী করে কী হবে? মশিউর হাত খরচ পাচ্ছে না তাই টাকাও দিতে পারছে না। সেটা নিয়ে তিরস্কার করলাম। আর কিছু ফ্রি-তে দেব না তাও জানিয়ে দিলাম। মশিউর প্রতিজ্ঞা করল এবার সে আদায় করেই ছাড়বে। এরপর তো সেদিন…”
“মশিউর, সেদিন ভেতরে কী হয়েছিল?”
মশিউর আসার পর থেকে চুপচাপ বসে ছিল। চোখ লাল, মুখ রুক্ষ, কেমন ফ্যাকাসে। মশিউর কথা বলতে শুরু করবে তার আগে আগে মৃদুলা এসে ঢুকল, মুখ থমথমে। কিন্তু শুরুর আবেগটা আর নেই।
“সেদিন আমি বাড়িতে এলাম সন্ধ্যার আগে আগে। মামা সেইসময় স্টাডিতে ছিলেন। আমি তার বেডরুমে গেলাম। রেকর্ডটা চালিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে প্রথমে যাকে দেখলাম, তাকেই পাঠিয়ে দিলাম সেদিকে। এমন কথা শুনলে সে যে ভেতরে যাবার সাহস পাবে না, এটা জানতাম। তাই হলো। মেয়েটা চলে গেলে আমি আবার ভেতরে ঢুকলাম। আমার খু/ /ন করার প্ল্যান ছিল না। শুধু লাখ পাঁচেক টাকা আদায় করতাম। না পেলে চু/রি করব। সেজন্য চু/রি/র দায় যাতে আমার উপরে না এসে মৃদুলার উপরে যায় সেজন্য আমি রেকর্ডটা ব্যবহার করেছিলাম।”
এই পর্যায়ে মশিউর একবার মৃদুলার দিকে তাকালো। খানিকটা যেন অপরাধবোধ এসে জমা হলো। অভিব্যক্তিতে বোনের কাছে যেন অব্যক্ত ক্ষমা প্রার্থনা করল। মৃদুলা চোখ সরিয়ে নিল ঘৃ/ণা/য়।
“আমি ধ/রা পড়ে গেলাম। তার হাতে একটা লম্বা লা//ঠি। আমাকে এবার সত্যিই পু/লি/শে /ধ/রি/য়ে দেবেন বলে হম্বিতম্বি করছিলেন। নিজেকে বাঁচাতে তার হাত থেকে লা/ঠি/টা হ্যাঁ/চ/কা টানে নিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে মাথায় /মে/রে দেই। আসলে এখন ধৈর্য রাখতে পারি না। এরপর দেখলাম সব শেষ। লা/ঠি/টা হাতে নিয়েই ভয়ে/ পা/লি/য়ে এলাম। কিন্তু টেপ রেকর্ডার আনতে ভুলে গেলাম। মাথা কাজ করছিল না, কী করব না করব, কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না। তখন রমজান ভাইয়ের কাছে গেলাম৷ উনি অভয় দিলেন। মৃদুলা জেনে গেল। আমি এবার সত্যিই ভালো হতে চেয়েছিলাম। তাই স্বেচ্ছায় একটা ভালো রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি হই। এরপরের আর কিছু জানি না। আমাকে মাফ করে দিস বোন।” কান্নায় ভে/ঙে পড়ে মশিউর।
মৃদুলার চোখেও জল গড়ায়, কিন্তু সেখানে ভাইয়ের জন্য সহানুভূতি নেই একফোঁটাও।
ময়ূখ সহসা বলে উঠল, “আপনার প্ল্যা/ন না থাকলেও আরেকজন কিন্তু আ/ট/ঘা/ট /বেঁ/ধে/ই নেমেছিল। মা/স্টা/র/প্ল্যা/ন/ তৈরি ছিল তার। নইলে যেখানে দুই কাঁটা একসাথে সরে যাবার ব্যাপার আছে, সেখানে এতবড় সুযোগ মাত্র পাঁচ লাখ আদায়ের জন্য বা সামান্য চু/রি/র জন্য এটা হাতছাড়া করার মানুষ রমজান আলী নন। ঠিক বললাম তো উকিল সাহেব? এহতেশাম সাহেবকে আজ তার ঘরে অ/যা/চি/ত কেউ আসবেন বলে সা/ব/ধা/ন করেছিলেন নিশ্চয়ই?”
রমজান আলী বলল, “আপনি কীভাবে জানলেন?”
“আমাকে দেখে কি নে/ /শা/ /খো/ /র/ মনে হয়? স্বাভাবিক মস্তিষ্কে চিন্তা করলেই এটা বুঝতে পারার কথা। মশিউরের সাথে আমাকে মেলালে হবে? আপনি আমাকে হতাশ করলেন।” অ/প/মা/নে মুখে আঁধার ভীর করল রমজান আলীর।
“আপনার ইমেজ রক্ষা খুব জরুরি। একটা ছিঁচকে ড্রা/গ/ডি/লা/র/কে কে-ই বা কে-স দেবে। ওদিকে তো কো/র্টে/ও আপনার পারফরম্যান্স ত/থৈ/ব/চ। কিন্তু যারা আসেন, তাদের অনেক /গো/প/ন ত/থ্য রেকর্ড করে পরবর্তীতে টাকা আদায় করার পন্থাটা তাহলে মাঠে /মা/রা/ যাবে। আপনার মূল ইনকাম সোর্সই তো সেটা।”
“পরিকল্পনা খারাপ ছিল না, কিন্তু মৃদুলার প্রতি আমার সন্দেহের তীর ঘুরিয়ে দিতে যে মাথায় /মে/ /রে/ ছি/লেন, সেটাই মোড় ঘুরিয়ে দিল আমার। তিনি তো ভাইকে বাঁচাতে এখানে সেখানে প্রমাণ লোপাটের জন্য ছুটছেই, আমাকেও সরে যেতে বলছেন পরিচয় গো/প/ন করে। সহজেই উনিই লক্ষ্যবস্তু হবেন। কিন্তু মৃদুলার সঙ্গীই যদি আমাকে আ/ক্র/ম/ণ করে, তবে তার দিকটা সে নিশ্চয়ই ভাবত। বরং এমন কেউ এই চেষ্টা করছে যে আমার ফোকাস সেদিকে সরিয়ে রাখতে চায়। ভাবনা বদল, রাস্তা বদল আর আজ আপনারা এখানে।”
৩০.
একেবারে শেষের দিকে এসে প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া গেছে। এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পু/লি/শ /কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম তার বন্ধুর পরিচিত। বন্ধু এখন ময়মনসিংহে আছে। তার সাথে বন্ধু মারফত আলাপ করতেই আসাদুল ভাই স্বপ্রনোদিত হয়ে এগিয়ে এলেন। তিনি বিদায় নেবার আগে বললেন,
“এমন ক্লু লেস একটা কে-স কী করে সমাধান করলেন বলুন তো?”
ময়ূখ ভেতরে ভেতরে পুলকিত হলেও বিনয়ের অবতার হয়ে বলল, “এটা আসলে সম্ভব হয়েছে মূলত প্রতিপক্ষের বো/কা/মির জন্য। আমার খুব একটা কৃতিত্ব নেই।”
এটা ময়ূখ নিজেও খানিকটা বিশ্বাস করে কথাটা। তবুও এটা ওর প্রথম বড় কোনো কে/স যেখানে কিছুটা মাথা খাটানোর সুযোগ পেয়েছে। তাই ওর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই অভিজ্ঞতা। কমতিটুকু দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে হবে। সব প্র/তি/প/ক্ষ এমন ভু/ল চাল দেবে না নিশ্চয়ই।
ময়ূখ এই বাড়ি থেকে চলে যাবার আগে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, “সবার কৃতকর্মের ফলাফল কিছুটা দুনিয়াতেই পাওয়া যায়। সারাজীবন নিজের বুদ্ধি নিয়ে অ/হ/মি/কা/য় ভুগলেন অথচ ম/র/লে/ন কিনা একটা ছিঁচকে লোকের পরিকল্পনায়।”
তবুও ময়ূখের মনে হয় শেষদিকে এসে কিছুটা হলেও বোধহয় সন্তানদের প্রতি এহতেশাম আহমেদের মায়া জন্মেছিল। নইলে লু/কো/নো উ/ই/লে/র শেষ ক্লু’র সাথে দেয়া চিঠিটা লিখতেন না! তবুও সেটা তিনিই ভালো জানবেন!
মৃদুলা একবারও আর ভাইয়ের কথা তুলতে চায়নি। সবাই একটা জিনিস উপলব্ধি করেছে, স্বা/র্থ/প/র/তা/র বাইরের দুনিয়াটা দারুণ। তারা কেন নিজেদের মধ্যে বিভেদ করবে! এটা তাৎক্ষণিক উপলব্ধিও হতে পারে। সময়ের পরিক্রমায় আবারও তারা নিজেকে নিয়েই ভাবতে পারে, আত্মগরিমায় ভুগতেও পারে৷ সেটা কে-ই বা জানে! তবু বর্তমানটুকু সুন্দর হোক। ভবিষ্যতের ভাবনা পরেও ভাবা যাবে।
নিকষ তমসা ঘেরা এক চরিত্র ছিলেন এহতেশাম আহমেদ, তার সেই জীবন কেমন পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এলো। মানুষের ভেতরের অন্ধকার যতই গাঢ় হোক, মনের আকাশে সূর্য উঠলেই সবটা বিদায় নেয়, সমস্ত হৃদয় চরাচরে আলোকিত হয়, ঠিক পৃথিবীর মতো!
পরিশিষ্টঃ
প্রায় মাস খানেক অতিবাহিত হয়েছে ময়ূখ ঢাকায় ফিরেছে। মধুপুরের ওই বাড়ি থেকে দুটো চিঠি এসেছিল দিন কয়েক আগে। একটা মুনিমের, আরেকটা সাজিদের। আজ আবার সাঈদের চিঠি এসেছে। ওকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। সাজিদ আর মৃদুলার বিয়ে।
ময়ূখের ভালোবাসা বিষয়ে জ্ঞান কম আছে, তাই ত্রিমুখী ভালোবাসায় মৃদুলার পাল্লা কোনদিকে যাবে সে বুঝতে পারেনি। মুনিমের চিঠিতে অবশ্য আক্ষেপ নেই৷ দু’জনেই পুরো বিষয়টা মৃদুলার উপরে ছেড়ে দিয়েছিল। সে সাজিদকে বেছে নিয়েছে। শেষ অব্দি গিয়ে হয়তো সাজিদের ওকে ডিফেন্ড করার চেষ্টাটুকুই ওর মনে জায়গা করেছে।
এদিকে আবার আরেক ঝা*মে*লা হতে হতে হয়নি। বাড়িওয়ালা আঙ্কেল একদিন হুট করেই মেয়ের জামাই বানানোর প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। সে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল নিজের অপারগতা। মিনা অবশ্য কান্নাকাটি করেছে। কিন্তু ময়ূখ তাতে কর্ণপাত করেনি। অবশেষে তারও বিয়ে ঠিক হয়েছে একজন ব্যবসায়ীর সাথে। সামনের সপ্তাহেই বিয়ে! এটা কি বিয়ের মৌসুম নাকি? বিয়ের কি আদৌ কোনো মৌসুম আছে! ময়ূখ ভাবতে চেষ্টা করল।
এরমধ্যে দরজার নক করল কেউ। সে ভেতরে আসতে বলল। মুখে বেশ সাজসজ্জা করা, আধুনিক সাজপোশাক পরিহিতা একজন রমনী ভেতর প্রবেশ করল। কোনো কে/সে নিয়ে এলো?
মেয়েটা সালাম দিল, ময়ূখ বসতে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করল, “কী সমস্যা আপনার?”
“আমার তো কোনো সমস্যা নেই, স্যার!”
“মানে? তাহলে কেন এসেছেন?”
“ইন্টারভিউয়ের জন্য। পত্রিকায় একজন সহকারী আবশ্যক বলে যে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সেটা দেখেই এসেছি স্যার।”
“কিন্তু আপনি কেন? এধরণের কাজে মেয়েরা? ইম্পসিবল!”
“কেন, স্যার? আপনি যে ক্রাইটেরিয়া চেয়েছেন তার সবগুলো যোগ্যতা আমার আছে। সেখানে লেখা ছিল উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন, প্রত্যুৎপন্নমতি, কর্মক্ষম একজন সহযোগী আবশ্যক, ক্যা/রা/টে জানা থাকলে ভালো। ছেলে না মেয়ে সেটা উল্লেখ করেননি। তাহলে সমস্যা কোথায়? আমি মেয়ে বলে?”
“আপনি বুদ্ধিমতী?”
“অবশ্যই।”
“যাদের বুদ্ধি আছে তারা এভাবে বলে না।”
“কেন, এভাবে বললে কি বুদ্ধি কমে যায়? নাকি বলা নিষেধ?”
“নিষেধ নেই। কিন্তু এটা বোধের ব্যাপার। যেটা আপনার মধ্যে নেই।”
“এক মিনিটে কীভাবে জাজ করে ফেললেন? যাচাই না করে?”
“যখন আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে এসেছেন, তখন অবশ্যই আপনাকে জাজমেন্টের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।”
“আপনি ইন্টারভিউ শুরুই করেননি, বরং কিছু না ভেবেই অযোগ্যদের কাতারে ফেলে দিচ্ছেন।”
“কারণ আমি যেমন যোগ্যতা সম্পন্ন খুঁজছি, আপনাকে দেখে আমার তা মনে হয়নি। মেকআপের পেছনে আপনার অনেক সময় লাগে সেটা দেখেই বোঝা যায়।”
“আশ্চর্য, মেকআপের সাথে যোগ্যতার কী সম্পর্ক?”
“আপনি যান, প্লিজ।”
মেয়েটি চূড়ান্ত অপমানিতবোধ করে উঠে দাঁড়াল, রা/গে গা জ্বলছে, কিন্তু কিছু বলার সুযোগই দিলো না। সে দরজা পর্যন্ত গিয়ে হাতলে হাত রাখতেই চকিতে একটা কথা মাথায় এলো। এখান থেকে রে/গে চলে গেলে এই লোকের বিশ্বাস কখনো পরিবর্তন হবে না, সে-ও হার মানবে। কিন্তু সে হারতে পছন্দ করে না। তাই ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন। আপনার ধারণা বদলে যাবে।”
মেয়েটার আত্মবিশ্বাস দেখে খানিকটা দমে গেল ময়ূখ।
“কী হলো, ভ/ড়/কে গেলেন? চ্যা/লে/ঞ্জ নিতে ভ/য় পাচ্ছেন, ময়ূখ এহসান, সত্যসন্ধ্য?”
“ময়ূখ এহসান কখনো চ্যা/লে/,ঞ্জ থেকে পিছিয়ে যায় না…?”
থেমে গিয়ে ওকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে মেয়েটা তড়িৎ উত্তর দিল,
“অনুসূয়া করিম।”
………
(সমাপ্ত)