গল্পের নাম: বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ৪৪: নতুন_আরম্ভ

0
3026

গল্পের নাম: বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৪৪: নতুন_আরম্ভ
লেখিকা: #Lucky_Nova

সন্ধ্যা নেমে এসেছে। লাইট বন্ধ থাকায় পুরো ঘর অন্ধকারে ডুবে আছে। মিহি অনেকক্ষণ ধরেই ঘুমাচ্ছে। এতদিন নির্ঘুম কাটিয়ে আজ শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
এরোন খুব যত্নের সাথে মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থাতেও মিহি শক্তহাতে ধরে রেখেছে এরোনকে। ঘুমের ঘোরের মাঝে মাঝে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলছে। যা অস্পষ্ট।
এরোন কিছু আন্দাজ করে মিহির কপাল আর গালে হাত ছোঁয়ালো। শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। গায়ে চাদর টেনে দিতে হবে।

এরোন মিহির গালের পাশের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে কপালে চুমু খেলো।
মিহিকে বুকের উপর থেকে সরিয়ে আস্তে আস্তে বালিশে শুইয়ে দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইতেই ভেঙে গেল মিহির ঘুম।
নড়েচড়ে উঠে এরোনের হাত চেপে ধরে ঘাবড়ানো গলায় বলল,”কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
এরোন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
“কোথাও না। ঘুমাও তুমি।”
“আপনি আবার চলে যাবেন?” ছলছল করা চোখে তাকালো মিহি। এখনি আবার কেঁদে ফেলবে হয়তো।
এরোন অমায়িকভাবে হেসে মিহিকে বুকে টেনে নিলো।
“না। ঘুমাও। চোখ বন্ধ করো।” মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল এরোন।
মিহি কাঁদতে কাঁদতে ভাঙা গলায় বলল, “এটা স্বপ্ন না তো, তাই না?”
এরোন বিষাদময় চাহনিতে চেয়ে বলল,”স্বপ্ন না।”
“আমি মরেই যাব স্বপ্ন হলে।” ভেজা গলায় বলে মিহি আঁকড়ে ধরলো এরোনকে।
মিহির এমন অস্থির ব্যবহার দেখে মুখটা মলিন হয়ে গেল এরোনের। এই চার মাস মিহি কতটা কষ্টে ছিল সেটা চিন্তা করেই খারাপ লাগতে লাগল।
ওই দুর্ঘটনার পর এরোনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়েছিল। অপারেশনের পরেও জ্ঞান ফিরে আসে নি। অনেকদিন পর্যন্ত অপেক্ষার পর ডাক্তাররা ধরেই নিয়েছিল জ্ঞান ফেরার আর সম্ভাবনা নেই। বলেছিল সারাজীবন হয়তো এভাবেই ডিপ কমায় থাকবে সে। সবাই অনেক ভেঙে পরেছিল। কিন্তু তাও আশা রেখেছিল। যার ফল এইযে। আজ চার মাস পর তার জ্ঞান ফিরে এসেছে। এখন সে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ। স্বাভাবিক।
“আর কেঁদো না।” আদুরে গলায় বলে মিহির চোখ মুছে দিলো এরোন।
এতে তেমন লাভ হলো না। মিহি কান্না থামাচ্ছেই না। কেঁদে কেটে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে তাও মনে হয় চোখের জল ফুরায় নি।
মিহিকে এভাবে কাঁদতে দেখতে এরোনের মোটেই ভাল লাগছে না।
“এখন থামো নাহলে অন্যভাবে থামাবো।” ফিসফিসিয়ে বলল এরোন।
মিহির কানে গেল না কথাটা। সে থামলো না।
এরোন দুষ্টুমির ছলে গাঢ়ভাবে স্পর্শ করলো মিহিকে।
মিহি কোনরকম প্রতিক্রিয়া দেখালো না। কাঁদতেই থাকলো। সে মজা করার মনমানসিকতায় নেই। তার সত্যিই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যে এরোন এসেছে। সত্যিই এসেছে।
কিন্তু পারছে না। খুব ভয় হচ্ছে। এতদিন পর এরোনকে পেয়ে সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে ওর কাছে। মনে হচ্ছে এই বুঝে ঘুমটা ভেঙে যাবে আর ও এরোনকে আবার হারাবে। এসব চিন্তা করেই মিহির ভিতরটা আতঙ্কে কেঁপে উঠছে বারে বারে।
মিহিকে এমন করতে দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো এরোনের।
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মিহিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মোলায়েম গলায় বলল,”অনেক কেঁদেছ, আর না।”
“আপনি খুব খারাপ। খুব। আমাকে কষ্ট দেন।” আধো আধো স্বরে বলল মিহি। কণ্ঠে ভীষণ অভিমান।
“তুমি যা শাস্তি দিবা সেটাই মেনে নেবো। শুধু তুমি শান্ত হও। কান্না থামাও।”
“আমার ভয় করছে খুব। যদি.. যদি.. ছেড়ে চলে যান! আমাকে রেখে যদি আপনি…”
“তোমাকে রেখে কোথায়ও যাওয়ার ছিলো না। এজন্যই ফিরে এসেছি।”
“কোথাও গেলে আমাকে নিয়ে যাবেন।” বাচ্চাদের মতো করুন গলায় বলল মিহি।
“হু। নিয়ে যাব। এখন কান্না থামাও আর কিছু খেয়ে নেও। খাও নি তো কিছুই!”
মিহি চোখ মুছে সাঁয় দিলো।

দিপালি ঘরে ভাত দিয়ে গেলেন। এরোন নিজ হাতে খাইয়ে দিলো মিহিকে। এতদিন পর ভালোভাবে খাবার খেলো সে। শরীরের বেহাল দশা দেখেই বোঝা যায় মিহি এতোদিন অনাহারেই থেকেছে। কতোটা শুকিয়ে গেছে!
“শুয়ে পড়ো আমি এগুলো রেখে আসি।”
“না।” চমকে উঠলো মিহি। আঁকড়ে ধরলো এরোনের বাহু।
এরোন অবাক হয়ে তাকাতেই মিহি বলল,”এখানেই থাক এসব। আপনি যাবেন না কোথাও।”
এরোন মৃদু হাসলো।
“আচ্ছা যাবো না।” এরোন বিছানার পাশের টুলের উপরে রেখে দিলো প্লেটটা।
এরোন মিহির গায়ে চাদর টেনে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লো। মিহি এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো এরোনকে।
“আমি আপনাকে খুব মিস করেছি। অনেক অপেক্ষাও করেছি।” সিক্ত কণ্ঠে বলে এরোনের চোখের দিকে তাকালো মিহি।
এরোনও আবেগঘন দৃষ্টিতে তাকালো মিহির চোখের দিকে। কি মায়া মিহির সেই অশ্রু টলমলে ক্লান্ত চোখে।
এরোন ঠোঁট এগিয়ে মিহির কপালে ভালোবাসার স্পর্শ আঁকলো।
মিহি প্রশান্তির হাসি দিয়ে দৃষ্টি নামালো।
নিভু নিভু স্বরে বলল, “আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”
“বলো।”
“আপনাকে কেউ বলে নি কিছু?” নামানো চোখে বলল মিহি। রক্তিম ভাব চলে এলো মিহির চেহারায়।
“কী বিষয়ে?”
মিহি লাজুক হেসে এরোনের হাতটা নিয়ে নিজের পেটের উপর রাখলো। কোনমতে একপলক তাকালো এরোনের চোখের দিকে।
এরোন বুঝতে পারলো না। ভ্রুদ্বয়ে ভাঁজ ফেলে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো মিহির দিকে।
“আমি প্রেগন্যান্ট।” অস্ফুটস্বরে বলল মিহি।
কথাটা কর্ণগোচর হতেই বার কয়েক পলক ঝাপড়ালো এরোন। অবাক হয়ে তাকালো। বিস্ময় খেলে গেল চোখেমুখে।
মিহি ঠোঁট কামড়ে চোখ নামালো। অপেক্ষা করতে লাগল এরোন কী বলে তা শোনার।
কিন্তু মিনিট পেরিয়েও এরোন বলল না কিছুই। কী বলা উচিত বুঝতে পারছে না সে। এটা একদমই নতুন একটা পরিস্থিতি।
খুশি হওয়া উচিত মনে হয়! নাকি? কিছু বলা উচিত। কিন্তু কী বলা উচিত?
এলোমেলো দৃষ্টিতে চিন্তা করতে লাগল এরোন।
এরোন কিছু বলছে না দেখে হালকা অবাক হলো মিহি। আশাহত হয়ে চোখ তুলে তাকালো এরোনের দিকে।
সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বলল,”আপনি খুশি হন নি?”
খানিক অপ্রস্তুত হয়ে গেল এরোন।
“হ..হ্যাঁ, হয়েছি তো।” বলে হাসার চেষ্টা করলো এরোন।
মিহি প্রফুল্লতার হাসি হেসে জড়িয়ে ধরে মাথা গুজলো এরোনের বুকে।
এরোন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। সে এখনো তার অনুভূতি আন্দাজ করতে পারছে না। কিন্তু শুধু এটুকু বুঝতে পারছে যে মিহি যেমন খুশি সেও ঠিক তেমনই খুশি।

?
সকালে বেশ দেরি করেই ঘুম ভাঙলো মিহির। ঘুম ঘুম চোখ মেলে বিছানায় হাত বুলাতেই বুঝলো পাশে এরোন নেই। হকচকিয়ে গিয়ে চোখ খুলল পুরোপুরি ভাবে। উঠে বসে ঘরে চোখ বুলিয়ে এরোনকে না দেখে ঘাবড়ে গেল। ভয় ঢুকে গেল মনের ভিতরে।
“এরোন?” চেঁচিয়ে উঠে না দেখে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে টুলের সাথে পা লেগে গেল মিহির। সাথে সাথে টুল কাত হয়ে উপরে থাকা প্লেটটা মেঝেতে ঝংকার তুলে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। কাচ ছিটকে গেল এদিক ওদিক। মিহি শুধু টুলটা ধরতে পেরেছিল। প্লেটটা ধরতে পারে নি।
“কী হয়েছে তোমার?”
বাথরুম থেকে মিহির ডাক আর কিছু ভাঙার আওয়াজ শুনে এরোন আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত বেরিয়ে এসেছে কোমড়ে তোয়ালে জড়িয়ে। শরীরে বেয়ে জল গড়াচ্ছে।
মিহি তাকালো এরোনের দিকে। কাঙ্ক্ষিত মানুষটার দেখা পেয়ে স্বস্তি পেল। ভারি কিছু নেমে গেল বুক থেকে।
মেঝের দিকে চোখ যেতেই ভাঙা কাচ দেখে অস্থির হয়ে উঠলো এরোন। মিহির দিকে কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, “ব্যথা পেয়েছ? দেখি! লেগেছে?”
“আস্তে আসুন আপনার পায়ে লাগবে।” মিহি চোখ বড়সড় করে সর্তকীকরণ ভঙ্গিতে বলতে বলতেই এরোন চলে এলো ওর কাছে।
ওকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পা ধরে দেখতে দেখতে বলল, “আমার লাগে নি। পায়ে স্লিপার পরা আছে আমার। তোমার কোথায় লেগেছে?”
“লাগে নি আমার।” নিচু গলায় বলল মিহি।
এরোন ভালোভাবে দেখে নিশ্চিত হলো। হ্যাঁ, লাগে নি।
চোখ তুলে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,”দেখে নামতে পারো না? এতো তাড়াহুড়োর কী ছিলো?”
“আপনাকে দেখতে পাই নি তাই…ভেবেছি যে…।” মিহি চুপ করে মাথা নোয়ালো। বুঝলো ওর দ্বারা বোকার মতো কাজ হয়ে গেছে। লোকটা ভিজে গায়ে বেরিয়ে এসেছে গোসল থেকে।
এরোন নিঃশব্দে হাসলো। মিহির গালে হাত গলিয়ে দিয়ে বলল, “কী ভেবেছ? আমি তো বলেছি এটা স্বপ্ন না। তাও সন্দেহ আছে?”
মিহি ঠোঁট কামড়ে একপলক তাকালো। কি সুন্দর সেই হাসি!
তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে।
“চলো তাহলে।” উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালো এরোন।
মিহি হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। বোকা চাহনিতে চেয়ে বলল, “কোথায়?”
“বাথরুমে। আমার গোসল হয় নি এখনো। শেষ হওয়া অব্দি কষ্ট করে বাথরুমে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তোমাকে।”
মিহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
লজ্জায় চোখ নামিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,”অসভ্য।”
এরোন মিহির কাছে ঝুঁকে ওর দুপাশে হাত রাখতেই হকচকিয়ে গেল মিহি।
এরোন দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,”যেভাবে চোখে হারাচ্ছো নিয়েই তো যাওয়া লাগবে মনে হয়! তাছাড়া আমার কোনো আপত্তি নেই। তুমিই তো। আর তুমি~~~।”
এরোনের বলা কথাগুলোতে কান লাল হয়ে গেল মিহির।
এরোনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,”ছিঃ! যান আপনি। নির্লজ্জ!”
“তোমাকে নিয়েই যাবো।”
মিহি থতমত খেয়ে বলল, “এ..একদম না।”
এরোন ঠোঁটের এলিয়ে হাসলো।
“যাক! এতসময়ে লজ্জা পাচ্ছ তাহলে?!”
“আপনার মতো লজ্জা ছাড়া নাকি আমি?”
“ওহ আচ্ছা! ঠিক আছে দেখাচ্ছি চলো। তোমাকেও লজ্জা ছাড়া বানাবো।”
চোখ ছানাবড়া করলো মিহি। কিছু বলার আগেই এরোন কোলে তুলে নিলো ওকে।
তবে দৃষ্টি সামনের দরজার দিকে পড়তেই অপ্রস্তুত হয়ে গেল এরোন।
আরোহী আর এরিকও ভারি অপ্রস্তুত হয়ে গেল। মাত্রই দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল তারা। দরজাটাও হা করে খোলা ছিল।
এরোনের মুখের দিকে লক্ষ্য করে ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো মিহি।
সাথে সাথে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। লজ্জায় লাল হয়ে গেল গাল।
শেষ! মান সম্মান সব শেষ।
মিহি মাথা নুয়ে নিলো একদম।
এরোন দৃষ্টি সরিয়ে আস্তে করে নামিয়ে দিলো মিহিকে।
বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেল সবাই।
আরোহী মুচকি হেসে চলে গেলেন সেখান থেকে। এরিকও কপাল চুলকে কেটে পড়লো।
মিহি ধপ করে বিছানায় বসে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “আপনার জন্য! এখন আমি মুখ দেখাবো কী করে?”
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে একহাতে কপাল ঘষলো।
এই ঘরটা সত্যিই কুফা।

?
অনেক দিন পর আজ খাবার টেবিলে সবাই একসাথে। সবাই বলতে দুটো পরিবারই একসাথে।
সবার মুখ জুড়ে হাসি। কষ্ট নামক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে যে!
ঠিক যেমন মেঘলা আকাশ ঝাপিয়ে বৃষ্টি হওয়ার পর এক সুন্দর নীল আকাশ। ঝলমলে রোদে মোড়ানো দিন। তেমন এখন শুধু সুখ, আনন্দ আর প্রশান্তি।

“তাহলে বিয়েটা কী আবার হচ্ছে?” রুহুল সাহেবের কথায় তার দিকে তাকালেন সবাই।
“আমিও ভাবছিলাম।” বললেন জোয়েল সাহেব।
এরোন আগ বাড়িয়ে বলে বসলো,”এবার কোনো আলাদা থাকাথাকি চলবে না।”
হেসে উঠলো সবাই। মিহিও হেসে ফেললো।
এরোন সরু চোখে তাকালো মিহির দিকে।
“আলাদা তো থাহন লাগবোই। রীতিটীতি তো মানন লাগবো।” বলে উঠলেন তাদের সাথে টেবিলে বসা এক বয়স্ক মহিলা।
এরোন কপাল কুচকে তাকালো তার দিকে। এই মহিলা আবার কে? মধ্যিখানে কাঠি নাড়ছে!
মহিলাটা ইতিমধ্যে লেকচার দেওয়া শুরু করে দিয়েছে তার চৌদ্দ পুরুষের রীতিনীতির বিষয়ে।
সবাই ঠোঁট চিপে মিটমিটিয়ে হাসছে।
উনি এতো জ্ঞান কেন দিচ্ছেন সেটাই বুঝতে পারছে না এরোন। কে উনি?
এরিক এরোনের বাম পাশে বসে ছিলো৷ মুখ এগিয়ে একদম নিচু গলায় এরোনকে বলল, “guess who? মিস মোনালিসা। তোর শ্বশুরের আম্মা।”
কপালের ভাঁজ সোজা হয়ে গেল এরোনের। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে এরিকের দিকে তাকালো এরোন।
“দজ্জাল মায়ের দজ্জাল ছেলে। তোর একদম রাজ কপাল।” বলেই ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো এরিক।
কড়া চোখে তাকালো এরোন।
“আরে আমাকে রাগ দেখাস কেন? টিপস দেই শোন। মহিলাকে বিধবা বিবাহ করিয়ে দে।”
এরোন দৃষ্টি সরু করে তাকালো। এরিকের হাসি পাচ্ছে খুব। জোরে হাসতে পারছে বলে ঠোঁটে ঠোঁট চিপে হাসছে।
“তোর সাথে বিধবা বিবাহ দিবো। দেখে নিস।” গমগমে গলায় বলল এরোন।
এরিকের হাসি থামালো না।
মোনালিসা মহা বক্তব্য পেশ করে চুপ করলেন।
এরোন কিছু বলার আগেই মিহি লজ্জাশরম একপাশে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল,”আমরা একসাথেই থাকবো। আলাদা থাকতে পারব না।”
হকচকিয়ে গেল সবাই। এরোনও অবাক হয়ে তাকালো।
মিহি মাথা নিচু করে ফেলতেই হো হো করে হেসে হেসে উঠলো সবাই।

?
ঘরে ঢুকতেই হতভম্ব হয়ে গেল এরোন। অবাক হয়ে চোখ বুলালো ঘরের এদিক ওদিক।
অন্ধকার ঘর জুড়ে ছোট ছোট মোমের আলোকরশ্মির মেলা। মৃদু বাতাসের সাথে নৃত্যে মজেছে তারা। যদিও অন্ধকারের রেশ পুরো কাটে নি। চারদিকে মৈ মৈ করছে গোলাপের স্নিগ্ধ সুবাস। বিছানার আশেপাশে টাঙানো রঙিন ওড়নাগুলো উড়ছে বারান্দা থেকে আসা বাতাসের সাথে তালে তাল মিলিয়ে।
এসব কে করলো!
মিহি?
এজন্যই ঘরে আসতে মানা করে দিয়েছিল?!
এরোন হেসে ফেললো নিঃশব্দে।
আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলো ঘরটায়। কিন্তু মিহিকে দেখতে পেল না।
“মিহি?” আলতো গলায় ডাকলো এরোন।
কোনো সারা নেই।
এরোন ভ্রু বাঁকিয়ে ভিতরে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই আচমকা সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল ঘরের দরজা।
হালকা চমকে সন্দিহান চোখে ঘুরে তাকালো এরোন।
মিহি দরজার হুক তুলে দিয়ে দাঁড়ালো দরজা ঘেঁষে।
লজ্জারাঙা চোখে তাকালো এরোনের চোখের দিকে।
মিহিকে আগাগোড়া দেখে থমকে গেল এরোন।
কালো শাড়ি জড়ানো শরীরের বেশিরভাগ অংশই উন্মুক্ত মিহির।
কালো শাড়ি! কালো ব্লাউজ! কালো টিপ!
সবকিছুতে কি মারাত্মক সুন্দর লাগছে মিহিকে!
ঘোর লেগে গেল যেন চোখের চাহনিতে।
উন্মুক্ত শরীরের ভাঁজে ভাঁজে চোখ পড়তেই শীতল শিহরণ বয়ে গেল শিরদাঁড়া বয়ে। তোড়পাড় শুরু হয়ে গেল মনের ভিতরে।
এরোন এগিয়ে এসে হাত রাখলো মিহির দুই পাশে। দুজনে তখনো চোখে চোখ রেখে আছে। ঠোঁটে স্নিগ্ধ হাসি। টিপটিপ করছে বুক।
”এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?” ভ্রু উঁচু করে নামালো মিহি।
“আবেদনময়ী লাগছে তোমাকে।” নেশাতুর চাহনিতে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বলল এরোন।
লজ্জা পেলেও চোখ সরালো না মিহি।
এরোন মিহির কোমড় জড়িয়ে কোলে তুলে নিতেই কেঁপে উঠলো মিহি। জড়িয়ে ধরলো এরোনের গলা।
এরোন বিমোহিত কণ্ঠে বলল, “কালো শাড়ি কেন পরার কথা ছিল জানো?”
“জানি।” লাজুক হেসে বলেই মিহি অধর ছুঁয়ে দিলো এরোনের গলায়।
হৃদস্পন্দন দ্রুততর হয়ে গেল এরোনের।
মিহি চোখ তুলে একপলক তাকালো এরোনের দিকে।
এরোন ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বলল,”আজ তো তুমি শেষ।”
মিহি লাজুক হেসে মুখ লুকালো এরোনের বুকে।

আজ এতদিনের বিরহের শেষে শুরু হলো নতুন পথ চলা। একটা ভালোবাসাপূর্ণ রাত। যার সাক্ষী জলন্ত প্রদীপের শিখারা। আর এই মাতাল করা সুবাসের লাল গোলাপ।

(সমাপ্ত)

[অবশেষে শেষ?। বাবাগো। আজ সবাইকে রিপ্লে দেবোই দেব। কেউ আবার “Next” লিখেন না যেন। গল্প কিন্তু শেষ]
[আরেকটা কথা! যারা প্রশ্ন করতেছেন যে মিহি কেম্নে প্রেগন্যান্ট? তাদের বলবো ভাই এতো টিউব লাইট কেন আপনারা? ভালো মতো গল্পটা পড়েন?! কপাল!! আমি তো মনে করতাম আমি একাই এতো টিউব লাইট। এখন দেখি আমার চেয়েও টিউব লাইট আছে।]
[পরবর্তী গল্প কালকেই শুরু হতে পারে আবার এক মাস পরেও হতে পারে। জানিনা?]
[সবসময় গল্পের শেষে এসে তাড়াহুড়ো করে সব বারোটা বাজাই আমি। এটা আশা করি ঠিকই আছে?।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here