#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১১”
–“”দোলা ঘরের বাইরে এসে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদে৷ ঘাড়ে এবং হাতে অসম্ভব যন্ত্রণা করছে। রুদ্রর ব্যবহারে দোলার মধ্যে ঘৃণা, হীনতা বেড়েই চলেছে।
– ভাবি! তুমি ঠিক আছো? ব্রো আবারও তোমার গায়ে হাত তুলেছে? চিন্তিত কন্ঠে বলে তানিয়া ঘাবড়ে যাওয়া ফেস নিয়ে। তানিয়ার কথায় দোলা শব্দ করে কেঁদে দেয়৷ তানিয়া দোলাকে আগলে নেয় নিজের কাছে৷
– তোমার ভাইয়া অদ্ভুত মানুষ তানিয়া। কোনো সুস্থ মানুষ এমন হতে পারে না। সে নাকি আমাকে ভালোবাসে? তাহলে কীভাবে আঘাত করে আমায় বলতে পারো তানিয়া? সজল ভাইয়াকে নিয়ে উনি! ছিহ আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে সেখানে উনি আমাকে! দোলার গলা কাঁপছে৷ কথা আটকে আটকে আসছে কান্নায়৷
– শান্ত হও ভাবি৷ নিজেকে সামলাও। এইভাবে নিচে গেলে সবাই সন্দেহ করবে৷ তোমার ভাইয়া কষ্ট পাবে৷ তুমি নিচে যাও আমি আসছি! তবে ব্রো যেটা করছে একদম ঠিক করছে না৷ আর এর মূল্য একদিন চুকাতে হবে তাকে। রেগে বলে তানিয়া।
— দোলা চোখের পানি মুছে! মুখে হাসি এনে নিচে যায়। গলার পাশটা চুল দিয়ে ঢেকে নেয় হাতটা শাড়ির আড়ালে রাখার চেষ্টা করে।
– ব্রো! দৃঢ় কন্ঠে ডেকে উঠে তানিয়া। চোখ মুখে তার রুদ্রর প্রতি ক্রোধের ছাপ।
– তুই এখানে? কেনো এসেছিস? আমাকে একটু একা থাকতে দে তানি। যা এখানে থেকে।
– তুমি একা থাকো তাতে আমার সমস্যা নেই ব্রো। বা আমিও এখানে থাকার জন্য আসেনি। শুধু কয়টা কথা বলার ছিলো তোমাকে। রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকায়।
– বড্ড সাহস দেখাচ্ছিস মনে হচ্ছে। আমার সাথে এইভাবে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোকে?
– একটা ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য কোনো বোনের আলাদা করে সাহসের প্রয়োজন হয়না। যদিও জানি না আমি সত্যি কখনো তোমার বোন হয়ে উঠতে পেরেছি কি-না। ব্যথিত হৃদয়ে বলে কথাটা তানিয়া।
– তানিয়া! কি বলছিস এইসব? উত্তেজিত কন্ঠে বলে রুদ্র। আমি তোকে সব সময় নিজের বোনের চোখে দেখে এসেছি। কখনো নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছু ভাবিনি। আর আজ তুই এত বড় কথা বলতে পারলি?
– হ্যাঁ পারলাম। তুমি যদি একটা ভাই বোনের পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে বাজে কথা বলতে পারো। সেখানে আমি এই সামান্য কথাটা বলতেই পারি ব্রো।
– মানে? কি বোঝাতে চাইছিস তুই? গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র।
– ব্রো তুমি দোলা ভাবির সাথে আর কত অন্যায় করবে বলতে পারো? কেনো এত কষ্ট দাও মেয়েটাকে৷ আচ্ছা তুমি কাকে ধরে সন্দেহ করছো তাকে। যে ছেলেটার তার ভাই হয়। কি করে পারো ব্রো তুমি? তোমার আমার সম্পর্ক যতটা পবিত্র ঠিক ওদের সম্পর্কটাও ততটাই পবিত্র। আর তুমি কি-না। আমার না ভাবতেও লজ্জা লাগে ব্রো যে আমি তোমার মতো একটা ভাইয়ের বোন। আচ্ছা তোমার কেমন লাগবে বলো তো! কেউ যদি তোমাকে আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলে। আমাদের একসাথে জুড়ে দিয়ে বাজে ট্যাগ লাগাই। খুব ভালো লাগবে নিশ্চয় তোমার?
– তানিয়া! চিৎকার করে বলে উঠে রুদ্র। রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে চেপে ধরে।
– খুব গায়ে লাগছে তোমার তাই না ব্রো? শুনতেও খারাপ লাগছে নিশ্চয়? দোলা ভাবির অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করো একবার। তুমি যে কথাগুলো বলেছো। যে টর্চার করেছো অহেতুক সন্দেহের বশে সেটা একবার উপলব্ধি করো। এটাকে ভালোবাসা বলে না ব্রো। ভালোবাসা এমন ভাবে হয়না৷ হ্যাঁ মানছি তুমি ভাবিকে অনেক ভালোবাসো। তাকে হারানোর ভয় পাও৷ এই জন্য তুমি কারো সাথে সহ্য করতে পারো৷ তাকে হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকো সব সময়। কারণ তুমি একবার বিশ্বাস করে ঠকেছো৷ তার মানে এই নয় যে একজনের জন্য সেটা সবাই সাফার করবে? একজনের বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার সবাই হবে। রুদ্র আহত চোখে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে।
– এখনো সময় আছে ব্রো! নিজেকে সামলাও। ভালোবাসাকে আগলে রাখতো শিখো। নয়তো এমন একটা দিন আসবে যেদিন তোমার পাশে কিন্তু তোমার ভালোবাসার মানুষ গুলো থাকবে না৷ আর সেটাও তোমার ভুলে। ভালোবাসা হলো পানির মতো স্বচ্ছ, আকাশের মতো অসীম, বাতাসের মতো শীতল। তুমি যতটা মুগ্ধ হয়ে থাকবে ততটাই উপলব্ধি করবে। তাই বলছি ব্রো বেরিয়ে এসো এইসব থেকে। বিশ্বাস করতে শিখো নিজের ভালোবাসাকে। কোনো নিয়মের বেড়াজালে বাঁধতে যেওনা। তাহলে সেটা আর ভালোবাসা থাকে না৷ অধিকারবোধ জমিয়ে অহেতুক ভালোবাসার প্রকাশ দিয়ে চালানো হয়। কথাগুলো বলে তানিয়া এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না সেখানে। তানিয়ার চোখে পানি। দোলার চোখ মুখ দেখে তানিয়ার ভীষণ খারাপ লাগে৷ যার জন্য আজ রুদ্রকে এতগুলো কথা শোনানো তার। আর সত্যি তো বলেছে সে। এইভাবে কখনো ভালোবাসা হয়না৷
রুদ্র অনুভূতিশূণ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷ তানিয়ার বলা কথাগুলো বারবার ভাবতে থাকে। সত্যি অনেক অন্যায় করে ফেলেছে সে দোলার সাথে। দোলা তো এইসবের যোগ্য না। তাহলে কেনো করছে এমন? রুদ্র ধীর পায়ে বারান্দায় এগিয়ে যায়৷ বারান্দায় রাখা চেয়ারে গা এলিয়ে বসে। হতাশা, অনুশোচনা তোলপাড় অবস্থা ভেতরে।
– সজল চলে গেছে একটু আগে৷ রাতের খাবার খেয়ে চলে যায় সে৷ যদিও সে চলে যাওয়ার বাহানা করেছিলো আগে কিন্তু রত্না চৌধুরীর জন্য পেরে উঠে না। দোলা পুরোটা সময় হাসিখুশি মুখটা বজায় রেখে সবার সামনে। তানিয়া আহত চোখে বারবার দোলাকে দেখেছে৷ ভেতরে চাপা কষ্ট টা থাকলেও প্রকাশ করতে পারে না দোলা বা তানিয়া কেউ-ই। রাত প্রায় বারোটা। সবাই খেয়ে যে-যার ঘরে চলে গেছে৷ রয়ে গেছে শুধু দোলা৷ দোলা সবার খাওয়া দাওয়া শেষে সব কিছু গুছিয়ে রাখে৷ যদিও এইসবের জন্য সার্ভেন্ট আছে। কিন্তু দোলা এইগুলা নিজে করে। কারণ তার ভালো লাগে কাজগুলো করতে। কাঙ্ক্ষিত হোক না অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হোক। এই সংসারের সাথে তো সে জুড়ে গেছে। তাই এই সংসারটা তার। সংসার গুছিয়ে রাখাও তার দায়িত্ব। তাই দোলা কোনো অবহেলা করতে চাইনা এই সংসারকে।
– দোলা ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে৷ কি করবে সে ভাবতে ঘাম ছুটে যায়৷ ঘরে যাবে কি-না যাবে না ভেবে দিকহারা৷ যদিও দোলার তিল পরিমাণ ইচ্ছে নেই রুদ্রর মতো নোংরা মানসিকতার মানুষের সামনে যাওয়ার। তার উপর রুদ্র বলেছে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে৷ যদি দোলা ঘরে যায় আর তাকে দেখে রুদ্র আবার রেগে যায়৷ দোলার শরীর প্রচন্ড ব্যথা৷ রুদ্রর আঘাত নতুন করে সহ্য করার ক্ষমতা তার মধ্যে নেই আপাতত। দোলা সোফায় বসে গিয়ে৷ বড্ড ক্লান্তও লাগছে নিজেকে। চোখ জুড়ে আসছে ঘুমের ছায়া৷ তানিয়া উপর থেকে দোলাকে দেখে নিচে নেমে আসে। দোলা বসেই চোখ দুটো বন্ধ করে। কিন্তু কারো আসার আভাস পেয়ে চোখ মেলে তাকায় আবার।
— ভাবি তুমি ঘরে না গিয়ে এখানে কেনো? তানিয়ার কথায় হকচকিয়ে উঠে দোলা। ঘাবড়ে যাওয়া দৃষ্টি রেখে আমতাআমতা করে বলে আসলে ওই খাওয়া মনে হয় বেশি হয়ে গেছে৷ তাই একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম৷ তুমি নেমে এলে যে? কিছু লাগবে তানিয়া? তানিয়া মুগ্ধ চোখে তাকায়।
– আমার থেকে কি লোকানোর চেষ্টা করছো ভাবি! আমি তো সব কিছুই দেখতে পারছি তোমার ওই অসহায় চোখের চাহনিতে। তুমি ঘরে যেতে ভয় পাচ্ছো তাই না?
– দোলা করুণ চোখে তাকায়।
– আচ্ছা তোমাকে ব্রোর রুমে যেতে হবে না৷ এসো আজ আমার সাথে ঘুমাবে। সাবলীল ভাবে বলে তানিয়া।
– এইম! না না তানিয়া৷ এমন কিছু নয়। সত্যি বলছি আমি একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম। আমি চলে যেতাম ঘরে এক্ষুনি। তুমি যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো আমি একটু বাদে ঘরে চলে যাবো। হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলে দোলা৷ তানিয়া কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে। এরপর বলে ঠিক তো?.
– আরে বাবা একদম। তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো৷ অনেক রাত হলো তো। তানিয়া দোলার কথায় মুচকি হেসে চলে আসে৷ তানিয়া যাওয়ার পরেই দোলা ড্রয়িং রুমের আলো নিভিয়ে ড্রিম-লাইট জ্বালিয়ে দেয়৷ যাতে কেউ কাছ থেকে ছাড়া দূর হতে স্পষ্ট তাকে না দেখে।
– রাত প্রায় একটা বাজতে আসছে কিন্তু দোলা রুমে আসে না। রুদ্র এতখন বারান্দায় বসে ছিলো চোখ বন্ধ করে। রুদ্র মনস্থির করে দোলা আসলে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবে সব কিছুর জন্য। কিন্তু দোলা আসেনা রুমে।
-রুদ্র এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে রুদ্রর।
– একটা বাজে দোলা এখনো রুমে আসলো না কেনো? করছে টা কি নিচে? রুদ্র কৌতুহলী হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। উপর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখে ড্রয়িং রুমে আবছা ড্রিম-লাইটের আলো। রুদ্রর চোখ মুখ কুচকে আসে৷ কারণ ড্রয়িং রুমে সব সময় লাইট অন করাই থাকে। হঠাৎ আজ ড্রিম- লাইট কে জ্বালিয়েছে৷ আর দোলা বা কোথায়? রুদ্র বিস্ময় নিয়ে নিচে নেমে এসে দেখে দোলা সোফার উপর গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। দোলাকে এইভাবে দেখে রুদ্র হতভম্ব হয়ে যায়।
– হোয়াট ইজ দিস? আমি রুমে অপেক্ষা করছি আর এই ষ্টুপিডটা এখানে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আর এখানে কিভাবে ঘুমিয়ে আছে ও আরামে। উফফ আল্লাহ! আমি পাগল হয়ে যাবো এই মেয়েকে নিয়ে। আচ্ছা দোলা রুমে না গিয়ে এখানে ঘুমিয়েছে কেনো? ভাবে রুদ্র।
– আমি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছি তাই? নাকি আমার উপর রাগ করে যায়নি? রুদ্র এবার ভালোবাসার দৃষ্টি রাখে দোলার দিকে৷ দোলার মায়াবী ঘুমন্ত ফেস দেখে মুচকি হাসে। সাথে বেরিয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। রুদ্র দোলাকে ডাকতেও গিয়ে ডাকে না। এগিয়ে এসে কোলে তুলতে যাবে তখনই একটা ছায়া মতো কিছু সরে যায় দরজার আড়াল থেকে। রুদ্র ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে তাকায় সেদিকে। এগিয়ে এসে এদিক ওদিক দেখে কে ছিলো।।কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনা৷ রুদ্র মনের ভুল ভেবে দোলাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে আসে৷ শরীর ব্যথা আর ক্লান্ত থাকায় দোলার ঘুমটা একদম জেঁকে বসে। যার জন্য সে কিছুই বুঝতে পারে না।
– নিজ ঘরের সামনে থেকে সব কিছু দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসে তানিয়া৷ সে জানতো রুদ্র আসবে দোলাকে নেওয়ার জন্য। তাই তো তানিয়া তখন জোর করেনি দোলাকে তার ঘরে যাওয়ার জন্য। তানিয়া আগেই জানতো দোলা আজ ঘরে যাবে না। কিন্তু তাকে ঠিকই মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে। সব কিছু বুঝেও তানিয়া দোলাকে বুঝতে দেয়না কিছু৷ তার কথা বিশ্বাস করে চলে আসে এমন একটা ভাব নেই। কারণ তানিয়া চাই রুদ্র আর দোলা একে-অপরের কাছাকাছি থাকুক। রুদ্র দোলাকে সঠিকভাবে বুঝতে শিখুক৷ তানিয়া প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস রেখে ঘরে চলে আসে৷
– রুদ্র দোলাকে এনে শুয়ে দেয়৷ দোলা এখনো ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। রুদ্র দোলাকে ঠিকভাবে শুয়ে দিয়ে উঠে আসতে যাবে তখন চোখ যায় দোলার ঘাড়ে। খারাপ লাগে রুদ্রর নিজের করা এমন কাজের জন্য। রুদ্র হাত দেয় সেখানে৷ এতে দোলা নড়েচড়ে উঠে একটু।
– আইম সরি দোলাপাখি। আমি এমনটা করতে চাইনা তোমার সাথে। কিন্তু আমি জানি না আমার মধ্যে কি হয় তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে। কোনো পর-পুরুষের সাথে দেখলে আমার মধ্যে যেনো তোলপাড় তৈরি হয়৷ রাগে মাথা গরম হয়ে আসে৷ তোমাকে হারানোর ভয়টা আমার মধ্যে গাঢ় হতে থাকে৷ আর তখনই আমি কন্ট্রোললেস হয়ে পড়ি। নিজেকে সংযোত করতে পারিনা। সব রাগ ক্রোধ তোমার উপর এসে পড়ে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি চাইনা তোমাকে আঘাত করতে। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি দোলা। ভীষণ ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে সত্যি কেউ কখনো আঘাত করতে পারেনা। কিন্তু আমি পারিনা নিজেকে সামলাতে, নিজের রাগকে দমাতে। আমাকে মাফ করে দাও দোলা৷ আমি কথা দিচ্ছি আর এমন ভুল করবো না৷ আর কখনো তোমাকে ভুল বুঝবো না। তুমি শুধু বলো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। আমাকে ঠকাবে না? আমার
থেকে কখনো দূরে যাওয়ার কথা চিন্তা করবে না? আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে দোলা। রাতের আঁধারে একজন পুরুষের অনুভুতি প্রকাশ পায় ঠিকই কিন্তু সেটা তার ভালোবাসার মানুষের কান অবধি পৌছায় না৷ যার জন্য তার এত ভালোবাসা, এত আবেগ অনুভূতি ব্যক্ত সে মানুষটাই জানতে পাইনা৷ জানবে কি করে? সে তো নিথর ঘুমে আচ্ছন্ন। রুদ্র দোলার আঘাত লাগা স্থানে মলম লাগিয়ে দেয়৷ এরপর দোলার কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।
– সকালে দোলার ঘুম ভাঙে একটু দেরি করে। শরীরটা খারাপ থাকায় ঘুমটা একটু বেশি হয়ে গেছে। দোলা নিজের উপর ভারী অনুভব করে। আবছা আবছা ঘুমন্ত চোখে তাকিয়ে দেখে রুদ্র তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। দোলার ঘুম ভাব ছুটে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে দেখে সে ঘরে আছে।
– আমি ঘরে আসলাম কখন? আমি তো নিচে.. তাহলে কি উনি নিয়ে এসেছেন আমায়? হতে পারে৷ উফফ এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যেনো আমি উনার পাশবালিশ। আমার নিজের কোনো স্বস্তি নেই। গন্ডার একটা।
– দোলা উসখুস করতে শুরু করে। দোলার নড়াচড়ায় রুদ্রর ঘুম হাল্কা হয়ে আসে৷
কি হচ্ছে দোলা পাখি? ঘুমাতে দাও আমায়।
– হ্যাঁ তো ঘুমাননা বারণ করছে কে। তবে আমাকে ছেড়ে দিয়ে তবে ঘুমান৷ উঠবো আমি ছাড়ুন৷ গম্ভীর কন্ঠে বলে দোলা।
রুদ্রর ঘুম পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যায় দোলার কথায়। চোখ খুলে তাকায় দোলার দিকে। রুদ্রকে তাকাতে দেখে দোলা চোখ ফিরিয়ে নেয় ঘৃণায়।
– আমি যতখন ঘুমাবো ততখন তোমায় এইভাবেই থাকতে হবে৷ তাই কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকো।। – হ্যাঁ সেটাই তো! আপনি যেটা বলবেন সেটাই তো হবে৷ কারণ আপনি তো স্বামী আমার। আমার অভিভাবক আমার দিকনির্দেশনা তো আপনি করবেন। আমি কি করবো, কোথায় যাবো কার সাথে কথা বলবো সব কিছু তো আপনি ঠিক করে দিবেন৷ আমার তো নিজের কোনো ভালো-মন্দ নেই৷ আমার সুবিধা অসুবিধা এইসব কিছু দেখার বিষয় নয়। আমি তো ভুলেই গেছি যে আমি একটা মানুষ হলেও কারো হাতের প্রপার্টি। সে যেমন ভাবে ইচ্ছে আমাকে নাচাবে আমাকে চলাবে আর আমি তাই করতেই বাধ্য। রাগে, অভিমানে কথাগুলো বলে দেয় দোলা। রুদ্র ব্যথিত নয়নে তাকায় দোলার দিকে। দোলাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে। রুদ্রর থেকে ছাড়া পেতেই দোলা ধুসমুসিয়ে উঠে যেতে নিলে রুদ্র হাত টেনে ধরে দোলার। দোলা ক্রোধান্বিত চাহনি রাখে রুদ্রর দিকে।
– আমি জানি দোলা তুমি আমার উপর অনেক রেগে আছো। আর রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
– ওহ বুঝতে পেরেছেন তাহলে? হেয়ালি নিয়ে বলে দোলা। সত্যি দোলার রাগ হচ্ছে রুদ্রকে দেখে। একদম সহ্য হচ্ছে না তাকে।
— আইম সরি দোলা। আমার সত্যি ভুল হয়ে গেছে। আমার উচিত ছিলো কাল তোমার কথাগুলো শোনা। কিন্তু… কিন্তু আপনি শুনেননি। রুদ্রর কথা শেষ না হতেই দোলা বলে।
– আপনি আপনার অধিকারবোধ, পুরুষত্ব দেখিয়েছেন আমার উপর। আর এই জন্য এখন সরি বলছেন। আচ্ছা সরিতে সব শেষ হয়ে যায়? আপনার এই সরি শব্দটা পারবে আমার আঘাত গুলো সারিয়ে দিতে। পারবে আমার পাওয়া কষ্ট গুলো মুছে দিতে৷ আমার হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে সেগুলো ঠিক করে দিতে পারবে? রুদ্র অসহায় দোলার প্রশ্নের কাছে।
– পারবে না। তাই আপনার সরি আপনার কাছে রাখেন। লাগবে না আমার কোনো কিছু। দাঁতে দাঁত চেপে বলে দোলা। কিন্তু রুদ্রর এবার রাগ হয়৷ ভুল করেছে তার জন্য সরি তো বলেছে সে। আর এই নিয়ে এত কথা শোনাবে।
– শুনো আমি ভুল করেছি সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। তাই আমার মনে হয়েছে তোমাকে সরি বলা উচিত তাই আমি বলেছি৷ এখন তুমি সেটা এক্সেপ্ট করবে নাকি করবে না সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার বুঝেছো তুমি? চিৎকার করে বলে রুদ্র। দোলা অবাক চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে।
– দোলার এই তাকানো দেখে রুদ্র থেমে যায়।
– কুল রুদ্র কুল। এত হাইপার হলে চলবে না তোর। নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। তুই দোলাকে আর কষ্ট দিবি না প্রমিস করেছিস৷ তাহলে এইসব কি হচ্ছে? সামলা নিজেকে! নিজেকে নিজেই বলে রুদ্র। দোলা এখনো একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। রুদ্র উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়। দোলা হতভম্ব লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে ওয়াসরুমের দিকে।
– এটা কি ছিলো? সরি না থ্রেড। মানে কি! উনি সরি বলছেন থ্রেড দিয়ে। আসলেই গন্ডার একটা। জীবনেও শোধরাবার না। কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে…….
– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌