তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব ১৩

0
997

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

কেটে গেছে প্রায় ৩মাস
———————-
তীব্র তার নিজের রুটিন মতোই প্রতিটি দিন পার করছে। টাকার লো’ভ একবার কোনো মানুষকে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেললে সেই মানুষটি যেনো অ’ন্ধ হয়ে যায়, টাকার পি’ছ’নে ছুটতে ছুটতে সে কোন পথে দৌড়াচ্ছে তা একটাবার খেয়াল করে দেখে না, যেকোনো কিছুর বিনিময়ে টাকা আত্ন’সা’ৎ করতে পারলেই হলো।

এতে যতো নিম্নে নামতে হোক, যতো খা’রা’প কাজই করতে হোক না কেন সেই হিতাহিতজ্ঞান বো’ধ নিজের মাঝে কাজ করে না। কথায় আছে লো’ভে পা’প আর পা’পে মৃ’ত্যু। পা’প কখনও তার বা’প’কেও ছা’ড়ে না, যে যেমন পা’প কাজ করবে তার শা’স্তি ততো বেশি ভ’য়া’ব’হ আর ক’রু’ণ হবে। তীব্রের পা’পে’র কলসী দিনকে দিন ভ’র’তে শুরু করেছে যেনো, শতশত অ’স’হা’য় মানুষের অ’ভি’শা’পে ভরপুর ওর ২৮ বছরের জীবন।

একজন মন্ত্রীর সাথে মিটিং শেষ করে তীব্র বাসার উদ্দেশ্য গাড়ি করে ফিরছিলো, এর মাঝে ট্রাফিক সিগন্যল পড়ে যাওয়ায় কিছুটা বি’র’ক্তি’তে ওর চোখ-মুখ কু’চ’কে আসে। গাড়ির জানালা খুলে মাথা পুরো বের করে সামনে আর পিছনে একপলক দেখছিলো তীব্র এর মাঝে ওর নজর আটকে যায় রাস্তার ডান পার্শে ফু’ট’পা’তের উপর, প্রায় ১০-১২ জন ছোট ছোট বাচ্চা হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে একজন ১৯-২০ বছর বয়সী মেয়েকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

মেয়েটির মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে, গাড় কাজল দেয়া ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট টানা টানা একজোড়া চোখের একটা চোখ দেখা যাচ্ছে, গোলাপ রা’ঙা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসছে আর নিজের চারপাশে থাকা ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর মাঝে খাবার বিতরণ করছে। মেয়েটির পরনে সাদা-কালো মিশ্রিত সালোয়ার কামিজ আর মাথায় হিজাব দেওয়া। ভিষণ মোহনীয় লাগছে মেয়েটির সৌন্দর্য তীব্রের নিকট।

কি মনে করে বসার সিটের পাশ থেকে ফোন বের করে মেয়েটির বেশ কয়েকটা ছবি উঠিয়ে নেয়। কিছুতেই মেয়েটির সম্পূর্ণ মুখ তীব্রের চোখে পড়ছে না৷ এর মাঝেই ট্রাফিক সিগন্যালে সবুজ বাতি জ্বলে উঠে। তীব্রের পিছনে অবস্থান করা গাড়িটি হর্ণ বাজাতে শুরু করলে তীব্রের ধ্য’ন ভাঙে। আরো একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময়ী হাসি ঠোঁটে বজায় রেখে তীব্র গাড়ি স্টার্ট করে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়।

বাসায় ফিরে মন্ত্রীর সাথে করে আসা ডি’ল’টি কবে কিভাবে সম্পন্ন করবে তা নিয়ে চি’ন্তা করে আর সব ঠিকঠাক করে ফে’লে। পরমুহূর্তে তীব্রের রুমের বাহিরে থাকা গার্ডকে ডেকে বলে এক কাপ ব্লা’ক কফি যেনো এই মূহূর্তে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গার্ডটি তীব্রের কথানুযায়ী কাজ করতে আবারও বাহিরে চলে যায়। তীব্র সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকোনিতে চলে যায়।

বেশ কিছুসময় ওভাবেই থাকতে থাকতে সা’র্ভে’ন্ট এসে তীব্রকে কফি দিয়ে স্থান ত্য’গ করে। তীব্র কফিতে একবার চুমুক দিয়ে ফোনের ল’ক খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। কিছুসময় ফোন স্ক্রলিং করতে করতেই তীব্র ওর গ্যলারিতে রাস্তায় উঠানো মেয়েটির ছবিগুলো দেখতে পায়। তীব্রের দৃষ্টি আবারও ফোনের উপর আটকে যায়, যেনো অদৃশ্য কোনো মায়া বিরাজ করছে এই ছবিতে থাকা মেয়েটিকে ঘিরে যার টা’নে বারংবার তীব্রের দৃষ্টি এই মেয়েটির উপর আটকে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

তীব্র আরেকবার কফিতে চুমুক দিয়ে গ্লাসটি রেলিং এর উপর রেখে দেয়, তারপর ফোনে থাকা মেয়েটির প্রতিটি ছবি জু’ম করে করে দেখতে শুরু করে। নিজেকে ইতিমধ্যে বড্ড বে’হা’য়া পুরুষ মনে হচ্ছে তীব্রের। কখনও কোনো নারীর দিকে ভু’লে দু’বার না তাকানো ছেলেটি এখন একজন মেয়ের ছবি উঠিয়ে নিয়েছেন মেয়েটির পারমিশন ছা’ড়া, এখন আবার জু’ম করে করে মেয়েটিকে দেখছে আর নানান ধরনের চি’ন্তা ভাবনা করতেছে।

আরো বেশ কিছু সময় পা’র হয়ে গেলে তীব্র হু’ট করেই বেলকোনি থেকে সরে রুমে চলে আসে। তারপর নিজের অন্য আরেকটি ফোন দিয়ে নিজের পারসোনাল বিশেষ সেক্রেটারি শফিককে কল করে দ্রুত নিজের বাসায় আসতে বলে। মিনেট ২০ এক পর শফিক তীব্রের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে…

“আসতে পারি বস!”

তীব্র মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক সম্মতি জানায়, তীব্রের সম্মতি পেয়ে শফিক শুকনো একটা ঢো’ক গি’লে রুমের ভিতর প্রবেশ করে তীব্রের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে পরে। তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শফিকের উপর তারপর শান্ত কন্ঠে বলে…

“ফোন চেক করো একটা ছবি পাঠিয়েছি, ছবিতে থাকা মেয়েটির এ-জেড সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমার চাই আজকের মধ্যেই”

শফিক চ’ট করে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্রের দিকে আর তীব্রের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সাথে ওর চো’খা-চো’খি হয়ে যাওয়ায় দ্রুত নিজের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে পকেট থেকে ফোন বের করে জিমেইল এ প্রবেশ করে মেয়েটির ছবি দেখে শফিকের ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে আসে। ধীর কন্ঠে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

“বস মেয়েটির তো সম্পূর্ণ মুখ দেখা যাচ্ছে না”

তীব্র সোফার পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলের উপর থেকে একটা গা’ন হাতে উঠিয়ে নিয়ে নিজের মুখের সম্মুখে এনে গানটির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে স্বাভাবিক ভাবে বলে..

“কোনো অ’ঙ্গা’ত ক’ঙ্কা’লের একটুকরো হা’ড্ডি দ্বারা একজন মানুষের সম্পূর্ণ অ’স্তি’ত্ব বের করা যায় আর তুমি একটা মেয়ের চেহারার একপাশ দেখে তার খোজ এনে দিতে পারবে না বলছো!”

তীব্রের শীতল কন্ঠে ধ’ম’কে’র সুর স্পষ্ট বুঝতে পেরে শফিক ওর জি’হ্বা’র অ’গ্র’ভাগ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দ্বয় ভিজিয়ে নিয়ে বলে…

“প পা পারবো বস, আমি আজই মেয়েটির….

শফিক সম্পূর্ণ কথা শে’ষ করার পূর্বেই তীব্র শফিকের দিকে গা’ন তা’ক করে বলে…

“ভাবী বলবি, ভা বী… আর একবার যদি তোর মুখ থেকে ওকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি শব্দ শুনেছি তখন তুই আর ক্ষ’মা চাওয়ার জন্যও বে’চে থাকবি না এই গা’নে’র একটা বু’লে’ট তোর মাথার এপাশ থেকে ঢু’কে ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে তোকে চি’র নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে দিবে”

শফিক নিজেকে ধা’ত’স্ত করে বলে…
“ভাবীর সম্পূর্ণ খো’জ খুব দ্রুতই বের করে আনবো বস”

তীব্র হাত উঠিয়ে ইশারায় শফিককে যেতে বললে শফিক দ্রুত পায়ে স্থান ত্য’গ করে। সোফার সাথে মাথা এলিয়ে দিয়ে কপালের উপর ডান হাত ভা’জ করে রেখে চোখ জোরা বু’ঝে ফে’লে।
——————-
সন্ধ্যার একটু পর…
তীব্র কিছুসময় পূর্বেই সকালে মন্ত্রীর সাথে করে আসা ডি’ল এর কাজটি শে’ষ করে বাসায় ফিরেছে। প্রায় ১৫ বি’ঘা জমির কাগজ হা’সি’ল করে এনেছে সে, কাগজের মূল কপি নিজের কাছে রেখে সেইম ভাবে আরেক কপি বের করে জিমেইল এর মাধ্যমে মন্ত্রীর নিকট পাঠিয়ে দেয় তীব্র। সম্পূর্ণ টাকা পেমেন্ট না করা পর্যন্ত তীব্র মূল কপি কাওকে দেয় না। আপাতত ডি’ল’টি যে তীব্র সম্পন্ন করতে পেরেছে সেটা বুঝাতেই ক’পি কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছে মন্ত্রীর নিকট।

সেইমূহূর্তে শফিক রহমান মন্ঞ্জিল এর মূল দরজা পেরিয়ে ড্রয়িং প্রবেশ করে, তীব্রকে শোফার উপর বসে কাজে ম’গ্ন থাকতে দেখে। ধীরপায়ে তীব্রের হাতে ডান পার্শে এসে দাঁড়িয়ে পরে। শফিককের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তীব্র একপলক শফিকের দিকে তাকিয়ে পরপরই দৃষ্টি ল্যপটপের উপর রেখে বলে….

“কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছো?”

শফিক “হ্যা” সূচক জবাব দেয়। তীব্র ল্যপটপ বন্ধ করে বুকের সাথে দু’হাত ভা’জ করে শফিকের দিকে আবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, আর বলে…

“বলো তাহলে”

“ভাবীর নামঃ- নামিয়া ইসলাম নূরা।
ধানমন্ডির একটা ক্যফেতে ও’য়ে’টা’র এর কাজ করছে ২মাস হলো। বাবা-মা, পরিবার-পরিজন বলতে কেও নেই। ধানমন্ডিতে একটা লেডিস হোস্টেলে থাকে। প্রতি সোমবার করে আমাদের এদিকে অর্থাৎ উত্তরাতে আসে, রাস্তায় থাকা অ’স’হা’য় বাচ্চাদের একত্র করে তাদের মাঝে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার, পোশাক বিতরণ করে।”

এতোটুকু বলে শফিক থেমে যায়, তীব্র ওর কপালে একটা আঙুল ঠেকিয়ে হালকা ঘ’ষা দিতে থাকে। তারপর কিছু একটা ভেবে শফিককে উদ্দেশ্য করে বলে…

“উত্তরা শহর থেকে কিছুটা দূরে দক্ষিণ পার্শে অনেক আগে একটা পুরোনো একতলার বাড়ি কিনে নিয়েছিলাম আমি। আমি তোকে লোকেশন পাঠিয়ে দিবো, দুদিনের মধ্যে উত্তরার অ’লি-গ’লি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকা সকল অ’স’হা’য় অ’না’থ বাচ্চাদের একত্র করে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। আমার অফিসে কর্মরত সিনিয়র বয়সের ২জনকে বাচ্চাদের দায়িত্ব বুঝে দিবে। এখানে যেমন বেতন পেতো ওরা তার থেকে এক গুণ বাড়িয়ে বেতন দেওয়া হবে সেটাও বলে দিবে। ৬-৭জন মহিলা আর ২-৩ জন প্রাপ্ত বয়সের পুরুষ রাখবে বাচ্চাদের খেয়াল রাখার জন্য, দুজন সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থাও করবে।”

তীব্রের এমন উদার মানসিকতা দেখে শফিকের কপালে কয়েকটা ভা’জ স্পষ্ট হয়। পরমুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে…

“ঠিক আছে বস”

“হুম, এখন যে’তে পারো তুমি”

শফিক স্থান ত্য’গ করে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here