মিশে আছো মুগ্ধতায়–শেষ পর্ব

0
2089

#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ38

আহান কথাটা শেষ করতে না করতেই আহানের লোকেরা লোক দুটোর মাথায় শুট করে দিলো। শুট করার সাথে সাথে লোক দুটো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করতে লাগলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় ভয় পেয়ে অসাবধানতা বশত মেঘের হাত থেকে ফোনটা গাছের শেকরের উপর পড়ে ঠাস করে আওয়াজ হলো। সেই শব্দে আহান আর ওর লোকেরা ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো। মেঘ কী করবে কিছু বুঝতে না পেরে দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে জোড়ে দৌড় দিলো। কিন্তু হঠাৎ করে এতো জোড়ে দৌড় দেওয়ায় মেঘ নিজের লেহেঙ্গার সাথে পেচিয়ে ধরাম করে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে গেলো। সাথে সাথে আহানের গার্ডরা দ্রুত এসে মেঘের চারপাশ থেকে ওকে ঘিরে ফেললো। মেঘ হাতের কনুইয়ের সাহায্যে ভর দিয়ে উঠার চেষ্টা করেও আবার উপুর হয়ে পড়ে গেলো। আহান এগিয়ে এসে প‍্যান্টের পেকেটে দু-হাত গুজে সোজা হয়ে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষন মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর শান্ত গলায় বললো

–“এতো রাতে তুমি এখানে কি করছো?”

আহানের প্রশ্নের প্রতিউওরে মেঘ কিছু না বলে মাটি থেকে ফোনটা কুড়িয়ে দ্রুত হাতে নিয়ে কোন রকম উঠে বসলো। তারপর জামায় লেগে থাকা ধুলোগুলো ঝেড়ে বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো। আহান আরেকটু এগিয়ে এসে মেঘের একদম সামনে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর আগের মতোই শান্ত স্বরে বললো

–“কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছি তো? কথাটা কানে যায়নি? তুমি এতো রাতে এখানে কী করছো?”

আহানের কথায় মেঘ ভীতু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। তারপর শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো

“ভাইয়াকে খুজে পাচ্ছিলাম না। তাই এখানে ভাইয়া এসেছে কিনা সেটা দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু দেখলাম ভাইয়া এখানে আসেনি সেইজন‍্যে আবার চলেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু যাওয়ার সময় ভুল বশতো লেহেঙ্গা সাথে আটকে গিয়ে এখানে পড়ে গেছি।”

মেঘের কথা শুনে আহান মুখ বাকিয়ে হালকা হাসলো। তারপর মেঘের দিকে কিছুটা ঝুলে মৃদ‍্যু স্বরে বললো

“ভাইয়াকে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলে? চলে যাওয়ার সময় আশেপাশে তাকিয়ে আর কিছু দেখোনি?”

আহানের কথায় মেঘ ভয় পেয়ে আহানের থেকে দু-কদম পিছনে চলে গেলো। তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো

–“ন-না আমি আ-আর কিচ্ছু দ-দেখিনি। আ-আমাকে এখন য-যেতে হবে, আ-আমি আসছি।”

কথাটা বলে মেঘ আহানকে সাইড কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আহান খপ করে মেঘের হাত ধরে ফেললো। তারপর ঠোটের কোনে খানিকটা বাকা হাসি ফুটিয়ে বললো

–“আরেহ কোথায় যাচ্ছো? এখানে এতোক্ষন এতোকিছু হয়ে গেলো আর তুমি সেটা না দেখেই চলে যাচ্ছো? ওদিকে চলো, তোমাকে দারুন একটা জিনিস দেখাই।”

মেঘ আহানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো

“না আমি কিচ্ছু দেখতে চাই না। আমার হাত ছাড়ুন, আমি ভিতরে যাবো।”

“দেখতে চাও না বললে তো হবে না। এতো দূর পযর্ন্ত যখন এসেই পড়েছো তখন না দেখিয়ে তোমাকে কীভাবে যেতে দেই বলো তো?”

কথাটা বলে আহান মেঘের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে ওকে ডেডবডি দুটোর মাঝ বরাবর ছুড়ে মারলো। মেঘ সেখানে উপুর হয়ে পড়ে যেতেই ওর শরীর একদম রক্তে মাখামাখি হয়ে গেলো। ‘ও’ মাথা উঠিয়ে লাশ দুটোর দিকে তাকাতেই একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কারন অতিরিক্ত মারের ফলে দুটো লোকের চেহারাই বিকৃত হয়ে গেছে। যার জন‍্যে লোক দুটোকে এখন ভয়ংকর দেখাচ্ছে। মেঘ ভয় পেয়ে একটা চিৎকার দিয়ে দ্রুত বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর কোনোদিকে না তাকিয়ে জোড়ে দৌড় দিলো। কিন্তু কিছুদূর যেতে না যেতেই আহান দ্রুত এসে আবারও খপ করে মেঘের হাতটা ধরে ফেললো। মেঘ ছটফট করতে করতে আহানের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। ওকে এতো ছটফট করতে দেখে আহান ওর হাত পিছনে মুচড়ে ধরে ওর পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দাড় করালো। তারপর রাগি কন্ঠে বললো

“এখন এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছো কেনো? এইগুলো দেখার জন‍্যেই তো এতোক্ষন আড়ালে লুকিয়ে ছিলে তাইনা? এখন চোখ খুলে ভালো করে তাকিয়ে দেখো।”

আহানের কথা শুনে মেঘ এবার শব্দ করে কেদে দিলো। ভয়ে ওর হাত-পা থরথর করে কাপছে। কাদতে কাদতে ওর হেচকি উঠে গেছে। মেঘের কান্নার শব্দ কানে আসতেই আহান গম্ভীর স্বরে বললো

“কী হলো? এতোক্ষন তো অনেক সাহস দেখিয়ে সবটা দেখছিলে তাহলে এখন ফ‍্যাচফ‍্যাচ করে কাদছো কেনো?”

মেঘ কাদতে কাদতে চেচিয়ে বললো

“আপনি একটা জঘন‍্য মানুষ। আপনার মতো খারাপ মানুষ আমি পৃথিবীতে আর একটাও দেখিনি। হাত ছাড়ুন আমার। আপনি আমাকে স্পর্শ করলে আমার শরীর ঘিনঘিন করে। যেতে দিন আমাকে।”

মেঘের কথা শুনে আহান মেঘের হাত ছেড়ে দিয়ে ওর হাতের বাহু ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে ফেললো। তারপর এক হাত ওর কোমড়ে রেখে ওকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো। মেঘ আহানের বুকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে আহানকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে ফেললো। তারপর আবারও সামনের দিকে দৌড় দেওয়ার জন‍্যে পা বাড়ালো। কিন্তু আহান আর এইবার ওকে দৌড় দেওয়ার সুযোগই দিলো না। আহান মেঘের দিকে এগিয়ে এসে হিজাবের উপর থেকে মেঘের চুলগুলোকে শক্ত করে মুঠো বন্ধি করে ওর মুখের উপর ক্লোরোফর্ম স্পে করে দিলো। সাথে সাথে মেঘ সেন্সলেস হয়ে ধরাম করে মাটিতে পড়ে গেলো। আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বাসার দিকে হাটা দিলো।
_________________________
সকাল 7:35

ফার্ম হাউজের ছাদের এক কোনে রেলিংয়ের উপর হাত রেখে শুকনো মুখ করে দাড়িয়ে আছে মিহির। ওর মাথার চুলগুলো সম্পূর্ন এলোমেলো হয়ে আছে। চেহারার মধ‍্যে কেমন একটা উদাশীন ভাব চলে এসেছে। ‘ও’ কালকের হলুদের অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর পুরো রাতটা বাইরেই কাটিয়েছে। ভেবেছিলো এখানে আর আসবেই না। কিন্তু সকাল সকাল আজম রহমান ফোন দিয়ে মিহিরকে ধমক দেওয়ার কারনে বাধ‍্য হয়ে ওকে এখানে আসতেই হলো। মিহির শূন‍্য দৃষ্টিতে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেলো। ওর চোখের সামনে ভেষে উঠলো দু-বছর আগের সেই অতিতের কিছু স্মৃতি।

মেঘকে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ করার জন‍্যে মিহির আর আহির বেশ অনেকদিন ভার্সিটি প্লাস ফ্রেন্ড সার্কেলদের থেকে দূরে ছিলো। ফাইনাললি মেঘ, অভি, আজম রহমান একদম পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর ওরা এদিকের সবকিছু সামলে নিয়ে একদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দ‍্যেশ‍ে বেড়িয়ে পড়েছিলো। কিন্তু রাস্তার মধ‍্যেই আহিরের আর মিহিরের ওদের ফ্রেন্ড গ‍্রুপের সব ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিলো। অনেকদিন পর সবার একসাথে দেখা হওয়ায় ওরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে একটা ক‍্যাফেতে চলে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে সবাই মিলে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে ওরা ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দ‍্যেশ‍ে বেড়িয়ে পড়েছিলো। কিন্তু বিপওি ঘটলো তখন, যখন অন‍্য বাইকে জায়গা খালি না থাকায় বন‍্যা নামের একটা মেয়ে এসে মিহিরের বাইক‍ের পিছনে উঠে পড়লো।মিহিরও বেশি রিয়‍্যাক্ট না করে বন‍্যাকে একটু দূরত্ব রেখে বসতে বলে বাইক স্টার্ড দিলো। ওরা সবাই ওখান থেকে সোজা ভার্সিটিতে এসে বাইক নিয়ে পার্কিংয়ের দিকে চলে গেলো। মিহির বন‍্যাকে বাইক থেকে নামতে বলে নিজে গিয়ে বাইকটা পার্কিংয়ে রেখে বাইক থেকে নেমে পড়লো। তারপর ‘ও’ সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন‍্যে পা বাড়াতেই কোথা থেকে সাঈফা হনহন করে হেটে এসে বন‍্যার গালে কশিয়ে পরপর দুটো চড় মেরে দিলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় মিহিরসহ ওখানে উপস্থিত সবাই পুরো হতবম্ভ হয়ে গেলো। সাঈফা বন‍্যার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর গলা টিপে ধরে বললো

“তোর সাহস তো কম না? একে তো তুই মিহিরের বাইকে উঠেছিস তার উপর আবার ওকে জড়িয়েও ধরেছিস? আজকে তো তোকে আমি একেবারে খতম করে ফেলবো।”

কথাটা বলে সাঈফা আরো জোড়ে বন‍্যার গলাটা চেপে ধরেছিলো। বন‍্যা নিঃশ্বাস নিতে না পেরে কাশতে শুরু করে দিলো। এটা দেখেও সাঈফা থেমে যায়নি। ‘ও’ বন‍্যার গলা থেকে এক হাত সরিয়ে সেই হাত দিয়ে শক্ত করে বন‍্যার চুল চেপে ধরলো। মিহির এসব আর সহ‍্য করতে না পেরে এগিয়ে এসে সাঈফার হাত ধরে টেনে ওকে বন‍্যার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওর গালে ঠাটিয়ে পরপর চারটা চড় মেরে দিলো। তারপর মিহির রাগের মাথায় সাঈফাকে ছ‍্যাচরা, ছোটলোক, ক‍্যারেক্টারলেস মেয়ে এইসব বলে পুরো ভার্সিটির সবার সামনে অপমান করেছিলো। কিন্তু মিহিরের এসব কথার প্রতি উওরে সাঈফা সেদিন একটা কথাও বলেনি। শুধু স্তব্দ হয়ে মিহিরের দিকে ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে থেকে ওর সব কথা গুলো শুনে গেছে। তারপর চুপচাপ মাথা নিচু করে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো। ওই দিনের পর থেকে সাঈফা আর ওই ভার্সিটিতে পা রাখেনি। তার কিছুদিন পর মিহির জানতে পেরেছিলো সাঈফা নাকি দেশ ছেড়েই চলে গেছে। খবরটা শুনে কোনো এক অজানা কারনে মিহিরের বুকের মধ‍্যে মোচড় দিয়ে উঠেছিলো। কিন্তু ‘ও’ তখনও ওর এই অদ্ভুত ফিলিংসের কোনো কারন খুজে পায়নি। তবে আস্তে আস্তে যতো দিন যাচ্ছিলো ততো মিহির সাঈফার শূন‍্যতা টা অনুভব করছিলো। ওকে ভিষন ভাবে মিস করা শুরু করেছিলো। কিন্তু নিজের ইগোর কারনে কখনও এই কথাটা কাউকে বলতে পারেনি।

সাঈফা যেদিন লন্ডন থেকে ফিরে এসেছিলো সেদিন সবচেয়ে বেশী খুশী হয়েছিলো মিহির। কিন্তু ওই যে নিজের সো কল্ড ইগোর কারনে সেই খুশীটা সবার কাছ থেকে আড়াল করে রেখেছে। ইনফ‍্যাক্ট নিজের এই ইগোর কারনে ‘ও’ কখনো সাঈফাকে বলেই উঠতে পারেনি যে ‘ও’ সাঈফাকে কতোটা ভালোবাসে। হ‍্যা ‘ও’ সাঈফাকে ভালোবেসে ফেলেছে। সাঈফার শূন্যতা অনুভব করতে করতে কখন যে মিহির সাঈফাকে নিজের মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছে সেটা ‘ও’ নিজেই কখনো বুঝতে পারেনি। যখন নিজের অনুভূতি টা ‘ও’ উপলব্দি করতে পারলো তখন সেটা চেয়েও মুখ ফুটে সাঈফাকে বলতে পারলো না। কীভাবেই বা বলতো? যেই মেয়েটাকে সব সময় অপমান করেছে, গায়ে হাত তুলেছে, তার সামনে দাড়িয়ে তাকে কীভাবেই বা ভালোবাসি কথা টা বলতো? এসব ভাবতে ভাবতে মিহির একটা দীঘাশ্বাস ফেললো। হঠাৎ কেউ পিছন থেকে এসে মিহিরের কাধে হাত রাখলো। মিহির ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর পাশে সাজিদ দাড়িয়ে আছে। সাজিদকে এখানে দেখে মিহির ওর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সাজিদ হালকা হেসে ওর কাধে ঝুলানো ব‍্যাগ টা কাধ থেকে নামিয়ে ছাদের একপাশে রেখে দিলো। তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনের গ‍্যালারিতে গিয়ে একটা পিক বের করে সেটা মিহিরের সামনে ধরলো। মিহির ভ্রু কুচকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো। ফোনের স্কিনে হোয়াইট গাউন পড়া একটা হাস‍্যেজ্জ্বল মেয়ের পিক ভেষে উঠেছে। সাজিদ ঠোট প্রসারিত করে একটু হেসে মিহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“এই যে মেয়েটাকে দেখছো, এই মেয়েটার নাম লাবন‍্য। মাই ফাষ্ট এন্ড লাষ্ট লাভ।”

কথাটা বলে সাজিদ ফোনটাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে ফোনের স্কিনের উপর একটা চুমু খেলো। তারপর ফোনটাকে অফ করে আবারও পকেটের মধ‍্যে রেখে দিলো। মিহির অবাক দৃষ্টিতে সাজিদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারন ‘ও’ এতোদিন ভেবেছে সাজিদ সাঈফাকে পছন্দ করে। তাই ওর সাজিদের প্রতি এতোদিন এতোটা রাগ ছিলো। কিন্তু এখন তো দেখছে সাজিদ অন‍্য কাউকে ভালোবাসে। মিহিরের ভাবনার মধ‍্যে সাজিদ এগিয়ে গিয়ে রেলিংয়ের উপর হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলা শুরু করলো

“আমি যখন ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে পড়ি তখন আমার আর লাবন‍্যর পরিচয় হয়। আমাদের দুজনের মধ‍্যে খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ ছিলো। একজন আরেক জনকে ছাড়া কখনো কোথাও যেতাম না। লাবন‍্যও আমার সাথে আমার ক্লাসেই পড়তো। আমরা দুজন এক আত্মার মতো ছিলাম। আমাদের মধ‍্যে একজন আঘাত পেলে আরেক জনও কেদে দিতো। এতোটা গভীর ছিলো আমাদের ফ্রেন্ডশিপ। একটা সময় আমাদের ফ্রেন্ডশিপ ভালোবাসায় পরিনত হলো। হুট করেই লাবন‍্য আমাকে একদিন প্রোপোজ করে বসলো আর আমিও সেটা এক্সেপ্ট করে নিলাম। কারন আমিও ওকে খুব ভালো বেসে ফেলেছিলাম। সবকিছু একদম ঠিকঠাকই চলছিলো। আমরা কলেজ শেষ করে ভার্সিটি লাইফে পা রাখলাম। সেখানে আমাদের দুজনের আরো অনেকের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হলো। আমাদের ফ্রেন্ডদের বড় একটা গ্রুপ ছিলো। সেই গ্রুপে রুহি নামের একটা মেয়ে ছিলো। মেয়েটার সাথে আমার বেশ ভালো বন্ডিং ছিলো। মেয়েটা মাঝে মাঝে আমার সাথে আমাদের বাড়িতেও আসতো। যেটা লাবন‍্য একদমই সহ‍্যে করতে পারতো না। ওর সাথে প্রায়ই আমার এই ব‍্যাপারটা নিয়ে ঝগরা হতো। ‘ও’ সবসময় আমাকে রুহির থেকে দূরে থাকতে বলতো। আর আমি ওর এই কথাটা শুনে ওর উপর ভিষন বিরক্ত হয়ে যেতাম। ওকে বকাঝকা শুরু করে দিতাম। একবার তো রেগে গিয়ে ওকে একটা থাপ্পরও মেরে দিয়েছিলাম। থাপ্পরটা খেয়ে মেয়েটা সেদিন অবাক হয়ে ঢ‍্যাবঢ‍্যাব করে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওকে চড়টা মেরে আমি নিজেও বোকা বনে গিয়েছিলাম।”

কথাটা বলে সাজিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মিহির কপাল কুচকে সাজিদের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ও’ এটাই বুঝতে পারছে না যে সাজিদ নিজের লাভ স্টোরি ওকে কেনো শোনাচ্ছে। সাজিদ কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও বলা শুরু করলো

“চড়টা খাওয়ার পর লাবন‍্য কাদতে কাদতে সেদিন নিজের বাসায় চলে গিয়েছিলো। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলো ‘ও’ আর কখনো আমার সামনে আসবে না। আমি সেদিন ওকে অনেক বার সরি বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু ‘ও’ আমার একটা কথাও শোনেনি। আমার বাসা থেকে বের হয়ে সোজা নিজের বাসায় চলে গিয়েছিলো। তারপর থেকে পুরো এক মাস ওর সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ‘ও’ নিজেকে একদম ঘর বন্ধি করে ফেলেছিলো। সমস্ত ফ্রেন্ড, আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। আমি ফোন দিলে আমার ফোনটাও কখনো রিসিভ করতো না। মেসেজ দিলে মেসেজ গুলো সিন করে রেখে দিতো কিন্তু কোনো রিপ্লাই দিতো না। এভাবেই পুরো এক মাস কেটে গিয়েছিলো। একমাস পর লাবন‍্য একদিন হুট করেই ভার্সিটিতে এসেছিলো। আমি ক‍্যাম্পাসের একপাশে দাড়িয়ে ছিলাম। লাবন‍্যকে আসতে দেখে আমি ওর সাথে কথা বলার জন‍্যে দ্রুত ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই কোথা থেকে রুহি এসে হাটু গেরে বসে ভার্সিটির সবার সামনে আমাকে প্রপোজ করলো। আমি রুহিকে রিজেক্ট করতেই যাচ্ছিলাম তার আগেই লাবন‍্য কাদতে কাদতে ভার্সিটির গেট দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেলো। আমিও দৌড়ে ওর পিছনে পিছনে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু যতোক্ষনে আমি ওর কাছে গিয়ে পৌছে ছিলাম ততোক্ষনে সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আমার লাবন‍্য আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলো।”

সাজিদের কথা শুনে মিহির চমকে উঠে ওর দিকে তাকালো। তারপর অবাক কন্ঠে বললো

“অনেক দূর চলে গিয়েছিলো মানে? কোথায় গিয়েছিলো?”

সাজিদ কম্পিত স্বরে বললো

“লাবন‍্য কোনো দিকে না তাকিয়েই রাস্তার মাঝখান থেকে দৌড়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই একটা দ্রুতগামি বাস এসে আমার লাবন‍্যকে একদম পিশে দিয়ে চলে গিয়েছিলো। আমার চোখের সামনেই সবটা হয়েছিলো। কিন্তু আমি কিচ্ছু করতে পারিনি। হতোবম্ভ হয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধুমাএ আমার ভালোবাসা মানুষটার রক্তাক্ত শরীরের ছটফটানি টা দেখেছিলাম। শেষ বারের মতো একবার ওকে বলতেও পারিনি যে আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি। জানেন, আমি ওকে একটা বার ছুয়ে পযর্ন্ত দেখতে পারিনি। ওর শরীরটা একদম ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছিলো। সেইজন‍্যে কেউ আমাকে আমার লাবন‍্যের কাছেই যেতে দেয়নি।”

কথাটা বলতে বলতে সাজীদের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পড়তে লাগলো। মিহির দু-কদম পিছিয়ে গিয়ে হতোবাক হয়ে শুধু সাজীদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাজিদ চোখের পানি মুছে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো

“সেদিন যখন শপিংয়ে গিয়েছিলাম তখন মেঘের কাছ থেকে আমি আপনার আর সাঈফার ব‍্যাপারে সবটা জানতে পারলাম। তারপর যখন শপিং থেকে ফিরে সাঈফার কাছে শুনলাম আপনি ওকে আমাদের সাথে শপিংয়ে যেতে দিবেন না বলে ওকে আটকে রেখেছিলেন। তখন আমি মেঘের সাথে প্লান করে আপনাকে জেলাস থেরাপি দেওয়ার মিশন শুরু করলাম। আর আমি আমার মিশনে সাকসেসও হলাম। কিন্তু মিশন সাকসেস করতে গিয়ে আপনি আমার চেহারার নকশা চেইঞ্জ করে দিয়েছেন ব্রো। যাই হোক এতে আমি একটুও মাইন্ড করিনি। কারন আমি যখনই সাঈফার কাছাকাছি গিয়েছি তখনই আপনার চোখে আমি একটা অদ্ভুত ছটফটানি দেখেছি। আপনি আমাকে সাঈফার কাছাকাছি যেতে দেখলেই একদম উন্মাদের মতো বিহেব করতেন। যেটা আমার চোখ থেকে কখনো এড়ায়নি। আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন, আমি খুব ভালো করে জানি যে আপনি সাঈফাকে খুব ভালোবাসেন। শুধু নিজের ইগোর কারনে আপনি সেই ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে পারছেন না।”

সাজিদের কথা শুনে মিহির শুধু অবাকের পর অবাক হচ্ছে। ‘ও’ কী ভেবে রেখেছিলো আর এখন কী শুনছে এসব? সাজিদ এসব শুধুমাত্র ওকে জেলাস ফিল করানোর জন‍্যে করেছে? আর ‘ও’ কিনা এতোদিন সাজিদকেই নিজের শএু ভাবছিলো? মিহিরকে এতোটা অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সাজিদ এগিয়ে এসে মিহিরের কাধে হাত রাখলো। তারপর মলিন মুখে বললো

“একটা কথা বলি ব্রো? ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ! ভালোবাসার মানুষটা যখন কাছেই আছে তখন তাকে ভালোবাসি কথাটা বলে দিন। নাহলে যদি কখনো তাকে হারিয়ে ফেলেন তাহলে আর আর হাজার চেষ্টা করেও তাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারবেন না। তখন আপনার এইসব সো কল্ড ইগোর আর কোনো মূল‍্য থাকবে না। তাই বলছি যতো দ্রুত সম্ভব সাঈফার কাছে গিয়ে নিজের ভালোবাসাটা কনফেজ করুন। কারন এই বিয়ের পরেই ‘ও’ আবার লন্ডনে চলে যাবে। তারপর আর কখনো এখানে আসবে কিনা কে জানে। প্লিজ ডোন্ট ওয়েষ্ট দিস টাইম ব্রো।”

কথাটা বলে সাজিদ মিহিরের কাধ থেকে হাত সরিয়ে ছাদের এক কোনে রাখা সাইড ব‍্যাগটা উঠিয়ে কাধে নিলো। তারপর মিহিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো

“দুই ঘন্টা পর আমার ফ্লাইট। আমি এখন আসছি ব্রো। আশাকরি আমি খুব তাড়াতাড়ি একটা গুড নিউজ পাবো। আপনি নিশ্চয়ই আমার এতো চেষ্টা বিফলে যেতে দিবেন না?”

মিহির সাজিদের সাথে হ‍্যান্ডশেক করে বললো

“দুই ঘন্টা পর ফ্লাইট মানে? কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

“লন্ডনে ফিরে যাচ্ছি। এখানে আমার কাজ শেষ। এইবার যা করার সেটা আপনাকেই করতে হবে।”

মিহির মৃদ‍্যু হেসে বললো

“এতোদিন এতো প্লান করলে, আমার হাতে মার খেলে, আমার অপমান সহ‍্যে করলে, আমাকে এতোক্ষন এতোকিছু বোঝালে অথচ এখন আসল জিনিসটা না দেখেই চলে যাবে? কিছুদিন পর গেলে হয়না?”

সাজিদ মিহিরের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো

“না ব্রো আমাকে তো যেতেই হবে। আর দুই দিন পর আমার লাব‍ন‍্যের বার্থ ডে। সারা বছর আমি যেখানেই থাকি না কেনো এই একটা দিন আমাকে ওর কাছে থাকতে হয়। নাহলে আমার লাবন‍্যে যে আমার উপর খুব অভিমান করে থাকে। মেয়েটা বড্ড অভিমানি জানেন? তাইতো আমার একটা ভুলের জন‍্যে ‘ও’ আমার উপর অভিমান করে একদম আল্লাহর কাছেই চলে গেছে। এখন আমি ওর কাছে গিয়ে ওকে হাজারটা বকা দিলেও ‘ও’ আর আমার সাথে ঝগরা করে না। আমি সারাদিন অনিয়ম করলেও আমাকে আর শাষন করে না। আমার কাছে আর কখনো কোনো আবাদার করে না। কারন ‘ও’ এখন আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ ভেঙে মাটির সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে নিয়েছে। আমি এখন ওর কাছে গিয়ে হাজার ফোটা চোখের পানি ফেললেও ‘ও’ সেটা মুছিয়ে দিতে আসে না। মেয়েটা একদম আমাকে ভুলে গেছে।”

কথা গুলো বলে সাজিদ মিহিরের থেকে বিদায় নিয়ে ছাদ থেকে নেমে চলে গেলো। মিহির শুধু বাকরুদ্ধ হয়ে সাজিদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। মরার পরেও যে কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে সেটা মিহিরের জানা ছিলো না। ‘ও’ কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে থেকে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো। চোখ বন্ধ অবস্থায় হঠাৎ করেই মিহিরের চোখের সামনে ভেষে উঠলো সাদা কাপড়ে মোড়ানো সাঈফার ডেডবডি। এটা দেখে মিহির ঝট করে ওর চোখ জোড়া খুলে ফেললো। তারপর আর এক মুহূর্তও ওখানে না দাড়িয়ে দ্রুত দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
_______________________

দিশা, মেঘ সাড়িকা আর সাঈফা ওরা চারজন এক রুমের মধ‍্যেই ঘুমায়। কিন্তু কালকে রাতে মেঘের আসতে লেইট হচ্ছে দেখে দরজা লক না করেই দিশা, সাড়িকা, সাঈফা ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ভেবেছিলো মেঘ নিজের কাজ শেষ করে পরে হয়তো চলে আসবে। কিন্তু সকাল বেলা সাঈফার ঘুম ভাঙতেই ‘ও’ দেখতে পেলো মেঘ এখনো রুমে এসে পৌছায় নি। ওর একপাশে সাড়িকা আর আরেক পাশে দিশা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এখনো নাক ডাকছে। সাঈফা ভাবলো মেঘ হয়তো রাতে অন‍্য কোনো রুমে শুয়ে পড়েছে, সেইজন‍্যে এই রুমে আসেনি। এটা ভেবে ‘ও’ শুয়ে শুয়ে নিজের মতো করে চুপচাপ ফোন টিপতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে মিহির এসে ধরাম করে রুমের দরজা খুলে ফেললো। তারপর কোনো কিছু না বলে দ্রুত দৌড়ে এসে সাঈফার উপর ঝাপিয়ে পড়ে ওকে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। মিহিরের এমন কান্ডে সাঈফা চারশো চল্লিশ বোল্টের শকড খেলো। মিহির সাঈফার ঘাড়ে মুখ গুজে বললো

“আই লাভ ইউ সাঈফু। আই লাভ ইউ সো মাচ। আমি তোকে ভিষন ভালোবাসি। তোকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমি তোর সাথে যা যা অন‍্যায় করেছি সব কিছু জন‍্যে আই অ‍্যাম সো সরি। প্লিজ তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাস না।”

একদমে কথা গুলো বলে থামলো মিহির। সাঈফা মিহিরের কথা শুনে একদম হতোবাক হয়ে গেলো। ওর মনে হচ্ছে ‘ও’ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। সাঈফাকে আরো এক ধাপ অবাক করে দিয়ে মিহির সাঈফার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে ওর ঠোট জোড়া দখল করে নিলো। সাঈফা টাস্কি খেয়ে চোখ বড় বড় মিহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

এদিকে মিহিরের কথা শুনে সাড়িকা আর দিশার ঘুম ভেঙে গেলো। ওরা ঘুমু ঘুমু চোখে পাশে তাকাতেই ওদের চোখ থেকে সব ঘুম গায়েব হয়ে গেলো। দিশা আর সাড়িকা এক সাথে চিল্লিয়ে উঠে দুজন ধরাম করে বেড থেকে নিচে পড়ে গেলো। কিন্তু তাতে মিহিরের একটুও হেলদোল হলো না। ‘ও’ এখনো সাঈফার ঠোট আকড়ে ধরে কিস করে যাচ্ছে। সাড়িকা হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে চিল্লিয়ে বললো

“নাউজুবিল্লাহ! সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আমাকে কিনা চোখের সামনে এসব দেখতে হচ্ছে? ওই মিহিরের বাচ্চা তোর লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই? শালা ইতর!”

সাড়িকার কথার প্রতি উওরে মিহির কিছুই বললো না। তাই সাড়িকা এবার দিশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“দিশা আপি দেখো তো এই মিহিরের বাচ্চা কিস করতে করতে শ্বাস আটকে মরে গেলো কিনা।”

দিশা একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো

“তোর ইচ্ছে হলে তুই দেখ। আমার এসব দেখার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। এদের জন‍্যে শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবো না। যএসব পাগল ছাগল কতোগুলো।”

কথাটা বলে দিশা বসা থেকে দাড়িয়ে গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাড়িকা চোখ চেপে ধরে বসা থেকে দাড়িয়ে ধরাম করে মিহিরের পিঠের উপর একটা কিল বসিয়ে দিলো। তারপর বিরিক্তভরা কন্ঠে বললো

“নিজে রোমান্স করবি ভালো কথা, তাই বলে সকাল সকাল আমাদের মতো বাচ্চা দুটো মেয়ের ঘুম হারাম করে কাজটা কি তুই ঠিক করলি? মানবতা বলতে কিছু নেই তোর?”

সাড়িকার কথা শুনে মিহির সাঈফার ঠোট ছেড়ে দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে সাড়িকার দিকে তাকালো। তারপর ধমক দিয়ে বললো

“এখনি যদি তুই এই রুম থেকে বের না হয়েছিস তাহলে আমার মধ‍্যে কতো মানবতা আছে সেটা আমি তোকে হারে হারে বুঝিয়ে দিবো। গেট লস্ট।”

মিহিরের ধমক করে সাঈফা এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বাইরে বের হয়ে দেখলো দিশা একপাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অভির সাথে কথা বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। সাড়িকা অসহায় ফেইস করে বিরবির করে বললো

“যাহ এতো মিজ্ঞেলদের মধ‍্যে শুধুমাত্র সিজ্ঞেল রয়ে গেলাম আমি একা? হায় আল্লাহ এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো? আমার তো এক চামচ কেরোসিন তৈল খেয়ে মরে যাওয়া উচিৎ।”

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here