#এক_কাপ_চা
#পর্ব-৩৯+৪০
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(১৯৫)
তাশদীদের ফোনের স্ক্রিনে রাফির নাম্বার দেখে সাগরিকা চুপ করে বসে রইল।তাশদীদ তার হাত বিছানার সাথে বেধে রেখেছে। বার বার নিষেধ করা স্বত্বেও সাগরিকা যখন রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো তখন তাশদীদ তার হাত বেধেছে।শুধু তাই নয় তাকে হুশিয়ারি দিয়েছে বেশি না বুঝার।
তাহলে তার পা ভেঙ্গে তাকে ঘরে বসিয়ে রেখে দিবে।
পা দিয়ে নিজের কাছে ফোন নিয়ে এসে সাগরিকা কল রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো…. ”
“কী ব্যাপার এভাবে হাপাচ্ছো কেন?”
“ভাইয়া তোমার পাগলা বন্ধু আমাকে বেধে রেখেছে।”
“আমরা পাগলা বন্ধু তোমার স্বামী।তারপর বলো সাগরিকা, ভালোবাসি বলেছে?”
“মনে হচ্ছে না ইহ জন্মে বলবে। সে পারেই শুধু রাগ দেখাতে।”
“তোমাকে নিয়ে বেশি পজেসিভ।আর ভালোবাসি কী বলতেই হবে?”
“কিন্তু আমার পিচ্চিপাচ্চা ছোট্ট মনের তো শুনতে ইচ্ছে করে।”
“হাহাহা, চিন্তা করো না। একদিন বলবে। এবার বলো কী বলে ডাকবো তোমায়? ভাবী না আপু?”
“নাম ধরেই ডেকো।কিন্তু আজ তোমার ফ্রেন্ড হাবিজাবি খেয়েছে না কী?কেমন উদ্ভট আচরণ করছে।”
“আমিও তাই ভাবছি।আচ্ছা শুনো মনে হচ্ছে না তাশদীদ কিছু বলেছে বাড়িতে কিন্তু কথাটা তোমার জানা দরকার।”
রাফির থেকে বিস্তারিত শুনে সাগরিকা মৃদু হেসে বলল,
“তবে আমি কী পাচ্ছি?”
“বন্ধুকে দিয়ে দিলাম আর কি চাও? আচ্ছা হানিমুন ট্রিপ আমি স্পনসর করবো।”
” শান্তিই নাই আবার তুমি হানি খুঁজো।ওটা তোমরা দুই বন্ধু মিলেই যাও।”
ওয়াশরুম থেকে তাশদীদ সাগরিকার কন্ঠ শুনে দ্রুত পায়ে ছুটে এলো।রুমে এসে দেখলো সে কথা বলছে ফোনে। হাত থেকে ফোন নিয়েই দেখলো রাফির নাম্বার। তার মেজাজ মুহুর্তে খারাপ হয়ে গেলো।সে সাগরিকার দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই এত অভিনয় কেন করিস?”
“কারণ আমি অভিনেত্রী হতে চাই।বানাবেন?”
“এক চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।তোর সাহস কী করে হয় রাফির সাথে কথা বলার?”
“এতে সাহসের কী আছে?”
“এতই যখন প্রেম উৎরিয়ে উঠছে তা বিয়ের আগে মনে ছিল না?”
সাগরিকার এবার মনে হলো তাশদীদ কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্ত। অবশ্যই সাগরিকার বিষয়। কারণ তাছাড়া অন্য কোনো বিষয় তাকে এতটা অস্থির করে তোলে না।শুধু তার বেলাতেই এসে বেচারা এমনিতেই পাগলামো করে।
“আমি কিছু করেছি?”
“না কি করবি তুই?”
“তবে রাগ দেখাচ্ছেন কেন?”
“বিয়ের আগে দুই বছর প্রেম করার আগে মনে ছিল না?প্রেম করবি অন্য জনের সাথে আবার বিয়ে অন্যজন কে?”
“আমি কার সাথে প্রেম করলাম?”
“অভিনয় বাদ দে।”
“আপনি ফাজলামো বাদ দিয়ে বলুন।”
“রাফি আমায় সবটা বলেছে, তুই দুই বছর যাবত কমিটেড। শুধু তাই নয় আজ রাফি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।”
“আপনার মাথা খারাপ।আপনি পাগল না কি?আমি আপনার স্ত্রী।ভুলে গেছেন?”
“আমার স্ত্রী অথচ তার ছবি থাকে অন্যের মোবাইলে।”
“কোন ছবি?”
তাশদীদ নিজের ফোন তার দিকে ছুড়ে মারলো।সাগরিকা ফোন হাতে নিয়ে ছবিগুলো দেখে বেশ ভড়কে গিয়েছে। মাথা নিচু করে সে তাশদীদ কে বলল,
“আই এম সরি। আমাকে একটা সুযোগ দিবেন?মাত্র পাঁচ মিনিট। এরপর যদি আমাকে খারাপ মনে হয় আপনার তো আর কখনো মুখ দেখাবো না আপনাকে।!
(১৯৬)
নিজের রুমে মৃদু আওয়াজে গান শুনছে তুলি।শুধু গান শুনছে এমন নয়। গানের তালে তালে দুলছে তার পুরো শরীর। সাগরিকা বাইরে থেকে এসব দেখে দৌড়ে তুলির রুমে প্রবেশ করে।বিনাবাক্য ব্যয় করে সে সরাসরি তুলির বিনুনিতে ধরে টান দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হচকচিয়ে উঠেছে তুলি।চুল ছাড়ার অনুরোধ করলেও সাগরিকা তার চুল ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
রাশেদের রুমের কাছাকাছি আসতেই রাশেদ দেখতে পায় যে সাগরিকা তুলির চুল ধরে তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসছে।নিজ রুম থেকে দৌড়ে গিয়ে রাশেদ দুজন কে আলাদা করে। ওরা সচরাচর ঝগড়া করে না।এমন চুলোচুলির ঝগড়া তো আরো নয়। সাগরিকা চঞ্চল হলেও এমন নয়। দুজন কে ছাড়িয়ে দিয়ে রাশেদ তাদের হাত ধরে এনে রুমের ভিতর বসালো।এরপর জিজ্ঞেস করলো,
” কী হয়েছে তোমদের?তোমরা কি এখনো ছোটো আছো?আর সাগরিকা এসব কেমন ব্যবহার।”
“মনে আছে বছর দুই আগে তুমি আমাদের দুজনকে কক্সবাজার থেকে ফতুয়া কিনে এনে দিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ। তো কি হয়েছে? তুলি তোমার টা নষ্ট করেছে?মা তুমি তো ওসব পরো না। প্রয়োজনে আবার কিনে এনে দিবো।তবুও এভাবে ঝগড়া করো না।”
“আরে না। শোনো তুমি ওরে জিজ্ঞেস করো যে সেই সব পোশাক পরা ছবি রাফি ভাইয়ার ফোনে গেলো কী করে?”
“রাফি কে? তাশদীদের বন্ধু?”
“এই বেয়াদব মহিলা তার সাথে দু বছর যাবত প্রেম করে। সেই কথাটা আজ আমি জেনেছি।প্রেম করিস তুই ভালো কথা, এক বিছানায় থেকেও আমি জানি না অথচ আমার ছবি তুই তাকে কেন পাঠিয়েছিস?”
রাশেদ কিছুটা গম্ভীরমুখে তুলিকে প্রশ্ন করলো,
“সাগরিকা যা বলছে সেসব সত্যি?”
তুলি মাথা নিচু করে চুপচাপ ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।ভয়ে না কী ব্যথায় সেটা বুঝা গেল না তাকে চুপ থাকতে দেখে সাগরিকা বলল,
“ও কী বলবে?আর এদিকে বন্ধুর ফোনে সেই ছবি দেখে তোমার আদরের ভাতিজা আমার উপর ক্ষেপেছে।রাফি ভাইয়া বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে কিন্তু সেও কথা খুলে বলেনি।”
“তুলি কী বিয়ের জন্য রাজি?”
“ওর বয়স কতো? এই বয়সে দুই বছর ধরে প্রেম করছে। আর রাজি হবে না? রাফি ভাই ওদের বিয়ের বেনারসি কিনে নিয়ে এসেছে ইন্ডিয়া থেকে। ও রাজি না থাকলেই হয়?”
“তবে রাফিকে ওর বাবা মা নিয়ে আগামীকাল আসতে বলো।আমি তুলির মা-বাবা এবং বাকী সবাইকে বলছি।”
“আমি পারবো না।যদি করতে বলো তবে তোমার পাগলা তাশদীদকে আগে পাবনায় রেখে আসো।কোনো কিছু বুঝবে না, শুনবে না আগেই আমার উপর রাগ দেখাবে।আমার আর ভালো লাগে না।কবে যেন দেশ ছেড়ে চলে যাবো।”
“তোর দেশ ছেড়ে যেতে হবে না।আর আমাকে যদি পাবনা যেতেই হয় তোকে সাথে করেই নিয়ে যাবো।”
পিছন থেকে তাশদীদের কন্ঠ শুনে সাগরিকা ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে।
রাশেদের পিছনে নিজেকে আড়াল করে নিতে নিতে বলল,
“হ্যাভ এ রিলাক্স, সি ইউ নট ফর মাইন্ড।”
(১৯৭)
সকাল বেলা সীমাকে রান্না ঘরে দেখেই মেজাজ গরম হয়ে গেল সাগরিকার। নিজের রাগ কে দমিয়ে রেখে সে তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু সীমা তার হাত ধরে বলল,
“রাগ করেছিস মানছি।কিন্তু পরিস্থিতি বুঝবি তো?”
“আপনি আমাকে বলছেন?আমি কী আপনাকে চিনি?”
“সাগরিকা স্টপ দ্যাট। এসবের মানে কী?রাগ করেছিস কর,একশো বার করবি তাই বলে কথা বলবি না? দেখেও চিনবি না? রুমুর সাথে যা হয়েছিল আমাদের সাথেও হবে এমন তো নয়।”
“আমার সাথে কোনো সম্পর্ক না দেখালেই খুশি হবো।”
কথা শেষ করে সাগরিকা হাত ছাড়িয়ে চলে গেল।ছুটির দিনে সকালের নাস্তার পর বসেছিল তুলি এবং রাফির বিষয়ে কথা হচ্ছিলো।এমন সময় তাশদীদের মা তার বিয়ের গয়না এবং বেনারসি নিয়ে এলেন।এই বেনারসিটা বরাবরই পছন্দ সাগরিকার পছন্দ। ছোটো বেলা থেকেই সে বলতো তার বিয়েতে এই শাড়িই পরবে সে। কিন্তু তাদের জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। তাই বিয়েতে বেনারসি কেন সাধারণ শাড়িও তার পরা হয়নি।
সীমাকে ডেকে এনে তাশদীদের মা সকলের সামনে সেই শাড়ি এবং গয়না গুলো তার হাতে দিয়ে দিলো।শাড়ি,গয়না দেওয়ার সময় বলল,
“বিয়ে করে যখন চলেই এসেছো তখন এসব তোমার।আমার যা আছে ইচ্ছে ছিল আমার ছেলের বৌকে দিবো।যত্ন করে রেখেছিলাম।আজ তোমাকে দিয়ে দিলাম।এবার তুমি যা ইচ্ছা করার করতে পারো।”
তাশদীদের মায়ের এমন কথায় সাগরিকার থেকেও সব থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছিল তাশদীদ এবং তার বাবা।একটা কথার মাধ্যমেই যে ভদ্রমহিলা বুঝিয়ে দিয়েছিল তাশদীদ তার ছেলে নয়, সতীনের ছেলে।আর এত বছরের এত আদর ভালোবাসা সব ছিল লোক দেখানো ঠুনকো অভিনয়।
—চলবে,,,
#এক_কাপ_চা
#পর্বঃ৪০
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(১৯৮)
খুব মন খারাপ হলে যেমন গলায় কান্নাগুলো আটকে আসে ঠিক তেমনি খুব খুশি হলেও দম বন্ধ হয়ে আসে। সাগরিকার আজ খুশিতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। রাশেদ, ইখুম তাদের সন্তান নিয়ে কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরেছে। ইখুমের হাসি-খুশি চেহারা দেখে রাশেদের অনুতপ্ততা আরো বেড়ে গেল কয়েক গুণ।যেখানে সে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি সেখানে অন্যের থেকেও ক্ষমা আশা করাটা ভুল।
ইখুম ছেলেকে কোলে তুলে নিতেই কাঁদতে লাগলো বাচ্চাটা। সে ঠিক বুঝতে পারছে না তার কী কী করতে হবে। প্রথম প্রথম মা হয়েছে, তাছাড়া ডাক্তার বলে দিয়েছে ছেলেকে সাবধানে রাখতে৷ প্রিম্যাচিউর বেবীদের অনেক সমস্যা হতে পারে।
স্নেহা,সাগরিকা,তুলি তিন জনে বাচ্চাটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।ছোট্ট স্নেহার সাথে ঘটে যাওয়া বাজে ঘটনা পর আজ সে নিজ থেকে কথা বলছে, হাসছে।ভয়ে ভয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বাচ্চাটার মাথায়।এক আংগুল দিয়ে হাতে স্পর্শ করতেই বাচ্চাটার কান্না থেমে গেল।ইখুমপাশে স্নেহাকে বসার জন্য ইশারা দিয়ে বলল,
“কোলে নিবে?”
তার কথায় দুপাশে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় স্নেহা। হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিতে চাইলো সে। ইখুম চাইলে না করে দিতে পারতো, যথেষ্ট কারণ আছে তার কাছে কিন্তু সে না করলো না।স্নেহাকে বিছানায় বসিয়ে কোলে দিলো।সাগরিকা ইখুমের কাধে হাত রেখে বলল,
“আমরা কেউ পারফেক্ট নই তাই না রাঙামা?”
“কেন?”
“তোমার জায়গায় আমি হলে কখনো দিতাম না।অন্তত ডাক্তারের কথা মেনে।”
“ডাক্তার তো কারোর কোলে দিতে না করেনি।”
“এতটা সহ্য শক্তি আছে বলেই হয়তো তুমি মা।তবে আদৌও কী বড় মা তাশদীদ ভাইয়ের মা হতে পেরেছিল?”
“কেন?”
“জানিনা।”
সাগরিকার বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।তুলির থেকে রাশেদ এবং ইখুম সবটা শুনলো।ইখুমের খুব আফসোস লাগে এই পরিবারের মানুষের জন্য।কেন কেউ কোনো কিছু স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না?
বিয়ের শাড়ির জন্য সাগরিকার মন খারাপ হয়েছিল, বিকেল হতে না হতেই সে তিনটে বিয়ের শাড়ি উপহার হিসেবে পেলো।সাগরিকার বাবা মেয়ের জন্য আগে থেকেই শাড়ি কিনে রেখেছিলেন কিন্তু পরিস্থিতির কারণে দেওয়া হয়নি।আজ সকালে তিনি বাসায় ছিলেন না।ফোনে যখন সাগরিকার মা কেঁদে কেঁদে সকালের ঘটনা বলছিল তখন তিনি বললেন ক্লোজেটে রাখা আছে তার মেয়ের জন্য বেনারসি।বিকেল বেলা এসে তিনি নিজ হাতে মেয়েকে বেনারসি দিলেন,সাগরিকার মা নিজের সব গয়না মেয়েকে পরিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমার যা আছে সব তোমার।তুমি কেন পুরাতন শাড়ির জন্য মন খারাপ করো?”
সাগরিকা কিছু না বলেই তার বাবা মাকে জড়িয়ে দীর্ঘ সময় বসে রইল।এক বাড়িতে থাকার কারণে বুঝতেই পারেনি সে। অথচ আজ যখন তার মা তাকে বেনারসি এবং গয়না নিজ হাতে পরিয়ে দিচ্ছিলো তখন মনে হলো সে পর হয়ে গেছে।এখন সে তাদের মেয়ে সাথে অন্যের স্ত্রী।লাল বেনারসি এবং গয়না পরিয়ে সাগরিকাকে তার মা নিয়ে এলো বাইরের ঘরে।সেখানে বসে ছিল বাড়ির সকলে।মৌসুমির মা সাগরিকাকে দেখে বলল,
“তোকে একদম বড় ভাবীর মত লাগছে। তুই জানিস?তাশদীদের মায়ের অনেকটাই তোর মধ্যে দেখা যায়।তার অনেক কিছুই তোর সাথে মিলে।যেটা তাজবীদের মায়ের সাথে মিলে না।”
ভদ্রমহিলার কথার খোটাটা বাড়ির বড় বৌ ঠিক ধরে পেরেছিল কিন্তু কোনো জবাব দিলো না সে। তাশদীদের বাবা ইতিমধ্যে সেখান থেকে উঠে চলে গিয়েছিল। ফিরে এসে সাগরিকার হাতে তুলে দিলো একটা বাক্স। তার পাশে বসিয়ে বলল বাক্স খুলতে।
সাগরিকা বাক্স খুলে দেখতে পেল সেখানে একটা শাড়ি রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো ডিজাইন কিন্তু শাড়িটা নতুন।নিশ্চয়ই খুব যত্নে রাখা ছিল।সাথে দুটো হাতের চুড়ি, একটা সরু চেইন এবং নাকফুল।
ভদ্রলোক সেগুলো সাগরিকার হাতে তুলে দিয়ে বললেন,
“এগুলো তোমার শাশুড়ি।তোমার নিজ শাশুড়ির। আমার প্রথম জীবনের ছয় মাসের সঞ্চয় করে বানিয়েছিলাম। তাশদীদের মায়ের জন্য। এসব গয়না বিয়ের দিন তোমার দাদী পরিয়ে দিয়েছিল মৃত্যু পর তোমার দাদীই খুলেছিল।আজ থেকে তোমাকে দিলাম।”
সাগরিকার আনন্দে দুই চোখ চকচক করে উঠলো।তাজবীদের মায়ের মুখের দিকে ভদ্রলোক হাসলেন।আজ অবধি এসব তাকেও ধরতে দেননি তিনি।হুট করেই কী সে তাশদীদের উপর বিরক্ত?মোটেই নয়। কারণ আর কেউ না জানুক একই ঘরে, একই বিছানায় থাকা এই মানুষটা জানে যে মা মরা ছেলেকে তার দ্বিতীয় পক্ষ কখনো মেনে নিতে পারেনি।
(১৯৯)
নিজের ঘরে ফিরে এসে সাগরিকার আরো একটি শাড়ি খুঁজে পেলো নিজের ক্লোজেটে। এত গরমে শাড়ি গয়না পরে থাকতে তার অস্বস্তি লাগছিল।কিন্তু সে ভুলেই গিয়েছিল যে তাশদীদের মন ভালো করে দেওয়ার জন্য হলেও শাড়িটা আর কিছু সময় এভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো সে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কয়েকবার দেখে নিলো সে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হলেও তাশদীদের বাসায় ফিরেনি।অথচ সাগরিকা চোখে অপেক্ষায় ঘুম নেমে এলো।
তাশদীদ বাসায় ফিরে প্রতিদিনের মতোন আজ নিচে ড্রয়িং রুমে বসেনি।পিছন থেকে তুলি ডাকছিল,তার ডাকেও সাড়া দেয়নি সে। ক্লান্ত শরীরে নিজ রুমে ফিরেছে সে। পুরো রুম অন্ধকার। বাইরে থেকে হালকা আলো এসে পড়েছিল তার বিছানায়। সেখানে তাকিয়ে দেখতে পেল,
সাগরিকা ঘুমিয়ে আছে। তার গায়ে জড়ানো লাল বেনারসি। চুলগুলো এলোমেলো। কিছু চুল ছড়িয়ে আছে তার মুখ জুড়ে। কপালের টায়রাটা এক পাশে হয়ে আছে। তাশদীদের মন খারাপ, ক্লান্তি সব উবে গেল মুহুর্তেই।
সাগরিকাকে না ডেকে সে ফ্রেশ হয়ে এলো।ফিরে এসে সাগরিকার পাশে বসে তার দিকে তাকিয়ে ছিল সে।কপালের চুলগুলো ঠিক করে দিতেই সাগরিকার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
উঠে বসার চেষ্টা করছিল সে কিন্তু তাকে বাধা দিয়ে তাশদীদ বলল,
আমি আজ ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত মিটিয়ে দিবি আমার তৃষ্ণা।
তোর তৃষ্ণা?
আমাকে একটু শান্তি দিলে হয়না? একটা লম্বা সুখের দীর্ঘশ্বাসের অনেক প্রয়োজন আমার।”
(২০০)
পরদিন সকালবেলা তাশদীদের পাশে নিজেকে এলোমেলো অবস্থায় পেলো সাগরিকা।চুলগুলো।হাত খোপা করে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।গত রাতে বৃষ্টি হয়েছে।বৃষ্টিতে ভিজেছে সাগরিকা নিজেও। আজকের সকালটা একটু বেশিই মিষ্টি লাগছিল তার।
ধীর পায়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো সে। বাড়ির সবাইকে সকালের চা নাস্তা তৈরী করে দিলো।ছুটির দিনে আজ বাড়ির ছেলেরা বেশ বেলা করে ঘুমায়।
বাড়ির মেয়েরা ডায়নিং রুমে বসে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নিজ মায়ের জন্য আফসোস করছিল নীলুফার বেগম।নিজের সংসার দিয়েও সে শান্তি পায়নি সে। কথায় কথায় আজ তাশদীদের মায়ের কথা তুললেন তিনি।বললেন,
“তাশদীদের মা একা হাতে সংসার সামলেছে। সব ভাইয়েরা তার হাতেই মানুষ।অথচ তার জীবনটা কত ক্ষণস্থায়ী।”
তার কথায় তাজবীদের মা বলল,
“এ জন্যই আমি সাগরিকার সাথে তাশদীদের বিয়েটা মানা করছিলাম।”
এই কথাতে সাগরিকার মা বলল,
“এতে আমার মেয়ে কেন আসছে?”
“কারণ তুই কী জানিস?এক গুণকে তার হাত দেখে বলছিল সে বেশিদিন বাঁচবে না।বছর খানেকের মধ্যে মারা যাবে সে।তাই হয়েছে।”
“তো?”
“গুণকের কথা সত্যি হইছিল।শুধু তাই নয়, কায়সার ভাইয়ের কথাও বলছিল।তার হাত দেইখা সে বলছিল যে সে আগুনে পুইড়া মরবো।মরে নাই?”
নীলুফার বেগম সম্মতি জানালেন।কিন্তু সামিনা প্রতিবাদ করে বলল,
“এসব কুসংস্কার মাত্র। স্নেহার বাবার মৃত্যুতে কারোর হাত ছিল না ভাবী।আমার মৃত স্বামীকে ইস্যু বানিয়ে সাগরিকাকে কেন কথা শোনাচ্ছো।”
“কারণ সেই গুণকেই বলছে সাতাশ বছর বয়সে তাশদীদ বড় একটা আঘাত পাবে।আর তাশদীদের সাতাশ বছর চলছে।”
পিছন থেকে সাগরিকা কথাগুলো শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।গত রাতের স্বপ্নটা যেন এখন স্পষ্ট হচ্ছিলো।স্বপ্নে দেখা
সাদা শাড়ি পরিহিতা মেয়েটা সে নিজেই ছিল।
চায়ের ট্রে রেখে সে দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল নিজের ঘরে যাওয়ার সময়।কিন্তু মাঝে সীমার সাথে ধাক্কা লেগে গেল।হাত বাড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরতে পারলো না সে। তার চোখের সামনেই গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিলো সীমা।
চলবে,,,