গল্পের নাম:বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৩৩: স্ন্যাকস
লেখিকা: #Lucky_Nova
“বললাম না লাগবে না!” মিহি একরোখা হয়ে বলে হাত সরিয়ে নিল পুনরায়।
মেজাজ বিঘড়ে গেল এরোনের। তাও মেজাজ দমিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,”বেশি কথা না বলে দেখতে দেও কি হয়েছে।”
এরোন হাত টেনে নিতে চাইতেই মিহি মুখ ফুলিয়ে হাতটা আবার ছাড়িয়ে নিল। এরোন এবার রেগে সেই হাতের বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো ওকে।
‘আহ’ ব্যথাতুর আওয়াজ তুলে তাকালো মিহি।
দাঁতেদাঁত চিপলো এরোন। হাত আলগা করে থমথমে গলায় ধমকে বলল,”কী সমস্যাটা কী তোমার? ইরিটেট কেন করছ আমাকে? ওদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করছ!”
হতবাক হয়ে তাকালো মিহি। ধমকানিটা হজম হলো না ওর। বিনাবাক্যে ছলছল করে উঠল চোখদুটো তার।
ভারি থমকালো এরোন। বিলম্ব না করেই নিভানো গলায় বলল,”সরি, আমি আসলে..।”
মিহি চাঁপা অভিমানের সঙ্গে বলে উঠল,”তো যান গিয়ে হাসি তামাশা করেন। বিরক্ত লাগলে এখানে কেন আছেন? আর আমাকে কেন ধমকাচ্ছেন?আমি খারাপ ব্যবহার করছি? ওই অর্নির ব্যবহার দেখেন নি? ওকে কিছু না বলে আমাকেই উলটো কথা শুনাচ্ছেন কেন? ওর ব্যবহারে অনুযায়ী ওকে থাপ্পড়ই দেওয়া উচিত। উলটো আপনি আমাকে…।”
চুপ করলো মিহি। নামিয়ে নিল ছলছল করা চোখ।
এরোন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে এলো। মিহির দুই গালে হাত রেখে মুখটা তুলে ধরলো। মিহি তাকালো না। মুখ ফুলিয়ে চোখ নত রাখল সে। চোখ জলে কানায় কানায় ভর্তি। গড়াবে যেকোনো সময়।
এরোন ওর নামানো ছলছলে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,”আমার বউও যে বাচ্চা এটা ত আমি জানতাম না!”
মিহি ভ্রুকুটি করলো। এরোনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাওয়ার আগেই এরোন গালে রাখা এক হাতের বুড়ো আঙুলটা ওর ঠোঁট দুটোর উপর হালকা চেপে রেখে আদুরে স্বরে বলল,”আমার কাপকেককে কেউ কিছু বললে আমি ছেড়ে দেব? এত সহজ!”
মিহির বাঁকানো ভ্রু সোজা হয়ে গেল এ কথায়।
“অবশ্যই ভুল করেছে অর্নি। এভাবে তোমার সাথে কথা বলা উচিত হয়নি ওর। কিন্তু তাই বলে যদি ওকে বকাঝকা করি তাহলে হিতে বিপরীত হবে মিহি। বাচ্চাদেরকে সবকিছু শাসন করে হয় না। কিছু জিনিসে শাসন উল্টা বিগড়ে দেয় বাচ্চাদের। ওকে যদি আমরা চিৎকার চেঁচামেচি না করে ভালো ভাবে বুঝাই তাহলে অবশ্যই বুঝবে।” চোখে চোখ রেখে মৃদুস্বরে বলে আঙুল সরালো এরোন।
মিহি কিছু না বলে তাকিয়েই রইল অপলক দৃষ্টিতে।
এরোন চোখ সংকুচিত করলো। প্রসস্থ করে হেসে বলল,”বুঝেছ?”
মিহি পলক ফেলে দ্রুত চোখ নামালো।
এরোন গাল থেকে হাত নামালো। মিহি ছলছল করা চোখ দুটো মুছে নিলো চট করে।
এরোন মিহির ডান হাতটা টেনে নিলো নিজের কাছে। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল সে।
মিহি নামানো দৃষ্টিতে তাকালো ফাঁকে ফাঁকে।
হাতটার বেশ কিছু জায়গায় ছিলে গেছে। ইটের উপর পড়েছে বলে কথা!
এরোন আঙুল দিয়ে কনুইয়ের ছিলে যাওয়া এক স্থানে স্পর্শ করতেই ‘হিসসস~’ করে ব্যথাতুর আওয়াজ তুলে চোখ মুখ সামান্য খিচলো মিহি।
“বেশি লাগছে!” উদ্বেগজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল এরোন।
মিহি কিছু বলল না। একবার তাকিয়ে চোখ নামালো। ভিতরটা আবার কেমন কেমন যেন করছে! কারণ কী এসবের!
“একটু দেখে পা ফেলবা না?!” উদগ্রীব হয়ে বলেই এরোন উঠে গেল ড্রেসিং টেবিলের কাছে। ড্রয়ার থেকে এন্টিসেপটিকটা নিয়ে পুনরায় এসে বসলো মিহির পাশে।
“দেখি, দেও।” বলে সে নিজেই হাত টেনে নিয়ে ক্রিম লাগিয়ে দিতে শুরু করলো হাতের ছিলে যাওয়া জায়গা গুলোতে।
মিহি আড়চোখে ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার তাকালো ওর দিকে।
“আর কোথায় কোথায় লেগেছে?” বলে দেখতে চাইতেই মিহি ইতস্তত করে সরে গেল খানিক।
“কী?” প্রশ্নসূচক চাহনিতে বলল এরোন।
কোমড়েও লেগেছে কিন্তু লজ্জা আর দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারছে না মিহি।
তাই বলল, “আ..আর লাগে নি।”
এরোন যা বোঝার বুঝে গেল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেও এগিয়ে গিয়ে বসলো। হাত বাড়ালো কোমড়ের দিকে।
মিহি চকিত হয়ে হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলল, “ব… বলছি ত আর লাগে নি।”
“সেটা আমিই দেখে নিই?” এরোন তীর্যক চাহনিতে চেয়ে বলে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সরালো মিহির কোমড়ের কাছের আঁচল।
তটস্থ হয়ে উঠল মিহি।
এরোন গম্ভীর চোখে তাকালো। এখানেও ছিলে গেছে। মেয়েটাকে ধরতে পারলো না কেন সে! তাহলে এসব হতোই না।
বিরক্তির সাথে নিঃশ্বাস ফেলে আঙুল ছোঁয়াতেই লাফিয়ে উঠে সরে গেল মিহি। থতমত খেয়ে তাকাতে লাগল এদিক ওদিক।
এরোন সরু চাহনিতে চেয়ে কটাক্ষ করে বলল, “তোমার রোম্যান্স রোম্যান্স পাচ্ছে?”
চোখ গোলগোল হয়ে গেল মিহির। ছোটখাটো ঝড় শুরু হয়ে গেল মনের অভ্যন্তরে।
এরোন হাতের তর্জনীতে এন্টিসেপটিক লাগানোর প্রস্তুতি নিতে নিতে বলল,”না পেলে এখানে আসো। আর পেলে আমি দরজা বন্ধ করে আসি।”
চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো মিহির। কান, গাল সব লাল হয়ে গেল। এই লোক কি সংযত হয়ে কথা বলতে পারে না! মুখ খুললেই যত্তসব আজেবাজে কথা।
মিহি এগিয়ে আসছে না দেখে বাঁকা হাসলো এরোন। ওকে আরো জ্বালাতে সোজা উঠে চলে গেল দরজার কাছে।
এরোনকে সত্যি সত্যি দরজা বন্ধ করতে দেখে পীলে চমকে উঠলো মিহি। এই লোকের কি মাথা খারাপ! দিনের বেলা দরজা বন্ধ করছে! কি মনে করবে সবাই?!
“দ..দরজা খুলুন আপনি। বন্ধ কেন করছেন?”
“তোমারই ত রোম্যান্স রোম্যান্স পাচ্ছে।” মুচকি হেসে বলতে বলতে এগিয়ে এলো এরোন।
থতমত খেয়ে গেল মিহি।
এরোন কাছে এসে দাঁড়াতেও পারলো না তার আগেই দ্রুত পিছিয়ে গিয়ে খাটের ব্যাকসাইডে সজোরে মাথায় বাড়ি খেয়ে বসলো মিহি।
‘আহ’ বলে আর্তনাদ করে উঠতেই এরোন বিচলিত হয়ে এগিয়ে এক হাতে পিঠ জড়িয়ে অন্যহাত মাথার পিছনে রাখতে রাখতে শাসিয়ে বলে উঠল,”পাগোল নাকি তুমি? এভাবে না দেখে কেউ পিছায়?”
মাথায় এক হাতে ঘঁষে দিতে লাগলো এরোন।
মিহি নিশ্চুপ রইল। এরোনের বুকের কাছে এসে পরেছে ও। মধ্যকার দূরত্ব নেই বললেই চলে। এত কাছে আসায় হৃদস্পন্দন বাড়তে শুরু হয়ে গেছে। অজানা কারণে স্থির বসে থাকাও সম্ভব হলো না মিহির। তাই নড়েচড়ে উঠল ও।
“ঠিক আছ এখন?” মিহির দিকে প্রশ্ন সূচক চোখে তাকালো এরোন।
মিহি নোয়ানো মাথাটা উপর নিচে আলতো করে একবার নাড়লো।
“কাছে আসলেই এরকম ছটফট করো কেন?” ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল এরোন।
মিহি ঘনঘন পলক ফেলতে লাগলো।
এরোন কিছুক্ষণ ওভাবেই চেয়ে রইল ওর মুখের দিকে। তারপর হাত বাড়িয়ে কোমড় আগলে নিল ওর।
মিহি বিব্রতবোধ করতে থাকলেও বাধা দিলো না।
এরোন আঁচল সরিয়ে ছিলে যাওয়া জায়গা গুলো পরখ করে দেখে ক্রিম লাগিয়ে দিতে দিতে বিড়বিড়িয়ে বলল,”আমি কাছে আসলেই তোমার যত ছটফটানি, ঠেলাঠেলি, সরাসরি, কাঁপাকাঁপি শুরু হয়!”
মিহি জড়সড় হয়ে গেল।
এরোন সরে গেল। এন্টিসেপটিকটা স্বস্থানে রেখে মিহির দিকে এগিয়ে এসে বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,”এখন বলো! তুমি এমন কেন করছিলা? অর্নিকে নাকি বলেছ সবাইকে বাসায় পাঠাতে? বকাও নাকি দিয়েছ! কিন্তু কেন?”
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল মিহি। সব বলেও দিয়েছে এরোনকে!
“আর ওই মেয়েটার..কি যেন নাম! হ্যাঁ, ধুতরা! ওর সাথে ওমন করছিলা কেন?” স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল এরোন। শুধুমাত্র জানার জন্যই।
কিন্তু মিহি তা বুঝল কই! ওই মেয়ের বিষয়ে শুনেই গা জ্বলে গেল তার। বলে ফেলল, “বলেছি ভালো করেছি।”
“মানে?” সরু চোখে তাকালো এরোন।
“আশ্চর্য ত! আপনি ওর হয়ে ওকালতি করছেন কেন?”
“ওকালতি! ওকালতি কেন করব? কী বলছ এসব?”
“আপনাকে বুঝতে হবে না। যান গিয়ে যা করছিলেন তাই করেন।” হালকা তেজী স্বরে বলে বিছানা থেকে নামলো মিহি।
চলে যেতে চাইতেই ওর সামনে পথরোধ করে দাঁড়িয়ে গেল এরোন।
ভ্রু বাঁকিয়ে সন্দিগ্ধ কন্ঠে বলল, “সারাজীবন কি আমার সাথে এই পেঁচার মত তিতা ব্যবহারই দিবা? কাপকেকের মত মিষ্টি করে কথা বলতে পার না??”
“কে পেঁচা!” চোখ পাকালো মিহি।
“তুমি।” চোখের ইশারা করে মুখ দিয়ে সহজ স্বীকারোক্তি করল এরোন।
মিহি ক্ষেপলো।
“তো আমাকে কেন বিয়ে করেছেন? আমাকে ছেড়ে ময়ূরের মত কাউকে বিয়ে করতেন! আমি কি বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করতে?” তর্ক করলো মিহি।
কথাটায় এরোনের মুখোভাব কিঞ্চিৎ শক্তপোক্ত হয়ে এলো।
সিরিয়াস হয়ে বলল, “তুমি জানো না কেন বিয়ে করেছি?”
হঠাৎ এমন গুরুগম্ভীর ভাব আর শীতল চাহনিতে মুখটা চুপসে গেল মিহির। চোখটাও নেমে গেল আপনাআপনি। হুট করে আবহাওয়া বদলে গেল কেন?
“এখনো বোঝো না!” বিমর্ষ মুখে বলল এরোন।
মিহি এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। বোঝে না এমন ত না। কিন্তু এ প্রশ্নের উওরে কী বলবে ও!
মন বলছে কিছু বলা দরকার। কিন্তু কী বলা দরকার?
ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চাইলো মিহি। কিন্তু কিছুই বলা হলো না।
এরোন আরো কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নিচ থেকে ডাক পড়ে গেল।
“জিজু! কই তুমি? অপেক্ষা করছে ত সবাই।” অর্নি হাঁক ছাড়লো।
অর্নির গলা শুনেই মিহির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। রাগ হতে শুরু হলো আবার। অর্নির ব্যবহার আর ওই ধুতরার লুচ্চামি সব মনে পড়তেই যেন অসহ্য লাগছে।
এরোন এগিয়ে গিয়ে হাত ধরলো মিহি। টেনে নিয়ে বসালো ওকে বিছানায়।
ভরাট গলায় বলল,”চুপচাপ বসে থাকো। নড়বা না। আমি আসছি একটু পরেই।”
মিহি অখুশি হয়ে বিড়বিড়ালো কিছু।
এরোন খেয়াল করলো না। বসে থাকার হুকুম জারি করে চলে গেল সে।
এরোন বের হবার সাথে সাথে মেজাজ খিটখিটে হতে লাগল মিহির। সে বুঝে পায় না এত ওখানে কী কাজ তার? আশ্চর্য!
মুখ গোমড়া করে বিছানায় অনেকক্ষণ বসে আছে মিহি। বারান্দার যাওয়ার ইচ্ছে হলেও যাচ্ছে না।
এদিকে এরোন আসছেই না দেখে অধৈর্য হয়ে উঠেছে মিহি। যদিও মাত্র পাঁচ সাত মিনিট হয়েছে।
অবশেষে আর না পেরে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো মিহি।
তখনি ঘরে ঢুকল অর্নি।
অর্নিকে দেখে কপাল কুঞ্চিত হলো মিহির। ও এখানে কেন এসেছে!
ওর ভাবনার মাঝেই অর্নি মিনমিনে স্বরে বলল,”সরি মিহি দিদি। আমার ওভাবে বলা উচিত হয়নি।”
মিহি অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। পলক ফেলল কয়েকবার।
চোখমুখ দেখে ত মনে হচ্ছে সত্যিই সরি বলছে। অদ্ভুত ত! এত পরিবর্তন! এটাও ত এরোনের কাজ! কিন্তু এত জলদি বুঝালো কি করে?!
অর্নি তাকিয়ে রইল মিহির মুখ থেকে উওর শোনার আশায়।
মিহি বুঝলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলল,”হ..হ্যাঁ ঠিকাছে। আমারো ওভাবে বলা উচিত হয় নি।”
অর্নি হাসলো। দেরি না করে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো মিহিকে।
মৃদু হেসে মিহিও ধরলো।
?
“এরোন কী পছন্দ করে বল ত? সেটাই রান্না করব রাতে।”
মিহি সোফায় বসে ছিল। দিপালির প্রশ্নে বোকাসোকা হয়ে গেল। ও ত জানে না। বলবে কী করে!
মিহিকে আমতা আমতা করতে দেখে দিপালি মুখ লটকিয়ে বললেন, “এখনো জানিস না? ও কিন্তু তোর টা জানে।”
মিহি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “অ্যাঁ?”
দিপালি মুখ বাঁকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ। যাইহোক, তুই একটু উপরে গিয়ে এরোনকে জিজ্ঞেস করে আয় যা। তাড়াতাড়ি। রান্নায় দেরি হচ্ছে।”
মিহি দেরি না করেই গেল। অর্নির বান্ধবী গুলো বিদেয় হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। ওই ধুতরাকে আগেই বিদেয় করেছিল অর্নি। বাকিরা দুপুরে খেয়ে গেছে। এরপর অর্নিকে এরোন একটা ঘুড়ি বানিয়ে দিয়ে গোসলে গেছে। সেই যে গেছে তারপর আর বের হবার নাম নেই! এখনো বেরোয় নি।
মিহি বসে আছে বিছানাতে পা ঝুলিয়ে। অবিরাম পা দোলাচ্ছে সে। এত সময় নাকি লাগে গোসলে!
অনেক সময় বসে থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল মিহি। মা ওদিকে অপেক্ষা করছে। তাকে ত বলে আসা লাগে যে তার জামাই মহাশয় স্নান করতে ব্যস্ত।
মিহি উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো এরোন। মিহি তাকালো। নীলাভ আকাশী শার্ট আর ধূসর ট্রাউজার। যদিও আসার সময় কিছুই নিয়ে আসেনি সে। পরে কিনেছে এসব কাপড়চোপড়।
চোখ ঘুরিয়ে মিহিকে দেখতে পেয়েই সুন্দর করে হাসলো এরোন।
ধক করে উঠল মিহির ভিতরটা। মন আলোড়িত হলো যেন। অগোছালো হয়ে গেল দুইচোখের মনি। এদিক ওদিক চোখ নাড়িয়ে প্রশ্ন শুরু করবে কী দিয়ে সেটাই ভাবতে লাগল ও।
এরোন হয়তো আন্দাজ করল। প্রশ্নসূচক কন্ঠে বলল,”কিছু বলবা?”
মিহি না তাকিয়েই মাথা নাড়লো আলতো করে।
“হ্যাঁ বলো।”
একটু সময় নিলো মিহি। অতঃপর মিনমিনে গলায় বলল, “আব…মানে..আপনি কি পছন্দ করেন মা জানতে চেয়েছে। রাতে সেটাই রান্না হবে।”
এরোন শুনলো। তারপর ভ্রু সামান্য উঁচিয়ে কিছু ভাবলো। ভেবে পুনরায় মাথা মুছতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
ওপাশ থেকে কোনো উওর আসছে না দেখে ভ্রুকুটি করে চোখ তুলল মিহি। আশ্চর্য লোক ত! কানে শোনে নি নাকি? শুনছে ত! তাও ভান ধরে আছে কেন?
“কী বলব আমি গিয়ে?” সন্দিহান চোখে তাকিয়ে নিচুভাবে প্রশ্ন করল মিহি।
এরোন বারান্দায় তোয়ালেটা টাঙিয়ে দিতে দিতে বলল, “আমি যা চাই ওটা তোমার মা আগেই বানিয়ে ফেলেছে।”
মিহি ভ্রু বাঁকালো। ‘আগেই বানিয়েছে!’ বিড়বিড়িয়ে চিন্তা করতে লাগল মিহি। কিন্তু রাতের খাবার ত বানানোই শুরু হয় নি। তাহলে কী দুপুরের গুলোর কথা বলছে?
“রুইমাছ?” প্রশ্ন করল মিহি।
“না।”
“তাহলে? আলুর দম?”
“না।”
“তাহলে?” চিন্তিত ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকিয়েও কিছু ভেবে পাচ্ছে না মিহি।
এরোন এগিয়ে আসতে আসতে মোহাচ্ছন্ন কন্ঠে বলল,”কাপকেক।”
শব্দটা কানে আসতেই ভ্রু জোড়া সোজা হয়ে গেল মিহির। রসগোল্লার মত চোখ করে তাকালো ও।
মিহি ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার আগেই এরোন কোমড় আগলে নিজের সাথে মিশালো ওকে।
চমকে উঠল মিহি।
“পাগোল হয়েছেন?” বলতে বলতে দরজার দিকে তাকালো মিহি।
লোকটার সত্যিই কান্ডজ্ঞান নেই!
“ছাড়ুন। কী শুরু করেছেন!” একদম নিচুস্বরে বলে ছটফটিয়ে বার বার দরজার দিকে তাকাতে লাগল মিহি।
“ডিনার পরে হবে এখন স্ন্যাকস দিয়ে যাও।” ফিসফিসিয়ে বলল এরোন।
তার মতিগতি যে সুবিধার নয় তা বুঝতে দেরি হলো না মিহির।
“ম..মানে? ছাড়ুন আমাকে।”
“ছাড়ব তবে তার আগে এখানে কিছু দিতে হবে।” অন্যহাতটার আঙুল নিজের গালে ছুঁইয়ে বলল এরোন।
সে কি ঈঙ্গিত করছে তা বুঝেই বিস্ফোরিত চোখে তাকালো মিহি।
“জলদি দিলে জলদি ছাড়া পাবা। বি কুইক।” দুষ্টু হাসি দিল সে।
“আ..আমি নিচে যাব। ক..কাজ আছে আমার।”
“আমি ত বললামই শর্ত।”
ঢোক গিলল মিহি। হার্ট এট্যাক করে মরতে হবে আজ। লোকটা যে সত্যিই বদের বদ!
“Hurry up! নাহলে যেতে দেব না।”
আচ্ছা বিপদ ত!
উপায়ন্তর খুঁজে পেল না মিহি। তাই সম্মত হতেই হলো। লজ্জায় চোখ নামিয়ে রেখে এগিয়ে এলো এরোনের কাছে। ইতস্তত করে এরোনের কাধের কাছটা আলতো হাতে ধরে পায়ের পাতার উপর ভর রেখে উঁচু হয়ে এরোনের বরাবর আসার চেষ্টা করল।
এরোন মুচকি হাসলো। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চোখ বন্ধ করল মিহি। কম্পিত ঠোঁট জোড়া এগিয়ে গালে অধর ছোঁয়ানোর আগ মুহূর্তেই অনেক বড় ধোঁকা দিয়ে বসল এরোন।
অধরে অধর ছুঁয়ে যেতেই চমকে চোখ খুলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো মিহি। ধড়ফড় করে উঠল বুক।
এরোন কোমড় ছেড়ে দিতে দিতে মুচকি হেসে বলল, “বাহ, তুমি ত ভালোই এডভান্টেজ নিতে জানো! বলেছিলাম গালে বাট তুমি ত..! বাই দ্য ওয়ে! থ্যাংকস।”
এসব শোনার পর মিহি আর এক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়াল না। লজ্জায় মিইয়ে গিয়ে দুইপা পিছিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল সে।
(চলবে…)
(গল্প সোমবারও পাবেন। তবে রাত ১০ টার মধ্যে।)