#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ8
দেড়ি করে ভার্সিটিতে আসায় মায়া আর দিশা তাড়াহুড়ো করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো। ওরা গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে ভার্সিটি ক্যাম্পাসের কিছুটা ভিতরে আসতেই সেদিনের সেই সিনিয়র ছেলেগুলো ওদের সামনে এসে দাড়ালো। ছেলে গুলোকে দেখে মায়া আর দিশা দাড়িয়ে গিয়ে ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সেদিন যে ছেলেটা মায়ার ওড়না টেনে ধরেছিলো সেই ছেলেটা মায়ার দিকে একটু এগিয়ে এসে একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলে
“সেদিন নাহয় আহির আর মিহির এসে তোদের বাচিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আজকে তো ওরা ভার্সিটিতে আসেইনি। আজকে তোদের কে বাচাবে?”
দিশা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
“আমাদের কে বাচাবে সেটা নিয়ে তোদের না ভাবলেও চলবে। তোরা নিজেদের চিন্তা কর। সেদিন তোরা যে ভুল করেছিস তার জন্যে তোদের মাফ করে দেওয়া হয়েছে। কারন যেকোনো মানুষকে লাইফে সেকেন্ড চান্স তো দেওয়াই উচিৎ। তাই তোরা এখনো সোজা হয়ে আমাদের সামনে দাড়িয়ে আছিস। তবে সেদিনের মতো যদি আবারও এই একই ভুল করিস। তাহলে আর এখানে দাড়ানোর মতো অবস্থায় থাকবি না। শরীরে যতো পার্স পাতি আছে সব ভেঙে টুকরো টুকরো করে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবো।”
দিশার কথা শুনে ছেলে গুলোর চোখে,মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠলো। মায়া দিশার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে ওর দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে চাপা স্বরে দাতে দাত চেপে বললো
“কি বলছিস দিশা?এখন কি তুই এদের সাথে মারামারি করে এতোদিনের সব প্লান ভেজতে দিবি নাকি?চুপচাপ নিজের মুখটা বন্ধ রাখ নাহলে সবকিছু গরবর হয়ে যাবে।”
মায়ার কথা শুনে দিশা রাগি দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকালো। মায়া সেদিকে পাএা না দিয়ে ছেলে গুলোর দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে শান্ত স্বরে বললো
“দেখুন ভাইয়া আমরা কোনো ঝামেলা চাই না। আমরা এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি। লেখাপড়া শেষ করে আবার এখান থেকে নিজেদের বাড়িতে চলে যাবো। তাই দয়াকরে আমাদের জন্যে কোনো প্রভলেম ক্রিয়েট করবেন না প্লিজ। কারন আমাদের জন্যে প্রভলেম ক্রিয়েট করলে সেটা আপনাদের জন্যে লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে।”
কথাটা বলে মায়া ছেলে গুলোর সাইড কাটিয়ে দিশাকে নিয়ে চলে আসলো। ওরা হেটে কিছুটা দূর আসতেই হুট করে ছেলেগুলো পিছন থেকে এসে ওদের হাত-পা,মুখ বেধে ফেললো। ঘটনাটা এতোটা দ্রুত ঘটে গেলো যে মায়া আর দিশা একটা চিৎকার দেওয়ার সময় অবদি পেলো না। ছেলেগুলো মায়া আর দিশার হাত-পা বাধা শেষে ওদের টানতে টানতে ভার্সিটির পিছনের সাইডের ফাকা ক্লাসে নিয়ে এলো। মায়া আর দিশা হাজার চেস্টা করার পরেও এতোগুলো ছেলের সাথে শক্তিতে পেরে উঠলো না।
ছেলেগুলো ফাকা ক্লাসটায় ওদের নিয়ে এসে দুজনকে দুটো বেঞ্চের সাথে শক্ত করে বেধে ফেললো। তারপর সেই ছেলেটা বললো
“আপাততো এরা এখানে থাক। ভার্সিটি ছুটির পর সব স্টুডেন্টরা চলে যাক তারপর এদের একটা ব্যাবস্থা করা যাবে।”
কথাটা বলে ছেলেটা সহ ওর অন্যান্য বন্ধুরা সবাই ওখান থেকে চলে গেলো।
________________________
বিকাল 4:30
ভার্সিটি ছুটি হওয়ার বেশ অনেকক্ষন পর সেই ছেলে গুলো আবার ফাকা ক্লাস রুমটায় ফিরে এলো। ওরা এসে মায়া আর দিশাকে নিয়ে আবারও টেনে হিচরে ওই রুমটা থেকে বের করে ভার্সিটির পিছনের গেট দিয়ে ওদের দুজনকে নিয়ে গাড়িতে উঠালো। ওদের গাড়ি কিছুটা দূর আসতেই হঠাৎ ছয় সাতটার মতো বাইক এসে গাড়ির সামনে দাড়ালো। আচৎমকা এতো গুলো বাইক সামনে এসে পড়ায় গাড়ির ড্রাইভার ব্যালেন্স লেস হয়ে গেলো। ব্যালেন্স লেস হয়ে দ্রুত গাড়িটাকে সাইড করতে গিয়ে ওটাকে একটা গাছের সাথে জোড়ে ধাক্কা দিলো। সাথে সাথে গাড়ির সামনের গ্লাসের কাচগুলো ভেঙে ড্রাইভার আর তার পাশে বসে থাকা ছেলেটার গায়ে বিধে গেলো। মায়া আর দিশাও জানালার সাথে ধাক্কা খেয়ে বেশ খানিকটা আঘাত পেলো।
গাড়ির ভিতরে বসে থাকা ছেলেগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাইকে বসে থাকা ছেলেগুলো নিজেদের হেলমেট খুলে বাইকের সাথে ঝুলিয়ে রেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসলো। মায়া আর দিশা মাথা উঠিয়ে জানালার কাচ দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখতে পেলো, ছেলেগুলো আর কেউ না, আহির,মিহির সহ ওদের অন্যান্য বন্ধুরা। ওদেরকে এখানে দেখে মায়া আর দিশা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। মিহির আর আহিরের বন্ধুরা এসে গাড়ির দরজা খুলে ছেলে গুলোকে টানতে টানতে গাড়ি থেকে নামালো। আহির আর মিহির এসে মায়া আর দিশাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ওদের হাত -পায়ের বাধন খুলে দিলো। মিহিরের এক বন্ধু বলে উঠলো
“আহির এদের নিয়ে এখন কি করা যায় বলতো?মেরে হাত -পা ভেঙে দেই? তাহলে মেয়েদের সাথে অসভ্যতা করার ফল হাড়ে হাড়ে টেড় পাবে।”
আহির বললো
“এটা পাবলিক প্লেস। তাই আপাততো এদের গোডাউনে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেধে ফেলে রাখ। তারপর এদের যা ব্যাবস্থা করার সেটা কালকে করবো। তাও আবার ভার্সিটির সব স্টুডেন্টদের সামনে।যাতে ভবিষ্যতে কেউ কখনো এরকম কাজ করার আগে অন্তত একশো বার ভাবে।”
আহির,মিহির আর ওদের বন্ধুরা আরো কিছুক্ষন কথা বললো। তারপর ওরা একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে ছেলেগুলোকে নিয়ে আহিরদের বাকি বন্ধুরা চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই আহির,মিহিরের দৃস্টি গেলো মায়া আর দিশার দিক। ওরা এখনো সেই ভাঙা গাড়িটার সিটের উপর বসে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। দুজনকেই বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। মিহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের কাছে এগিয়ে এসে নরম স্বরে বললো
“তোমরা ঠিক আছো?”
মিহিরের কথা শুনে মায়া চোখ খুলে শুকনো মুখে বললো
“হুম আমরা একদম ঠিক আছি। আপনি আমাদের জন্যে একটা ট্যাক্সি বুক করে দিবেন প্লিজ। আমাদের টাকা,ফোন,ব্যাগ সব ভার্সিটি ক্যাম্পাসেই পড়ে আছে সম্ভবতো। প্লিজ গাড়ি ভাড়াটা দিয়ে দিবেন? আমরা গিয়েই আপনাদের টাকা আপনাদের ফেরত দিয়ে দিবো।”
মায়ার কথার প্রতি উওরে মিহির কেনো যেনো কিছুই বলতে পারলো না। ওর সব কথা গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। ওদের একটা ফালতু মজার জন্যেই তো মেয়ে দুটোর আজকে এমন অবস্থা হয়েছে। মিহির একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো
“তোমরা আরেকটু সময় বসো। আমি ড্রাইভারকে ফোন করে দিয়েছি। উনি এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে এসে তোমাদের নিয়ে যাবেন।”
কথাটা বলে মিহির আর এক মুহূর্তও ওখানে না দাড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেটে রাস্তার এক সাইডে গিয়ে দাড়ালো। তারপর চোখের কোনে জমে থাকা পানিগুলো খুব সাবধানে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ফেললো। মায়ার বিধ্বস্ত মুখটা দেখে মিহিরের ভিষন কস্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে আরেকটু দেড়ি করে আসলেই হয়তো ‘ও’ ওর খুব মূল্যবান একটা জিনিস হারিয়ে ফেলতো। এমন কেনো মনে হচ্ছে সেটা ওর নিজেরও অজানা।
মিহিরের ভাবনার মধ্যেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে আসলো। আহির খুব সাবধানে দিশা আর মায়াকে ধরে একে একে গাড়িতে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর ড্রাইভারকে যেতে বলে মিহিরকে ডাক দিলো। মিহির নিজেকে সামলে নিয়ে আহিরের কাছে আসলো। তারপর ওরা দুজনও নিজেদের বাইক স্টার্ড দিয়ে গাড়ির পিছনে রওনা দিলো।
______________
ফ্লাশ ব্যাক…..
ভার্সিটি ছুটি শেষে সাড়িকা,সাঈফা গেটের সামনে দাড়িয়ে মায়া আর দিশার অপেক্ষা করতে লাগলো। কারন গতকাল ওরা চার জন মিলে ঠিক করেছিলো আজকে ওরা ফুসকা খাওয়ার কম্পিটিশন দিবে। বেশ অনেকক্ষন হয়ে যাওয়ার পরেও যখন সাঈফা,সাড়িকা দেখলো মায়া আর দিশা এখনো আসছে না। তখন ওরা হাটা দিয়ে মায়াদের ক্লাসে চলে গেলো। কিন্তু গিয়ে দেখলো ক্লাসের মধ্যে কেউই নেই। তাই সাঈফা ওর ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে মায়াকে আর দিশাকে কয়েকবার কল দিলো। কিন্তু ওদের ফোনটা বারবার রিং হওয়ার পরে কেটে যাচ্ছে। কিছুক্ষন কল করার পরেও যখন কেউ ফোনটা পিক করলো না। তখন সাড়িকা সাঈফা ভেবে নিলো মায়া আর দিশা হয়তো আজকে ভার্সিটিতেই আসেনি। তারপরেও কেউ ফোন পিক না করায় ওদের মনটা কেমন খুচখুচ করছিলো। তাই ওরা দুজন মিলে ঠিক করলো এখান থেকে সোজা মায়াদের ফ্লাটে যাবে। তারপর ওদের সাথে দেখা করে ওখান থেকে নিজেদের বাড়িতে চলে যাবে।
ওরা দুজন ক্লাস থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে রিকশার জন্যে অপেক্ষা করছিলো। তখনই দেখলো কয়েকটা ছেলে ভার্সিটির গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে আর নিজেদর মধ্যে বলাবলি করছে:-
“ভার্সিটি এখন একদম ফাকা এখনি মেয়ে দুটোকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।”
ছেলে গুলোর কথা শুনে সাড়িকা আর সাঈফা কৌতূহল বশত ছেলেগুলোর পিছনে পিছনে যায়। কিন্তু ওরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি ওরা যে মেয়ে দুটোর কথা বলছে সেই মেয়ে দুটো দিশা আর মায়া। ছেলেগুলো যখন মায়া আর দিশাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে নিজেদের মধ্যে প্লানিং করছিলো তখনই সাড়িকা সাঈফা ফোন করে আহির আর মিহিরকে সবটা জানায়। সবটা শুনে আহির বলে সাড়িকা সাঈফা যাতে বাড়িতে চলে যায়।এদিকটা ওরা সামলে নিবে। আহিরের কথা মতো সাড়িকা,সাঈফা খুব সাবধানে ওখান থেকে বের হয়ে বাড়িতে না গিয়ে মায়াদের ফ্লাটে যাওয়ার উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়ে। কারন যতোক্ষন পযর্ন্ত না ওরা মায়া আর দিশাকে নিজেদের চোখের সামনে সেইফ অবস্থায় দেখছে ততোক্ষন বাড়িতে গিয়েও শান্তি পাবে না।
______________________
রাত 9:45
মায়া একটা কফি মগ হাতে নিয়ে খোড়াতে খোড়াতে ছাদে চলে আসলো। বাসায় আসার পর মিড়া রহমান এসে দিশা আর মায়ার চেকআপ করে গেছেন। যদিও উনি একজন হার্ট সার্জেন তারপরেও এইটুকু টুকিটুকি সমস্যার ট্রিটমেন্ট উনিই করতে পারেন। তাই আহির আর মিহির আলাদা ভাবে কোনো ডাক্তারকে ডাকেনি। দিশার তেমন কিছুই হয়নি। শুধু এতোটা সময় বন্ধ রুমে হাত-পা, মুখ বেধে ফেলে রাখায় কিছুটা ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই এখন কম ডোজের একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। আগের বার অ্যাক্সিডেন্টের কারনে মায়ার হাত পায়ে যেহেতু আগেই ব্যাথা ছিলো। তাই ছেলেগুলো অতিরিক্ত টানা হেচড়া করার কারনে আগের চেয়ে ওর ব্যাথার পরিমানটা আরো কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে মায়ার একটুও মাথা ব্যাথা নেই।
মিড়া রহমান মায়াকেও ঘুমের মেডিসিন খেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিতে বলেছিলেন। কিন্তু মায়ার এখন কিছুতেই ঘুমানোর ইচ্ছে নেই। ওর এখন একটু ফ্রেশ এয়ার দরকার যাতে ‘ও’ মন খুলে কিছুক্ষন নিশ্বাস নিতে পারে। তাই ‘ও’ দিশাকে ঘুম পড়িয়ে এক মগ কফি নিয়ে ছাদে চলে এসেছে।
মায়া ছাদে এসে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো আহান দাড়িয়ে আছে। শুধু দাড়িয়ে আছে না, রেগে চিল্লিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। আহান বলছে
“তোমাদের কি আমার চেহারা দেখার জন্যে ওখানে রাখা হয়েছিলো?এতো বড় একটা কান্ড ঘটে গেলো আর তোমরা কিছু টেড়ই পেলে না? ওরা দুজন সারাদিন ধরে মিসিং ছিলো তাহলে তোমরা বাহিরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাদের পাহাড়া দিচ্ছিলে?ভার্সিটি ক্যাম্পাসটাকে?”
আহানের কথা শুনে মায়ার ভ্রু কুচকে এলো। মায়ার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আহান ওদের কথাই বলছে। মায়া আরেকটু ভালো করে আহানের কথা গুলো শোনার জন্যে ধীর পায়ে আহানের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলো। আহান আবারও রাগি কন্ঠে ধমক দিয়ে বললো
“শাটআপ!যাষ্ট শাটআপ ওকে? এসব লেইম এক্সকিউজ তোমরা কাকে শোনাচ্ছো? আহান খানকে? আমাকে কি তোমাদের বাচ্চা মনে হয় যে তোমরা যা বলবে আমাকে সেটাই বিশ্বাস করে নিতে হবে? তোমাদের ভাগ্যে ভালো ওরা সেইফলি বাসায় পৌছাতে পেরেছে। নাহলে আমি বাকিদের কি করতাম জানিনা। তবে সবার আগে তোমাদের জ্যান্ত মাটিতে পুতে ফেলতাম।”
মায়া আহানের কথা গুলো বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনছে। কিন্তু আহান কাদের ব্যাপারে বলছে সেটা এখনো ওর কাছে স্পষ্ট না। মায়ার ভাবনার মাঝেই আহান আবারও বলে উঠলো
“সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দাও। এরপর থেকে ভুলেও যাতে এরকম কোনো ঘটনা না ঘটে। তাহলে কিন্তু,,,”
কথাটা বলতে বলতে আহান ঘুড়ে পিছনে তাকালো। পিছনে তাকিয়ে মায়াকে দেখেই ‘ও’ কথা থামিয়ে দিলো। আহান আচৎমকা পিছনে ফিরে তাকানোর জন্যে মায়া কিছুটা বিব্রত কর পরিস্থিতিতে পরে গেলো। এভাবে চুপিচুপি এসে কারো কথা শোনাটা নিতান্তই এক ধরনের অভদ্রতা সেটা ‘ও’ ভালো করেই জানে। মায়া কিছুক্ষন কাচুমাচু করে দাড়িয়ে থেকে ঘুড়ে চলে আসার জন্যে পা বাড়াতেই আহান পিছন থেকে বলে উঠলো
“এক মিনিট মিস মায়া। কোথায় যাচ্ছেন?”
আহানের কথা শুনে মায়া দাড়িয়ে গেলো। আহান ওর ব্যাপারে মনে মনে কি ভাবছে সেটা ভেবেই মায়ার ভিষন লজ্জা লাগছে। আহান বেশ শান্ত স্বরেই ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিকে বললো
“আমি তোমার সাথে একটু পরে কথা বলছি।”
কথাটা বলে আহান ফোনটা কেটে ট্রাউজারের পকেটে ফোনা ঢুকিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে এসে ওর সামনে দাড়ালো। তারপর পিঞ্চ করে বললো
“মিস মায়া আপনার মধ্যে যে এরকম একটা ভালো অভ্যাসও আছে সেটা তো আমার আগে জানা ছিলো না। আপনি এভাবে চুপিচুপি এসে আড়ি পেতে লোকের কথাও শুনতে পারেন?”
মায়া তোতলাতে তোতলাতে বললো
“আ-আজব আড়ি প-পেতে কথা শুনলাম ক-কখন? আমি ত-তো এমনিতেই কফি খেতে ছ-ছাদে এসেছিলাম। আমি কিভাবে জানবো আ-আপনি এখানে এ-এসে ফোনে কথা বলছেন?”
আহান একটু ভাবুক হওয়ার ভান করে বললো
“সেটাও তো কথা। আপনি কিভাবে জানবেন আমি ছাদে এসে কথা বলছি?আচ্ছা যখন ছাদে এসে দেখলেন আমি ফোনে কথা বলছি তখন একটা আওয়াজ দিতে পারলেন না?”
মায়া খানিকটা বিরক্ত হওয়ার ভান করে বললো
“আজব আমি আওয়াজ দিতে যাবো কোন দুঃখে?আপনার যদি এতোই গোপনীয় কথা থাকে তাহলে নিজের বাসায় বসে রুমের দরজা লক করে কথা গুলো বললেই পারেন। এখানে এসে বলার কি দরকার?”
আহান চোখ ছোট ছোট করে বললো
“একে তো চুপিচুপি এসে আমার কথা শুনছিলেন। তার উপর এখন আবার সরি না বলে উল্টো আমাকেই জ্ঞান দিচ্ছেন?”
“অদ্ভুথ তো! আপনাকে সরি বলতে যাবো কোন দুঃখে?ছাদটা সবার জন্যেই বানানো হয়েছে ওকে?তাই যে যখন খুশী এখানে আসতে পারে। তার জন্যে এখানে এসে আওয়াজ দেওয়ার বা কারো থেকে পারমিশন নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যার বেশি গোপনীয় কথা বলার থাকবে সে নিজের রুমে গিয়ে কথা বললেই পারে। আমি নিশ্চয়ই কারো রুমে আড়ি পেতে কথা শুনতে যাবো না?”
আহান ফোশ করে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো
“আপনার সাথে কেউ কথায় পারবে না মিস মায়া।আজাইরা যুক্তি,তর্কে আপনি একদম এক্সপার্ট। বাই দ্যা ওয়ে আপনার সাথে কথা বলতে বলতে আমার গলা একদম শুকিয়ে গেছে। তাই আপনার হাতের কফিটা আমাকে দিয়ে দিন। নিজে বাসায় গিয়ে নতুন করে আরেক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আসুন।”
মায়া একটা ভেংচি কেটে বললো
“হ্যা সেই আশায় এখানে দাড়িয়ে থাকুন। হুহ!”
কথাটা বলে মায়া রেলিংয়ের এক সাইডে গিয়ে দাড়িয়ে কফিতে চুমুক দিলো। এক চুমুক দিতেই আহান এসে ছো মেরে মায়ার হাত থেকে কফি মগটা নিয়ে গেলো। মায়া দাতে দাত চেপে বললো
“এটা কি হলো?আপনি আমার কফি মগটা নিয়ে নিলেন কেনো?ওটা ফেরত দিন বলছি।”
আহান মায়ার দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললো
“একবার যখন এটা আমার কাছে চলে এসেছে। তখন আপনি আর এটা ফেরত পাবেন না মিস মায়া। আসলে কি বলুনতো, আমার একবার যেই জিনিসটা পছন্দ হয়, ওটা আমি আর কাউকে নিতে দেই না।”
মায়া ভ্রু কুচকে বললো
“মানে?”
আহান মায়ার দিকে খানিকটা ঝুকে ফিশফিশ করে বললো
“মানে হলো,আজকে জোড় করে আপনার থেকে কফি মগটা নিয়ে নিলাম। আর কোনো একদিন জোড় করে আপনার থেকে আপনাকেই ডাকাতি করে নিয়ে নিবো। সো বি রেডি মিস মায়া।”
কথাটা বলে আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো। আর মায়া পিছন থেকে চোখ ছোট ছোট করে আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
চলবে