অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব ১৮

0
829

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৮ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

পরিবেশটা নিশ্চুপ হয়ে গেলো সকলে দৃষ্টির মধ্যে মনি জারা। জারার ঠোঁট তিরতির করে ক্রমশ কাঁপছে। চোখ লাল হয়ে পানি টলমল করছে কিন্তু কাঁদছে না জারা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে কাপা কন্ঠে বলল

-‘ কো থায় তু ই? ‘

-‘ ……… ‘

-‘ আমি আসছি ‘

জারা ফোন কেটে সকলের দিকে তাকালো। ইশা বলল

-‘ কি হয়েছে আপু? তুমি কাপছ কেনো ‘

জারা ইশার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল

-‘ তোমরা গল্প করো আমার একটা কাজ পড়ে গেছে আমি আসছি ‘

কথাটা বলে জারা আর কারোর প্রশ্ন করার সময় না দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে রেডি হতে আর দাঁড়ালো না। জারা তারাতাড়ি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হবার সময় শান্তি বেগম এসে বলল

-‘ কি হইছে তোর? এমন বিদধস্ত লাগছে কেনো? ‘

জারা তারাহুরা গলায় বলল

-‘ মনি আমি এখন কিছু বলতে পারবো না আমাকে যেতে হবে আমি এসে সব বলব এখন সময় নেই বলার আমি আসছি ‘

-‘ তুই একা জাবি বাসার গাড়ি নিয়ে যা আমি শানকে বলছি ‘

-‘ লাগবে না মনি তুমি টেনশন করো না আমি ঠিক মতো চলে আসবো ‘

বাসার কারোই বোধগম্য হলো না। জারার কি হইছে। শান বাইরে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছিল জারা আসতেই বলল

-‘ আসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি ‘

জারা চলন্ত পায়ে বলল

-‘ লাগবে না ‘

শান জোর করতে গিয়ে ও পিছিয়ে এলো এই মুহূর্তে জারার সাথে ঝগড়া করে মুড খারাপ করার মানে হয় না জারাকে দেখেই মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু হয়েছে এখন কিছু না বলায় বেটার । বাসার সামনে যেতেই জারা ভাগ্যক্রমে সিএনজি পেয়ে গেলো।
.
.
জারা হসপিটালের করিডোর দিয়ে দৌড়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে রুহানকে দেখতে পেলো হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল

-‘ রু হান পু তু ল কই? ঠিক আছে ও? সুস্থ আছে ও বল না কি হলো কথা বলছিস না কেনো? ‘

রুহান জারাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল

-‘ শান্ত হ এখানে বস আগে ‘

জারা চোখ গেলো চেয়ারে বসে থাকা পুতুলের মা আর ছোট ভাইয়ের দিকে পুতুলের মা মুখে শাড়ি গুঁজে অঝর ধারায় কাঁধছে। জারা ধীর পায়ে মাথা নিচু করে পুতুলের মায়ের সামনে গিয়ে ফ্লোরে বসে বলল

-‘ আ’ ম সরি আন্টি আমাকে মাফ করবে আমি অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারলাম না আবার পুতুলকেও সুরক্ষা দিতে পারলাম না ‘

পুতুলের মা ছলছল চোখে জারার দিকে তাকিয়ে অগোছালো ভাবে বলল

-‘ না মা এমন বলবে না আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট করছ কিন্তু কি বলতো আমাদের নিম্নবিত্ত দের কপালে কিছু থাকে না সবসময় খারাপটাই হয় দেখ না আমার মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছে ও আমার প্রথম সন্তান আমাকে প্রথম মা বলে ডেকেছে আমি ওর কষ্ট কিভাবে সহ্য করব বল তো ও বাবা আজ বেঁচে থাকলে হত এমনটা হত না ভাগ্য আমাদের পালটে যেত কিন্তু হলো না সব এলোমেলো হয়ে গেলো ‘

কথা গুলো বলে আবারও অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো। পুতুলের ছোট ভাইটা বড়বড় চোখ তাকিয়ে আছে অবুঝ বাচ্চা কিছু বুঝতে পারছে না জারার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। জারা আর পুতুলের মাকে কিছু বলল না কি-ই বা বলবে? কি বলে শান্ত না দিবে? একটা মায়ের মেয়ের তার সবটা হারিয়ে ফেলেছে তার জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলে কখনোই সান্ত্বনা আসবে না। জারা চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে রুহানের কাছে গিয়ে কঠিন গলায় বলল

-‘ আমি তোকে বলছিলাম না পুতুলদের বাসায় পুলিশ ফোঁস দিতে তুই আমার কথা শুনলি না? দেখলি এখন ঔ শ-য়-তা-ন গুলো কি করলো? ‘

-‘ আমি পুলিশ ফোঁস দিয়েছিলাম জানি না কিভাবে কি হলো পুলিশ গুলো ওখানেই ছিল গু-লির আওয়াজ শুনতে ওরা ভিতরে গিয়েছে ‘

-‘ কেমন পুলিশ যে ওয়ান ডিউটিতে কাজের ঢিলেমি করে আজ তারা যদি ঠিক মতো ডিউটিটা করতো না তাহলে এখন পুতুল সুস্থ থাকতো আর অপরাধীও ধরা পরত ‘

রুহানের কিছু বলার মুখ থাকলো না চুপ হয়ে গেলো। জারা পুতুলের মায়ের পাশে বসে দোয়া করতে লাগলো যেনো পুতুল সুস্থ হয়ে যায়।

কয়েক ঘন্টা পর দুপুর ১২ টার ওটি থেকে ডক্টর বের হলো। সবাই ডক্টরের কাছে গেলো।

-‘ সরি! সি ইজ নো মোর ‘

পুতুলের মা হাওমাও করে কেঁদে উঠলো এতোক্ষণ আশা করে বসে থাকা মায়ের আর্তনাদ জারা থমকে গেলো চোখ দিয়ে পানি পড়ল না বিরবির করে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো।

সন্ধ্যা হয়ে আসল জারার ব্যাগে অনবরত ফোন বেজে চলেছে জারা পুতুলদের বাসার সিমেন্টের বাধায় করা ফ্লোরে বসে চোখের পানি ফেলছে কিছুক্ষণ আগেই পুতুলের শেষ বিদায় দিয়েছে। পুতুলের মা কেঁদে যাচ্ছে সকাল থেকে কেউ কিছু খায় নি না খাওয়া আছে সবাই এতো সব কাহিনির পর কে খেতে পারে কোনো মা-ই খাবার মুখে তুলতে পারবে না রুহান জারার কাছে এসে বলল

-‘ জারা ওঠ বাসায় চল সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাসাস দিয়ে আসি তোকে ‘

জারা ছলছল চোখে তাকালো রুহানের দিকে রুহান দিয়ে আশাস দিলো। জারা পুতুলের মায়ের পাশে বসলো কিছুক্ষণ।
.
.
জারা বাসায় আসতেই দেখলো সকলে ড্রাইংরুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। জারাকে দেখে শান উঠে এসে জারার সামনে এসে বলল

-‘ তোকে কতবার ফোন দিয়েছি আর তুই একবারও ফোন তুললি না নিজেকে কি ভাবিস? তোর জন্য সকলে চিন্তায় মরে যাচ্ছে আর তোর কিছু যায় আসে না ফোনটা ধরে তো কথা বলে জানাতে পারিস কোথায় আছিস? ‘

জারা শানের দিকে তাকালো মুখ দিয়ে কোনো টু শব্দ করলো না। শান সহ সকলে চমকে উঠল জারার চোখ অসম্ভব লাল হয়ে ফুলে আছে। জারা কিছু না বলে উপরে চলে গেলো রুমে গিয়ে ফ্রেশ না হয়ে বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। শান্তি বেগম এসে জারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

-‘ কি রে কি হইছে বল আমাকে ‘

জারা শান্তির কোলে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে উঠে বলল

-‘ জানো মনি আমি ওকে বাঁচাতে পারি নি ও ও চলে গেছে আব্বু আম্মুর মতো জানো মনি ঔ শ-য়-তা-ন গুলো ওকে মেরে ফেলেছে ঔ শ-য়-তা-ন গুলোর আমি শাস্তি দিতে পারি নি ওরা মেয়েটাকে মে-রে ফেললো। জানো মনি ও মা খুব কাঁদছিল আমি অ-ল-ক্ষী তাই না মনি আমার জন্য সবটা হলো আমার জন্য এতো খারাপ হলো কেনো হলো আমি এতো খারাপ কেনো মনি কেনো মনি ‘

শান্তি চুপ করে শুনে বলল

-‘ এটা তো তোমার হাতে ছিল না এটার জন্য কেনো নিজেকে ব্লেম করছো এতো কেদো না মাথা ব্যাথা করবে ‘

জারা কেঁদে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here