#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ9
সকাল 10:00
মায়া আর দিশা রিকশা থেকে নেমে ভার্সিটির গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই হুট করে কোথা থেকে এসে কালকের সেই ছেলেগুলো মায়া আর দিশার পায়ের সামনে উপুর হয়ে পড়লো। ঘটনার আকস্মিকতায় মায়া আর দিশা ভয় পেয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেলো। ছেলে গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ওদের সারা শরীরে মারের দাগের পাশাপাশি রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। কারো কারো হাত পায়ের আঙুল একদম থেতলে গেছে। ছেলে গুলোর এমন অবস্থা দেখে মায়ার হাত পা একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে। কালকে ছেলে গুলোর প্রতি ওর ভিষন রাগ ছিলো ঠিকই, কিন্তু এখন ওদের এমন করুন অবস্থা দেখে মায়ার ওদের প্রতি দয়া হচ্ছে। দিশার কোনো ভাবান্তর নেই। ‘ও’ চুপচাপ নির্বিকার ভাবে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ছেলে গুলোর এমন অবস্থা দেখে ‘ও’ বেশ খুশী হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো সেদিন যেই ছেলেটা মায়ার ওড়না ধরে টেনে ছিলো আর কালকে ওর হাত ধরেছিলো সেই ছেলেটা এখানে নেই। মায়া ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকালো। দেখলো ভার্সিটির সমস্ত স্টুডেন্টরাই মাঠের মধ্যে উপস্থিত আছে। আহির,মিহির আর ওদের বন্ধুরা দিশাদের থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে।
মায়া আর দিশা এখনো ওখানেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে। ছেলেগুলো ওদের পায়ের কাছে বসে হাউমাউ করে কাদছে আর বারবার মাফ করে দেওয়ার কথা বলছে। দিশা আর মায়া কি করবে বুঝতে পারছে না। দিশা আর মায়া চুপ করে দাড়িয়ে আছে দেখে আহির,মিহির ওদের দিকে এগিয়ে এলো। মিহির এসে মায়া আর দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“কি হলো তোমরা ওদের মাফ করতে চাও না? না করতে চাইলে প্রভলেম নেই। ওদের জন্যে আরো ভয়ংকর শাস্তি অপেক্ষা করছে। এমনিতেই এইটুকু মারে ওদের মতো জানোয়ারদের কিছুই হবে না।ওদের আরো কঠিন কোনো শাস্তি দেওয়া উচিৎ।”
মিহিরের কথা শুনে ছেলে গুলো আরো জোড়ে কেদে দিলো। ওরা সবাই গিয়ে মায়া আর দিশার পা জড়িয়ে ধরে বারবার আকুতি মিনতি করতে লাগলো। মায়া আর দিশা কোনো রকম ছেলে গুলোর থেকে নিজেদের পা ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে সরে দাড়ালো। তারপর মায়া মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ওদের আর শাস্তি দিতে হবে না। ওরা যেটা করেছে তার জন্যে যঠেষ্ট শাস্তি পেয়েছে। আর আমরাও ওদের মাফ করে দিয়েছি। এবার ওদের ছেড়ে দিন।”
মায়ার কথা শেষ হতেই আহির ওর বন্ধুদের উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই গুলোকে নিয়ে গিয়ে হসপিটালের বাইরে ফেলে রেখে আয়। খবরদার কেউ এদের ট্রিটমেন্টের জন্যে একটা পয়সাও দিবি না। জানোয়ারদের জন্যে সহানুভূতি দেখানোর আমাদের কোনো দরকার নেই।”
আহিরের কথা শেষ হতেই ওর কয়েকজন বন্ধু মিলে ছেলে গুলোকে একে একে টেনে হিছরে গাড়িতে করে নিয়ে চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই দিশা মিহিরদের সামনে এসে চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বললো
“সবই তো বুঝলাম। কিন্তু এদের মধ্যে যেটা নাটের গুরু ছিলো সেই বজ্জাত টা কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না। আপনাদের বোকা বানিয়ে ওইটা আবার পালিয়ে যায়নি তো?”
মিহির শান্ত স্বরেই বললো
“ওকে দেখতে পাওনি কারন ‘ও’ আপাততো কাউকে মুখ দেখানোর মতো অবস্থায়ই নেই। ওর যে অবস্থা হয়েছে তাতে আগামি ছয় মাসে ‘ও’ বিছানা থেকে উঠে দাড়াতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।”
মায়া ভ্রু কুচকে বললো
“মানে? আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।”
মিহির একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো
“বোঝার দরকারও নেই। চুপচাপ দুজন ক্লাসে যাও। তোমাদের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।”
মিহিরের কথা শুনে মায়া একটা ভেংচি কেটে ওখান থেকে ভিতরে চলে গেলো। ওর পিছনে পিছনে দিশাও চলে গেলো। ওরা যেতেই মিহিরের এক ফ্রেন্ড খানিকটা সন্দীহান কন্ঠে বললো
“আহির,মিহির ব্যাপারটা কি হলো একটু বুঝিয়ে বলবি প্লিজ?ওই ছেলে গুলোকে ওভাবে মারলো কে? তোরা তো বলেছিলি যে ওদের ভার্সিটির সবার সামনে শাস্তি দিবি। তাহলে গোডাউনে নিয়ে ওদের এভাবে মারলি কেনো?”
মিহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“আরে আমরা ওদের মারিনি। আহান ভাইয়া ওদের সবার এমন অবস্থা করেছে।”
মিহিরের কথা শুনে ওর বন্ধুরা অবাক কন্ঠে বললো
“হোয়াট?আহান ভাইয়া ওদের মেরেছে? কিন্তু কেনো? ভাইয়ার সাথে কি ওদের সাথে আগে থেকে কোনো শএুতা ছিলো?”
আহির ফোশ করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো
“এগুলো জানলে তো হতেই যেতো। সকালে যখন আমি আর মিহির গোডাউনে গেলাম ওদের নিয়ে আসার জন্যে,তখন গিয়ে দেখলাম ওরা সবাই হাত-পা বাধা অবস্থায় আধমরা হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। ওদের এমন অবস্থা দেখে আমরা দ্রুত গিয়ে গার্ডদের জিজ্ঞেস করলাম “এদের এভাবে কে মেরেছে?” তখন গার্ডরা জানালো রাতে নাকি আহান নিজের পার্সনাল সিকিউরিটি নিয়ে এখানে এসেছিলো। তারপর সবাই মিলে ছেলে গুলোকে ইচ্ছে মতো মেরে এমন অবস্থা করে এদের মধ্যে থেকে একটা ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে চলে গেছে। এটা শুনে আমি আর মিহির বেশ বড় সর একটা ঝটকা খেয়ে ছিলাম। তখন থেকে শুধু এটাই ভেবে যাচ্ছি যে ভাইয়া এদের কেনো মারলো?কিন্তু আফসোস এখনো কিছু বুঝেই উঠতে পারলাম না।”
ওদের আরেক ফ্রেন্ড চোখ বড় বড় করে বললো
“ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করিসনি যে ভাইয়া ওদের কেনো মারলো? আর যেটাকে ওনারা নিয়ে গিয়েছিলো সেই ছেলেটা এখন কোথায়?”
মিহির বললো
“হুম সাথে সাথেই ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাট ভাইয়া বলেছে এসব নাকি আমাদের না জানলেও চলবে। আর সেই ছেলেটা আপাততো হসপিটালে ভর্তি আছে। ওর হাত দুটো পুরো থেতলে গেছে। এখানে আসার আগে আমরা প্রথমে ছেলেটাকে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেটা দেখার মতো অবস্থায় একদমই নেই। ভিষন বাজে অবস্থা ওর শরীরের।”
আহির আর মিহিরের ফ্রেন্ডরা সবাই শকড হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওরা সবাই আহানকে বেশ ভালো করেই চিনে। আহান একটু বদ রাগি ঠিকই। তবে যেকোনো কাজ করার আগে অন্তত হাজার বার ভেবে তারপর সেই কাজ করে। ‘ও’ কখনো আহির আর মিহিরের মতো হুটহাট করে ডিসিশন নেয় না। আর কোনো সিরিয়াস কারন ছাড়া কারো গায়ে তো কখনোই হাত তুলে না। এজন্যেই ওরা এটা বুঝতে পারছে না যে কি কারনে আহান ছেলে গুলোকে এভাবে মারলো?ওরা সবাই মিলে অনেক ভেবেও আহানের রেগে যাওয়ার কোনো কারন খুজেই পেলো না। অবশেষে সবাই নিরাশ হয়ে সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের ক্লাসে চলে গেলো।
______________________
এক সপ্তাহ পর……
মায়া আর দিশা রেডি হচ্ছে। আজকে ওদের দুপুরের লাঞ্চের জন্যে মিহিরদের বাসায় ইনভিটেশন আছে। মিহিরের নানা ভাই নিজে এসে দিশা আর মায়াকে ওনাদের সাথে লাঞ্চ করার জন্যে ইনভাইট করে গেছেন। ওরা দুজন রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে মিহিরদের বাসার সামনে এসে কলিংবেল বাজালো। কলিংবেল বাজাতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিলো। দিশা আর মায়া ধীর পায়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো। দেখলো ড্রইংরুমের সোফায় বসে মেঘ,অভি আর ওদের সব ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিচ্ছে। ওদের সাথে সাড়িকা,সাঈফা আর আলিশাও আছে।
মায়া আর দিশাকে ভিতরে ঢুকতে দেখে সাঈফা এসে মায়া আর দিশার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে ওদেরও সোফার উপরে বসিয়ে দিলো। ওরা গিয়ে বসতেই মেঘ আর ওর ফ্রেন্ডরা দিশা আর মায়ার দিকে কপাল কুচকে তাকালো। তারপর মেঘ সাঈফাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই মেয়ে দুটো কে সাঈফা? ওরা আমাদের বাসায় কেনো এসেছে?”
মেঘের এমন করে কথা বলার স্টাইলটা আলিশার একদমই পছন্দ হলো না। তারপরেও ‘ও’ কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। সাঈফা জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো
“ওরা এই বাসার পেইং গেস্ট আপি। আর তাছাড়া আমরা সবাই একই ভার্সিটিতে পড়ি। বলতে পারো ওরা আমাদের আপন বড় বোনের মতো।”
মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো
“তো?পেইং গেস্ট ভালো কথা। কিন্তু আমাদের বাসায় ওদের কাজ কি? ওরা এখানে কেনো এসেছে?”
আলিশার ইচ্ছে করছে মেঘের গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। ‘ও’ ওর হোল লাইফে এমন অসভ্য মেয়ে আর একটাও দেখেনি। মানুষ কতোটা ঝঘন্য হলে গেস্টদের সাথে এইরকম অভদ্র ব্যাবহার করতে পারে সেটা আলিশা ভেবেই পাচ্ছে না। সাড়িকা একটু গলা ঝেড়ে বললো
“মেঘ আপি আসলে দাদা ভাই গিয়ে মায়া আপু আর দিশা আপুকে ইনভাইট করে এসেছে। আজকে দুপুরে ওরা আমাদের সাথে একসাথে লাঞ্চ করবে।মানে আজকে দিনের জন্যে ওরা আমাদের গেস্ট হয়ে এখানে এসেছে।”
সাড়িকার কথা শেষ হতেই মেঘ চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফেলে ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“ওহ গড,আর কি কি সহ্যে করতে হবে কে জানে? শেষ পযর্ন্ত কিনা বিজনেস ম্যান আজম রহমানের মেয়েকে এদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েদের সাথে বসে খেতে হবে? অসম্ভব! আমি এটা কিছুতেই করতে পারবো না।”
মেঘের কথার মধ্যেই সিড়ি দিয়ে আহির,মিহির,আহান আর হিয়ান নেমে এলো। ওরা সিড়ি দিয়ে নামার সময় সবটাই শুনলো।মিড়া রহমানও কিচেন থেকে সবজির বাটি এনে ডাইনিং টেবিলে রাখতে রাখতে মেঘের কথা গুলো শুনে ফেললেন। আলিশা এতোক্ষন চুপ করে বসে থাকলেও এবার ওর মেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে গেলো। তাও ‘ও’ নিজের রাগটাকে যথা সম্ভব সামলে রাখার চেষ্টা করে দাতে দাত চেপে বললো
“এসব কোনো ধরনের ব্যাবহার মেঘনা? ওরা আপাততো আমাদের গেস্ট। তাই তোমার কোনো রাইট নেই আমাদের গেস্টকে এইভাবে অপমান করার। এক্ষুনি সরি বলো ওদের।”
মেঘ কর্কশ গলায় বললো
“সরি মাই ফুট। এদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েদের আমি সরি বলবো? এদের তো আমার বাসার কাজের লোক হওয়ারও যোগ্যতা নেই। এদের মতো মেয়েদের দিকে তাকাতেও আমার ঘৃনা হয়। আর সেখানে সরি বলার তো প্রশ্নই আসে না।”
মেঘের কথা শুনে আহির আর মিহির ভিষন রেগে গেলো। এইজন্যেই ওরা মেঘকে একদম সহ্যে করতে পারে না। মেয়েটার বড্ড বেশী টাকার অহংকার। এই অহংকারী অসভ্য মেয়েটা কি করে যে ওদের বোন হতে পারে সেটাই ওরা আজ অবদি বুঝতে পারলো না। আহান চুপচাপ শান্ত দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ও’ আপাততো মায়ার রিয়্যাকশন দেখার জন্যে অপেক্ষা করছে।
মেঘের এসব কথা শুনে যদিও দিশার রেগে যাওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু কেনো যেনো ওর পেট ফেটে হাসি আসছে। ওর ইচ্ছে করছে ফ্লোরের উপর গড়াগড়ি খেয়ে কিছুক্ষন হাসতে। কারন এই মেয়েটা আজম রহমানকে নিজের বাবা দাবি করে মায়াকে এতোগুলো কথা শোনাচ্ছে?অথচ ওরা তো জানেই না যে যাকে ওরা অপমান করছে সেই মেয়েটা আজম রহমানের একমাএ কলিজার টুকরো। যার চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লে আজম রহমান মানুষ খুন করতেও দ্বীতিয় বার ভাবে না। যার মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে আজম রহমান সব কিছু করতে পারে। তাকে কিনা এই মেয়েটা থার্ড ক্লাস মেয়ে বলছে?
মায়া এতোক্ষন মাথা নিচু করে বসে ছিলো। মেঘের কথা শেষ হতেই ‘ও’ মাথা নিচু রেখেই বিদ্রুপের স্বরে একটা হাসি দিয়ে বললো
“মিস মেঘনা মানুষের ড্রেস দেখে কখনো তার ক্লাস বিচার করতে আসবেন না। কারন আজকাল আপন মা পযর্ন্ত নিজের মেয়েকে সামনে দেখেও চিনতে পারে না। আর সেখানে জামা কাপড় দেখে মানুষ চেনাটা তো অসম্ভব ব্যাপার। ”
কথাটা বলে মায়া বাকা চোখে মিড়া রহমানের দিকে তাকালো। মায়ার কথা শুনে মিড়া রহমানের বুকটা হুট করেই ধুক করে উঠলো। ওনার মনে হচ্ছে ওনার বুকটা একদম শূন্য হয়ে গেছে। হঠাৎ করে কেনো এরকম অদ্ভুত লাগছে সেটা ওনার জানা নেই। মিড়া রহমান কিছুক্ষন থম মেরে দাড়িয়ে থেকে দ্রুত পায়ে আবার কিচেনের দিকে চলে গেলেন।
মায়ার কথার প্রতি উওরে মেঘ বলার মতো কিছুই খুজে পেলো না। তাই একটা ভেংচি কেটে ‘ও’ চুপচাপ বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। আলিশা বিরক্তি মুখ করে বসা থেকে দাড়িয়ে কিচেনে চলে গেলো। এখানে থাকলে কখন রেগে গিয়ে মেঘের গালে চড় বসিয়ে দিবে তার ঠিক নেই। তাই এখান থেকে চলে যাওয়াটাই ‘ও’ শ্রেয় মনে করলো।
আহান,হিয়ান,আহির,মিহির গিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পড়লো। সোফায় মেঘ বসে আছে তাই ওরা আর এইদিকে আসলো না। এই মেয়েটাকে ওদের চড়ম অসহ্যে লাগে। অতিরিক্ত বেয়াদব মেয়ে একটা। সবাই নিজেদের মতো কথা বলায় ব্যাস্ত ছিলো তখনই মায়ার ফোনে একটা কল আসে। ‘ও’ ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর বাবাই ওকে ফোন করেছে। মায়া আশেপাশে একবার তাকিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে ব্যাস্ত স্বরে বললো
“এক্সকিউজ মি গাইস,আমার একটা কল এসেছে। আমি কথা বলে একটু পরেই আবার তোমাদের সাথে জয়েন হচ্ছি।”
কথাটা বলে মায়া ফোনটা নিয়ে ড্রইংরুমের পাশের একটা বেড রুমে ঢুকে ব্যালকনিতে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে ‘ও’ ওর বাবার সাথে কিছুক্ষন কথা বললো। কথা বলা শেষে ফোনটা কেটে দিয়ে ঘুড়ে চলে আসতে যাবে ঠিক তখনই কেউ নিশব্দে এসে ওর পিছনে দাড়ালো। আকস্মিক ঘটনায় মায়া কিছুটা ভয় পেয়ে এক সাইডে সরে গেলো। তারপর মায়া মাথা উঠিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর সামনে আহান দাড়িয়ে আছে। আহান মায়ার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে যেতে বললো
“কার সাথে কথা বলছিলে? আর ওখান থেকে ফোনটা নিয়ে এখানে এসে কি কথাই বা বলছিলে?”
মায়া পিছাতে পিছাতে বললো
“এগুলো একান্তই আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তাই আমি এসব আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।”
কথাটা বলে মায়া পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে ওর পিঠ ঠেকে গেলো। আহান মায়ার একদম কাছে গিয়ে মায়ার দুপাশের দেয়ালের সাথে হাতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে ওকে দুহাতের মাঝ খানে আবদ্ধ করে ফেললো। তারপর মায়ার চোখে চোখ রেখে বললো
“তোমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার বলতে কিছুই নেই বুঝেছো সোনা পাখি?তোমার সমস্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপারগুলো এখন থেকে আমার। কারন তুমি মানুষটাই তো সম্পূর্ন আমার।”
মায়া একদম দেয়ালের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে। ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে। মায়া শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো
“দেখুন আপনি কি বলছেন? আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ আমার সামনে থেকে সরুন আমি ভিতরে যাবো।”
আহান মায়ার দিকে আরেকটু ঝুকে এক হাত দিয়ে ওর গালে স্লাইড করতে করতে বললো
“ওকে!বুঝতে না পারলে সমস্যা নেই। তোমাকে সবকিছু ভালো ভাবে বোঝানোর জন্যে আমি আছি তো।”
মায়া চোখ খিচে বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। ওর সারা শরীর একদম জমে বরফ হয়ে গেছে। আহানের স্পশে ‘ও’ বারবার কেপে উঠছে। আহান এক হাত দিয়ে মায়ার গালে স্লাইড করতে করতে অন্যে হাত মায়ার কোমরে রেখে ওকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মায়া চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে আছে। আহানের এতোটা কাছে এসে ওর দম আটকে আসছে। আহান মায়াকে ওভাবে ধরে রেখেই নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে সেটা দিয়ে মায়ার ঠোটের লিভস্টিক টা মুছে ফেললো। তারপর টিস্যুটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে মায়ার কানের কাছে এসে লো ভয়েসে বললো
“তুমি এমনিতেই দেখতে একদম স্নিগ্ধ পরীর মতো মায়া পাখী। তাই তোমার সাজার কোনো প্রয়োজন নেই। আর বাইরের লোকদের সামনে তো ভুলেও সাজবে না। কারন তাহলে লোকেদের বদনজর লেগে যাবে তোমার উপর।”
আহানের কথা শুনে মায়া দ্রুত চোখ খুলে আহানের দিকে তাকালো। আহান মায়ার দিকে তাকিয়ে দুস্টু একটা হাসি দিলো। মায়া লজ্জা পেয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। মায়া ভাবতেই পারছে না ‘ও’ এতোক্ষন একটা ছেলের এতোটা কাছে দাড়িয়ে ছিলো। লজ্জায় মায়ার নাকের ডগা একদম লাল হয়ে গেছে। আহান মায়ার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওকে ছেড়ে দিলো। আহানের থেকে ছাড়া পেতেই মায়া দৌড়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো। আহান রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে প্যান্টের পকেটে দু-হাত ঢুকিয়ে বিরবির করে বললো
“পালাচ্ছো,পালাও তবে একবার যখন তোমাকে হাতের নাগালে পেয়েছি। তখন এতো সহজে তো তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না। তোমাকে এতো দূর অবদি নিয়ে আসার জন্যে অনেক সাধনা করেছি। এবার শুধু তোমাকে নিজের করে পাওয়ার পালা।”
#চলবে…..