গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ১৭: একসাথে_ঘুমাবো
লেখিকা: #Lucky_Nova
বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙালো মিহির। চোখ খুলে তাকাতেই উপরের সিলিং বেয়ে ঝুলানো ফুলগুলোর দিকে চোখ পরল। বুঝতে দেরি হলো না যে এটা ফুলসজ্জার খাট। হালকা চমকালো ও।
মুহূর্তেই মনে পরলো কাল তো গাড়িতে ছিলো! এখানে কে আনলো?
আস্তে আস্তে পাশে তাকালো ও। তাকাতেই চোখ চড়কগাছ হয়ে উঠলো ওর।
এরোন ওর পাশে ঘুমাচ্ছে তাও আবার হাত ধরে।
সেকেন্ডের মধ্যে নিজের হাত টেনে নিয়ে উঠে বসলো সে।
এভাবে হাত হঠাৎ টেনে ছাড়িয়ে নেওয়ায় এরোনের ঘুম ভেঙে গেলো।
সে কপাল ঈষৎ কুচকে ঘুমঘুম চোখ মেলে তাকালো।
“আ…আপনি আমার সাথে কেনো ঘুমাচ্ছেন? আর আমার হাত কেনো…?” বলতে বলতে একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বেশকিছুটা সরে বসলো সে।
“তোমার সাথে ঘুমাবো না ত কার সাথে ঘুমাবো?” ঘুমের আবেশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল এরোন।
মিহি দ্রুত বিছানা থেকে নামতে উদ্যত হলেই এরোন ওর শাড়ির আঁচল হাতের মুঠোয় ধরে নিলো।
মিহি চমকে উঠলো,”এ..এটা কেনো ধরেছেন?”
“রান্নাঘরে যাও। চা করো আর নিয়ে আসো।” কপাল কুচকে রেখেই আদেশের সুরে বলল এরোন।
তার চোখে এখনো ঘুম।
মিহি কপাল সোজা করলো। আর স্বাভাবিক গলায় গটগট করে বলল,”পারব না আমি।”
“কি বললা?” হালকা তেজী গলায় বলল এরোন।
মিহি মুখ খুলে আবার একই কথা বলল কিন্তু এবার চোখের দৃষ্টি সরিয়ে।
এতে এরোন শাড়ির আঁচলটা আরেক প্যাচ ঘুরিয়ে হাতে জড়ালো। আর ঘুরিয়ে নিতেই মিহিকে হালকা ঝুঁকে আসতে হলো।
মিহি চোখ ছানাবড়া করে তাকালো এরোনের দিকে।
“আবার বলো যে পারবা না।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল এরোন।
মিহি চোখ সরালো। ঢোক গিলে আঁচলটা হালকা টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে নিচু গলায় বলল,”যাচ্ছি।”
“যাও।” কড়া নজরে তাকিয়ে বলে শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিলো এরোন। তারপর উল্টোপাশ ফিরে চোখ বুজলো।
মিহি দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
সিঁড়ি দিয়ে নামার পথে বিরবিরিয়ে কিছু গালি আওড়ালো মিহি। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে রান্নাঘরটা হাতের বাম দিকেই খুঁজে পেলো।
তবে রান্নাঘরের দিকে এক পা বাড়িয়েই থেমে দাঁড়িয়ে গেল মিহি। মাথায় অন্য চিন্তা চলে এলো।
দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে নিলো সে।
না আজ কেউ নেই। এমনকি এরোনের ফ্রেন্ডরাও নেই।
চোখমুখে খুশির ঝিলিক দেখা গেল মিহির। দিনের বেলায় এমন একটা সুযোগের জন্যই ও এতদিন অপেক্ষা করেছে। পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা পুরো ক্লিয়ার।
মিহি দ্রুতপদে সদর দরজা কাছে এগিয়ে এলো। তারপর আস্তে আস্তে সময় নিয়ে শব্দ যত সম্ভব না করে দরজার সবগুলো হুক খুলে ফেলল।
দরজা টেনে খুলে দ্রুত একটা লম্বা প্রশান্তির শ্বাস নিলো ও। বাহিরে এক পা বাড়িয়ে দিতে না দিতেই পিছন থেকে ভরাট গলার আওয়াজ ভেসে এলো।
“কই যাও?”
মিহি কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেল। ভয়ে হৃদপিণ্ডটা বের হয়ে আসার উপক্রম হয়ে এলো।
নিঃশ্বাস নেওয়াও দায় হয়ে পরলো ওর জন্য।
ভয়াতুর দৃষ্টিতে সামনের দিকেই তাকিয়ে রইলো ও। পিছনে ফেরার সাহসও হলো না। ও আশাই করেনি এরোন হঠাৎ উঠে আসবে।
এরোন সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে লাগলো। তা টের পেয়েই মিহির ভয় বাড়তে লাগলো। সে দরজাটা আঁকড়ে ধরলো।
তবে পিছনে ঘোরার আগেই এরোন পিছন থেকে ওকে কোলে তুলে নিলো।
মিহি হকচকিয়ে উঠলো, “নামান আমায়!”
বলে মিহি নামার জন্য হাত দিয়ে এরোনের কাধ ঠেলতে লাগলো। এরোন ওর দিকে একনজর কড়াভাবে তাকিয়ে ওকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করলো।
মিহি নামার চেষ্টায় অস্থির হয়ে উঠেছে। কিন্তু পেরে উঠছে না। কিন্তু তাও চেষ্টা চালিয়ে গেল মিহি।
ছোটাছুটি করে লাভ হলো না মিহির। ওকে সোজা বিছানায় এনে ফেলল এরোন।
“কিসের জন্য পাঠিয়েছিলাম তোমাকে?” তার মুখোভাব শক্তপোক্ত। রেগে গেছে সে।
মিহি ঢোক গিলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসলো।
এরোন হুট করে নিজের টি-শার্টটা খুলে ফেলল।
মিহি এবার অনেক ঘাবড়ে গেল।
চোখ নামিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কাপা গলায় বলতে লাগলো,”আ…আপনি..কি করতে…”
এরোন উওর দিলো না। সে গম্ভীর চোখে মিহির দিকে তাকিয়ে ওর কাছে চলে এলো।
মিহি শিউরে উঠলো। পিছাতে পিছাতে বলল, “আ..আপনি এটা করতে পারেন না।”
“কোনটা করতে পারিনা?” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলল এরোন।
মিহি চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
“স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নেই নেই মনে হচ্ছে তাই পালাচ্ছো?”
নিমিষেই মিহির মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেই বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করলো। লোকটা কি ওর উপর চড়াও হবে নাকি? চিন্তা হতেই ঠোঁট কাঁপতে শুরু করল ওর।
যদিও সে এখনো মোটামুটি দূরত্ব রেখেছে। তাও এখনি যদি কিছু করে দেয়।
“পরের বার যদি পালানোর চিন্তা মাথাতেও আনো, I swear I will eat you RAW.” তিরিক্ষি মেজাজে বলল এরোন।
কাঁচা খেয়ে ফেলবে মানে! কি সব কথাবার্তা! চমকালো মিহি।
“বুঝেছো?” গর্জে উঠল এরোন।
মিহি হালকা কেঁপে উঠলো। তবে ওর ইচ্ছে করলো বলতে যে, আমি পালাবই। দেখি কিভাবে আটকান।
কিন্তু ভয়ে কথাগুলো গিলে নিলো। এমনিও এই ছেলের মাথা গরম করিয়ে কি হবে! কিছু করে বসলে! তাই মনে মনে ঠিক করলো হঠাৎ সুযোগ বুঝে টুপ করে পালাতে হবে। কিন্তু তার আগে ওর মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করে নিতে হবে।
এরোন সরে গেলো।
বিছনায় পা ঝুলিয়ে মিহির দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসলো।
মাথা প্রচুর ধরেছে ওর। এই কয়েকদিনে অনেক কিছুই সামাল দিতে হয়েছে।
সব সামলে ফেললেও মিহিকে সামলানো যাচ্ছে না। এভাবে কিভাবে এরোন নিজের নিজের বাবা মায়ের কাছে নেবে মিহিকে সেটাই ভাবাচ্ছে ওকে।
নির্ঘাত মিহি বলে বসবে, বিয়েতে মত ছিলো না, জোর করা হয়েছে, সাথে ডিভোর্স ডিভোর্স করেও চেঁচাবে।
এরোন মুখ দিয়ে ‘তিক’ করে বিরক্তসূচক শব্দ বের করলো।
মিহি একপলক এরোনের দিকে তাকিয়ে অপর প্রান্ত দিয়ে বিছানা ছেড়ে নামার জন্য পা নামালো।
“এক চুলও নড়বা না।” না তাকিয়েই কঠোর গলায় বলল এরোন।
অগত্যা একরাশ বিরক্তি নিয়ে আবার বিছানায় পা তুলে নিলো মিহি।
কড়া চোখে একবার এরোনের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল। উলটো ঘুরে বসে আছে সে এখনো। শার্টটা পরছে না বলেই মিহির অসস্তি হচ্ছে বেশি। কি দেখাতে চাচ্ছে? আমার সুন্দর একটা বডি আছে! যত্তসব। বিড়বিড়ালো মিহি।
কয়েক মিনিট পর উঠে দাঁড়াল এরোন। তারপর ধূসর রঙের টি-শার্টেটা আবার পরে নিতে নিতে থমথমে গলায় বলল,”খাবার এখনি চলে আসবে। ফ্রেস হও।”
বলে এরোন বেরিয়ে গেল।
মিহি বিরাট অসস্তি নিয়ে বিছানা ছাড়লো। একবারে গোসল করার জন্য এগিয়ে গিয়ে কাঠের আলমারি খুলে শাড়ি নিলো। ওর জন্য বিরক্তিকর আরেকটা বিষয় হলো লোকটা আলমারি শাড়ি দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে। একটা থ্রি-পিসও নেই। যেটা পরে বাড়ি ছেড়েছিলো সেটাও গুম করে দিয়েছে সে।
অসহ্য লোক একটা।
গোসল সেরে বারান্দায় বালতিতে কাপড় নিয়ে হাজির হলো মিহি। এখানে কাপড় শুকাতে দেওয়াও আরেক বিরক্তি। অনেক উঁচুতে দড়ি। এই কয়দিন প্রীতি মেয়েটা ওর কাপড় শুকাতে দিয়েছে৷ সেও আহামরি লম্বা নয়। তাও কিভাবে পেরেছে কে জানে! এত উঁচুতে কেউ দড়ি কোন দুঃখে টাঙালো সেটাই বুঝে পায়না মিহি।
মিহি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।
তারপর পায়ের পাতার উপর ভর করে শাড়িটা দড়িতে ফেলতে উদ্যোগী হলো। কিন্তু পারলো না।
দড়িতে হালকা বাঁধলেও অপর পাশ দিয়ে টেনে নামানোর জন্য নাগাল পায়না।
কয়েকবার চেষ্টা করেও হচ্ছে না বলে মহা বিরক্ত হয়ে গেল মিহি।
বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখল এরোন বেলকোনির দরজার কাছে বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ এলিয়ে হাসছে সে।
মিহির কপাল কুচকে এলো ওকে দেখে।
“তুমি ত দেখছি অনেক চিরকুট।” বিদ্রুপের হাসি দিলো এরোন।
মিহির বুঝলো লোকটা এইমাত্র ওর হাইট নিয়ে অপমান করলো ওকে। গা জ্বলে গেল ওর। তাও চুপ করে দাঁত কিড়মিড়িয়ে সহ্য করে দড়ির দিকে তাকালো।
আর চেষ্টা করার ইচ্ছে হচ্ছে না তার। এই লোকের সামনে ত একেবারেই না। এতে আরো অপমান হবে নিজের।
কিন্তু শুকাবে কোথায় তাহলে? ছাদে! হ্যা ছাদে দিলেই ত হয়।
চিন্তার মাঝেই ওকে কোমড় জড়িয়ে ধরে শূন্যে তুলে ধরলো এরোন।
মিহি মহা চমকালো।
আকস্মিক এমন হওয়ায় একহাতে ভেজা শাড়িটা আর অন্যহাতে রেলিঙটা আঁকড়ে ধরলো সে। এরোনের দিকে চকিত হয়ে তাকিয়ে বলল, “কি করছেন আপনি? নামান আমায়?”
“জলদি করো।” মৃদু হেসে বলল সে।
“আ…আমায় নামান।” বলল মিহি।
“কাপকেক কুইক। সারাদিন নেই আমার।” তাড়া দিয়ে বলল এরোন।
মিহি কয়েক সেকেন্ড এদিক ওদিক তাকিয়ে কোনমতে জলদি মেলে দিলো শাড়ি টা।
“নামান এবার।” অপ্রস্তুত কন্ঠে বলল মিহি।
এরোন ওকে নামিয়ে দিলো। ছাড়া পেয়ে সরে গিয়ে পাশ ফিরলো মিহি। বুক ধুকধুক করছে ওর। ইদানীং হুটহাট কাছে চলে আসে এই লোক।
“বাকি কাপড় ত রয়ে গেছে।”
এরোনের কথায় মিহি বালতির দিকে তাকালো। সাথে সাথে হকচকিয়ে বলে উঠল, “আ..আমি করে নেব।”
“তুমি ত একা পারবা না।” মৃদু স্বরে বলেই এরোন এগিয়ে আসলো।
সাথে সাথে কাচুমাচু হয়ে দ্রুত বেলকোনির কোনায় সরে গেল মিহি। এরোনের দিকে না থতমত খেয়ে বলল, “ব..বলছি ত পারবো।”
এরোন সরু চোখে তাকিয়ে নিজেই বাকি কাপড়গুলো মেলে দিলো। তারপর বলল,”খাবার রুমে দিয়েছি তোমার। খেয়ে নেও আসো।”
দুইজনেই রুমে এসে ঢুকলো।
এরোন বালতিটা রেখে রুম থেকে বের হতে হতে বলল,”আমি এখনি বের হবো। কাজ আছে। পালানোর চিন্তাও করবা না। অবশ্য বাহির থেকে লক করে তবেই যাব।”
মিহি দাঁতেদাঁত চিপে মনে মনে কিছু বিড়বিড়ালো।
?
সারাদিন একা একা এত বড় বাড়িটায় পরে রইল মিহি। অসহ্য লাগছে থেকে থেকে ওর। অন্যদিকে বাসার জন্য মন পুড়ছে। দুইদিন পর বাসায় নিয়ে যাবার কথা ছিলো এরোনের। আজই সেই দুইদিন শেষ হলো।
অর্থাৎ কাল বাসায় যেতে পারবে।
কিন্তু বাবার সামনে যাবার জন্য সাহসে কুলাচ্ছে না। তার উপর বাকিরা নাকি বিয়েতে মত দিয়েছে আর বিয়ে হওয়ার বিষয়টা জানেও। এখন কি করবে ও! সবাই ত মিথ্যাটাকে মেনে রাজি হচ্ছে।
এই ছেলেকে ত ও কোনোমতেই ভালোবাসতে পারবে না। বরং পালাতে চায় ও।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল মিহি। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় এলো। সন্ধ্যে নেমে এসেছে। ভালোই অন্ধকার আজ। একটানা ঝিঝি পোকাগুলোও ডেকে যাচ্ছে।
দশটার দিকে এরোন বাসায় এলো। ফ্রেস হয়ে কেনা খাবার গুলো প্লেটে সাজাতেই মিহি নিজেই নিচে নেমে এলো।
“বসো।” বলে এরোন নিজে একটা চেয়ার টেনে দিলো।
মিহি চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে বসলো। তারপর প্লেটের দিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলল,”আপনি বলেছিলেন যে আমাকে বাসায় দিয়ে আসবেন।”
এরোন খাবারের প্যাকেট গুলো ঝুড়িতে ফেলতে ফেলতে বলল,”আগে বলো যে, আমাদের বিয়ের বিষয় নিয়ে বাসায় তামাশা করবা না।”
মিহি গুমোট ভাবে প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল,”আপনি কেন আমাকে জোর করে রাখতে চাচ্ছেন? আমি ত এই সম্পর্কটা মানতে চাই না।”
আবার সেই এক কথা। এরোন মুখ ফুলিয়ে একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস বের করে দিলো।
তারপর গম্ভীর গলায় বলল,”একশোবার বলা হয়ে গেছে আমার। আমি ছাড়বো না তোমায়।”
মিহির অসস্তি আর অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল।
“চুপচাপ খাও।” চেয়ার টেনে বসলো এরোন।
মিহি আর কিছু বলল না। চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইলো। অতঃপর কিছুক্ষণ ভাত নেড়েচেড়ে না খেয়েই উঠে গেল।
এরোন কিছু বলতে চেয়েও বলল না। শুধু কয়েকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সব খাবার ধরে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।
?
“আ…আপনি এই রুমে কেনো ঢুকছেন!” মিহি অস্থির হয়ে দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলো।
এরোন দরজা আটকাতে আটকাতে দায়সারাভাবে বলল,”বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের। ত আমরা আলাদা কেনো থাকবো?”
এরোন বিছানায় এসে বসতেই মিহি নেমে দাঁড়িয়ে নাকচ করে বললো, মোটেও আমি ঘুমাবো না।
“এরোন বালিশ পাতিয়ে শুতে শুতে বলল,” তুমিও ঘুমাবা আর তোমার ঘাড়ও ঘুমাবে।”
মিহি দাঁতেদাঁত চিপে দরজার দিকে পা বাড়ালো।
“স্টপ।” কড়া গলায় বলে উঠে বসলো এরোন।
মিহি থেমে দাঁড়িয়ে কপাল কুচকে এরোনের দিকে তাকালো।
“এই রুমেই থাকবা তুমি।” আদেশের গলায় বলে দিলো সে।
মিহি তোয়াক্কা না করে বেরিয়ে গেলো।
‘কি মনে করে সে নিজেকে! রাজা? আর আমি তার দাসীবাঁদী? যা বলবে আমাকে তাই শুনতে হবে? হুহ।’ আপন মনে বিড়বিড়ালো মিহি।
আশেপাশে তাকিয়ে কোন রুমে থাকা যায় চিন্তা করতে লাগল মিহি।
ওর চিন্তার মাঝে আচমকা কেউ ওকে শূন্যে তুলে নিলো।
মিহি ভুত দেখার মত চমকালো।
“আ…আপনি! উফ! নামান আমায়।” দাপাদাপি শুরু করে দিলো মিহি।
“আমাকে রাগিও না। একদম এখান থেকে নিচে ছুড়ে মারবো তাহলে।” রাগী স্বরে গটগট করে বলে গেলো এরোন।
মিহির দাপাদাপি বিদ্যমান।
“আমি জীবনেও ঘুমাবো না আপনার সাথে এক বিছানায়।”
ওর কথার তোয়াক্কা না করে ওকে আবার বিছানায় ফিরিয়ে আনলো এরোন।
মিহি সাথে সাথে নামার জন্য উদ্যত হতেই এরোন ওর হাত খপ করে ধরে আবার বসালো।
“আহ! লাগছে।”
“বলেছি মানে থাকতেই হবে।” রাগী একরোখা মনোভাব এরোনের।
হাত ছেড়ে ঘুরে বিছানায় এলো এরোন।
মিহি আবার নেমে দাঁড়াতেই এরোনের রাগ আরো বেড়ে গেল।
“তুমি কি চাও আমি তোমায় জড়িয়ে ধরে শুই?” কড়াচোখের চাহনিতে বলল এরোন।
শুনেই চোখ ছানাবড়া হয়ে এলো মিহির।
“এ..একদম না।” দুইপা পিছিয়ে গেল মিহি।
“তাহলে চুপচাপ বেডে আসো।” এক আঙুল দিয়ে ইশারা করলো সে।
উপরে মিহি কিছুতেই শোবে না। এক ঘরেও শুতে চায় না। তাও বহু তর্ক করে বাধ্য হয়ে এক রুমেই থাকতে হলো। তবে বিছানায় নয়।
বিছানার পাশে নিচেই বিছানা করেছে সে।
এরোনও জোর করে নি আর। আপাতত এক রুমে থাকাটা হোক পরের টা পরে বুঝবে ও।
এরোন বালিশ নিয়ে কর্নারে এসে শুয়ে মিহির দিকে পাশ ফিরে আছে। তার গম্ভীর চোখের দৃষ্টি মিহির উপর।
মিহি তখন বিছানা করে বসে সদ্য কম্বলটার ভাঁজ খুলছে। এরোনের তাকিয়ে থাকাটা আঁচ করে তার দিকে না তাকিয়েই ইতস্তত করে বলল,”আ..আপনি এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন?”
“আমার বউ আমি তাকিয়ে আছি তোমার কি?” ভরাট গলা তার।
‘এসেছে! তার বউ!’ মনে মনে বিদ্রুপ করলো মিহি। কিন্তু মুখে কিছু বলল না।
কম্বল খুলে উল্টোদিকে মুখ করে শুয়ে পরলো সে। আর মনে মনে টিটকারি মেরে বলল,’এখন দেখো বউ।’
এরোন বুঝলো মিহি ইচ্ছে করেই ওদিকে মুখ করে
শুয়েছে।
“এদিকে ঘুরে শোও।” স্বাভাবিক তবে হালকা ভারি গলায় বলল এরোন।
মিহি গায় মাখালো না।
“এখনি না ঘুরলে বিছানায় তুলে এনে তোমার উপরে শোবো আমি।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল সে।
মিহি আঁতকে উঠল।
এক মুহূর্তের জন্য দেরি না করে দ্রুত গতিতে পাশ ফিরলো। তবে যথাসম্ভব মাথা নুয়ে রইলো সে।
না ঘুরলে হয়তো যা বলেছে সেটাই করতো এরোন। নির্লজ্জ লোক একটা।
রাগে আর লজ্জায় গাল লাল হয়ে এলো ওর।
(চলবে…)