রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ১

0
1937

কবুল বলার ঠিক একটু আগে কোথা থেকে কাব্য ভাইয়া পাগলের মতো দৌড়ে এসে বিয়ের ভরা আসরে আমার সামনে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
–‘তুই আমার অনাগত বাচ্চার মা হয়ে কিভাবে পারলি বিয়ের আসরে বসতে?’
সবাই কাব্য ভাই আর আমার মুখের উপর তাকিয়ে আছে৷ বিষ্ময়ে আমার মুখ হা হয়ে গিয়েছে৷ পাশে থেকে বাবা অবাক হয়ে কাব্য ভাইয়ার কাছে এসে নিচু স্বরে বলল,
–‘মানে,কি বলছিস কাব্য?’
–‘নীতু আমার বিয়ে করা বউ সাথে আমার অনাগত বাচ্চার মা৷’
কাব্য ভাইয়ের সোজাসাপ্টা কথা শুনে বাবা আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–‘নীতু কাব্য যা বলছে তা সত্যি?’
বাবার কথায় মুখ তুলে কিছু বলবো সেই সাহস যোগাতে পারলাম না৷ লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে৷ কাব্য ভাই এতো বড় একটা মিথ্যা কথা কিভাবে বলতে পারলো৷ সে কি জানে না!তার এই কথার জন্য আমার বিয়েটা ভেংগে যাবে৷ কাব্য ভাই আমার সামনে এসে হাত ধরে উঠিয়ে বাবার সামনে নিয়ে বলল,
–‘ও কি বললে মামু,বলবে তো এই রিপোর্ট!’
আমার হাত ছেড়ে ফাইল থেকে রিপোর্ট বের করে বাবার হাতে দিয়ে মুখে লাজুক হাসি টেনে বলল,
–‘দেখো মামু তুমি নানাভাই হতে চলেছো!আর আমি বাবা৷’
বাবা রিপোর্ট দেখে সবার সামনে ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দিলো আমার গালে৷ আমি গালে হাত দিয়ে কান্না করে বললাম,
–‘বাবা,কাব্য ভাইয়া মিথ্যা কথা বলছেন! সত্যিই আমি কিছু জানি না৷ উনি মিথ্যা বলছে বিশ্বাস করো আমার কথা৷’
কাব্য ভাইয়া জিনিয়াকে ডেকে বলল,
–‘এই জিনিয়া আমি কি মিথ্যা বলছি? তুই তো আমাদের বিয়ের সাক্ষী৷’
জিনিয়া দুদিকে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলতেই আমি ওর দিকে রাগী চোখে তাকালাম৷ আমার বাবা আর কারো কথা না বিশ্বাস করলেও তার ছোট মেয়ের কথা অনায়াসে বিশ্বাস করে নিবে৷ মনে মনে আরেকটা চড় খাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই বাবা গম্ভীর মুখে বলল,
–‘আমি আর কিছু শুনতে চাই না৷ এই মূহুর্তে এই মেয়েকে নিয়ে আমার সামনে থেকে তুই চলে যাবি কাব্য৷ আজ থেকে আমার একটাই মেয়ে আর সেটা হচ্ছে জিনিয়া৷’
আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বললাম,’আপনার সাথে আমার কবে বিয়ে হয়েছে কাব্য ভাই?আর এই ভুয়া রিপোর্ট এনে সবার সামনে মিথ্যা বলছেন কেন?’
বাবা আর কাব্য ভাইয়াকে আমি জমের মতো ভয় পাই৷ আর আজ দুজন মানুষের সাথেই লড়তে হবে তাও কাব্য ভাইয়ার মিথ্যা নিয়ে৷ ভয়ে ভয়ে কাব্য ভাইয়া আর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে আবারও বললাম,
–‘প্রমাণ দিন কাব্য ভাই৷’
কাব্য ভাইয়া আবারও ফাইল থেকে কাগজ বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল,
–‘ছয় মাস আগে নিজে জোর করে আমাকে বিয়ে করে এখন প্রমাণ চাচ্ছিস নীতু?’
কাবিনের কাগজ যেখানে বড় বড় করে কনের জায়গায় “আফরা হুমায়রা নিতু”নামটা জ্বল জ্বল করছে আর সাইন টা আমার দেওয়া কিন্তু আমি তো এমন কোনো কাগজে সাইন করি নি৷আর বরের জায়গায় “কাব্য মেহরাজ”৷বাবা আমার কাছে থেকে পেপার টা নিয়ে চিল্লিয়ে বলল,
–‘আমার মান সম্মান আর কিছু ধুলোয় মিশানোর বাকি আছে তোর?এখুনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা৷’
যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছিলো সে বাবাকে অনেক কিছু বলে বরযাএী সহ রাগে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আমার সামনে এসে শাসিয়ে বলল,
–‘এইভাবে বিয়ের ভরা আসরে অপমান না করলেও পারতে নীতু তোমার এই অপমানের শোধ আমি নেব৷’
–‘শোধ নিন আর না নিন!আমার বউ আর অনাগত বাচ্চাকে নিয়ে আমায় যেতে দিন৷’ কাব্য ভাইয়ের গা জ্বালানো কথা শুনে “আমির” রেগে বেড়িয়ে যায়৷ কাব্য ভাই আমার হাত ধরে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে আসে৷
__________________________
গাড়িতে বসে কান্না করে যাচ্ছি আমি৷ আর কাব্য ভাই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন৷ আমার জীবন তচনচ করে দিয়ে আবার গানও শুনছেন তিনি৷ আমি যে পাশে বসে আছি এইদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷ আমি জোরে জোরে কান্না করতে করতে বললাম,

–‘আপনি এতো বড় মিথ্যা না বললেও পারতেন কাব্য ভাই৷ আপনার জন্য আজ বাবা সবার কাছে অপমানিত হয়েছে৷ আমাকে সবাই নিচু চোখে দেখছে৷ আপনি এমন মিথ্যা কেন বললেন৷ আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?’

কাব্য ভাইয়া গানের সাউন্ড আরো বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
–‘কিছু কি বলছিস তুই?আরো জোরে বল, আমি শুনতে পাচ্ছি না৷’

তার এমন আচরণ দেখে রেগে গান বন্ধ করে চিল্লিয়ে বললাম,
–‘আপনার কোনো কমনসেন্স আছে?আপনি এমনটা কেন করলেন৷ বাবার চোখে আমায় অপরাধী বানিয়ে দিয়ে এখন ফাজলামি করছেন আমার সাথে? আপনি আমার জীবন টা শেষ করে দিয়েছেন৷’

কাব্য ভাইয়া উত্তর না দিয়ে জোরে ব্রেক করলেন৷ সাহস নিয়ে কথা বলার পর এখন তার দিকে মুখ তুলে তাকাতে সাহস হচ্ছে না আমার৷ অনেকক্ষণ তার সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি সে গাড়িতে নেই৷ আশেপাশের তাকাতে দেখি তাদের বাসায় এসে পড়েছি৷ আর সে বাড়ির ভেতর ঢুকছে৷ পিছন ফিরে আমার উদ্দেশ্য বললেন,

–‘বাড়িতে ঢুকতে চাইলে গাড়ি থেকে নেম আয়৷ আর যদি গাড়িতে থাকতে চাস তাহলে গাড়ির লক টা আটকে দিস ভালো মতো৷ বলা তো যায় না চোর টোর এসে তোকে সহ আমার গাড়ি নিয়ে যাবে৷ তোকে নিলে কোনো সমস্যা নেই৷ তবে এইটা আব্বুর গাড়ি বুঝিস’ই তো এতো দামী গাড়ি চুরি হলে আমার বাপ নিশ্চয় হার্ট অ্যাটাক করবে৷’

তার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি নিজে উনার সাথে জোর করে এসেছি৷ ইচ্ছা হচ্ছে কিছু একটা দিয়ে উনার মাথা ফাটিয়ে দিই৷গা ছাড়া ভাব করছে এখন এতো বড় মিথ্যা বলে৷ আমি জোরে গাড়ির দরজা ধাক্কা মেরে খুলে নেমে পড়ি৷ উনি এতোক্ষণে গেটের কাছে পৌছে গিয়েছেন৷ আমি উনার পাশে দাড়াতেই কলিং বেল চাপলেন উনি৷ কিছুক্ষণ দাড়াতেই দরজা খুলে দিতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি………..

চলবে……..

( আপনারা অবশ্যই বলবেন কেমন হয়েছে৷ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
সূচনা_পর্ব
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here