—“” জ্বলন্ত সিগারেটের প্রতিটি ছোঁয়া দাঁতে দাঁত চেপে চোখ মুখ খিচে সহ্য করছে দোলা৷ সহ্য করছে বললে ভুল হবে! গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করছে মেঝেতে পড়ে এপাশ থেকে ওপাশ। সিগারেটের স্পর্শ কখনো দোলার পিঠে আবার পেট ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ দোলা আর সহ্য করতে না পেরে রুদ্রর হাত চেপে ধরে। এতে রুদ্র যেনো আরো রেগে যায়। তার হাত ধরার সাহস দেখিয়ে দোলা যেনো অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। রুদ্রর হাস্যজ্বল মুখটা নিমিষে কালো মেঘে ঢেকে যায়৷ চোখ দিয়ে অগ্নি-বারুদ ঝরতে থাকে৷ দোলা হিচকি তুলে কান্না করছে। রুদ্রর দিকে তাকাতেই তার আত্মা কেঁপে ওঠে। গুটিয়ে যায় আরো নিজের সাথে।
– রুদ্র দোলার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে কটাক্ষ কন্ঠে বলে, তোমার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার৷ আমার কাজে বাধা দেওয়ার সাহস কি করে দেখাও তুমি? অনেক সাহস বেড়ে গেছে তোমার তাই না দোলা-পাখি? তার জন্য তো তুমি আমার সামনে আমারই এপোয়েন্ট করা চাকরের সাথে ঢলাঢলি করছিলে। রুদ্রর মুখের এমন নোংরা কথায় দোলার গা গুলিয়ে আসে৷ ঘৃণায় চোখ মুখ কুচকে আসে তার।
— আমার লাগছে! ছেড়ে দিন প্লিজ আমাকে। দৃঢ় কন্ঠে বলে দোলা। তার চোখে এখন আর পানি নেই৷ যা আছে তা রুদ্রর জন্য ঘৃণা আর নিজের জীবনের প্রতি করুণা।
— লাগছে? আমি ধরলেই তোমার লাগে তাই না? আর যদি অন্যরা তোমাকে স্পর্শ করে। তোমার শরীর ছুঁয়ে দেয় তাহলে নিশ্চয় খুব সুখবোধ করো তুমি। আরাম লাগে তোমার তাই-না? স্বাভাবিক ভাবে বলে রুদ্র কথাগুলো। কিন্তু দোলা জানে রুদ্রর এই স্বাভাবিক কথার জের কি পরিমাণ উঠবে তার উপর দিয়ে।
– আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছু নয় বিশ্বাস করুন৷ নুয়ে পড়া কন্টস্বর দোলার। আমি কিছু করিনি আর না ওই ওয়েটার.. কথাটা সম্পুর্ন করার আগেই রুদ্র দোলার গাল চেপে ধরে একহাতে। এত শক্ত করে চেপে ধরেছে যে দোলার একপাশের গাল আরেকপাশে যেতে বেশি সময় নেবে না৷ দোলার চোখ দিয়ে আবারও পানি গড়িয়ে পড়ে ব্যথায়৷ এতে যেনো রুদ্রর কোনো যায়-আসে না। আর না আছে কোনো হেলদোল।
– এই রুদ্রনীল চৌধুরী কখনো ভুল করে না আর না ভুল দেখে৷ পর-পুরুষ দেখলে গায়ে জ্বালা ধরে যায় না? সান্নিধ্য পেতে খুব ইচ্ছে করে তোমাদের৷ আচ্ছা আমি কি সুখ দিতে পারিনা তোমায়? আমার মধ্যে কি কোনো খামতি আছে৷ না যদি থাকে তো বলতে পারো। আমি আরো বেটার ভাবে তোমাকে সুখ দেওয়ার চেষ্টা করবো। আফটার অল ইউ আর মাই ওয়াইফ! সো তোমাকে সুখে রাখা আমার দায়িত্ব। আচ্ছা কিভাবে সুখ দিলে তুমি পরপুরুষের কথা ভুলে যাবে বলো তো। টেল-মি কুইক।
— রুদ্রর কথায় দোলার শরীর রিরি করে উঠে ঘৃণায়। এই নোংরা মস্তিষ্কের মানুষ টা তার স্বামী ভাবতেও যেনো জীবনের প্রতি অনীহা আসে তার৷ ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিয়ে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে দোলা রুদ্রর দিকে। তার মুখে কোনো কথা নেই৷ কি বা বলবে সে। রুদ্র যে কথা বলেছে তার জবাব কি দিয়ে দেওয়া যায়। যদি তার মতো নোংরা, বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ হতো দোলা। তাহলে নিশ্চয় তার কথার জবাব তার ভাষাতেই দিতে পারতো না৷ ছিহ! নিজের মধ্যে ধিক্কার দেয় দোলা।
– দোলাকে চুপ করে থাকতে দেখে রুদ্রের মাথায় আরো আগুন জ্বলে উঠে। রাগের পরিমাণ তীব্র হয়ে উঠে।
– কি হলো উত্তর দিচ্ছো না যে। আমার কথা কি তোমার কান পর্যন্ত যাচ্ছে না! নাকি আমাকে অবহেলা করছো তুমি? আমার কথা তোমার ভালো লাগছে না ড্যামিট চিৎকার করে বলে এবার রুদ্র৷ রুদ্রর চিৎকারে দোলা হকচকিয়ে কেঁপে উঠে ভয়ার্ত চোখে তাকায়।
— ওকে ফাইন! কিছু বলতে হবে না তোমায়। চলো তোমাকে সুখ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। তোমার তো এখন কারো সঙ্গ লাগবে তাই না৷ সেটা তুমি হয়তো আমাকে লজ্জার কারণে বলতে পারছিলে না। তাই পর-পুরুষের ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলে। সমস্যা নেই! আমি বুঝতে পেরেছি তোমার মনের কথা তোমার শরীরে চাহিদা। আসো বলে রুদ্র দোলাকে টেনে তুলে বেডের কাছে নিয়ে যেতে লাগলে দোলা ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয় রুদ্রর থেকে। রুদ্রকে টলারেট করা আর সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে।
— কি করছেন আপনি? কেনো করছেন এইসব। লজ্জা করছে না নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে এই ধরনের কথা বলতে৷ অন্য একটা বাইরের মানুষের সাথে জড়িয়ে ছিহ! মুখ ফিরিয়ে নেয় দোলা ঘৃণায়। রুদ্র ভ্রু কুচকে কপালে ভাঁজ রেখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে।
– আমি বলেছিলাম যাব না পার্টিতে। আপনি আমাকে জোর করে নিয়ে গেছেন। আপনি যখন লোক সমাজে আমাকে সহ্য করতেই পারেন না তখন কেনো নিয়ে গেছেন আমাকে। সামান্য একটা ব্যাপারকে বড় একটা ইস্যু করে আপনি পাগলামি করছেন। আর কত অত্যাচার করবেন আমার উপর আপনি। আমি তো বলিনি বিয়ে করতে আমায়! ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও রাজি ছিলাম না বিয়েতে৷ আপনি! হ্যাঁ আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন বিয়ে করতে৷ ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বিয়ে করেছেন৷ বিয়ে হওয়ার পর থেকে একটি মুহুর্তের জন্য আপনি আমাকে শান্তি দেননি। না মানসিক ভাবে, না শারিরীক ভাবে। সব সময় ভোগ করে গেছেন আমাকে আবার কখনো পায়ের সাথে মিশে মারতে চেয়েছেন। আপনার কি মনে হয় আমি নিরীহ, অবলা একটা নারী। আমার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই৷ নারীরা শুধু কি অত্যাচারীত হওয়ার জন্য জন্ম নিয়েছে? যদি তাই মনে করেন তাহলে বলব ভুল ভাবছেন৷ অত্যন্ত আমি সে মেয়েদের কাতারে পড়িনা৷ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার যথেষ্ট সাহস আমার আছে। শুধু হাত-পা বাধা আপনার করা নোংরা চক্রান্তের কাছে। যেদিন আমি সবটা সামনে নিয়ে আসবো সেদিন আপনার থেকে মুক্তি নিয়ে চলে যাবো আমি। থাকবো না আমি আপনার সাথে। আপনি একজন সাইকো” টোটালি সাইকো। কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ আপনার সাথে থাকতে পারে না। রাগের মাথায় কথা গুলো বলে দোলা। তার পক্ষে এতকিছু সহ্য করা আর সম্ভব না৷ যেখানে আজ তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেখানে চুপ থাকার কোনো মানেই হয়না।
— দোলার কথায় শেষ হতেই রুদ্র ক্ষেপে যায়। দোলার ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। হিংস্র সিংহের ন্যায় ঝাপিয়ে পড়ে রুদ্র দোলার উপর। দুইহাতে শক্ত করে গলা চেপে ধরে। হঠাৎ রুদ্র এমন করবে দোলা কল্পনাও করেনি।
– অনেক কথা বলেছো তুমি। খুব সাহস বেড়ে গেছে তোমার। আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস দেখিয়ে খুব বড় ভুল করেছো। আমাকে ছেড়ে যাবে তাই না। কোথায় যাবে আমাকে ছেড়ে? আরেকজনের মন ভোলাবে গিয়ে। এক পুরুষ দিয়ে তো মন ভরে না তোমাদের। তোমার কি মনে হয় ছেড়ে দেওয়ার জন্য তোমায় বিয়ে করেছি আমি এত কাঠখড় পুড়িয়ে। আমার থেকে নিস্তার পাওয়া এত সহজ নয়। যদি আমার থেকে যেতেই হয় তাহলে তোমার লাশ যাবে আর নয়তো আমার লাশ পড়ার পর যাবে। তার আগে এই রুদ্রনীল চৌধুরীর হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই। অনেক শক্ত করে দোলার গলা চেপে ধরে আছে রুদ্র। রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে সে। তাই কি করছে! কি করতে যাচ্ছে সেটা যেনো বুঝেও বুঝতে পারছে না৷ দোলার দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে৷ এই বুঝি তার প্রাণ পাখি উড়াল দেবে৷ রুদ্রর থেকে ছাড়ার পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে দোলা কিন্তু পারে না৷ এক পর্যন্ত হার মেনে নিয়ে হাত পা ছেড়ে দেয়। নিস্তেজ হয়ে আসে সারা-শরীর৷ চোখ যেনো আধো আধো বন্ধ হওয়ার উপক্রম! এরই মধ্যে ছুটে আসে তানিয়া। রুদ্র আর দোলাকে এই অবস্থায় দেখে চমকে উঠে চিৎকার করে ব্রো বলে ডেকে উঠে। ছুটে এসে রুদ্রর থেকে দোলাকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। দোলা ছাড়া পেতেই কাশতে শুরু করে গলায় হাত রেখে৷ চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
— এই সব কি হচ্ছে ব্রো? পাগল হয়ে গেছো তুমি? মেরে ফেলবে নাকি ভাবিকে।, উত্তেজিত কন্ঠে বলে তানিয়া।
– হ্যাঁ মেরে ফেলবো আমি ওকে। আর একবার যদি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে তাহলে আমি সত্যি মেরে ফেলবো ওকে। নেক্সট টাইম যাতে আমাকে এইসব সাহস না দেখাতে আসে ভালো করে বুঝিয়ে দিস ওকে। রুদ্রনীল চৌধুরী কারো উচ্চস্বর পছন্দ করে না! আর না কেউ সে সাহস দেখাতে পারে। তাই এইটা ওকে ভালো করে বুঝিয়ে দিবি যে আমি যা চাই তাই হয়! আর তাই হবে৷ এর মধ্যে রুদ্রর ফোনটা বেজে উঠে।
– নিজেকে শান্ত করে ফোন রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে যা শুনে তাতে রুদ্রর ঠোঁটের কোণে ডেভিল হাসি ফুটে উঠে। দোলার দিকে রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলে বেধে রাখ আমি আসছি। এরপর রুদ্র দোলার দিকে তাকিয়ে গটগটে পায়ে বেরিয়ে যায়৷ রুদ্র যেতেই দোলা মেঝেতে বসে পড়ে কান্না করতে করতে। তানিয়ার খুব খারাপ লাগছে দোলার জন্য।
– শান্ত হও ভাবি৷ জানো তো ব্রো একটু অদ্ভুত টাইপের। কেনো রাগাও তাকে। ছেড়ে যাওয়ার কথা কেনো বলতে গেছো তুমি৷ তাই তো ব্রো এতটা রেগে গেছে৷ জানোই তো ব্রো তোমাকে কতটা ভালোবাসে।
– ভালোবাসা! তোমার মনে হয় তানিয়া এইসব উনার ভালোবাসা? আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো! ভালোবাসলে কেউ কি ভালোবাসার মানুষকে আঘাত দিতে পারে৷ তোমার ভাইয়া আমাকে কখনো ভালোবাসেনি তানিয়া৷ উনার রাগ,জেগ ক্ষোভ থেকে আমাকে বিয়ে করেছেন আর যেটা ভালোবাসা বলে চালিয়ে গেছেন৷ কিন্তু কেনো? আমাকেই কেনো? আমি কি করেছি উনার। যে মানুষটা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না। মেয়েদের রেস্পেক্ট করতে জানে না তেমন একটা মানুষ আমার জীবন সঙ্গী কিভাবে হতে পারে৷ যদি এতটায় ঘৃণা করে মেয়েদের তাহলে কেনো বিয়ে করেছে। কেনো জোর করে বিয়ে করেছে আমাকে। আমার জীবনটা কেনো নষ্ট করে দিলো সে। বলতে পারবে তুমি? আছে কোনো জবাব তোমার কাছে৷ আমি আমার বাবা-ভাইয়ের কাছে যেতে পারিনা। তাদের সাথে আমার দেখা করার অনুমতি নেই। এ কেমন নিয়ম বলতে পারো তুমি?
– সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট কারণ থাকে ভাবি। আর সে কারণটা কখনো হয় সুখকর আবার কখনো তীব্র যন্ত্রণার। ব্রো তোমাকে ভালোবাসে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো তার ভালোবাসার ধরণটা অন্য রকম। কিন্তু ভালোবাসে এটাই সত্যি। আর কেনো তোমার সাথে এমন করে সেটা একমাত্র ব্রো জানে। হয়তো পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করছে এইগুলো করতে। কথাগুলো বলা শেষ হতেই তানিয়ার নজর যায় দোলার শাড়ির দিকে৷ সাদা শাড়ি রক্তে লাল হয়ে গেছে জায়গায় জায়গায়।
ভাবি! কি হয়েছে তোমার? শাড়িতে রক্ত কেনো? তানিয়ার কথায় দোলা উপহাসের একটা হাসি রেখে বলে এইগুলো সব তোমার ভাইয়ের ভালোবাসার প্রকাশ। দেখো তার ভালোবাসায় কেমন সজ্জিত হয়ে আছি আমি৷ দোলার কথায় কতটা কষ্ট বেদনা লুকিয়ে আছে তানিয়া বুঝতে পারছে৷ তার মধ্যেও অনেক খারাপ লাগা এসে ভর করে।
– চলো জায়গাটা পরিষ্কার করে মলম লাগাতে হবে। নাহলে সমস্যা হতে পারে পড়ে।
– কি হবে মলম লাগিয়ে? হয়তো বাইরের ক্ষতটা সেরে যাবে মলমে৷ কিন্তু ভেতরে যে ক্ষত দগ্ধ রুপ নিয়ে আছে! সেটা কোন মলমে সারবে বলতে পারো তানি?
– অসহায় দৃষ্টি রাখে তানিয়া দোলার দিকে। দোলার কথায় উত্তর তার কাছে নেই৷ তানিয়া দোলাকে ধরে নিয়ে বিসানায় বসায়। এরপর শাড়িটা সরিয়ে রক্ত গুলো পরিষ্কার করতে থাকে। আসুন ততখনে আমরা জেনে নিই আসলে কি হয়েছিলো? আর রুদ্র কেনো বা দোলার সাথে এমন বিহেভ করলো।
— রুদ্রর কোম্পানির একটা বড় ডিল ফাইনাল করা হয় আর সেটা সাকসেসফুলি শেষ করাও হয়। তাই সে খুশিতে রুদ্র বাড়িতে একটা বড় পার্টি রাখে। রুদ্র আর দোলার বিয়ে হয়েছে দুইমাস আগে৷ তাও সেটা দোলার মতের বিরুদ্ধে। কিন্তু রুদ্রনীল চৌধুরী চেয়েছে আর সেটা পাবে না তাই কখনো হয় নাকি। এবারও হয়নি সেটা। দোলার বাবা রুদ্রর কোম্পানিতে একজন সাধারণ কর্মকর্তা। দোলা প্রায় সেখানে যাওয়া আসা করতো তার বাবার সাথে বিভিন্ন দরকারে দেখা করার জন্য। একদিন রুদ্র দোলাকে দেখতে পাই অফিসে৷ আর ভীষণ ভালো লেগেও যায়। রুদ্র মেয়েদের দিকে নজর দেয়না সেভাবে কখনো। কারণ! মেয়ে মানে তার কাছে এলার্জি স্বরুপ। কিন্তু দোলাকে দেখে যেনো তার সে নিয়ম ভেঙে যায়। মনের মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি জাগ্রত হয়।
— রুদ্র দোলাকে বেশ কিছুদিন ফলো করে। এরপর রুদ্র দোলার বাবা রাশেদ মিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন দোলার সাথে বিয়ের। কিন্তু রাশেদ মিয়া না করে দেন সরাসরি। কারণ সে চাইনা তার একমাত্র মেয়ে এমন একটা ছেলের হাতে পড়ুক। রুদ্রকে সবাই বেশ ভালোভাবে জানে।
– রাশেদ মিয়ার না শুনে রুদ্র রেগে গেলেও সেটা প্রকাশ করে না সামনে থেকে। এরপর কৌশলে হাসিল করে সবটা তিনি৷ রাশেদ মিয়ার ফাইলে কিছু একাউন্টিং গড়মিল দেখা দেয়। যেখানে প্রায় এক কোটি টাকার হিসাব গড়মিল। টাকা কোথায় কিভাবে খরচ হয়েছে কিছুই উল্লেখ নেই। আর এর দ্বায়ভার এসে পড়ে রাশেদ মিয়ার উপর। রাশেদ মিয়া অত্যন্ত সাধারণ গরিব একজন মানুষ। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার খুব ভালো ভাবে কেটে যায় সামান্য বেতনে৷
– রুদ্র রাশেদ মিয়াকে ডেকে পাঠালে সে টাকার হিসাব দিতে পারে না৷ তখন রুদ্র জানায় যে এক সপ্তাহের মধ্যে যদি হিসাব মিলিয়ে না দিতে পারে তাহলে গড়মিল হওয়া সমস্ত টাকা রাশেদ মিয়াকে দিতে হবে। নয়তো তাকে জেলে পাঠানো হবে৷ এটা শোনার পর রাশেদ মিয়া ভেঙে পড়ে অনেক। এতগুলো টাকা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না কোনো ভাবে।
— রাশেদ মিয়া দুদিন অফিস যায়না। কারণ রুদ্র বারণ করেছে তাকে অফিস যেতে। টাকার হিসাব মিলিয়ে তবেই সে অফিস যেতে পারবে৷ কিন্তু যে হিসাব আদো গড়মিল হয়নি বা ছিলো না সেটা কিভাবে মিলাবে সে।
– রাশেদ মিয়াকে বাড়িতে থাকতে দেখে দোলার সন্দেহ হয়। দোলা রাশেদ মিয়ার থেকে জানতে চাই রাশেদ মিয়া কোনো ভাবে অফিস ছুটি নিয়েছে কি-না। রাশেদ মিয়া এরপর দোকালে সবটা জানালে দোলা ঘাবড়ে যায়। এবং সিদ্ধান্ত নেই রুদ্রর সাথে কথা বলবে সে। কারণ তার বাবার মতো সৎ মানুষ আর একটাও দেখেনি সে। সেখানে তার বাবার উপর এক কোটি টাকার অপবাদ দেওয়া হয়েছে। দোলা কোনো ভাবে চুপ থাকতে পারে না।
চলবে….
#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“১”