#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৩
ব্রেকিং নিউজ ” রাতপরী সারার নিজ বাসায় সারাসহ শাওন নামক এক যুবকের লা/শ উদ্ধার।”
টিভির প্রতিটি চ্যানেলে এটাই ব্রেকিং নিউজ। সাংবাদিকদের ভিড় জমেছে সারার বাসার সামনে।কেউ বা লাইভে দেখাচ্ছে
সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি। বিলাশ বহুল ফ্ল্যাটের একটা
বেড রুমে তাদের দু’জনের লা/শ পাওয়া গেছে। দু’জনে খুব বাজে ভাবে নিজেদের জ’খ’ম করেছে। শাওনের বুকের ডান পাশে এখনো ছু/রি গাঁথায় আছে। তার নিথর দেহখানা পড়ে আছে রুমের এক কোণে। র/ক্তে ভিজে আছে ওর টিশার্টসহ সাদা টাইলসে্র মেঝে। তারই পাশে পড়ে রয়েছে র/ক্ত মাখা
ভাঙ্গা ফুলদানি। রুমের জিনিসপত্রসহ লকারের তালা ভাঙা।
প্রয়োজনীয় কিছু কাগজও ছড়ানো ছিটানো রুমের আনাচে – কানাচে। জুবায়েরের (সারার স্বামীর) ছবি লুটোপুটি খাচ্ছে শাওনের র/ক্তে। হয়তো সারা গোপনে তাকে ভালোবাসে তাই তার ছবি লুকিয়ে রেখেছে নিজেরই কাছে। নারীর মন বুঝি একেই বলে। পুরো পৃথিবীর সম্মুখে ঘৃণার তীর ছুঁড়লেও সে
আজও তাকেই হৃদয়ে পুষে রাখে অতি গোপনে, স্ব-যতনে।
নীরবে নিভৃতে মন মাঝারে গেঁথে রাখে তারই নাম। শাওনের
থেকে একটু দূরেই সারার অ’ র্ধ ‘ন ‘গ্ন’ দেহখানা বসা অবস্থায় দেওয়ালে হেলান দেওয়া। ওর মুখ থেকে গড়াচ্ছে সাদা সাদা ফ্যানা। বাম হাতটা মুচড়ে ভেঙে ফেলা। গালে থাপ্পড়ের দাগ সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। ঠোঁটে, বুকে, পেটে, ভারী কিছুর আঘাত স্পষ্ট। পাশেই পড়ে আছে বালিশ এবং সবুজ রঙের জর্জেট ওড়না। এতে ধারণা করা যাচ্ছে, সম্ভবত কেউ তাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে। হয়তো তারা দু’জনেই পূর্ব পরিচিত এবং শত্রুতার রেশ ধরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরমধ্যে জানা গেছে, এই বাসায় আরো চারজন মেয়ের আনাগোনা বেশি। তারা হলেন গীতা, সীতা, রিপা, এবং সোনিয়া। তারাও সবার পরিচিত মুখ এবং পেশায় প/তি/তা। যাদের চলাফেরা হাই সোসাইটির পয়সা-ওয়ালা কাপুরুষ লোকদের সঙ্গে। সারার মতোই তাদেরও নিজ নিজ ফ্ল্যাটসহ গাড়ি বাড়ি সবই আছে।
শুধু মান-সন্মান বাদে। আর সারাকে দেখতে তারা মাঝেমধ্যে এখানে আসত, আড্ডা দিতো, মজা করত। আজ বিকালেও
সীতা আর রিপা এসেছিল।কারণ সারা সকালে জানিয়েছিল তার নাকি ভীষণ জ্বর।র/ক্ত বমিও করেছে বেশ কয়েকবার।
এজন্য কাস্টমার বিদায় করে তারা দেখে করতেও এসেছে। আর এসে দেখে সারা এবং শাওন দু’জন মৃ/ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর শাওনকে তারা চিনে। কারণ শাওন তাদের শয্যা সঙ্গী হয়েছে বেশ কয়েকবার। তারপর ওরা দু’জন পুলিশকে জানালে, ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে সাংবাদিক এসে লাইভ করে খবরটা ভাইরাল করে দেয়। মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়েও যায় ‘রাতপরী’ সারার মৃ’ ত্যুে’ র খবর। এতে সাধারণ জনতা সংবাদটা দেখে কটুক্তি করে গালমন্দ করতেও বাকি রাখল না। রাতপরীর সঙ্গ নিতে কত পুরুষের সংসার ভেঙেছে তার ইয়াত্তা নেই।আজ সেই পুরুষদের সহধর্মিণীরা শাপ-শাপান্তর করছেন, প্রচন্ড খুশিও হয়েছেন। শুধু সারার কারণেই উনারা স্বামী সুখসহ সোনার সংসারটাও হারিয়েছেন। আর সন্তানরা হয়েছে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। আর যারা সারার কাছে গিয়ে ম/র/ণ ব্যাধি এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ
ভয়ে কাঁদছেন, মৃ/ত্যু/র ভয়। কারণ উনাদের মৃ/ত্যু/ও অতি সন্নিকটে। ছেলের কথা শুনেই তাৎক্ষণিক শাওনের বাবা-মা সারার বাসায় উপস্থিত হয়েছেন। শাওনের দে/হ/খা/না নিতে
কিন্তু পুলিশ জানালেন, বডি পো/ষ্ট/ম/র্টে/ম না করা অবধি দেওয়া যাবে না। বরং পো/ষ্ট ম/র্টে/ম করে ডেডবডি বাসায় পৌঁছে দিবেন। টাকা এবং ক্ষমতার জোরেও উনারা ছেলের পো/ষ্ট/ ম/র/টার্ম ঠেকাতে পারলেন না। অগত্যা কেঁদে ফিরে গেলেন শূন্যহাতে।
__________________________
সাদা এ্যপ্রোন শরীর থেকে খুলতে খুলতে তিতাস কেবল পা রাখল ভোরের কেবিনে। ভোরের শরীর র/ক্ত দেওয়া যাচ্ছে।
এই নিয়ে চার ব্যাগ। আর ওর মাকে রাখা হয়েছে আইসিইউ
রুমে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।তিতাস সবকিছু ঠিকঠাক দেখে নিঃশব্দে বসে মাথা রাখল ভোরের বুকে।অতঃপর মনোযোগ সহকারে শুনল ভোরের হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি। তারপর ওর মাথা তুলে ভোরের কপালে অধর ছুঁইয়ে মলিন হাসল। স্নিগ্ধ হাস্যোজ্জ্বল মুখখানাতে বেদনার ছাপ। তিতাস ভোরের হাত ধরে আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল রেখে বলল,
-”একবেলা খাইয়ে দিয়ে সারাদিন উপোস রাখলেন, এটা কি ঠিক? সত্যিই সিনিয়র বউরা দায়িত্ব বুঝে না। তারা স্বামীদের কথা ভাবে না, ভালোবাসা তো দূর।”
জ্ঞানহীন ভোরের থেকে কোনো জবাবই এলো না। সে এখন ঘুমে বিভোর। তিতাস ভোরের কপালের চুল সরিয়ে কানে কানে মৃদু স্বরে বলল,
-”আপনাকে আমার এখনো অনেক ভালোবাসা বাকি ভোর।
আপনার সঙ্গে দীর্ঘ পথচলাও বাকি। শুনবেন না, ভালোবাসি কি না? পরখ করে দেখবেন না আমার মনে আপনার স্থানটা ঠিক কোথায়? কতভাবে আপনার মায়াতে জড়িয়ছি আমি।
কি হলো, জবাব দিন?”
তখনই অনড় ভোরের গালে তিতাসের চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিতাস নীরবে কাঁদছে। তবুও ভোর জানতেও পারল না, প্রানবন্ত ছেলেটা তার নীরবতা সহ্য করতে পারছে না। সে নিশ্চুপ তাই তিতাস ক/ষ্টে পুড়ছে, একা একা গুমড়ে মরছে।
ছেলেটা নাকি তাকে ভালোবাসে না। তার জন্য নাকি একটুও ভালো নেই। মায়া যদি এমন নেশাক্ত হয় তবে ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। এই মায়ার বশেই নাহয় আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে থাকুক একে অপরের সঙ্গে। তিতাস দু’চোখ মুছে ভোরের শুকনো ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
-“প্লিজ, আমাকে এভাবে নিরাশ করবেন না ভোর। এই পঁচা ছেলেটা আপনাকেই ভীষণ ভালোবাসতে চাই, ভীষণ। আর একটাবার সুযোগ দেন। কথা দিচ্ছি, ভালোবাসার মুড়িয়ে রাখব।”
চঞ্চল তিতাসের কন্ঠে এই মুহূর্তে চঞ্চলতা নেই। আছে শুধু, একরাশ অভিমান এবং অতি মূল্যবান কিছু ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা। তিতাস ভোরের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
-” আপনাকে এভাবে দেখতে পারছি না। আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ভোর, বুকে প্রচন্ড ব্য/থা হচ্ছে।”
তিতাস আর কিছু বলার আগেই কেবিনের দরজায় পরপর
দু’বার নক পড়ল। তিতাস উঠে দরজা খুলে দেখে ছলছল চোখে রবিন দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগে
রবিন তাকে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। তারপর বলতে গিয়েও
রবিন থেমে গেল। কারণ ঠিক তখনই হন্তদন্ত হয়ে তিতাসের বাবার সেখানে উপস্থিত হলেন। এই বিপদের কথা শুনে উনি
কীভাবে পৌঁছেছেন কেবল উনিই জানেন। উনি এসেই কান্না ভেজা কন্ঠে উনার সহধর্মিণীর এবং পুত্রবধূর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তিতাস জবাব না দিয়ে আগে বাবাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসালো। তারপর দ্রুত পানি এনে খাইয়ে শান্ত হতে বলল। উনার পুরো শরীর কাঁপছে যেন এক্ষুণি পড়ে যাবেন।
একটুপর তিতাস উনাকে বুঝিয়ে শান্ত করতেই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল।
-”হেই তিতাস তোমার বে** বোনটা মারা গেছে শুনেছো?”
একথা শুনে তিতাস বজ্রাহতের মতো ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে এক সিনিয়র ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছেন।মুখভর্তি তাচ্ছিল্যের হাসি। তবে কথাটা উনিই বললেন।তিতাস উত্তরে কিছু বলতে গেলে
তিতাসের বাবার অশ্রুফোঁটা ঝরে তিতাসের ডান হাত স্পর্শ করল। নিঃশব্দে ঝরে যাচ্ছে তার বাবার অশ্রু। তিতাস এবার ঘুরে বিষ্মিত দৃষ্টিতে রবিনের দিকে তাকাতেই রবিন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। এতে তিতাস অবাকের চূড়ান্ত পযার্য়ে পৌঁছায়।
তখন বাবার দৃষ্টির সঙ্গে দৃষ্টি পড়লে উনিও কান্নাভেজা নেত্রে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ান। অর্থাৎ সত্যি। তিতাস এবার দু’পা পিছিয়ে থম মেরে বাকশূন্য হয়ে যায়। সারাকে ঘৃণা করলেও
কখনো তার মৃত্যু কামনা করে নি। মুখে খারাপ ব্যবহার করে
আড়ালে গিয়ে কেঁদেছে অনেকবার। বড় বোন হয় তার।আর আজ সকালেও তো সারা তাকে বেস্ট অফ লাক জানিয়েছে মেসেজ করে। তিতাস নিজেকে সামলে পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখে চেনা পরিচিতদের অহরহ মেসেজ, কল।
তখন আইসিইউ রুমে প্রবেশের কারণে ফোন সাইলেন্ট করে পরে জেনারেল করতে ভুলে গেছে। তাছাড়া দৌড়ের উপরেই আছে এসে থেকে। ভোর এবং তার মায়ের র/ক্ত জোগাড়েই কালঘাম ছুটে গেছে। ডোনার খুঁজে পাচ্ছিল না। একদিকের বিপদ সামলে না উঠতেই আরেকটা বিপদের সম্মুখীন হলো।
তিতাস নিজের শরীরের ভার ছেড়ে সেখানেই বসে পড়ল। সে
আর সহ্য করতে পারছে না হারানোর ব্যথা। এই ব্যথা তাকে নীরবে গোপনে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তখন তিতাসের বাবা ছুটে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। বাবার ছেলের অবস্থা দেখে রবিনও কেঁদে ফেলেছে।ঠিক তখন তার ফোনে মেসেজ আসল,
-”রবিন ভাই, শাহিনা তিতাসের বাবার লকারের তালা ভেঙে কিসব কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল। উনার সঙ্গে বড় ট্রলি আছে।”
To be continue……….!!