#সেই_তমসায়_১০
নুসরাত জাহান লিজা
“তোর বিয়েতে তো বরযাত্রীর সাথে যেতে পারব না রে। এখানে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গেছি।”
ময়ূখের সাথে এই দু’জনের পরিচয় হয়েছিল যখন সে পু//লি//শে ছিল তখন। একটা কে/সের তথ্য সংগ্রহের জন্য দুজনের সাহায্য নিয়েছিল। নানান জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা পু//লি/শের সাথে আদান-প্রদানই তাদের কাজ। তবে এর বাইরে এদের আরও কিছু পরিচয় আছে। নিজেদের প্রয়োজনে কখনো কখনো মিশে যেতে হয় অন্ধকার/ /জগতে। ময়ূখ চাকরি ছাড়লেও এদেরকে ছাড়তে পারেনি।
ময়ূখের কথার খেই ধরতে পারল দু’জনেই, রেদোয়ান বলল প্রথমে, “পাশের গ্রামেই বিয়ে হচ্ছে বলে হুট করে তোর সাথে দেখা হলো। নইলে তো তোর দেখাই পাওয়া যায় না। কী এমন হাতি-ঘোড়া কাজ করিস?”
“হাতি-ঘোড়া-ই যেখানে তলিয়ে যায়, সেখানে যখন মশা এসে কত জল বলে বড়াই করতে চায়, তখন সেই মশার ব/ড়া/ই/য়ে/র পেছনে আসলেই কী লজিক থাকতে পারে তাই খুঁজি।” ময়ূখের মুখে একটা আত্মপ্রত্যয়ী হাসি।
“হ্যাঁ, এইখানেও মশা ভ্যানভ্যান করতেসে।” মঈদুল ফোঁড়ন কা/ট/ল।
“আমি ঠিকানা ভুলে যাই। বিয়ের কার্ডটা দিয়ে যা। সময়মতো সরাসরি বিয়েতে উপস্থিত হব।”
নতুন আসা লোকটা উল্টো দিকেই আছে। ময়ূখরা একেবারে শেষের টেবিলে বসেছে, আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল বলে। এদিকে ঘুরে বসলে নজর রাখা একেবারে সহজ হতো। কিন্তু ময়ূখের মুখোমুখি বসতে হতো। সেই ঝুঁ//কি স্বাভাবিকভাবেই নেবে না।
“এই নে বিয়ের কার্ড।” ওদের সংগৃহীত তথ্যগুলো লেখা ডায়েরি এগিয়ে দিল ময়ূখের দিকে।
ময়ূখ রেদোয়ানকে ইশারা দিতেই সে বলল, “তুই তো টাঙ্গাইল যাবি। আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে। আমি তাইলে আসি।”
রেদোয়ান বিদায় নেবার সময় লোকটা একটু উশখুশ করছিল উঠার জন্য। কিন্তু এখানে দু’জনকে রেখে উঠবে না সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
আরও মিনিট পাঁচেক এলেবেলে আলাপ করে কাটিয়ে দিল রেদোয়ান আর ময়ূখ৷ রেদোয়ান কিছু স/স্তা কৌতুক করল স্বভাবসুলভ। তা শুনে নিতান্তই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সশব্দে হাসতে হলো ময়ূখকে। মস্তিষ্ক দ্রুত কাজ করছে ওর। এবার রেদোয়ানকেও বেরুতে ইঙ্গিত করে সে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ফিসফিসে অথচ স্পষ্ট গলায় বলল,
“তোমার কাছে যে এভিডেন্সগুলো দিলাম এগুলো হারিয়ে ফেলো না।” সামনের লোকটা একটু নড়েচড়ে বসল।
“আসি ভাই। সব ফাইনাল কইরে ফালামু তাড়াতাড়িই।”
ময়ূখ আবার আয়েশ করে বসল। রেদোয়ান বেরিয়ে যেতে লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়েছিল, এরপর সাথে সাথে আবার উঠল। ময়ূখকে পাহাড়া দেয়ার চাইতে এভিডেন্স সংগ্রহ করাটাই তার কাছে মূখ্য মনে হলো। তবে ওই ব্যাটাকে দ্বিধায় ফেলতে পেরে খুশি হলো ময়ূখ।
এবার ময়ূখও একটু দূরত্ব রেখে লোকটাকে অ/নু/স/র/ণ/ করল বাজার পেরিয়ে নিরিবিলি রাস্তায় আসতেই রেদোয়ানকে আর দেখা গেল না। সে সটকে পড়েছে ততক্ষণে। লোকটা দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে উঁকিঝুঁকি মা*/র/ছিল।
ময়ূখ গিয়ে লোকটার কাঁধে হাত রাখতেই আঁ/ত/কে উঠে ঘুরে তাকালো লোকটা।
“আপনার কাছে লা/ই/টা/র হবে?” হাতের সি/গা/রে/টে/র দিকে ইঙ্গিত করে বলল ময়ূখ।
“না।” বলে লোকটা সামনের দিকে পা বাড়িয়েছিল। কিন্তু ময়ূখের কথায় থেমে গেল।
“রমজান আলী সাহেব, আমার পেছনে আপনার এত আগ্রহ কেন জানতে পারি?”
এবার উকিল আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এলো। ধ/রা পড়ে গেছে। লু//কো//চু//রি করে লাভ নেই। মাথার হ্যাট থাকলই কিন্তু মাফলারটা মুখ থেকে খুলে ফেলল।
“আমি আপনার পেছনে কেন আগ্রহী হতে যাব স্যার? আপনি তো সুন্দরী ললনা নন?”
“বাহ্! আপনি তো দেখছি সুন্দরের পূজারী। বাড়িতে সুন্দরী স্ত্রী রেখে আবার বাইরে ললনার খোঁজ করার আগ্রহ চে/পে বসে আছেন। বিষয়টা আমার একদম ভালো লাগেনি।”
“কী বলতে চান আপনি? আমি চ/ রি/ /ত্র/ /হী/ /ন? আপনি লিমিট…”
“সেটা কখন বললাম? আমি তো বলতে চাইলাম গতকালের এ্যা/ক/শ/ন সিনটার কথা। আপনাকে দেখে কিন্তু বোঝা যায় না আপনার এত শক্তি। কী খান? টিপস যদি দিতেন?”
/জ্ব/ /ল/ /ন্ত চোখে তাকালো রমজান আলী। এরপর বলল, “কী যা তা বলছেন? কীসের এ্যা/ক/শ/ন সিন?”
“আপনার আতরের গন্ধটা তো সুন্দর। দারুণ পছন্দ আপনার। এটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।”
“এটা আতর নয়। পারফিউম।”
“ওহ্, স্যরি স্যরি, ভুল হয়ে গেছে। এখানে কোথাও পাওয়া যায় এটা? আমি আজই কিনতাম। ”
“না, এটা আমার শ্যালক ফ্রান্স থেকে এনে দিয়েছে, গিফট। ঢাকায় খোঁজ নিতে পারেন।”
“আচ্ছা, কী আর করা! আমার দু//র্ভা//গ্য।”
এবার স/ত/র্ক হলো রমজান আলী, “আমি যাই। কাজ আছে।”
“এক মিনিট, গতকালের সুবাসটা আমার নাকে এখনো লেগে আছে। খুব কাছ থেকে তো।”
“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কী বলছেন।”
“হ্যাঁ, আপনি গো//বে//চা//রা নিরীহ মানুষ। আপনার হাতের আংটিটাও বেশ সুন্দর। আমি ঘুরতে ঘুরতে লোকটার একটা হাত দেখেছিলাম। একই আংটি, একই পারফিউম এই পাড়াগাঁয়ে ডু/প্লি/কে/ট হয়ে গেল! বাহ্!”
“মি/ /থ্যু/ ক আপনি সাথে সাথে অ/চে/ত/ন হয়ে গিয়েছিলেন। পেছনে ঘুরতে পারেননি, দেখেছেন কখন?” নিজের হাতের আংটির দিকে চকিতে একবার চোখ রেখে বলল রমজান আলী।
“আমি পেছনে ঘুরার সুযোগ পাইনি, সেটা কি আপনার জানার কথা? আমি তো এত বিস্তারিত কাউকে কিছু বলিনি রমজান আলী সাহেব?”
“আমি আপনার নামে মা/ন/হা//নী/র মা//ম/লা করব।”
“আমি এ/টে/ম্প টু মা/ /র্ডা// /র/ /কে//স করব। উকিল হিসেবে আপনি খুব একটা বিচক্ষণ নন দেখছি। এরকম কম /বুদ্ধির একটা লোক কী করে এহতেশাম সাহেবের কাজ পেলেন বলুন তো?”
মধ্যবয়সী উকিল খানিকটা ঠান্ডা হলেন বলে মনে হলো। ময়ূখ বলল, “আপনার সাথে আর কে আছে বলুন এবার?”
“সেটা জেনে আপনার কোনো কাজ নেই। এরপরের বার ম/ও/কা মতো পেলে কোনো ছাড় দেব না।”
“কিন্তু আমাকে কেউ টে//ক্কা দিতে চাইলে আমিও তাকে ছাড় দেই না।”
একটু নড়াচড়া লক্ষ্য করতেই ময়ূখের নিজের প্যান্টের পেছনে গুঁজা /পি/ /স্ত/ /লে/র উপর হাত চলে গেল। দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে দুজনেই একই সময়ে দুজনের কপাল বরাবর তা;/ক করল সেটা!
শীতকালেও আজকের রৌদ্রজ্বল আকাশের মতোই উ/ত্ত/প্ত হয়ে উঠল পরিবেশ।
………..
(ক্রমশ)