#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৭ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
সোনালী রোদের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। জারা সকাল থেকে অস্থির হয়ে আছে শান জারাকে কোথায় নিয়ে যাবে ভেবে ভেবে চিন্তায় অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না আমার অদ্ভুত এক্সাইটমেন্ট ও হচ্ছে এই প্রথম শানের সাথে কোথাও ব্যাড়াতে যাবে। অবশেষে কাক্ষিত মুহূর্তটা আসলো। জারা খুঁজে খুঁজে কালো রংয়ের স্টোনের কাজ করা একটা থ্রি পিচ পড়ে নিলো। আয়নায় এসে নিজেকে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখল জারা নিজেকে বলল
-‘ ওতোটাও খারাপ লাগছে না চলবে ‘
জারা চুল গুলো সামনে এনে পিছনের জামার ফিতায় হাত দিতেই কারোর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো চমকে আয়নায় দেখলো শানকে দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। জারা নিজেকেই প্রশ্ন করলো ‘ মানিয়েছে কি দুজনকে? ‘
শান ফিতা বেঁধে দিয়ে ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো জারা নড়েচড়ে দাঁড়ালো বিমূঢ় হয়ে শানের কাছ থেকে সরতে চাইলো শান সরতে দিলো না। কোমড় থেকে পেট জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুঁতনি ঠ্যাকালো। আয়নার মধ্যে দিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে জারার বিশ্বাস হচ্ছে না শান এমনটা করতে পারে তাও এখন। শান নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে জারার পানে জারা নড়াচড়া করতে করতে বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার বলল
-‘ কি করছেন ‘
-‘ দেখছি ‘
-‘ তোকে ‘
-‘ আমাকে দেখার কি আছে? আগে দেখেন নি? ‘
-‘ হুম দেখেছি তো কিন্তু ওড়না ছাড়া যে তোকে হ*ট লাগে সেটা এতো কাছ থেকে দেখি নি ‘
কথাটা বলে শান চোখ টিপ মারলল। জারা চমকে নিজের দিকে তাকালো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে শানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। জারার কান্ড দেখে শান হো হো করে হেসে উঠলো। জারা ওয়াসরুমের দরজা দিয়ে উঁকি মেরে বলল
-‘ শ-য়-তা-ন, লু-চ্চা-মি জায়গা পাস না বের হ আমার রুম থেকে ‘
-‘ যা দেখার তো দেখেই ফেলেছি এখন লুকিয়ে লাভটা কি? ‘
-‘ ছিঃ লু-ই-চ্চা ‘
-‘ শুধু বউয়ের কাছে অন্য কারোরর কাছে না রেডি হয়ে নে আমি ও যাচ্ছি রেডি হতে ‘
শান চলে যেতেই জারা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো দৌড়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিরবির করে শানকে বকতে লাগলো। আধ ঘন্টা পর শান জারাকে টেক্সট করে
-‘ লজ্জা সাজগোছ শেষ হলে তাড়াতাড়ি নিচে আসবেন আমি বাইরে ওয়েট করছি ‘
রেডি হয়ে নিচে এসে শান্তিকে বলল
-‘ মনি তোমার ছেলের সাথে বের হচ্ছি কই যেনো নিয়ে যাবে বলল ‘
শান্তি বেগম হেসে বলল
-‘ আচ্ছা সাবধানে যাস ‘
জারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
-‘ তোরা যে সবটা মেনে দুটোতে এক হয়েছিস এতেই খুশি দোয়া করে তোরা সুখি হ ‘
শান্তি বেগমকে বলে গাড়ির কাছে আসতেই জারা দেখলো শান ও ব্ল্যাক সুট পড়ছে। জারা হাসলো একটু আগের কথা মনে পড়তেই জারা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে নিলো। জারাকে দেখে শান বলল
-‘ আসেন হয়েছে আপনার ‘
জারা ছোট করে উত্তর দিলো
-‘ হুম ‘
জারা গাড়িতে উঠে বসতেই শান জারার দিকে একপলক তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
-‘ এতো লজ্জা? বাবাহ! বি কম্ফোর্টেবল জারা ‘
শানের মুখে নিজের নাম শুনে জারার হার্ট বিট বেড়ে গেলো কবে যে শেষ নিজের নাম শানের মুখে এতো কিউট করে শুনেছে ও নিজেও জানে না। জারা চুপ করে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো হুট করে প্রশ্ন করলো
-‘ কোথায় যাচ্ছি বললেন না তো ‘
-‘ গেলেই দেখতে পাবি ‘
জারা চোখমুখ কুঁচকে বসে রইলো চারিদিকে অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে গেছে কৃত্রিম আলোই সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শান একটা বড় রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
-‘ নাম এসে গেছি ‘
শান গাড়ি পার্ক করে জারার কাঁধ জড়িয়ে হাঁটা ধরলো জারা চমকে গিয়ে শানের মুখশ্রী তে তাকালো। হলদেটে মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে বড্ড মানিয়েছে শানকে। জারা শানের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো শান বলে উঠলো
-‘ দেখা হয়ে থাকলে সামনের দিকে তাকা নাহলে হোটচ খেয়ে পড়বি ‘
জারা চোরা চোখে তাকিয়ে বলল
-‘ এহহ যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা ‘
-‘ জারা মার খেতে না চাইলে ওফ হয়ে যা ‘
জারা মুখ ভ্যাংচি দিয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগল। রেস্টুরেন্টের টপে আসতেই জারা দেখলো কতগুলো ছেলে মেয়ে বসে আছে। শানকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো শান জারার থেকে দুরত্ব রেখে দাঁড়ালো ছেলেগুলো এসে সকলে শানের ওপর ঝাপিয়ে পরলো। জারা মুখে হাত দিয়ে মনে মনে বলল
-‘ ওনি বেঁচে আছেন তো ‘
মনে ধক করে উঠলো। চোখ ছলছল করে উঠল কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে তাকিয়ে রইলো। শান কিছুক্ষণ ওদের সাথে মা-রপিট করলো। শান ঠিক আছে দেখে জারা মুখ বাকালো। জারার দিকে খেয়াল আসতেই একজন বলল
-‘ জারা না? হ্যাঁ তো আ’ম রাইট ‘
জারা চমকালো। এরা চিনল কিভাবে তাকে? সে-তো এদের কখনো দেখেই নি। জারা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। সকলের সাথে পরিচিত হয়ে কুশল বিনিময় করল। সকলের মুখে ভাবি ভাবি শুনে জারা বড্ড লজ্জা পাচ্ছে। জারাকে লজ্জা পেতে দেখে ওরাও আরো লজ্জা দিচ্ছে। একজন বলে উঠলো
-‘ মিষ্টি ভাবি বিয়ে তো করছেন আগেই ফুপি ডাকটাও কিন্তু আগেই শুনবো ‘
জারা লজ্জায় গুটিসুটি মেরে গেলো। জারাকে লজ্জা পেতে দেখে শান দূর থেকে ওয়ইনে চুমুক দিচ্ছে আর দেখছে।
-‘ তুই খুশি শান ‘
-‘ দেখে কি মনে হয়? ‘
-‘ তুই খুশি নস ‘
-‘ এটা তোর ভুল ধারণা ও খুশি তো আমি খুশি ‘
-‘ আমি ভালোবাসি তোকে বুঝিস না তুই ‘
-‘ রিতা তোর হ্যাসবেন্ড আছে সংসার কর মন দিয়ে ‘
-‘ তুই বললে সব ছেড়ে চলে আসবো ‘
-‘ আমি জারাকে ছাড়া কখনোই কল্পনাও করতে পারি না ‘
-‘ কিন্তু আমার যে তোকে চাই ‘
-‘ আমার জারাকে চাই ‘
-‘ একদিন তুই খুব পচতাবি দেখিস ‘
শান কিছু বলল না জারার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বেশ রাত করে ওরা বাসায় ফিরল শান জারার কাছে শুনল
-‘ আজকের সন্ধ্যা কেমন লাগলো? ‘
-‘ অনেক সুন্দর সবাই কত ভালো ‘
-‘ আর আমি? ‘
-‘ আপনি লুইচ্চা ‘
শান হেসে উঠলো বলল
-‘ বললাম না? সেটা শুধু বউয়ের কাছে অন্য কারোর কাছে না যদি অন্যর কাছে হই তাহলে তুই খুশি হবি? ‘
-‘ একদম মে-রে ফেলবো ‘
চলবে ইনশাআল্লাহ