গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৪১: হলুদ (বাকি অংশ)
লেখিকা: #Lucky_Nova
“আমারো ইচ্ছে ছিল আপনাকে হলুদ লাগানোর। নিজের হাতে।” অনুভূতিপুর্ণ আচ্ছন্ন কণ্ঠে বলল মিহি।
এরোনের চোখে মুখে খুশি ঝলক দেখা গেল। অভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইল সে।
মিহি মুচকি হেসে আরো হলুদ ভরালো হাতে। এরোনের সারা গাল আর গলা ভরিয়ে ফেললো হলুদে।
এরোন তাকিয়েই রইল অপলক দৃষ্টিতে। মিহি এখন পুরোপুরি ভাবে ভালোবাসে ওকে। এর থেকে খুশির আর কী হতে পারে! এই দিনগুলোর জন্যই তো এতো অপেক্ষায় ছিল সে।
মিহি দুষ্টুমি মাখা হাসি হেসে এরোনের শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম খুলে গলা থেকে বুকে হলুদ ছোঁয়ালো। যদিও কাজটা করার সময় হালকা লজ্জা পাচ্ছিলো মিহি। তাও নিজেকে দমালো না।
এরোনের নিঃশব্দে হাসলো। তার দৃষ্টি মিহির দিকেই স্থির।
“এভাবে কী দেখছেন?” রিনরিনে গলায় প্রশ্ন করল মিহি।
“আমার বউকে দেখছি।” মোহাচ্ছন্ন কণ্ঠে বলল এরোন।
মিহি লজ্জায় চোখ নামালো। মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল, “এতো কী যে দেখেন বুঝি না।”
এরোন মিহিকে কাছে টেনে নিয়ে ওর গালের সাথে গাল ঘষে আনলো।
“আউচ..!” ছোট ছোট চোখ করে আর্তনাদ করে উঠলো মিহি।
চাপ দাড়িতে লেগে গালটা জ্বলে গেল যেন।
এরোন হাসলো।
“বেশি লেগেছে?”
“হ্যাঁ লেগেছেই তো। আপনার দাড়ি দিয়ে এভাবে আমার গালটার বারোটা না বাজালে হতো না?” কটাক্ষ করে বলল মিহি।
“না হতো না।” বলেই অন্যগালেও একইভাবে হলুদ ভরিয়ে দিলো এরোন। এবার ব্যথা পেলও আর্তনাদ করলো না মিহি। মৃদু হাসলো। খুশি ঝলমল করা চোখে তাকিয়ে রইল এরোনের দিকে।
এরোন মিহিকে আগলে বিছানায় শোয়াতেই হকচকিয়ে গেল মিহি। এরোনকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলল, “এই! একদম না। মিঠি দিদি আসবে একটু পরে।”
“দরজা তো বন্ধ।” ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে হলুদ নিয়ে মিহির গলায় ছোঁয়ালো এরোন।
কেঁপে উঠলো মিহি। বাধা দিয়ে বলল, “বন্ধ হলেও৷ এখনি আসবে। প্লিজ যান এখন। নাহলে অনেক লজ্জা পড়তে হবে আমাকে।”
এরোন শুনলো না। মুচকি হেসে বলল, “হলুদ ছোঁয়ানো হয় নি আমার।”
এরোন আঁচল সরাতেই দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে গেল মিহির। মুখ ঘুরিয়ে নিলো মিহি।
এরোন হলুদের আলতো ছোঁয়ায় ভরিয়ে তুলতে লাগল মিহির সারা শরীর। কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল মিহি। অস্বাভাবিক হয়ে গেল শ্বাসপ্রশ্বাস। বিদ্যুৎ খেলে যেতে লাগল সারা গায়ে।
এরোন নিমজ্জিত কণ্ঠে মিহির কানে কানে বলল,”এখন আমার সেদিনের বলা ইচ্ছাটা পূরণ করে দেও।”
কথাটা কর্ণগোচর হতেই মিহির চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেল। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো এরোনের দিকে।
“ক..কী!”
এরোন ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে মিহিকে কোলে তুলতেই চমকে গেল মিহি। দুইহাতে এরোনের কাধ চেপে ধরে নামার চেষ্টা করে বলল, “একদম না। একদম না।”
এরোন দুষ্টুমিমাখা হাসি দিয়ে বলল, “কেন না?”
“প্লিজ। একদম..”
“আমিই তো!”
“একদম না। প্লিজ।” মিহি লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে মিহি।
এরোন ফিসফিসিয়ে বলল, “তোমার বারণ শুনতে ইচ্ছে করছে না।”
“আ…আপনি দিন দিন অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছেন।” লজ্জারাঙা মুখে চোখ পাকিয়ে বলল মিহি।
“এটাও তোমার দোষ। দিন দিন আমাকে পাগল করে দিচ্ছ। এজন্যই শাস্তি পাবা।” মুচকি হেসে বলল এরোন।
মিহির মুখে রক্তিম ভাব ছেয়ে গেল। চোখ নামিয়ে মিনমিনে গলায় বলল, “আপনাকে আমি ভালো মনে করেছিলাম। বুঝিই নি আপনি এতো…।”
“এতো? এতো কী? শেষ করো লাইনটা।” ঠোঁট কামড়ে হাসলো এরোন।
“মিহি?” মিঠি ডাকলো দরজার বাহির থেকে।
থমকে গেল মিহি। দরজার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আহাজারি করতে করতে এরোনকে বলল, “দেখেছেন? বলেছিলাম চলে আসবে।”
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিরস মুখে তাকালো দরজার দিকে। গমগমে গলায় বলল, “এই ঘরটাই কুফা মনে হয় আমার।”
“আপনি নামান আমাকে।” হাঁসফাঁস করা শুরু করে দিলো মিহি।
এরোন নামিয়ে দিলো মিহিকে। মিহি দ্রুত শাড়ির আঁচল ঠিক করলো।
মিঠি তখনো ডাকছে।
“এ..এক মিনিট। খুলছি। দাঁড়াও।” কোনমতে বলেই মিহি এরোনকে ঠেলে বারান্দায় নিয়ে এলো।
হন্তদন্ত করে বলল,”এখন পালান জলদি।”
এরোন সরু চোখে তাকালো।
মিহি তাড়া দিয়ে বলল,”কী হলো আপনার? দিদি ওদিকে দাঁড়িয়ে আছে।”
“দিদি আগে না আমি আগে?” কটাক্ষ করে বলল এরোন।
মিহি দেরি না করেই বলল, “আপনি আগে৷ এখন পায়ে পড়ি যান আপনি। অনেক হাসাহাসি করবে সবাই।”
“যাচ্ছি। তবে এই সবকিছুর শোধ আমি বাসর রাতে তুলবো তোমার থেকে। দেখে নিও।” তেরছাভাবে বলল এরোন।
মিহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,”হ্যাঁ, হ্যাঁ নিবেন। এখন যান।”
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই মিহি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো একবার। বলল, “সাবধানে যাবেন। গিয়ে ফোন করবেন।”
এরোনও জড়িয়ে ধরে বলল, “হু।”
“টাটা।”
“টাটা।”
মিহির কপালে চুমু এঁকে নেমে গেল এরোন। মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বেরিয়ে গেল গেট দিয়ে।
মিহি হাফ ছাড়লো। দেরি না করে গিয়ে দরজা খুললো।
হাসার চেষ্টা করে করল একটু।
মিঠি বেশ বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে মিহিকে দেখে ভ্রু আপনাআপনি সোজা হয়ে গেল।
সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল, “এসব কী লাগিয়েছিস?”
ভারি অপ্রস্তুত হয়ে গেল মিহি। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হলুদের কথা ভুলেই গিয়েছিল।
“হলুদ না এগুলো?” পরখ করে দেখে বলল মিঠি।
মিহি ঢোক গিললো।
মিঠি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে স্বগোতক্তি করল,”হ্যাঁ। হলুদই তো।”
“ন..না ওই.. এমনিই। ই..ইউটিউব দেখে ফেইসপ্যাক লাগাচ্ছিলাম।” আমতা আমতা করে শেষমেশ বাহানা বানাতে পারল মিহি।
মিঠি ভ্রুকুটি করে পা থেকে মাথা অব্দি একবার চোখ বুলিয়ে বলল,”গলায়, হাতে, পায়ে, আবার কোমড়েও লাগিয়ে বসে আছিস! এ কেমন ফেইসপ্যাক!”
(চলবে…)