ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি part 6

0
502

#ডার্ক_সাইড_অফ_এ_বিউটিফুল_লেডি
#পর্ব_6
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা

6.
অধরার ব্যাপারটা আমি অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এই সব কিছুর শুরু অধরাকে ঘিরে।

অধরার মৃত্যুটা যত সহজ দেখানো হচ্ছিলো ততটা সহজ না। আর যেটা জটিল করে দেখানো হচ্ছে সেটা আসলেই জটিল নয়।

উনি এইবার কথা বলতে আটকে যাচ্ছেন। যেন নিজের দাম্ভিকতা ধরতে উনি আরো জোরে চেষ্টা করছেন।উনার ভেতরে ভেঙে যাওয়া মানুষ টা উনি কিছুতেই বের করে আনতে চাইছে না।

উনার এই মূহুর্তের দোটানার সুযোগ নিয়ে আমি বলে উঠলাম,

– আমি ময়ূরাক্ষীর রুম টা দেখতে চাই।

– সে ঘরে কিছু নেই এমন-

– কিছু পাবো কি পাবো না সেটা আমাকে দেখতে দিন,
– আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।
– হয়ত আমার বাড়াবাড়িতে আপনি ওর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেতে পারেন। কারণ আপনার নিজের কাছেও ওর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই।

আমার এমন কথায় উনি কিছুটা থিতু হলেন।
অনিচ্ছা শর্তেও বললেন,
-আসুন, ওদের রুম উপরে ছিলো৷

-ছিলো?
আমিও যেন বিড়বিড় করতে করতে উঠে গেলাম। নিচের যত আভিজাত্য ভরা ছিলো উপরে তত টা সাধারণ। ঘরের কোণায় কোণায় কয়েক টা ফুলের টব আছে বিশাল দোতলা মিলে শুধু চারটা রুম।
রুম গুলোও খুব বেশি চাকচিক্য ময় নয়। এতেই বোধহয় এই ঘরে সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

আমি উপরের উঠে সব দিকে চোখ বুলাচ্ছিলাম। না কোথায় ও অধরা বা অন্য কারো ছবি নেই। শুধু উনার তিন ছেলের ছবি। কেউ তুষারে পাহাড়ে কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে, কেউ বিশাল সমুদ্রের জাহাজের উপর, কেউ এয়ার বেলুনে উড়ছে। উনার আর উনার স্বামী একটা অল্প বয়েসের ছবিও দেখা যাচ্ছে, জিন্স পরা ডুবাই তে।

অবাক লাগছে অধরার কোন ছবি না দেখে।

আমাকে ময়ূরাক্ষীর রুম টা খুলে দেওয়া হলো,
আমি ভেতরে ডুকে সব টা দেখছিলাম ভীষণ সাধারণ যেন সব কিছু। এত সাধারণ লাগছে সব যেন কোন নাটকের স্টেজ।

উনি দাঁড়িয়ে আছে দেখে আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,
-আমি কিছুতে হাত দেবো না। বা নিয়ে যাবো না।
– মানুষ কে এক ঘরে থেকেও বিশ্বাস করতে পারলাম আজো আপনি তো অপরিচিত।

কথাটা মিথ্যা নয় বলেই মনে হলো আমার। উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ময়ূরাক্ষী বা অধরার কোন ছবি দেখছি না যে,

– সে খুনী মেয়ের ছবি আমি কেন রাখবো
তাই সব ফেলে দিয়েছি।
-আর অধরা?
– ওর ছবি দেখলে সবার খারাপ লাগতো কষ্ট পেতো। ও নিজেও পাগলামী করতো তাই সব সড়িয়ে রাখা হয়েছে স্টোর রুমে আছে। ও নিজেই এইটা করেছে৷

আমি আর কথা বাড়ালাম না। বিশাল একটা বইয়ে থাক আছে এই রুমে। আমি হাত বুলিয়ে খুঁজতে লাগলাম কোথায় ও কোন ডায়েরী বা এমন কিছু আছে কিনা। না তেমন কিছু নেই। তবে বই গুলো একমনে তাকিয়ে রইলাম। আমাদের দেশের মেয়েরা সাধারণত হুমায়ূনের বা সমরেশের গল্প গুলে খায়৷ কিন্তু ওর বইয়ের তাক ভিন্ন ভিন্ন রহস্য গল্পে ভরা। তাই বোধহয় ও এত রহস্য করে কথা বলতে পারে কিংবা এত মিথ্যা বলতে পারে।

তেমন কিছু পাচ্ছি না দেখে উনিও বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন,
-বলেছিলাম পাবেন না।
– মানে আপনি আগে চেক করেছেন?
কথাটা বলে আমি হাসার চেষ্টা করলাম, আমার প্রতিটা কথা যেন উনার বিরক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

নিচে নেমে আসতেই, উনি এইবার নরম সুরে বললেন,
– মেয়েটা রাক্ষসীর আরেক রূপ!

পেছন ফিরে বললাম,
-এমন কোন যজ্ঞ আয়োজন কি এই ঘরে হতো যার জন্য ওকে রাক্ষসীর রূপ নিয়ে হয়েছে?

উনি যেন আচ করতে পেরেছেন আমি কি ইঙ্গিত করছি। আমি ময়ূরাক্ষীর বলা সে গল্পটায় সত্যতা খুঁজছি যেখানে ওকে ঘুমের মধ্যে-

– আমি জানি না আপনি বার বার এই কিসের কথা বলছেন, শুধু এইটা বলতে পারি ও স্বাভাবিক নয়, ও ঠান্ডা মাথায় সবাইকে খুন করতে পারে।
– তাহলে আপনি বেঁচে গেলেন কি করে?
– আমাকেই হয়ত ও শাস্তিটা দিতে চায় তাই,
-আপনার পাপ টা কি ছিলো?

উনি চমকে উঠলেন তবে ঘাবড়ে গেলেন না। ভেতরে চলে যাচ্ছিলেন। আবার বলে উঠলাম,
– আমি সবার মৃত্যু টা একবার শুনতে চাই,

থেমে যাওয়া পা যেন ভার নিতে পারছে না। উনি বসে পড়লেন আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
সোফায় বসে আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন,
– তুহিন, তুষার,তুরাগ আর ওদের বাবা চার জনেই বিছানায় স্বাভাবিক ভাবে শোয়া অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়। কোথাও কোন ক্ষত ছিলো না।
প্রতিবারেই বউমা ছাড়া আর কেউ ছিলো না ঘরে। আমি জানি না ও এইসব কীভাবে করেছে তবে আপনিই বলুন ওকে সন্দেহ না করার কি আছে?

-অধরা ছাড়া আর একজনের খুনের চার্জ আছে ওর উপর, উনি কে?

– আমাদের এই বাড়ির কাজের ছেলে জনি তবে অনেক টা ছেলেই বলা যায় ছোট বেলা থেকেই সে এই বাড়িতে।

-ওর মৃত্যু?
– বাথরুমে, জানি না কখন থেকে মরে পরে ছিলো, ডাক্তার বলেছিলো স্বাভাবিক মৃত্যু।

– আপনার কেন মনে হলো এইসব খুন ময়ূরাক্ষী করেছে?

উনি এইবার উত্তেজিত গলায় বলল,
– ও নিজেই বলেছে আমাকে, সব খুন সে নিজে করেছে।

উনার কথায় আমি অনেক কিছু ক্লিয়ার হলেও আমার কেন যেন সব ধোয়াটে লাগছে। এইভাবে কোন প্রমাণ ছাড়া কীভাবে স্বাভাবিক মৃত্যুর মাধ্যমে খুন করা যায়?

আমি স্টোর রুম টা দেখতে চাইলাম। অধরা অনেক ছবি, খেলনা, পুতুল, নানা রং এর বই। সব যেন একটা বক্সে বন্ধী। ওর স্মৃতির মতো। আমি সব কিছু খুটিয়ে দেখতে লাগলাম। একটা ড্রয়িং খাতা। অধরার কাঁচা হাতের কিছু ড্রয়িং। শেষের একটা ছবি দেখে আমি থমকে গেলাম। ছবিটা যেন নিশব্দে অনেক কিছু জানিয়ে দিলো আমাকে।

ওখানে থেকে বেড়িয়ে আসতে, উনি বলে উঠলেন,
– ও মায়ারী, রাক্ষসী, ওর কালো যাদু জানে।

-আমি এইসব মানি না। সব কিছু পেছনে একটা লজিক থাকে। সব খুনেরেও একটা মোটিভ থাকে। প্যাটার্ন থাকে। আর আমি খুঁজে বের করব।

মেয়েটা আমার আরো রহস্যময়ী মনে হচ্ছে যতটা সে আমার কাছে নিজেকে রহস্যময়ী করে তুলেছিলো। তারচেয়েও বেশি রহস্য সে ধারণ করে রেখেছে ওর মাঝে যেন কোন প্রকৃতি সে।

ওখান থেকে বের হয়ে আমি খালিদাকে ফোন দিলাম।

বিশাল একটা সুতো যেন আমি পেয়ে গেলাম ময়ূরাক্ষীর যেটা দিয়ে ওকে আমি স্বীকার করাতে পারবো।

7.
দশ মিনিট হলো বসে আছি খালিদার নিয়ে আসা রুমে।

দুইটা বড় লাইট জ্বলছে। তারমধ্যে একটা বার বা জ্বলছে আর নিভছে। এতে কেমন যেন ভুতুরে পরিবেশ তৈরী হচ্ছে।

আমি অনেক গুলো প্রশ্ন সাজিয়ে নিয়ে এসেছি। মনে মনে ভাবছি আজেই বোধহয় আমার সব উত্তর পেয়ে যাবো ওর সব খুনের স্বীকারোক্তিও।

খালিদা এই রুম টায় ক্যামেরা আছে বলে সে জানিয়েছে। সেও চায় দ্রুত শেষ হোক এই কেইস। মেয়েটার উপযুক্ত শাস্তি হোক। এমন মেয়ে নাকি একটা আতংকের নাম।

তবে আমার মোটেও ওকে কোন শাস্তি দেওয়া ইচ্ছে নেই। যেন আমি ওর মায়ায় পরেছি। তবে ও কি ঠান্ডা মাথার খুনী সে ভেবেই আবার আতকে উঠছি। কারণ যাই হোক না কেন খুন তো ও করেছে।

কিছুক্ষন পর ওকে নিয়ে আসা হলো, আজ ওকে ভীষণ মলিন লাগছে, যেন ফুলের টবে লাগানো নিষ্প্রাণ সুন্দর ফুল।

আমাকে দেখে আলতো করে হাসার চেষ্টা করলো। ওর গজ দাঁত টা বেড়িয়ে আসতেই আমার মধ্যে একটা মন খারাপ চেপে বসলো। সত্যিই ওর সুন্দরী হওয়াটায় ওর জীবনের অভিশাপ।

– আমার গল্প আপনাকে এত টেনেছে আপনি নিজেই ছুটে এলেন আমার কাছে বাকি গল্প শুনতে?

আমি হাসার চেষ্টা করলাম।
– কি করবো? তুমি যে নিজেকেই মায়াবী করে তুলতে চাইছো।

চেয়ার টেনে বসতে বসতে আরেক দফা হাসলো। নীল সাদা শাড়িতে ওকে করুণ দেখাচ্ছে। ওর শ্বশুর বাড়ি থেকে বের হয়ে ওর পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। জানা গেল ওর বাবা আরো ধনী ছিলো। ওদের বাড়িটাও রাজপ্রাসাদেই ছিলো আর সবকিছু মালিক এখন শুধু ও। আমার তখনিই মনে হলো এই সব কিছুই ওর কাছে মেটার করে না। কারণ ওর বলা গল্পে ও মোটেও সে ব্যাপার গুলো আনতে চায় নি। যেন সূক্ষ্ম ভাবেই এড়িয়ে গেল।
এমন একটা মেয়ের এমন অবস্থা সত্যিই মায়া হওয়ার কথা।

– তো আজ কি শুনতে চান?
– আজ আমি তোমার সাথে গল্প গল্প খেলতে আসি নি। তুমি সত্যিই অসাধারণ গল্প কথক।
তবে আজ আমি সত্য শুনতে এসেছি। এসেছি আজ তোমার গল্প তোমাকে শোনাতে। তারপর তুমি সব স্বীকারোক্তি দেবে।

এইবার উচ্চস্বরেই হেসে উঠলো,
– এতে আমার লাভ? বরং ক্ষতিই হবে। আমার ফাঁসি হবে। কিংবা আজীবন জেল।

-তা তো এখনো হচ্ছে। কারণ কেউ তোমাকে বের করতে আসছে। তারচেয়ে ভালো আমি তোমাকে একটা সুযোগ দেব, সেটা আমি পরে জানাচ্ছি।

ওর মনের ভেতর চলা প্রশ্ন গুলো চোখে মুখে ফুটে উঠতে চাইছে৷ তবে সে প্রকাশ করছে না।

ওর জন্য রাখা চা টা টেনে নিয়ে বলল,
-তাহলে শুরু করুন।
চা খাওয়ার পর বলল,
– বাহ, আপনার চেম্বারের চা টা, আমার জন্য নিয়ে এলেন বুঝি?
– হ্যাঁ। তোমার পছন্দ হয়েছিলো।
– এইখানে আসার পর এই প্রথম কেউ আমার জন্য কিছু আনলো।

কথাটা বলে আবার চায়ের কাপ তুলে দিলো মুখে, কিছুক্ষন ধরে রাখলো। আমার মনে হলো ও চোখের পানি আটকানো চেষ্টা করছে। আমি সেদিনে নজর দিলাম না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মেয়েদের অদ্ভুত সব কারণেও চোখের পানি আটকাতে না পারার ক্ষমতা দিয়েছেন। আমি নিচু হয়ে ব্যাগ থেকে কিছু কাগজ পত্র বের করলাম। সে সুযোগে ও হয়ত কান্না টা গিলে ফেলেছে।

অনেক টা স্বাভাবিক লাগছে ওকে এইবার।
আমি ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলাম,

– তোমার গল্পটা আমি শুরু করি তোমার দুইজন প্রিয় মানুষের একজনের মৃত্যু দিয়ে।

একহাতে ঘাড়ে একপাশে ধরে মাথা বাঁকা করে আমার দিকে তাকালো, যেন আমার কথাটা ওকে আগ্রহী করে তুলেছে।

– তোমার মায়ের মৃত্যুটা তোমার কাছে প্রথম ধাক্কা ছিলো। তখন হয়ত তোমার কাছে মা ছাড়া আর কেউ আপণ ছিলো না।
তোমার মায়ের আত্মহত্যা টা তোমার কাছে একটা স্বার্থপরতা মনে হলো। কারণ তোমার মা জানতো তোমার বাবার স্বভাব তাও তোমাকে রক্ষার জন্য না থেকে উনি চলে গেলেন। তুমি ভয় পেতে শুরু করলে। কিন্তু ভেবে নিয়েছিলে তুমি তোমার বাবাকে খুন করবে। তোমার বাবাকে ভীষণ চালক মানুষ ছিলো তাই তার এত সম্পত্তি ছিলো। উনাকে মারা সহজ হবে না। তাই তুমি তোমার মায়ের মতো সেজে বাবার কাছে গেলে যাতে উনি তোমার প্রতি আগ্রহী হয় এবং তুমি উনাকে খুন করতে পারো।

একটু শব্দ করেই হেসে উঠলো ও, হাত গুলো নিচের দিকে নামিয়ে মোচর দিতে দিতে বলল,
– হ্যাঁ আমি কম্পাসের কাঁটা নিয়ে গিয়েছিলাম বাবাকে খুন করতে। কারণ আমার মনে হতো বাবা মাকে খুন করেছে আর সেটা আত্মহত্যা বলে জানে সবাই।
কিন্তু বাবার ঘুমের ঘোরে ভেবেছে আমি মা, আর তাকে খুন করতে এসেছি। দ্রুত হার্টবিট বেড়ে গিয়ে হার্ট এট্যাক করলো।

তখন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। কি করব বুঝতে পারলাম না। আমি তাড়াতাড়ি বাবাকে আবার স্বাভাবিক করে শুইয়ে দিলাম। তারপর বের হয়ে গেলাম।

– হ্যাঁ। এরপরের গল্প তুমি যা বলেছো আমি মেনে নিলাম। সত্য মিথ্যা মিশিয়ে। তুমি প্রতিনিয়ত তোমার রূপের জন্য কষ্ট পেতে। কিন্তু তুমি জানতে তোমার রূপেই তোমার প্রধান অস্ত্র। তাই যখন কেউ এইভাবে তোমাকে স্পর্শ করতে আসতো তুমি প্রতিবারেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে।

-হ্যাঁ। আমি জানতাম আমাকে বাঁচাতে কেউ আসবে না। সবাই আমাকেই দোষ দেবে।

– তখন তুমি ওদের সাথে সায় দিতে সুযোগ বুঝে ওদের সাথে এমন কিছু করতে। যাতে ওরা তোমাকে ভয় পেত। তুমি দেখতে যতটা নরম ততটা শক্ত মনের।

– হ্যাঁ আমি তাদের অন্ডকোষ চেপে ধরে মুখে বরফ ঢুকিয়ে দিতাম। যখন প্রচন্ড যন্ত্রনা পেতো তখন আমি ছেড়ে দিতাম। আর
এইটাই ওদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি ছিলো।

– হয়ত, এইভাবে কয় জনের সাথে করেছিলে?

– চারজন!

ওর এই র্নিলিপ্ত কথা গুলো যেন ওকে ভয়ংকর খুনীই মনে হচ্ছিলো।

-চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here