#পারিজাত
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৪
পরিবারের সবার সঙ্গে খেতে বসার মজাই আলাদা।বাড়িতে সবার এক সঙ্গে খাওয়ার মতো পরিস্থিতি এই কয়েকদিন না থাকলেও আজ আছে। যদিও সবাই থাকলেও আলী আকবর এখানে অনুপস্থিত। তিনি আরো পরে খাবেন।
মাহমুদ,এহমাদ,ওয়াহেদ সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছে। পাশেই পারিজার দুই জা এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। পারিজা ওয়াহেদের সামনে যেতেই ওয়াহেদ আড় চোখে বেশ কয়েকবার পারিজার দিকে তাকালো। মাহমুদ ওয়াহেদের কান্ড দেখে কিছুটা ব্যঙ্গ করার স্বরে বললো,
— বাড়িতে ঢুকলেই এখন মনে হয় কোনো নষ্ট পাড়ায় ঢুকেছি। আসলে, নষ্ট পাড়ার মেয়েলোক বাড়িতে থাকলে তো এমন মনে হবেই।”
পারিজা চোখ বন্ধ করে বড় দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তাঁর মেজো ভাসুর যে কথাটা তাঁকেই ইঙ্গিত করে বলেছে। সেটা আর পারিজার বুঝতে বাকি রইলো না। ওয়াহেদও কথার ইঙ্গিত বুঝতে পারলো। তবুও, চুপ করে রইলো। মাহমুদ আস্কারা পেয়ে আবার বললো,
— আমার খুব ভয় হয় জানো তো ভাই। কবে না জানি আমাদের বাড়িতেও নষ্ট মঞ্জিল গড়ে ওঠে। জীবনে তো কত কিছুই দেখলাম। কখনো শুনেছো, কোনো বড়লোক,জমিদার বাড়িতে কোনো ছিন্নার মেয়ের বিয়ে হয়েছে? আর কতটা নিলজ্জ হলেই বা মানুষ; নিজের দেহ বিক্রি করে ফুর্তি করে! ছিহ!”
পারিজার কথাটা বেশ গায়ে লাগলো। পারিজা বেশ ভালো করেই জানে তাঁর মা কতটা খারাপ পরিস্থিতিতে পরে এসব করতে বাধ্য হয়েছে। নাহলে, কোন নারী কী চায় নিজের দেহ অন্যের নিকটে সপে দিতে? মাহমুদ আর কোনো কথা বলার পূর্বেই পারিজা বললো,
— নষ্ট পাড়ার মেয়েদের সম্পর্কে তো আপনার বেশ ভালোই ধারনা আছে। আমার আম্মা যে ছিন্না। সেটা আপনিই সবার আগে জেনেছিলেন। এত দ্রুত এসব জানলেন কীভাবে? আর নষ্ট পাড়ার মেয়েদের আপনি চেনেনই বা কীভাবে? ”
মাহমুদ আমতা আমতা করে বললো,
— সে আবার বলা লাগে না কি? এমনি তো জানা যায়।”
পারিজা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
— নষ্ট গলির মেয়েদের কারা চেনে জানেন? যাঁরা নিয়মিতভাবে সেখানে যাতায়াত করেন।”
মাহমুদ আমতা আমতা করে বললো,
— মা….নে কী বলতে চাইছো তুমি?”
পারিজা হেসে বললো,
— কথার ধরন বুঝতে পারলে তো আমার কথা আপনার কাছে পরিস্কার। আপনি যদি সেখানে নাই যান। তবে, এত খবরাখবর তো আপনার কানে আসার কথা না।”
মাহমুদ রেগে খাওয়ার পাত থেকে উঠে পারিজার দিকে তেড়ে গেল। যে-ই না পারিজার গালে থাপ্পড় মারতে যাবে মাহমুদ। সেই মুহূর্তেই ওয়াহেদ তাঁর ভাইয়ের হাতটা চেপে ধরে বললো,
— ভাই, বউ আমার। বাকিটা আমি বুঝবো।”
মাহমুদ রেগে বললো,
— তোর বউকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করবি ওয়াহেদ। বাড়িটাকেও নষ্ট পাড়া বানিয়ে ছাড়বে এই মেয়ে!”
মাহমুদ এটুকু বলেই খাওয়ার ছেড়ে চলে গেল। ওয়াহেদ আর তাঁর বড় ভাই এহমাদ দুজনেই বেশ চিন্তিত হয়ে খাবার খেল। পারিজার সেদিকে অবশ্য কোনো খেয়াল নেই।তাঁকে যতটুকু অসম্মান করা হয়েছে। সে সেটার যোগ্য জবাব দিয়েছে। শুধু একটা মানুষ তাঁকে কথা শোনালে সে তো আর ছাড় দেবে না। প্রসঙ্গটা শুধু মাত্র তাঁকে নিয়ে উঠলে হয়তোবা সে চুপ থাকতে পারতো। কিন্তু, কথাগুলো সরাসরি আম্মাকেই ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে। তবে, পারিজা কী করে চুপ থাকতো? আম্মা ছাড়া যে পারিজার আর কেউ নেই। আম্মা পারিজাকে কত ভালোবাসে। পারিজাও আম্মাকে কত ভালোবাসে। তবে, কীভাবে পারিজা সেসব সহ্য করতো? আম্মার অপমান সহ্য করা যায়?
ওয়াহেদ খাওয়া দাওয়া শেষ করে পারিজাকে বললো,
— পারিজা, কথাবার্তা এখন থেকে একটু ভেবে চিন্তে তারপর বলো। এখানে থাকতে গেলে তোমার মানিয়ে নিতে হবে। বেপরোয়া ভাবে একটা কথা বলে ফেলবে। আর সবাই সেটা সহ্য করবে। সেরকম এখানে চলবে না। যদি তোমার মনে সেরকম কোনো পরিকল্পনা থাকে। তাহলে কিন্তু”
ওয়াহেদ আর কিছু বলার আগেই পারিজা কড়া গলাশ বললো,
— তাহলে কী করবে? বের করে দেবে বাড়ি থেকে? তবে দাও! এখনি দাও! যেখানে আমার কোনো সম্মান নেই। আমার মায়ের কোনো সম্মান নেই। সেখানে এক মুহূর্ত থাকতেও আমার গা গোলায়।”
ওয়াহেদ পারিজার কথার জবাবে বললো,
— তাহলে কী করবো বলো? তোমার মাকে উঠতে বসতে সালাম করবো? সম্মান! তাঁকে সম্মান! ”
পারিজা ওয়াহেদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি তোমাদের বলিনি আমার মাকে সম্মান করো। শুধু বলেছি এমন কিছু বলো না যাতে আমার মায়ের অসম্মান হয়। তুমি যখন নিজের মাকে অসম্মান করো না। তখন অন্যের বেলায় এমন কেন? নিজের মাকে যেভাবে দেখো। অন্যের মাকেও সেভাবে দেখতে শেখো ওয়াহেদ। কারন, তুমি যাকে অসম্মান করছো। তিনি নিজেও একজন মা।”
ওয়াহেদ বিষ্মিত হয়ে পারিজার দিকে তাকিয়ে রইলো। পারিজার রাগ আর তেজের কাছে সে হার মানলো। আর একটা কথাও বললো না।
চলবে….