অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব ১৬

0
893

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৬ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

জারা ওপরে এসে টিস্যু দিয়ে শাড়ী মুছ ছিল তখন দরজা আটকানোর শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো। চমকে উঠল শান এখানে? জারার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে কাঁপা কন্ঠে বলল

-‘ আ আপনি? এ খানে? দরজা আটকালেন কেনো? ‘

-‘ তোর সাথে হিসাব নিকাশ মিলাতে আসছি ‘

-‘ মানে? কিসের হিসাব নিকাশ? ‘

-‘ তুই বুঝিস না আমাকে? একটুও বুঝিস না! কখনো কি বুঝবি না? ‘

শানের কথা শুনে জারা হতভম্ব হয়ে গেলো। শানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো শানের চোখের ভাষা কিছু বলছে কথার খেলা চলছে কিন্তু জারা সেটা বুঝতে ব্যর্থ হলো। শান বিয়ের পর বা বিয়ের কথা উঠার পর থেকে কখনোই জারার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে নি সবসময় ধমকা ধমকি করে কথা বলেছে। বিয়ে আগের শান আর বিয়ে পরের শান দু’টোই অদ্ভুত ভাবে আলাদা চিনতে খুব কষ্ট হয় জারা মাঝে মাঝে তো মনে হয় তার জন্যই শানের এতো পরিবর্তন তারই সব দোষ তার জন্যই এতো কিছু। শান হয়ত কখনো গায়ে হাত তোলে নি। কিন্তু তার কথা মন মস্তিষ্ক এমন ভাবে আ-ঘা-ত করে যাতে ম-রে যেতে ইচ্ছে হয় জারার।

নিস্তব্ধ দুই মানব-মানবী দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ তাদের কথা বলছে। কিন্তু চোখের ভাষা বুঝতে তারা ব্যর্থ। কেউ তো কাউকে কখনো নিজের মনকে বুঝতে দেয় না। দূরে দূরে থাকে।

জারা নিজের মনে বলল

-‘ আচ্ছা ভালোবাসলে না-কি তার চোখের ভাষা বোঝা যায় কই আমি ও তো শান ভাইয়াকে ভালোবাসি তাহলে তার চোখের ভাষা কেনো বুঝতে পারছি না? তাহলে কি আমি ওনাকে ভালোবসি না?’

জারা অস্থির হয়ে উঠলো। শানের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি দিলো গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। জারা আবার চোখ তুলে তাকালো শানের দিকে শানের মুখে কেমন অদ্ভুত হাসি জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ হাসছেন কেনো? এখানে কি মিরাক্কেল হচ্ছে? ‘

-‘ তার থেকে বড় কিছু। বাই দ্যা ওয়ে শাড়ি পড়ছিস কেনো? তাও আবার সাদা বাহ তোর বর ম-রে গেছে? ‘

ম-রা-র কথা শুনে জারা রেগে বলল

-‘ কি সব যাতা বলছেন একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না ফাউল লোক যান তো এখান থেকে ‘

শান এক ভ্রু উঁচু করে বলল

-‘ আমার বাড়ি, আমি যেখানে খুশি থাকবো তুই বলার কে?’

জারা মুচকি হেসে বলল

-‘ ফাস্ট টফল এটা আপনার বাবার বাড়ি আপনার নয় আপনি তার ছেলে ফিউচারে মালিক হবেন সেকেন্ড হলো হ্যাঁ আমি জানি আমি এ বাড়ির কেউ নয় একজন আশ্রিতা বা আত্মীয় মাত্র কিন্তু যতদিন এখানে আছি এই রুমটা আমার জন্য বরাদ্দ আমি চলে গেলে এই রুমে যা ইচ্ছে করেন নো প্রবলেম আর একটা মেয়ের রুমে আসার সময় অবশ্যই আপনার নক করে আসা উচিত ছিলো এতটুকু সেন্স আপনার নাই? ‘

শান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জারার মুখ পানে জারা স্বাভাবিক ভাবে কত অবলীলায় কথা গুলো বলে দিলো কিন্তু ওপর ব্যক্তিটার কোথাও আঘাত করলো। অদৃশ্য র-ক্ত ক্ষরন হলো। শানের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো ‘আশ্রিতা?’

জারা তাচ্ছিল্য হেসে বলল

-‘ হ্যাঁ আশ্রিতা ছাড়া কি? আপনি কি আমাকে বউ হিসেবে মানেন না মানবে যে আমি নিজেকে এ বাড়ির বউ হিসেবে দাবি বা অধিকার খাটাবো? আপনি তো বিয়েটাই মানেন না আর সেখানে বউ ‘

শান কিছুক্ষণ চুপ থেকে শক্ত গলায় বলল

-‘ এই শাড়ি পড়ে যেনো বাইরে না দেখি। যদি দেখি না তাইলে আজকে আমার হাতে খু-ন টু-ন হয়ে যাবি ‘

জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ আমি যা-ই পড়ি যা-ই করি আপনার সমস্যা কোথায়? আপনি আমার ওপর অধিকার খাটাচ্ছেন না-কি হুকুম চালাছেন? ‘

শান বাকা হেসে বলল

-‘ আদেশ করছি।

-‘ যদি না শুনি? ‘

-‘ তার ফল তোকে পদে পদে ভোগ করতে হবে মাইন্ড ইট ‘

শান চলে গেলো। জারা তাকিয়ে রইলো শানের দিকে কি হয় মাঝে মাঝে এই লোকের এমন ভাবে অধিকার খাটাই মনে হয় তিনি সব মেনে নিয়েছেন আমাকে ভালোবাসেন আদেও কি তাই? ‘

জারা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আগে শাড়ি চেজ্ঞ করার কথা ভাবলেও বর্তমানে সিচুয়েশনে মনে মনে ভেবে নিলো এই শাড়ি পড়েই পার্টিতে যাবে। করলোও তাই শান রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো জারা শানকে পাত্তায় দিলো না। পার্টি শেষ করতে রাত হলো সকলের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় বাসায় চলে গেলো থেকে গেলো কয়েকজন আত্মীয় স্বজনরা। ইশার বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো ১৫ দিন পর।

জারা খেয়ে ওপরে রুমে চলে আসলো। এসেই থমকে গেলো শান জারার বেডে শুয়ে ফোন টিপছে জারা স্ট্যাচু হয়ে গেলো। স্তম্ভিত ফিরে পেতেই বলল

-‘ আপনি আবার এখানে কি করছেন? ‘

-‘ ভাবছিলাম আজ রাতটা এখানেই ঘুমাবো ‘

জারা চমকে বলল।।

-‘ মানে?’

-‘ যা শুনছিস সেটাই ‘

-‘ আশ্চর্য তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো?

-‘ যেখানে খুশি থাক। মন চাইলে আমার পাশেও ঘুমাতে পারিস আমি মাইন্ড করবো না’

-‘ অসহ্য ফাজিল লোক ফাইজলামি পাইছেন না-কি আমি কিন্তু চিৎকার দিয়ে সকলকে ডাক।

-‘ ডাক স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকবে তাতে কে কি বলবে আমিও দেখি ‘

জারা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল

-‘ আপনার মাথায় কি চলছে সত্যি করে বলেন তো আমার আপনাকে সুবিধার লাগছে না ‘

শান ঝংকার তুলে হেসে উঠে বলল

-‘ বাহ তোর মাথায় তো দেখছি বুদ্ধি হয়েছে তাহলে ‘

জারা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল

-‘ আপনি যাবেন? ‘

শান অকপটে বলল

-‘ না! ‘

জারা ফোঁস ফোঁস করতে করতে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে থেকে চেজ্ঞ করে আসলো। জারার কাজে তার রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। সব কাজ জোরে জোরে শব্দ করে করলো। থাকলো না এ রুমে ইশা রুমে গেলো। সব শুনে ইশা হাসি থামছেই না। জারা তাতে আরো বিরক্ত হলো বালিশ নিয়ে কান চেপে শুয়ে রইলো।

—-

সকালে সকলে বসে চা খাচ্ছে জারা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। নিজের রুমে আর যায় নি। সারারাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারি নি। সকালের নাস্তা খেয়ে ওপরে আসলো এখন শান নেই খাবার খেয়ে কোথায় যানি গিয়েছে। জারা রুমে এসে স্তব্ধ হয়ে গেলো কালকের শাড়িটা কাঁ/চি দিয়ে কেউ কু’চিকু’চি করে কেটেছে। কে কাজটা করেছে যারার বুঝতে অসুবিধা হলো না। জারা রেগে গিয়ে বিচার দিতে গেলো শান্তির কাছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here