#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#তানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্ব:10
দুপুর 2:30
লাঞ্চ করার জন্যে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সবাই। মিড়া রহমান আর আলিশা মিলে সবাইকে খাবার সার্ভ করছে। আজকে সব মেঘের পছন্দের খাবার রান্না হয়েছে। মিড়া রহমান প্রত্যেক বারেই মেঘের জন্যে ওর পছন্দের খাবার রান্না করেন। কিন্তু আফসোস মেঘ একবারও ছোট বেলার মতো সেই খাবার গুলো তৃপ্তি করে খায় না। কিন্তু তাতেও মিড়া রহমান হাল ছাড়েন না। একই রেসিপি মেঘের জন্যে বারবার অন্যে ভাবে রান্না করার চেস্টা করেন। কিন্তু এতো চেস্টার পরেও ফলাফল জিরো। মিড়া রহমানের রান্না করা কোনো খাবারই মেঘের পছন্দ হয় না।
চারপাশে পিন পতন নিরবতা। সবাই চুপচাপ নিজেদের মতো খাবার খাচ্ছে। হঠাৎ করেই মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে বলে উঠলো
“আমি খাবো না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।”
মিড়া রহমান মেঘের কাছে এগিয়ে এসে চিন্তিত ভজ্ঞিতে জিজ্ঞেস করলেন
“কেনো কি হয়েছে মা? খাবি না কেনো? এ্যানি প্রভলেম?”
মেঘ বিরক্তির স্বরে বললো
“মম তুমি জানো না,আমার এসব বাঙালি খাবার একদম পছন্দ না? তোমাকে কতোবার বলেছি আমার জন্যে এসব ছাইপাশ রান্না করবে না। তারপরেও কেনো প্রত্যেকবার আমার জন্যে এইসব খাবার রান্না করো?”
মিড়া রহমান অসহায় কন্ঠে বললো
“মেঘ এই খাবার গুলো তো ছোট বেলায় তোমার খুব ফেবারিট ছিলো। তোমার মনে আছে তুমি ছোট বেলায় বলতে,মাম্মাম তুমি যাই রান্না করো সেটাই আমার ফেবারিট খাবার হয়ে যায়। তোমার হাতে ম্যাজিক আছে। তোমার হাতের রান্নার সাথে পৃথিবীর কারো রান্নার তুলনা হয় না।”
মেঘ চোখে মুখে আগের থেকেও আরো বিরক্তির ছাপ ফেলে মৃদ্যু চিল্লিয়ে বললো
“মম প্লিজ এসব বলা বন্ধ করো। তোমার এসব কথা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। ছোট বেলার সাথে তুমি যদি এখনকার তুলনা করো তাহলে তো হবেনা। সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দ, অপছন্দ, টেস্ট সবকিছু চেইঞ্জ হয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। তখন আমার বাঙালি ফুড পছন্দের ছিলো। আর এখন আমার চাইনিজ ফুড পছন্দ।”
মিড়া রহমান নরম কন্ঠে বললো
“আচ্ছা মা, আমি বুঝতে পেরেছি। আই অ্যাম ভেরি সরি। ভুলটা আমারই হয়েছে। এরপর থেকে আর কখনো এমন ভুল হবে না। আজকের জন্যে তুমি প্লিজ এই খাবারটা খেয়ে নেও। আমি রাতে তোমার জন্যে তোমার পছন্দের চাইনিজ ফুড রান্না করবো।”
মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো
“নো থ্যাংকস মম। আমি অনলাইনে কিছু একটা অর্ডার করে খেয়ে নিবো।”
এইটুকু বলে মেঘ ঘাড় ঘুড়িয়ে মায়া আর দিশার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের স্বরে বললো
“এসব খাবার তুমি তোমার এই স্পেশাল গেস্টদের খাওয়াও। ওরা জীবনে কখনো এসব খাবার চোখে দেখেছে বলে তো মনে হয়না।”
কথাটা বলে মেঘ হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। মেঘ চলে যেতেই অভি ছাড়া ওর অন্যান্য ফ্রেন্ডরাও ওর পিছনে পিছনে উপরে চলে গেলো। মিড়া রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসে পড়লেন। যতোই উনি মেঘকে খুশী রাখার চেস্টা করতে যান। মেঘ ততোই ওনার উপরে বিরক্ত হয়। তবে তাতেও ওনার কোনো কস্ট নেই। এতো বছর পর মেয়েটাকে কাছে পেয়েছে সেটাই ওনার জন্যে অনেক। মিড়া রহমান ওনার চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা সবার অগোচরে খুব সাবধানে মুছে নিয়ে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলেন।
মায়া প্লেটে খাবার গুলো নিয়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে যাচ্ছে। ওর চোখের কোনে পানি জমেছে। যেই এক লোকমা খাবার মুখে নিয়েছে সেইটুকুও গলায় আটকে আছে। কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। কতোদিন পর নিজের মায়ের হাতের রান্না খেলো। ছোট বেলায় নিজের পছন্দের খাবার গুলো খাওয়ার জন্যে মায়ের কাছে কতো শতো আবদার করতো। আর ওর মা রান্না করে ওকে নিজের হাতে যত্ন করে খাইয়ে দিতো। তবে সেসব এখন শুধুমাএ অতিতের ডাইরিতে বন্ধ হওয়া কিছু স্মৃতির পাতা। কারন ‘ও’ তো সেই কবেই ওর মায়ের হাতের রান্নার টেস্ট ভুলে গেছে।
মিহির চুপচাপ নিজের মতো খাচ্ছিলো। খেতে খেতে ওর হঠাৎ মায়ার দিকে চোখ পড়লো। দেখলো মায়া না খেয়ে হাত দিয়ে খাবার গুলো শুধু নেড়েচেড়ে যাচ্ছে। মিহির মায়ার দিকে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে স্যালাডের বাটি থেকে এক টুকরো লেবু উঠিয়ে মায়ার দিকে ছুড়ে মারলো। লেবুটা গিয়ে সোজা মায়ার কপাল বরাবর পড়লো। আচমকা এমনটা হওয়ায় মায়া খানিকটা লাফিয়ে উঠলো। ‘ও’ বিরক্তির দৃস্টিতে মিহিরের দিকে তাকালো। মিহির ভ্রু নাচিয়ে বললো
“কি হলো? খাচ্ছো না কেনো? তোমারও কি বাঙালি খাবার অপছন্দের নাকি? অপছন্দের হলে বলতে পারো, তাহলে তোমার জন্যেও চাইনিজ খাবারের অর্ডার দিতে পারি।”
মিহিরের কথা শুনে সবাই মায়ার দিকে দৃস্টি নিক্ষেপ করলো। মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে হালকা মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো
“নাহ, বাঙালি খাবার আমার অপছন্দের না। তবে এসব খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই।”
মিহির চোখ ছোট ছোট করে বললো
“এসব খাওয়ার অভ্যাস নেই মানে? তাহলে এতোদিন কি খেয়ে বেচে ছিলে? আলো আর বাতাস?”
মায়া মলিন মুখে আলতো হাসলো। তারপর মিহিরের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বললো
“আমার তো মা নেই। তাই এইরকম টেস্টি টেস্টি রান্না খাওয়ানোর মতো কেউ ছিলো না। বাবাই সারাদিন ব্যাস্ত থাকতো। তারপর যখন সারাদিন কাজ করে রাতে বাড়িতে ফিরতো তখন আমার জন্যে পাস্তা অথবা নুডলস করে দিতো। দুই বাবা মেয়ে মিলে সেটা দিয়েই ডিনার কম্পিলিট করতাম।বাবাই আর অন্য কোনো রান্না করতেই পারতো না। অবশ্য আমার জন্যে অনেকবার রান্না শেখার চেস্টা করেছিলো। কিন্তু হাজার চেস্টা করেও রান্না টা আর বাবাইয়ের দ্বারা শেখা হয়নি।”
এইটুকু বলে মায়া ঠোট প্রসারিত করে হাসলো। সবাই অবাক হয়ে মায়ার কথা গুলো শুনছে। মায়া আবারও বললো
“বড় হওয়ার পর আমি বাবাইকে না বলে চুপিচুপি রান্নার ক্লাস জয়েন করেছিলাম। পুরো ছয় মাস লেগেছিলো বাঙালি রান্না শিখতে। একদিন বাবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যে বাবাইয়ের সব ফেবারিট ফুড রান্না করেছিলাম। কিন্তু যখনই খাবার গুলো বাবাইকে সার্ভ করলাম।উনি আমার উপর ভীষন রেগে গিয়ে ছিলেন। সেদিন প্রথমবার বাবাই আমাকে অনেক বকা দিয়ে ছিলেন।বলে ছিলেন, আমি আর কখনো যেনো এই খাবার গুলো ওনার জন্যে রান্না না করি। ওনি ওনার পছন্দের খাবার গুলো আবার সেদিনই খাবেন যেদিন ওনার স্থী আবার ওনাকে ওইগুলো রান্না করে খাওয়াবেন। আমি সেদিনের পর থেকে আর কখনো কিচেনে ঢুকিই নি। বাবাইয়ের প্রতি ভিষন অভিমান হয়েছিলো। তাই কখনো আর রান্নার চেস্টা করিনি। এই জন্যে আজ অবদি আমার আর বাবাইয়ের লাঞ্চ, ডিনার, ব্রেকফাস্টে শুধুমাত্র নুডুলস আর পাস্তাই রয়ে গেছে।”
সবাই মায়ার দিকে অবাক দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কথা গুলো হাসি মুখে বললেও ওর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। অবশ্য করবে নাই বা কেনো? একটা বাচ্চার মাকে ছাড়া বড় হয়ে উঠাটা যে কতোটা কস্টের সেটা হয়তো যার মা নেই একমাএ সেই বোঝে। মিড়া রহমানের চোখের কোনেও পানি জমেছে। কেনো যেনো ওনার মায়াকে একটা বার জড়িয়ে ধরে আদর করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু নিজের সো কলড ইগোর কাছে মায়াকে কাছে টানার ইচ্ছেটা নিমেষেই চাপা পড়ে গেলো। মায়া একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর হাত টা ধুয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে মেইন দরজা দিয়ে বের হয়ে বাইরে চলে গেলো। আহির তড়িঘড়ি করে বললো
“একি ‘ও’ তো কিছু না খেয়েই চলে গেলো।”
দিশা হাত ধুয়ে বসা থেকে দাড়াতে দাড়াতে বললো
“পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পড়েছে তো। তাই এখন আর শতো চেস্টা করলেও ওকে কিছু খাওয়ানো যাবে না।”
কথাটা বলে দিশাও মায়ার পিছু পিছু ফ্লাট থেকে বের হয়ে গেলো। ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিড়া রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কোথায় ভেবে ছিলেন সবাই মিলে একসাথে লাঞ্চ করবে আর আড্ডা দিবে। কিন্তু সব কেমন অগোছালো হয়ে গেলো। যেভাবে প্লান করে ছিলেন সেসবের কিছুই হলো না। উল্টে সবার মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
_________________________
সকাল 11:00
ক্লাসের বাইরের কড়িডোর দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে হাটছিলো আর সফট ড্রিংকস খাচ্ছিলো মিহির। রাগে মিহিরের চোখ মুখ সব লাল বর্ন ধারন করেছে। একটু আগেই কয়েকটা ছেলেকে ভার্সিটির পিছনের গার্ডেন এরিয়ায় নিয়ে গিয়ে মিহির আর ওর বন্ধুরা ভিষন মেরেছে। কারন ছেলেগুলো ভার্সিটির অন্যান্য স্টুডেন্টদের কাছে ড্রাগস বিক্রি করছিলো। বেশ কিছুদিন ধরেই ছেলে গুলো চুপিচুপি এসব কাজ করে যাচ্ছিলো। মিহির আর আহির আগে থেকেই সবটা জানতে পেরেছিলো। তবে প্রমানের অভাবে কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু আজকে একদম ওরা হাতে নাতে ছেলে গুলোকে ধরে ফেলেছে। তারপর সব গুলোকে ধরে ইচ্ছা মতো মেরে পুলিশে দিয়ে দিয়েছে। তবে ওর রাগটা এখনো কমেনি। ওর ইচ্ছা করছিলো ছেলে গুলোকে নিজের হাতে খু/ন করে ফেলতে।
মিহির হেটে কিছুটা দূর আসতেই হুট করেই কেউ এসে ওর সাথে জোড়ে ধাক্কা খেলো। আচমকা ধাক্কা লাগায় মিহিরের হাত থেকে ওর ফোনটা মাটিতে পড়ে গেলো। আর হাতে থাকা সফট ড্রিংকসের বোতল টা উল্টে গিয়ে সবটুকু ড্রিংকস ওর শার্টে পড়ে গেলো। মিহির চিল্লিয়ে বললো
“হোয়াট দ্যা হেল? কি করলে এটা?”
কথাটা বলে মিহির মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে বড় বড় চোখ করে মায়া দাড়িয়ে আছে। মায়াকে দেখে মিহিরের রাগটা আরো বেড়ে গেলো। এই মেয়েটা যেখানেই যায় সেখানেই একটা না একটা ঝামেলা পাকায়। বিরক্তি কর মেয়ে একটা। মিহির রাগি কন্ঠে বললো
“দেখে চলতে পারো না? চোখ কি বাড়িতে ফেলে রেখে এসেছো?”
মায়া আমতা আমতা করে বললো
“আই অ্যাম সরি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। দিশা আমাকে তাড়া করেছিলো। তাই দৌড়াতে দৌড়াতে অসাবধানতা বশত ধাক্কাটা লেগে গেছে।”
মায়ার কথা শেষ হতেই মিহির ঝাড়ি মেরে বললো
“সরি মাই ফুট। রাখো তোমার সরি। ভুল করে একটা সরি বলে দিলেই সাত খুন মাফ হয়ে যায় তাইনা? আর ভার্সিটিতে আসো কি দৌড়দৌড়ি করার জন্যে? এটা তোমার গ্রামের উঠোন নয় যে এখানে এসে তোমরা লাফালাফি দৌড়দৌড়ি শুরু করে দিবে।”
মিহিরের কথায় এবার মায়া ভিষন বিরক্ত হলো। ‘ও’ কপাল কুচকে খানিকটা বিরক্তির স্বরে বললো
“আজব, সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আপনি এভাবে রিয়্যাক্ট করছেন কেনো? আপনাকে তো বললাম অসাবধানতা বশত এমনটা হয়েছে। আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ধাক্কা দেইনি।”
মায়ার কথা শেষ হতেই মিহির কিছুটা ঝূকে ফ্লোর থেকে ফোনটা উঠিয়ে মায়ার সামনে ধরলো। তারপর বললো
“ফোনের ডিসপ্লেটার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো? এটা তোমার কাছে সামান্যে ব্যাপার মনে হচ্ছে?”
মায়া তাকিয়ে দেখলো ফোনের ডিসপ্লের উপরে অনেক গুলো ফাটল ধরেছে। এতো উচু থেকে এতো জোড়ে পড়লে ফোনের এমন অবস্থা হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটা মায়া ভালো করেই জানে। ‘ও’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহিরের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো
“চিন্তা করবেন না। এটা আমাকে দিন। আমি আপনার ফোন ঠিক করে আবার আপনাকে ফেরত দিয়ে যাবো।”
মিহির মায়ার হাত থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিলো। তারপর বিদ্রুপের হাসি হেসে বললো
“এই ফোনটার প্রাইজ কতো তুমি জানো? তোমার বাড়ি ঘর সব বিক্রি করলেও হয়তো এই ফোনটার প্রাইজের সমান টাকা উঠবে না। আর তুমি এসেছো আমার ফোন রিপেয়ার করতে? এই ফোনটা যখন আমি কিনতেই পেরেছি তখন এটা রিপেয়ার করার ক্ষমতাও আমার আছে। বুঝেছো?”
কথাটা বলে মিহির হনহন করে ওখান থেকে চলে গেলো। মায়া চারপাশে তাকিয়ে দেখলো এখানে অনেকেই এসে ভিড় করেছে। সবাই হয়তো এতোক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফ্রিতে তামাশা দেখেছে। মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাউকে কিছু না বলে ক্লাসে যাওয়ার জন্যে নিশব্দে পা বাড়ালো।
________________________
ব্যালকনির এক সাইডে রাখা বিনের উপর চোখ বন্ধ করে বসে আছে মিহির। মৃদ্যু বাতাসে ওর সিল্কি চুল গুলো হালকা নড়ছে। ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে এখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজে। চারপাশের পরিবেশ ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে। একটু পরেই হয়তো পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যাবে সবকিছু। আর সেই অন্ধকারের মধ্যে বিভিন্ন রঙ বেরঙের আলো জ্বালিয়ে সেজে উঠবে অন্ধকার আচ্ছন্ন শহরটা।
ভার্সিটি থেকে ফেরার পর থেকে মিহিরের মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। রাগের মাথায় তখন মায়াকে যেই কথা গুলো বলেছে তার জন্যে ওর ভিষন গিলটি ফিল হচ্ছে। মিহির বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে আজকে ‘ও’ মায়াকে অনেকটা আঘাত করে ফেলেছে।
মিহিরের এসব ভাবনার মধ্যে দরজায় অনবরত নক করার ফলে ওর ভাবনায় ছেদ ঘটলো। ‘ও’ চোখ খুলে মুখ থেকে বিরক্তিকর কর একটা চ শব্দ বের করে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর ব্যালকনি থেকে রুমে এসে রুমের দরজা খুলতেই ‘ও’ বেশ অবাক হলো। কারন ওর সামনে রাগি মুড নিয়ে সাঈফা দাড়িয়ে আছে। এই অসময়ে সাঈফাকে মোটেও এখানে আশা করেনি মিহির। নিজের অবাকের রেশ কাটিয়ে মিহির সাঈফাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাঈফা ওর হাতে থাকা শপিং ব্যাগ খুলে ব্যাগের মধ্যে থেকে কিছু একটা বের করে মিহিরের মুখের উপর ছুড়ে মারলো। জিনিসটা মিহিরের গায়ে লেগে নিচে পড়ে যাওয়ার আগেই মিহির সেটাকে ধরে ফেললো। তারপর হাতে নিয়ে জিনিসটার দিকে ভালো করে তাকাতেই দেখলো এটা প্যাকিং করা নিউ একটা ফোন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এটা মিহিরের ফোনটার মতোই সেইম মডেলের ফোন। মিহির প্রশ্নবোধক চাহনিতে সাঈফার দিকে তাকাতেই সাঈফা দাতে দাত চেপে বলে উঠলো
“এই নেও তোমার ব্রান্ড নিউ ফোন। একদম তোমারটার মতোই সেইম মডেলের আর সেইম কালারের ফোন এটা। আশা করি এরপর থেকে এই ফোনের বিষয়টা নিয়ে মায়া আপুকে আর অপমান করা হবে না।”
মিহির বোকার মতো সাঈফার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঈফার হঠাৎ ফোন নিয়ে এই সময় বাসার আসার কারনটা ওর কিছুতেই হজম হচ্ছে না। সাঈফা আবারও কর্কশ কন্ঠে বললো
“তুমি তো তোমার ফোন পেয়ে গেছো তাইনা? এখন তুমি তোমার ওই সো কলড গার্লফ্রেন্ড কে ফোন দিয়ে বলো যাতে আগামীকাল ভার্সিটিতে এসে সবার আগে মায়া আপিকে সরি বলে। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ কিছু একটা হয়ে যাবে বলে দিলাম।”
মিহির ভ্রু কুচকে বললো
“কি বলছিস এসব তুই? তোর মাথা ঠিক আছে? আমার আবার গার্লফ্রেন্ড আসলো কোথা থেকে? জেগে জেগে কি দ্বিবা স্বপ্ন দেখছিস নাকি সাঈফা?”
সাঈফা তাছ্যিল্য হেসে বললো
“গার্লফ্রেন্ড আসলো কোথা থেকে মানে? তুমি কি তোমার তৃধা বেবীকে ভুলে গেছো নাকি? যে সুযোগ পেলেই সব সময় তোমার সাথে চুইজ্ঞামের মতো চিপকে থাকে। আর সব সময় সবাইকে এটা বলে বেড়ায় যে মিহির আমার বফ। ”
মিহির ধমকের স্বরে বললো
“তৃধাকে আমি শুধুমাত্র আমার ফ্রেন্ড ভাবি। এছাড়া আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এসব ফালতু কথা বলা বন্ধ কর।”
সাঈফা মুখ বাকিয়ে হেসে বললো
“ওহ রিয়েলি? আমি ফালতু কথা বলছি? তাহলে তোমার তৃধা কেনো আজকে মাঠ ভর্তি লোকের সামনে মায়া আপুকে অপমান করলো? সামান্য একটা ফোনের জন্যে কেনো মায়া আপুকে এতো গুলো উল্টাপাল্টা কথা শুনালো? ফোনটা তো তোমার ভেঙেছে তাহলে ওর এতো সমস্যা হচ্ছে কোন দুঃখে?”
মিহির চমকে উঠে বললো
“হোয়াট? তৃধা মায়াকে অপমান করেছে? কিন্তু কেনো? আর কখন হলো এসব?”
“তোমরা ভার্সিটি থেকে চলে আসার কিছুক্ষন পর ঘটেছে এসব। আমরা ক্লাস শেষ করে গেট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। তখনই তৃধা মায়া আপুকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মাঠের মধ্যে দাড় করিয়ে তোমার ফোনের ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করে আপুর ফ্যামিলি নিয়ে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলেছে।”
সাঈফার কথা শুনে মিহিরের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তৃধাকে সামনে পেলে মিহির ওকে মাথায় তুলে একটা আছাড় মারতো।
#চলবে…….
আগামি পর্বে একটা ধামাকা আছে।