সে ৫
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
.
কোনো প্রতিউত্তর পায় না মৌনতা। ঘরের দরজায় টোকা দেয়ার জন্য হাত রাখতেই খুলে যায় ঘরটা। মৌনতা ভিতরে ঢুকে দেখে পুরো ঘর এলোমেলো হয়ে রয়েছে। কাল এতো কষ্ট করে গুছানো সব কিছুই এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ঘরে ঢুকতেই কিছু একটা পায়ে লাগলে নিচে তাকিয়ে দেখে সেদিনের নিয়ে যাওয়া গিটার টা ভেঙে পড়ে আছে। মৌনতা চরম অবাক হয়। গিটার টা সে সামলে রেখেছিল তার কাছে। তবে এখানে এলো কি করে! মৌনতা মৃদু স্বরে বলে উঠে,
‘ আপনি কে তা না জেনে আমি এই ঘর থেকে এক চুল পরিমান নড়বো না। ‘
একটা অট্টহাসি কানে ভেসে আসতেই পেছন ফিরে তাকায় মৌনতা। পেছনে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে অবয়বটা। তার ঠিক সামনে এক টুকরো সূর্যের কিরণ পরে আছে। রহস্যময় হাসি হেসে সে বলল,
‘ আমার নাম অবধি পৌঁছে গেছো! ‘
‘ আমি স্বপ্ন দেখছি গতরাতে। ‘
‘ সাহসী তুমি। প্রশংসার দাবিদার। ‘
‘ সে আমি ছোট থেকেই। আমি আপনার চেহারা দেখেছি কিন্তু স্পষ্ট মনে করতে পারছি না। ‘
অবয়বটা অদৃশ্য হয়ে যায় মুহূর্তেই। মৌনতা একাকী চিৎকার করে বলে,
‘ আমি আপনার বিষয়ে সবটা জানতে চাই। কে আপনি? এখানে কিভাবে আটকা পরে গেছেন? ‘
কোন সারা শব্দ না পেয়ে মৌনতা আবার বলে,
‘ আমার কাছে ব্ল্যাক স্টোন আছে। আপনি নিশ্চয়ই ধারণা আছে আমি কি কি করতে পারি! ‘
মৌনতার কথা শেষ হতে না হতেই সজোরে ধাক্কা দেয় তাকে পেছন থেকে। মৌনতা ছিটকে গিয়ে পরে চৌকির উপর। চমকে গিয়ে পেছন তাকাতেই চোখে পলকে সেই কালো অবয়বটা মৌনতার খুব কাছাকাছি চলে আসে। মৌনতার দুপাশে হাত রেখে ভয়ংকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সোনালী চোখগুলো টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। মৌনতার ঠোঁট কোনে সূক্ষ্ম হাসি ফুটে উঠে। এক ভ্রুঁ উঁচিয়ে সামান্য ভাব নিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে সে বলে ,
‘ নাউ ইউ হেভ টু লিসেন মি। ‘
অ্যালভিন কিছু বলতে নিয়েও চোখ বুঁজে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সময়টা রেগে যাওয়ার নয়। মৌনতার হাত সবোর্চ্চ শক্তি দিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ কোথায় পেয়েছো এই স্টোন? ‘
মৌনতার হাঁসি পায়। খিলখিলিয়ে হেসে উঠে সে। অ্যালভিনের চোখ মুখ কুঁচকে ছোট হয়ে আসে। মৌনতা সেদিকে লক্ষ্য রেখে বলে,
‘ তা আপনার জানার বিষয় নয়। এখন আমার কাছে আছে ব্ল্যাক স্টোন এটা নিয়ে ভাবুন। ‘
‘ কি চাও তুমি? ‘
‘ তা চাই পাবো? ‘
‘ অ্যালভিন মিথ্যা পছন্দ করে না। ‘
‘ যদি বলি তোমাকে? ‘
অ্যালভিনের রাগ এবার মাত্রা ছাড়ায়। মৌনতার এতো জোরে খামচে ধরে যে হাট কেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে। মৌনতা চোখ বন্ধ করে সহ্য করে নেয় ব্যাথা। অ্যালভিন মৌনতার আরো কাছাকাছি এসে বলে,
‘ খুব বাজে কিছুর সাথে পাঙ্গা নিয়ে নিয়েছো বাচ্চা মেয়ে! জাস্ট দেখ কি কি হয় তোমার সাথে। ‘
এই বলেই অ্যালভিন সজোরে কামড় বসায় মৌনতার ঘাড়ে। উম্মাদের মতো রক্ত শুষে নেয় মৌনতার। মৌনতা এবার ছটফট করতে থাকে। অন্য জগতের প্রতি অতি উৎসাহ কি এবার প্রাণনাশের কারণ হবে তার!
চলবে.