ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি last part

0
630

#ডার্ক_সাইড_অফ_এ_বিউটিফুল_লেডি
#পর্ব_8
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা

9.
আমি আর খালিদা আবার ফিরে তাকালাম ময়ূরাক্ষীর দিকে।

ময়ূরাক্ষী টেবিলে রাখা ওর কেইসের ফাইলগুলো থেকে একটা কাগজ টেনে নিয়ে খেলনার মতো কিছু বানাতে বানাতে নির্লিপ্ত গলায় বলল-

– আর টর্চার টা যদি বরফ দিয়ে হয়, তখন মানুষের মৃত্যু হয়।

– তুমি তুহিন কে কি এইভাবে খুন করেছিলে?

কাগজের প্লেন বানিয়ে ও উড়িয়ে দিলো। সেটা উড়ে গিয়ে দ্রুত দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

– আমি তুহিন কে ভালোবেসে ছিলাম। আশ্রয় নিয়েছিলাম। ওর সন্তানের মা হয়েছি। ওর উচিত ছিলো আমাদের রক্ষা করা। আমাকে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া। তবে ও সেটা না করে আমাকে ইউজ করতে লাগলো, টর্চার করতে লাগল। ওর সামনে অধরাকে ওরা খুন করে ফেলল আর ও কিছুই বললো না। উল্টা আমাকে খুনের দায়ে জেলে পাঠালো?

ওর ভীষণ ওয়াইল্ড সেক্সের শখ ছিলো। হাত পা বেঁধে। সেদিন ও প্রথমে আমাকে বাঁধলো। আমি সেদিন ওকে সবচেয়ে বেশি সুখ দিয়েছিলাম।
All men’s brain stop when they are highest point of sex.
আমিও সে সুযোগ নিলাম। আমি ওকে বাঁধলাম।

আবার থামলো ও। আমার আর খালিদার দুজনেরেই হার্টবিট যেন এখনি থমকে যাবে। ওর প্রতিটা কথা বলার থামার মূহুর্তে।

– আমি আমার সুতির শাড়ির আঁচল আবার ব্যবহার করলাম। অনেক গুলো বরফের কিউব একসাথে বেধে বসিয়ে দিলাম ওর পুরো মুখের উপর। ফেলে রাখলাম সেভাবে আট ঘন্টার জন্য। আমি ওকে কষ্ট দিয়ে মারতে চেয়েছিলাম। এবং আমি তা করেছি।
একই ভাবে কাপড়ের কারণে অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যায় আর বরফের কারণে ওর ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দেয়৷ নিশ্বাস ও আটকে যায়।

পরের কাজ গুলো সিম্পল ছিলো। সন্দেহ করার মতো না।

আমার গলা শুকিয়ে আসছে৷ হঠাৎ আমাকে ওর বুক সেলফটা ভাবাতে লাগলো, যেখানে waterboarding এর অত্যাচার সম্পর্কিত অনেক গুলো গল্পের বই ছিলো।

খালিদা একেবারেই চুপ হয়ে গেল। আমি আবার গলা খাকরিয়ে বললাম,
-তাহলে জনিকে কেন মারলে?
-জনি আমাকে ব্যবহার করতো। আমিও জনি কে। আমার অস্ত্র ছিলো রূপ। সে জালে সবাই যেন নিজেই ধরা দিতে আসতো।
কথাটা বলে ও আবার আলতো করে হাসলো ওর গজ দাঁত বেরিয়ে এলো। আবার বলল
-কিন্তু তুহিনের মৃত্যুর পর ও আমার উপর অধিকার দাবী করতে চাইলো।
আমাকে বিয়ে করতে চাইতো। আমি বলতাম,তাহলে এইখান থেকে পালিয়ে যাই? না ওর আমার সব সম্পত্তিও লাগবে। ও আমাকে হুমকি দিতে লাগলো সব খুনের জন্য।

-তাই ওকে ও এইভাবে খুন করলে?

– হ্যাঁ। ওর সাথে আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম হঠাৎ তুহিনের মা ডাক দেওয়ায় আমরা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। কাছাকাছি আসাতে ওর আমাকে পাওয়ার ইচ্ছে জেগে উঠলো। আমিও সায় দিলাম। ও যখন বিভোর হচ্ছিলো তখন আমি ওর হাত বাঁধছিলাম। ও ওয়াইল্ড কিছু হবে এই আশায় খুশি হচ্ছিলো। তখন আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিই। সরু ধারায় পানির কল ছেড়ে দিই মুখের উপর আমার উড়না ফেলে। এরপর ওর পা উঁচিয়ে ধরি। কিছুক্ষনের মধ্যে ওর নিশ্বাসও বন্ধ হয়ে যায়। আমি ওর সব কাপড় ঠিক করে রেখে ওখান থেকে বেরিয়ে আসি।
আমি বললাম,
-এইটাও waterboarding এর একটা পদ্ধতি,
খালিদা বলল,
– তারপর?

– তারপর আর কি? সবাইকে হারিয়ে তুহিনের মায়ের অবস্থা দেখে আমার করুণা হতো।
-উনাকে মারলে না কেন?
– তাহলে কষ্টটা কে পেতো আমার মতো সন্তান হারানোর?

ওর এই কথাটা যেন চিৎকার করে বলছে কতটা ঘৃণা পুষে রেখেছে সে পরিবারের জন্য। আর কোন অক্ষেপ জমা নেই ওদের খুন করে। কতটা আত্মবিশ্বাস ও নিজের প্রতিটা খুনে।ওর সিদ্ধান্তের উপরে।

খালিদা ওর প্রমাণ পেয়ে গেল তবে ওরও আমার মতো মন খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা সত্যিই মায়াবী।

খালিদা কথা দিলো ময়ূরাক্ষীর শাশুড়ী কে তার অপরাধের শাস্তি দেবে। আর ওর শাস্তি কমাবে।

ওকে আবার দুইজন পুলিশ মিলে নিয়ে যাচ্ছিলো। তখন আমি বললাম-

– তোমাকে একটা সুযোগ দেব বলেছিলাম। আমি তোমার জন্য একটা সুযোগ এনেছি।তোমার জন্য আমি শুধু চা নয়, আরো প্রিয় কিছু এনেছি। তোমার জন্য অধরাকে নিয়ে এসেছি।

ও যেন থমকে গেল। খালিদাও আমার দিকে ফিরে তাকালো।
আমি ফোন দেওয়াতে আমার সহকারী শাহেলা ছয় বছরের একটা মেয়েকে নিয়ে এলো।

ওকে দেখে ময়ূরাক্ষী মাটিতে বসে পড়লো।
মেয়েটা হাতে একটা পুতুল। লম্বা চুলের ডান পাশে একটা লাল ক্লিপ।

ময়ূরাক্ষীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর গায়ে হাত রাখতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

খালিদা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো,

– তোমার জমজ মেয়ে হয়েছিলো। তুমি জানতে সে ঘরে মেয়ে মানা হবে না। তাও দুজন কে। তুমি অধরাকে কাছে রেখে অন্য মেয়েকে দূরে একটা ঘরে রেখেছিলে। যেটার দেখাশোনা বিত্ত করতো। যে তোমার মামাতো ভাই।

আমি তোমার কথা জানতে তার কাছেও গিয়েছিলাম। তোমার একাউন্ট থেকে মোটা অংকের টাকা যেত ওর কাছে। তোমার সব খুনের সাথে সেও জড়িত এমন অভিযোগ করাতে সে আমাকে এই অধরার কথা জানিয়ে দেয়।

আমি জানি মায়েরা সন্তানের মৃত্যুতে কতটা কষ্ট পেয়ে ঠান্ডা মাথার খুনী হতে পারে। আর কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠে অন্য সন্তানকে রক্ষা করতে।
দুইটা একসাথে করতে গিয়ে তুমি এমন খুনী হয়েছো।

মেয়েটা কিছুই বুঝতে পারছে না। আমি ওকে বলেছিলাম আজ ওকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবো। তাই সে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
– মা কোথায়?

আমি ইশারায় ময়ূরাক্ষীকে দেখিয়ে দিতেই ও আলতো করে পিঠে হাত রেখে,
-মা
বলতেই ওকে জড়িয়ে ধরে তীব্র চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলো ময়ূরাক্ষী।

আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম, তোমাদের রুমে গিয়ে আমি অধরার ছবি দেখতে চাওয়াতে আমাকে স্টোর রুমে নিয়ে গেল যেখানেই তুমিই অধরার সব জিনিসপত্র রেখে এসেছো। ওখানে একটা ড্রয়িং খাতা ছিলো। যেখানে অধরা কাঁচা পাকা হাতের ড্রয়িং ছিলো। শুধু একটা ড্রয়িং তোমার ছিলো।

একটা স্বর্গের সোনালী আকাশ, যেখানে দুইপাশে দুইটা ছোট্ট পরী নিয়ে উড়ে যাচ্ছে অন্য একটা পরী।

আমার তখন থেকে সন্দেহ হলো, তোমার ডেলিভারি হওয়া হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে পুরানো রের্কড ঘেঁটে জানলাম তোমার জমজ মেয়ে হয়েছিলো।

তোমার সব সিজ করা একাউন্ট ডিটেলস পুলিশের কাছে আছে। খালিদাকে বলে খোঁজ নিতেই বিত্তের খোঁজ পেলাম।

ময়ূরাক্ষী কিছু বলছে না। মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে এখনো কান্না করে যাচ্ছে। এই যেন সুখের কান্না, এই যেন কষ্টের কান্না।

10.
অনেক বছর পার হয়ে গেল। আমি ব্যস্ত হলেও ময়ূরাক্ষীকে ভুললাম না। কারণ অধরাকে আমিই ভালো স্কুলে রেখে পড়াতে সাহায্য করেছি।

ওর শাশুড়ী নিজেই একদিন সকালে মারা গেল। উনাকে আর শাস্তি দেওয়া হয়নি। বিশাল সে অট্টালিকা শূন্যই পড়ে রইলো।

আমি আবার দেশের বাইরে চলে এলাম। নিজের শরীরটা ভালো থাকেনা। তাই ছেলে নিজের কাছে এনে রেখেছ।

সকালে মৃদু আলো এসে পড়েছে টরেন্টো শহরে সবুজে ঘেরা এই বিশাল এপার্টমেন্টে। ছোট বড় নানা ফুলের গাছ। সবাই ব্যস্ত এইখানে। ছোট একটা নাতনী আছে তার ও ভোরে স্কুল। জয়ী আমার ছেলের বউ।

মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ফিরল সে৷ এক হাতে লেটার বক্স থেকে কয়েকটা লেটার আর অন্য হাতে কিছু সকালের নাস্তা।

চাবি ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকে আমাকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে জয়ী বলল-

– এত সকালে আপনি কেন উঠেন মা?
-অভ্যাস যে,

বাইরের জুতা খুলে ঘরের জুতা পরে কোট খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল উপরে তুলে বাঁধতে বাঁধতে বলে,

– ইউ গট এ লেটার টু ডে।

আমি চেয়ার থেকে পা নামিয়ে উঠতে যাবো তার আগেই জয়ী আমাকে চিঠিটা এনে দিলো।

লেটারটা দেশ থেকে আসে নি। পশ্চিমা দেশ থেকেই এসেছে।

প্রিয় ম্যাম,
আমি ময়ূরাক্ষী, দশ বছর পর জেল থেকে বের হলাম।
আপনার আর খালিদা ম্যামের জন্য হয়ত আমি এইদিনটার অপেক্ষায় সে অন্ধকার দিন গুলো কাটাতে পেরেছি।

তুহিনের আর আমার সব সম্পত্তি বিক্রি করে আমি একটা এসিড আক্রমণের শিকার আর যৌন হয়রানীর শিকার হওয়া মেয়েদের নিয়ে কাজ করে এমন একটা সংগঠনকে দান করে দিয়েছি।

আমি অধরাকে নিয়ে চলে এসেছি দেশ থেকে।মা মেয়ের ছোট্ট একট্টা ঘর হয়েছে একেবারে স্বর্গের আকাশের কাছাকাছি। ত্রিশ তলার উপর।

ইতি
আপনার মায়াবী।

সাথে একটা ছবি আছে। একই রকম দেখতে ভিন্ন বয়েসী দুজন ভয়ংকর সুন্দরীর ছবি। এখন যতবার আমি কোন সুন্দরী মেয়ে দেখি। আমি মনে মনে পরিমাপ করার চেষ্টা করি,
হাউ মাচ ডার্ক সাইড অফ দ্যা বিউটিফুল লেডি হ্যাভ???

-সমাপ্ত।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এত এত ভালোবাসার জন্য এই গল্পকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here