গোধূলিলগ্ন ৩৭

0
299

উপন্যাসঃ”গোধূলিলগ্ন”
শান্তনা আক্তার
পর্বঃ৩৭

নাবিলা বেশ কিছুক্ষণ কপালে এক হাত ঠেকিয়ে বসে রইল। টেবিলের উপর একটা উন্মুক্ত নোট প্যাড। নাবিলা তার ডান হাতের কলমটি নাড়িয়ে চলেছে। নোড প্যাডে লিখবে বলে কিছু ভাবছে সম্ভবত। হঠাৎ কিছু মাথায় আসামাত্রা লিখেও ফেলল। মিতু নাবিলার থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে। রা-শব্দহীন দেখে চলেছে নাবিলার কার্যকলাপ। হঠাৎ নাবিলার বাজখাঁই কন্ঠে মিতু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
‘এদিকে এসে চেয়ারটায় বসো।’
মিতু বাধ্যের ন্যায় এগিয়ে গিয়ে নাবিলার সামনের চেয়ারটায় গিয়ে বসল। তবে কিছু বলল না। নাবিলাই বলল, ‘এই যে লিস্ট করলাম, এখানে উল্লেখিত প্রত্যেকটা পয়েন্ট অনুযায়ী চলতে হবে এখন থেকে। দরকার পড়লে পানি দিয়ে গিলতে হবে তোমাকে।’
মিতু ফিক করে হেসে ফেলল। নাবিলা ক্রুদ্ধ মেজাজে বলল, ‘হাসার কি হলো এখানে?’
মিতু হাসির রেশ বজায় রেখে বলল, ‘কাগজের লেখাডা গিলমু নাকি কাগজ গিলমু আপা?’
নাবিলার রাগের পরিমাণ সাত আসমান ছুঁই ছুঁই অবস্থা। তিনি দাঁত কিড়মিড় করে বললেন,
‘একদম বাড়তি কথাবার্তা বলবে না! ওহ গড, একে তো শুদ্ধ বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজও শেখাতে হবে!’
নাবিলার কান্না কান্না হাবভাব। রাগে দুঃখে বেশকিছু সময় নিজের কপাল চাপড়ায়। এরপর বলে, ‘যাই হোক, এখন সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে তোমার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত চেঞ্জ করা।’
মিতুর উৎকণ্ঠা, ‘চেঞ্জ মানে আমার সবকিছু পাল্টায় ফেলাইবেন? এইডা কি সম্ভব আপা?’
‘শাট আপ! যেটা বোঝো না, সেটা নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে আসবে না। ওয়েট করো, এমনিতেই বুঝে যাবে।’

নাবিলা পার্লারের লোকদের ঠিকানা বলার ত্রিশ মিনিটের মাথায় ৩-৪ জন মেয়ে চলে আসল তাদের জিনিসপত্রসহ। মিতু চেয়ে চেয়ে দেখল। কথা বললে নির্ঘাত নাবিলা কাঁচা মরিচ ও লবণ মিশিয়ে খেয়ে নেবে-এই ভেবে মুখে কুলুপ আঁটলো। ফেসিয়াল থেকে শুরু করে ম্যানিকিওর,পেডিকিওর এবং শরীরের অন্যান্য কার্যক্রম শেষে মিতুর চুলের কাছে গেল। শ্যাম্পু করিয়ে হেয়ার-ড্রায়ার দ্বারা চুল শুকিয়ে নিয়ে চুল কাটার সামগ্রী প্রস্তুত করে নিল। ৪ জন মেয়ের মধ্যে যে যেই কাজে পারদর্শী, সে সেটাই করেছে। মিতু সবটা দাঁত কামড়ে মেনে নিচ্ছে। হাত-পা ও মুখের বেশ কিছু স্থানে জ্বালাপোড়া অনুভূতি হলেও তা মুখ ফুটে প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছে না। হঠাৎ হেয়ার স্পেশালিষ্ট মেয়েটি নাবিলার উদ্দেশ্যে শুধাল, ‘ম্যাম কোন হেয়ার কাট দিতে হবে এনাকে?’
নাবিলার চোখ ফোনে আবদ্ধ। চোখ সেখানে নিবদ্ধ রেখেই নাবিলা জবাব দিল, ‘আপাতত লেয়ার দিন।’
‘চুল কি বেশি ছোট করবো ম্যাম?’
তাদের কথোপকথন মিতুর মনে ভয়ের সৃষ্টি করে। দীর্ঘ সময়ের নীরবতার অবসান ঘটিয়ে মিতু বলল, ‘আমি ব্যাডাগো লাগান চুল কাটতাম না। আপনারা আমার লগে যা করছেন, করছেন আমি কিছু কই নাই এতক্ষণ। কিন্তু এহন আমি আর চুপ থাকতে পারুম না।’
নাবিলা চোখ রাঙিয়ে তাকাল। হেয়ার স্পেশালিষ্ট মেয়েটি বলল, ‘না ম্যাম, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা ছেলেদের হেয়ার কাট দেব না আপনার চুলে।’
মিতু স্বস্তি পেল৷ বলল, ‘তাইলে ঠিক আছে।’
চোখের পলকেই মিতুর কোমড় পর্যন্ত চুল আধ পিঠ অবধি নেমে এলো। তা দেখে মিতুর চোখ হলো চড়কগাছ। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল মিতু,
‘আপনারা এইডা কি করলেন? আমার চুলগুলা জায়গায় জায়গায় ছোডো-বড়ো, ছোডো-বড়ো কইরা দিছেন। এহন তো চুলে খোপাও করন যাইত না! এমনে দিয়া বাইরায় যাইব, ওমনে দিয়া বাইরায় যাইব। এডি কোন ধরনের তামশা লাগাইছেন?’
পার্লারের মেয়েরা মুখে হাত চেপে হাসছে। তাদের হাসি ধরে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন তো হাসির বেগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে সেখান থেকে বেরিয়েই গেল। জীবনে মিতুর মতো কাউকে দেখেনি বলেই হয়তো এতটা হাসি পাচ্ছে তাদের! অপরদিকে নাবিলা নাক-মুখ দিয়ে রীতিমতো গরম নিশ্বাস ত্যাগ করে চলেছে মিতুর কথাবার্তা ও কার্যকলাপ দেখে।
____
পুরোটা দিন অন্যমনস্ক হয়ে পার হলো সেতুর। সন্ধ্যাকে বিদায় জানিয়ে রাতের দখলে বিস্তৃত খোলা আকাশ তারার মিছিলে অস্তিত্ব খোঁজে। বাকবাকম পায়রাগুলো খোপে গিয়ে ঢুকেছে অনেক আগে। সেতু খোপের দরজা লাগিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকল। ঝিঁঝিঁ ডাকা আধারে তার রুদ্ধ নিশ্বাসের স্তব্ধতা, আমসিপানা মুখ, নিশ্চুপ হৃদয়ের আহাজারি বেজায় অর্থহীন। রশিদার চলার গতিবেগ ধীরস্থির। নুরুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেওয়ান বাড়ি এসেছিলেন। কদিন থাকবেন সম্ভবত। সেতুর সাথে কথা বলবে বলবে করে সুযোগ সন্ধানের অভাবে হয়ে উঠছিল না। হঠাৎ চোখে পড়তেই ডাক ছাড়েন,
‘ছোট বউ শুনো তো একটু, মা।’
সেতু তার ডাকে সায় দিয়ে বলল, ‘কন খালাম্মা।’
রশিদা সেতুর হাত ধরে বলল, ‘তোমার ঘরে চলো মা। সেখানে গিয়ে কথা হবে।’
সেতু মাথা নেড়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে। এলোমেলো বিছানা চোখে আসলে সেতু বিছানা ঝাড়ার ঝাড়ু খুঁজতে নিলে রশিদা বাঁধ সাধে,
‘ঝাড় দিতে হবে না। বসো একটু। জরুরি একটা কথা বলি।’
সেতু এবারও শুনলো।
‘কন খালাম্মা।’
রশিদা কিছু সময় নিতিবিতি করে বলল,
‘এই সংসারে গরুর মতো আর কতো খাটবা? আমার আপন আপা হলে কি, ওর মনে বিন্দুমাত্র মায়া-মমতা নাই। আমার মায়া লাগে তোমার মুখটা দেখলে। আল্লাহ তো আমাকে একটাই ছেলে দিলেন। মেয়ে নাই। তোমাকে কেন জানি মেয়ের মতোই লাগে আমার। তার জন্যই মনে হয় তোমার কষ্ট দেখতে খারাপ লাগে। এরজন্য এই বাড়িতে আসি না, দেখোনা!’
সেতু অস্ফুটে বলল, ‘জানি খালাম্মা।’
‘জানলে ভালোই। তো মেয়ের মতো দেখি বলেই কথাটা না বলে থাকতে পারলাম না। তুমি যদি চাও আমি তোমাকে ঢাকায় আমার এক কলেজের বান্ধবীর বাসায় পাঠাবো। সে তোমাকে কোন একটা জীবিকা নির্বাহের মতো কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি ধরিয়ে দেবে। নাহিদের সাথে থাকার চাইতে কর্ম করে খাওয়া ভালো। ভিক্ষা করাও ভালো। ও একটা নরপশু। আমার বোন-ছেলে তাতে কি? খারাপ তো খারাপই। আমার কথা শুনতাছো?’
সেতুর করুণ দৃষ্টি, ভারী চোখ রশিদার হৃদয় কাঁপায়। তিনি আলগোছে সেতুর চোখ ছুঁয়ে পানি মুছে দিলেন। সেতুর থেকে কোন জবাব না পেয়ে বললেন, ‘তালাক দিয়ে দেও নাহিদকে। ভালো থাকবে হয়তোবা। যদিও ভালো থাকা কারো হাতে নাই, তবুও চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই।’
সেতু ঝাপিয়ে পড়ে রশিদার বুকে। একটা স্বস্তির জায়গা খুঁজছিল কদিন ধরে। খুঁজে পেয়ে চোখের পানিরাও শান্তি পাচ্ছে।
‘কান্না আর কত? এবার হাসার পথ খুঁজে নাও। আমি সাহায্য করবো সবসময়।’
সেতু মাথা তুলে বলল, ‘কিন্তু আপনাগো পোলায় যদি আমারে তালাক না দেয়?’
‘দিতে বাধ্য। তুমি জনসম্মুখে বলবে এমন অত্যাচারীর সংসার আর করতে চাও না। তাছাড়া তোমার পাশে তো সাংবাদিক সাহেবরা আছেই। সাংবাদিক মেয়েটার সঙ্গে তো ভালোই ভাব দেখলাম। তাকে বললে কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। নাম্বার আছে না?’
সেতু উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, ‘আছে তো রাত্রি আপার নাম্বার। হেয় কইছে যহন দরকার হইব তারে ফোন দিয়া কইতে।’
‘তাহলে তো হলোই।’
‘কিন্তু আমার যে ফোন নাই খালাম্মা।’ সেতুর মুখে নৈরাশা।
‘বোকা মেয়ে! ফোনের কি অভাব পড়বে নাকি? আমার ফোন দিয়ে কল দেব। নাম্বারটা দাও শুধু।’

সেতু বিছানার এক পাশের চাদর, তোশক তুলল। বিস্ময়কর মুখশ্রী নিয়ে বলল,
‘এইহানে তো একটা কাগজ আছিলো, যেইডায় রাত্রি আপায় তার ফোন নাম্বার লেইখ্যা দিছিলো।’
রশিদা বলল, ‘ভালো করে খোঁজো বউ। আছে ওইখানেই। নইলে অন্য কোথাও রেখেছো কিনা দেখো।’
‘না খালাম্মা, আমার মনে আছে আমি এইহানেই রাখছিলাম কাগজখান৷ কাগজের তো হাত-পাও নাই। কই গেল?’
_____
নাবিলা কিছু রুচিসম্মত পোশাক কিনে এনেছে মিতুর জন্য। তন্মধ্যে একটা কাফতান জামা মিতুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘বিচ্ছিরি শাড়িটা বদলে এটা পরে নাও। এখন থেকে আমি যেসব ড্রেস সাজেস্ট করবো, সেসবই পরতে হবে।’
মিতু উচক্কা ভাব নিয়ে বলল, ‘আমি কোন হাবিজাবি পোশাক পরুম না। মাইরা ফেলাইলেও না।’
‘হাবিজাবি পোশাক আবার কি? তোমার রুচির কথা ভেবে ও একজন মডেলের বেশভূষার কথা মাথায় রেখেই চলনসই ড্রেস এনেছি। পরতে পারো।’
মিতু আর ঘাটল না। পোশাক পাল্টে এলে নাবিলা শ্যেন দৃষ্টি নিয়ে মিতুর আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করল। মিতুর চারিপাশে দু’তিন চক্কর কেটে বলল,
‘সো অ্যাডোরেবল! কে বলবে তুমি একজন গেঁয়ো, অশিক্ষিত, নির্বোধ?’
মিতু নাবিলার কথা অগ্রাহ্য করে বলল, ‘আমার আর এইগুলা ভাল্লাগতাছে না আপা। চামচাডারে কন আমার মায়ার লগে কথা কওয়ায় দিতে।’
সঙ্গে সঙ্গে নাবিলা লেলিহান দাবালনের ন্যায় দাউদাউ করে উঠল, ‘কাককে ময়ূরের পাক লাগিয়ে দিলেই কাক ময়ূর হয়ে যায়না। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছো তুমি। বাহ্যিক পরিবর্তনেই কেউ স্মার্ট হয়ে যায়না। স্মার্ট হতে লাগে অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্ব। যা তার কথাবার্তা, চালচলনে পরিলক্ষিত হয়। তুমি আমাকে অনুসরণ করে কথা বলতে পারো না?’
মিতুর সোজা স্বীকারোক্তি, ‘না পারি না। আমার যেমনে কথা কইতে ভালো লাগে আমি তো তেমনেই কথা কমু।’
‘তাহলে আমাকে কেন আনা হয়েছে?’
মিতু চুপ করে থাকল। নাবিলা বলল, ‘ফারদার আমাকে আপা বলে ডাকবে না। ম্যাম বলবে। আর বইয়ের ভাষায় কথা বলার ট্রাই করবে। শুধু যে আমার সামনে, তা কিন্তু নয়। অন্যদের সামনে, এমনকি নিজের সঙ্গে যখন কথা বলবে, তখনও বইয়ের ভাষাতেই কথা বলবে। ক্লাস সিক্স অবধি যখন পড়েছো, তখন বইয়ের ভাষার ব্যবহার নিশ্চয়ই জানো যেহেতু পরীক্ষার খাতায় বইয়ের ভাষাতেই লিখতে হয়। ঠিক বললাম তো?’
মিতু নতজানু হয়ে বলল, ‘কইছি তো বার্ষিক পরীক্ষাডা দেই নাই। সিক্স পুরাপুরি শেষ করতে পারি নাই।’
নাবিলা অসীম রাগে ‘উফ’ বলে ওঠে। মিতুর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে, ‘একটা দিন শেষ হয়নি তাতেই আমি পাগল প্রায়, বাকী পনেরো দিন তোমাকে টলারেট করতে পারবো কিনা ডাউট হচ্ছে। এই তুমি এখন শুদ্ধ বাংলা ভাষায় দশটা বাক্যগঠন করোতো নিজেকে নিয়ে। যেমনঃ আমার নাম নাবিলা, আমার ঘোরাঘুরি করতে ভালো লাগে, আমার পছন্দের খাবার এটা, আমার পছন্দের রঙ ওটা ইত্যাদি ইত্যাদি। বলো এবার।’
নির্দেশ পেয়ে মিতু বলতে ধরে, ‘আমার নাম নাবিলা, আমার ঘোরাঘুরি করতে ভালো লাগে, আমার পছন্দের খাবার এটা, তারপর কি জানি কইলেন আপা?’
‘শাট আপ!’ নাবিলার কর্কশ কন্ঠের তান্ডবে ঠোঁটে আঙুল রাখল মিতু। এরপর ফিক করে হেসে দিয়ে পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে, ‘মাফ করবেন ম্যাম। আমার নাম মিতু, আমার রান্না করতে ভালো লাগে, আমার প্রিয় খাবার চানামুঠ, আমার পছন্দের কোন রঙ নেই, আমার প্রিয় মানুষ আমার বুবু, আমার প্রিয় বান্ধবী নয়না, আমার প্রিয় বন্ধু কাব্য ভাই, আমার সবচেয়ে কাছের আমার মেয়ে মায়া, আমার…’
সহসাই নাবিলা বাঁধ সাধল,
‘বাস্ বাস্, আমি বুঝে গিয়েছি। গুড, এভাবেই কথা বলবে অন্যদের সঙ্গেও৷’
মিতু এক দিকে মাথা কাত করল। এরপর গলায় ঔৎসুক্য এঁটে বলল, ‘ক্লাসে স্যারে পড়া ধরলে বইয়ের ভাষাতেই বেবাক পড়া দিতাম। কিন্তু একটা ভাবসম্প্রসারণ আছে না, “বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।” অর্থাৎ যার যেইহানে থাকা দরকার তারে সেইহানেই মানায়। তেমনেই যে যেমন পরিবেশে বড়ো হইছে, তারে তেমন পরিবেশের লাগানই থাকতে দেওয়া উচিত।’
নাবিলা তুষ্ট মনে হাসল। বলল, ‘যতটা বোকা ভেবেছিলাম, তুমি ততটাও বোকা নও। তবে সব পরিবেশে সব যায় না। পরিবেশভেদে আচার-ব্যবহারেরও ভিন্নতা রয়েছে। তোমাকে মডেল বানানোর জন্য আমি এখানে। ফটরফটর ইংরেজি না জানলেও শুদ্ধ বাংলাটা ধরে রেখে কথা বললেও চলবে। আর এটা কাম্পলসারি। যা বললাম, প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে শুদ্ধ ভাষায় কনভারসেশন করো। আজ না হলে আগামীকাল, আগামীকাল নাহলে পরশু ঠিকই শুদ্ধ বাংলা ভাষাটা আয়ত্তে চলে আসবে। যত বেশি প্রচেষ্টা, তত বেশি তরতর করে সফলতার দিকে ধাবিত হওয়া। যতটা বুঝলাম, তুমি পারবে। আজ আসি, আগামীকাল থেকে শুরু হবে তোমার আসল পরীক্ষা।’
নাবিলা দরজা অবধি চলে গেলে মিতু পিছু ডাকে, ‘শুনুন ম্যাম, আপনার শেষের কথাগুলো খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু তবুও আপনাকে আমার ভালো লাগেনা। কারণ আপনি বেডি মানুষ হইয়াও ব্যাডাগো লাগান চুলের ঢক বানায় রাখছেন।’
নাবিলা তির্যক ভঙ্গিতে ক্ষণকাল মিতুর দিকে চেয়ে থেকে হনহনিয়ে চলে গেল। তিনি চলে গেলে মিতু ওয়াশরুমের বেসিনের উপর দেয়ালে লাগানো আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নিজেকে কতক্ষণ নিষ্পলক চোখে দেখল, তার হিসেব নেই৷ মিতু হঠাৎ করেই নিজ গালে হাত ছুঁইয়ে বলে উঠল, ‘কে তুমি?’
চলবে ইনশাআল্লাহ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here