#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৯
তূর্য রাস্তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এনে শ্রেয়ার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে চাইল। মেয়েটার ফর্সা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম তার চক্ষু এড়ালো না। কপালে বলিরেখার ভাঁজ ফুটে উঠলো। স্পষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি হয়েছে শ্রেয়সী?এদিকে এসো। ‘
শ্রেয়ার পা চলছে না। ছাদের মেঝেতে আটকে গেছে যেন দুই পা। দেহে অল্প পরিমাণ শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। গলা উঁচিয়ে বলতে চাইল–‘ স্যার আমি পাগল ভয় পাই। খুব ভয় পাই। আমাকে ডাকবেন না স্যার। ‘ কিন্তু দু অধর আলগা হলো না কিঞ্চিৎ মাত্র। মাথায় বারংবার জেঁকে বসতে শুরু করে বিবাহের প্রথম রাত্রের সেই বিষাক্ত স্মৃতিটুকু। মনে হলো এখনও দু’টো শক্ত হাত ওর গলা চেপে ধরেছে। হুংকার ছেড়ে বলছে–‘ খু*ন করবো তোকে। ‘
শ্রেয়ার শরীর কাঁপলেও মনটা শক্ত রাখার প্রয়াস চালালো। কতকাল কাটাবে এই পাগলের প্রতি ভয় নিয়ে? এই ভয়ই তো ওর জীবনের সকল সুখ কেড়ে নিয়েছে,নিঃস্ব করে দিয়েছে ওকে। সেদিন নববধূ বেশে স্বামী পাগল জেনে পুরোনো ক্ষত দগদগে নাহলে,ভয় কাজ না করলে কখনও এই শহর ছাড়তে হতো না। জীবন চিরকালের জন্য একা হয়ে যেত না। এই একটা ভয় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ওর ভিতরটা। পুনর্বার ডাকলো তূর্য। সন্দেহাতীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনড়।
না কাউকে বুঝতে দিবে না শ্রেয়া নিজের দুর্বলতা। মনের জোরে এগিয়ে গেল তূর্যর দিকে। দাঁড়ালো মাঝে বিস্তর দূরত্ব রেখে। তাও অনায়সে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে দু’জনের কাছ হতে ভেসে আসা সুগন্ধী। একজনের ভেজা সিক্ত চুল থেকে শ্যাম্পুর কড়া গন্ধ, অপরজনের সুঠাম দেহ হতে পারফিউমের ঘ্রাণ। মিলেমিশে একাকার হয়ে দু’জনের নাসারন্ধ্র প্রবেশ করছে অবলীলায়।
হুট করে কেমন অনুভূত হলো শ্রেয়ার। দূরত্ব বাড়িয়ে দিল কিঞ্চিৎ। তূর্য তা অবলোকন করে হাসল। মৃদু হাসি। শ্রেয়া উন্মুক্ত অম্বরে একবার তাকালো। রোদের তেজে চোখ জ্বালা করে উঠলো ওর। চোখের মণিকোঠা জলে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে। আবছা আবছা অন্ধকার ভিড় জমালো চারদিকে। শ্রেয়া বুঝতে পারে দিবাকর তার চাহনি পছন্দ করে নি। তাই তো রশ্মি ছুঁড়ে ভস্ম করতে চাইল ওর কাজলমাখা আঁখি যুগল।
তূর্য বাহিরে বের হলে পকেট টিস্যু রাখে নিজের সঙ্গে সর্বদা। শ্রেয়ার মুখভঙ্গি, পদক্ষেপ সবটাই সে লক্ষ্য করলো। একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ চোখের পানি মুছে নাও। ঠিক হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ভুলেও আকাশের দিকে এমন করে তাকাতে যেও না। চোখের ক্ষতি হবে। তখন চাইলেও আপন কারো মুখ দেখার তৃষ্ণা কখনও মিটবে না তোমার। চোখ দুটো ভালো রাখো,হয়ত তোমার গাঢ় দৃষ্টিতে কারো ছবি আঁকা বাকি এখনও। ‘
তূর্যর কথা শুনে শ্রেয়া বিস্মিত হয়। কেমন রহস্যময় ঠেকল শেষোক্ত বাক্য টা। সত্যিই তো ওর অনেক তৃষ্ণা নিজের স্বামীর চেহারা টা এক নজর দেখার। কিন্তু তা কখনও পূরণ হবে না। শ্রেয়া এত বছরে এটাও জানতে পারল না কেমন আছে পাগল মানুষটা?সুস্থ হয়েছে কি?আর হলেও কি ওদের বিয়ের কথা জানে?এমন শত শত প্রশ্ন শ্রেয়ার মস্তিষ্কে কিলবিল করতে থাকে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। আর ভাবতে পারলো না শ্রেয়া। খুবই সতর্কভাবে তূর্যর হাত থেকে টিস্যু টা নিতে গেল। তবুও ঘটে গেল এক অসতর্ক কান্ড।
শ্রেয়া অপ্রতিভ হয়ে পড়ল। তরঙ্গ খেলে গেল শরীরের ভাঁজে ভাঁজে। টিস্যু নিতে গিয়ে ওর বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে দিল তূর্যর কনিষ্ঠ আঙুল। তূর্য স্পর্শ অনুভব দূরে থাক লাগেও নি এমন ভাব করে সামনের দিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। শ্রেয়া অতিশয় চমকে আড়ষ্ট। এত নির্লিপ্ততা!ক্ষণে,ক্ষণে মুখের আদল পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে এই লেকচারার।
‘ চোখ ঠিক হলে সামনে তাকাও শ্রেয়সী। ‘
সুবোধ বালিকার ন্যায় শ্রেয়া প্রিয়ুদের বাড়ির পেছনের রাস্তায় চক্ষু মেলে তাকালো। দুই পাশে সারি সারি বিভিন্ন কাঠের গাছ,মাঝে পিচঢালা রাস্তা। সেই রাস্তার কিনারায় জীর্ণ শীর্ণ দেহ,রুক্ষ ও অবিন্যস্ত চুলের, নোংরা কাপড় পরিধানকারী একজন লোক বসে আছে। সবচেয়ে অবাক কান্ড হচ্ছে সেই লোককে একদল বাচ্চা কাচ্চা ব্যাঙ্গ করছে লাগাতার,কেউ কেউ আবার পাথর নিক্ষেপ করছে। লোকটাও পাথর নিয়ে বাচ্চাগুলোর দিক ছুটে যাচ্ছে। এতেই ভো দৌড় বাচ্চাগুলোর। শ্রেয়া শুষ্ক কন্ঠনালি গলিয়ে বেরিয়ে এলো,
‘ পাগল!’
তূর্য নিরলস ভঙ্গিতে সায় দিয়ে বললো,
‘ তা-ই মনে হচ্ছে। তাই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম কখনও পাগলের মা’র খেয়েছ কি-না। আমি একবার খেয়েছিলাম ছোট বেলায়। সময় টা তখন স্কুল জীবনের। ‘
বাসর রাতে স্বামী মা’রতে যাচ্ছিল আবার মা’র খেয়েছে কিনা!প্রশ্নটা শ্রেয়ার নিকট অত্যন্ত হাস্যকর ঠেকল। আবার বিস্তর হাসিও ঠোঁটে ফুটতে চাইছে তূর্য স্যারের পাগলের হাতে মা’র খেয়েছে শুনে। আগ্রহ নিয়ে বললো,
‘ তারপর কি হলো স্যার?’
তূর্য কপাল কুঁচকে তাকালো। তীর্যক নেত্রে চেয়ে বললো,
‘ তারপর আমি তোমাকে বলতে অনাগ্রহী। ‘
এত বড় অপমান? শ্রেয়ার ভীষণ রাগ হলো। কেন জিজ্ঞেস করতে গেল এই ছেলেকে। ও তো প্রথম দিন থেকেই জানত এই ছেলে নিজেই একটা পাগল। নয়ত সামান্য পানি পড়া নিয়ে স্যরি বলার পরও এত রিয়েক্ট করত নাকি!আজব লোক। শ্রেয়া চলে যাবে,আর এক মুহুর্তও থাকবে না এখানে। তূর্যর সান্নিধ্য মানে সেকেন্ডে, সেকেন্ডে শরীরে কম্পনের ছড়াছড়ি। অদ্ভুত হলেও এটা আচ করতে পেরেছে সে তূর্যর কথাবার্তা ওর অভ্যন্তরে দাফন করতে চাওয়া অতীতের স্মৃতি জাগ্রত করে,বাড়িয়ে দেয় ভয়ের মাত্রা। আর ভুলেও তার ধারে কাছে আসা যাবে না। আজ ওরা থাকলে সারাক্ষণ রুমে থাকার পণ করলো শ্রেয়া। নড়বে না এক পাও। এ মুহুর্তে এখান থেকে প্রস্থান ঘটাতে পারলেই হাফ ছেড়ে বাঁচবে। শ্রেয়া
সরব করে বললো,
‘ আসি স্যার। ‘
কথাটা বলে আবারও তূর্যর উত্তরের অপেক্ষা করলো না। গটগট পায়ে ছাঁদের দরজা অব্দি আসতেই কর্ণ গহ্বরে পৌঁছালো তূর্যর ব্যাথাতুর আর্তনাদ। ‘ আহ!শব্দ শুনলো বিশদ। তবে তা খুবই ক্ষীণ ছিল। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও আর্তনাদে ঘুরে তাকালো শ্রেয়া। নিমেষে ওর হৃদয়ের গতি নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে পড়ে। মুখশ্রী রক্তশূণ্য, ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে দৌড়ে এলো তূর্যর কাছাকাছি। হাত টা স্পর্শ করতে যেয়েও করলো না। সমুখের মানুষটার ফর্সা হাতের উপরিভাগ ছিলে রক্ত ঝরছে। হাত থেকে দৃষ্টি উপরের দিকে তুলল শ্রেয়া,তূর্যর মুখের পানে। উজ্জল চেহারাটা অনুজ্জ্বল, মলিন,বিবর্ণ। এই তো এখনই রৌদ্রজ্জ্বলে চকচকে করছিল মুখটা। শ্রেয়া আর্তস্বরে, বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ স্যার কিভাবে কাটল?রক্ত ঝরছে।’
‘ ঝরুক। ‘– নির্বিকার অভিব্যক্তি তূর্যর।
‘ ঝরুক মানে?পাগল আপনি?’
মৃদু চেচিয়ে উঠলো শ্রেয়া। তূর্যকে রেখে ছুটে এলো প্রিয়ুর রুমে। পুরো রুম তন্ন তন্ন করে ফাস্ট এইড বক্স টা খুঁজে বের করে পুনরায় ছুটল ছাঁদে। তড়িৎ গতিতে ছোটবার দরুন অবস্থা কাহিল ওর। এমনিতেই শরীর,মন দুটোই দুর্বল,শক্তিহীন। কাল থেকে অনবরত ছোটাছুটির উপর দিন রাত কাটছে। তাতেও শ্রেয়ার দুঃখ নেই। সকল কষ্ট মনের দুয়ারে এসে থেমে যায় ওকে দুর্বল রাখতে। যত চায় শক্ত নারী হতে,মন ততই ওর বিরোধিতা করে। এই যে এখন তূর্যর রক্তাক্ত হাত দেখে ওর মন খারাপ হচ্ছে।
ফাস্ট এইড বক্সটা তূর্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘ স্যার ব্যান্ডেজ করে নিন। ‘
তূর্য ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে শ্রেয়ার প্রস্তাবটা। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,
‘ প্রয়োজন নেই। যাও এখান থেকে। ‘
শ্রেয়া এক চুলও নড়ে নি। নিশ্চল থেকে উসখুস করে বলে উঠলো,
‘ প্রয়োজন আছে। আপনার হাত থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। ‘
তূর্যর রাগের মাত্রা আকাশ ছুঁয়ে ফেলল। হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে বেশ জোরেই চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ আমি বলেছি আমার সাহায্য লাগবে?আর কেমন সাহায্য করছো?ডান হাত কেটেছে। বাম হাতে ব্যান্ডেজ করতে পারবো?গাধা কোথাকার! ‘
শ্রেয়া বিমূঢ়তায় বাক হারা। খুঁত খুঁত করতে করতে এগিয়ে গিয়ে তূর্যর রক্তাক্ত হাত টা আলগাভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু সক্ষম হলো না সে। ওর অভ্যন্তর চিৎকার করে বাঁধা দিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ স্পর্শ করতে। কিছু বাঁধা মানতে নেই,বিশেষ করে যে বাঁধা অতিক্রম করলে পরোপকার হয়। সমস্ত ভালো-মন্দ, নিষেধাজ্ঞা দূরে ঠেলে একটুখানি! স্রেফ একটু স্পর্শ করলো হাত টা। কিন্তু তূর্য ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিল। কড়া গলায় বললো,
‘ একদম না। যাও তুমি। ‘
‘ এত রাগ ভালো না স্যার। ‘– শ্রেয়ার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।
শ্রেয়া ছাঁদের রেলিংয়ের উপর বক্সটা রাখল। নিজের হাত টা মেলে ধরে বললো,
‘ দিন স্যার। হাত টা দিন। রগচটা স্বভাব টা নাহয় পরে দেখাবেন। ‘
ততক্ষণে প্রিয়ু ও আয়ুশ উপস্থিত। তূর্য হাত টা রাখল শ্রেয়ার হাতের উপর। এমন দৃশ্য চক্ষে বিঁধতেই আয়ুশ ও প্রিয়ু একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি সেড়ে নিল। ইচ্ছে হলো না কাছে যেতে কিন্তু তূর্যর হাতে রক্ত দেখে নিজেদের আটকাতেও পারল না। আয়ুশ বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ কি হয়েছে ভাই?’
শ্রেয়া রক্ত পরিষ্কার করে সাদা ব্যান্ডেজ হাতে জড়িয়ে দিচ্ছিল,আয়ুশের ব্যগ্র স্বরে লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে গেল মুখ খানা। সমস্ত বদন লজ্জার আবরণে ঢেকে যায়। অপ্রস্তুত হাতে তূর্যর ব্যান্ডেজ কোনোমতে সেড়ে প্রিয়ুর পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। আয়ুশ হাত টা ধরতে নিলে তূর্য সরিয়ে ফেলল। নত মস্তকে থাকা শ্রেয়ার পানে চেয়ে রাশভারি গলায় বললো,
‘ স্পর্শ নিষেধ আয়ুশ। ‘
পরক্ষণেই গলার স্বর স্বাভাবিক করলো,
‘ দেখলে এভাবে দেখ,ধরার কি দরকার?’
তূর্য হাত নেড়েচেড়ে দেখালো। তার কার্যকলাপে হতবাক আয়ুশ। উদ্যোগী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কাটলো কিভাবে?’
ইশারায় পাশের লেবু গাছটা দেখায় তূর্য। ভালোই বড়সড় একটা গাছ। টব থেকে ডালপালা বেরিয়ে ছড়িয়ে আছে। কাটাগুলো অনেক বড় বড়। লেবুও ধরেছে অনেক।
‘ এটার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ভুলবশত হাত গিয়ে লেগে গিয়েছে। আমি নিচে যাই। ‘
কথাটা বলে থামলো তূর্য। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে শ্রেয়ার দিকে তাকালো। স্থির, অবিচল দৃষ্টিতে। শ্রেয়া হকচকিয়ে যায়। কি মোহনীয় দৃষ্টি তূর্যর। সে চোখ সরিয়ে বেসামাল ভাবে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। তূর্য দুর্বোধ্য হাসল। বললো,
‘ ধন্যবাদ আয়ুশের শালী সাহেবা। ‘
তূর্য চলে যেতেই প্রিয়ু হেসে মিনমিন করে বলে–‘ আয়ুশের শালী আপনের বউ দুলাভাই। ‘ বাক্যটা এতই নিচু স্বরে আওড়ালো শ্রেয়ার কর্ণপাত তো দূর ও বুঝতেই পারে নি প্রিয়ুর দুই ওষ্ঠ নড়ছে। সে তো অন্য চিন্তায় নিমগ্ন,নিমজ্জিত। খুব বেশি জোরে ঝাড়া না মারলে লেবু গাছের কাটায় হাত লেগে এত গভীরভাবে চামড়া ছিলে রক্তপাত হওয়ার কথা না। নিশ্চয়ই জোরে লেগেছে, আয়ুশের চিন্তা কমানোর নিমিত্তে হয়ত তূর্য ভুল বাক্য সাজিয়েছে। এটাই হবে।
________________
প্রিয়ু ফ্যাসাদে পড়ে গেল। রুমের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখে ওর রুমে আয়ুশী। শ্রেয়া ওর মায়ের রুমে গিয়েছে আপাতত রাশেদার ডাকে। এখন যদি শ্রেয়া ও আয়ুশী মুখোমুখি হয়ে যায়?ভেবেছিল যে করেই হোক আজ এদের ভাগিয়ে দিবে,আয়ুশও চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারলো কই?উল্টো ওর বাবা-মা ধরে বেধে রেখে দিয়েছে। আবার অন্যদিকে ভয় হচ্ছে মেহরিমা চৌধুরীর চোখে শ্রেয়া পড়ে যায় কি-না। খানিক বাদেই সবার দুপুরের খাওয়ার ডাক পড়বে। শ্রেয়াকে নিচে যেতে আটকাতে পারলেও,এখান থেকে গায়েব করা অসম্ভব ব্যাপার। চিন্তায় যখন মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম আয়ুশী বিছানা ছেড়ে টুপ করে চলে এলো ওর সামনে। ‘ভাবি’ ডেকে টেনে রুমে নিয়ে গেল।
শ্রেয়াকে ডেকে প্রিয়ুর আম্মু আয়ুশের জন্য বানানো আন্টি টা দেখালেন। খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
‘ এটা ভালো হবে না রে মা?প্রিয়ুকেও দেখাই নি। ওর তো আবার তোর পছন্দসই জিনিসই ভালো লাগে। তাই ভাবলাম তোকে একবার দেখাই। ঠিক আছে?’
‘ অনেক সুন্দর আন্টি। আমি এখন যাবো?’
‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ। আর শোন,একটু পরে লাঞ্চের জন্য ডাকা হলে প্রিয়ুকে নিয়ে নিচে চলে আসিস। মেহমান আছে ভেবে লজ্জা পাস না আবার। ‘
শ্রেয়া ঘাড় হেলিয়ে বলে,
‘আচ্ছা। ‘
ও রুম থেকে বেরোতে নিবে তার পূর্বেই প্রিয়ুর মামী রুমে ঢুকল। সাথে দুজন মহিলা। চেনা দু’টো মুখ দেখে ভূ-তল কেঁপে উঠলো শ্রেয়ার। তিন বছর!পাক্কা তিন বছর পর কিছু সময়ের পরিচিত হওয়া মানুষের চেহারা দেখল। শ্রেয়া হতভম্ব,কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সামনের মানুষ দু’জনেরও একই হাল। প্রিয়ুর মা হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললেন,
‘ আপনারা এখানে?শ্রেয়া ওনারা প্রিয়ুর শাশুড়ি ও চাচী শাশুড়ি।’
অকস্মাৎ কিছু সত্য সামনে এলে মেনে নেওয়া কঠিন সাধ্য হয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় বাকশক্তি। ত্রিহা চৌধুরী শ্রেয়াকে কিছু বলতে যাবে তখনই ওনার হাত চেপে ধরে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন মেহরিমা সকলের অলক্ষ্যে,অগোচরে।
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)