কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ পর্ব ১

0
2457

আমি দাঁত দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরে বাইরে থাকতে রাজি বস্তুত ঘরের ভিতরে যেতে নারাজ।কারণ, বড় চাচা আর মেজো ভাইয়া আমার হাত ধরে ঠেনে হিঁচড়ে বাড়ির ভিতর নিয়ে যাচ্ছেন। কান্না ভেজা কন্ঠে ধরা গলায়, “আমি যাবো না”এই কথাটারই পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছিলাম। কেউ যেন তা শুনতেই পাচ্ছে না।বাড়িতে ঢুকে ফ্লোরে আছাড় মেরে ফেলা হলো আমায়।বড় চাচী এসে আমার চুলের মুঠি ধরে বললেন, মুখ পুরি কোথায় যাচ্ছিলে তুই? এ বাড়ির মানসম্মান ধুলোয় মিটিয়ে দিতে;এতো বড় অঘটন ঘটিয়ে শান্তি হয়নি তোর।তাও ভালো গ্রামের লোক এখনও কিছু জানে না।তাই জানাতে যাচ্ছিলি বুঝি। মরে যাস না কেনো তুই। মরে গেলেই তো বাঁচি।
বলেই চুলের মুঠি আরো শক্ত করে ধরলেন। আমি ব্যথা পাচ্ছি হ্যা খুব ব্যথা পাচ্ছি। তবে শরীরে নয় মনে।কখনো যে এত অসহায় হবো ভাবি নি।আমার মরে যাওয়া যে কারো বেঁচে থাকার কারণ হবে বুঝি নি।আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শুধু মাকেই দেখতে পাচ্ছি না।হয়তোবা কোথাও চোখের জলে সাগর বানাচ্ছে। এবার চাচী আমায় ছেড়ে দিলেন।দয়ায নয়, ক্রোধে নয়তোবা ঘেন্না হচ্ছে আমার উপর।বড় চাচা মেজো ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,সামির ওনাদের সন্ধ্যায়ই আসতে বলো।আমি আর দেরী করতে চাই না।আর অতিদ্রুত সবকিছুর ব্যবস্থা করো। মেজো ভাইয়া যেন এইটাই চাইছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, অবশ্যই আব্বা;আপনি যা চাইবেন তাই হবে। আমি সব ব্যবস্থা করছি। বলে একবার আমার দিকে তাকালেন।আমি বুঝে গেছি সবাই যা চাইবে তাই হবে আমার এখানে বসে অশ্রু ফেলা আর বাক্য ব্যয় করা অপচয় ব্যতিত কিছুই নয়। তাই বসার ঘর থেকে উঠে চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম।যা উপস্থিত সবাইকে চমকিত করলো।বড় ভাবী,মনিরা আর মুন্নী, আপু যেন কেমন করে তাকিয়ে ছিলো। হয়তো এটাই ভেবেছিলো আমি এতো সহজে সবকিছু মেনে নিলাম। মানবো না কেনো বাপ মরা মেয়ে চাচারা ছাড়া আর কেই বা আছে। তারা জাহান্নামে ফেলে দিক তাতে কী! তারাইতো আমায় খাওয়াচ্ছে পড়াচ্ছে।ফ্লোরে হাটুতে মুখ গোজে বসে এসবই ভাবছিলাম। হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মুখ তুলে তাকাতে দেখি মা।স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।সে যে কান্না করেছে তা তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ।স্বামীহীন এক বিধবা মহিলা তিন সন্তানের মা ভাসুরেদের সংসারে আর কী বা করতে পারে।মাও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন আমাকে অবাক করে তিনি বলে উঠলেন, তুই পালিয়ে যা। আমি তার কথায় স্তব্ধ। আশ্চর্য হওয়ার পরিমাণ কমে আসলে বাইরে চোখ বুলালাম।সবাই বসার ঘরে কারো মনে এ শঙ্কা নেই যে আমি পালিয়ে যেতে পারি। হ্যা এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।সামনে দিয়ে যখন স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে যেতে পারি নি পেছন দিয়ে যাবো। সবার অগোচরে পালিয়ে যাবো আর এখনই।বেশি দেরি করা যাবে না।হন্তদন্ত হয়ে আলমারি খুজতে লাগলাম একটা ব্যাগে কিছু টাকা পেলাম।টাকা বের করে নিতে গেলে মনে পড়লো এগুলো মায়ের জমাানো টাকা। মনে পড়তেই আবার তা জায়গায় রেখে দিলাম। তখনই মা বলে উঠলেন, তর টাকা তর ব্যাগে। কথাটা শ্রবণ হওয়া মাত্রই কলেজ ব্যাগটা টেবিলের উপর থেকে নিলাম। আলমারির ভিতরের ড্রয়ার থেকে সব সার্টফিকেট নিয়ে ব্যাগে ভরলাম।বের হবো তখন মনে পড়লো বোরখা ছাড়াই যাবো।পরনের জামা পড়ে বের হচ্ছি কাপড় চোপড় সাথে নেওয়ার সময় আমার হাতে নেই। বোরখাটা হাতে নিয়ে বের হতেই হিজাবের কথা মনে পড়লো। তাতে গুরুত্ব দিলাম না পরনের উড়না দিয়ে কাজ চালিয়ে নেবো।শুধু কেউ আমায় না চিনলেই হলো।তবে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুলে যাচ্ছি। মায়া ভরা দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে পা ছুয়ে কদমবুসি করে নিলাম।মা আমাকে তার বুকে জড়িয়ে নিলেন। আমি কান্না করে দিলাম আর যদি কোনোদিন মায়ের সাথে দেখা না হয়।মা আমার চোখের জল মুছে তার জমানো টাকাগুলো হাতে দিয়ে বললেন, কাঁদলে হবে তোকে তো শক্ত হতে হবে।টাকাগুলো রাখ কাজে লাগবে।নিজের খেয়াল রাখিস।ভালো থাকিস একথাটা বলবো না তবে যেখানেই থাকিস পড়ালেখা করিস।আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে আছে। আমি নাক টেনে বললাম, সে কথা তোমার ভাবতে হবে না।আমার জীবন থাকতে পড়ালেখা আমি ছাড়বো না।আর টাকাগুলো রাখো তোমার দোয়াই আমার কাছে অনেক মূল্যবান।আমি যাওয়ার পর ওরা যদি তোমায় তাড়িয়ে দেয় তখন এই টা কাজে দেবে।আদনান আরিয়ানের খেয়াল রেখো আসি।

বলেই বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলাম।কেউ আমায় খেয়াল করে নি।কিন্তু খোঁজ করবে তো আমার।তাই দৌড়াচ্ছি আমি, আমাদের বাড়ির পিছনের দিকে অনেক ঝোপঝাড় ও গর্ত।সেগুলো লাফ দিয়ে অতিক্রম করছি। বাড়ির শেষ সীমানায় পৌঁছে দূর্ততার সাথে বোরখা গায়ে জড়াতে বোধগম্য হলো তা উল্টো। তাই আর কী করার খুলে আবার ঠিক করে পড়ে দৌড়াতে শুরু করলাম।তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে আসে কথাটা শতভাগ ঠিক, উড়না গলায় পেচিয়ে উপরে বোরখা পরে দৌড়াচ্ছি আমি। এখন একটু স্থির হয়ে দাড়িয়ে উড়নাটা মাথায় পেচালাম।ব্যাগ থেকে এক্সটা নেকাব বের করে বেধে দিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম গ্রামের মূল রাস্তা দিয়ে যাবো না বাকা পথে যাবো। তাতে ওরা পিছু নিলেও আমি ওদের আগে সদরে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যাবো।এসব ভাবছি আর হাটছি। হঠাৎ কারো,,,,,,,
#কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ
#প্রারম্ভাংশ
#জান্নাত তাছলিমা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here