#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ6
ভার্সিটির ক্যান্টিনের এক কর্নারের চেয়ারে বসে আছে মায়া আর দিশা। মায়ার এক হাতের কুনুইতে,পায়ের গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ করা। পায়ে ব্যাথা নিয়ে ‘ও’ কোনো রকম খোড়াতে খোড়াতে ভার্সিটিতে এসেছে। দিশা অনেক বার মায়াকে বলেছিলো যাতে কয়েকটা দিন অন্তত ‘ও’ বাসায় রেস্ট নিয়ে সুস্থ হয়ে ভার্সিটিতে আসে। কিন্তু ‘ও’ দিশার কোনো কথাই শোনেনি। সকাল হতেই রেডি হয়ে সোজা এখানে চলে এসেছে।
দিশার মাঝে মাঝে মায়ার উপর ভিষন রাগ হয়। এই মেয়েটা কারো কোনো কথাই শোনে না। হুটহাট মাথায় যা আসে তাই করে ফেলে।তারপর নিজেই পরে বিপদে পড়ে যায়। গতকাল দিশা গিয়ে মেঘকে আহানের অফিস থেকে নিয়ে এসেছে। কালকে যখন দিশা মায়াকে পুরো ভার্সিটিতে হন্নে হয়ে খুজছিলো কিন্তু ওকে কোথাও খুজে পাচ্ছিলো না। তখন ‘ও’ প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছিলো। কিন্তু সেই সময়ে একটা আননন নম্বর থেকে দিশার ফোনে কল আসে। ফোনটা রিসিভ করতেই মায়ার কন্ঠস্বর শুনতে পায়। মায়া দিশাকে বেশি কিছু না বলে শুধু আহানের অফিসের এড্রেসটা দিয়ে দেয়। আর বলে যাতে দিশা এসে ওকে ওখান থেকে নিয়ে যায়। মায়ার কথা মতো দিশাও দেড়ি না করে দ্রুত আহানের অফিসে চলে যায়।
__________
দিশা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বললো
“তোর আজকে ভার্সিটিতে আসার কি খুব প্রয়োজন ছিলো? একদিন ক্লাস না করলে নিশ্চয়ই মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে যেতো না?”
দিশার কথা শুনে মায়া গম্ভীর কন্ঠে বললো
“আমরা এখানে একটা কাজের জন্যে এসেছি দিশা। কাজটা যতো তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে আমারা ততো তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবো। তাই শুধু শুধু বাসায় বসে থেকে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। বাবাই যদি ভুলেও একবার জানতে পারে আমরা বাড়িতে নেই। তাহলে একমাএ আল্লাহ জানে বাবাই কি করবে!”
মায়ার কথা শেষ হতেই দিশার চোখে মুখে স্পস্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো। দিশাকে ভয় পেতে দেখে মায়া ওকে আশস্ত করে বললো
“ভয় পাচ্ছিস কেনো দিশু?আমি তো আছি। চিন্তা করিস না,বাবাই ফেরার আগেই আমরা ফিরে যাবো। আর সাথে করে বাবাইয়ের গিফটাও নিয়ে যাবো।”
কথাটা বলে মায়া মলিন হাসলো। দিশা কিছুক্ষন মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার এই মিথ্যে হাসির পিছনে লুকিয়ে রাখা কষ্ট গুলো ‘ও’ অনুভব করতে লাগলো।
মায়া আর দিশা কফি খেতে খেতে আরো কিছুক্ষন টুকিটাকি কথা বললো। কফি খাওয়া শেষে বসা থেকে উঠে ওরা চলে যেতে নিবে ঠিক তখনই কিছু ছেলে মেয়েরা এসে মায়া আর দিশাকে ঘিড়ে ধরলো। এটা এই ভার্সিটির বখাটে ছেলে-মেয়েদের একটা গ্যাং। এদের কাজই হলো ভার্সিটির জুনিয়র ছেলে মেয়েদেরকে বিরক্ত করা। বড়লোক বাবার বিগরে যাওয়া ছেলে-মেয়ে সবগুলো।
এদের এখানে দেখে মায়া আর দিশা খানিকটা ঘাবড়ে গেলো। তারপরেও ওরা যথা সম্ভব নিজেদের সামলে নিয়ে ছেলে গুলোকে সাইড কাটিয়ে ওরা চলে আসতেই নিচ্ছিলো। ঠিক তখনই হুট করেই একটা ছেলে পিছন থেকে এসে মায়ার ওড়না ধরে টান দিলো। এভাবে ছেলেটা ওড়না ধরে টান দেওয়ায় মায়ার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। ‘ও’ কোনো কিছু না বলে পিছনে ঘুড়ে ছেলেটার গালে কশিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো। চড় মারার শব্দে পুরো ক্যান্টিনে উপস্থিত সবাই স্তব্দ হয়ে গেলো। মায়া অগ্নি দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“ভবিষ্যত এরকম ভুল করার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না। তাহলে নিজেই নিজের মৃত্যু ডেকে আনবেন।”
কথাটা বলে মায়া ছেলেটার হাত থেকে টান দিয়ে নিজের ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিলো। তারপর ঘুড়ে সামনে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই পিছন থেকে ছেলেটা বলে উঠলো
“আরে আমাদের সামনে এতো ভদ্র সেজে লাভ নেই। পুরো ভার্সিটি জেনে গেছে তুমি কেমন টাইপের মেয়ে।”
ছেলেটার কথা শুনে মায়া আর দিশা দুজনেই দাড়িয়ে গেলো। মায়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো
“মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?”
ছেলেটা একপা একপা করে মায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়িয়ে বললো
“মানে আমরা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি তুমি ঠিক কেমন টাইপের মেয়ে। তাই আমাদের সামনে আর ভালো হওয়ার নাটক করতে এসো না। তোমাদের মতো মেয়েদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে। তোমরা লেখাপড়ার নাম করে ভার্সিটিতে আসো বড়লোকের ছেলেদের পটানোর জন্যে। কিন্তু সবার সামনে এমন ভাবে ভদ্র সেজে থাকো যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতেও জানো না।”
ছেলেটার কথা শেষ হতেই দিশা রাগি কন্ঠে বললো
” মুখটা সামলে কথা বলুন। নাহলে আপনাদের এমন অবস্থা করবো আপনাদের মা-বাবাও আপনাদের চিনতে পারবে না। নিজেদের ভালো চান তো ভদ্র ছেলেদের মতো এখান থেকে কেটে পড়ুন।নাহলে আপনাদের মুখ বন্ধ করতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”
দিশার কথা শেষ হতেই মায়া দিশার হাত চেপে ধরে ওকে শান্ত হতে বললো। ছেলেটা দিশার দিকে তাকিয়ে হো হো করে দিয়ে বললো
“তুই এইটুকু একটা পুচকে মেয়ে হয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছিস? তুই জানিস আমি চাইলে এখনি তোদের দুজনকে এখানে জ্যান্ত মাটির নিচে পুতে ফেলতে পারি? তবে আমি সেটা করবো না। কারন তোর ফ্রেন্ডকে আমার ভিষন ভালো লেগেছে। বলতে পারিস আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি।”
দিশা দাতে দাত চেপে রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মায়া এখনো দিশার হাত চেপে ধরে আছে। ওর এই মুহূর্তে ভিষন ভয় লাগছে। তবে ছেলে গুলোকে না,দিশাকে। কারন ‘ও’ বেশ ভালো করেই জানে দিশা যদি রেগে যায় তাহলে ছেলে গুলোর কপালে দুঃখ আছে।আর এর সাথে সাথে ওদের পরিচয়টাও সবার সামনে এসে পড়বে। যেটা মায়া একদমই চায় না।তাই ‘ও’ নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে একদম শান্ত কন্ঠে ছেলেটাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দেখুন ভাইয়া আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে। অনেক কষ্টে এতোদূরে লেখাপড়া করার জন্যে এসেছি। প্লিজ আপানারা আমাকে কোনো জামেলায় জড়াবেন না। আমাদের যেতে দিন প্লিজ।”
কথাটা বলে মায়া দিশাকে নিয়ে চলে আসতে নিবে তখনই ছেলেটা এসে মায়ার হাত ধরে ফেললো।মায়া এক ঝটকায় ছেলেটার হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর নিজেও ছেলেটার থেকে চিটকে খানিকটা দূরে চলে গিয়ে রাগি কন্ঠে বললো
“দেখুন আমার থেকে দূরে থাকুন বলছি।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
ছেলেটা শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বললো
আরে এভাবে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো কেনো? আমি কি স্যারের থেকে খারাপ দেখতে? স্যারকে এতো সুন্দর করে অ্যাসাইনমেন্ট পেপারের মধ্যে লাভ লেটার লিখতে পারো আর আমাকে একটু হাতটা ধরতে দিতে পারো না? আর তাছাড়া আমার তোমার থেকে বেশি কিছু চাই না। শুধুমাত্র এক সপ্তাহের জন্যে আমার গার্লফ্রেন্ড প্লাস বেড পার্টনার হয়ে যাও। কথা দিচ্ছি তুমি তোমার কাজের জন্যে সঠিক মূল্য পেয়ে যাবে।”
কথাটা বলে ছেলেটা আবার গিয়ে মায়ার হাত ধরতে যাবে তখনই কোথা থেকে মিহির এসে মায়ার সামনে দাড়িয়ে ছেলেটাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তাই নাকি? তো কতো টাকা আছে তোর? এই মেয়েটাকে কতো টাকা দিতে পারবি তুই? আমাকেও একটু বল,আমিও একটু শুনি।”
মিহিরের কথা শেষ হতেই ক্যান্টিনের দরজা দিয়ে আহির একটা সফট ড্রিংকসের বোতল হাতে নিয়ে খেতে খেতে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো
“মিহির তুই একা কেনো শুনবি।আমিও শুনতে চাই। আমরা সবাই আজকে ওর টাকার গল্প শুনবো। বাচ্চারা ফলো মি।”
কথাটা বলে আহির গিয়ে একটা টেবিলের উপর উঠে আসন দিয়ে বসে পড়লো। মায়া মাথা নিচু করে ঠোট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মিহির এক পলক মায়ার দিকে তাকিয়ে ছেলেটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। ছেলেটা মিহিরের দিকে তাকিয়ে দাত কটমট করে বললো
“দেখ মিহির তোরা এসবের মধ্যে নাক গলাতে আসবি না। এতোদিন তোরা এই মেয়েটাকে র্যাগিং করেছিস আমরা কিছুই বলিনি। এখন আমাদের যা ইচ্ছা আমরা এই মেয়েটার সাথে সেটাই করবো।খবরদার তোরাও এরমধ্যে নাক গলাতে আসবি না।”
মিহির শক্ত কন্ঠে বললো
“নাক তো গলাবোই। আমাদের চোখের সামনে তোরা একটা মেয়ের সাথে নোংরামি করবি।আর আমরা সেটা চুপচাপ দেখবো?সেটা তো কখনোই সম্ভব না। আর বাকি রইলো র্যাগিংয়ের কথা। আমরা সব সময় শুধুমাত্র জুনিয়রদের হালকা পাতলা জার্গ দিয়েছি। কিন্তু কখনো কোনো মেয়েকে বাজে কোনো প্রস্তাব দেইনি।আর ভবিষ্যতেও দিবো না।”
ছেলেটা বললো
“তোরা কোনো মেয়েকে বাজে প্রস্তাব দিস না, তাই বলে যে আমরাও দিতে পারবো না এমন তো কোনো কথা নেই তাইনা? তোদের যেটা ভালো লাগে তোরা সেটাই করিস। আর আমাদের যেটা ভালো লাগবে আমরাও সেটাই করবো।”
ছেলেটার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আহির ওর হাতে থাকা সফট ড্রিংকসের বোতলটা ছেলেটার মাথায় ছুড়ে মারলো। তারপর দ্রুত টেবিল থেকে নেমে ছেলেটার সামনে এসে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর নাক বরাবর পরপর সাত আটটা ঘুসি মারলো। ছেলেটাকে মার খেতে দেখে ওর বাকি বন্ধুরা দৌড়ে সবাই পালিয়ে গেলো। ছেলেটা কোনো রকম আহিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক প্রকার হামাগুড়ি দিতে দিতে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। আহির রাগে ফোশফোশ করতে করতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে ঝাড়ি মেরে বললো
“হিন্দিতে প্রচলিত একটা কথা আছে জানিস? লাতো’কা ভুত বাতো’ছে নেহি মানতি। এদের অবস্থাও তেমন। ভালো ভাবে কথা বললে কোনো কথা এদের মগজের মধ্যে জিবনেও ঢুকবে না।”
আহিরের কথা শুনে মিহির হেসে দিলো। কিন্তু ওর সেই হাসি বেশিক্ষন টিকলো না। ঘাড় ঘুড়িয়ে মায়ার দিকে তাকাতেই ওর কলিজাটা মোচর দিয়ে উঠলো। মায়া মাথা নিচু করে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। কান্নার মাঝে মাঝে বারবার হিচকি দিচ্ছে। মিহিরের বুকটা কেমন ভাড় হয়ে আসছে। এই মেয়েটাকে কাদতে দেখলেই কেনো যেনো ওর ভিষন কষ্ট হয়। একটা অচেনা মেয়েকে কাদতে দেখে ওর কেনো এরকম অদ্ভুত ফিলিংস হয় সেটা ‘ও’ নিজেও জানে না।
মিহির লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে মায়ার সামনে গিয়ে পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
“উই আর সরি। আমরা জানি, সেদিন আমরা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো সামান্য একটা মজার জন্যে তোমাকে যে এইভাবে সমস্যায় পড়তে হবে ভাবতেও পারিনি। আমরা তো যাষ্ট একটু মজা করেছিলাম।দ্যাটস ইট!”
মায়া তাছিল্য হেসে বললো
“মানুষের চরিএ নিয়ে তামাশা করাটাকে আপনাদের মজা মনে হয় তাইনা? অবশ্য হবেই না বা কেনো আপনাদের টাকা আছে। আপনারা যখন তখন যা ইচ্ছে করতে পারেন। চাইলে একটা মেয়ের মান সম্মান নিয়েও মজা করতে পারেন।এসব তো আপানাদের কাছে কিছুই না।”
কথাটা বলে মায়া হনহন করে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। ওর পিছনে পিছনে দিশাও বের হয়ে গেলো। মিহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতে থাকা টিস্যুটা আবারও পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে আহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“সবাইকে জানিয়ে দে,যাতে এই বিষয়টা নিয়ে মায়াকে কেউ কিচ্ছু না বলে।এই বিষয়টা নিয়ে যদি কারো মুখ একটা টু শব্দও বের হয়েছে তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
______________________
বিকাল 04:00
ছাদের রেলিংয়ের উপর বসে বাইরের দিকে পা ঝুলিয়ে রেখেছে মায়া। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের রশ্নি এসে মায়ার গায়ে পড়ছে। মৃদ্যু বাতাশে মাথার লম্বা ঘন চুলগুলো হালকা উড়ছে। মায়া শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। চারপাশে কি হচ্ছে সেটা জানার ওর বিন্দুমাত্রও আগ্রহ নেই। ‘ও’ এখন নিজের জটিল জিবনের হিসেব মিলাতে ব্যাস্ত। স্মৃতির পাতায় ডুব দিয়ে খুজে চলেছে নিজের ছোট বেলার আনন্দের কিছু মুহূর্ত। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও ভালো কোনো মুহূর্ত খুজে পেলো না। কিভাবেই বা খুজে পাবে? ওর ছোট বেলাটা তো পুরোটাই তিক্ত স্মৃতিতে ভড়ানো। সেই স্মৃতিতে এতোটাই তিক্ততা আছে যে আজও সেগুলো মনে পড়লে মনটা বিষাদে ভরে উঠে।
আচৎমকা কেউ এসে মায়ার হাত ধরে টান দিয়ে ওকে ভিতরে নিয়ে আসায় ওর ভাবনায় ছেদ ঘটে। হঠাৎ করে এমনটা হওয়ায় মায়া খানিকটা হকচকিয়ে উঠলো। ‘ও’ নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ ওর গালে জোড়ে একটা চড় বসিয়ে দেয়। চড়টা খেয়ে মায়ার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসে। ‘ও’ গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন থম মেরে দাড়িয়ে থেকে সামনে তাকায়। দেখে শক্ত মুখ করে ওর সামনে আহান দাড়িয়ে আছে। মায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান চিল্লিয়ে বলে
“কোন সাহসে তুমি ওটার উপরে উঠে বসেছিলে? আরেকটু অন্য মনষ্ক হলেই তো তুমি ওখান থেকে পড়ে যেতে। তখন কি হতো?”
আহানের কথা শেষ হতেই মায়া কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“যা হবার হতো তাই বলে আপনি আমাকে চড় মারবেন?”
আহান দাতে দাত চেপে বললো
“শুধু চড়?আমার তো ইচ্ছে করছে এক্ষুনি গলা টিপে তোমাকে মেরে ফেলতে। আহমোক মেয়ে একটা।”
আহানের কথা শেষ হতেই মায়া ফুপিয়ে কেদে উঠলো। এমনিতেই ওর মনটা একদম ভালো ছিলো না। তার উপরে আহান ওকে এতো জোড়ে চড় মেরেছে যে ওর মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করছে। মায়াকে কাদতে দেখে আহান ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে কান্না অফ করো। একদম ফ্যাচফ্যাচ করে কাদবে না।”
আহানের ধমক খেয়ে মায়া আরো জোড়ে কেদে দিলো। আহান আবারও ধমক দিয়ে বললো
“কান্না অফ করতে বলেছি কথাটা কি কানে ঢুকছে না? বুঝতে পেরেছি কানের নিচে আরেকটা না পড়া অবদি কান্না বন্ধ হবে না।”
মায়া হেচকি দিতে দিতে বললো
“আপনার সাহস তো কম না আপনি আবার আমাকে চড় মারতে চাইছেন? আপনি জানেন, আমাকে কখনো কেউ মারে না।”
আহান মায়ার দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বললো
“কেউ তোমাকে না মারলেও আমি তোমাকে মারবো। যদি কখনো দেখেছি কোনো রকম উল্টাপাল্টা কাজ করেছো।তাহলে মেরে তোমাকে তক্তা বানিয়ে দিবো। বুঝেছো? তাই এখন থেকে একটু সাবধানে চলাফেরা করবে। নাহলে তোমার কপালে শনি,রবি,সোম,মঙ্গল সবকিছু আছে।”
মায়া রাগি দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেদে যাচ্ছে। আহান আবারও একটা ধমক দিকে বললো
“এখনো এখানে পুতুলের মতো দাড়িয়ে আছো কেনো? এক্ষুনি বাসায় যাও।”
মায়া চোখের পানি মুছে হনহন করে হাটা দিয়ে লিফটের সামনে এসে দাড়ালো। আহান পিছন থেকে খানিকটা উচ্চস্বরে মায়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“পরের বার থেকে যখন ছাদে আসবে তখন চুল গুলো সুন্দর করে বেধে তারপর আসবে। নাহলে তোমার কোমর অবদি পরা লম্বা চুল কেটে কাধ অবদি করে দিবো। মাইন্ড ইট!”
আহানের কথা শুনে মায়া পিছনে ফিরে অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকালো। কিন্তু আহান ওর দিকে না তাকিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে রেলিংয়ের উপর ভর দিয়ে সামনে তাকালো। আহানের হঠাৎ এমন আজব ব্যাবহারের কোনো কারন খুজে পাচ্ছে না মায়া। ‘ও’ অবাক হয়ে এখনো আহানের দিকেই তাকিয়ে আছে। আহান সামনের দিকে তাকিয়েই হুট করে বলে উঠলো
“আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে বাসায় গিয়ে পড়তে বসো কাজে দিবে।”
আহান হঠাৎ করে কথাটা বলায় মায়া চমকে উঠে বুকে ফু দিলো। তারপর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো
“পিছনে না তাকিয়েই কিভাবে বুঝলো আমি এখানে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি? আল্লাহ এই ছেলে আবার ভুত টুত না তো।”
কথাটা বলে মায়া আর ওখানে এক মুহূর্তও ওখানে দাড়ালো না। লিফট আসার আগেই সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। আহান আলতো হেসে বললো
“ভিতুর ডিম একটা!”
চলবে,,,,,
বিঃদ্রঃ কয়েকদিন অনেক ব্যাস্ত ছিলাম। তাই গল্পটা লেখার সময় পাইনি।