রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ১২+১৩

0
800

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১২,,,১৩
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

চারদিকে সন্ধ্যা নামতে শুরু করছে৷ গাছের ভীরে সন্ধ্যার আলো আসতে পারছে না এই গহীন প্রান্তরে৷ কাব্য ভাইয়া আমার দুই হাতের উপর তার হাত রেখে নি’ষ্পলক তাকিয়ে আছে৷ আমি তার থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি৷ উনি কারণ বলতে পারছেন না৷ কারণ কোনো কারণ নামক জিনিসটা নেই৷ উনি আমার মুখ ঘুরিয়ে তার সামনে এনে আলতো করে হাত রাখে আমার গালের উপর৷ অন্ধকারে তার মুখ আবছা বোঝা যাচ্ছে৷ উনি আদুরে সুরে বললেন,
–‘রাগ করেছিস৷’
আমি জবাব দিলাম না৷ উনি আরেকটু সামনে ঝুকে আমার কঁপালে কিস দিলেন৷ আমি অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে তাকাই৷ হা”র্ট প্রচুর জোরে বি’ট করছে এখন৷ তখন কোনো ফিলিংস ছিলো না কিন্তু এখন….উনি শান্ত কন্ঠে বললেন,
–‘এইটাই শেষ আর লাস্ট,আর মুখ গো”মড়া করে থাকিস না৷ এমন হা”ড়ির মতো মুখ ভার করে থাকলে আমি আবারো সেম কাজ করবো৷’
আমি থমথমে ভাবে বললাম,
–‘আমাকে একা ছেড়ে দিন,ভালো লাগছে না আমার৷’
উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উঠে মাঝির দিকে চলে গেলেন৷ উনি যাওয়ার সাথে সাথেই আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি৷ মুখে হাত চেপে কান্না করছি যাতে উনি বুঝতে না পারেন৷ কেন করছেন উনি আমার সাথে এমন?একবার কাছে টেনে নিচ্ছেন আবার বলছেন চলে যাবে৷ সবকিছু এই গহীন ফরেস্টের মতো অ”ন্ধকার৷ একটু পর একটা জোনাকি পোকা উড়ে আমার সামনে আসতেই কিছুটা অন্ধকার দূর হয় আশেপাশের৷ হয়তো এমন কোনো ভাবেই জীবনের এই অ”ন্ধকারের আলোর আগমণ হবে৷ প্রায় পনেরো মিনিট পরেও উনি আমার কাছে আসলেন না৷ তার না আসাটাও কেমন অভিমানের জন্ম নিচ্ছে৷ কেন আসছেন না উনি?তার কি আমার কষ্ট অনুভব হয় না! এমনি তো সারাদিন জ্বা’লাতে থাকেন৷ নৌকা তার গতিতে এগিয়ে চলেছে৷ মাঝি আর কাব্য ভাইয়ার টুকটাক কথা কানে ভেসে আসছে৷ আর আমি অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছি৷ সব কিছুতে আজ নি”স্তব্ধতা!
_________________________
একটু পর কাব্য ভাইয়া আমার পাশে এসে বসে৷ আমি নি”স্তব্ধ হয়ে অন্ধকারে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি৷ উনিও আমার সাথে পা ভিজিয়ে বসে রইলেন৷ দুইজন একসাইডে বসার ফলে নৌকা এইসাইডে হেলে পানিতে ডুবুডুবু অবস্থা৷ আমি ভয় পেয়ে উনার হাত ধরি৷ উনি আমার হাত ছাড়িয়ে আমার পিছনে গিয়ে আমার পিঠের উপর হেলান দিয়ে বসেন৷
–‘জোঁ”ক ধরবে পায়ে৷’
আমি তখনও চুপ করে বসে আছি৷ উনি আবার বললেন,
–‘আজ রাতে এই রাতারগুলের বুকে থাকলে কেমন হবে রে?’
উনার কথায় এতোক্ষণে আমার হু’শ ফিরলো৷ আমি পা উঠিয়ে অস্থির ভাবে বললাম,
–‘সত্যি থাকবেন?’
–‘কেও একজন আমার সাথে রাগ করে বসে আছে৷ আমি বেচারা একা একা কি এখানে ম”শা মারবো নাকি!’
উনার কথা শুনে রাগ হলেও নিজেকে সামলিয়ে নিলাম৷ ইশ!কতোদিনের ইচ্ছা বে”য়ার গি’লস এর মতো পানির উপর বা জজ্ঞলে রাত কাটাবো৷ ভাবতেই কেমন উপচে পড়া খুশি লাগছে৷ আমি উনার সামনে বসে উৎফুল্ল ভাবে বললাম,
–‘আপনার সাথে আমার রাগ কখনো কমার নয়৷ কারণ আপনি মানুষটাই এমন এমন কাজ করেন যাতে যে কেও রেগে যাবে৷ কিন্তু আমি..
বলেই হাফ ছাড়লাম! সত্যি উনি যা যা করে চলেছেন এতে আমার রেগে থাকার কথা৷ কিন্তু ওই একটা কিন্তুর মাঝে সব আটকে যায়৷ আমি চাইলে রেগে থাকতে পারছি না কেন?
–‘তোকে রাগতে দেখলে আমার আবার রা’গাতে ইচ্ছা হয়৷ তাই মেরি বেহেন, প্লিজ আমার মু’ডের বারোটা বাজিয়ে দিস না৷’
–‘ভাই…
–‘থা”প্পর মারবো কিন্তু!’
–‘ভাইয়ায়া…
–‘তোর ভাই লাগি আমি?ভাই ভাই করে ম’রছিস যে!’
উনাকে রাগতে দেখে এইবার আমার শান্তি লাগছে৷ আগের সবকিছু ভুলে তাকে রাগাতে পেরে বিশ্ব জয়ের হাসি হাসলাম৷ আমি আবার সুর টেনে বললাম,
–‘ভাইয়ায়া…আপনি যদি সত্যিই এইখানে রাত থাকেন তাহলে আমি আপনাকে…
উনি ভ্রুকুটি করে বললেন,
–‘কি আমাকে?’
–‘আপনাকে…
–‘চুমু দিবি বুঝি?’
মূহুর্তেই আমি চুপসে যাই৷ তার মতো অস’ভ্য আদেও স’ভ্য হতে পারে না এইটা আমি কি করে বারবার ভুলে যাই?আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ন..না বউ খুজে দিবো৷’
উনি হেসে উঠলেন৷ হাসতে হাসতে বললেন,
–‘তোর মতো মাথা মো’টা আর কি’ই বা কর‍তে পারবে! তোর বাপ আর আমার বাপ আছে আমাকে সরানোর ধা”ন্ধায় আর তুই আছিস বউ খোজার বা”হানায়৷’
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম৷ উনায় জিজ্ঞেস করতেই কথা এড়িয়ে গেলেন উনি৷ তারপর মাঝিকে ডেকে বললেন নৌকা ঘুরাতে৷ উনি আবার আমার পিছনে বসে চোখ আটকে ধরলেন৷ তার এহেন কাজে আমি ভয় পেয়ে যাই৷ উনি আমার কানের কাছে এসে বলেন,
–‘হুশ!এতো কাঁ”পা’কাঁ’পির কি আছে৷ রি’লা’ক্স আমি আছি তো৷’
উনার একটা কথায় আমার মনে মাঝে শীতলতা বয়ে গেলো৷ ‘ আমি আছি তো ‘ কথাটার মাঝে অদ্ভুত এক হৃদয় কাঁ’পানো টান আছে৷ সব কিছুর জন্য না হলেও তার ‘ আমি আছি তো ‘ কথাটার জন্য আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে ভালোলাগার স্রোত বইতে লাগলো৷ মনে মনে আওড়ালাম, “সে মানুষটা অন্য,কিন্তু দেখা যায় আরেকটা৷ যদি কোনো রহ’স্যময় মানুষ আমার দেখা কেও থেকে থাকে সেটা হচ্ছে কাব্য নামক মানুষটা৷ তার বাইরে রৌদ্দুরের মতো তে’জ আছে কিন্তু বাইরে হালকা বৃষ্টি৷ হু,তার ডায়েরির রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টির মতো৷ কিন্তু প্রেমটা কোথায়?’

চারদিকে ঝি ঝি পো”কার ডাক৷ প্যাঁ”চা ডেকে চলেছে থেকে থেকে৷ জোনাকির আলোয় রাতারগুলকে অন্য ভাবে সৃষ্টি করলাম আমি৷ উফ!গাছের উপর মনে হচ্ছে কেও ছোট ছোট লাইট লাগিয়ে সাজিয়ে রেখেছে৷ এতো সুন্দর বুঝি হয়? সব গাছের ফাঁকে ফাঁকে জোনাকির মেলা৷ সবুজ পানির উপর জোনাকির আলো প্রতিফলিত হচ্ছে৷ সব কিছু হলুদ আর সবুজ মিশ্রিত সপ্ন লাগছে আমার কাছে৷ আমার চোখ খুলে দেওয়ার পরেই এতো সুন্দর একটা পরিবেশ দেখতে পাবো ভাবতেই পারি নি৷
–‘এই পরিবেশ দেখানোর জন্য রাতে আসা৷ সবার চোখে দিনের রাতারগুল ভালো লাগলেও আমার কাছে জোনাকি ভরা রাতারগুল সবচেয়ে বেস্ট লাগে৷’
–‘সত্যি অনেক সুন্দর৷আলোর মেলা! আমার দেখা বেস্ট একটা জিনিসের মধ্যে এইটা একটা৷ ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর জিনিস উপভোগ করানোর জন্য৷’
উনি কোনো উত্তর না দিয়ে বসে আছেন৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে আবার সব কিছু দেখতে ব্যস্ত৷

_________________________
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ১২ঃ৩৪ মিনিট৷ এতো রাতেও আমরা এখনো পানির উপর আছি৷ কাব্য ভাইয়া তার ব্যাগ থেকে কাপ নুডলস বের করে রেখেছেন৷ এতোক্ষণ খিদে না লাগলেও এখন প্রচুর পরিমাণে খিদে পেয়েছে৷ মাঝি আমাদের রেখেই তার নৌকার মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ তাকে কাব্য ভাইয়া কি বলে রাজি করিয়েছেন রাত থাকার জন্য সেই ভালো জানে৷ উনার পক্ষে সব সম্ভব৷ আমার সামনে নুডলসের কাপ ধরতেই আমি খাবো না বলে মুখ ঘুরিয়ে নেই৷ খিদে পেলেও রা’গ মেটে নি এখনো৷ উনি আমার সামনে আবার নুডলস ধরে ঠান্ডা ভাবে বললেন,
–‘বেশি ভাব না করে খেয়ে নে,আমি এতো জোর কাওকে করতে পারবো না৷ আর বেশি ভাব করলে তোকে রাতের আঁধারে এখানে ফেলে চলে যাবো৷’
আমি উনার দিকে তাকিয়ে নুডলসের কাপ টা ধরে অনুরোধ করে বললাম,
–‘সেদিনের গানটা গেয়ে শুনাবেন আপনি? এমন একটা মূহুর্তে আপনার গান খুব মিস করছি আমি৷’
উনি নিজের নুডলসে ফ্ল্যাক্স থেকে গরম পানি ঢেলে বললেন,’ আর আমাকে?’
আমি নুডলস মুখে দিয়েও থেমে গেলাম৷ আমার সামনে বসে আছেন উনি আর মিস করার প্রশ্ন করছেন৷ উনি আমার হা করে থাকা মুখে নিজের জন্য উঠানো নুডলস আমার মুখে দিয়ে বললেন,,
–‘তোকে আমি আজ অনেক কিছু বলবো! আমার সবটা বলবো যে গুলো আমার যাওয়ার আগে তোর জানা দরকার৷ আর এই একটা কারণে আমার তোকে একা লাগতো৷ নি”স্তব্ধ ভাবে লাগতো! তোর কাছে না বলতে পারলে আমার গিয়েও লাভ নেই৷’
আমি উনার কথা শুনে তাকিয়ে আছি৷ কি বলবো উত্তর খুজে পেলাম না৷ তবে আজ কিছু জানবো৷ হয়তো আজ রাতের পরে ভোরের আলোটাই আমার অজানা অন্ধকার কাটবে৷ কিন্তু সত্যি কি কাটবে!
উনি আমার হাত ধরে হাতের পিঠে উষ্ণ পরশ দিলেন৷ উনার এই কাজটায় আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে শ্বা”স আটকে আসার উপক্রম হলো৷ উনি আমার দিকে তাকিয়ে আবারও তার সেই অমা”য়িক হাসিটা হাসলেন৷ তবে সেই হাসি তে প্রা’ণ নেই কেন আজ?
চলবে…
(এক ছিলো কাব্য আরেক ছিলো নীতু৷ তাদের ছিলো না কোনো ঝ”গড়া তারা ছিলো সুখী এই ছিলো কাহিনী৷ শেষ গল্প! আল্লাহ কাব্যকে দূরে দিয়ো না যাও দিলাম না দূরে৷ কাহিনী শেষ৷)

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৩
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

কাব্য ভাইয়া আমার হাত তার বুকের বা পাশে ধরে রেখেছে৷ তার হা”র্ট নামক য”ন্ত্রটা ধুকপুক করছে তীব্র ভাবে৷ জোনাকির আলোয় তার মুখটা কেমন অন্যধরনের লাগছে আজ৷ আমি নিজের শ্বাস আটকে বসে আছি৷ কেমন অন্যধরণের অস্বস্তি হচ্ছে৷ নৌকা বাতাসের ঝাপটায় দুলছে থেকে থেকে৷ তার সাথে আমার মন!তার ভেতরে আজ কাব্য ভাইয়া নামক মানুষটা অনুভব করতে পারছি না৷ এক অন্য পুরুষ৷ যাকে সব মেয়ে চায়৷ তার ভালোবাসায় সিক্ত হতে৷ আমার হাত এখনো উনার বুকের বা পাশে৷ উনি কাঁপা কন্ঠে বললেন,
–‘কিছু শুনতে পাচ্ছিস নীতু!’
আমি উনার দিকে মুখ তুলে তাকালাম৷ হাত উঠিয়ে নেওয়ার জন্য টান দিতেই উনি শক্ত করে ধরে রাখেন৷ আমি অস’হায় ভাবে উত্তর দেই, ‘ আপনার হৃ”দ’পি’ণ্ড লাফাচ্ছে কাব্য ভাই!অনেক জোরে আর সেটার ক”ম্পন আমার হৃ”দ’পি’ন্ড কে অস্থির করে তুলছে৷ কেন বলুন তো?’
উনি মুচকি হাসলেন৷ আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে জোরে শ্বাস নিলেন৷ তার সব কিছুতে আজ অজানা অচেনা গ”ন্ধ৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘কিছু বলতে চাইছিলেন কাব্য ভাই,আমার যে আর অপেক্ষা ভালো লাগছে না৷ ‘
উনি আকাশের দিকে তাকালেন৷ সেই দিকে আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ভরা পূর্ণিমা দেখেছিস কখনো?’
আমি উত্তর দিলাম না৷ চুপ করে রইলাম৷ উনি আবার বললেন,
–‘আমার জীবনটা ভরা পূর্ণিমার মতো হলেও আমা”ব’স্যা’র কালো অন্ধকারে ঢাকা৷ আমি যা চাই সেটা কখনো পাই না৷ এইটা আমার নিয়তি না প্রকৃতির খেলা সেটা বুঝে উঠতে পারি না৷’
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ আমি শান্ত স্বরে বললাম, ‘ আমি এতোশত বুঝতে পারছি না৷’
উনি আবার আমার দিকে তাকালেন৷ করুণ দৃষ্টিতে!
–‘রাই নামক মেয়েটাকে একটা সময় ভালো লাগতো আমার জানিস?’
–‘ভালোবাসতেন তাকে!’
উনি হা হা করে হাসলেন আমার কথা শুনে৷ বিরক্ত লাগছে এখন৷ আমি বুঝি মজার কথা বলেছি?
–‘উহু,আ’বেগ ছিলো সে!’
–‘তাহলে এতো উতলা ছিলেন কেন তার জন্য?’
–‘কখনোই না!আমি আমার ইমো”শন ক”ন্ট্রো’ল করতে পারি৷ তাকে জাস্ট আমার ভালো লাগতো৷’
–‘তবে বিয়ে?’
উনি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালেন৷ ভুল বললাম কিছু?কিন্তু ফুঁপি তো সেটাই বলেছিলো৷
–‘আমি কোনো কালেই তাকে বিয়ে করতে চাই নি তবে তার মায়ায় পড়ে আম্মুকে বলেছিলাম৷ যাতে তাকে আঁ”কড়ে রাখতে পারি৷’
আঁকড়ে রাখতে পারি কথাটা আমার বুকে বিঁ”ধলো৷ কষ্ট হলো!কেন হলো জানি না৷ তবে উনি কেন তাকে আঁকড়ে রাখবে এইটা মেনে নিতে পারলাম না৷ আমি উল্টো আর প্রশ্ন করলাম না৷ সে আজ সব বলবে!আমি না জানতে চাইলেও বললে৷ এইজন্য তার সব কথা শোনার জন্য বসে রইলাম৷ উনি আবার উ”দাসীন ভাবে বললেন,
–‘ রাই’য়ের চলে যাওয়াটা আমার জন্য ভালো ছিলো না খারাপ সেটা আমি বুঝি নি কোনোদিন তবে সেদিন যখন আম্মু বললো তোর বিয়ে নিজেকে কেমন শূন্য মনে হলো৷ তবে তোকে হারানোর না৷ তুই যখন আমার পিছু পিছু কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য কান্না করতি সেই জিনিস টার শূন্যতা৷ আবার তুই যখন রাগ করে বসে থাকতি আমার সাথে সেই জিনিসটার শূন্যতা৷’
আবার চুপ করে গেলেন উনি৷ আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি৷
–‘আমার শূন্যতা অনুভব করতেন না?’
উনি হুট করে ধ”মক দিলেন৷ আমি থতমত খেয়ে যাই৷ ধ”মকের জন্য পাশে থাকা গাছ থেকে একটা পাখি কিচকিচ শব্দ করে উঠলো৷ পাখিরা উনার ধ”মকে আমার চেয়ে বেশি বিরক্ত হয়েছে বোধহয়৷ উনি আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললেন,
–‘হুশ,আজ আমি বলবো তুই শুনবি৷ একটা প্রশ্নও করবি না৷ তোর প্রশ্নে আমার মু”ড চেঞ্জ হলে আর একটাও আন্সার দিবো না৷’
আমি দুদিকে মাথা দোলালাম৷ উনি তার আঙুল উঠিয়ে নিয়ে বললেন,
–‘আমির তার কোম্পানিতে লস খাওয়ার জন্য চো”রা’চা”লানের কে”স দিয়েছিলো মামুর নামে৷ আর পু”লিশ যাচাই-বাছাই না করেই মামুর কোম্পানির নামে হাই’কো’র্টে আপিল করে৷ এইসব কিছু মামু আমি আর তোর আঙ্কেল ছাড়া কেও জানে না৷ ইভেন আম্মুও না৷ আমির তোদের বাসায় আসার পর তোকে দেখে মামুকে অফার করে তোর সাথে তার বিয়ে দিলে সে মি’থ্যা কে”স উঠিয়ে নিবে৷ মামু রাজি হয় কারণ সব প্র’মাণ তার বি”রুদ্ধে৷’
এইসব কিছু আমার অজানা৷ আব্বুর কোম্পানির সম্পর্কে বিন্দু মাএ ধারণা আমার নেই৷ আব্বুকে এইজন্যই অ’স্থির দেখাতো৷ ইশ!আমি মেয়ে হয়েও বুঝতে পারি নি৷
–‘তোর বিয়ের আগের দিন মামু আমাকে ডেকেছিলো যাতে তোকে দূরে কোথাও নিয়ে যাই৷ কারণ সে এতো জলদি আর ওই আমিরের সাথে তোর বিয়ে দিতে চায় নি। সেদিন আমি তাকে বলেছিলাম আমার আর তোর বিয়ের রেজি’ষ্ট্রি আগেই হয়ে গেছে৷ মামু শুনে স্ত’ব্ধ হয়ে বসে ছিলো৷ আমি নিজেও জানি না কেন মি’থ্যা বলেছিলাম৷ শুধু মনে হয়েছিলো এইটা বলা উচিৎ!’
–তাই বলে মি’থ্যা…আর এমনিতেও আব্বু আপনাকে আমায় নিয়ে যেতেই বলেছিলো তাহলে মি’থ্যা কেন?’
–‘আবার?’
উনার রাগ মাখা ধ’মক শুনে সাইলেন্ট হয়ে যাই আমি৷ আল্লাহ! এ কেমন মানুষ কিছু বলতেও দেয় না শুনতেও না৷ উনি আমার হাত ছেড়ে নৌকার পা’টা’তনে শুয়ে পড়লেন৷ শুয়ে আবারও আমার হাত তার বুকের উপর রাখলেন৷ আমি গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম৷ এই মানুষ টা নিজে কি চায় সে নিজেই জানে না৷ উনি চোখ বন্ধ করে বললেন,
–‘মামু আব্বুকে ফোন দিয়ে আমার বলা কথা বলে!সেদিন যদি “আমিরের “ভে’জা’ল না থাকতো তবে সবাই এতো সহজে সব মেনে নিতো না।
আর বিয়ের আসরে বাচ্চার কথা বলেছিলাম কারণ “আমিরকে” বিশ্বাস করানো আর তোর বাপকে একটু টে”নশনে ফেলার জন্য বলেছিলাম৷ মোট কথা,আমার আর তোর হি’ট”লার বাপ যদি আমার কথা মেনে নিতো তাহলে এতো ঝা’মেলা হতোই না৷ ‘
আমি আবার ভয়ে ভয়ে বললাম,
–‘আপনার কথা মানে?’
মনে মনে ধ’মক খাওয়ার অপেক্ষা করতেই উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে শান্তভাবে বলেন,
–‘ তুই আমার বউ আর তোর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে৷ তারা মানতে না’রাজ কারণ তোর ভবিষ্যতে ইফেক্ট ফেলবে এর জন্য৷ তাই আমি একটু আগ বাড়িয়ে কাজ টা করেই ফেললাম যাতে তোর ভবিষ্যতে ইফেক্ট না পড়ে৷ এতে আমার শর্ত পালন করা হবে আর তোর ভবিষ্যৎ প্লাস “আমিরের “ঝা’মেলাও মিটবে৷’
আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি,ঝা’মেলার মূল কারণ আমির নামক মানুষ৷ একে পেলে আমি মাটিতে পুঁ’তে রাখবো। কাব্য ভাইয়া তার মুখে আবার সেই হাসি ফুঁটিয়ে গুণগুণ করে গেয়ে চলেছেন,

‘আমার বৃষ্টি ভেজা এই রাতের আঁধার,
হবে তোমার আর আমার৷’
‘বৃষ্টিরা লিখবে নাম তোমার নামে,
নামবে এই প্রান্তরে,,,,
রৌদ্দুরের আলোতে!’

_________________________
সবুজের সমারোহ ছেড়ে এসেছি ভোরের দিকে৷ ভোরের আলোতে রাতারগুলকে আরো সুন্দর লাগে৷ কাব্য ভাইয়া আমার হাত ধরে হেটে চলেছেন৷ সামনে সিএনজি পেতেই উঠে বসেন৷ আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ উনি ভ্রুকুটি করে বললেন,
–‘এইখানে কি সারাজীবন থাকার আশা আছে নাকি তোর?’
–‘বাসায় ফিরবেন না?’
–‘দুইদিন শেষ হয়েছে?’
–‘আপনি যা বলতে নিয়ে এসেছিলেন তা তো শেষ,আমার আর কিছু জানার নেই৷’
উনি আমাকে টান মেরে সিএনজি তে উঠেলেন৷ ড্রাইভার কে বললেন, ‘মামা বিছানাকান্দি চলো,যা ভাড়া লাগবে আমি দিয়ে দিবো৷’
সিএনজি চলতে শুরু করতেই উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে বললেন,
–‘তোর শোনা শেষ হতে পারে বাট আমার ঘুরাঘুরি শেষ হয় নি৷’
আমি বিরক্তির সুরে বললাম,
–‘আমি বাসায় যাবো কাব্য ভাইয়া!আমার ভালো লাগছে না এইসব আর৷’
উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন৷ আমি অন্যদিকে ঘুরে গেলাম৷ আমার একা থাকা দরকার এখন৷
–‘ আমায় কবে বুঝতে পারবি নীতু? ‘
আমি মুখ ঘুরিয়ে রেখেই জবাব দিলাম,
–‘ বোঝার কিছু এখানে আছে?আপনারা আমার জীবন নিয়ে খেলছেন সবাই৷ আমার কোনো জোর নেই নিজের উপর সব আপনাদের জোর৷ কেন! কেন?বলতে পারবেন? ‘
–‘ মামা সিএনজি থামান৷ ‘
সিএনজি থামতেই উনি নেমে ভাড়া মিটালেন৷ আমার কোনো দ্রু’ক্ষে’প নেই সেইদিকে৷ উনি আবারও আমার হাত ধরে টেনে নামালেন৷ আমি চুপ করেই উনার সাথে যাচ্ছি৷ এখন আমার রিফ্রেশ”মেন্টের দরকার৷ আমি শান্তির স্থান খুজছি আর সেইটা একা!
_______________________
চারদিকে থমথমে পরিবেশ৷ ড্রয়িং রুমে সবার নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ হচ্ছে না৷ আমি সোফায় চুপ মেরে বসে আছি৷ আর জিনিয়া আমার পাশে৷ ও আমার সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে৷ আমিও ওর ভয় দূর করার চেষ্টা করছি না৷ সব কিছুতে অস’হ্য লাগছে৷ পিন’প’তন নীরবতা ভেঙে আঙ্কেল বললেন,
–‘তুই আর নীতু একসাথে ঘুরতে গিয়েছিলে? ‘
কাব্য ভাইয়া মোবাইল চালাতে চালাতে ভ’ণিতা না করে জবাব দিলেন,
–‘হ্যাঁ, গিয়েছিলাম৷ ‘
আমি ভয়ার্ত চোখে তাকালাম তার দিকে৷ ধরা পড়ে যাওয়ার জন্য এতো বাহানা করলেন আর এখন নিজে সত্যিটা বলে দিলেন৷ ফুঁপা মোবাইল কেড়ে নিলেন৷ রেগে বললেন,
–‘ তুই কি সব ভুলে গেছিস কাব্য? ‘
উনি উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে যেতে বললেন,
–‘ না ভুলি নি! আর ভুলবো না৷ নীতু মোবাইল নিয়ে আমার ঘরে আসবি জলদি তা না হলে….
ফুঁপাও উঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বললেন,
–‘ দিনে দিনে চরম ফা”জিল হয়ে যাচ্ছিস তুই৷ ও না গেলে কি করবি তুই? ‘
জিনিয়া ভয় পেয়ে নিজের ঘরে চলে গেছে৷ ফুঁপি ফুঁপাকে ঠান্ডা হতে বলল৷ আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করলেন তার ঘরে যেতে৷ আমি অলস ভাবে উঠে দাঁড়ালাম৷ আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তার ঘরে যাওয়ার৷ সকাল বেলা আমরা একসাথে ফিরতেই সবাই বুঝে গিয়েছিলো আমরা একসাথে কোথাও গিয়েছিলাম৷ দীর্ঘশ্বাস টেনে উনার মোবাইল উঠিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম৷ রুমে যেতেই দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার৷ দু বার ডেকেও সাড়া না পেয়ে ফিরে আসতে গেলেই কেও আমাকে টেনে দেয়ালের সাথে চেঁ’পে ধরে…..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here