ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি part 5

0
538

#ডার্ক_সাইড_অফ_এ_বিউটিফুল_লেডি
#পর্ব_5
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা

– পানির অনেক রূপ জানেন তো? তার একটা রূপ দিয়ে তুহিন কে খুন করেছিলাম। আর আরেক টা ওর বাবাকে। এখন আপনি বের করুন কীভাবে?

ও বেড়িয়ে যেতেই আমি অদ্ভুত দোটানায় পরে গেলাম। আমি বুঝতে পারছি না ঠিক কীভাবে এরপরে আমার ভাবা উচিত।

আমার চেম্বারের জানালার গ্লাসে কুয়াশা জমেছে। তিনতলা থেকেও বাইরের রাস্তায় পুলিশের গাড়িটা চলে যাওয়া দেখা যাচ্ছে। আমি জানালা ঘেঁষে একপাশের পর্দা সড়িয়ে দেখছিলাম ওর যাওয়া টা৷ মনে হচ্ছে আমি ভালোই আটকে পড়েছি ওর মায়াজালে।

ওর গল্প আমার মস্তিষ্কে কত টা জায়গা করে নিয়েছে তা ও যাওয়ার পরে আমি টের পাচ্ছি। কারণ শেষের ছুড়ে দেওয়া প্রশ্ন টা ছাড়া আর কিছুই যেন ভাবতে পারছিলাম না। আমি আবার ওর ফাইল খুলে বসলাম, বিশাল ফাইল অনেক গুলো কেইসের ছোট্ট ডিটেইলস।
তবে কোন কিছুতেই যেন স্থির হতে পারছিলাম না। বার বার পানি আর বরফ মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।

পানির আরেক রূপ বরফ, বরফ খাইয়ে মেরে ফেলার গল্প তো অনেক পড়েছি বিদেশী বইয়ের গল্পে। বরফ গলে পানি হয়ে যাবে কোন প্রমাণ থাকবে না।
কিন্তু মাথা নাড়লাম, এইটা হয় বরফে ঢাকা পরিবেশে৷ যেখানে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে। যেখানে বরফ এমন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
অধরা কে মেরেছে বালতিতে ডুবিয়ে, তাহলে অন্যদের ও?
না আর ভাবতে পারছিলাম না।

রুমের মধ্যে পায়চারী করছিলাম, আনমনে হাটতে গিয়ে বার বার ধাক্কা খাচ্ছিলাম চেয়ারে। দুইবার ধাক্কা খাওয়ার পর সড়িয়ে রাখলাম চেয়ারে।

তখন হঠাৎ একটা ব্যাপার মাথায় এলো, ও আমাকে একটা বাধা দিয়ে গেল যাতে আমি ওতেই বার বার ধাক্কা খেয়ে আটকে থাকি।ভাবলাম এইটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। কিন্তু ওকে এইখানে পাঠানোর কারণ টা খালিদার থেকে আগে জেনে নেওয়া উচিত।

খালিদাকে ফোন করলাম, রিসিভ করতেই তীব্র গালাগালির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

– হ্যালো মাহি? কিছু পেলে?
– না তেমন কিছু না। যা পেয়েছি সব টা আমার অনুমানে সে সায় দিয়েছে কিছুটা। তবে আমার ওর পুরো গল্পটায় কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে।
আমার মনে হচ্ছে পুরো কাহিনীটায় একটা রূপক গল্প, উদ্দেশ্য ও ভিন্ন। ও কিছু লুকানোর জন্য এইসব করছে। কিন্তু সেটা কি ধরতে পারছি না। ওর সব কথায় মিথ্যা মেশানো। এত সহজে বের করা যাবে বলে মনে হয় না।

– হ্যাঁ খুব মিথ্যা বলে, এমন ভাবে বলে সব সত্য মনে হয়। আমার ওকে ভীষণ রহস্য ময়ী মনে হয়, না ও খুনের ব্যাপার গুলো স্বীকার করে। না অস্বীকার। বড় অদ্ভুত। এক পরিবারের এত গুলো মানুষের খুনের ব্যাপার বড্ড প্রেশার, বুঝলে? মেয়েটাকে টর্চার করলেও কিছু হয় না। না কোন চিৎকার করে না এক ফোঁটা পানি ফেলে, পনের বছরের ক্যারিয়ারে এমন কেইস আর পাই নি।

-তোমার কেন মনে হলো ওর কাউন্সিলিং দরকার?

– কারণ মেয়েটা স্বাভাবিক নয়, ওর মধ্যে কিছু তো আছে যা কেউ ধরতে পারে না। ওর সাথে যেই সেল মেট দেওয়া হোক না কেন তারা অদ্ভুত কারণে ওকে ভয় না। সেল চেঞ্জ করে ফেলতে চায়। তাই ভাবলাম তোমার কাছে পাঠায়। তুমিও তো পারছো না-

– না না আমি পারবো, তুমি আর একবার পাঠাও ওকে।
– কাল পরশুর মধ্যে তো সম্ভব না।
– তাহলে কি আমি আসবো? ওখানে ঘন্টা দুয়েকের জন্য আমার ওর সাথে থাকার ব্যাবস্থা করে দিতে পারবে?

– এইটা তো মুসকিল হবে, আচ্ছা তাও আমি ব্যবস্থা করছি।
– আচ্ছা ওর উপর আরোপ করা সব খুনের পোস্টমার্টাম রিপোর্ট গুলো আমাকে পাঠাতে পারবে?
– ওকে আমি ব্যবস্থা করছি। এক ঘন্টার মধ্যে পেয়ে যাবে।

ফোন রাখতেই আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, আমার মনে হলো ওর সুন্দরী হওয়া যত টা ডার্ক সাইড আমাকে জানিয়েছে সে সেটার ঘনত্ব হইতো আমার চিন্তার বাইরে।

ফাইল বের করলাম, লিখলাম ডার্ক সাইড অফ বিউটিফুল লেডি।

বাড়ি ফিরেও সারারাত খালিদার পাঠানো কাগজ পত্র গুলো নিয়ে পড়ে রইলাম। যত দেখছিলাম তত যেন আরো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিলাম।
সব এত স্বাভাবিক মৃত্যু। একবার দুইবার তিনবার পড়তে লাগলাম, কোন কিছু তো পাওয়া যাবে যা আমাকে এই রহস্য সমাধান করতে সাহায্য করবে।

এখন রাত দুইটা, খালিদাকে আবার ফোন দিলাম, ঘুম ঘুম কন্ঠে ও বলল,
– বেশী ভেবো না ওকে নিয়ে, ঘুমিয়ে পর।
– আচ্ছা ওর মেয়ে অধরা মৃত্যু টা পানিতে ডুবার আগে হয়েছিল নাকি পানিতে ডুবার পরে হয়েছিলো।
– কি বলতে চাইছো? কেউ মারার পরে পানিতে ফেলেছে ?

– হ্যাঁ, এই সব মৃত্যুতে শুধু অধরার মৃত্যুর কারণ দেওয়া আছে। আর সেটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে এত টা সহজ হয়ত না।

– আমি কিছু বুঝতে পারছি না তোমার কথা, তোমার কি মনে হয় খুন গুলো ও করে নি?

– সেটা এখনো বুঝতে পারছি না। চিন্তা কর তোমার পরিবারের কোন মানুষকে তুমি কারো খুনের জন্য জেলে পাঠালে, আবার তাকে ঘরে রাখলে। অন্যদের মারার সুযোগ করে দিলে। ব্যাপার টা এত টা স্বাভাবিক কীভাবে হতে পারে? আচ্ছা ওর কি আর কোন বাচ্চা আছে?

– না, একটায় মেয়ে ছিলো।
– ওর বিরুদ্ধে কেস করেছে কে? মানে ওকে জেলে পাঠিয়েছে কে? কারণ ওর পরিবারের সব ছেলেই তো মারা গিয়েছে।
– ওর শ্বাশুড়ি। শুধু সে মহিলায় বেঁচে আছে।
-আমি উনার সাথে দেখা করতে পারি?
– উনি দেখা করবে কিনা আমি জানি না, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি, কেইস টা শেষ হোক আমিও চাই।

-তাহলে কাল সকালে আমি যাবো উনার সাথে দেখা করতে৷

খালিদা হাই তুলে ফোন রাখতে রাখতে আমি টেবিলে ছড়িয়ে রাখা কাগজ পত্র গুলো দিকে তাকিয়ে রইলাম ফাঁকা দৃষ্টিতে।

পরের দিন সকালে খালিদার পাঠানো এক পুলিশের সাথে সেবাড়িতে গেলাম। বাড়িতেই যেতেই আমি ছোট্ট ধাক্কা খেলাম। এইটা বাড়ি নয়, রাজপ্রসাদ।

বিশাল এলাকা জুড়ে ছবির মতো সাজানো বাড়ি। এতক্ষন ধরে আমি ভাবছিলাম কোন মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ হয় ময়ূরাক্ষী। এত চাপ কেন ওকে নিয়ে খালিদার?
এতক্ষনে বুঝতে পারলাম কেন এত চাপে আছে খালিদা, কেন সেও সব রকমের চেষ্টা করছে কেইস টা দ্রুত শেষ হোক।

বসার রুমে বসে আছি অনেকক্ষন ধরে, এত চাকচিক্য আর দামী আসবাবে ভরা এই ঘর, কোন ঘর মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোন হোটলের রুম।

কেমন যেন নিষ্প্রাণ সব কিছু। দুইদিকে বেয়ে উঠা সিঁড়ি যেন এইঘরে দাম্ভিকতা পরিচয় ধরে রেখেছে।

সিঁড়ি দেওয়ালে টাঙ্গানো সোনালী ফ্রেমের বিশাল ছবি সবার গায়ে আভিজাত্য বোঝাই করা। একজন মহিলা কালো শাড়ি আর ডায়মন্ড এর দুলের সোফায় বসে আছে। বাকি তার তিনছেলে আর স্বামী কালো কোর্টে দাঁড়িয়ে।

ছবিটা দেখতে উঠে সিঁড়ি কাছে চলে গিয়েছিলাম। পেছন থেকে ঝাঁঝালো একটা স্বরে ফিরলাম,

– ছবিটা দেখে লাভ নেই ওরা কেউ বেঁচে নেই।

কলাপাতা রঙের পরিপাঠি শাড়ির সাথে সাদা ফুল হাতের ব্লাউস পরা এক মহিলা। বুঝতে অসুবিধা হয় নি উনিই ছবির সে রাজরানী।

আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম,
-আমি মাহাবুবা খানম, আমি একজন সাইক্রেটিস। আমি ময়ূরাক্ষীর কেইসের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।

উনি আমাকে যেন হাত মেলানোর যোগ্য মনে করছেন না। কিংবা তিনি যে বিরক্ত তা বুঝাতে চাইছেন।
সোফায় বসে আমাকে বিপরীতে রাখা সোফায় বসতে বললেন,

ভদ্রমহিলাও অসম্ভব সুন্দরী, ময়ূরাক্ষীর চেয়ে বেশি সুন্দরী বলা যায়।
আমরা সাধারণত বলি ছেলেটা একেবারে রাজপুত্রের মতো, রাজকন্যার মতো। রাজপুত্র বা রাজকন্যারা সুন্দর হয় কারণ রাজারা সেরা সেরা সুন্দরী দের বিয়ে করেন। তাই তাদের সন্তান ও সুন্দর হয়। ছবিতে থাকা তিনটি ছেলেকেই রাজপুত্র বলা যায়৷ এমন ছেলের জন্য ময়ূরাক্ষীর মতো মায়াবী মেয়েই খুঁজে আনবে এমন পরিবার সেটা বড্ড স্বাভাবিক ব্যাপার যেন।

আমি কিছু বলার আগেই উনি নাক কুচকে অবজ্ঞা আর বিরক্তি মেশানো স্বরে বলে উঠলেন,
– সে খুনী মেয়ের জন্য আবার সাইক্রেটিস?ধরে ফাঁসি না দিয়ে দেবে।

– কিন্তু প্রমাণ তো নেই, মৃত্যু গুলোই খুব স্বাভাবিক।

– আমি প্রমাণ, আমি বলছি তো সে মেয়ে খুনী।
-কিন্তু সে খুন গুলো কীভাবে করেছে ?

উনি চুপ হয়ে গেলেন, আমার এইভাবে প্রশ্ন করাতে যে উনি মোটেও খুশি না। তা ভ্রু কুচকে রাখা স্থির দৃষ্টিটা জানান দিচ্ছে।

আমি আবার বললাম-
– আমাকে সেটাই খুঁজে বের করতে বলেছে। খুন গুলো সে কীভাবে করেছে।
-তা পারলেন?
– অনুমান করছি, তবে তার জন্য আপনার কাছে জানতে এসেছি, কেন আপনার ওকে খুনী মনে হলো। মৃত্যু গুলোতো স্বাভাবিক –

আমি কথাটা শেষ করতে পারলাম না আলতার আগেই উনি চিৎকার করে উঠলো,

– এক সাথে একটার পর একটা মানুষ মারা গেলে এক ঘরে, আর আপনার মৃত্যু গুলো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে? ও ছাড়া আর কে বা করবে এইটা?

– তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন ওদের কে খুন করার যথেষ্ট মোটিভ ওর ছিলো, কিন্তু সেটা কি?

আমার এই প্রশ্নে উনার এতক্ষনের দাম্ভিকতা ভরা চেহেরাটা কুকড়ে যাচ্ছে। হয়ত ভয় লুকাতেই রাগের আশ্রয় নিচ্ছেন।

– আপনি জানেন আপনি কি বলতে চাইছেন? আপনার কি ধরনা ওকে কোন অত্যাচার করা হয়েছে, যার জন্য ও সবাইকে –

– আমার ধারণা ওকে এই ঘরে অত্যাচারের চেয়েই বেশি কিছু ভোগ করতে হয়েছে, তাছাড়া-

– যান, বেড়িয়ে যান-

আমি কথাটা শেষ করার আগেই উনার এই ধরনের আচরণ আমার সন্দেহ টা আরো তীব্র করছে। আমি আরো বেপোয়োরা হয়ে উঠলাম আরো কিছু প্রশ্ন করার জন্য, উনি আমাকে সে সুযোগ না দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতে যেতে বললেন,

– এই কে আছিস, এই অসভ্য ডাক্তার টাকে এখান থেকে বের করে দেয়, আর যেন ত্রিসীমানায় আমি না দেখি। আমারেই ভুল হয়েছে সে মেয়েকে পুলিশে না দিয়ে আমারেই ওকে শাস্তি দেওয়া উচিত ছিলো।

– যেভাবে অধরা কে দিয়েছেন সেভাবে?

আমার কথায় উনার পা যেন থমকে গেল পা সিঁড়িতে পরার আগেই যেন ফসকে যেতে চাইলো। আমার দিকে ফিরে তাকালেন। আমি আমার ধারালো দৃষ্টি আর ধারালো প্রশ্ন গুলো আবারো শান দিতে লাগলাম।

-চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here