কঠিন প্রেমের গল্প (এগারোতম পর্ব)
ফারাহ তুবা
আমার পিঠ, ঘাড়, হাত সব আগেই ব্যথা ছিলো। এখন সেই ব্যথা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। আমি যদি কখনো প্রেম করার উপর বই লিখি তাহলে সেখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে শিলপাঠায় বাটাবাটি থেকে বিরত থাকতে হবে। শিলপাঠায় মশলা বাটা বিষয়টা মোটেও সহজ না। ঘটনা হলো যে আমি কিছু বেরেস্তা রেখে বাটাবাটির চেষ্টা করলাম। প্রকৃতির নিয়মে তার উচিৎ ভারি বস্তুর নিচে থাকা। কিন্তু সে নিজের মনে এদিক ওদিক চলে যাচ্ছে। কিছুটা পিষতেই বাকিগুলো আরও দূরে চলে যাচ্ছে। পুরোপুরি আমার আর নীতুর সম্পর্কের অবস্থা।
আপাতত আমাকে এই অসুস্থ অবস্থাতেই অফিসে আসতে হয়েছে। লিটা ম্যাম ডেকে পাঠিয়েছে। আমি এতদিন ধরে জানতামই না যে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা আমার বস হয়। বিষয়টা অত্যন্ত বিরক্ত লাগছে। বিরক্তি আর ব্যথা নিয়ে আধাঘন্টা ধরে গেস্ট কেবিনের সামনে বসে আছি। আপাতত এটাই লিটা ম্যাম ব্যবহার করছে। অফিসে খুব সাজ সাজ বর চলছে। লিটা ম্যাম সব পিয়নদের জন্য গিফট এনেছে। দারোয়ানের বাচ্চার জন্য এত বড় ডল হাউস এনেছে যে সেই গল্প করতে গিয়ে বারবার দারোয়ান কেঁদে দিচ্ছে। লিটা উপহার দিতে বেশ পছন্দ করে। আমার বাসার সবাইকে প্রায়ই উপহার দিতো। অবশেষে আমার ডাক আসলো।
ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। লিটা আর আমি দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার এত ঘৃণাবোধ কেন হচ্ছে বুঝছি না। আমি চোখ ফিরিয়ে নিতেই লিটা আমাকে বসতে বললো। কিছুক্ষণ একটানে অফিসিয়াল কথা বলে নিলো। ও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে এই বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা হলো। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যে ব্যক্তিগত ঝামেলায় আর যেতে হলো না। সব কথা শেষ করে আমি উঠতে যাবো এইসময় বললো,
“বসো। এত তাড়া কিসের!”
“বাসায় একটু কাজ আছে। আমি যাই।”
“তুমি আমাকে লিটা ম্যাম বলে কেন ডাকছো? তুমি আমার চোখের দিকে কেন তাকাচ্ছো না? উত্তর না দিয়ে যাবে না।” অত্যন্ত কড়া কন্ঠে লিটা আমাকে প্রশ্নটা করলো।
ওর গলার স্বরে আমার ভয়গুলো উবে গেলো। আমি দৃঢ় স্বরে উত্তর দিলাম,
“তোমার নাম হাফসা না। তুমি আমাকে ঠকিয়েছো। তোমার দিকে তাকাতে ঘিন্না লাগছে। তুমি একটা চোর। চোরের মতো আমার সব তথ্য নিয়ে গিয়েছো।”
“হুমম। এই তথ্য তোমার বউ দিয়েছে নাকি অফিস থেকে জেনেছো?”
“দয়া করে আর কথা বলো না। আমি আসি।”
লিটা আর কথা বাড়াতে পারলো না। তার আগেই ওর স্বামী সাব্বির ভাই চলে আসলো। সে এসে আমাকে দেখে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলো। উনি এমন ঝরঝর করে গল্প শুরু করলো যে মনেই হচ্ছে না চুরি জাতীয় কিছু উনি করতে পারেন। উনার সাথে একসময় গল্প বেশ জমে গেলো। অনেক পুরানো স্মৃতি নাড়তে চাড়তে গিয়ে ঘাড় ব্যথা কমে গেলো কিছুটা। এরমধ্যে অবশ্য লিটা বের হয়ে গিয়েছে ঘর থেকে। তাকে সাব্বির ভাই খুব একটা পাত্তা দেয় বলে মনে হলো না। সে কিছু একটা বলতে আসতেই সাব্বির ভাই কেমন জানি মাছি তাড়ানোর মতো করে হাত নাড়িয়ে গল্প চালিয়ে গেলেন।
এক ঘন্টার জন্য এসে প্রায় পুরো দুপুর কাটিয়ে বের হলাম। আমার জীবনটা খুব অগোছালো লাগছে। ইচ্ছা করছে হিমুর মতো খালিপায়ে হাঁটা শুরু করি। অথচ আমার সবই আছে। বাসায় ঢুকতেই নীতুর সাথে দেখা হলো। সে কোথাও একটা যাচ্ছে। আমি নীতুর দিকে তাকিয়ে গাঢ় স্বরে বললাম,
“নীতু আজ রাতে বাচ্চারা ঘুমানোর পর আমাকে কিছুক্ষণ সময় দিবে? জরুরি কথা আছে।”
“ওহ হো! এই সপ্তাহে সম্ভব না। খুব ভালো একটা বই পড়ছি। সামনের সপ্তাহের সোমবার জরুরি কথা বলবো।”
নীতু হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেলো। আমি কিছুক্ষণ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কেমন জানি করছে বুকের মধ্যে। আমি আর এই অশান্তি নিয়ে থাকতে পারবো না। আজকে রাতে যেভাবেই হোক আমি কথা বলবোই। আজকে রাতের পর আমার জীবন সুখে পরিপূর্ণ হবে।
(চলবে)
আগামী পর্বে গল্পটি সমাপ্ত হবে।