এক কাপ চা পর্ব ৪১+৪২

0
630

#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৪১+৪২

(২০১)

সীমাকে পড়ে যেতে দেখে তাজবিদ দ্রুত দৌড়ে এলো।সে কাছাকাছি ছিল কিন্তু তবুও সীমার আঘাত বেশ লেগেছে।কপাল,কনুইয়ের দিকটায় বেশ ছিলে গেছে। সাগরিকা বোকার মতোন দাঁড়িয়ে রইল সিড়ির উপরে। যা হয়েছে নিছক দূর্ঘটনা মাত্র।কিন্তু তাজবিদের মা ভীষণ ক্ষেপে গেলেন।তিনি এসে সাগরিকাকে ধমকে বললেন,

“এমন ব্যবহার তোকে ছোটো থেকে শেখানো হয়েছে?”

“আমি ইচ্ছে করে দেইনি।”

“তবে বাতাসে পড়ে গেল ও?”

“আমার হাতেই ধাক্কা লেগেছে তাই বলে ইচ্ছে করে দিবো এটার মানে কী?আর তুমি একটা কথ বলো তো বড় মা? ইদানীং আমি কেন তোমার চোখে বিষ হচ্ছি?তুমি স্বাভাবিক কথা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছো না কেন?”

“কোনটা স্বাভাবিক কোন টা না তুই শিখাবি?”

“আমারটা আমি বলবোই।”

“আমি তোর আগে দুনিয়াতে এসেছি,এই বাড়িতেও আগে এসেছি।তুই আমাকে ভুল বলছিস?”

“তা নয় তো কী?তোমাকে কে অধিকার দিয়েছে আমার এবং আমার স্বামীর মাঝে কথা বলার?কিন্তু তুমি তো বলেছো।আমি।তার সাথে যা ইচ্ছা করবো। এটা আমাদের ব্যক্তিগত না?”

“তোর স্বামী আমার ছেলে।”

“কেমন ছেলে? সিজনাল? তাই মনে হচ্ছে। যখন ইচ্ছে আমার ছেলে আর যখন ইচ্ছে তাজবিদ আমার একমাত্র ছেলে?”

“তুই বড্ড বেশি কথা বলিস।”

“আমি বেশিই বলি আর বলবো।তোমাদের সমস্যা হলে তোমরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও। আমাকে কেন এসব বলছো?আমার বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো।যা ইচ্ছে করবো।”

সাগরিকা এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে রুমে ফিরে আসে। সকালের রোদে পুরো ঘর টইটম্বুর। ফ্লোরে পড়ে থাকা তার একটা নুপুর তুলল সে। তুলল না তোলার বাহানায় ফ্লোরে বসে রইল।এত ক্ষণ নিচের ঝামেলার খবর কিছুই জানে না।তাশদীদ ফ্রেশ হয়ে সাগরিকাকে বলল,

“চা করে দে তো।বড্ড মাথা ধরেছে।”

নিজের হাজার মন খারাপ হলেও সাগরিকা ঢোক গিলে সব হজম করে ফেলল।এরপর তাশদীদের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপনি কী জানেন? অনেকে বলে চা গরীব মানুষ খায়?আর কফি খায় ধনী লোকেরা।”

“তোকে এসব ফালতু কথা কে বলেছে?”

“ফেসবুক।”

“চালানো বাদ দে। আর যা চা করে নিয়ে আয় বাপ আমার মাথায় ব্যথা করছে।”

তাশদীদের কথাতে সাগরিকার নিজের কন্ঠ গম্ভীর করে বলল,

“আমি আপনার বাপ না।কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল।”

“বল।”

“চা যদি গরীবের খাবার হয়, কফি ধনীদের হলে গ্রীণটি কী বিল গেটসদের লেভেলের খাবার?”

সাগরিকার প্রশ্নে তাশদীদ চায়ের আশা ছেড়ে দিলো।ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করে সে নিজের কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করছিল।কিন্তু সাগরিকা এগিয়ে এসে বলল,

“আপনি কোন কাতারে পড়লেন?আপনার তো সব চাই। এতো ভীষণ চিন্তার বিষয়।”

সাগরিকার হাত থেকে তাশদীদ ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,

“আজ থেকে ফেসবুক বন্ধ।আর যা না তোর ঘন্টু সোনাকে জিজ্ঞেস কর।আমার মাথা কেন খাচ্ছিস?”

সাগরিকা মাথা নিচু করে মিনমিনে স্বরে বলল,

“তাকেই তো বললাম।”

(২০২)

দুপুরে খাবার টেবিলে বসতেই সবার কাছে নালিশ করলো তাজবিদের মা।গো ধরে বসে রইলেন ভদ্রমহিলা। সে কিছুতেই খাবার খাবে না। তাশদীদ অনুনয় করলেও সে প্লেটে খাবার তুলে নিলেন না। সাগরিকা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে তার বাবা শুধু দুটো ধমক দিয়েছে বড় দের সাথে বেয়াদবি করার জন্য।
তাশদীদ সীমার কথা জিজ্ঞেস করল।তাজবিদ জানালো এখন ঠিক আছে।খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।

একটা সময় থাকে যখন সন্তান না খেয়ে থাকলে মা খাবার খাইয়ে সন্তানের রাগ ভাঙায়।যে অবধি সন্তান না খায় তার গলা দিয়ে খাবার নামে না।জীবনের আরো একটা সময় হচ্ছে যখন মা রাগ করে তখন সন্তান তার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে।
তাশদীদ নিজের পাশে মা কে বসিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও সে খেলো না।অথচ কিছু সময় পর তাজবিদ এসে তার পাশে বসে প্লেটে ভাত বেড়ে দিতেই ভদ্রমহিলা খাওয়া শুরু করলো।সে যেন আরো একটা বার চোখে আংগুল দিয়ে উদাহরণ দিচ্ছিলো তাশদীদ তার ছেলে নয়। শুধু দায়িত্ব আর দায়িত্ব অবধিই সীমাবদ্ধ। প্লেটের খাবার স্পর্শ না করেই জরুরী ফোন কলের বাহানায় বেরিয়ে গেল তাশদীদ। সাগরিকা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো তার মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে।

সাগরিকা এমনটা দেখে তার বাবাকে বলল,

“আমরা আলাদা থাকতে চাই বাবা।তোমরা কী আমাদের সাথে থাকবে?”

“আলাদা থাকতে চাই মানে?”

“এক টেবিলে বসে আর খেতে মন চাইছে না।হাড়ি আলাদা হোক।নইলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”

তাশদীদের বাবা এত সময় চুপ ছিলেন, এবার তিনি সাগরিকাকে ধমকে উঠে বললেন,

“বেশি বুঝিস। তুই বড্ড বেশি বুঝিস।”

“আমি আমার স্বামীর ভালোটা চাইছি আপনি দেখেন না?আপনার স্ত্রী প্রতিনিয়ত উদাহরণ দিচ্ছে সে তাশদীদের মা নয়। আর তাশদীদ?তার মনের খবর আপনারা কেউ রাখেন? এই যে সে গত কাল থেকে না কষ্ট পাচ্ছে আপনাদের অনুভব হয় না?”

“তাশদীদ সহজে ভেঙ্গে পড়ে না।”

“সেও মানুষ বাবা, রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। তার ক্লান্তি আছে, রোগ আছে,শোক আছে যেমনটা আমাদের আছে। অথচ……….

(২০৩)

রুমে ফিরে সাগরিকা তাড়া দিলো বাইরে যাবে বলে।তাশদীদ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। বেরিয়ে যাবার সময় তারা বড় মায়ের মুখোমুখি হলেও তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।সীমার জন্য বাদাম দুধ নিয়ে যাচ্ছিলেন।সাগরিকা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। একজন মানুষ কীভাবে বদলে যেতে পারে?
সাগরিকার হঠাৎ মনে হলো তাদের মধ্যে বৌ-শাশুড়ির যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাশদীদের বাম হাত আঁকড়ে ধরলো।
তাশদীদ তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু-কুঁচকে বলল,

” কোথায় যাচ্ছি বল তো?”

“ওই যে বিষে বিষ কাটে না?আমরা যাচ্ছি পৃথিবীর সব থেকে বিষধর জিহ্বা ওয়ালা মানুষকে ফিরিয়ে আনতে।”

“কী সব বলছিস।”

“দাদীকে আজ ছুটি দিচ্ছে।জুলি আন্টি আর দাদীকে বাসায় আনতে যাচ্ছি।কারণ শাশুড়িকে তার শাশুড়িই শায়েস্তা করতে পারবে।চলেন চলেন বুড়িরে আল্লাহ্ নেক হায়াত দান করুক।”

অথচ সাগরিকা জানেও না অল্প কিছু সময়ের মাঝে তাদের জীবনের সাথে ঘটতে চলেছে একটা মর্মান্তিক ঘটনা।বদলে দিবে সকলের জীবন।তাশদীদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতেই বাড়ির কেয়ারটেকার জুলিকে কল দিয়ে বলল,

“তারা বেরিয়েছে এবং কথা মতোন গাড়ির ফুয়েল পাম্পেও ফোঁটা করা হয়েছে।”

#চলবে

#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ৪২
(২০৫)

তাশদীদ দুই হাতে সাগরিকা এবং তাজবীদের কান ধরে আছে। সাগরিকা ব্যথা পাওয়ার ভঙ্গি করলে তার দিকে চোখ কটমট করে তাকালো সে।
কান ছাড়িয়ে নিয়ে মেয়েটা সীমার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।তাশদীদ তখনো ভাইয়ের কান ছাড়েনি বরঙ আরো শক্ত হাতে ধরে সীমাকে বলল,

“কান মলা খাওয়ার ভাগীদার তো তুমিও কিন্তু আফসোস পারছি না।”

তাশদীদের এহেন কথায় সাগরিকা তার দিকে সীমাকে ঠেলে দিয়ে বলল,

“কাছে এনে দিয়েছি এবার দেন। জোরে দিবেন, আপনি চাইলে ওর চুলেও ধরতে পারেন। ও কিছু বলবে না। তাই না রে বান্ধবী?”

সীমা বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে তাশদীদের দিকে। তাদের এত কঠিন পরিকল্পনা তাশদীদের কাছে ধরা পড়ে যাবে এটা ভাবতে পারেনি।রেস্তোরাঁয় বসে তাজবিদ বার কয়েক তার ভাইয়ের কাছে মাফ চাইলো।সে যখন জানতে চাইলো যে এমন পরিকল্পনা কার ছিল তখন তাজবিদের নিশ্চুপ থাকাটা তার সন্দেহকে আরো বাড়িয়ে তুলল।তাজবীদ কে সীমার পাশে বসতে বলে সাগরিকাকে নিজের কাছে এনে বলল,

“এবার এটা যেন না শুনি এই সবের পিছনে তোর বুদ্ধি!”

সাগরিকা উপর নিচ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।সীমা কখনো অন্তঃসত্ত্বা ছিলোই না।এমনকি তাদের বিয়েও হয়নি।তাজবিদ গ্রামে থাকা কালীন সময়ে তার মা কে একবার সীমার কথা বলেছিল কিন্তু তার মা সরাসরি না করে দেয়।এক দিকে সীমার পরিবারে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে অন্য দিকে তাজবিদের মন খারাপ দেখে এই বুদ্ধি বের করেছিল সাগরিকা।সে এহেন আচরণ করে কারণ বিগত কয়েক দিনে তাজবিদের মা সাগরিকার না কে নিজের হ্যাঁ বলছিল।তারা ৫০ /৫০ চান্স ধরে নিয়ে একটা গল্প তৈরী করে ফেলে।এসব কিছুর কিছুই জানে না সীমার পরিবার।তারা জানে সাগরিকার মন ভালো না আর সামনে পরীক্ষা বলেই সীমা এই বাসায় আছে৷ এদিকে পুরো পরিবার সীমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও তাজবিদ কিংবা লোকচক্ষুর আড়ালে সাগরিকা করতে দেয়নি।

কিন্তু সমস্যা ছিল তাশদীদ। সে কোনো ভাবেই তাদের এই প্ল্যান কাজ করতো না।তাই সাগরিকার বুদ্ধিতে তাজবিদ ওই ম্যাসেজ করে। যেহেতু তাশদীদের বাচ্চা ছেলে মেয়ে পছন্দ,নিশ্চয়ই সে সীমাকে কিছু বলবে না।

“আর তুই ওর কথা মেনে নিলি?”

তাজবিদ আমতা আমতা করে বলল,

“আসলে ভাই হয়েছে কি?আমি সীমার কথা ভেবে না করতে পারিনি। আর দেখ আমাদের প্ল্যান কাজ করেছে। মা কিন্তু মেনে নিয়েছে। তাছাড়া সীমার প্রতি সাগরিকার জেদ, রাগ সব কিছুই বাস্তব মেনে নিয়েছে মা।”

“তোরা কি পাগল না কি?এসব লুকিয়ে থাকবে?বাচ্চাদের বুদ্ধি দিয়ে এসব করে ফেললি?আর সাগরিকা তুই?পুরো বাড়ির মানুষ তোর উপর বিরক্ত হয়ে উঠেছে। বাবা অবধি বিরক্ত তোর রাগে।”

“আপনি ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন।কথা দিচ্ছি আর এমন করবো না।”

আজ অবধি সাগরিকার কথা তাশদীদ খুব একটা রেখেছে বলে মনে পড়ে না তার৷ অথচ আজ সে রাখলো, বিষয়টা গোপন রেখেই সীমার পরিবারের সাথে কথা বলল।তাদের পরিবারে মাত্র চার জন মানুষ। সীমার বাবা-মা আর তারা দুই ভাই বোন।ভাই ছোটো, সীমার বাবা বিয়েতে সম্মতি দিলে তৎক্ষনাৎ কাজী ডেকে বিয়ের ব্যবস্থা করলেন তিনি।তাশদীদ একা এসব করেছে এমন নয়, রাশেদ, মুনির,সাগরিকার বাবা এসেছিলেন।তারা এসে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সীমার বাবা না করেননি।

সাগরিকা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।একটা তুলতুলে অনুভূতি হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে সে মন খুলে শ্বাস নিতে পারছে।
সকল কাজ শেষ করে হাসপাতাল যাওয়ার পথে সাগরিকার মাথা যেন হুট করে কাজ করা শুরু করেছে। তার হঠাৎ মনে হলো তাশদীদ এসব জানলো কী করে? তারা কখনো এই বিষয়ে বাড়িতে কথা বলেনি, এমনকি সীমা এই বাড়িতে আসার দিন সাতেক আগ থেকে এই বিষয়ে কথা বলে না তারা।
ভ্রু-বিলাস করে সাগরিকা তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপনি কী করে জানলেন এসব?”

“কী সব?”

“এই যে এই সব।মানে সীমার ব্যাপার?”

“কেন তুই নিজেই তো বলেছিস।”

“কবে?কখন?”

“গতকাল রাতে, ঘুমের ঘোরে কিছু বিড়বিড় করছিলি। জিজ্ঞেস করাতে সব বলে দিয়েছিস।”

হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল মেয়েটা। দুটো ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,

“আর কী বলেছি?”

“এত ভালোবাসিস আমায় যে তোর মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে আমাকে ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতে।”

এবার মেয়েটার বিশ্বাস হলো সে ঘুমের ঘোরে সত্যি এসব বলেছে। কারণ তার মাঝেমধ্যে বড্ড ইচ্ছে করে তাশদীদকে একটা ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতে যাতে কেউ দেখতে না পারে।

(২০৬)

হাসপাতালে ওয়েটিং রুমে বসে বসে ধৈর্যের প্রহর গুনছে সাগরিকা। তার হাতের চুড়ি বার বার খুলছে আর পড়ছে। দাদীর জন্য অধীর আগ্রহে তার অপেক্ষা কোনো দিন অপেক্ষা করেনি সে।মাঝেমধ্যে রাগের বশে সে অনেক বাজে কথা শোনালেও আজ তার দাদীকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে৷ তাশদীদ বিল পে করে তার পাশে এসে বসলো।তাকে তাগাদা দিয়ে সাগরিকা বলল,

“আর কতক্ষণ?”

“বেরিয়ে এলো বলে।”

“তবে আমরা এখানে কেন? যাই নিয়ে আসি?”

“জুলি খালা আছে। তাছাড়া স্টাফরাই নামিয়ে দিয়ে যাবে। অযথা ভীড় করে অন্য রোগীদের বিরক্ত করা উচিৎ হবে না।”

এমন কথায় প্রচন্ড বিরক্ত হলো সাগরিকা।কণ্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলল,

“এটা কেমন কথা? এক জন অসুস্থ মানুষ। বাড়ি যাচ্ছে কত দিন পর আর আপনি?”

“আজ কী হয়েছে বল তো?ভাতের সাথে কিছু খেয়েছিস না কী?”

সাগরিকা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। লিফটের দিকে তাকিয়ে উদাস ভঙ্গিতে বলল,

“আজ ভাত খাইনি।সময় কোথায় পেলাম?”

(২০৭)

বাড়ির প্রবীণ মানুষ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসায় সবার মুখেই হাসি। তবে ইখুম তাদের থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে। শাশুড়ি বসে আছে ড্রয়িং রুমে। জুলি খালা আপাতত রান্না ঘরে। তার চাচার শালার ভাইয়ের মেয়ের জামাই কল দিয়েছে।তার সাথে কথা বলছে সে। রান্নাঘর কিছুটা ফাঁকা পেতেই সে কিছুটা রাগত স্বরে বলল,

“কি নষ্ট করছিস তোরা?ওরা আজ বুড়িকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো কীভাবে?কতবার বললাম? ছোটো লোকের বাচ্চা, আমি কী টাকা কম দিয়েছি?”

অপর পাশ থেকে কী বলল বুঝা গেল না।ফোনে কথা শেষ করে পিছন ফিরে চাইতেই দেখতে পেল স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্চয়ই সে সব কথা শুনেছে।এর আগেও একবার এমন করে কথা শুনেছিল সে। এর জন্য অনেক কাঠ কয়লা পুড়াতে হয়েছে জুলিকে। টাকাও খরচ হয়েছে অনেক।কিন্তু এই বার সে কী করবে?
স্নেহা কিছু বলল না, তাকে ডাক দিতেই সে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।

বাড়ি ফেরার পর শাশুড়ীর প্রতি সব থেকে যার বেশি মায়া হতে লাগলো সে হলো তাজবিদের মা।সাগরিকার মা কিংবা সামিনা যতটা প্রয়োজন ততটা করছে।ইখুম দূরে দূরেই থাকছে। সে চাইছে না কোনো কথা হোক কিন্তু তাজবিদের মা আসার পর থেকে কান্নাকাটি করেই চলেছে। বাড়িতে আসার পরেই সে সীমার হাত ধরে নিয়ে শাশুড়ির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।আঁচলে বারবার চোখ মুছতে ব্যস্ত। তার চোখের পানি দেখে বিরক্ত লাগছিল সাগরিকার মা।স্নেহা এসে দাদীর পাশে বসলো।তার দাদী প্রথম যে কথাটা বলল তা হলো,

“আমার রাশেদের পোলা কই?ওরে আনো তো চিনহা বু। আমার বাবার পোলারে আনো।”

ইখুমের কোল থেকে ছেলেকে নিয়ে তার কোলে দিলো সাগরিকার মা।বৃদ্ধা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন বাচ্চার দিকে।
কান্নায় দুচোখ বুজে এলো তার। বাচ্চাকে কোল থেকে নিয়ে তাজবিদের মা এক গ্লাস হলুদ মেশানো দুধ এগিয়ে দিলো তার দিকে।আবেগী সুরে শাশুড়ীকে বলল,

“আম্মা আপনার কষ্ট এখন আমি বুঝি।থাক বাদ দেন।পোলারা খুশি হইলেই হয়।নেন দুধটা।”

বৃদ্ধা তার দিকে তাকিয়ে দুধ হাতে নিলেন।এক চুমুক খেয়েই মুখ থেকে বের করে দিলেন। পুরো দুধের গ্লাস ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললেন,

“তুই কী আমাকে মারতে চাইছিস?কি খাওয়ালি? আমার অন্তর পুইড়া যাইতেছে।”

দাদীর এমন কথায় সবাই অবাক হলেও তার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে সাগরিকা।কারণ শাশুড়ির ও শাশুড়ি থাকে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here