রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ২ +৩

0
1113

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্ট:২,,৩
রুবাইদা_হৃদি(Sheikh ridy rahman)

–‘আম্মু তোমার বউমা আর অনাগত নাতি নাতনি কে নিয়ে এসেছি।’
কাব্য ভাইয়ের কথা শুনে ফুপি তার গালে একটা চ’ড় লাগিয়ে দিলেন। কাব্য ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সে গালে হাত দিয়ে ফুপির দিকে তাকিয়ে আছে। ফুপি রেগে বললেন,
–‘তোর সাহস কি করে হয় আমাকে আগে না জানানোর?ফা’জিল ছেলে যা ইচ্ছা তাই করিস তুই৷ আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা এখুনি৷’
কাব্য ভাইয়া ফুপির হাত ধরে ইনোসেন্ট ভাবে বললেন,
–‘আম্মু সিরিয়াসলি বলছি,আমার কোনো দো’ষ নেই৷ প্লিজ ক্ষমা করে দাও৷’
ফুপি আমার দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকাতে আমি তার পাশে গিয়ে বলি,
–‘ফুপি বিশ্বাস করো! তোমার ছেলে মি…..
–‘হ্যাঁ!হ্যাঁ আম্মু সবাইকে মিষ্টি পাঠিয়ে দিবে তুই চিন্তা করিস না৷ আম্মু ওকে রুমে নিয়ে যাও ওর অনেক ক্ষিদে পেয়েছে গাড়িতে বললো৷’
কাব্য ভাই আমার কথার মাঝে থামিয়ে সুন্দর করে আরো মি’থ্যা বলে দিলো৷ ফুপিও তার ছেলের কথা শুনে মহা আনন্দে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলো৷ সবাই কাব্য ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করছে কি করে?কেও আমার কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেছেই না৷ শাড়ি আর গয়নার ভারে আমার অবস্থা নাজেহাল৷ ফুপি আমাকে একগাদা কুর্তি আর সালোয়ার কামিজ দিয়ে ফ্রেশ হতে বলে চলে গেলেন৷ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই সব গুলো কাপড় আমাকে বাবা নিজে বিয়ের আগে কিনে দিয়েছিলো৷ আজ পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা আমার সাথেই ঘটছে মনে হচ্ছে৷
কাব্য ভাইয়ের পাশের রুমে আমাকে ফুপি রেখে গেছে৷ বিয়ের আগে এই বাসায় বেড়াতে আসলে এই রুমটা আমার জন্য বরাদ্দ থাকতো। বেডের সাইডে টেবিলে তাকিয়ে আমি আবারো অবাক হয়ে যাই৷ সেখানে আমার অনার্সের সমস্ত বই৷ বই গুলো আমি আমার বাড়ির টেবিলে রেখে দিয়েছিলাম বিয়ের পর নিয়ে যাবো বলে৷ নিশ্চয়ই আমি সপ্ন দেখছি৷ নিজের হাতে নিজেই চিমটি কেটে পরখ করতেই ব্যা’থায় কুকড়ে উঠলাম৷ হাত পা ছড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদার তীব্র ইচ্ছা হতেই ডাইনিং রুম থেকে ফুপি আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকছে শুনতে পেলাম৷
বাড়িতে আজ ফুপি কাব্য ভাইয়া আর আমি ছাড়া কেও নেই৷ আঙ্কেল ব্যাবসার কাজে ঢাকা গিয়েছে আর কবিতা আপু শশুর বাড়ি৷ কাব্য ভাই আমার সামনে বসে আরামসে গ’রুর হা’ড় চিবোচ্ছে৷ ডাইনিং টেবিলে আমি নামক একটা মানুষ আছে সে দিকে তার কোনো দ্রুক্ষেপ নেই৷ ফুপি আমার পাশে বসে খাচ্ছে আর গল্প করছে৷ তাদের কারো কোনো হেলদোল নেই এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো৷ আমি ইচ্ছা করে পানির গ্লাস জোরে রাখতে কাব্য ভাইয়া একবার তাকিয়ে ফুপিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘আম্মু, তোমার ভাইয়ের মেয়েকে বলো ঠাস করে গ্লাস না রাখতে৷ ভেঙে গেলে এর টাকা দিবে কে?’
ফুপি রাগ দেখিয়ে বললেন,
–‘ওর পিছে না লাগলে হয় না তোর? খেতে এসেছিস চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে যা৷এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো তাতে ওর কোনো আক্ষে’প’ই নেই৷’
ফুপির কথা শুনে আবেগে কান্না পেয়ে গেলো আমার৷ হু হু করে কেদে উঠে বললাম,
–‘ফুপি একমাএ তুমি’ই বুঝতে পেরেছ৷ কত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো কেও কোনো কিছুই বলছে না৷ আর উনি গা ছাড়া ভাব করে আছে৷’
ফুপি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
–‘তুই জানিস ঘটনা? তোকে কাব্য বলেছে?’
কাব্য ভাইয়া চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে আরেকটুকরো মাং’স উঠিয়ে মুখে পুড়ে বললেন,
–‘আম্মু তোমার সিরিয়ালের সময় হয়ে গেছে৷’
আমি আর কিছু বলবো তার আগেই ফুপি উঠে যেতে যেতে বলল,
–‘নীতু আম্মু কাদিস না৷ ঘটনা আমি পরে শুনবো এখন আয় আমার সাথে সিরিয়াল দেখবি৷

ফুপি মনোযোগ সহকারে সিরিয়াল দেখছে৷ আজ সব কিছু বিরক্তি লাগছে৷ ফোন টাও সঙ্গে আনি নি৷ এইবার অনার্স প্রথম বর্ষে উঠেছি আমি৷ আর কাব্য ভাইয়া হাইয়ার স্টাডিজ-এর জন্য জার্মান যাওয়ার ট্রায় করছেন৷ উনার সম্পর্কে আমার ধারণা একটুও নেই বললেই চলে৷ সাদা রঙের সুঠাম দেহের একজন সাদা ভাল্লুক ও বলা যায়৷ ক্রাশ খাওয়ার মতো সম্পর্ক তার সাথে আমার কোনো কালেই ছিলো না৷ তাকে দেখে দূরে দূরে থাকাই একমাএ লক্ষ্য ছিলো আমার৷ এই ব্যা’টা যেখানে সেখানে আমার বা’শ দিতে পিছপা হয় না৷ আজকের ঘটনা নিসন্দেহে আমাকে ফা’সানোর জন্য তার প্ল্যা’ন মনে হচ্ছে আমার৷ অসহ্য লোক একটা৷
–‘আমায় বকা দেওয়া শেষ হলে এখান থেকে উঠে ঘরে চলে যা৷ আম্মুর সাথে পারসোনাল কথা আছে আমার৷’
ভাবনার মাঝেই তার অ’পমান জনক কথা শুনে রেগে উঠে চলে আসতেই ফুপি বললেন,
–‘ওর সামনে আবার কিসের পারসোনাল কাব্য?নীতু যেভাবে বসে ছিলি সেইভাবেই বসে থাক৷ এক পা ও নড়বি না তুই৷’
আমি শান্ত কন্ঠে এগিয়ে যেতে যেতে বললাম,
–‘আমার ঘুম পেয়েছে ফুপি৷ উনার পারসোনাল কথা নিয়ে উনি থাক৷ কারো কথায় বা বিয়েতে ইন্টারফেয়ার করা আমার স্বভাবের মধ্যে পড়ে না৷’
রাগে কান্না পাচ্ছে আমার৷ সব কিছু এলোমেলো লাগছে৷ আমার সাথে হচ্ছেটা কি আজ?

___________________________________
দেয়ালে থাকা ঘড়ির টিক টিক আওয়াজে তাকিয়ে দেখি রাত ১ঃ৩০ বাজে৷ আমার চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না৷ বাইরে বোধহয় মেঘ সেজেছে হালকা ঠান্ডা বাতাস জানালার পর্দা ভেদ করে আমার শরীরে এসে লাগছে৷ মনের মাঝে হাজারো প্রশ্নের বেড়াজালে আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িয়ে যাচ্ছে৷ সবাই অস্বাভাবিক হয়েও স্বাভাবিক৷ অস্থির পায়ে হেটে বেড়াচ্ছি ঘরের সমস্ত জায়গা৷ হটাৎ গিটারের টু টাং আওয়াজে ভয় পেয়ে যাই৷ কাব্য ভাইয়ের গিটার আছে মনে পড়তেই স্বস্তি পাই৷ আমার রুমের লাগোয়া বারান্দায় থেকে আসছে মনে হচ্ছে আওয়াজ টা৷ ধীরপায়ে এগিয়ে যেতেই দেখি কেও নেই৷ এমনিতেই টে’নশনে মরে যাচ্ছি তার উপর ভয়৷ আবারও আওয়াজ আসতেই কেপে উঠি৷ সাহস করে আশেপাশে তাকাতে দেখি কাব্য ভাইয়ার বারান্দা থেকে আওয়াজ আসছে৷ রাতের গভীরে শব্দ দূরে হলেও মনে হয় ঘরের বাইরে হচ্ছে৷ বাইরে থেকে আলো আসায় দেখতে পেলাম কাব্য ছাই রঙের টি শার্ট পড়ে গিটার হাতে বসে আছে৷ তার দৃষ্টি বাইরে কিছু একটা গভীর মনযোগ দিয়ে ভাবছেন উনি৷ আমার ঘুম হা’রাম করে উনি গিটার বাজাচ্ছেন মনের সুখে৷ আমার বারান্দায় থেকে উনার বারান্দায় যাওয়া যায় অনায়াসে৷ আমি দেয়াল টপকে দাড়াতেই ধপ করে শব্দ হলো৷ আমার উপস্থিতি দেখে উনার কোনো হেলদোল হলো না৷ উনায় দেখে মনে হচ্ছে উনি জানতেন আমি আসবো৷ আমি রেগে তাকে বললাম,
–‘এইসব কি হচ্ছে কাব্য ভাইয়া?’
উনি ভাবেলাশীন ভাবে গিটারে আওয়াজ তুলে বললেন,
–‘কোথায় কি হচ্ছে!’
আমি তেতে উঠে বললাম,
–‘আপনি কি আমায় ভালোবাসেন?এইজন্য এই মি’থ্যা না’টক?’
উনি নীরব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হুট করে উঠে একদম আমার মুখের সামনে উনার মুখ এনে দাড়ালেন৷ আমি পিছিয়ে যেতেই আবার আমার দিকে ঝুকে……….

চলবে……..
ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সকলে

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
কাব্য ভাইয়া এখনো আমার মুখের উপর ঝুকে আছে৷ উনার গরম নিশ্বাস আমার চোখে-মুখে আ’ছড়ে পড়ছে৷ প্রায় পাঁচ মিনিট হতে চললো সে এক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করছি৷ নিশ্চয়ই আমায় উঠিয়ে বারান্দা থেকে ফেলে দিবে৷চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার পিছনে থাকা ঝু’লন্ত মানি প্লান্ট গাছের ডাল অন্য গাছ থেকে ছাড়াচ্ছেন৷ হাসবো না কাঁদবো আমি? ছিঃ!নিজের মন কে ধি’ক্কার জানাই৷ কতো কিছু ভেবে বসে ছিলাম৷ কাব্য ভাইয়া এতোটা কাছে কোনোদিন আসে নি৷ তার শরীর থেকে সুন্দর মন মাতানো সৌরভ ভেসে আসছে৷ বাইরে থেকে আসা হাওয়ায় তার চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে৷ সাদা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো না থাকলে উনায় নির্ঘাত মেয়ে মেয়ে লাগতো৷ ভেবেই আনমনে হেসে উঠলাম আমি৷ আর উনি ভ্রুকুটি করে নিজের মহান কাজ ছেড়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,

–‘এখনো যাসনি তুই এখান থেকে? অন্যের ঘরের আসতে লজ্জা করে এতো রাতে তোর!ওই সময় তো খুব পারসোনালিটি দেখাচ্ছিলি৷’

আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে সাহস নিয়ে বললাম,
–‘আপনি আমাকে বিয়ে করেননি কাব্য ভাই!তাহলে মি’থ্যা কেন বললেন?আর এইসব হচ্ছেটা কি? আপনি কি আমায় ভালোবাসেন তাই জন্য এই মি’থ্যা না’টক?’

উনি আমার সামনে থেকে সরে চেয়ারে বসে গালে হাত দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
–‘দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি!যে আমি তোকে ভালোবাসতে যাবো৷’

–‘তাহলে সন্ধ্যা সময় ওইসব কি ছিলো?’

–‘কোন সব?’

আমি রেগে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,

–‘একদন না বোঝার ভাণ করে থাকবেন না কাব্য ভাই৷ কোন সব প্রশ্ন করছেন,আপনি নিজে এতো কিছু করে এখন কোন সব জিজ্ঞেস করছেন৷’

উনি নিরু’ত্তাপ ভাবে হাই তুলতে তুলতে বললেন,
–‘নীতু তুই মেইবি পা’গল হয়ে যাচ্ছিস৷ রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়৷ আর একটা কথা বললে তোকে পাবনা মে’ন্টাল হসপিটালে পাঠিয়ে দিবো৷’

রাগে আমার কান্না পাচ্ছে৷ আমি কান্না করতে করতে উনায় বললাম,

–‘দেখুন কাব্য ভাইয়া!আপনার সাথে আমার কোনো শ’এুতা নেই৷ এমন কেন করছেন আপনি?সমস্ত সত্যিটা বাবাকে বলে দিন আমি বাসায় যাবো৷’

কাব্য ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে রুমে যেতে যেতে বললেন,

–‘আমি কারো চা’কর নই যে বলতে যাবো৷ যা হচ্ছে হতে দে এতে তোর’ই ভালো৷’

আমি আর কিছু বলতে যাবো উনি ঠাস করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে বললেন,

–‘রাত দুটো বাজতে আর দুই মিনিট বাকি৷ উপরের ফ্ল্যাটের বি’ষ খেয়ে ম’রে যাওয়া মেয়েটার ভুত এসে ঘুরঘুর করবে৷ আর যাকে পায় তার উপর ভর করে প্র’তিশোধ নেওয়ার জন্য৷ ভুতের হাতে পড়তে না চাইলে দৌড় দে৷’

উনার কথা শুনে আমার শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠলো৷ সত্যিই কিছুদিন আগে উপরের ফ্ল্যাটের মিমি আপু বি’ষ খেয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছেন৷ ভুতে এমনি ভয় পাই তার উপর তো প্রে’তাত্মা৷ হঠাৎ কেমন ভারী কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেয়ে আমি ভয়ে ভয়ে দেয়াল টপকে নিজের রুমের দিকে দৌড় দিই৷ অকালে ভুতের খপ্পরে পড়ে নিজের জীবন দিবো নাকি তাও এই কাব্য ভাইয়ার জন্য৷ রুমে এসে চাঁদর মুড়ি দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছি৷ উনি কতোটা খারাপ আমায় ভুতের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো!
__________________________________
জানালার পর্দা ভেদ করে সকালের রোদ চোখে মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় আমার৷ বাইরে উচ্চ স্বরে কাক ডেকে চলেছে৷ বিছানা থেকে উঠতে একদম ইচ্ছা হচ্ছে না৷ কাল রাত দুটোর পর ঘুমানোর জন্য মাথার ভেতর চিনচিনে ব্যা’থার অনুভব হচ্ছে৷ ঘড়ির দিকে অলস ভাবে তাকিয়ে দেখি ১০ঃ৪৪ বাজে৷ মাথা চেপে উঠে বসে কালকের ঘটনা ভাবি৷ আজ ভুতের ভয় নেই!কাব্য ভাইকে তো আজ আমার প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে। ধীরপায়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই দেখি কাব্য ভাই সোফায় বসে মোবাইল টিপছে৷ আর ফুপি রান্নাঘরে!আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,

–‘আমার কথার উত্তর না দিলে আপনার নামে কে’ইস করবো আমি৷’

–‘কারণ?’উনি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বললেন৷ থমথমে কন্ঠ শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার৷ জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,

–‘এই যে আপনি আমাকে বিয়ের আসর থেকে মি’থ্যা বলে উঠিয়ে এনেছেন৷ এইটার চেয়ে আর বড় কোনো কারণ আছে কি? আমার অমতে যেহেতু হয়েছে তাই এইটাই বড় কারণ৷’

উনি মোবাইল রেখে গালে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,

–‘পু’লিশের কাছে যাবি যা আমার প্র’ব্লেম নেই৷ তবে আমার মামু কে জে’লের ভাত খাওয়াতে চাইলে যেতেই পারিস৷’

–‘মানে?’

–‘আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আ’ইনী দ’ণ্ডনীয় অ’পরাধ জানিস তো?’

আমি দ্রু কুচকে বললাম,
–‘আপনার কি মনে হয়, আমার আঠারো বছর হয় নি?’

উনি টি টেবিল থেকে পানির গ্লাসে পানি ঢেলে বললেন,

–‘হ্যাঁ,সতেরো বছর দুইমাসের শিশুর দুইদিনে আঠারো বছর হয়ে গেলো?’

–‘আমার উনিশ বছর দুইমাস চলছে৷’

কাব্য ভাইয়া আমার কথা শুনে সদ্য পান করা পানি কেশে উঠে মুখে থেকে ছিটকে পড়ে যায় । তার নাকে মুখে পানি উঠে গেছে৷ আমার দিকে তাকিয়ে কেঁ’শেই চলেছেন৷ আমি উনার মাথায় ‘হাত দিতেই আমার হাত সরিয়ে কাশতে কা’শতে বললেন,

–‘তুই বেশি জানিস আমার চেয়ে? তুই হওয়ার সময় তুই কি দেখেছিলি কবে হয়েছিস তুই!’

–‘তাহলে কি আপনি দেখেছিলেন?ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি অনার্সে পড়ি কাব্য ভাই৷ কোনো সতেরো বছরের মেয়েকে দেখেছেন অনার্সে পড়তে?’

উনি মোবাইল হাতে নিয়ে অনেকটা সময় নিয়ে কিছু একটা করছেন৷ আমি সিরিয়াস হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ উনার কথা সত্যি এইটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হচ্ছে উনার মুখের সিরিয়াস ভাব দেখে৷ উনি হঠাৎ বসা থেকে উঠে চিল্লিয়ে বললেন,

–‘আম্মু,আমি বাইরে যাচ্ছি! ফির‍তে দেরে হতে পারে৷’

ফুপি রান্নাঘর থেকে বললেন,

–‘কাব্য বাইরে যাবি না তুই এখন!লান্স করে তারপর বের হবি৷’

ফুপির কথা তোয়াক্কা করে কাব্য ভাইয়া এতোক্ষণে দরজার বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন৷ আমি বো’কার মতো উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমায় বো’কা বানিয়ে আবারও চলে গেছেন তিনি৷ এতশত রহ’স্য আমার বিরক্ত লাগছে৷ কবে পাবো সব প্রাশ্নের উত্তর?

জিনিয়া আমার পিছে পিছে ঘুরছে এক ঘন্টা যাবৎ৷ কাব্য ভাইয়া বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ও এসে হাজির হয়েছে৷ আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু আমি ওর সাথে কথা বলবো না৷ ও কি করে পারলো মি’থ্যা বলতে? আমি রুমে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করতে যাবো তার আগে ও বলল,

–‘আপু তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো!তাও প্লিজ আমার সাথে কথা বল৷ তোর সাথে কথা না বলতে পেরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে৷তোর যা জানার আছে আমি সব সব বলবো তোকে৷’

ওর কথা শুনে ওকে ভেতরে আসতে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম আমি৷ ও আমার পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,

–‘আপু কথা বলবি না আমার সাথে?’

আমি তেতে উঠে বললাম,

–‘তোর সাথে কথা বলার স্কো’প রেখেছিস তুই?এতো বড় একটা মি’থ্যা কেন বললি তুই! তুই কবে আমার আর কাব্য ভাইয়ের বিয়ের সা’ক্ষী ছিলি৷ বল!’

–‘তুই রাগ করবি না তো৷’

সব কিছু শেষ করে এখন আসছে আমায় জিজ্ঞেস করতে৷ ইচ্ছা হচ্ছে ঠাস করে একটা চ’ড় লাগিয়ে দিই৷ আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম,

–‘আমি তো মানুষ না তাই আমার রাগ নেই৷ তুই বল,কিন্তু সব সত্যি তুই আমার কাছে বলে বাবাকেও বলবি বুজেছিস?’

জিনিয়া দুদিকে মাথা দুলিয়ে মুখে হাসি ঝুলিয়ে একটা মোবাইল বের করে বলে…………
চলবে….

(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সকলে৷ ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here