#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ17
ব্যক্তিটি তৃধার দিকে একপা একপা করে এগিয়ে আসতে লাগলো। আর তৃধা ভয়ে পিছনের দিকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু শরীরে এতোটা আঘাত থাকায় বিন্দুমাত্রও নড়তে পারলো না। ব্যাক্তিটি এসে রুমের কর্নার থেকে একটা চেয়ার টেনে তৃধার সামনে এসে বসলো। আবছা আলোতে ব্যাক্তিটির চেহারা দেখে তৃধার তাকে চিনতে এক মুহূর্তও সময় লাগলো না। ‘ও’ বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো
“আহান ভাইয়া!”
আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“যাক, চিনতে পেরেছো তাহলে।”
আহানের কথা শেষ হতেই তৃধা অবাক কন্ঠে বললো
“আমাকে এখানে আপনি তুলে এনেছেন? কিন্তু কেনো? আপনার সাথে তো আমার কোনো শএুতা নেই। ইনফ্যাক্ট আপনার সাথে তো আমার ভালো করে কোনোদিন কথাও হয়নি। তাহলে কেনো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন?”
তৃধার কথা শেষ হতেই আহান শান্ত আর গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো
“হ্যা, আজকের আগ অবদি হয়তো তোমার সাথে আমার কোনো রকম শএুতা ছিলো না। কিন্তু যেই মূহুর্তে তোমার ভাড়া করা লোকেরা আমার পুচকির শরীরে আঘাত করেছে, সেই মুহূর্ত থেকে তুমি আমার শএুর লিষ্টে নাম লিখিয়েছো। আর তোমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে জানো? আমার পুচকির শরীরে আঘাত করার শাস্তি হিসেবে তোমাকে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হবে সেইজন্যে।”
আহানের কথা শুনে তৃধা আৎকে উঠলো। ‘ও’ আতঙ্কিত দৃষ্টিতে ভয়ে ভয়ে আহানের চোখের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওর ভয় আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো। আহানের চোখ জোড়া ভয়ংকর হিংস্র রূপ ধারন করেছে। রাগে ওর মুখের রং পাল্টে গিয়ে রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। তৃধা বেশিক্ষন আহানের এমন হিংস্র চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না। ‘ও’ ঝট করে মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেদে উঠলো। আহান দাতে দাত চেপে বললো
“এতোগুলো দিন ধরে ওই মেয়েটাকে একটু সেইফ রাখার জন্যে আমি সারাক্ষন ওর পিছনে গার্ড দাড় করিয়ে রেখেছি। নিজের হাজারটা ইম্পরটেন্ট কাজ ফেলে রেখে হুডি আর মাস্ক পড়ে ওই মেয়েটার পিছনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়েছি। ‘ও’ বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যায়, কি করে, সেই সব কাজের প্রত্যেকটা সেকেন্ডর খবর আমি রেখেছি। ওর শরীরে যাতে কোনো আচ না আসে সেইজন্যে আমি ওকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছি। কিন্তু তুই কি করলি? আমার এতো যত্ন করে রাখা ফুলটাকে এইভাবে আঘাত করলি? ভার্সিটির সবার সামনে যা নয় তাই বলে ওকে অপমান করলি?”
তৃধা কান্না করতে করতে ভিতু স্বরে বললো
“সরি ভাইয়া! আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ। আমি জানতাম না যে মায়া মিহিরের বোন হয়। জানলে ওকে আঘাত করার কথা আমি কখনো ভুলেও মাথায় আনতাম না।”
“ভুল না, তুই জেনে বুঝে অন্যায় করেছিস। এটা প্রথম বার হলে হয়তো বাচ্চা মেয়ে ভেবে তোকে আমি মাফ করে দিতাম। কিন্তু তুইতো দিনের পর দিন একটার পর একটা অন্যায় করে গেছিস। নিরীহ মেয়ে গুলোর উপরে নির্যাতন চালিয়েছিস। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদের ভার্সিটি ছাড়া করেছিস। বাবার ক্ষমতার জোড়ে যাকে যেখানে পেরেছিস অপমান করেছিস। এতো অন্যায় করার পরেও তোকে কিভাবে মাফ করে দেই বলতো?”
আহানের কথা শুনে তৃধা বিস্ফোরিত চোখে আহানের দিকে তাকালো। ‘ও’ এটাই ভেবে পাচ্ছে না যে আহান এসব কিভাবে জানতে পারলো! তৃধাকে এভাবে তাকাতে দেখে আহান ওর দিকে কিছুটা ঝুকে গিয়ে বললো
“এতোটা অবাক হওয়ার কিছু নেই। এতোক্ষন ধরে তোকে যে টর্চার গুলো করা হয়েছে সেগুলো এমনি এমনি করা হয়নি। তোর সমস্ত পাপের খোজ খবর নিয়ে তারপর সেইগুলোর জন্যে তোকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যাই হোক, বেশি কথা বাড়িয়ে আর লাভ নেই। যতো তাড়াতাড়ি তোকে মেরে ফেলবো, ততো তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী থেকে একটা আবর্জনা কমে যাবে। তাই নিজের মৃত্যুর জন্যে নিজেকে প্রস্তুত কর।”
কথাটা বলে আহান চেয়ার থেকে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর কোমরে গুজে রাখা পিস্তলটা বের করে তৃধার কপাল বরাবর পয়েন্ট করলো। পিস্তল দেখে তৃধা ভয়ে হাউমাউ করে কেদে দিয়ে আহানের পা জড়িয়ে ধরলো। তারপর আকুতির ভরা কন্ঠে বললো
“আমাকে মারবেন না প্লিজ। আমি আর কক্ষনো কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার কখবো না। যাই হয়ে যাক না কেনো কোনোদিন কাউকে আঘাত করবো না। আজকের পর থেকে আমি একদম ভালো মেয়ে হয়ে যাবো। আপনি আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি আপনার কাছে আমার প্রান ভিক্ষা চাইছি। আমাকে বাচতে দিন।আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই না।”
কথাটা বলে তৃধা আহানের পা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোড়ে জোড়ে কান্না করতে লাগলো। আহান ওর হাতে থাকা পিস্তল টা আবার কোমরে গুজে নিলো। তারপর লম্বা দুটো নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগটাকে সংযতো করে বললো
“তুমি এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে। সামনে তোমার পুরো জিবনটা পরে আছে। তাই এই বয়সে এরকম উদ্ভট কান্ড করে নিজের লাইফটা নষ্ট করে ফেলো না। তোমার বাবা যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ। সবাই তাকে প্রচন্ড সম্মান করে। ভুল ভাল কাজ করে তাকে সবার সামনে এইভাবে ছোট করে দিও না”
এইটুকু বলে আহান তৃধার থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিলো। তারপর কিছুটা শ্বাসানোর স্বরে বললো
“এইবারের মতো তোমাকে ছেড়ে দিলাম। পারো তো নিজেকে সুধরে নিও। নাহলে তোমার লাইফ শেষ করতে আমার দুই ঘন্টাও সময় লাগবে না। আজকের পর থেকে আমার লোকেরা তোমার উপর সব সময় নজর রাখবে। তাই সাবধান, কখনো যদি শুনেছি যে তুমি আবার কারো সাথে অন্যায় করেছো তাহলে সেইদিন তোমার জিবনের শেষ দিন হবে।”
কথাটা বলে আহান হনহন করে রুমটা থেকে বেড়িয়ে গেলো। যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা গার্ডদের তৃধাকে হসপিটালে ভর্তি করার কথা বললো। আর এইদিকে তৃধা কাদতে কাদতে সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে রইলো। গার্ড গুলো তৃধার কাছে এসে ওর শরীরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মাএ কয়েক ঘন্টার মধ্যে মেয়েটার কি ভয়ানক অবস্থা হয়েছে। শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মারের দাগ নেই। অবশ্য ওরাই তো আহানের কথায় তৃধাকে এইভাবে মেরেছে। শুধু তৃধাকেই না, তৃধার ভাড়া করা সেই ছেলে গুলোকেও মেরে হাত-পা ভেঙে ফুটপাতে ফেলে এসেছে। আর যেই ছেলেটা মেঘের মাথায় মেরেছিলো সেই ছেলেটার হাতটা ভেঙে একদম থেতলে দিয়েছে। বেচে থাকলেও জিবনে ওই হাতটা কখনো আর ছেলেটার কোনো কাজে আসবে না।
_____________________
রাত 3:30
মেঘ নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলো। আর দিশা ওর বেডের পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসে ফোনে গেম খেলছিলো। হঠাৎ কেবিনের দরজায় কেউ এসে নক করলো। দিশা বসা থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ‘ও’ দরজা খুলতেই দেখলো বাইরে দুইজন ওয়ার্ড বয় আর একজন নার্স দাড়িয়ে আছে। এই অসময়ে এদের এখানে দেখে দিশা ভ্রু কুচকে ফেললো। নার্সটা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
“এতো রাতে ডিষ্টার্ব করার জন্যে সরি ম্যাম। আসলে এখনি পেশেন্টকে ইমারজেন্সি একটা টেস্ট করাতে নিয়ে যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের আসতে হলো।”
দিশা অবাক হয়ে বললো
“টেস্ট? তাও আবার এতো রাতে? এখন তো মেঘ ঘুমাচ্ছে। কালকে সকালে করালে হয় না?”
দিশার কথা শুনে নার্সটা বেশ মার্জিত ভঙ্গিতে বললো
“নাহ ম্যাম, ডাক্তার এখনি টেস্ট টা করিয়ে রাখতে বলেছেন। উনি সকালে এসে রিপোর্ট গুলো চেক করবেন। তাই পেশেন্টকে এখনি আমাদের নিয়ে যেতে হবে।”
“ওকে! আপনারা যেটা ভালো মনে করেন।”
কথাটা বলে দিশা এক সাইডে গিয়ে দাড়ালো। ওরা ভিতরে ঢুকে মেঘকে স্ট্রেচারে উঠিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। দিশা ওদের সাথে যেতে চাইলে নার্সটা দিশাকে বললো
“আপনাকে আর কষ্ট করে যেতে হবে না ম্যাম। আপনি একটু সময় রেষ্ট নিন। চিন্তা করবেন না, আমি আপনার পেশেন্টকে যেভাবে নিয়ে যাচ্ছি ঠিক সেভাবেই অক্ষত অবস্থায় তাকে ফেরত দিয়ে যাবো। আমার উপর এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন।”
নার্সটার এমন আন্তরিক ভঙ্গির কথা শুনে দিশা যাওয়ার জন্যে আর জোড় করতে পারলো না।সত্যি বলতে এই মুহূর্তে ‘ও’ ভিষন ক্লান্ত। সারাদিন ওর উপর দিয়ে যেই ধকল গেছে তাতে ওরও এখন একটু রেষ্টের প্রয়োজন। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দিশা হামি তুলতে তুলতে মেঘের বেডটার পাশের বেডটায় গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।
এদিকে মেঘকে স্ট্রেচারে উঠানোর সময় ওর ঘুম ভেঙে গেলো। ‘ও’ দেখলো ওকে হসপিটালের একদম টপ ফ্লোরে নিয়ে আসা হয়েছে। এই ফ্লোরে তেমন কোনো লোক জনের আনা গোনা নেই। চারপাশে একদম শুনশান পরিবেশ। মেঘ কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে এখানে ওকে কিসের টেস্টের জন্যে নিয়ে আসা হয়েছে! স্ট্রেচার টা যতো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততো মেঘের ভয় বাড়ছে। অতিরিক্ত ভয়ে ওর সারা শরীরের লোম দাড়িয়ে গেছে। সাথে বুকের মধ্যে কেমন ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে। ওয়ার্ড বয়েরা ওকে নিয়ে এসে একটা রুমের মধ্যে ঢুকালো। রুমটার মধ্যে ঢুকতেই মেঘ শিউড়ে উঠলো। কারন এটা একটা অপারেশন থিয়েটার। যেটার মধ্যে বিন্দুমাত্রও আলোর ছিটে ফোটাও নেই।
#চলবে…….