গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ২১: ফ্রেঞ্চফ্রাই
লেখিকা: #Lucky_Nova
“পারলে গিয়ে বলো যে আমি তোমাকে কিস করেছি।”
মিহির কাঠকাঠ মুখ করে মাথা নুয়ে নিলো। বুকের মধ্যের ধক ধক আওয়াজটা যেন বেড়েই চলেছে নিজ গতিতে। এদিকে চোখমুখের ভাবও অগোছালো হয়ে গেছে। লোকটা দিন দিন যেন ইচ্ছে করেই উল্টাপাল্টা কাজ বেশি বেশি করছে।
এরোন ঠোঁটে হাসির রেশটা রেখেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটু পিছিয়ে গেল।
তারপর বুকের কাছে হাত গুজে আঁটসাঁট গলায় বলল,”এরপর যদি তামাশা করো আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তাহলে এর চেয়েও ভয়ানক কিছু করবো।”
শুনে মিহি ভড়কে গেলেও একই ভঙ্গিতে মাথা নুয়ে রইলো। গলা শুকিয়ে এসেছে ওর।
মিহির অবস্থা দেখে মৃদু আওয়াজ তুলে হেসে ফেলল এরোন।
মিহি দাঁতেদাঁত চিপলো। আর মনে মনে বলেল, ‘অসভ্যতা করে এখন মজা নিচ্ছে আমার!’
“তুই এখানে! আর আমি খুঁজে খুঁজে মরছি।” ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলেই আরোহী রুমে ঢুকলো।
মিহি চমকে তাকালো। ওর মুখোভাব এমন যেন সব দেখে নিয়েছে আরোহী। তবে এরোনের মুখোভাব স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি।
আরোহী মিহির মুখ দেখে ভ্রু কুচকে ফেললেন।তারপর প্রশ্নাত্বক স্বরে বললেন,”কি হয়েছে? আবার বকেছে?”
“লাইক সিরিয়াসলি?” সরু চোখে আরোহীর দিকে তাকিলো এরোন।
“তোকে চেনা আছে আমার। নিশ্চয়ই বকেছিস?”ছেলের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে বলে তারপর মিহির দিয়ে আহ্লাদী ভঙ্গিতে তাকালেন। বললেন,”কি করেছে আমায় বলো। আবার বকেছে?”
মিহি কারো দিকেই তাকাচ্ছে না। কোনো মতে না সূচক মাথা নেড়ে মাথা নিচু করে রেখেছে সে। গালে তার রক্তিম ভাব। এমন পরিস্থিতিতে এ জীবনে কোনোদিনো পরেনি সে।
“করো, করো, ভালো মত জিজ্ঞেস করো।” জ্বালাময়ী হাসি দিয়ে আরোহীর উদ্দেশ্যে বলল এরোন।
“কেনো জ্বালাচ্ছিস ওকে?” চোখ রাঙালেন তিনি।
“স্ট্রেঞ্জ! কিছুই ত করিনি আমি। জিজ্ঞেস করো তুমি ওকে!” অবাক হওয়ার নাটকীয় ভান ধরে বলল এরোন।
শুনে মিহির ইচ্ছে হচ্ছে এরোনের মাথাটা ফাটিয়ে ফেলতে।
আরোহী আর কথা বাড়ালেন না। প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, “যাইহোক৷ মিহি চলো নিচে যাই।”
মিহি প্রশ্নাত্বক চোখে মুখ তুলে তাকালো।
“নাস্তা করবা না! আয় তুইও। মিহি আসো।” বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন আরোহী।
আরোহীকে বের হতে দেখেই চট করে উঠে দাঁড়ালো মিহি। এখনি না বের হলে এই লোক আবার কি করে বসবে ঠিক নেই।
কিন্তু যাবার জন্য কয়েক পা বাড়াতেই পিছন থেকে শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো এরোন। যার জন্য শুকনো ঢোক গিলে থেমে দাঁড়াতে হলো মিহিকে। শুকনো মুখটা আরো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল মুহূর্তেই।
কোনোমতে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের আঁচলের দিকে তাকালো মিহি।
হ্যা সে-ই ধরে রেখেছে। মুখে তার দুষ্টুমি ভরা হাসি। এই লোকটা সত্যিই…যাচ্ছেতাই!
“আঁচল ছাড়ুন আমার।” বলেই আলতো করে আঁচলটা টেনে নিতে চাইলো মিহি।
তবে আঁচল টেনে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বাড়ানো হাতটাই ধরে ওকে নিজের কাছে টেনে আনলো এরোন।
মিহি আরেকটা ঢোক গিলে নিলো। এবারো মাথা নুয়ে ফেলেছে সে। বুকের দ্রিমদ্রিম আওয়াজটাও আবার বেড়েছে।
এরোন মৃদু হাসিসহ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মুখে কিছু বলল না।
কয়েক মুহূর্ত এভাবে নীরাবতায় কেটে যাবার পর মিহি ইতস্তত করে বলল, “আ..আমার আঁচল ছাড়ুন।”
“তুমি আমার চোখের দিকে তাকালেই ছেড়ে দেব। তার আগে না।” মায়াবী গলায় বলে উঠলো সে।
মিহির গা শিরশির করে উঠলো। যেন অসম্ভব কিছু বলেছে সে। অজানা এক কারণ বশতো ও মরে গেলেও করতে পারবে না এটা।
“কি?”
“ফা..ফালতু কথা বাদ দিয়ে এটা ছাড়ুন।” বলেই আঁচল ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল মিহি।
এরোন মুচকি হেসে নিচু তবে গাঢ়তর স্বরে বলল, “কেনো তাকাতে পারো না?!…প্রেমে পরে যাবা তাই?”
কথাটা কানে লাগতেই হালকা চমকালো মিহি।কপালে কিঞ্চিৎ কুচকে ফেলল সে। কি বলছে উনি এসব!
তবে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল, “জীবনেও পরবো না।”
“Really?” কটাক্ষ করে বলল এরোন।
“হ্যাঁ। জীবনেও পরবো না।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল মিহি।
আচমকা ওর দিকে ঝুঁকে এলো এরোন।
মিহি শিউরে উঠে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
এরোন হিসহিসিয়ে বলল,”We will see about that.” অর্থাৎ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো সে।
মিহি এদিক ওদিক তাকিয়ে মেপে মেপে শ্বাস নিতে লাগলো। এক কাছে দাঁড়ানোতে ভিতরে ভিতরে যেন তোলপাড় হচ্ছে ওর।
“কই তোরা?!” নিচ থেকে জোর গলায় বললেন আরোহী।
মিহি বিচলিত মুখে একনজর দরজার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার উদ্দেশ্য মুখ খুলতে চাইলো। তবে কিছু বলার আগেই ওর আঁচল ছেড়ে দিলো এরোন।
ছাড়া পেয়েই তড়িৎ গতিতে সরে দাঁড়ালো মিহি।
এরোন মুখের হাসি প্রসস্থ করে মিহির আগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
এরোন বেরিয়ে যেতেই ও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
তবে চিন্তার সুক্ষ্ম ভাজ কপালে পরে গেল।
‘চোখে তাকানোর সাথে প্রেমে পরার কি সম্পর্ক!’ নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো মিহি।
তবে পর মুহূর্তে নিজেকেই নিজে শাসিয়ে উঠলো মিহি, ‘এগুলোর কোনো ভাবছি! কোনো মানে নেই এসবের। এগুলো সব সিনেমার কাহিনী।’
তবে মনের মধ্যে অজানা কারণে খচখচ করতেই লাগলো। চিন্তিত মুখেই নিচে নেমে আসতে লাগলো মিহি।
অতঃপর অন্যমনস্ক ভাবে শেষ সিঁড়ি পা দিতে না দিতেই পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠল, “তুমি কে?”
আচমকা কারো গলা শুনে একটু সচকিত হয়ে তাকালো মিহি।
ওর থেকে সামান্য দূরত্বে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক স্পোর্ট ব্যাগ কাধের পিছনে ডানহাতে ঝুলিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যার প্রশ্নাত্বক অবাক দৃষ্টি এখন ওর দিকে।
মিহিও প্রশ্নাত্মক অগোছালো দৃষ্টিতে ছেলেটার আগাগোড়া দেখে নিলো।
তার পরনে আকাশী, কালো আর সাদার সংমিশ্রণের লং স্লিভ স্পোর্টস জার্সি আর গাঢ় কালো বটম ট্রাউজার। সাথে পায়ে কালচে নীল ধরনের স্পোর্টস জুতা। তার কাধের ব্যাগের এক ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আছে ব্যান্ডমিন্টন ব্যাটের শেষাংশ।
যা স্পষ্টরূপে জানান দিচ্ছে যে এই ছেলে ব্যান্ডমিন্টন খেলোয়াড়।
মিহির আগাগোড়া দেখার ফাঁকেই সে স্পোর্টস ব্যাগটা কাধ থেকে নামিয়ে হাতে ঝুলিয়ে ধরল।
“তুই সারাদিন কই ছিলি?! হ্যাঁ? সকাল থেকেই তুই গায়েব! কত্তবার কল দিলাম তোকে? সে খেয়াল আছে!” অগ্নিশর্মা হয়ে বলতে বলতে ডায়নিং থেকে এগিয়ে এলেন আরোহী।
“ম্যাচ ছিলো মা। ডোন্ট প্যানিক, চিল।” বলেই নিঃশব্দে একগাল হেসে চোখ মারলো সে আরোহীকে।
আরোহীর রাগ বাড়ল বৈ কমলো না। তিনি আরো কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবার আগেই সে মিহির দিকে চোখের ইশারা করে বলল, “এটা কে?”
আরোহী একটু শান্ত হবার প্রচেষ্টায় দম নিলেন। তবে তার মুখ এখনো থমথমে৷ ছোটো ছেলের উপর রাগটা সকাল থেকেই। কারণ আজই হঠাৎ করেই তিমিরের মায়ের থেকে এরোনের উড়ো বিয়ের ঘটনা জেনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সব জেনে কি করবেন বুঝতেই পারছিলেন না। তার মধ্যে কেউ বাসায় ছিল না। এরোনের বাবা শহরের বাহিরে গেছে কাজে, কাজের মেয়েটাও দুদিন হয়েছে বাড়িতে গেছে, দারোয়ানের কে যেন অসুস্থ ছিল তাই সকালে আসেনি আর ওদিকে ড্রাইভারও গাড়ি রেখে লাপাত্তা ছিলো! তার উপর সকালের পর থেকে ছোটো ছেলের খবর ত নেই-ই। সাথে তাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিলো না।
পরে ড্রাইভারকে কোনোমতে ফোন করে ডেকে বাংলোতে রওনা হয়েছিলেন তিনি। মোট কথা সময়কালে কাউকে পাশে পাননি তিনি আজ। আসলে কোনোদিনই পান না।
বড় ছেলে অর্থাৎ এরোন ত মাঝেসাঝে এক দুই সপ্তাহ বাসাতেই আসে না। আর ছোটো ছেলে রোজ রোজ সকালে গায়েব হয়ে বিকেলে বা সন্ধ্যায় হাজির হয়।
“কে এটা!” ভ্রু উঁচিয়ে আবার প্রশ্ন করলো সে।
“তোর ভাইয়ের বউ।” থমথমে ভাবটা বজায় রেখে ডাটের সাথে ঘাড় নাড়িয়ে বললেন আরোহী।
চোখ আর মুখটা কুচকে আরোহীর দিকে তাকালো সে। মায়ের প্রতি ওর মুখোভাব বলছে, “রেগে গেছ ভালো কথা। কিন্তু এটা কি ধরনের মজা ভাই!”
আরোহী হয়তো ছেলের মুখ দেখে বুঝলেন।
তাই কোমড়ে এক হাত গুজে সিরিয়াস হয়ে বললেন, “বিশ্বাস না হলে তোর ভাইকে গিয়ে জিগা।”
এটা শুনেও মুখোভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হলো না তার। কারণ তার মা রেগে গেলে অনেক কিছুই বলে৷
তবে আজকের মজা টা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হলো ওর।
“তোর বড় ভাইয়ের সাথে সাথে আজ তোরও কপালেও শনি আছে। সব উচ্ছন্নে যাচ্ছে দিন দিন। আজ রাতে ভাত পাবি না তোরা দুই বেহাংরা।” ক্ষিপ্ততার সাথে বললেন আরোহী।
শুনে একগাল হাসলো সে। ‘বেহাংরা’ শব্দের মানে বুঝলো না ও। তবে সে প্রসঙ্গে না গিয়ে আরোহীকে আরো ক্ষেপাতে সে বলে উঠল,”পরে ত তুমি নিজেই ডাকবা! আয় খেয়ে যা!”
এতে আরোহী আরো রাগলেন।
মা ছেলের খুনসুটি দেখে মিহির বড্ড হাসি পেতে লাগল। কিন্তু তাও মুখ চেপে নিজের হাসি আটকে রাখলো মিহি। কারণ বিষয়টা হয়তো সিরিয়াস। হাসাটা বেমানান হয়ে যাবে।
আরোহী তর্কে না পেরে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ছোট ছেলে বেশি বদ। ওর সাথে কোনোকালেই কেউ পেরে ওঠে না।
আরোহী মিহির দিকে তাকিয়ে তাড়া দিয়ে বললেন,”তুমি আসো ত, নাস্তা রেডি। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
তারপর ‘যত্তসব’ বলেই ছেলেকে একটা চোখ রাঙানি দিয়ে গটগট করে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলেন তিনি।
মিহিও আর দেরি না করে অনুসরণ করলো আরোহীকে।
“এরোন টা আবার কই গেল!” মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ বের করে বললেন আরোহী।
‘এরোন’ নাম শুনে মিহি মনে মনে কিছু বিড়বিড়িয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো। এমনিই ইদানীং যা শুরু করেছে এই ছেলে তা বলার মত না।
“নাকি এখন ঢুকেছে ফ্রেস হতে!” বিরক্ত হয়ে স্বগোতক্তি করলেন আরোহী।
তারপর মিহিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ওটা আমার ছোটো ছেলে। এরিক। আরেক বদ। দিন দিন যা হচ্ছে না!”
বলতে বলতে হেসে দিলেন উনি। মিহিও মৃদু হাসলো।
“যাইহোক তুমি খাও।” বলেই একবাটি নুডলস মিহির সামনে দিলেন আরোহী।
মিহি দেরি না করেই নিলো। কারণ অনেক দিন পর আজ নুডলস খাওয়া হবে। প্রিয় একটা জিনিস এটা মিহির।
“এর বেশি কিছুই করতে পারিনি। কাজের মেয়েটাও বাড়িতে গেছে। ঝামেলা একদম।” অধৈর্য্য হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন আরোহী।
“কোনো সমস্যা নেই। আর আমার নুডলস অনেক পছন্দ।” সৌজন্যমূলক হেসে বলল মিহি।
প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলেন আরোহী।
“আপনি খাবেন না?”
“আমার ভাজাপোড়া খাওয়া নিষেধ। তুমি আমার চিন্তা করো না।….ওহ! ফ্রেঞ্চ ফ্রাইও আছে। থামো আনছি।”
আরোহী রান্নাঘর থেকে এক প্লেটে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নিয়ে মিহির সামনে রাখলেন।
“খেতে থাকো। আমি বাকিগুলো ভেজে আসছি। লজ্জা করো না কিন্তু!” বলতে বলতে আবার রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন তিনি।
মিহি একটা নিঃশ্বাস ফেলে খাবারের দিকে নজর দিলো। জিভে জল চলে এসেছে ওর। বরাবরই ওর ভাজাপোড়া ভিষণ পছন্দ।
“টমেটোর সস আছে টেবিলেই।” রান্নাঘর থেকে জোর গলায় বললেন আরোহী।
মিহি টেবিলে চোখ বুলিয়ে সসের বোতল পেয়েও গেল। এটাই যেন দরকার ছিলো।
হাতে তুলে নেওয়া বড় ফ্রেঞ্চফ্রাই মুখে কামড়ে ধরে সসটা হাতের নিয়ে খুলল মিহি। তারপর নুডলসে ঢালতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
ঠিক সেই মুহূর্তেই মুখ আগিয়ে এনে মিহির কামড়ে ধরে থাকা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইটার অন্যপ্রান্তে কামড় বসিয়ে দিলো এরোন।
“আহ!” মোটামুটি উচ্চস্বরে আঁতকে উঠে মাথাটা পিছিয়ে নিলো মিহি। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল সে। শ্বাসপ্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে গেল নিমিষেই। চেয়ারের সাথে পিঠ লেপ্টে সামনের দিকে মুখ ঈষৎ হা করে তাকিয়ে রইল সে।
“কি হয়েছে?” আতঙ্কিত মুখে মুহূর্তেই ছুটে এলেন আরোহী।
তিনি আসতেই মিহি বেজার অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
এরোন ততক্ষণে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইটা চিবুতে চিবুতে পাশের চেয়ারে চুপচাপ ফোনে মনোযোগী হওয়ার ভান করে বসে পরেছে।
মিহি ঢোক গিলে বিস্ফোরিত অপ্রস্তুত দৃষ্টিতে আড়ালে একপলক তাকালো এরোনের দিকে।
সে ফোন নিয়ে এমন ডাটে আছে যেন কিছুই করেনি। কিছুই জানে না সে।
“কি?” আরোহী এখনো হালকা আতঙ্কিত। কপালে ঈষৎ ভাজ পরে গেছে তার।
মিহি লজ্জা আর অস্বস্তিতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। এই অসভ্য, অভদ্রটার জন্য মান সম্মান সব শেষ হবে আজ।
এরোন কপট মনোযোগের সাথে ফোনের স্ক্রিন স্ক্রোল করতে করতে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,”রিল্যাক্স মা। গরম গরম মুখে দিয়ে দিয়েছিলো হয়তো।”
মিহি দাঁত কিড়মিড় করে আরেকবার আড়চোখে এরোনের দিকে তাকালো।
সে সুক্ষ্ম হাসি ঠোঁটের কোনে রেখে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তাই বলো! ভয়ই পেয়ে গেছিলাম আমি।” আশ্বস্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আরোহী।
মিহি আরোহীর দিকে মেকি হাসার চেষ্টা করে একহাতে শাড়ি খামচে ধরল। রীতিমতো ঘাম ছুটে গেছে ওর।
“সাবধানে খাও।” সতর্কীকরণ ভঙ্গিতে বলে আবার রান্নাঘরে ঢুকলেন আরোহী।
তিনি যেতেই মিহি বিনা বিলম্ব দ্রুত উঠে যাওয়ার জন্য চিন্তা করলো। তবে তা সফল করার আগেই এরোন ওর হাত খপ করে ধরে নিলো, যেন সে জানতোই মিহি উঠে যাবে।
এরোনের এহেন কাজে হকচকিয়ে গেল মিহি। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো সে। এখন আবার কি না কি করবে এই ছেলে সেটাই ওর চিন্তা।
(চলবে…)