কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ পর্ব ১১

0
829

#কৃষ্ণপক্ষের_চাঁদ
#পর্ব :১১
#JannatTaslima(writer)

.
.
.

প্রাণপণে দরজা খোলার চেষ্টা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।এতক্ষণের চিৎকার চেচামেচি এখন নিস্তব্ধতায় রুপ নিয়েছে। সবাই অবাক নয়নে আমার পানে চেয়ে আছে। আমায় এ অবস্থায় দেখতে পাবে তা হয়তো সকলের প্রত্যাশার বাইরে ছিলো।দরজা ভাঙার প্রয়োজন হয়নি।তার আগে ভিতর থেকে খুলে গিয়েছে।যার কারণ আমি। হ্যা আমি নিজ হাতে দরজা খুলে দিয়েছি। এবং লাল বেনারসি গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সবাই ভেবেছিল হয়তো আমি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছিলাম,তাই দরজা খুলছি না।সবাই যা ভাবছিল তা ও মিথ্যা না। আমিতো আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম।এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমার মৃত্যুই সকল সমস্যার সমাধান। তাই চোখ বন্ধ করে জীবন বাতি নেভানোর উদ্দেশ্য গলার বাধন জুড়ালো করতে যাচ্ছিলাম, তখন কে জেনো কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, “আত্মহত্যা মহাপাপ”। পরমুহূর্তে মনে পড়লো,এ আমি কী করতে যাচ্ছিলাম।নিজের হাতে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছিলাম।আমি মরে গেলেতো কোনো সমস্যার অবসান হতো না বরংচ তা আরো প্রভাব বিস্তার করতো।মা কী এতো বড় শোক সইতে পারতেন।সইতে না পেরে যদি মায়ের কিছু হয়ে যেত।তখন আদনান আরিয়ানের কী হতো?আমিও থাকতাম না।কে দেখতো ওদের।আমি যদি এ সমস্যার মোকাবেলা না করে মরে যাই,তাহলে আমার মতো আরো অনেক আঁধারও এভাবে আঁধারে তলিয়ে যাবে।না আমি মরবো না,আমি আরো অনেক আঁধারের আলোর দিশারী হবো।এরুপ নানাবিধ চিন্তা মাথায় এনে,আমার মন মস্তিষ্ক কিছুই আর নিজেকে শেষ করতে দিলো না।তাই লাল বেনারসি গলায় না পেচিয়ে অঙ্গে জড়িয়ে নিলাম।সবার সব চিন্তা ভাবনার উর্ধ্বে এসে এভাবে সামনে দাঁড়ানোতে,কারোই চোখে মুখে বিষ্ময়ের রেশ কাটছে না।এমতবস্থায় আমার-ই মুখের বুলি ফোটাতে হলো,
–কী ব্যাপার সবাই এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন?বাইরে যাবে না?সময়তো চলে যাচ্ছে।

এখন যেন ধ্যান ফিরলো,বড় চাচী শক্ত কন্ঠে বললেন,
–এতক্ষণ দরজা খুলছিলি না কেন?কী করছিলি তুই ভিতরে?

আমার নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় জবাব,
–শাড়ি পড়ছিলাম।

“””””””””
বাড়িতে প্রচুর লোকের সমাবেশ। গ্রাম পঞ্চায়েতের সবাই আছে। মসজিদের ইমাম সাহেব, আমাদের স্কুলের স্হানীয় শিক্ষকেরা,আশেপাশে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, চেয়ারম্যান,মেম্বার সাহেবও বাদ যান নি।আমাদের গ্রামের সবাইতো আর আছেই।রাত প্রায় দশটার কাছাকাছি। চাচারা বড় মুখ ধরে রাখতে সবার জন্য নিশিভোজের ব্যবস্থা করেছেন। আগে খাওয়া-দাওয়া তারপর ভরা পেটে ঠান্ডা মাথায় কুরবানি তথা বিয়ে পড়ানো হবে।আমার বংশের লোকেরা যে কম জাতের না,বাইরে যেমন সব অঘটনের সুরাহা করতে দক্ষ, তেমন ঘরেও নিজেদের বিচার নিজেরা করতে সক্ষম, এরই প্রমাণ দিতে হয়তো এতো লোকের জমায়েত করেছেন।গরু মাংসের আলুর জুল সাদা ভাত দিয়ে সবাই এমন তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে, যেন কারো চল্লিশা খেতে এসেছে। আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে রান্নাঘরে আমার জন্য বরাদ্দকৃত আসনে বসে চুপচাপ খাচ্ছি। আমায় তো শুধু লোক দেখানোর ইচ্ছায় খেতে বলা হয়েছিলো, আমি তাতেই বসে গিয়েছি।সব মহিলারা এতে একটু হোঁচট খেয়েছে। এ বিষয়ে আমার ভ্রুক্ষেপ দিলে হবে না।আলোর দিশারী হতে হলে নিজেই কিছু করতে হবে।নিজে কিছু করতে হলে প্রথমে শরীরে শক্তি প্রয়োজন।সেই শক্তি সঞ্চার করতে খাদ্য প্রয়োজন।এবার এক নজর মায়ের দেখা মিললো।মা আমায় জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না শুরু করলেন।আমি তাকে সান্ত্বনা দিলাম,
–তুমি কান্না করছো কেন?কান্না করো না,সব মেয়ের একদিন বাপের বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়। আমার জন্য দোয়া করো।

আমার আখি জল যেন বাঁধ সেধেছে।আটকে রাখার প্রয়াসও করতে হচ্ছে না।পরন্ত, মায়ের কান্না থামছে না।সবাই আমার থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল।এখন আর কেউ আমার কাছে মাকে আসতে বাধা দেয় নি।দিবে কেন?আমি যে এখন,চাচা চাচীদের চাহিদানুযায়ী অনুগত মেয়ে।আমি তেমনটাই করছি যেমনটা তাঁরা চায়।

…………………..

বাড়ির উঠানে মুরুব্বিরা সবাই গোল করে বসা।বারান্দায় আড়াল করে আমায় রাখা হয়েছে। আমার আশেপাশের মহিলাদের আমি জীবনে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।আমার আপন জনেরা ঘরে নম্রভাবে বসে আছে। আলম ভাইয়ের বাড়ির লোকেরা এসে গেছে। তার মা-বাবা নেই,তিন ভাই আর এক ভাবী এসেছেন।তাদের চোখে মুখের উপচে পরা আনন্দ জানান দিচ্ছে, আলম ভাই আজ কোনো এক মহৎ কাজের পুরুষ্কার পেতে চলেছেন।তার ভাবী আমায় দেখে দেখে বিদঘুটে হাসি দিচ্ছেন।যা আমার ভিতর পুড়িয়ে দিচ্ছে।যথারীতি সব কার্যকলাপ শুরু হলো,প্রথমেই চেয়ারম্যান সাহেব বলতে শুরু করলেন।যাকে বলা হয় শুভেচ্ছা বাণী।তারপর আলম ভাইয়ের বড় ভাই বললেন,
–আমার ভাই যেটা করছে ঠিক করে নাই। আঁধার আমাদের গ্রামের মাইয়া।ওর যদি আঁধারকে পচ্ছন্দ ছিলো বলতে পারতো। আমরা বড়রা কথা কইতাম।এভাবে নিজে নিজে এতো বড় ঘটনা ঘটানো ঠিক হয় নাই।আমরা বিষয়টি নিয়ে খুব লজ্জিত।তাই আমরা ঘটনার দিনই কোনো জামেলা না করে,নিজেরা নিজেরা সমাধান করতে চাইছিলাম।কিন্তু আঁধার এভাবে পালিয়ে গিয়ে ঠিক করে নাই।গ্রামে রহমান বাড়ির যেমন মান-মর্যাদা আছে আমাদেরও আছে।এসব চিন্তা করেই তো আমরা সবার অজানাতে বিষয়টা শেষ করতে চেয়েছিলাম।আঁধার লেখাপড়া জানা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এরকম একটা কাজ কী করে করতে পারলো।

বাহরে বাহ যত দোষ নন্দ ঘোষ,এখন সব দোষ আমার।এবার আমাদের গ্রামের এক মোড়ল বলে উঠলেন,
–অত্র এলাকার মধ্যে আমাদের গ্রামের অনেক নাম ডাক আছে।পুরুষ মানুষ একটা ভুল কইরা ফেলছে, আবার সুধারণও করতে চাইছে।কিন্তু মেয়ে হয়ে এতোটা সাহস দেখানো ঠিক হয় নাই। ওরে আর কী কমু?আজকালকার সব মাইয়ারাই একরকম।সদরতো হাতের কাছে তাই স্কুল শেষ করে দৌড়ে কলেজে ভর্তি হইয়া যায়।কাপড় চোপড়ের তো আর ঠিক নাই। এমন অবস্থায় একজন পুরুষ হইয়া কেমনে নিজের ঠিক রাখবো।

এবার আমাদের প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন,
–সে যাই বলেন আধারিকা কিন্তু এমন মেয়ে না।ও বোরখা পরেই চলাফেরা করে।অন্য মেয়েদের থেকে ও যথেষ্ট নম্র ভদ্র।

স্যারের সাথে আরো কয়েকজন তাল মিলালেন।এবার ঔ মোড়ল চুপসে যাওয়া মুখে বললেন,
–বাইরে চললেও বাড়িতে তো আর চলে না।

এবার একটা সুপরিচিত কন্ঠ স্বর বলে উঠলো,
–বাড়িতে তো আপনার মেয়েও বোরখা পরে চলে না।
আমি এতোক্ষণ নিশ্চুপ ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে বসে থাকলেও। এখন আর থাকতে পারলাম না। গ্রিল বিশিষ্ট বারান্দার পর্দা ফাঁক করে কন্ঠ স্বরটি দেখতে উদ্যত হলাম।দেখে আমি দুই বার চমকিত হলো।সবার সাথে একটি চেয়ারে আন্কেল বসে আছেন।আর কিছু দূর পেছনেই চন্দ্র দাড়িয়ে আছেন।আমার মতো হয়তো বাকি মহিলারা তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে বেখেয়াল ছিলো। তাই আন্কেলের মুখ নিসৃত বাক্য শুনে সবার মধ্যে গুণ গুণ শুরু হয়ে গেলো।তখন একজন টুপি পাঞ্জাবি ওয়ালা লোক বলে উঠলেন,
–বাড়িতে মেয়েরা বোরখা পরে চলে না ঠিক। তাই বলে বাড়িতে কোনো পর পুরুষ এলে তার সামনে অবাধে ঘুরাঘুরি করাও ঠিক না।আর এই মেয়েকে তো আমি অনেক বার আলমের সাথে ঘুরতে দেখেছি।আলমতো সব সময় এ বাড়িতে আসা যাওয়া করে। এ বাড়িরতো আরো দুইটা মেয়ে আছে কই ওদের তো কোনোদিন আমি আলমের সাথে দেখি নি।এই মেয়েকেই দেখছি।তাই দোষটা যে আলমের একার তা বললে হবে না।মেয়েরও কিছু দোষ আছে।

এই লোকটা বছর দু-এক হলো হজ্জ থেকে এসেছেন।আসার পর থেকে এই বেশ ধরেছেন। টুপি পাঞ্জাবি পরে প্রতিদিন মসজিদে নামাজ পড়ে নিজেকে বড় এক আলেম ভাবেন তিনি।সুযোগ পেলেই জ্ঞানের কথা বলা শুরু করে দেন।তার কথা কর্ণপাত হতে ছোট চাচীর চোখে মুখে চমক চলে আসলো।মহিলারা এ কথার প্রেক্ষিতে সম্মতি সূচক মন্তব্য শুরু করে দিলেন।মুরুব্বিদের অনেকে এই কথায় একমত পোষণ করলেন।মোট কথার এক কথা আমার চরিত্রেই দোষ।তখন পাশের গ্রামের কেউ একজন বলে উঠলো,
–মেয়ের যদি সম্মতিই থাকে তাহলে অন্য আরেক জনের হাত ধরে পালিয়ে গেলো কেন?

তখন আমাদের বাড়ির শত্রুদের একজন মজা নিয়ে বলে উঠলেন,
–যাবেই না কেনো?রহমান বাড়ির মেয়ে বলে কথা।অল্পতে কী আর মন ভরে,বাপ চাচাদের মতো তারও তো বেশি চাই।আলম দেখতেও ভালো না,লেখাপড়াও জানে না,ওদের মতো এতো টাকা পয়সাও নেই।বলতে গেলে এই মেয়ের নকের কাছেও আলম না।আড়ালে এসব করলেও বিয়েতো আর করতে পারে না।তাইতো মুমিনুল ভাইয়ের লেখাপড়া জানা চাকুরিজীবি ভাগিনা, ছেলে দেখতেও মাশাল্লাহ, ওকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছে।

কথাটা বড় চাচার ইজ্জতে গিয়ে আঘাত হানলো,
–আপনারা হয়তো ভুলে গিয়েছেন,আপনাদের সকলকে এখানে আলমের সাথে আমার ভাতিজীর বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আপনারা অযথা কথা না বলে বিয়ের কাজ শুরু করে দেন।

ভাগ্যিস এখানে অনেক লোকজন উপস্থিত। নইলে আজ কথার আগুনে রক্ত ঝড়তো।আহ্লাদী সুরে বড় চাচার এক শিষ্য বলে উঠলেন,
–হ্যা হ্যা শুভ কাজে দেরি করতে নেই। যা হবার তা হয়ে গেছে। কাজী সাহেবও চলে এসেছেন। তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেন। তারপর সবাই দুজনকে দোয়া করে দিবেন যাতে তারা দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়।

জলভর্তি কূপে ফেলে ভালো সাঁতার কাটার আশীর্বাদ দেয়া হচ্ছে।কাজী সাহেব সহ আরো দু-একজন আমার কাছে আসলেন।আমি তাদের দেখে উঠে দাড়ালাম,
–এতক্ষণ সবাই অনেক কথা বলেছে এখন আমি কিছু বলতে চাই।
বলে বাইরে চলে আসলাম। সবাই আমার কান্ড হতবাক। বাইরে এসেই প্রথমেই চোখ পড়লো চন্দ্রের দিকে। কেমন অগোছালো লাগছে তাকে। সবার দৃষ্টি এখন আমাতে।আলম ভাইয়ের চেহারায় বিশ্ব জয়ের হাঁসি খেলা করছে।বড় চাচা বলে উঠলেন,
–আধারিকা ভেতরে যাও।

আমি প্রথমবারের মতো তার মুখের ওপর বললাম,
–আমি ভিতরে কেন যাব?পর পুরষের সামনে অবাধে ঘুরাঘুরি করাইতো আমার স্বভাব।

তখন কেউ একজন বলে উঠলো,
–এই মাইয়াতো দেখি আস্ত বেয়াদব। বড়দের মুখে মুখে কত বলে।

আমি এবার শক্ত কন্ঠে প্রতিউত্তর করলাম,
–এখানে দেখার কী আছে? আমিতো এমনই। আপনারা সবই এতক্ষণতো তা-ই বলছিলেন।আমার চরিত্রে সমস্যা আছে।ছেলে দেখলে গায়ে পড়ে থাকি।নিজের রুপ দেখিয়ে তাদের পাগল বানাই।আমার একজনে মন ভরে না।এজন্যই আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছি।আমিতো একটা চরিত্রহীনা,আমার কোনো আদব-কায়দা জানা নেই,আমিতো এভাবেই আচরণ করবো,এতে অবাক হওয়ার কী আছে?
আমি এবার স্বঘোষিত আলেমের পানে তাকিয়ে বললাম, চাচা আপনি কী বললেন,আমায় আপনি আলম ভাইয়ের সাথে ঘুরাঘুরি করতে দেখেছেন। আচ্ছা বলেনতো কখন দেখেছিলেন?কত দিন আগে দেখেছিলেন?কী ব্যাপার কিছু বলছেন না কেন? এবার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
হ্যা,চাচা মিথ্যা কথা বলেন নি!তিনি আমায় আলম ভাইয়ের সাথে দেখেছেন!তবে কখন, যখন আমি নয়-দশ বছরের ছিলাম।এরপরেতো আমি আর বাড়ি থেকেই বের হতে পারি নি।আপনারা তো সবাই জানেন,এ বাড়ির মেয়েরা বাড়ির বাইরে প্রয়োজন ছাড়া বের হয় না।তাহলে আমি কীভাবে বের হবো।এই গ্রামের সবাই আমায় চিনলেও আমি অনেককেই চিনি না।কারণ আমিতো বড় হওয়ার পর স্কুল-কলেজে যাওয়া ছাড়া বাড়ির বাইরেও যেতাম না।আর রইলো আলম ভাইয়ের কথা, ওনিতো বড় চাচীর আত্মীয়। এ বাড়িতে তার সব সময়ের আসা যাওয়া।রান্নাঘর পর্যন্ত যেতে তার কোনো বাধা ছিলো না।তাহলে আমি কতটুকু তার আড়াল হয়ে চলতে পারবো।এখানে আমার দোষ কোথায়? দোষতো আমার অভিভাবকদের তাঁরা কীভাবে বাড়ির বাইরের একটা লোককে রান্নাঘর পর্যন্ত এলাউ করে।আমিতো তার সাথে গা ঘেঁষে ঘেঁষে চলি না।এরকমই যখন, তখন আমি আজ পাঁচ-ছয় বছর ধরে তার সাথে কথা বলি না কেন?এ কথাটা হয়তো মায়া খালার সুবাদে, এই ঘটনার মতো অনেকেই জানেন।মায়া খালা আর মনাই কাকাকে ছোট বেলা থেকে এ বাড়িতে কাজ করতে দেখেছি। আমাদের বাড়িতে ঘটা প্রত্যেকটি ঘটনাই মায়া খালার কল্যাণে কারো কাছে লুকিয়ে থাকে না।বিশ্বাস না হলে তাদের জিজ্ঞেস করে দেখুন।আমি আজ পাঁচ-ছয় বছর থেকে এই লোকটাকে ঘৃণা করি।অথচ,বলা হচ্ছে আমি নাকি তার সাথে,,, মানুষ এতো জগন্য কী করে হতে পারে?অন্যের মেয়ে দেখলে সব নীতি বাক্য শুরু হয়ে যায়। একবারও ভাবেন না ঔ মেয়েটার জায়গায় আমার নিজের মেয়েও থাকতে পারতো। আসলে তারা সমাজের আদর্শবান লোক।আমার জায়গায় তাদের মেয়ে থাকলেও তাঁরা তাদের চরিত্রহীনা বলতো।যেমনটা আমার বাপের সমান চাচারা বলেছেন। এজন্যই কোনো মেয়ে আজ ধর্ষিতা হলে বিচার চায় না।চুপচাপ ঘরে বসে থাকে। আমি বলি,একদম ঠিক কাজটাই করে।কী বিচার পাবে সে,কাঠ গড়ায় উঠবেতো ধর্ষিতা হয়ে কিন্তু নামবে পতিতা হয়ে।এটাই বাস্তবতা।

আমি কথা বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি।শেষের দিকের কথাগুলো জলে ভিজিয়েই বলেছি।বুকের ভিতর শক্তপোক্ত দেয়াল যেন খসে পরেছে। হাত দিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছে। আমি নিজেকে সবার সামনে দুর্বল প্রমাণ করতে চাই না।কেউ কেউ ফিসফিস করছে,কেউতো পুরা নিশ্চুপ। এমতাবস্থায় চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
–দেখো মা,তুমি যা বললে সবই ঠিক। কিন্তু এখনতো তোমার নামের সাথে আলমের নাম জুড়ে গেছে।তুমি চাইলেও এ সত্যটাকে মিথ্যে করতে পারবে না।তাই আমি বলি কী তুমি বিয়েটা করে নাও।তাহলে তোমারি ভালো হবে।

আমি বেশ অবাকতা নিয়ে বললাম,
–আমার ভালো হবে, এ কথাটা আপনি কীভাবে বলতে পারলেন।এই লোক বিয়ের আগে আমি তার সাথে কথা বলতাম না,এড়িয়ে চলতাম শুধু এই কারণে, আমার ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে।আজ যখন ওনার সাথে আমার বিয়ে হবে, তখনতো সামান্য কথার উপর ওনি আমায় খুনও করে ফেলতে পারেন। তাহলে আমার ভালো কী করে হবে?আপনারা বলবেন,আপনারা আছেন ওনি কিছুই করবে না।কিন্তু সবসময় তো আপনারা থাকবেন না।একদিন না একদিন সে তো তার আসল রুপ ধারণ করবে।তখন আমার কিছু হয়ে গেলে আপনারা কী চেয়েও তা ফেরাতে পারবেন।

তখন কেউ একজন টিটকারি করে বললো,
–তাহলে তোমাকে বিয়ে করবে কে?আট দশ গ্রামের লোকই তো তোমার সম্পর্কে জানে।এসব কথা কী চেপে থাকবে?

তখন সবাইকে তাক লাগিয়ে একজন বলে উঠলেন,
–আমি ওনাকে বিয়ে করো!!!!!!!!!!

#চলবে,,,

বি.দ্র: আজকের পর্ব কী খুব বিরক্তিকর হয়ে গেছে।সত্যি হয়ে থাকলে,আমি দুঃখিত। অনেক সময় লেগেছে এতটুকু টাইপিং করতে। সবাইকে ভুল ত্রুটি গুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here