#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ13
রাত 2:00 টা
অন্ধকার রাত! হোটেল রুমের ব্যালকনির রেলিংয়ের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে আছে মেঘ। মৃদ্যু বাতাসে ওর চুল গুলো উড়ছে। হোটেলের সামনের রাস্তায় জ্বলে থাকা সোডিয়াম লাইটের আলোতে ওর চোখের কোনের পানিটা চিকচিক করছে। ওকে দেখে একটা আহত পাখির মতো লাগছে। মানুষ সব হারিয়ে নিঃশ্ব্য হয়ে গেলে যেমনটা লাগে তেমনটা। ওর সারা শরীরের ছিলে যাওয়া জায়গা গুলোতে ভিষন জ্বালা করছে। তবে সেদিকে মেঘের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ‘ও’ তো লাস্ট কিছুদিন ধরে ওর সাথে যা যা ঘটেছে সেই ঘটনা গুলোর হিসেব মিলাতে ব্যাস্ত।
____
হোটেলের ম্যানেজারের থেকে ডুব্লিকেট চাবি এনে মেঘের রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন আজম রহমান। এখানে আসার পর থেকে মেঘ সেই যে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে তারপর থেকে একবারের জন্যেও দরজাটা খুলেনি। একটু আগে অভি এসে অনেক বার ওর দরজায় নক করেছে, ওর হাতে পায়ের কেটে যাওয়া অংশ গুলোতে ব্যান্ডেজ করার জন্যে। কিন্তু মেঘ দরজা তো খুলেইনি উল্টে কোনো রেসপন্সও করেনি। তাই বাধ্য হয়ে আজম রহমানকেই এখানে আসতে হলো। মেয়েটাকে নিয়ে আজম রহমানের সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকেন। একা একা থাকতে থাকতে ওনার মেয়েটা বড্ড একরোখা আর জেদি হয়ে গেছে। রাগের মাথায় ভুল ভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তারপর নিজেই বিপদে পড়ে। আজম রহমান চাইলেও মেয়েকে কিছু বলতে পারেন না। কারন ওনি যতোই রেগে থাকুক না কেনো মেয়ের মুখের দিকে তাকালে ওনার সব রাগ নিমিষেই পানি হয়ে যায়।
আজম রহমান রুমে এসে মেঘকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ব্যালকনির দিকে আসলেন। এসে দেখলেন মেঘ এক কোনায় চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। উনি মেঘের দিকে এগিয়ে এসে আস্তে করে ওর মাথার উপরে হাত রাখলো। কিন্তু তাতে মেঘের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসলো না। ‘ও’ আগের মতোই সোজা হয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। আজম রহমান মৃদ্যু কন্ঠে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন
“কি হলো মামনি,এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?”
মেঘ আজম রহমানের প্রশ্নের কোনো অ্যান্সার না দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই শান্ত স্বরে ওনাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো। বললো……
“আচ্ছা বাবাই নিয়তি সব সময় আমার কাছ থেকে আমার ফেবারিট জিনিস গুলো কেড়ে নেয় কেনো বলোতো? আমি তো কখনো কারো কোনো রকম ক্ষতি করিনি! তাহলে সব সময় কেনো আমার সাথে এরকম টা হয়?”
মেঘের কথা শুনে আজম রহমান ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালেন। উনি বোঝার চেস্টা করছেন মেঘ ঠিক কি বলতে চাইছে। মেঘ একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবারো বললো
“যখন থেকে ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছি তখন থেকে কাছের মানুষ গুলোকে শুধু পর হয়ে যেতে দেখেছি। প্রথমে আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। ওনার সাথে আমার ভাইয়ারাও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। তারপর তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য এক দেশে চলে গেলে। তুমি চলে যাওয়ার পর আমার পরিবারের কাছের মানুষ গুলো সব মূহুর্তের মধ্যে পাল্টে গেলো। কিছু সময়ের মধ্যে আপন থেকে সবাই পর হয়ে গেলো। রোজ রোজ আমি তাদের নিষ্ঠুরতার স্বীকার হতে থাকলাম। তারপর একদিন তুমি আবার আমার কাছে ফিরে এলে। আমাকে আমার বাড়ি, আমার শহর, আমার দেশ থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে চলে গেলে। সেখানে নিয়ে গিয়ে একটা বন্ধি জিবন গিফট করলে। সেটাও আমি হাসি মুখে মেনে নিলাম। তুমি সব সময় বিজি থাকতে তাই আমার দেখা শোনার করার জন্যে একজন ন্যানি রেখে দিলে। তাকে আমি আমার মায়ের স্থান দিয়েছিলাম। আর সে কি করলো? তোমার সম্পত্তির লোভে পড়ে আমার খাবারে বিষ মিশিয়ে আমাকেই মারার চেস্টা করলো। তাই তুমি তাকে জেলে পাঠিয়ে দিলে। আর আমি আরো একবার মা হারা হয়ে গেলাম। এতো কিছুর পরেও আমি কোনো অভিযোগ করিনি । কারন আমার কাছে তো আমার বাবাই ছিলো। তুমি হয়তো আমাকে তেমন একটা সময় দিতে পারতে না। তবে সারাদিন পরে আমাকে যতোটুকু সময় দিতে সেটা নিয়েই আমি হ্যাপি থাকতাম। কিন্তু…….”
পুরো কথাটা শেষ না করেই মেঘ থেমে গেলো। আজম রহমান অবাক হয়ে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেঘ সত্যিই কখনো ওনার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। জিবন নিয়ে মেঘের কোনো অভিযোগই ছিলো না। ইনফ্যাক্ট আজম রহমান যখন মেঘকে জিজ্ঞেস করতেন যে ওনাকে নিয়ে মেঘের কোনো অভিযোগ আছে কিনা! তখন মেঘ হাসি মুখে বলতো, ওর বাবা হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। তার প্রতি কিভাবে ওর কোনো অভিযোগ থাকতে পারে! আজম রহমান মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে সত্যিই অবাক হতেন। এতো কিছুর মধ্যেও তার মেয়েটা কিভাবে এতোটা হাসি খুশী থাকে সেটাই উনি ভেবে পেতেন না। কিন্তু ওনার সেই অল্পতেই খুশী হয়ে যাওয়া মেয়েটা আজকে হঠাৎ এই কথা গুলো কেনো বলছে উনি সেটাই বুঝতে পারছেন না। আজম রহমান মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মায়া ভরা কন্ঠে বললেন
“হঠাৎ এসব কথা কেনো বলছো মামনী?তুমি তো আগে কখনো এই ধরনের কথা বলতে না। আমি কি কোনো কারনে তোমাকে কস্ট দিয়ে ফেলেছি?”
মেঘ ধরা গলায় বললো
“হ্যা বাবাই, তুমি আমাকে কস্ট দিয়েছো। ভিষন ভাবে হার্ট করেছো তুমি আমাকে। তুমি আমার থেকে এতো বড় একটা সত্যি কেনো লুকিয়ে গেলে বাবাই? কেনো সব সত্যিটা আমাকে আগে জানাও নি?”
আজম রহমান বিস্মিত হয়ে মেঘের দিকে তাকালেন। অজানা কোন একটা কারনে ওনার কলিজাটা ধুক করে উঠলো। উনি কম্পিত স্বরে মেঘকে বললেন
“তুমি এসব কি বলছো মেঘ? কোন সত্যির কথা বলছো তুমি? আর আমি কখন তোমার কাছ থেকে কি লুকালাম? আজ অবদি এমন কখনো হয়েছে যে আমি তোমার কাছ থেকে কোনো কথা গোপন রেখেছি? আমি তো সব কিছুই তোমার কাছে বলি ।”
আজম রহমানের কথা শেষ হতেই মেঘ আজম রহমানের দিকে ঘুরে ওনার মুখের দিকে তাকালো। হালকা লাইটের আলো মেঘের মুখে পড়ায় উনি মেঘের চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা ঠিকই দেখতে পেলেন। মেঘ ম্লানো হেসে বললো
“তুমি আমাকে সব কিছু বলো ঠিকই। বাট একটা বিষয় আমার থেকে হাইড করে গেছো বাবাই। আর সেটা আমি জানতে পেরে গেছি।”
আজম রহমান রহমান শুকনো একটা ঢোক গিলে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“কি জানতে পেরেছো?”
মেঘ অশ্রুসিক্ত চোখে কিছুক্ষন আজম রহমানের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
“তুমি সিজ্ঞাপুরে যাওয়ার আগের দিন আমি তোমার রিপোর্ট গুলো দেখে নিয়েছি বাবাই। আর তোমার ডায়রিটাও এখন আমার কাছে আছে।”
মেঘের কথা শুনে আজম রহমান দু-কদম পিছিয়ে গেলেন। মেঘের বাংলাদেশে আসার কারনটা এইবার ওনার কাছে স্পষ্ট হলো। আজম রহমান নিজেকে সামলে নিয়ে রাগি কন্ঠে বললেন
“তোমার সাহস হলো কিভাবে মেঘ আমার জিনিস পএে হাত দেওয়ার? তুমি জানো না, কারো জিনিসে হাত দেওয়ার আগে তার থেকে পারমিশন নিতে হয়? তাহলে তুমি কেনো আমার পারমিশন না নিয়েই আমার জিনিসে হাত দিয়েছো? এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমাকে?”
মেঘ আজম রহমানের কোনো প্রশ্নের অ্যান্সার না দিয়েই হুট করে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ওনার বুকে মুখে গুজে হাউমাউ করে কেদে দিলো। আজম রহমান স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছেন। উনি যেই ভয়টা পাচ্ছিলেন সেটাই আজকে সত্যি হলো। শেষ পযর্ন্ত মেঘ সবটা জানতেই পেরে গেলো। এবার কী হবে? কিভাবে উনি ওনার ছোট মেয়েটাকে সামলাবে? আজম রহমানের ভাবনার মধ্যেই মেঘ কাদতে কাদতে বলে উঠলো
“আমার তো তুমি ছাড়া কেউ নেই বাবাই। সবাই তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এবার যদি তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমি কিভাবে বাচবো বাবাই?”
আজম রহমানের চোখ থেকে টুপ করে দু ফোটা পানি গরিয়ে পড়লো। উনি ধরা গলায় বললেন
“বাচতে তো হবেই মামনি। পৃথিবী ছেড়ে আমাদের সবাইকে একদিন না একদিন চলে যেতে হবে। আমরা সবাই এখানে ক্ষনিকের অথিতি হিসেবে এসেছি। সময় ফুরোলে আবার আমরা সবাই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিবো। হয়তো কেউ একটু আগে যাবে, আর কেউ একটু পরে। তাই এটা নিয়ে কান্নাকাটি করার কিছু নেই। নিজেকে সামলাতে শিখো। নিজের মনকে শক্ত করো। সারা জিবন তো আর সবার বাবা বেচে থাকেনা। তাইনা?”
আজম রহমানের কথা শেষ হতেই মেঘের কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজাটাকে ছুড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করছে। আজম রহমান অসহায়ের মতো দাড়িয়ে মেয়ের কান্না শুনছেন। মেয়ের কান্না দেখা ছাড়া ওনার যে আর কিছুই করার নেই। মেঘকে কি বলে সান্তনা দিবেন সেটা ওনার জানা নেই।
_________________________
বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে ফোন টিপছে দিশা। ‘ও’ চেয়েছিলো মেঘের সাথে রুম সেয়ার করতে কিন্তু মেঘ নিজের রুমে ঢুকে সাথে সাথেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এইজন্যে দিশা আর মেঘের রুমে ঢুকতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে ওকেও আলাদা একটা রুম নিতে হলো।
হঠাৎ কেউ এসে দরজায় নক করায় দিশা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। তারপর বেডে থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
“কে?”
দিশার কথার প্রতিউওরে ওপাশ থেকে কোনো সারা শব্দই আসলো না। তাই দিশা আরো কয়েক বার জিজ্ঞেস করলো কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রকম রেসপন্স না পাওয়ায় ‘ও’ দরজাটা একটু খানি খুলে মাথা বের করে বাইরের দিকে উকি মারলো। উকি মারতেই দেখলো দরজার বাইরে অভি দাড়িয়ে আছে। দিশা অভিকে দেখে দ্রুত দরজাটা আটকাতে নিলো,ঠিক তখনই অভি জোরে দরজায় ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ভিতরে ঢুকে গেলো। দিশা ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“পারমিশন না নিয়ে অন্যের রুমে ঢোকার স্বভাবটা আপনার এখনো যায়নি তাইনা? লজ্জা করে না এতো রাতে এভাবে একটা মেয়ের রুমে আসতে?”
অভি দিশার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট একটা ফেইস করে বললো
“মেয়ে? কোথায় মেয়ে? আমি তো এই রুমে কোনো মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি না!”
দিশা দাতে দাত চেপে বললো
“চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি? এই যে সশরীরে আমি আপনার সামনে দাড়িয়ে আছি। আমাকে আপনার চোখে পড়ছে না?”
অভি বললো
“চোখে পড়বে না কেনো? অবশ্যই চোখে পড়ছে। কিন্তু তোমাকে কে বললো যে তুমি একটা মেয়ে? কখনো নিজেকে আয়নায় দেখেছো? যদি দেখতে তাহলে বুঝতে পারতে যে তোমাকে দেখতে মেয়েদের মতো না, আশি বছরের বুড়ির মতো লাগে।”
“কিহ? আমাকে আশি বছরের বুড়ির মতো লাগে? তাহলে আপনি আমাকে বিয়ে করার জন্যে পাগল হয়ে যাচ্ছেন কেনো হ্যা? ইয়াং দেখে অন্য কোনো একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলেই পারেন।”
দিশার কথা শেষ হতেই অভি গিয়ে ধপাস করে ওর বেডের উপর বসে পড়লো। তারপর একটু ভাব নিয়ে বললো
“আসলে ছোট বেলা থেকেই আমার সোস্যাল ওয়ার্ক করার খুব শখ। আমি যখনই সুযোগ পাই তখনই মানুষের হেল্প করার চেস্টা করি। তাই তোমাকে যখন প্রথম দেখলাম তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম যে তোমাকে বিয়ে করে তোমার পরিবারকে আমি পাগল মুক্ত করবো।”
দিশা ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“আপনি আমাকে আবার পাগল বললেন? আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। আপনি একবার আমাকে বুড়ি বলছেন, আরেকবার পাগল বলছেন? সমস্যা কি আপনার? কেনো বিরক্ত করছেন আমাকে? আমার এসব একদম ভালো লাগছে না।”
কথাটা বলে দিশা হনহন করে ব্যালকনিতে চলে গেলো। দিশাকে এতোটা রেগে যেতে দেখে অভি ঠোট চেপে হালকা হাসলো। দিশাকে এভাবে রাগিয়ে দিতে ওর বেশ ভালো লাগে। তাইতো ইচ্ছা করে বারবার উদ্ভট কথা বলে ‘ও’ দিশাকে রাগিয়ে দেয়। আর দিশাও রেগে একদম বোম হয়ে যায়।
অভি বসা থেকে দাড়িয়ে দিশার পিছু পিছু ব্যালকনিতে চলে আসলো। এখানে এসে দেখলো দিশা রেলিংয়ের সাথে ভর দিয়ে মুখ ভার করে দাড়িয়ে আছে। অভি দিশার একদম কাছাকাছি গিয়ে নিজের এক হাত আলতো করে দিশার কোমরে রাখলো। তারপর এক টানে দিশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো। এভাবে আচমকা স্পর্শ করায় দিশা কেপে উঠলো। তবে চমকালো না। কারন অভি সব সময় এরকমই করে। প্রথমে ওকে বিরক্ত করে, রাগিয়ে দেয়, তারপর নিজেই এসে আবার রাগ ভাঙায়। অভি দিশার ঘাড়ের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো
“আচ্ছা সরি ম্যাম। আমার ভুল হয়ে গেছে। আসলে আমার আপনাকে বুড়ি আর পাগল কথাটা ওইভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি। যেকোনো জিনিসের তো একটা সুন্দর্য আছে তাইনা? তাই আমার উচিৎ ছিলো আপনাকে আশি বছরের পাগলি বুড়ি বলা। তাহলে কথাটা বেশ মাধূর্য পূর্ন হতো।”
অভির কথা শুনে দিশা রেগে আগুন হয়ে গেলো। ওর ইচ্ছে করছে অভিকে মাথায় তুলে একটা আ/ছাড় মারতে। কোথায় অভি ওর রাগ ভাঙাবে তা না করে উল্টে আবার ওকে নিয়ে আবার মজা করছে? দিশা রেগে নিজের থেকে অভিকে দূরে সরানোর চেস্টা করতে করতে বললো
“আমি লাইফে এতো মানুষ দেখেছি, কিন্তু আপনার মতো খারাপ মানুষ একটাও দেখিনি। আপনি জঘন্যের থেকেও জঘন্যতম একটা মানুষ। ইউ নো হোয়াট? আমিও লাইফে একটা ভুল করে ফেলেছি। আপনার সাথে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো সেদিন আপনার পায়ে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা না দিয়ে,যদি আপনাকে গাড়িটার নিচে চাপা দিতাম। তাহলে আজকে আমাকে আর এই দিনটা দেখতে হতো না।”
কথাটা বলে দিশা আরো ছটফট করতে লাগলো। অভি হালকা হেসে পিছন থেকে দিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর কানের লতিতে আলতো করে ঠোট ছোয়ালো। অভির এমন কান্ডে দিশার নড়াচড়া মুহূর্তের মধ্যে থেমে গেলো। ওর হৃদ স্পন্ধনের গতি দূত উঠা নামা করতে লাগলো। অভি দিশার কাধে থুতনি রেখে ফিশফিশ করে বললো
“সত্যিই তুমি ভুল করে ফেলেছো। আর এই ভুলের মাশুল তোমাকে সারা জিবন দিতে হবে। তোমাকে সারা জিবন শুধুমাত্র আমার হয়ে থাকতে হবে। আমি যতোদিন বেচে থাকবো ততোদিন তোমার সমস্ত রাগ,অভিমান,বিরক্তি সব কিছু আমাকে ঘিরে থাকবে। তোমার সব কিছুতে শুধুমাত্র একটা নামই থাকবে,সেটা হচ্ছে অভি।”
অভির বলা প্রোত্যেকটা কথায় দিশার শরীরের লোম দাড়িয়ে গেছে। ‘ও’ চোখ খিচে বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। হুট করেই হাজারো লজ্জারা এসে ওর চোখের পাতায় ভর করেছে। অভির প্রত্যেকটা ছোয়া ওর মনে অদ্ভুত ভালো লাগার একটা অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।
#চলবে