গল্পের নামঃ বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ২৯: জেলাসি

0
2155

গল্পের নামঃ বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ২৯: জেলাসি
লেখিকা: #Lucky_Nova

মিহি হকচকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কাঁপা গলায় বলল, “ক..কোনো কারণ নেই। প্লিজ সরুন আপনি।”
“কারণ নেই?!” কটাক্ষ করে বলল এরোন।
মিহি আর কিছু বলল না। মুখ ঘুরিয়ে রেখে ঠোঁটে ঠোঁট চিপে ঘন ঘন পলক ফেলতে লাগলো।
“আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বই না। জীবনেও ছাড়বো না। তুমি ছাড়া আমার চলবেই না।” ব্যাকুলতাভরা কন্ঠে বলল এরোন।
মিহি চোখ প্রসারিত করলো।
একটু থেমে এরোন ভরাট গলায় মিনতির সুরে বলল,”অনেক ত হলো! এখন ত একটু ভালোবাসো, প্লিজ!”
মিহি থমকে গেল। ধড়ফড়িয়ে উঠলো ভিতরটা।
এরোন ঝুঁকে এলো মিহির দিকে। মাথাটা কাধে ঠেকিয়ে শরীরের ভার ছেড়ে দিল মিহির উপরে।
মিহি শুকনো ঢোক গিললো। ঘন ঘন তপ্ত নিঃশ্বাসে কাধে আছড়ে পরতেই কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো ও।

অনেকক্ষণ যাবৎ কোনো নড়চড় নেই এরোনের।আজ মনে হয় এভাবেই থাকার পরিকল্পনা এঁটেছে সে।
এদিকে এতসময়ে কাধটা ব্যথা হয়ে গেছে মিহির। বিষ হয়ে গেছে একদম। তাও ঠোঁটে ঠোঁট চিপে চুপ করে আছে সে। বুকের মধ্যে টিপটিপ করছে। ঠোঁটের উপরে আর থুতনিতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।

আরেকটু অপেক্ষা করলো সে। অতঃপর আর না পেরে নিভু নিভু স্বরে বলল, “আ..আপনি কি..সরবেন না!”
একথায় এরোনের কোনো হেলদোল হলো না। সে যেমন ছিলো তেমনই রইলো।
মিহি ঠোঁটে ঠোঁট চিপে নিঃশব্দে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। হালকা নড়ার চেষ্টা করতেই কাধে অধর ছুঁয়ে দিলো এরোন।
চমকে উঠলো মিহি।
এরোন কাধ থেকে মুখ এগিয়ে গলায় ডুবিয়ে দিতেই শিউরে উঠল মিহি। হালকা ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো সে।
স্পর্শের গভীরতা আরো বাড়লো। কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করলো মিহি। একহাতে খামচে ধরলো এরোনের কোমড়ের কাছের শার্ট।

ঠিক সেই মূহুর্তেই কেউ করাঘাত করে উঠলো দরজায়।
পীলে চমকে উঠলো মিহি।
“মিহি! দরজাটা খোল না একটু। ঘুমাস?!” দরজার পুনরায় করাঘাত করে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন রাহি।
মিহি দরজার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে এরোনকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তার সরার নামই নেই।
লোকটার কি কান্ডজ্ঞান নেই! এই মুহূর্তেও হুশ জ্ঞান হচ্ছে না!
“উফ! সরুন জলদি! ছোট মা এসেছে।” নাক মুখ কুচকে ফিসফিসিয়ে বলল মিহি।
এরোন বিরক্ত হয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। অতঃপর কপাল কুচকে মুখ তুলে তাকালো মিহির দিকে।
সে চোখ নামিয়ে রেখে ঠেলাঠেলিতে ব্যস্ত।
“সরুন না! এসব…। কাকি কি মনে করবে?!” অনুনয় করে ফিসফিসিয়ে বলল মিহি।
“কি মনে করবে?! দেখতে পাচ্ছে আমাদের?” বিরক্ত হয়ে নীচু গলায় বলল এরোন।
মিহি চোখ বড়সড় করে তাকালো। কি বলে এই লোক!
“বলো ঘুমাচ্ছো।” বলেই আবার মুখ ডুবিয়ে দিলো সে।
মিহি শিউরে উঠে আবার ধাক্কাধাক্কি শুরু করলো।
“নির্লজ্জ লোক! ছাড়ুন!” নাকমুখ কুচকে বিড়বিড়িয়ে উঠলো মিহি।
অনিচ্ছার স্বত্তেও মহাবিরক্ত হয়ে উঠে বসলো এরোন। ছাড়া পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে চটজলদি শাড়ির উপর নিচ দেখে নিলো ব্যস্ত ভঙ্গিতে।
এরোন একহাঁটু ভাঁজ করে তার উপর কনুই রেখে সরু চোখে তাকিয়ে রইল মিহির দিকে।
মিহি হাতের উল্টো পিঠে ঘাম মুছে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
রাহি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন।
অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে কাঁপা হাতে দরজাটা খুলল মিহি। লজ্জায় গাল লাল তার। তাও রাহির দিকে কোনমতে তাকিয়ে মেকি হাসলো। মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে চোর চুরি করে ধরা পরেছে। কিন্তু রাহি অতশত খেয়াল করলেন না।
কারণ তার মাথাটা মাইগ্রেনের ব্যথার ফেটে যাচ্ছে।
মিহিকে দেখে কান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললেন, “টাফনীল লাগবে রে একটা। প্রচন্ড মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়েছে। তোর ড্রয়ারে একটাও আছে কিনা দেখ না একটু!”
মিহি ধাতস্থ হলো। জলদি উপর নিচে মাথা নেড়ে ঘরে ঢুকে গেলো। রাহি ঢুকলেন না৷ জায়গায় দাঁড়িয়ে একহাতে মাথা চেপে ধরে রইলেন।
মিহি ঘরের লাইট জ্বালালো না। বারান্দা থেকে আসা ভোরের আলোয় মোটামুটি সব দেখা যাচ্ছে।
এরোন বিরসবদনে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগল মিহিকে। এত অপেক্ষা ভাল লাগছে না তার।
মিহি আড়ষ্টতার সাথে এগিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের কাছে। ভুলেও বিছানার দিকে তাকালো না।
তাকালেই যেন মরণ।
বুক এখনো ধকধক করছে। গলাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে। কাঁপা হাতে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার হাতিয়ে হাতিয়ে দেখতে লাগলো সে।
টাফনীল পাওয়া গেল না। একটু হতাশ হল মিহি।
দরজার কাছে এগুতে এগুতে বলল, “নেই ছোটো মা।”
রাহি মাথা থেকে হাত নামিয়ে কান্ত ভঙ্গিতে তাকালেন। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার। মাথাটা কেউ ছিড়ে খাচ্ছে যেনো!
ঔষুধ নেই শুনে মুখটা আরো শুকিয়ে গেল।
মলিন মুখে স্বগোতক্তি করলেন, “ফার্মেসী খুলতেও ত দেরী আছে। কি আর করার! যাইহোক ডিস্টার্ব করলাম তোকে। তুই যা, ঘুমা।”
শেষ কথাটায় চমকে তাকালো মিহি। এখন ঘরে ঢোকা মানে যেচে পরে বাঘের ডেরায় ঢোকা।
রাহি নিজের ঘরের দিকে পা দু তিন পা বাড়িয়ে যেতেই মিহি নিজের ঘর থেকে দুইপা বেড়িয়ে এসে বলে উঠলো,”ছোটো মা!”
রাহি কান্ত মুখটা ঘুরিয়ে তাকালেন।
“আ..আমি তোমার মাথা টিপে দিই! তাহলে দেখবে ভালো লাগছে।”
“দিবি?!” কান্ত মুখটা একটু যেনো সচ্ছল হয়ে এলো রাহির।
“হ্যাঁ। চলো, চলো।” ধরফরিয়ে বলে হাত জড়িয়ে ধরে টানতে শুরু করল মিহি।

মিহির পালানোর ফন্দি বুঝতে এরোনের দেরি হলো না। মুখ দিয়ে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। তারপর মুখ লটকিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে বলে উঠল,”ধ্যাত! আর ভাল্লাগে না!”

?
“তুমি এখন এলে!” এরোনকে দেখে অবাক হলেন দিপালি।
“ভোরের দিকে।” প্রসারিত করে হেসে চেয়ার টেনে বসলো এরোন।
জোয়েল সাহেব খবরের কাগজ থেকে মুখ উঠিয়ে সরু চোখে তাকালেন একপলক। মধ্যরাতে দেয়াল টপকালো কে তাহলে!
“ভালো করেছো এসেছো। কাল থেকেই তোমাকে খুঁজছিলাম।” হাসিমুখে বলে টেবিলে খাবার সাজাতে লাগলেন দিপালি।
এরোন নিঃশব্দে হাসলো। পরিবেশ শান্ত! অর্থাৎ মিহি হাঙ্গামা করেনি! যাক ভালো। সুবুদ্ধি হচ্ছে কাপকেকটার।
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মিহিকে খুঁজলো ও। সেই ভোরে চোখের আড়াল হয়েছে সে। এরপর অপেক্ষা করতে করতে এরোন এক ঘুম দিয়ে উঠেছে। তারপরও রুমে পাওয়া যায়নি তাকে।
মাথা টেপা কি শেষ হয়নি! এত মাথা টেপার শখ! তাহলে ত বরের মাথা টিপলেই পারে!
একে একে সবাই টেবিলে হাজির হলো। মিহিরই খবর নেই।
সকাল সকাল এরোনকে দেখে সবাই মহা খুশি। বিশেষ করে অর্নি।
সবার সাথে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে যেতে আরেকদফা চোখ বুলিয়ে নিলো এরোন।
নাহ! তার দেখা নেই।
রাহি চলে এসেছে। মিহি ত তার সাথেই ছিলো। তাহলে এখনো আসছে না কেনো! সবার খাওয়া দাওয়া ত শেষের পথে! ভিতরে ভিতরে অস্থিরতা বাড়ছে এরোনের।
“মিহি কোথায়?” দিপালি চোখ বুলিয়ে প্রশ্ন করলো।
এরোন তাকালো।
“ও একটু আগেই ফার্মেসীতে গেছে। মাইগ্রেনের জন্য ঔষধ আনতে। বলেছিলাম পরে যা। সাড়ে দশটা, এগারোটার আগে খোলে না ফার্মেসী। সে সাড়ে নয়টায়ই ছুটলো!” বললেন রাহি।
এরোন হাত উল্টে ঘড়ি দেখলো। বিশ-পঁচিশ মিনিট হতে চলেছে। এখনো আসছে না কেনো মিহি!

“এত দেরি ত হওয়ার কথা না! আমি গিয়ে দেখে আসি!” বলল এরোন।
দিপালি আর রাহি হাসলেন। জোয়েল সাহেব সরু চোখে এরোনকে দেখতে লাগলেন।
“চলে আসবে চিন্তা করো না। দোকান খোলা পাচ্ছেনা হয়তো।” ফোড়ন কেটে বললেন রাহি।
এরোন এসব কথা গায়ে না মাখালো না। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলল,”আমি দেখে আসি।”
কেউ আর মানা করল না। জোয়েল সাহেব বাদে সবাই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

?
অনেকক্ষণ খুঁজেও কোনো ফার্মেসী খোলা পায়নি মিহি। সব বন্ধ। তবে এখনি খুলবে। এজন্যই দাঁড়িয়ে অপেক্ষাই করছে সে। একবার যখন এসেছেই নিয়েই ফিরবে।
রাস্তার পাশে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল মিহি। এদিক ওদিক চোখ বুলাতে গিয়ে আচমকা চেনা একজনের সাথে চোখ চোখ পরলো মিহির। ভিতরটা কেঁপে উঠল মুহূর্তেই। মুখটা বিবর্ণ হয়ে এলো।
চোখের অপরাধী দৃষ্টি সামনের মানুষটার দিকে। সেও তাকিয়ে আছে। তবে তার চোখেমুখে বিষাদময় তাচ্ছিল্যের ভাব।
মিহি হাতের পার্সটা শক্ত করে চেপে ধরে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
এতদিন যার সাথে দেখা করে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবছিল, যাকে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলতে চাচ্ছিলো সেই সামনে এসেছে। কিন্তু মিহি চোখই মেলাতে পারছে না। কথা কিভাবে বলবে! নিজেকে অনেক বড় দোষী মনে হচ্ছে ওর।
রিজু এগিয়ে এলো ওর দিকে।
মিহি বুঝতে পেরে হালকা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তবে চোখ ফিরিয়ে তাকাতে পারলো না।
“এখন কি আমাকে চিনতেই পারছ না?!” ভনিতা না করে সরাসরি তিরস্কার করে বলল রিজু।
মিহি থমকালো খানিক। মুখটা কাঠকাঠ হয়ে গেল চোখের পলকেই। তাকালো সে রিজুর দিকে। তার মুখোভাবে স্পষ্ট ঘৃণা, তাচ্ছিল্য, বিষন্নতা।
“অন্যকাউকেই যদি পছন্দ ছিলো তাহলে আমার পরিবারের সম্মান নিয়ে খেললে কেনো? একবার ত বলতে পারতে! তোমায় ত কেউ….। অন্যদের কথা বাদই দেও। আমিই ত সরে যেতাম। বিয়েও ভেঙে দিতাম। কিন্তু তুমি ত রাজি হয়েছিলে! খুশিও ছিলে! আমাদের দুজনকে কথা বলতে দেওয়ার সময়ও তুমি কিছুই বললে না! উল্টো জানালে এতে তোমার সম্পূর্ণ মত আছে। …এত নাটক কিভাবে করলে তুমি!”
মিহি আহত মুখে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ল। বলল, “আপনার ভুল হচ্ছে। এখানে অনেক কিছু আছে যা আপনি জানেন না। আমি কোন নাটক করিনি, বিশ্বাস করুন।”
“বিশ্বাস! তোমাকে? এরপরেও! হাহ্! আমি অনেক কিছুই জানিনা বললে ত?! আমি জানতে চাইও না। কিভাবে রাতারাতি বদলে গেছো জানতে চাই না। নিশ্চয়ই বড়লোক দেখেছো তাই…।” এটুকু বলে রিজু মুখটা কুচকে ফেলল।
মিহি হতভম্ব হয়ে গেল।
“Anyways, তোমার সাথে আমার এমনিও কথা বলার ইচ্ছেও নেই। হুট করে আমাদের সম্মান ডুবিয়ে দিয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছ। আজ হঠাৎ চোখের সামনে উদয় হলে তাই…।” দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো রিজু। চোখমুখে এখনো প্রবল ঘৃণা আর তাচ্ছিল্য ভাব।
“আপনি সবটা না জেনেই কাউকে এভাবে বলতে পারেন না।” থমথমে গলায় বলল মিহি।
রিজু উপহাসমূলক হাসি দিলো।
“সবটা কি জানবো আর? একজনের সাথে সম্পর্ক ছিলো তোমার, তার সাথে বাড়িও ছেড়েছ, বিয়ে করেছ, একসাথে থাকছো, সংসার করছো! এরপর আর কি জানাবা? এখন ত অন্তত নাটক বন্ধ কর তোমার!”
মিহি দাঁতে দাঁত চিপলো। সবাই কেন ওকে এভাবে দোষারোপ করছে! একবারো ওর কথাটা শুনছে পর্যন্ত না।
“আমি কোনো নাটক করছি না। বুঝেছেন আপনি? না জেনে শুনে উলটা পালটা কথা বলবেন না।” তেঁতে উঠলো মিহি।
রিজু আশ্চর্য হয়ে তাকালো।
“কোনটা উল্টাপাল্টা?”
“সবই। যা জানেন তার সবটাই উলটো জানেন। আমি নিজেও জানতাম না যে এমন কিছু হবে।” পক্ষ সমর্থন করে বলল মিহি।
রিজু কপাল কুচকে ফেলল।
“কেনো যে শুনলাম তমার কথা! না শুনলে আজ সব ঠিক থাকত। না আমাকে উনি তুলে নিয়ে যেতেন! না এতকিছু হত…।” নিচের দিকে বিচলিত দৃষ্টি বুলিয়ে স্বগতোক্তি করতে লাগল মিহি।
“মানে?” কপাল আরেকটু কুচকে জিজ্ঞেস করল রিজু।
মিহি তাকালো। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই কেউ ওর হাত চেপে ধরে হেঁচকা টান দিল। তাল সামলাতে না পেরে কারো বুকে এসে পরে ও।
সন্দিহান চোখে দ্রুত মাথা তুলে তাকাতেই এরোনের কটমট চাহনিতে ভরকে গেল ও। সরে আসতে চাইতেই হাতের বাঁধন শক্ত করে ফেলল এরোন। আটকা পরে গেলো মিহি এরোনের বুকের কাছে।
রিজু অবাক হয়ে ভ্রুকুটি করে বলে, “আশ্চর্য! কে আপনি? এভাবে মিহিকে…।”
“তোর জম আমি।” দাঁতেদাঁত চিপে বলে এরোন।
রিজু ভ্রুর সাথে সাথে চোখও সংকুচিত করলো।
মিহি লজ্জায় এরোনের বুক থেকে সরে আসতে চাইলো আবার। কিন্তু এতে ওকে আরো নিজের সাথে চেপে ধরলো এরোন।
কটমট চাহনিতে রিজুর দিকে চেয়ে রাগে ফুঁসে উঠছে ও।
রিজু এতক্ষণে হয়তো আন্দাজ করতে পারলো মিহির সাথে এরোনের সম্পর্ক। বুঝতে পেরে ভদ্রতার খাতিরে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।
আশেপাশে কতক লোক জড় হয়েছে ইতিমধ্যে। একে অপরের সাথে কানাকানি করছে তারা।
মিহি আশপাশ খেয়াল করে আবার সরে আসতে চাইলো। কিন্তু এরোন ত ছাড়ছেই না।
মিহি শঙ্কিত চোখমুখে মিনমিনে গলায় বলল, “লোক দেখছে!”
এরোন ধার ধারলো না। রিজুর দিকে কড়া নজরে চেয়ে থেকে মিহিকে কটাকটা গলায় উওর দিলো,”এতসময় কেউ দেখেনি?”
রিজু বুঝলো এখান থেকে তার যাওয়াটাই শ্রেয়। ঝামেলা বাড়বে নাহলে। তাই সে কথা বাড়ালো না। এখানে কথা বাড়ানোর প্রশ্নও ওঠে না। মিহি এখন অন্যকারো স্ত্রী। দ্রুতপদে স্থান ত্যাগ করল রিজু।
এরোন ওর যাওয়ার দিকে থমথমে মুখে তাকিয়ে থেকে তারপর মিহির দিকে তাকালো।
সে লোকলজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বার বার সরে যেতে চাইছে।
এরোন পিঠের কাছের হাত নামাতে নামাতে অন্যহাতে মিহির কবজি চেপে ধরলো। রাগের মাত্রাটা আজ প্রবল।
“আহ! লাগছে।” ব্যথায় আর্তনাদ করে অন্যহাত দিয়ে হাতটা ছাড়াতে চাইলো মিহি।
এরোন তোয়াক্কা করলো না। একটা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল ওকে। বাধ্য হয়ে পা মিলাতে হলো মিহির।
চোখমুখ কুচকে বলতে লাগল, “ছাড়ুন আমার হাত। লাগছে ত!”
মিহিকে বাড়ি অব্দি হাত ধরে টেনেই নিয়ে এলো এরোন।
গেটের সামনে এসে মিহি চমকে গিয়ে বলল, “পাগোল হয়েছেন! ছাড়ুন! বাসার মানুষ কি মনে করবে?!”
এরোন কানে নিলো না। তবে সদর দরজার কাছে এসে থামলো এরোন। ধারালো নজরে মিহির দিকে একপলক তাকিয়ে হাত আলগা করলো কিন্তু ছেড়ে দিলো না।
হাত ধরেই ঘরে ঢুকলো। আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা মিহিকে নিয়ে উপরে উঠে যেতে লাগল সে।
মিহি লজ্জায় আর চাপা রাগে দাঁতে দাঁত চিপে রইল।
ডায়নিংয়ে শুধু দিপালি ছিলেন। সবাই খেয়ে উঠেছে একটু আগেই। ওদের হাত ধরা অবস্থায় দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন তিনি। কিছু না বলে মুচকি হাসলেন শুধু।

রুমের মধ্যে এসে এক ঝটকায় মিহির হাত ছাড়লো এরোন। সল্প আওয়াজে বন্ধ করে দিলো দরজা। লাগিয়ে দিলো ছিটকিনি।
তারপর ঘুরে তাকালো সে মিহির দিকে। চোখে যেন আগুন জ্বলছে তার।
মিহি ভরকে পিছিয়ে গেল খানিক।
“কি বলেছিলাম তোমাকে?” স্বর নিচু কিন্তু তীব্র আক্রোশ তার কন্ঠে।
এগিয়ে এলো সে। এতে মিহি আরো পিছিয়ে গেল ভয়ে।
“বলেছিলাম না অন্যছেলের কথা ভুলেও মাথায় না আনতে?” হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো এরোন।
দেয়ালে পিঠ ঠেকতেই ভয়ে কেঁপে উঠলো মিহি।
“বলেছিলাম না!” হালকা উচ্চস্বরে বলেই সে দুইহাত দিয়ে মিহির দুপাশের দেয়ালে সজোরে আঘাত করে বসলো।
লাফিয়ে উঠলো মিহি। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে চোখমুখ খিচে নিলো সে। শ্বাস নিতেও ভয় হচ্ছে ওর। এখন কি গায়ে হাত তুলবে নাকি!
এরোন মিহির দিকে ঝুঁকতেই দেয়ালে চিপকে কাচুমাচু হয়ে গেল মিহি।
এরোন রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,”কি কথা বলছিলা ওর সাথে?”
মিহি ঠোঁট কাঁপিয়ে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না।
এরোন আরো রাগলো। বলল, “আমি কিন্তু মেরেই ফেলবো ওই ছেলেকে!”
মিহি চমকে চোখ তুলে তাকালো। কি বলছে সে এসব!
এরোন আচমকা এক হাতে কোমড় আকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে আনলো মিহিকে।
শিউরে উঠল মিহি। ভয়ে চুপসে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল সে।
“তুমি আমার, মানে আমার। আর কোনো জিনিস যখন আমার হয়ে যায় তখন সেটার উপর অন্যকারো নজর সহ্য করতে পারিনা আমি। তাই তোমার উপর অন্যকারো নজরও আমি সহ্য করবো না। একদমই না।”

(চলবে….)

ছবিটা কত্ত সুন্দর মিলছে। সব ক্রেডিট আমার??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here