বোনু Part_03

0
881

বোনু
Part_03
#Writer_NOVA

মির্জা বাড়ির ড্রয়িং রুমে ২০ বছরের একটা মেয়ে দৌড়চ্ছে।তার পেছন পেছন তার ৪ ভাই। বড় ভাইয়ের হাতে জ্যাম পাউরুটি, মেজো ভাইয়ের হাতে জুসের গ্লাস, সেজো ভাইয়ের হাতে ফলের প্লেট, ছোট ভাইয়ের হাতে পানির গ্লাস। কিন্তু তাদের বোনু এসবের কিছুই খাবে না।খাবারের হাত থেকে বাঁচতে এদিক সেদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মেয়েটা বয়সে আর হাত-পায়েই বড় হয়েছে। কিন্তু আচার-আচারণে এখনো বাচ্চামো রয়ে গেছে। তার ভাইদের চোখে তো এখনো ছোট খুকি।চার ভাই তাদের আদরের বোনুকে সেই ১০ বছরের ছোট মেয়ে মনে করে।

অর্ণবঃ বোনু দুষ্টুমি করে না।একটু খেয়ে নে।
উষাঃ ওয়াক ছিঃ। বড় ভাইয়ু এগুলো খেতে আমার একটু ভালো লাগে না।
আদিলঃ দাঁড়া বোনু।একটু জুস খেয়ে নে।
উষাঃ খাবো না, খাবো না।আমি কিছু খাবো না।
ঈশানঃলক্ষ্মী বোনু আমার।খাবারটুকু না খেলে তুই দৌড়ানোর শক্তি কোথায় পাবি?
ইশাতঃবোনু আর কিছু না খাস, কয়েক পিস ফলের টুকরোতো মুখে দে।
উষাঃ একদম না।আমার খেতে ভালো লাগে না। প্লিজ ভাইয়ুরা জোর করো না।আমার এগুলো খেতে বিরক্ত লাগে।কি বিচ্ছিরি খেতে?

উষা ওর ভাইদের ভাইয়ু বলে ডাকে।এখন চার ভাইয়ের এক ভাইও তাদের বোনকে ধরতে পারছে না।ভীষণ জেদি মেয়ে। খাবার নিয়ে অনেক জেদ করে।এটা খাবে না, ঐ টা খাবে না,ঐ ফল ভালো না,এই খাবারে স্বাদ নেই। নানা বাহানা করে।আর ৪ ভাই প্রতি দিন ওর পেছনে ছুটে হয়রান হয়ে যায়।কিন্তু কখনও বোনের আগে খাবার খায় না।যত দেরি হোক বোনকে খাইয়ে নিজেরা খাবে।সবার আগে ওদের বোন।তারপর বাকি সব কিছু।

অর্ণবঃবোনু তুই কি খাবি না?
উষাঃ আমার খেতে ভালো লাগে না ভাইয়ু?।
আদিলঃ ঠিক আছে তোর খেতে হবে না।তুই না খেলে আমরাও আজ কিছু মুখে দিবো না।
ঈশানঃ ভাইয়া সব কিছু রেখে দে তো। আমরা কেউ কিছু খাবো না।ও জানে না, ও খাবার মুখে না দিলে আমরা খাই না।(কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে)
উষাঃ ইমোশনালি ব্লাকমেল করছো।
(মুখ গোমড়া করে)
ইশাতঃ তোর কিছু খেতে হবে না। চলো তো ভাইয়ারা।আমরা আমাদের কাজে চলে যাই।আজ আমরা এক ফোঁটা পানিও মুখে দিবো না।তোরও কিছু খেতে হবে না।

চার ভাইয়ের বুদ্ধিটা কাজে লাগলো।চার ভাই চোখের ইশারায় এমনটা করেছে।উষা চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো সোফায় এসে বসলো।তার এখন কান্না পাচ্ছে। খাবার খেতে তার সবচাইতে কষ্ট হয়।
আদিলঃ এই তো আমার জাদু বোনু।দেখি হা করতো।
উষাঃ ই ই ই ই ??আমার খেতে ভালো লাগে না।
ইশাতঃ তোর কি খেতে ভালো লাগে একবার বল? পুরো দোকান তোর জন্য উঠিয়ে নিয়ে আসবো
উষাঃ আমার ফুচকা খেতে ভালো লাগে ?।
ঈশানঃ ঠাটিয়ে এজটা চড় মারবো।ভালো কিছু খেতে মন চাই না।তার এখন সকাল বেলা ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে।
উষাঃ ব–ড়–,ভা–ই—য়ু?।সেজো ভাইয়ু,ঈশানু শয়তানটাকে কিছু বলো।ও নাকি আমাকে মারবে।ওকে না বকলে আমি খাবো না।
আদিলঃ ওর এত সাহস হয়েছে নাকি।যে হাত দিয়ে চড় মারবে সে হাত কেটে নিবো।
ইশাতঃ শান,তোর সবসময় ওর সাথে লাগতে হবে।এভাবেই খেতে চাইছে না।
অর্ণবঃ শান কে ইচ্ছে মতো বকে দিবো।তুই একটু খেয়ে নে বোনু।
উষাঃ আচ্ছা। ওকে বেশি করে বকে দিবে।একদম ভালো হয়েছে। এবার ভাইয়ুরা তোমাকে বকবে।
(শয়তানি হাসি দিয়ে)

কোন রকম একটা পাউরুটি, অর্ধেক গ্লাস জুস ও কয়েক পিস ফল খেয়ে দৌড়ে পালালো।পালানোর সময় সোফার সাথে বেজে পরে গেলো।
উষাঃ আউচ্—–
ঈশানঃ বোনু—(চিৎকার করে)
ইশাতঃ কি হয়েছে তোর? (ভয় পেয়ে)
অর্ণবঃ তুই ঠিক আছিস?
আদিলঃ দেখি কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস?

চার ভাই দৌড়ে বোনের কাছে এলো। পাগল হয়ে গেছে কি থেকে কি করবে?ব্যাথাটা যেনো ওরাই পেয়েছে।
উষাঃ সামান্য একটু ব্যাথা পেয়েছি।
ইশাতঃ এই তোর সামান্য। অনেক খানি চামড়া ছিলে গেছে। খাবার খাবে না। ব্যাথা পাবে না তো কি করবে?
ঈশানঃ সরো তোমরা। আমি ওকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি। একদম খেয়াল করে না। ঘাস ফরিং এর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলবে।
অর্ণবঃ আদি গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে আয় তো।
আদিলঃ আমি এখুনি নিয়ে আসছি।ঈশান ওকে কোলে নিয়ে সোফায় বসা তো।

সামন্য একটু চোট পেয়েছে তাতেই ভাইদের জান চলে যাওয়ার মতো অবস্থা। ঈশান ওর বোনকে কোলে করে সোফায় বসালো। চারজনের মন খারাপ।
উষাঃ ভাইয়া সামন্য একটু–
অর্ণবঃ একদম চুপ। চামড়া ছিলে গিয়ে লাল হয়ে আছে। তুই বলছিস কিছু হয় নি।

আদিল ব্যাথার জায়গায় এন্টস্যাপটিক লাগিয়ে দিচ্ছে। এতটা যত্নের সাথে যে বোনের গায়ে একটুও ব্যাথা লাগে না।আলতো হাতে ফুঁ দিয়ে এন্টস্যাপটিক লাগাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে ব্যাথাটা আদিল পেয়েছে।
উষা ওর ভাইদের কান্ড দেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।বাকি তিনজন খাবার নিয়ে হাজির।বাড়ির সার্ভেন্টরা হা করে তাকিয়ে আছে। এটা অবশ্য নতুন নয়।কিন্তু তারপরও ওদের ভাই- বোনের ভালবাসার কাহিনীগুলো দেখতে ওদের অনেক ভালো লাগে।চার ভাই কখনো বোনের কোন কাজই সার্ভেন্টদের করতে দেয় না ।সব কাজ নিজেরা করবে। সত্যি এরকম ভাই পেতে সাত কপালের ভাগ্য লাগে।যা সবাইকে আল্লাহ দেয় না। আমাদের সবাইকে আল্লাহ একভাবে না একভাবে পরিপূর্ণ করে দেয়। সবাই সবকিছু পায় না।আল্লাহ আমাদের সেটাই দেয় যেটা আমাদের জন্য মঙ্গল। যেটা আমাদের নেই সেটা হয়তো আমাদের জন্য মঙ্গলকর ছিলো না।তাই আল্লাহ দেয় নি।উষার একটা দুইটা নয় চারটা ভাই আছে। কিন্তু ওদের বাবা-মাকে নিয়ে গেছে। ভাই থাকাটা ওর জন্য মঙ্গলকর তাই আল্লাহ ওকে দিয়েছে।

উষা এতখন কান্না আটকে রাখতে পারলেও এখন আর পারলো না।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বোনকে কাঁদতে দেখে চার ভাই পাগল হয়ে যাচ্ছে। মনে করছে বোন অনেক ব্যাথা পেয়েছে।
আদিলঃ বোনু কি হয়েছে?
অর্ণবঃ কাঁদছিস কেন তুই?
ঈশানঃ অনেক ব্যাথা করছে।
ইশাতঃ আমি ডক্টর নিয়ে আসছি।
অর্ণবঃ শান,আদি কেউ গিয়ে জলদি ডক্টর নিয়ে আয়।নিশ্চয়ই বোনু অনেক ব্যাথা পেয়েছে।

সামান্য চোটের জন্য চার ভাই এখন ডাক্তার ডাকবে।বলেন তো বোনকে কতটা ভালবাসলে ভাইরা এরকম পাগলামি করতে পারে। উষা ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বললো।

উষাঃ আমার ব্যাথা করছে না।তোমরা আমাকে এতো ভালবাসো কেনো? আমার কত সৌভাগ্য যে তোমাদের মতো ভাই পেয়েছি। তোমরা কখনও আমাকে বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে দেও নি।আমার জন্য এখনো নিজেরা বিয়ে করোনি।আমাকে বিয়ে দেওয়ার পর তোমরা বিয়ে করবে।কতটা ভালবাসলে কোন ভাই তার বোনের জন্য এমনটা করতে পারে।আমার কপালটা সত্যি অনেক বড়।তাইতো আমি একটা,দুইটা, তিনটা নয় চারটা ভাই পেয়েছি। যদি কখনও আমার কিছু হয় তখন কি করে বাঁচবে? আমি না থাকলে একদম পাগলামি করবে না।তাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।

ঈশানঃ খবরদার একদম উল্টো-পাল্টা কথা বলবি না।
আদিলঃ তোর কিছু হবে না।তোর কিছু হতে দেবো না।
ইশাতঃ যে তোর দিকে তাকাবে তার চোখ তুলে ফেলবো।চার ভাইয়ের কলিজা তুই। তোকে ছারা কি করে বাঁচবো।
অর্ণবঃ আরেকদিন এসব কথা বললে তোর সাথে রাগ করবো কিন্তু । তোর চার ভাই তোর গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগতে দিবে না।
উষাঃ আমি জানি ভাইয়ুরা।কিন্তু যদি কখনও কোন এক্সিডেন্টে আমার কিছু হয়ে যায়।এতো ভালবাসা যদি আমার কপালে না সয়।সবাই তো বলে বেশি সুখ নাকি কপালে সয় না।আমি তাই বলছি।

চার ভাই বোনকে জরিয়ে ধরে বলছিলো তোর কখনও কিছু হবে না।তোর ভাইয়ুরা তোর কিছু হতে দিবে না।আল্লাহর কাছে যে প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পরে তোর জন্য দোয়া করি । তোর জীবন হেফাজতের মালিক যে স্বয়ং আল্লাহ।

???

ঈশানের ডাকে আদিল ভাবনা থেকে ফিরে এলো। এতখন ধরে আদিল চেয়ারে বসে দুই গালে হাত দিয়ে পুরনো স্মৃতি কল্পনা করছিলো।আশ্চর্য হলেও সত্যি। উষার তখনকার কথাগুলোর সাথে এখনকার পরিস্থিতি মিলে গেছে।

ঈশানঃ ভাইয়া —–
আদিলঃ হুম।
ঈশানঃ কখন থেকে তোমাকে ডাকছি? কোন ধ্যানে ছিলে তুমি? বড় ভাইয়া তোমাকে ডাকছে।
আদিলঃ বোনুর শরীরে অবস্থা কেমন?
ঈশানঃ এখন একটু ভালো।তখন যদি সাথে সাথে ডক্টর ডাকতে দেরী হয়ে যেতো তাহলে এতখন হয়তো আমাদের বোনু না ফারার দেশে পারি দিতো।
আদিলঃআমরা বেঁচে থাকতে আল্লাহ কখনও আমাদের কাছে থেকে বোনুকে নিয়ে যেতে পারে না।তারপরও বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।তিনি চাইলে সব করতে পারে।চল,ভাইয়া ও ইশাত অপেক্ষা করছে।

আদিল উঠে বোনের কাছে চলে গেল। তখন যদি ঈশান ডক্টরকে ডাকতে আর ২ মিনিট দেরি করতো তাহলে এতখনে উষা কবরে থাকতো।এখনো চার ভাই মুখে কিছু দেয় নি।খাবার তো গলা দিয়ে নামবে না।
আদিল ও ঈশান দেখলো অর্ণব থাই গ্লাসের ওপর হাত রেখে খুব মনোযোগ সহকারে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশাত পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

আদিলঃ ভাইয়া ডেকেছো।
অর্ণবঃআমরা চার ভাই থাকতে এতো বডিগার্ডের কড়া নজরদারি থাকতে আমাদের বোনুর মুখের অক্সিজেন মাস্ক কে খুললো?(রেগে)
ঈশানঃ কি বলছো এসব?(অবাক হয়ে)
ইশাতঃ ভাইয়া কিভাবে সম্ভব?
আদিলঃ যে এই কাজটা করেছে তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুকে খাওয়াবো।কে করছে?একবার তার নামটা বলো? কে করেছে এটা তার ব্যাপারে তোমার আইডিয়া আছে?

অর্ণবঃ সেটাই তো তোকে খুঁজতে হবে।আন্ডার ওয়াল্ডের সদস্য তুই আমি নয়।যেই করেছে পালানোর সময় অরূপ তাকে দেখেছে।অরূপ পিছু নিয়েও ধরতে পারেনি।

ঈশানঃ জানে মেরে ফেলবো তাকে পেলে।আমাদের কলিজাই আঘাত করেছে। ওর কপালে কি আছে তা ও নিজেও জানে না।

অর্ণবঃ ১মে বোনুর এক্সিডেন্ট তারপর আবার মারার চেষ্টা। এতগুলো পাহারাদার থাকতেও সবার চোখের আড়ালে যে এই কাজটা করতে পেরেছে সে সাধারণ কেউ নয়।আমাদের শত্রু অনেক শক্তিশালী।তারা জানেও না কার সাথে পাঙ্গা নিতে এসেছে।ধরতে পারলে ওদের বংশ নির্বংশ করবো।আমাদের হারানো এতো সহজ না।আমরা ভাংবো তো মচকাবো না।আমরা আমাদের বোনুর গায়ে একটা আঁচড় ও পরতে দিবো না।আদিল গোপনে ফোর্স লাগা।কে এসব করেছে তা আমার জানতে হবে? এট এনি কোস্ট আমার তাকে চাই। আমার বোনুকে এতো কষ্ট দিয়েছে তাকে কিছুতেই ছারবো না কিছুতেই না।

অর্ণব রেগে পেছনের দেয়ালে ঘুষি মারলো।এই মুহূর্তে সে যে পরিমাণে রেগে আছে তা বাকি ভাইরা ভালো করে বুঝতে পারছে।

ইশাতঃ তার মানে ভাইয়া,বোনুকে এক্সিডেন্ট করানোটা কি পুরো প্লান? কেউ জেনে শুনে আমাদের বোনের এক্সিডেন্ট করিয়েছে।

অর্ণবঃ হুম। তারা জানে আমাদের চার ভাইয়ের দূর্বলতা আমাদের একমাত্র বোন। তাই কাপুরষরা সেখানেই আঘাত করেছে। আমাদেরকে আরো সাবধান হতে হবো।

ঈশানঃআজ আমরা এক মিনিটের জন্যও বোনুকে ছেরে কোথাও যাবো না। পালা করে বোনুকে পাহারা দিবো।বডিগার্ডের আশায় রাখলে আবার অঘটন ঘটতে পারে।

আদিলঃ গুড আইডিয়া। আমাদের যার যে কাজ আছে সবগুলো ক্যান্সেল করে দেই।

চার ভাই একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো।কারো বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সে নিজেও জানে না সে কি ক্ষতি করেছে? তবে এতুটুকু বলা যায় তার জন্যও অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

#চলবে

#Par_02
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2937868886441844/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here