গল্পের নাম: বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ১৫: অন্যরকম_ফুলসজ্জা
লেখিকা: #Lucky_Nova
সকাল সকাল আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সামনে তাকাতেই মুখ শুকিয়ে গেল মিহির।
এরোন সোফার হ্যান্ডেলে হাত ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মিহি দৃষ্টি সরিয়ে নড়েচড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসলো। চিন্তা করতে লাগল, এখানে এসেছে কেন? কী চায় সকাল সকাল!
কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পরে গেল মিহির।
সামনের দিকে না তাকিয়েও মিহি বুঝলো যে লোকটার কোনো হেলদোল নেই। সে তার মতো তাকিয়েই আছে। অদ্ভুত লোক।
“এখানে কেনো এসেছেন?” অস্বস্তিতে পরে রিনরিনে গলায় প্রশ্ন করে বসল মিহি।
“তোমাকে দেখতে।” মোলায়েম গলায় উওর দিল এরোন।
মিহির কেমন কেমন লাগতে শুরু করলো। আসলে এই ছেলের চোখসহ মুখও বেহায়া। সংযত না।
“কী ফুল পছন্দ তোমার?” এরোন সোজা হয়ে বসে প্রশ্ন করলো।
মিহি আড়চোখে একটু তাকিয়ে আবার চোখ সরালো। এখন আবার ফুল নিয়ে পরলো কেনো? ফুল দিয়ে কি হবে?
পরক্ষণেই গতরাতের কথা মনে পরতেই টনক নড়লো মিহির। সে শুকনো ঢোক গিলে চাদর খামচে ধরলো। চাপা ভয় ঝেঁকে ধরলো ওকে।
“কি?” স্বাভাবিক কন্ঠ এরোনের।
মিহি তাও চুপ করে রইল। কিন্তু হৃদ স্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে ওর।
এরোন বুঝে ফেলল। আর স্বভাব সুলভ হাসিটা হেসে বলল,”বলবা না কী ফুল পছন্দ?”
মিহি চুপসে রইল। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে মহা বিপদে পরে গেছে।
“বাদ্দেও। আমিই অর্ডার করে দিচ্ছি।” মুচকি হেসে বলল এরোন।
“ক…কোনো দরকার নেই।” হালকা তেজে দ্রুত গতিতে বলে ফেলে মিহি। এরোনের দিকে না তাকিয়েই।
“কিন্তু আমার তো দরকার আছে।”
কথাটা কানে লাগতেই শীতল শিহরণ বয়ে যায় মিহির শরীরে। সে আরেকটা শুকনো ঢোক গিলে নেয়।
এরোন চোরা হাসিসমেত উঠে দাঁড়ালো। সাথে সাথে মিহি চাদর আরো আঁকড়ে ধরলো। আর ভয়াতুর চঞ্চল দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
এরোন দরজা অব্দি হেটে গিয়ে আবার ঘুরে তাকালো। আর বলল,”ভুলে যেও না, আজ আমাদের ফুলসজ্জা।”
মিহি রসগোল্লার মত চোখ করে এরোনের দিকে দিকে তাকালো। সে ঠোঁট কোনা কামড়ে ধরে হাসছে।
এরোন বেরিয়ে যেতেই মিহি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠল, “এখন কি করবো আমি! এই ছেলে ত মোটেও সুবিধার না। যদি হলুদের মত এবারো আমাকে…।”
চিন্তা আসতেই হিঁচকি উঠে গেলো মিহি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামও জমে গেল।
সারাটা দিন মিহির ছটফটানি আর একপ্রকার আতংকে কেটে গেল। অনেক বার পালানোরও পথ খুঁজছিল৷ কিন্তু পথ আজও পাওয়া যায় নি। উপরন্তু আজ যেন এক্সট্রা পাহারা বসিয়ে দিয়ে গেছে অসভ্য লোকটা।
সন্ধ্যে নামতেই মিহির ছটফটানি আরো বেড়ে গেল। সে একবার পায়চারি করে, একবার বিছানায় বসে, একবার বেলকনিতে যায়। কিন্তু ছটফটানি কমে না। বরং বাড়ে।
চিন্তা করে দরজা লাগিয়ে আর খুলবেই না। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরে কোনো লাভ নেই। লোকটার কাছে ডুব্লিকেট চাবি আছে। ঠিক ঢুকে পরবে।
উপায় না পেয়ে পায়চারি ছেড়ে আবার বিছানার উঠে বসে সামনে পিছনে দুলতে থাকে ও।
তখনি দরজায় টোকা পরে। এতে মিহি একপ্রকার লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। বুকের মধ্যে ঢোল যেন আরো জোরে বাজা শুরু করে দিয়েছে।
“আসবো?”
প্রীতির আওয়াজ শুনে যেন হালকা স্বাভাবিক হয় মিহি।
প্রীতি হাস্য উজ্জ্বল মুখে ডিনার নিয়ে ঢোকে।
তারপর এগিয়ে গিয়ে বিছানার পাশে রাখতে রাখতে ওর দিকে একপলক তাকিয়ে বলে, “খেয়ে নেও।”
তারপর বেরিয়ে চলে যায় সে।
মিহি আবার চিন্তায় ডুব দেয়। এত অস্বাভাবিক কেন লাগছে! কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না ও।
সব ওই বেহায়া লোকটার দোষ।
মিহি খাবারের ট্রের দিকে তাকালো। ভয়ে খিদেও টের পাওয়া যাচ্ছে না৷ মোট কথা, এমনতর অবস্থায় ওর গলা দিয়ে কিছু নামবে না।
মিহি আবার বিছানার কাছে এগিয়ে গেল।
কিন্তু বিছানার বসতে না বসতেই আবার দরজা খোলার আওয়াজ কানে এলো।
মিহি সচকিত হয়ে দরজার দিকে তাকালো।
আর এরোনকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে সাথে সাথে দ্রুত গতিতে বিছানা থেকে নেমে এক কোনায় চলে গেল।
এরোন দরজার লক ধরে থেকেই ভ্রুকুটি করে মিহির দিকে তাকিয়ে রইল।
মিহি নামানো চোখের কালো মনি একবার মেঝের এদিক একবার ওদিক বিচরণ করে যাচ্ছে।
এরোনের বুঝতে সময় লাগলো না। মিহিকে এভাবে বিচলিত হতে দেখে ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসলো ও। তারপর ওর দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে একটু শব্দ করেই দরজাটা লাগিয়ে লক চেপে দিল।
এতেই মিহির বুকের ভিতরটা হিমশীতল হয়ে গেল। ওর দৃষ্টি মেঝের দিকে আরো চঞ্চল হয়ে উঠলো। এত ভয় হচ্ছে যে শুকনো ঢোকটা অব্দি গিলতে পারছে না ও।
এরোন ওর দিকে এগিয়ে আসতেই ও শিউরে শিউরে উঠতে লাগলো।
এরোন খুব কাছে এসেই থামলো। তারপর ওর দুইপাশে হাত রাখলো।
এতে মিহি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দেয়ালের সাথে পুরোপুরি লেপ্টে গেল। পারলে যেন দেয়াল ভেদ করেই ঢুকে যায়।
এরোন ওর অবস্থা দেখে হালকা শব্দ করে হেসে দিল।
মিহি আড়চোখে ওর দিকে একবার তাকালো। ওর অস্থিরতা যেন আরো বাড়লো।
পায়ের আঙুল মুড়ে নিলো ও। আর হাতে শাড়ি খামচে ধরলো।
এরোন হাসির রেশ ধরে রেখেই মোহাচ্ছন্ন কন্ঠে বলল, “এক জায়গায় নিয়ে যাব, যাবা?”
মিহির ঘুরিয়ে রাখা মুখটা প্রশ্নাত্মক হয়ে উঠলো। কিন্তু তাও মুখ ফিরিয়ে তাকালো না।
এরোন মুচকি হেসে বলল, “নাকি ফুলসজ্জা করতে চাও?”
মিহি চমকানো চোখে এরোনের দিকে তাকালো।
এরোন কায়দা করে বলল,”না চাইলে চলো।”
উওরের অপেক্ষা না করেই এরোন মিহির এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় ধরে নিজেই আগে পা বাড়ালো।
আচমকা এভাবে টেনে নেওয়ায় বাধ্য হয়ে মিহিকেও পা মিলাতে হলো।
তবে মিহি বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো, “ক…কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
এরোন উওর দিল না। মিহিকে নিয়ে সরাসরি গাড়িতে বসালো। মিহির অসস্তি তখনো বিদ্যমান। লোকটা কি করতে চাচ্ছে।
এরোন গাড়িতে এসে বসলো আর মিহির দিকে তাকিয়ে ওর কাছে এগিয়ে এলো। সাথে সাথে মিহি ভরকে গিয়ে কিছু একটা বলতে মুখ খুলল।
কিন্তু তার আগেই এরোনের কাছে আসার কারণটা স্পষ্ট হয়ে গেল।
সে মিহির সিটবেল্ট অতি সদর্পণেই বেঁধে দিল।
তারপর মুচকি হেসে সরে এসে নিজের টা বাঁধলো।
এরোন গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মিহি সন্দিহান চোখে ফাঁকে ফাঁকে এরোনের দিকে তাকাতে শুরু করলো। সে ফুরফুরে মেজাজে আছে। কিন্তু মিহির দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কি করতে চাচ্ছে এই ছেলে।
অনেক সময় পর একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামালো এরোন। মিহি সামনের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে কিছুই আন্দাজ করতে পারলো না।
“নামো এসে গেছি।” বলতে বলতে এরোন নেমে পরলো।
এই রাত বিরেতে কোথায় আনলো এটা! প্রশ্ন জাগলো মিহির।
এরোন ততক্ষনে ওর সাইডের দরজাটা খুলে মাথা ঝুঁকালো। আর হাতের ইশারায় নামতে বলল।
মিহি ইতস্তত করতে করতে নেমে দাঁড়ালো।
এরোন মিহির হাত আবার মুঠোয় ধরে নিলো।
মিহি বিব্রতবোধ করলেও কিছু বলার সুযোগ পেলো না। কারণ তার আগেই এরোন সামনের দিকে পা বাড়ালো।
ঢালু পথ বেয়ে নামতে লাগলো ওরা।
এক পর্যায়ে মিহি খানিক দূরেই চাঁদের মৃদুমন্দ আলোতে টলমলে নদীর জল দেখতে পেলো।
‘নদীর কাছে এনেছে! কিন্তু কেনো?’ হালকা ভ্রুকুটি করলো মিহি।
পরক্ষণেই আঁতকে উঠলো, ডুবিয়ে মেরে দেবে না ত? সাঁতার ত জানিনা।
ভয়াতুর দৃষ্টিতে এরোনের দিকে তাকালো মিহি।
“এ..এখানে কেনো আনলেন? আ…আমি বাসায় যাব।”
এরোন ওর কথায় কান দিলো না। বরং হাত ধরেই এগিয়ে যেতে লাগলো নদীর খুব কাছে। এতটুকুতেই মিহির কলিজার পানি শুকিয়ে গেল। ছোটো বেলায় একবার পুকুরের পানিতে পরে রাম শিক্ষা হয়েছিলো ওর। তারপর থেকে এসব পুকুর টুকুর, নদী নালার ধারে কাছেও যায় না ও।
ভয়ে কাচুমাচু হয়ে সে এরোনের ধরে থাকা হাতটা খামচে ধরল। আর দাঁড়িয়ে পরলো।
এরোন থেমে ভ্রুকুটি করে ঘাড় ঘুরালো।
কারণ মিহি ওর সাথে আর না এগিয়ে শুকনো মুখে থম মেরে দাঁড়িয়ে পরেছে। আর সাথে ওর হাতে নখও বসিয়ে দিয়েছে।
“কি সমস্যা?” ভ্রু উঁচু করে নামালো এরোন।
“আ..আমাকে এখানে কেনো এনেছেন।” এরোনের দিকে ভয় জড়িত চোখে তাকিয়ে বলল মিহি।
এরোন মিহির দিক তাকিয়ে থেকে অন্য হাত তুলে বাদিকে ইশারা করলো।
মিহি হাত লক্ষ্য করে আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
“নৌকায় উঠবো আমরা।” বলেই এরোন আবার মিহির হাত ধরে টেনে হাটা শুরু করলো। অতঃপর একটা নৌকার কাছে এলো ওরা।
একটা বয়স্ক লোক ওদের দেখে মিষ্টি হাসি দিলো। তারপর বলল, “আমি তাহলে গেলুম। নাও বাইতি পারবা ত?”
সৌজন্যমূলক হাসি দিল এরোন। বলল,”পারবো না কেন?”
লোকটা হাসিমুখে মাথা নেড়ে চলে গেল।
“চলো, ওঠো।” মিহিকে উদ্দেশ্য করে বলল এরোন।
মিহি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল।
এরোন ওর হাত ধরে ওকে নৌকার কাছে নিয়ে এলো। ও বাধ্য হয়ে গুটিশুটি মেরে এগিয়ে গেল।
এরোন ওর হাত শক্ত করে ধরে ওকে উঠতে সাহায্য করলো। তবে নৌকাতে পা ফেলতেই তা নড়ে উঠলো। এতেই মিহি ঘাবড়ে চোখ মুখ খিচে এরোনের হাত দুহাতে আঁকড়ে ধরলো।
মৃদু হেসে এরোন নৌকায় পা রাখলো। ফলে নৌকা আবার দুলে উঠলো।
আর মিহিও ভয়ে এরোনের হাত আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরল।
“কিছু হবে না কাপকেক। আমি আছি তো।” মায়াবী কণ্ঠে অভয় দিয়ে বলল এরোন।
মিহি হাত আলগা করলো কিন্তু ছাড়লো না। ওর এখনো ভয় করছে।
“চলো ভিতরে চলো।” বলল এরোন।
নৌকাটার মাঝের অংশ ছৈ ঘেরা। সেই ছৈ এর মধ্যেই মিহিকে ধরে ধরে বসালো এরোন। মিহি বাধ্য মেয়ের মত গুটিশুটি মেরে বসলো। সাঁতার না জানার দরুন সে জীবনেও নৌকায় ওঠে নি। তার উপর পানি ভয় পায় ও। তাই কেউ উঠাতে চাইলেও ভয়ে উঠতোই না সে। বলতে গেলে আজই প্রথম।
এরোন নৌকার কর্নারে বসে বৈঠা দিয়ে পাড়ের বিপরীতে নৌকা ঠেলে দিলো।
মুহূর্তেই নৌকা নদীতে ভেসে এলো।
মিহির ভয় হালকা বেড়ে গেল। রীতিমতো ঘাম ছুটে গেল। অভ্যেস নেই যে। এক হাতে ছৈ আঁকড়ে ধরলো ও।
এরোন সরু চোখে মিহির দিকে তাকালো। খেয়াল করেই বুঝলো যে মিহি ভয় পাচ্ছে। একটু আশ্চর্য হলো এরোন।
“ভয় পাও?” সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো এরোন।
মিহি একপলক এরোনের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামালো। ততক্ষণে নৌকা পাড় থেকে বের দূরেই এসে পরেছে।
এরোন বৈঠা রেখে দিলো। তারপর মিহির কাছে এগিয়ে গেল। এতে নৌকা বেশ দুলে উঠলো। মিহি ভয়ে চোখ মুখ বুজে ছৈ আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।
এরোন ওর খুব কাছেই বসলো। তারপর এক হাত ওর কোমড়ের পিছনের গলিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো ওকে।
অন্য সময় হলে মিহি ছিটকে সরে যেত কিন্তু এখন ভয়ে সব ভুলে মাথা নিচু করে ওভাবেই বসে রইলো।
এরোন স্মিত হাসির সাথে ওর নত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।
হালকা বাতাস বারবার মিহির মুখের উপর চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
এরোন হাত বাড়িয়ে সেই চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিলো।
মিহি ওর স্পর্শে হালকা চমকালো। এক কাছাকাছি এসেছে বুঝতে পেরে হালকা সরে যেতে চাইলো।
কিন্তু এরোন আবার কাছে টেনে নিয়ে এলো।
মিহি অবাক হয়ে এরোনের চোখের দিকে তাকালো।
“সব সময় দূরে যেতে চাও কেনো? কাছে থাকতে পারো না?” গম্ভীর মুখে বলল এরোন।
মিহি চোখ গোলগোল করে দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে নিলো।
হঠাৎই নৌকাটাতে মরিচবাতির আলো টিপটিপ করে জ্বলতে শুরু করে দিলো।
মিহি অবাক হয়ে নৌকার ছৈ এর দিকে দেখলো। পুরো ছৈ মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। এতসময় বন্ধ করা ছিল বলে বুঝতেই পারা যায়নি।
এরোন মিহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বিমোহিত কন্ঠে বলল,”কেমন লাগছে আমাদের অন্যরকম ফুলসজ্জা?”
মিহি অপ্রস্তুত হয়ে ঢোক গিলল। ছেলেটা একদম অনেক কাছে চলে এসেছে।
মিহি হাত দিয়ে এরোনকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে নিভু নিভু গলায় বলল, “ছাড়ুন আমায়।”
এরোন মুচকি হেসে অল্প সরে গেল তবে কোমড় থেকে হাত সরালো না।
মিহিও হাত সরানোর জন্য জোর দিলো না। কারণ সে বাজেভাবে ধরেনি। তাছাড়া মিহির ভয়ও করছে।
মিহি সামনের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নিবন্ধ করলো। তবে মাঝে মাঝে আড়চোখে এরোনের দিকেও দেখতে লাগল।
এরোনের দৃষ্টি ওর দিকেই স্থির।
অনেক সময় পর মিহি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এলো।
চাঁদের আলো পরে নদীর টলমলে কালো জল গুলো চিকচিক করছে। সাথে হালকা শীতল বাতাস বইছে। যা শরীর ছুয়ে দিচ্ছে। সবমিলে অদ্ভুত একটা অনূভুতি জাগছে। আজ নৌকায় না চড়লে এই অনূভুতির সাক্ষী হতেই পারত না ও।
অজান্তেই মুখে খুশির আভা এসে পরলো মিহির। সেটা মিহি নিজে না টের পেলেও এরোন টের পেল।
ঘন্টা ঘানিক পর পাড়ে নৌকা ভিরালো এরোন। কারণ রাতের গভীরতার সাথে ঠান্ডাও বাড়ছে। এভাবে কোনো গরম কাপড় ছাড়া থাকলে অবশ্যই ঠান্ডা লেগে যাবে।
এরোন আগে নৌকা থেকে নামলো তারপর মিহিকে ইশারা করে এগিয়ে আসতে বলল।
মিহি ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে এগিয়ে এলো। কিন্তু সমস্যা বেধে গেল নামার আগেই।
শাড়িতে পা জড়িয়ে প্রায় পরেই যাচ্ছিলো ও। তবে ভাগ্য সহায় ছিলো। তাই এরোন ধরে নিয়েছিলো। তবে পরক্ষণেই বেসামাল হয়ে নদীর পাড়ের কাছের অল্প পানিতে পরলো ওরা। শাড়ির বেশ খানিকটা অংশ ভিজে গেল মিহির। অপরপক্ষে এরোনের জিন্সের প্যান্টের কিছুটা ভিজে গেল।
অল্প ভিজলেও বেশ ভালোই ঠান্ডা লাগছে মিহির। থেকে থেকে নিজের দুহাত দিয়ে দুই বাহু ঘষে যাচ্ছে ও। এদিকে ঠোঁটও কাপছে।
এরোন বুঝতে পেরে ওর হাত ধরে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।
খানিক দূরেই বসতি বাড়ি আছে কয়েকটা। সেখানে থেকে কোনো শাড়ি নিয়ে তার বদলে টাকা দিয়ে দেবে ও। কারণ এভাবে ভেজা শরীরে বাসায় ফিরতে গেলে নির্ঘাত ঠান্ডা লাগবে মিহির।
এগিয়ে গিয়ে ওই মাঝিকেই পাওয়া গেল। সে ওদের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বলল, “ভেজলা কেম্নে তোমরা?”
“পরে গেছিলাম। আপনি একটা শাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেন? আমি টাকা দিয়ে দেব।”
“হ হ পারুম পারুম। তোমরা অই চিলেকোঠার গিয়া দাঁড়াও আমি শাড়ি লইয়া আইতাছি।” বলে অতি দ্রুত সামনের দিকে হাটা শুরু করলো সে।
এরোন মিহিকে নিয়ে ছোট ঘরটায় ঢুকলো।
ছোটা একটা হেরিকেন একপাশে জ্বলছে। আর কোনায় মাটিতে পেতে রাখা বিছানা আছে একটা। হয়তো একা থাকে এখানে কেউ।
মিহি এক কোনায় গিয়ে হাতের সাথে হাত ঘষতে লাগলো। ভালোই ঠান্ডা লাগছে ওর।
এরোন ওর অবস্থা দেখে নিজের শার্ট খুলে ফেলল। তারপর পিছন থেকে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলো।
মিহি একপলক তাকালো কিন্তু সাথে সাথেই এরোনের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
এরোন সরে দাঁড়ালো। মিহি শার্টটা গায়ে টেনে জড়িয়ে নিলো।
খানিক বাদেই বাহিরে থেকে সেই মাঝি গলা উঁচু করে বলে উঠলো, “আনছি।”
এরোন বেরিয়ে এলো। মাঝি শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট সবই এনেছে।
এরোন মৃদু হেসে হাতে নিলো। লোকটার বুদ্ধি আছে।
ধন্যবাদ দিয়ে ওগুলো ভিতরে নিয়ে গেল এরোন।
“ধরো।” এরোন সবকিছু বাড়িয়ে দিলো মিহির দিকে।
মিহি হাত বাড়িয়ে সব নিয়ে মাটিতে পাতা বিছানার রাখলো। আর এরোনের শার্টটা খুলে কাঁপা হাতে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো। ভালই শীত করছে ওর।
এরোন শার্টটা নিতে নিতে বলল, আমি বাইরে আছি।
মিহি মাথা নেড়ে পরনের শাড়ির আঁচল কাধে তুলে দিলো। এতে কোমড়ের বেশ খানিক অংশ উম্মুক্ত হয়ে গেল। সে শুকনো শাড়িটা হাতে নিয়ে সেটার ভাজ খুলতে লাগল।
এরোন ঘুরতে গিয়েও আবার থেমে মিহির দিকে তাকালো।
এরোন থেমে গেছে দেখে মিহি সন্দিহান চোখে এরোনের দিকে তাকালো।
তারপর এরোনের দৃষ্টি খেয়াল করে মিহি অপ্রস্তুত হয়ে দ্রুত শাড়ির আঁচল কাধে থেকে নামিয়ে কোমড় ঢেকে নিলো।
তবুও এরোনকে একই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুকনো ঢোক গিলল ও।
হঠাৎ এরোন ওর কাছে এগিয়ে আসতে শুরু করলো। মিহি শিউরে উঠল। আর পিছাতে পিছাতে ভয়ে ভয়ে বলল, “দে..দেখুন। আমি কিন্তু…।”
কথা শেষ হবার আগেই এরোন ওর শাড়ির আঁচল ধরে পুনরায় কাধে উঠিয়ে দিয়ে ওর কোমড়ের দিকে হাত বাড়ালো।
মিহি পীলে চমকে উঠলো। কি করতে চাইছে সে!
এরোন কোমড়ে হাত ছোঁয়ানোর সাথে সাথেই মিহি ঘাবড়ে গিয়ে সজোরে ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
(চলবে…)