গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ২৮: ভালোবাসতে_কি_সমস্যা!
লেখিকা: #Lucky_Nova
“কোথায় সরিয়েছ ওকে? বলেছি না ওকে আমি ছাড়বো না?! তাও যেতে কেনো দিয়েছো? এখনি বলো কোথায় ও?”
রাগে ফুঁসতে লাগলো এরোন।
আরোহী আর রুহুল সাহেব দুজনেই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এ কোন এরোনকে দেখছে তারা!
এরোনের যেন আর ধৈর্যে কুলাচ্ছে না। চুপ করে আছে কেনো সবাই! তাহলে কি সত্যিই চলে গেছে!
ঘাবড়ে গেল ও। অস্ফুটস্বরে বললো,”কোথায় ও?”
আরোহী মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে আহাজারি করতে করতে বললেন, “হায়রে! আগাগোড়া না শুনেই ছেলে আমার পাগল হয়ে গেল রে!”
এরোন কপাল কুচকে ফেলল। চোখমুখে এখনো ভয়ের ছাপ।
আরোহী কটাকটা গলায় বললেন,”তোর বউ বাড়িতে গেছে। বাপের বাড়িতে। বেড়াতে। একদম নিরাপদে গেছে। আমরাও যেতাম তবে তার আগে ও নিজের বাবা মায়ের সাথে একটু সময় নিক।”
এরোন কপাল আরো কুচকে ফেলল।
“বাড়ি কেনো পাঠিয়েছ ওকে? আমি না বলেছি গেলে আমার সাথে যাবে! আর আমাকে জানাও-ও নি?”
আরোহী চোখ পাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। কোমড়ে এক হাত রেখে অন্যহাত উঁচিয়ে শাসিয়ে বলে উঠলেন, “বেহায়া ছেলে! ফোন চেক কর তোর। ফোন চেক কর! কর! দেখ কল দিয়েছিলাম কিনা! কত বার দিয়েছি দেখ!”
এরোন পকেট হাতরে ফোন বের করল। অনেক গুলো মিসকল। নিজের বোকামি বুঝে খানিক অপ্রস্তুত হয়ে গেল ও। বার কয়েক পলক ঝাপরিয়ে বলল,”তো, আমার আসা অব্দি থাকতো! আমি নিয়ে যেতাম বাড়িতে।”
রুহুল সাহেব এতসময় বুকে হাত গুজে বিছানায় গা এলিয়ে নীরবে বসে ছিলেন। এখন মুখ খুললেন। গম্ভীর গলায় বললেন, “ওর বাড়ি যেতে ইচ্ছে করেছে, তাই গেছে। এতে বাঁধা দেওয়ার আমরা কেউ না। সব কিছুতে এভাবে ওকে কোনঠাসা করে রাখলে চলে? আর একদিন না একদিন ওর পরিবার ত জানবেই সত্যিটা! তুই যে ওকে জোর করে বিয়ে করেছিস সেটা কি তারা কোনদিন জানবে না ভেবেছিস?! লুকাতে কেন চাচ্ছিস?”
“জানবে। লুকাতেও চাই না। কিন্তু এখন জানতেও চাই না। এখন জানালেই ত সমস্যা। কারণ মিহি ত আমাকে এখনো ভালো…।” বিচলিত কন্ঠে এটুকু বলেই থেমে গেল এরোন।
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আরোহী আর রুহুল সাহেব। যদিও তারা অসমাপ্ত কথাটা বুঝেছেন।
এরোন প্রসঙ্গ পালটালো।
“আমিও যাচ্ছি ওর কাছে।” হন্তদন্ত করে বলে এক মুহূর্ত দেরি না করে নিচে ছুটলো ও।
আরোহী কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন। কারণ বললেও সে থামার নয়।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রুহুল সাহেবের দিকে তাকালেন তিনি। মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন,”তোমার ছেলে শেষ! পুরোই পাগল হয়ে গেছে। ওই মেয়ে আর এ জন্মে ছাড়া পাচ্ছে না।” মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন তিনি।
রুহুল সাহেব নিজেও অবাক হয়ে আছে। একদম বাকরুদ্ধ।
এরোন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। মনের ভিতর নানা ধরনের দুশ্চিন্তা আসছে বারং বার। চিন্তায় হৃদস্পন্দন থেমে থেমে যাচ্ছে।
পরিবারের থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্য এরোনের নয়। আসলে এতদিন ধরে এজন্যই যেতে দেয় নি কারণ মিহি সেখানে গিয়ে বিয়ে না মানার বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলবেই বলবে! সাথে এটাও বলবে যে এই বিয়েটা ও এখনো মানে না, এমনকি জীবনেও মানবে না! ডিভোর্স চায়! তখন!
এই কয়েকদিনের সব প্রচেষ্টা শেষ হয়ে যাবে। নষ্ট হয়ে যাবে সব সম্পর্ক। মিহি বিয়েটা মেনে নিলে তখন যা ইচ্ছা জানালেও সমস্যা হবে না।
যদিও মিহির পরিবারকে ও বলেছে সব দোষ ওর নিজের। মিহি নির্দোষ। কিন্তু মিহি ভালোই বাসে না এটা জানলে ত তারা বেঁকে বসতেও পারে।
অজস্র চিন্তা হানা দিতে লাগলো এরোনের মস্তিষ্কে। গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়ে দিলো সে।
?
বাবার পা জড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরেই কাঁদছে মিহি। জোয়েল সাহেব না পারছেন থামাতে না পারছেন পা ছাড়াতে।
কাঁদতে কাঁদতে মারাত্মক হিঁচকিই উঠিয়ে ফেলেছে মিহি। মুখে শুধু একটাই কথা বলেছে, “আমি তোমার বিশ্বাস ভাঙি নি। একদম ভাঙিনি।”
ওর অবস্থা দেখে জোয়েল সাহেবই ঘাবড়ে গেলেন।
এরই মধ্যে দিপালি হুরমুড়িয়ে এসে ঢুকলেন। মূলত কান্নার আওয়াজ শুনেই তিনি ছুটে এসেছেন। এসে স্বচোক্ষে মেয়ে এভাবে কাঁদতে দেখে চোখ কপালে তুলে বজ্রকন্ঠে বললেন,”কি? মেয়েকে মেরে ফেলে এখন শান্তি হবে! এত ভালো জামাই পেয়েও ভালো লাগছে না?!”
দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে মিহিকে তুলতে চেষ্টা করলেন তিনি। তবে মিহিকে সরিয়ে আনতে পারলেন না।
দিপালি নিজের স্বামীর উপর চরম ক্ষেপলেন।
হুঙ্কার ছেড়ে বললেন,”মেয়েকে কি দম বন্ধ করিয়ে মারবে?”
“আহ! তুমি থামবে!” বিরক্তিমাখা গলায় বললেন জোয়েল সাহেব।
“কেনো! থামবো কেনো!” তেতে উঠলেন দিপালি।
মিহি কোনো মতে মায়ের শাড়িটা হালকা টেনে ধরে থামতে বলতে চাইলো। হিঁচকির কারণে মুখে কথা আসছে না।
দিপালি চকিত হয়ে তাকালেন। কেদে কেটে কি অবস্থা! কিভাবে হিঁচকি তুলছে মেয়েটা! জোরপূর্বক উঠিয়ে দাঁড় করালেন তিনি মিহিকে।
“চল এখন রুমে চল।” শান্ত গলায় বলেই স্বামীর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন।
জোয়েল সাহেব বিরক্তির সাথে কিছু বলতে চাওয়ার আগেই মিহি হিঁচকি তুলতে তুলতেই ওর মাকে বলল, “ম..মা, কিছু বলেনি বাবা।”
“তুই চুপ থাক। এখন সোজা নিজের ঘরে চল। সব কথা পরে হবে। চল।”
মিহি বাঁধ সাধলে দিপালি ক্ষেপলেন।
তাই জোয়েল সাহেবই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে শান্ত তবে গম্ভীর গলায় বললেন,”এখন রুমে যাও আগে। কথা শোনো।”
মিহি আরো কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দিপালি টানাটানি করে নিয়ে গেল মিহিকে।
“এভাবে কেউ কাঁদে? গাধা মেয়ে!”
মিহি হাসার চেষ্টা করলো। হিঁচকি বন্ধ হয়েছে এখন। কিন্তু কান্নাকাটি করার দরুন নামমুখ ফুলে গেছে।
“এরোন এসে এতদিন অনেক বুঝিয়েছে। এখন তোর বাবা অত রেগে নেই। চিন্তা করিস না। তোর বাবাকে একটু সময় দে।”
মিহি অবাক হলো। প্রশ্ন করলো,”কি বলেছে উনি?”
“আশ্চর্য! তোকে বলেনা কিছু?” দিপালি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালেন।
“না মানে…।” আমতা আমতা করতে লাগল মিহি।
“যাইহোক। সেসব পরে হবে। এখন আগে ফ্রেশ হয়ে খেতে চল।” তাড়া দিয়ে বললেন দিপালি।
অনেক দিন পর আবার একসাথে সবাই। একই খাবার টেবিলে। নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে আজ মিহির। সবাই স্বাভাবিক ব্যবহারই দিচ্ছে।
তবে খেতে বসে জোয়েল সাহেব বাদে সবাই-ই এরোনের কথা জিজ্ঞেস করেছে। এতে মিহি বেশ অবাক হচ্ছে।
শেষ অব্দি উপায়ন্তর না পেয়ে বলেছে, এরোন ব্যস্ত ছিল তাই একাই এসেছে ও।
খাবার টেবিলে সবার মুখে এরোনের কথা শুনে যা বোঝা যায় তা হলো এই ছেলেকে রাতারাতি সবাই পছন্দ করে ফেলেছে। শুধু পছন্দ না! অনেক পছন্দ করে ফেলেছে।
কিন্তু সবাই কি সত্যিটা জানে! সে ত জোর করেছে বিয়েতে! এটা মোটেও কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো না। কিন্তু বাবাকে ত ওর সত্যিটাই জানাতে হবে। ও ত সত্যিই বিশ্বাস ভাঙেনি ওর বাবার!
খাওয়া শেষ অর্নিকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গেল মিহি। প্রশ্ন করার মত এই একজনই আছে। মা, কাকি এরা সন্দেহ করতে পারে।
“কি হয়েছে? জলদি বলো। আমি ঘুমাতে যাব।” অর্নি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
মিহি সরু চোখে তাকালো। অর্নি যে এখন ঘুমাবে না তা সে ভাল করেই জানে। ফেইসবুক চালাবে।
মিহি অর্নির পাশে এসে বসলো।
“কি?” বিরক্ত হয়ে গেল অর্নি।
মিহি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো।
কি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করবে সেটা চিন্তা করে নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,”এইকয়দিন এসে এসে কি করেছেন উনি যে তোরা সবাই এত খুশি!”
অর্নির বিরক্তি, ব্যস্তভাব সব উধাও হয়ে গেল চোখের পলকেই।
একগাল হাসি দিয়ে জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে বলল, “জিজু?!”
মিহি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকালো। জিজু জিজু করেই মরছে এই মেয়ে!
“জিজু তোমায় কিছুই বলেনি! …যাজ্ঞে, আমার কিন্তু জিজুকে জোস লেগেছে। এই কয়দিনে কি কি না করেছে! সবচেয়ে ঝাক্কাস কাজ কি করেছে জানো?”
মিহি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“বড়দির ওই অসভ্য বরটা, ওই খাচ্চর অখিল, পায়ে ধরে এসে ক্ষমা চেয়েছে সবার কাছে।” চোখমুখে রোষ আর ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলল অর্নি।
“দিদির বর সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে!” হতবুদ্ধিভাব সহকারে তাকালো মিহি।
“হ্যাঁ। শুধু তাই-ই না! বড়দির কাছেও ক্ষমা চেয়েছে। প্রায় তিন চার দিন দিদির বাসার সামনে পরে থেকে ক্ষমা চেয়েছে। দিদি বিরক্ত হয়ে ক্ষমা করেছে পরে। আপাতত দিদির সব খরচ অই খাচ্চর অখিলই বহন করবে। যদিও বড়দি না করে দিয়েছে। ওই শয়তানের থেকে কোনো টাকাপয়সা নিতে চায় না সে।”
মিহি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল অর্নির দিকে।
“আমার ত মনে হয়…। না, মনে হয়না, বরং আমি সিওর! জিজু এমন ধোলাই দিয়েছে ওকে যা বলার বাহিরে।” বলতে বলতে আবার খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল অর্নি।
“উনি ওকে এনেছিলেন?”
“নাহ। জিজু আগে থেকেই এখানে এসেছিলো সেদিন। জিজু আসার কিছুক্ষণ পর ওই অখিল্লা এসে পায়ে ধরাধরি শুরু করে। সাথে মরা কান্না।”
“ত..তুই এত সিওর কিভাবে যে উনিই এনেছেন অখিলকে?!” বোকা হয়ে প্রশ্ন করলো মিহি।
প্রশ্নটায় অর্নি বেশ বিরক্ত হলো। বলল,”শুধু আমি না যে কেউ বুঝবে। আসলে বুঝবে না, বরং বুঝেছেও! সবাই আমরা বুঝেছি জিজুই এনেছে। ক্ষমা চাওয়ার সময় বার বার জিজুর দিকে তাকাচ্ছিলো। তাও এমন ভয়ে ভয়ে। দেখলে তুমিও বুঝতে। একদম ঠিক করেছে জিজু। ওটাকে মেরে পুতে ফেলা উচিত।আস্ত নর্দমা একটা!” ঘৃণার সহিত বলল অর্নি।
মিহি হতবাক হয়ে রইলো।
“আর কি জানতে চাও বলো? আমি ত এটা বুঝিনা যে তুমি এত ভালো ছেলেটাকে রেখে বিয়েতে রাজি হয়ে গেছিলা! ফিলিংস এত কম ছিলো জিজুর প্রতি! মানলাম নাহয় ভুল করে র্যাগ খেয়ে ফেঁসে গিয়েছিলা জিজুর সাথে! তাই বলে….”
“কি! এগুলো কে বলল!” হকচকিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলো মিহি।
“কে আবার! জিজু।” ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল অর্নি।
মিহি খানিক অবাক হয়ে পলক ঝাপরালো। বলল, “আর কি কি বলেছে?”
“ভুল বুঝাবুঝির কারণে তোমাদের মধ্যে সব শুরু হয়েছিলো। তুমি অতটা আগ্রহী ছিলা না কখনই। তোমাকে একপ্রকার জোরাজুরি করেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলো। এজন্য বাসা থেকে ঠিক করা বিয়েতেও রাজি হয়েছিলা তুমি। শেষ অব্দি ত সে এসে তোমায় তুলে নিয়ে গেল। বিয়েও করলো। এমন একটা দিনে আমি স্কুলে ছিলাম! সিনেমা মিস করে গেলাম!”
মিহি হা হয়ে তাকালো।
অর্নি বলতে থাকলো, “যাক ভালই করেছে একদিক থেকে। বিয়ে করে নিয়েছে। তুমিও না! ভিতুর ডিম একটা! জিজুকে রেখে কিভাবে অন্য ছেলের সাথে বিয়েতে রাজি হলে! নাজানি কতটা খারাপ লেগেছিলো জিজুর!”
দরদ যেন উথলিয়ে পরছে।
কথা শেষে হাই তুললো অর্নি। বলল,”গেলাম থাকো। আমি ঘুমাবো। তুমিও রেস্ট নেও। টাটা।”
অর্নি উঠে বেরিয়ে গেল।
মিহি মেঝের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। লোকটা সবকিছু নিজের ঘাড়ে নিয়ে বসে আছে! জোরাজুরি করে ত সম্পর্ক করেনি সে। বরং মিথ্যা নাটকে ফেঁসেছিলো সে।
মিহি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। কি করবে সেটাই ভাবতে লাগল ও। ওর বিয়েটায় মত ছিলোই না এমনকি ছেলেটাকে ও ভালোবাসেনা এসব কি এখন জানানো ঠিক হবে! দোটানায় পরে গেলো মিহি।
?
মধ্যরাত। চারিপাশে বিস্তর নীরাবতা। কোথাও কোনো সারা শব্দ নেই। পুরো শহর ঘুমিয়ে আছে।
গাড়ি থেকে নেমে মিহির বাড়ির বাহিরের গেটটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এরোন। গেটটা তালা মারা। এটাই স্বাভাবিক। এখন কেউ জেগে আছে বলেও মনে হয় না। তাহলে কি এতদূর এসে ফিরতে হবে আবার!
এদিকে এতো রাতে হাঁক ডাক করে সবাইকে জাগানোও ত ঠিক হবে না! ওদিকে মিহি কি কি বলেছে কে জানে! মেয়েটাকে বার বার বলেছিলো ও নিয়ে আসবে বাসায়। একটু অপেক্ষা করা যেত না! একা একাই আসতে হলো!
বিচলিত হয়ে কি করবে ভাবতে লাগল এরোন।
হঠাৎ মনে হলো দেয়াল টপকে গেলেই ত হয়! যেই ভাবা সেই কাজ!
দ্বিতীয়বারের মত দেয়াল টপকে ঢুকলো সে। লাফিয়ে এপাশে নামার সময় অবশ্য একটু শব্দও হলো। গভীর রাত বলে অল্প শব্দও কানে আসার মত।
মিহির বাবা মাঝে মাঝেই অনেক সময় অব্দি রাত জেগে বিভিন্ন বই পড়েন। বিশেষ করে ঘুম না আসলে। আজও জেগে ছিলেন। টেবিল ল্যাম্পের আলোতে একটা বই পড়ছিলেন। সেই সময়ই অদ্ভুত আওয়াজ কানে আসতেই তিনি হালকা শঙ্কিত হলেন। মাথা জাগিয়ে তাকালেন জানালার বাহিরে। চোখ বুলিয়ে পরখ করে দেখতেই কুচকানো ভ্রু সোজা হয়ে গেল তার। বাড়ির গেটের সামনে থাকা বাল্বের মৃদুমন্দ আলোয় তার বুঝতে কষ্ট হলো না এটা কে। অবাক হলেন তিনি।
‘আশ্চর্য! এই ছেলের কি দেয়াল টপকানো অভ্যাস নাকি! আর এত রাতেই বা এখানে এসেছে কেনো!’ চিন্তা করেই ভ্রুজোড়া আবার কুচকে ফেললেন তিনি। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝে গেলেন কেনো এসেছে সে। যখন সে কৌশলে মিহির রুমের বারান্দায় উঠে গেল।
এসব দেখে একটু থতমত খেয়ে গেলেন তিনি। কি একটা অবস্থা! এই বয়সে এসে কিনা এখন এসব দেখা লাগছে!
?
বারান্দা আজও খোলা! যদিও এই মেয়েকে ও আটকে রাখতে বলেছিলো। তবুও কথা শোনে না।
বারান্দা থেকে ভিতরে ঢুকলো এরোন। নীল রঙের ড্রিম লাইট জ্বলছে।
সে আলোতেই মিহির অবয়ব স্পষ্ট। এত সময়ের হাঁসফাঁস লাগাটা দূর হলো। একটু স্বস্তি এলো মনের মধ্যে। হারিয়ে যায় নি, আছে সে।
নিঃশব্দে এগিয়ে গেলো এরোন।
বিছানার ওইপাশে উল্টোদিক ফিরে কাচুমাচু হয়ে ঘুমাচ্ছে সে। পায়ের কাছেই কম্বল তাও টেনে নেয়নি গায়ে।
এরোন কম্বল খুলল। তারপর একইসাথে ঢুকে পরলো কম্বলের মধ্যে। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো মিহিকে। কাধে মুখ ডুবিয়ে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো ঘন ঘন। এতসময়ের অস্থিরতা একটু একটু করে কমছে এখন।
শান্ত হয়ে মিহির ঘাড়ের নিচ দিয়ে হাত দিয়ে আলতো করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো ওকে। মিহি ঘুমের আবেশেই এগিয়ে এসে লেপ্টে গেল ওর বুকের মধ্যে।
মৃদু হেসে এরোন নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো মিহিকে।
?
খুব ভোরেই ঘুম ভাঙলো মিহির। চোখ পিটপিটিয়ে তাকাতেই বুঝলো কাউকে জড়িয়ে ধরে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে সে।
খানিক হকচকিয়ে গেল। ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে মাথা তুলতেই চোখে পরলো চেনা মুখ। এতে যেন আরো একদফা অবাক হলো ও। ইনি কখন এলেন?!
আর ঘরেও বা ঢুকলেন কিভাবে! দরজা ত আটকে রাখা ছিলো!
মিহি নড়েচড়ে শক্ত আলিঙ্গন থেকে সরতে চাইতেই ঘুম হালকা হয়ে গেলো এরোনের।
চোখ বন্ধ রেখেই ঘুমকাতুরে কন্ঠে বলল,”কি সমস্যা তোমার! চুপচাপ থাকো না!”
আবার আষ্ঠেপৃষ্ঠে ধরলো সে। মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে।
মিহি ঢোক গিলল। বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে আবার। শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে সর্বাঙ্গে। মোটেও এভাবে থাকা সম্ভব না। আস্তে করে আবার সরে আসতে চাইলো ও।
এরোন বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হাত আলগা করে সরু চাহনিতে তাকালো মিহির দিকে। পুরোপুরি ছাড়লো না।
সে কাচুমাচু হয়ে সরে গেলো একটুখানি।
এরোন থমথমে গলায় বলল,”একা একা চলে এসেছো কেনো?! আর কি কি বলেছো বাসায়! নিশ্চয়ই বিয়ে না মানার বিষয়ে বলেছ?”
মিহি সরু চোখে তাকালো।
“বলো? এসব বলেছো?”
মিহি কপাল কুচকে চোখ নামালো। এসব ত বলেই নি ও!
এরোন উওরের জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
মিহি উওর না দিয়ে বিব্রত হয়ে এরোনের কাছ থেকে আরেকটু সরে যেতে চাইলো। খুব কাছে এসে পরেছে লোকটা।
মিহি সরে যেতে চাইছে দেখেই এরোন গম্ভীর মুখে তাকিয়ে কাছে চলে এলো ওর।
মিহি চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে উঠে যেতে চাইতেই এরোন দুইহাত ওর দুপাশে রেখে আটকে দিয়ে ঝুঁকলো ওর দিকে।
মিহি সচকিত হয়ে কাঁপা গলায় বলল,”আ.. আপ… আপনার মাথা ঠিক আছে! স..সরুন।”
আলতো করে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো মিহি। কিন্তু সে সরলো না। গাম্ভীর্যের সঙ্গে তাকিয়েই রইলো।
মিহি দৃষ্টি নত রেখে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।
“আমাকে ভালোবাসতে কি সমস্যা তোমার?” কপালে ভাজ ফেলে রাশভারি কন্ঠে বলল সে।
মিহি থমকালো। চোখ তুলে তাকালো এরোনের দিকে।
“বলো, কেনো দূরে সরিয়ে দিতে চাও বার বার?!” বলতে বলতে আরো ঝুঁকে এলো সে।
মিহি চমকে উঠে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ধকধক করে যাচ্ছে বুকের ভিতরটা। শ্বাস নেওয়াও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। কি শুরু করলেন উনি সকাল সকাল!
মিহি গোলমেলে গলায় বলল, “সরুন আপনি!”
“উওর দেও আগে।” একরোখা হয়ে বলে আরো ঝুঁকলো এরোন।
(চলবে..)