সে
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
অন্তিম পর্ব
মিস্টার সৌকত বেশ চিন্তিত মেয়েকে নিয়ে।গত একমাস যাবৎ তিনি লক্ষ্য করছেন তার আদরের মেয়ের মাঝে কেমন যেন একটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনটা খুবই সূক্ষ্ম কিন্তু তা অল্প সময়ের মাঝেই ভাবিয়ে অস্থির করে তুলেছে সৌকতকে। মৌনতা ইদানিং একাকী কথা বলে। এমন মনে হয় যেন তার সামনে কেউ আছে। অদৃশ্য কেউ, তাকে কেবল মৌনতা দেখে কিন্তু এবিষয়ে সে বাবাকে সাফ মানা করে দিয়েছে তাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে। তবে মৌনতার সমস্যাটা দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। সেদিন রাতে মিস্টার সৌকতের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খেয়ে নিজ ঘরে ঘুমাতে চলে যায় মৌনতা। একটু পরেই সৌকত রুমে গিয়ে দেখে মৌনতা নেই। ইনফ্যাক্ট সারা বাড়ি খুঁজেও পাওয়া যায় না। সকালে হঠাৎই তার ঘরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পান মৌনতাকে। ব্যাপারটা কয়েকদিন ঘটেছে। সৌকত খেয়াল রেখেছেন , মৌনতা ঘরে যাওয়ার পর বের হচ্ছে না , উধাও হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে তিনি আজ তার পরিচিত একজন প্যারনমাল ইনভেস্টিকেটর রেইনসনের সাথে কথা বলবেন ঠিক করেছেন। মিস্টার রেইনসন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী। বহুকাল পূর্বে প্যারানমাল ইনভেস্টিগেশনের জন্য তার বাংলাদেশে আসা এবং এখানেই বিয়ে করে থেকে যাওয়া। যদিও তিনি এসব ভূত-প্রেত-জ্বীনদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নিজের স্ত্রী আর দুই সন্তানকে হারিয়েছেন , তবুও পিছিয়ে আসেননি।
সৌকত মৌনতাকে নিয়ে রেইনসনের বাড়ি আসেন গুলার কথা বলে। রেইনসন মৌনতাকে দেখে ঘাবড়ে যান। মুচকি হেসে বলেন,
‘ কেমন আছো মামনি? ‘
‘ খুব ভালো। আপনি?
‘ গুড।আমিও ভালো আছি। তো দিনকাল কেমন কাটছে তোমার? ‘
‘ চমৎকার। ‘
রেইনসন মলিন হাসেন। মৌনতার মাথায় হাত রেখে বলেন,
‘ গতবার পুরো বাড়িটা তোমায় ঘুরে দেখাতে পারিনি। এবার অনেকদিন থাকবে কিন্তু! ‘
‘ অবশ্যই। ‘
‘ এখন তাহলে যাও পেছনের পুকুরটা ঘুরে দেখে এসো। ততক্ষণে আমি তোমার বাপির সাথে একটু কথা বলে নেই। ‘
মৌনতা চমৎকার হাসি হেসে ঘর থেকে চলে যায়। মৌনতা ঘর ত্যাগ করতেই সৌকত ব্যস্ত হয়ে বলেন,
‘ তোমাকে তো সবটা আগেই বলেছি। তবে চিন্তিত কেনো দেখাচ্ছিল রেন? এনিথিং ফিশি? কি হয়েছে আমার মামনির? ‘
রেইনসন বেশ গম্ভীর হয়ে বলেন,
‘ মৌনতা অন্যজগতের কারো সঙ্গে বেশি জরিয়ে গিয়েছে। ‘
রেইন সনের কথা শুনে সৌকতের চেহারার রং পাল্টে যায়।মনে মনে এটা তিনিও আন্দাজ করতে পেরেছেন তবে চাইছিলেন যাতে তিনি মিথ্যে হোন। কিন্তু হলো তার বিপরীত।সৌকত হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে বলেন,
‘ তুমি কি বলছো তুমি জানো? ‘
‘ মৌনতা মামনি হয়তো ওই জগতের কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এবং সে মৌনতার জন্য ভয়াবহ। খারাপ কিছু করে ফেলার পূর্বেই আমাদের আটকাতে হবে। আলাদা করতে হবে তাদের। ‘
–
বিশাল পুকুরের চারিদিকে ছোট ছোট টবে লাগানো ফুলের চারা। বড় গাছগুলোর মৃদু ছায়া পড়ে সবুজাভ রং ধারণ করেছে পানি। মিষ্টি আবহাওয়া। একাকী মাটির পথ ধরে খালি পায়ে হাঁটছিল মৌনতা। পুকুরের ঠিক কাছে আসতেই অনুভব করে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে গেছে সে। মুচকি হাসে মৌনতা। অ্যালভিন গভীর চুম্বন করে মৌনতার কাঁধে। মধুর কন্ঠে বলে,
‘ আমি যদি মৃত না হতাম এক মুহূর্ত ও তোমার চোখের আড়াল হয়ে কষ্ট দিতাম না আমার মৌন। ‘
মৌন মুচকি হেসে বলে,
‘ তুমি আমার জীবনের সেরা পাওনা। তুমি যতটুকু সময় কাছে আছো তাতেই আমি খুশি। তবে মিস করি খুব। ‘
‘ আমি তোমার কাছেই থাকি। ‘
‘ আমি তোমায় অনুভব করে আমার অ্যালভিন! তুমি যে আমার শিরায় শিরায় মিশে গেছো। ‘
‘ তোমার বাবা তোমায় এখানে কেনো এনেছে জানো? ‘
‘ না তো! কেনো? ‘
‘ আমার কাছ থেকে তোমায় নিয়ে যেতে। ‘
মৌনতা ভয় পেয়ে অ্যালভিনকে জরিয়ে ধরে। কাঁপা গলায় বলে,
‘ আমি তোমায় হারাতে চাই না অ্যালভিন। ‘
‘ হারাতে হবে না। উম, ভালোবাসি। ‘
‘ আমিও। ‘
অ্যালভিন রহস্যময় হেসে বলে,
‘ তবে আমার করে নেই? ‘
‘ নাও! ‘
‘ কষ্ট হবে। তোমায় মরতে হবে! ‘
‘ তবে এক্ষুনি মরতে চাই। ‘
অ্যালভিন ফিক করে হেসে ফেলে মৌনতার কপালে চুমু খায়। মুহূর্তেই মৌনতাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
সমাপ্ত
পূর্বের পর্ব
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3139606532934744/
( প্রেমের রহস্য উন্মোচন হবে পরের সিজনে। শিগগিরই আসবে।
আসসালামুয়ালাইকুম)