#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৩
আমি সবচেয়ে বেশি হয়রান হয়েছিলাম বরের নাম শুনে বর আর কেউ না আব্বারই বন্ধু জসিম কাকা। জসিম কাকার আগের ঘরে এক ছেলে ছিলো আমার থেকে ২ বা ৩ বছরের বড় হবে। আমিও তাকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতাম। তার নাম ছিল রাফান। আম্মার বিয়ের পর কিছুদিন পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল,আমিও নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। হঠাৎ একদিন আমার সাথে কথা বলার ছলে আমার হাতে-পায়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করে আমারই সৎ ভাই। আম্মাকে এই ব্যাপারে বললে আম্মা বলতো এটা আমার ভুল ধারণা। কিন্তু একটা মেয়ে কিছু জানুক আর নাই বা জানুক কোনো ছেলে তাকে কিভাবে দেখছে বা কোন নজরে দেখছে মেয়েটি ঠিকই বুঝবে। এরপর থেকে আমি সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রাখি ঔ লোক থেকে আমাকে দেখলেই কেমন বিশ্রী একটা, তার হাসি দেখে আমার শরীরটা রি রি করে উঠলো। তারপর থেকে আমি নিজেকে তার থেকে গুটিয়ে চলতাম। এভাবে আমি ভয়ে ভয়ে কাটাতাম আমার দিন। একদিন বাসায় কেউ ছিলো না, সে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসলো। হঠাৎ সে আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে। সে আমার যত কাছে আসার চেষ্টা করছিল আমার ভয় তত গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। সে যখনই আমার ওরনায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করে তখনই আমি পাশ থেকে ফুলদানি উঠিয়ে তার মাথায় মেরে দেই। ওর মাথার থেকে রক্ত ঝরছিল, ঐটুকু রক্ত যেনো তার হিংস্রতা কয়েকগুণ বেশি বাড়িয়ে দিয়েছিল। সে তেড়ে আসতে চায় আনার দিকে তখনই দরজা খোলার শব্দ হয়। আমি দেখি আম্মা এসেছে, আম্মাকে দেখে আমি খুশি হয়ে গেছি এখন মনে হয় আমি রক্ষা পাব। আমি তাড়াতাড়ি নিচ থেকে উঠে আম্মার কাছে গেলাম এবং আম্মাকে আমার সাথে হওয়া সব ঘটনা বললাম। কিন্তু পরক্ষণেই আমার আম্মার প্রতি সব আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আম্মা আমার গালে একটা থাপ্পড় মারল। থাপ্পড় জোরটা এতই ছিলো যে আমি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকে নিচে পড়ে গেলাম, আমার ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরছিল আর আমি অবাক দৃষ্টিতে আম্মার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সে নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ আমি আমার গালে ভিজা ভিজা অনুভব করলাম, হাত দিয়ে ছুঁয়ে যখন দেখলাম আমার চোখ দিয়ে পরছে এই জলধারা কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছিলাম না আমার কান্না কী আম্মার থাপ্পড় মারার জন্য আসছিল নাকি আম্মার এরূপ ব্যবহারের জন্য। এই আম্মাকে আমি চিনি না। পাশ দিয়ে রাফানের দিকে তাকিয়ে দেখি সে হাসছিল। এরপর আম্মা রাফানকে ঘর থেকে বের করে আমাকে বেল্ট দিয়ে অনেকক্ষণ মারল। আর এই ও বললো আমি নাকি তার সুখ দেখতে পারি না তাই রাফানের নামে সব মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে বলি। এটাও বলে তোর বাপে কি জীবনে আমাদের এত বড় বাড়িতে থাকতে দিতে পারত, এতো টাকা-পয়সা দিতে পারত এই বলে আমাকে আবার মারা শুরু করে। আমি আম্মার এরূপ দেখে হতবাক হয়ে গেছি এটাই কী আমার সে আম্মা যে আব্বারে ছাড়া ভাত মুখে তুলত না, আমি ব্যাথা পেলে নিজে কান্না করে দিত। এই ঘটনার পর থেকে এরকম মার প্রায় আমার কপালে জুটতো। রাফান আমার নামে মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে আম্মার কাছে হাজার বার নালিশ করত আর আম্মাও তার কথায় বিশ্বাস করে আমাকে মারত। আমার শরীরে এই দাগ এক দিনে হয় নি। এসব অত্যাচার আমার সাথে প্রায়ই হত এক সময় আমার নিয়ম করে মার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়।তারপর…তারপর..। তারপর আমি তাদের অত্যাচার সহ্য করতে পারি না বলে পালিয়ে আসি।
–তারপর কী হয়েছে স্নিগ্ধা? কৌতুহল নিয়ে প্রশ্নটি করলো পরশি। কিন্তু স্নিগ্ধা ভেবে পাচ্ছে না এই প্রশ্নের জবাবে কী বলবে।
–কি..কি..কিছুনা। আমতা আমতা করে বললো স্নিগ্ধা।।
–দেখ স্নিগ্ধা! তুমি কী আমাদের থেকে কিছু লুকচ্ছ? তাহলে বলবো তুমি অনেক বড় ভুল করছ? আমরা তোমার সাহায্য করার যথাসম্ভব চেষ্টা করবো।
এতক্ষণ স্নিগ্ধার কথা মন দিয়ে শুনছিল রুদ্ধ। ওর কথা শেষ হতেই সে উঠে দাড়ালো এবাং পরশিকে উদ্দেশ্য করে বললো-
–আহ!পরশি থাম! ওকে আর এসব কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। এই বলে রুদ্ধ সেখান থেকে চলে গেল।
–তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি। স্নিগ্ধাকে লক্ষ করে কথাটি বলে পরশি। অতঃপর সে ও রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
–ভাই! আমার মনে হয় মেয়েটি কিছু লুকাচ্ছে। ওর চেহেরাী এক্সপ্রেশন তা বলে দিচ্ছে।
–এইসব নিয়ে তোর মাথা ঘামানো দরকার নেই।
–ভাই! মেয়েটির যা অবস্থা আমাদের ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিত না।
–তোর কী আমাকে এতটা অমানুষ বলে মনে হয় আমি ওকে এই অবস্থায় ছেড়ে দিব।
চলবে….