তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব ১৪

0
1103

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

নূরা সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই শার্টের দুই হাতা ফো’ল্ড করা , পকেটে সেই দু-হাত রেখে স্ট্রে’ই’ট ভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৩-২৪ বছর বয়সী একজন অত্যন্ত সুদর্শন , সু’ঠা’ম দে’হে’র অধিকারী একজন পুরুষকে দেখতে পায়। বাচ্চাদের মুখে তীব্রকে ‘বন্ধু’ নামে সম্বোধন করতে দেখে নূরা বুঝতে পারে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি তাহলে ইনিই। নূরা বসা অবস্থা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ায় , বুকের দু-পাশে দু’হাত গু’জে , ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে নিয়ে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে…

“আচ্ছা , তাহলে আপনিই হলেন সেই প’চা ক্ষে’তে’র বা’সি মূলা!”

নূরার এমন কথায় বুঝতে শিখেছে উপস্থিত এমন সব বাচ্চারা একতালে স্ব শব্দে হেসে উঠে , ওদের হাসতে দেখে বাকি ছোট ছোট বাচ্চারাও হাসতে শুরু করে। সব বাচ্চাদের হাসতে দেখে নূরাও ঠোঁট চে’পে নিজের হাসির নিয়ন্ত্রণ করছে। তীব্র যেনো পুরোপুরি বো’কা ব’নে গিয়েছে। হাতের ইশারায় শফিককে নিজের কাছে ডাকে। শফিক আসতেই তীব্র ফিসফিসিয়ে বলে…

“এই শফিক বাচ্চারা সবাই আমাকে দেখে হাসছে কেন?”

শফিক নিজের মাথার পিছন সাইডে হাত বুলাতে বুলাতে বলে…
“বস , ভাবী আপনাকে প’চা ক্ষে’তে’র বা’সি মূলা বলে সম্বোধন করেছে , আর বাচ্চারা সেটা শুনেই হাসছে”

তীব্র চোখ ছোট ছোট করে একপলক বাচ্চাগুলোকে আরেকপলক নূরাকে দেখে শফিককে উদ্দেশ্য করে বলে…

“লাইক সি’রি’য়া’স’লি! আমাকে দেখে এমন মনে হয়?”

শফিক ওর জিহ্বার অগ্রভাগ আলতো ভাবে কা’ম’ড়ে ধরে দ্রুততার সাথে মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে ‘না’ সূচক জবাব দেয়। তীব্র ভা’বা’ন্বি’ত কন্ঠে বলে…

“তাহলে তোদের ভাবী আমাকে এমন বললো কেন?”

“ভাবীর থেকে কারণটা শুনে নিলে ভালো হবে বস, যেহেতু ভাবী আপনাকে এমন বলেছে তাই এর পিছনে আসল কারণটাও ভাবীই জানে নিশ্চয়ই”

তীব্র কিছুসময় নিরব থেকে বলে…
“দ্রুত সব বাচ্চাদের তাদের নিজ নিজ রুমে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো , আমি নূরার সাথে পারসোনালি কথা বলতে চাই”

শফিক আর টু শব্দটি না করে বাকি এ’সি’স’ট্য’ন্ট’দের নিয়ে সব বাচ্চাদের তাদের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। মিনেট পাঁচেক এর ভিতর কাজ সম্পন্ন ও হয় , নূরা চোখের আকৃতি কিছুটা ছোট করে সব দেখছে। সবাই চলে গেলে নূরার দৃষ্টি আবার প’রে তীব্রের মুখশ্রী পানে। তীব্র ধীরপায়ে নূরার সন্নিকটে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। নূরার থেকে ১মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে পরে তীব্র। তারপর প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলে…

“আমাকে ঠিক কোন কারণে তোমার প’চা ক্ষে’তে’র বা’সি মূলা বলে মনে হলো? এক্সপ্লেইন করো”

নূরা একহাতে মুখ চে’পে ধরে হেসে ফে’লে। কিছুসময় পর হাসি কন্ট্রোল করে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে…

“আপনার শরীরের বর্ণ আর মূলার শরীরের বর্ন সেইম টু সেইম , আপনার আগে মূলা নামক সবজিটি এই পৃথিবীতে এসেছে , তার জে’রো’ক্স ক’পি যেহেতু আপনি তাই আপনি বা’সি মূলা। আর পাশাপাশি একজন মা’ফি’য়া আপনি তাই আপনাকে প’চা ক্ষে’ত বলেছি।”

নূরার এক্সপ্লেইন শুনে তীব্রের যেনো মাথা কা’জ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আপনমনে বু’লি আ’ও’ড়া’চ্ছে ‘এ কেমন যু’ক্তি’?

নূরা কিছুসময় তীব্রকে পর্যবেক্ষণ করে , পরমুহূর্তে আর কিছু না বলে ওকে পাশ কা’টি’য়ে বাচ্চাদের কাছে চলে যেতে নেয় সেইমূহূর্তে তীব্র নূরার ডান হাত ধরে হ্য’চ’কা টা’নে আবারও নিজের সামনে এনে দা’ড় করায়। হু’ট করে হাতে টান পড়ায় নূরা কিছুটা বে’সা’মা’ল হয়ে ডান হাত দ্বারা তীব্রের বুকের বাম পার্শ্বের শার্ট বেশ শ’ক্ত ভাবে মু’ষ্ঠি’ব’দ্ধ করে ধরে , চোখ-মুখ কু’চ’কে ফেলে।

তীব্র দা’ত দিয়ে আলতো করে নিচের ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে নূরার ভ’য়া’র্ত মুখশ্রী পানে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিছুসময় পর নূরা পিট পিট করে চোখ মেলে নিজের অবস্থান তীব্রের বেশ সন্নিকটে দেখে সঙ্গে সঙ্গে দু’কদম পিছিয়ে যায় , কিন্তু তীব্রের হাতে এখনও ওর হাত মু’ষ্ঠি’ব’দ্ধ অবস্থায় আছে। তীব্রকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে নূরা চোখের আকৃতি ছোট করে ফে’লে। নূরা ওর ডান হাত তীব্রের চোখের সামনে নাড়াতেই তীব্রের ধ্য’ন ভা’ঙে।

নূরা ধা’ত’স্ত কন্ঠে বলে..
“হাত ছাড়ুন”

নূরার কথায় তীব্রের মাঝে তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য হলো না , তীব্র ভাবলেশহীন কন্ঠে বলে…

“আমি আমার বউয়ের হাত ধরেছি, এতে স’ম’স্যা থাকার তো কথা না। আর স’ম’স্যা থাকলেও আমি কেয়ার করি না”

নূরার এবার এক ঝ’ট’কা’য় নিজের হাত তীব্রের হাতের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে…

“আমি অবিবাহিত , তাই আমাকে নিজের বউ বলে দা’বি করা বা’দ দিন”

তীব্র ঠোঁট বা’কি’য়ে হেসে বলে..
“খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে বিয়ে করে নিবো , চি’ন্তা করো না বউ , উপসস হবু বউ!”

“ম’গে’র মু’ল্লু’ক পেয়েছেন নাকি! আপনাকে আপনি আজই ১ম দেখছি , আপনার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানিও না। তাই আপনাকে বিয়ে করার কোনো প্রশ্নই আসে না”

তীব্র নূরার দিকে এক কদম অগ্রসর হয়ে বলে…
“আগে বিয়ে করে নাও তারপর আমার সম্পর্কে যা যা জানার সব জানতে পারবে”

নূরা রা’গে ফো’স ফো’স করছে, হি’তা’হি’ত’জ্ঞা’ন’শূন্য হয়ে তীব্রের গালে থা’প্প’ড় দিতে উদ্দ্যত হলে তীব্র নূরার হাত ধরে ফেলে। তারপর নূরার হাতটি নিজের মুখের কাছে এনে ওর হাতের তা’লু’তে শব্দ করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। তীব্রের এহেনু কাজে নূরার সর্বশরীর যেনো কেঁপে ওঠে। তীব্র নূরার হাতটি ওভাবেই ধ’রে রেখে শান্ত কন্ঠে বলে…

“আজ যা করতে চেয়েছিলে তা ২য় বার করার কথা চি’ন্তা’তে’ও এনো না। তোমার হাত আমাকে আ’ঘা’ত করার জন্য উঠবে না , উঠবে শুধু আমার প্রতি তোমার হৃদয়ের গহিন থেকে ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য। চাইলেই নিজের জো’ড় খাটিয়ে তোমাকে নিজের করে নিতে পারি, তুমি আমার কাজে হাজার বা’ধা প্রদান করেও এতোটুকু স’রা’তে সক্ষম হবে না। কিন্তু আমি তা করবো না , তোমাকে ১ম দেখার পর থেকে তোমার জন্য আমার মন জুড়ে অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করতে শুরু করেছে। তোমার জায়গাটা আমার কাছে অনেক দা’মী তাই আমি চাই আমার জন্য তোমার মনে ভালোবাসার সৃ’ষ্টি করতে। তারপর পুরোপুরি ভাবে আমার করে নিতে। কিন্তু তার আগে তোমাকে আমার বিয়ে করে নেওয়া প্রয়োজন, যেনো আমার থেকে তুমি কোথাও পা’লি’য়ে যেতে না পারো।”

নূরা যেনো পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তীব্র আবারও বলে…
“বিয়ে আজই হবে , তুমি স্বইচ্ছায় না করতে চাইলে জোর করে হলেও বিয়ে তোমাকে করতেই হবে”

পরক্ষণেই তীব্র শফিককে ডাকে৷ শফিক রুম থেকে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে তীব্রের সামনে এসে দাড়ায়। তীব্র নূরার উপরেই নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে বলে…

“মহিলা সার্ভেন্টদের বলো খুব দ্রুত যেনো তারা আমার নূরপাখিকে নতুন বউয়ের সাজে সাজিয়ে দেয়। আর কাজী সাহেবকে কল করে দ্রুত আসতে বলো। আজই বিয়ে হবে আমার সাথে নূরপাখির।”

শফিক চ’ট করে নূরার দিকে তাকায়, নূরা চোখ-মুখের আকৃতি অস্বাভাবিক করে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে। পরমুহূর্তে শফিক নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে স্থান ত্যগ করে। কিয়ৎক্ষণ পর ৪জন মহিলা এসে উপস্থিত হয় নূরাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে। তীব্র শান্ত কন্ঠে নূরাকে উদ্দেশ্য করে বলে…

“কোনো রকম চা’লা’কি করতে যেও না নূরপাখি , তোমার খুশির জন্য এতোগুলো ছোট ছোট বাচ্চার থাকার নিরাপদ জায়গা দিয়েছি , ভালো খাবার দিচ্ছি , পোশাক দিচ্ছি , পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তুমি যদি এই মূহূর্তে আমার কথাগুলো না মানো তাহলে আমার খা’রা’প রূপে আমাকে আসতেই হবে এতে বাচ্চাগুলোর কোনোরূপ ক্ষ’তি হয়ে গেলে পরে আমাকে দা’য়ী করতে পারবে না।”

এতোসময় তীব্রের বলা কথাগুলোতে নূরা শুধু অবাকই হয়েছে , কিন্তু তীব্রের লাস্ট বলা কথাগুলো শুনামাত্র নূরার বুকের ভিতরটা যেনো মো’চ’ড় দিয়ে উঠলো। অজানা ভ’য়ে নূরার দু’চোখে পানি টলমল করে উঠে। মুখ দিয়ে কোনোরূপ শব্দ বের না করে তীব্রকে পাশ কা’টি’য়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয় , নূরার পিছন পিছন বাকি ৪জন মহিলাও হাটা ধরেন। তীব্র একপলক নূরার যাওয়ার পানে৷

——————–
ঘন্টা ২য়েক এর মধ্যে সুষ্ঠু ভাবে সব নিয়ম মেনে তীব্র আর নূরার বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয়। উপস্থিত সকল স্টাফ , বাচ্চাদের মুখে হাসির ঝ’ল’ক বয়ে যাচ্ছে। তীব্রের মুখশ্রীও খুশিতে ভরপুর। কিন্তু নূরার মুখশ্রী জুড়ে বিরাজ করছে বি’ষ’ন্ন’তা’র কালো চাদর। বাচ্চাদের কথা ভেবে সে তীব্রকে বিয়ে করছে ঠিকই কিন্তু মনে মনে সে এই বিয়েকে মেনে নেয় নি। তীব্র নূরার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে…

“কিছু পেতে গেলে কিছু স্য’ক’রি’ফা’ই’স করতে হয় বউ। এখন তোমার মনে হচ্ছে বাচ্চাদের নিরাপত্তা তোমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তাই তুমি অনিচ্ছা শর্তেও অবশেষে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হলে। এটা তোমার জন্য অনেক বড় একটা ত্য’গ। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি খুব শিঘ্রই এমন দিন আসবে যখন তুমি আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে , আর চি’ন্তা করবে আজকে তোমার লাইফে যে পরিবর্তনটা হলো তা তোমার ভালোর জন্য হয়েছে।”

নূরা নিষ্পলক দৃষ্টিতে তীব্রের মুখশ্রী পানে তাকিয়ে থেকে ওর বলা প্রতিটি শব্দ শ্রবণ করলো৷ আর মনে মনে ভাবলো…

“মানুষটা অনেক বেশি কনফিডেন্স নিয়ে বলছে তার জন্য আমার মনে প্রচুর ভালোবাসার সৃ”ষ্টি হবে। তবে কি সত্যিই কখনও সেটা হবে?”

—————————
কেটে যায় প্রায় ২মাস…..
এই ২মাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘ’টে’ছে। নূরা যে কাজগুলো করতে বেশি পছন্দ করে , যে কাজ গুলো করলে ওর মনে আনন্দের হাওয়া দোলা দিয়ে যায় সেই কাজ খুব সহজে আর সুন্দর ভাবে যেনো সম্পন্ন হয় সেদিকে সবসময়ই খেয়াল রাখে তীব্র। মা’ফি’য়া লাইফের কাজগুলো থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে সড়িয়ে আনছে , কারণ তীব্র চায় না ওর খু’ন করা , নানান ধরনের খা’রা’প কাজ করার জন্য ওর শ’ত্রু’রা নূরার কোনো প্রকার ক্ষ’তি করুক।

মা’ফি’য়া জগতের এতোটুকুও আ’চ তীব্র নূরার আশে পাশেও লাগতে দিবে না। নূরা ওর বেশির ভাগ সময় অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের সাথেই কাটিয়ে দেয় , তীব্র ও এখন বাচ্চাদের সাথে মন থেকে ফ্রী হতে শুরু করেছে। ওর কঠিন হৃদয়’হী’ন মনে বাচ্চাগুলোর পবিত্র , সাফ , কমোল হাতের ছোঁয়া পড়ায় ওদের প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে। তীব্রকে বাচ্চাদের সাথে এমন ভালোবাসা নিবেদন করতে দেখে নূরার মনেও তীব্রকে নিয়ে অন্যরকম ভালোলাগা গুলো কাজ করছে।
—————————
তীব্র আর নূরার বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু নূরা যেহেতু তীব্রকে পছন্দ করে না , স্বামী হিসেবে মন থেকে মানে নি তাই তীব্র নূরাকে বলেছে….

“আমি তোমার উপর জো’ড় খাটিয়ে নিজের অ’ধি’কা’র ফ’লা’বো না , যেদিন তোমার মনে আমার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসার সৃষ্টি হবে , তুমি নিজমুখে আমার জন্য তোমার মনে কাজ করা সকল ভালোবাসাময় অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করবে সেদিনই তোমাকে পুরোপুরি ভাবে আমার করে নিবো প্রমীস।”

—————————-
তীব্রের এই মুগ্ধকর আ’চা’রণ ও চি’ন্তা ভাবনা গুলো নূরাকে ভাবাতে বাধ্য করে তীব্র ওকে কতোটা ভালোবাসে তা অনুভব করাতে চায় ওর মন , মস্তিষ্ক।

সময় তার আপন গ’তি’তে চলছে। নূরা যখন পুরোপুরি ভাবে বুঝতে সক্ষম হয় এবার ওর তীব্রের কাছে নিজের মনের অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করা প্রয়োজন তখন ও মনে মনে ভিষণ উ’ত্তে’জি’ত হয়ে পড়ে। মনঃস্থির করে কয়েকদিন পর ভালোবাসা দিবস আসতে চলেছে সেদিন ই ও তীব্রকে নিজের মনের কথা গুলো জানাবে।

——————————-
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ সাল~
…………………………

শফিকের সাহায্য নিয়ে নূরা তীব্রের বাড়িতে (রহমান মঞ্জিল) ওদের রুমের ভিতরের সম্পূর্ণ অংশ সাদা গোলাপ আর
রং- বেরঙের মোমবাতি দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছে , মোমবাতি গুলোর আলোয় পুরো রুম ঝলমল করছে। নূরা শফিককে বলে দেয়…

“আজ যেনো এ বাড়িতে কেও না আসে , সে আর তীব্র একাকী সময় কাটাতে চায়।”

শফিক ও নূরার কথায় সায় প্রদান করে। নূরা সম্পূর্ণ সাদা রংয়ের সিল্ক ও নরম জ’র্জে’টে’র মিশ্রণে তৈরি একটা শাড়ি পড়েছে। চুলগুলো খো’পা করে খো’পা’কে ঘিরে বেলি ফুলের মালা পে’চি’য়ে রেখেছে। কপালে ছোট্টো টিপ দিয়েছে , ঠোঁটে গাঢ় খয়েরি লিপস্টিক দিয়েছে। ২ হাত ভর্তি কালো রংয়ের ২ডজনের বেশি চুড়ি পড়েছে , গলায় একটা ছোট্ট পেন্ডেন্ট পড়েছে। সাজ সম্পন্ন হতেই আয়নায় নিজেকে আরো একবার দেখে নেয়।

সেইমূহূর্তে কড়া পারফিউম এর গ’ন্ধ নাকে আসতেই রুমে কারোর উপস্থিতি বুঝতে পারে নূরা। ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে। সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই তীব্রকে দেখতে পায়। তীব্র সাদা শার্ট এর উপর কালো কোট এর পাশাপাশি কালো রংয়ের প্যন্ট পড়েছে। চুলগুলোতে হালকা জে’ল দিয়েছে , হাতে ব্রা’ন্ডের ঘড়ি। এতেই তীব্রকে দেখতে অত্যন্ত সুদর্শন লাগছে।

তীব্র এক দৃষ্টিতে নূরাকে দেখছে , যে দৃষ্টিতে মিশে আছে নি’খা’দ ভালোবাসা , ভালোলাগা , মুগ্ধতা। নূরা ধীরপায়ে তীব্রের সন্নিকটে এগিয়ে যেতে শুরু করে। তীব্র স্থির হয়েই দাঁড়িয়ে আছে নূরাকে দেখছে তো দেখেই যাচ্ছে। কি অমায়িক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে আজ নূরার মাঝে , যে তীব্র নিজের দৃষ্টি অন্যত্র সড়াতে সক্ষম হচ্ছে না একমুহূর্তের জন্য।

নূরা তীব্রের একদম সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়ে পরে। তারপর তীব্রের বাম কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বলে…

“এখনি এতো বেশি অবাক হলে চলবে মি.আবরার রহমান তীব্র! এখনও তো অনেক কিছু দেখার জানার বা’কি আছে তোমার”

নূরার কথায় তীব্র ঠোঁট প্রসারিত করে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে। তারপর কিছু বলতে উদ্দ্যত হলে , নূরা ওর ডান হাতের একটা আঙুল তীব্রের ঠোঁটের উপর রেখে বলে…

“উ’হুহহহ আজ তুমি কোনো কথা বলবে না , আজ শুধু আমি বলবো আর তুমি নিরব হয়ে শুনবে”

তীব্র ওর ঠোঁট চু’মু’র ন্যয় করতেই নূরা নিজের হাত সরিয়ে নেয়। তারপর দরজার পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে ২গ্লাস ও’য়া’ইং ঢে’লে নিয়ে আবারও তীব্রের সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটা গ্লাস তীব্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে…

“শে’ষ করো দ্রুত”

তীব্র মিষ্টি হেসে নূরার হাত থেকে ও’য়া’নিং এর গ্লাসটি নিয়ে এক চুমুকে সবটা শে’ষ করে। ও’য়া’নিং টি ভিষণ ক’ড়া ডো’জে’র ছিলো হয়তো তাই তীব্রের মাথা কিছুটা চ’ক্ক’র দিয়ে উঠে। মূহূর্তের মধ্যে চোখের সামনে সবকিছু ঝা’প’সা দেখেতে শুরু করে। নূরা টেবিলের উপর থেকে একটা ধা’রা’লো ছু’রি উঠিয়ে নেয়। তারপর সেটা তীব্রের মুখের সাথে লা’গি’য়ে আলতো ভাবে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে…

“জীবনের এই ২৩ টা বছরের বেশিরভাগ সময় তো অন্যের উপর ছু’রি চালিয়েই কাটিয়ে দিলে , আজ যদি এই ছু’রি আমি তোমার বুকের ঠিক বামপার্শে ঢু’কি’য়ে দেই তাহলে কেমন হবে?”

নূরার এমন কথায় তীব্র শব্দ করে হেসে দেয় , ঘো’লা চোখে নূরার দিকে তাকিয়ে নিজের দু’হাত নূরার কাধের দু’পাশে রেখে শীতল কন্ঠে বলে….

“তুমি যেদিন থেকে আমার আ’ধা’রে ঢা’কা জীবনে আলোর দিশা হয়ে এসেছো , সেদিন থেকে নিজের সব পা’প কাজকে একটু একটু করে দূ’রে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এসেছি। তোমাকে ভালোবেসে , তোমার ভালোবাসা নিয়ে একটা সুস্থ সুন্দর জীবন কাটাবো বলে ঠিক করেছি। তুমি কি পারবে আমার বুকে এই ধা’রা’লো ছু’রি বসাতে?”

“পারবো না নাকি!”

“পারবে না , জানি তো এখন তুমিও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছো। তাই আজ এতো সুন্দর করে সম্পূর্ণ ঘরটি সাজিয়েছো , নিজে এতো সুন্দর করে সেজেছো। আজ তোমার মুখে আমার জন্য ভালোবাসি কথাটি শুনে তোমাকে পুর…….

তীব্র পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই নূরা তীব্রের বুকের বাম পার্শ্বে হাতে থাকা ধা’রা’লো ছু’রি’টি ঢু’কি’য়ে দিয়ে ওর থেকে দু’কদম পিছিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পরে। চোখের পলকে কি থেকে কি হয়ে গেলো তা বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না তীব্র , বুকের বাম পার্শ্বে ক’রু’ণ য’ন্ত্র’ণা অনুভব হতেই হাঁটু ভে’ঙে মেঝেতে বসে পরে সে। তীব্রের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে বে’দ’না’র নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। কাঁপা কাঁপা স্বরে নূরাকে উদ্দেশ্য করে বললো….

“এ এ ত তু তুমি ক কি কর করলে নূ নূর পাখি!”

#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here