গল্পের নামঃ বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৭: #পানিশমেন্ট
লেখিকাঃ #Lucky_Nova
এতই কাছে যে এরোনের নিঃশ্বাস ওর মুখে আছড়ে পরতে লাগল।
মিহি চমকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। তারপর কোনোমতে বলল, “ফ…ফোনে সব বলবো প্লিজ। কেউ দেখলে…। প্লিজ আপনি…”
“মনে যেন থাকে। আর তার চেয়েও important, তোমার চলে আসার কারণগুলো যদি ভ্যালিড না হয় তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। সো পানিশমেন্টের জন্য তৈরি থেকো।” হালকা হুমকিস্বরূপ বলল এরোন।
মিহির মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
এরোন হাত সরিয়ে দুই পা পিছনে পিছিয়ে গেল।
তারপর পলিথিনের প্যাকেটটা তুলে মিহির দিকে বাড়িয়ে দিল। তার চোখের চাহনিতে এখনো কঠোর ভাব।
মিহি ঢোক গিলে দ্রুত হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিল।
“যাও।” চোখে ইশারা করে বলল এরোন।
মিহি উপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে দ্রুতপদে বাসার দিকে এগিয়ে গেল।
মনের মধ্যে একটাই চিন্তা, কেউ যেন না দেখে। কারণ দেখে থাকলে আর রক্ষে থাকবে না।
চিন্তায় চিন্তায় ঘরে পা রাখলো মিহি।
ওকে দেখেই ওর কাকি তাড়া দিয়ে বলে উঠল, “কিরে এত সময় লাগে? চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ত!”
“চা ঠান্ডা হয়ে গেছেও।” ভ্রুকুটি করে বলল মিহির মা।
মিহি দ্রুত প্যাকেটটা খাবার টেবিলে রেখে উপরে উঠে যেতে লাগল। পিছন থেকে কয়েকবার মিহির মা ডাকলো ওকে কিন্তু কারো কথা শোনার সময় নেই এখন ওর। আগে ওর বাবা কি করছে সেটা দেখতে হবে ওকে। কারণ বাবা দেখে ফেলে থাকলে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।
মিহি ওর বাবার রুমের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখলো দরজা বন্ধ। দরজায় টোকা দেওয়ার সাহসও হলো না ওর। কি করবে সেটাই চিন্তা করতে লাগল।
এদিকে এরোন ছেলেটা ওকে সহজে ছেড়ে দেবার পাত্র নয় সেটা বেশ ভালই টের পাচ্ছে মিহি। আর এখন এরোন যদি কোনোভাবে ক্ষেপে যায় তাহলে কি হবে সেটাই ভেবে মিহি আঁতকে উঠছে।
মিহি দ্রুত নিজের কক্ষে গেল আর নিজের ফোন নিয়ে নতুন নাম্বার দিয়ে তমাকে ফোন করলো।
তমা ফোন ধরে মিহির গলা পেয়েই হা হুতাশ করে কেঁদে উঠল। তারপর মিহিকে সব খুলে বলল।
যা শুনে থম মেরে গেলো মিহি।
বিয়ে ঠিক হয়েছে জানলে এই ছেলে কি করবে তা এখন ধরণার বাহিরে।
“এ…এখন?” ভয়ার্ত গলায় বলল মিহি।
“জানিনা। যাই করিস আমাকে জড়াস না প্লিজ রে। এমনিই তোর বিষয়ে মিথ্যা বলার ফল কি হবে জানিনা আমি। তার উপর যদি জানে তোকে চলে যাওয়ার বুদ্ধি আমি দিয়েছি তাহলে কিনা আমাকে মেরেই ফেলে।” মিনতিপূর্বক বলল তমা।
“মেরে ফেলবে মানে?” হতবাক হয়ে গেল মিহি।
“আমাকে বাঁচা ভাই। মাফ চাই দোয়া চাই। তুই দয়া করে আমাকে ফাসাস না।”
“মানে? এখন কি করতে বলছিস তুই আমাকে?”
“আমি আর কিছু বলব না। আমার ঢের শিক্ষা হয়ে গেছে। আমি আর কিছু জানিনা।” ভয়ার্ত গলায় বলেই তমা ফোন কাটলো।
মিহি নির্বুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মাথা ফাকা ফাকা লাগছে ওর।
এরোনকে এখন সব জানালে সে অবশ্যই ঝামেলা করবে। মিহির বাবার সামনে পুনরায় এসব হলে ওর বাবা নির্ঘাত অনেক কষ্ট পাবে। এমনকি হতে পারে মিহিকেও ত্যাজকন্যা বানিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। এগুলো ভাবেই ত গলা শুকিয়ে যাচ্ছে মিহির।
এসব আটকাবে কিভাবে ও!
“মিহি রে চা ঠান্ডা হচ্ছে। জলদি আয়।”
মিহি হালকা লাফিয়ে উঠলো।
“কি রে?” নিচ থেকে ডাকলো মিহির মা।
“আ…আসছি।”
মিহির দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। এত চিন্তা নিতে পারছে না ও আর।
নিজেকে সামলে অগত্যা নিচে নেমে এলো। মাথার মধ্যে চিন্তা ভনভন করছে। সব মিলে ঝট পাকিয়ে যাচ্ছে। মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। রীতিমতো ঘামছেও।
“কি রে? কি হয়েছে? এমন মুখ শুকিয়ে গেলো কেনো? খুব ত হাসছিলি একটু আগেও।” সন্দিহান চোখে বলল মিহির কাকি রাহি।
মিহি মেকি হেসে বলল, “ক..কই! কি হবে!”
“কি যে হয় তোদের। নে, চা নে।” ভ্রু কুচকে বলে চা এগিয়ে দিলো সে।
মিহি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘাম মুছে নিলো। ভয়ে বুক দুরুদুরু করছে। কিছু ভালো লাগছে না। কারণ ও কোনো উপায় দেখছে না।
চিন্তা আঙুলের নখ কামড়াতে লাগলো মিহি। আর চিন্তার জাল বুনতে শুরু করলো। কিন্তু সব গোলমেলে হয়ে আছে।
তবে একটা বিষয় একটু আশ্বস্ত হলো যে ওর বাবা কিছু দেখেনি। কারণ টিভি দেখার সময় তাকে দেখে স্বাভাবিকই মনে হলো মিহির।
এখন ওর চিন্তা একটাই, সেটা হলো এরোনকে কোনো মতে ম্যানেজ করা।
এরোনের কথা মাথায় আসতেই মাথা ব্যথা শুরু হলো মিহির। ওর ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকে আর সেবাকে খুন করে ফেলতে একদম।
রাতে না খেয়ে বাহানা দিয়ে উপরে উঠে এলো মিহি। কারণ খাবার আজ এমনিও গলা দিয়ে নামবে না ওর।
রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে সামনে তাকাতেই ভুত দেখার মত লাফিয়ে উঠলো মিহি।
কারণ খানিক দূরেই এরোন দাঁড়ানো। সে বুকের কাছে হাত দুটো গুজে কড়া নজরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
“আ….আপনি? কি…কিভাবে..?” শুকনো ঢোক গিললো মিহি।
এরোন হালকা শাসিয়ে বলে উঠল, “ফোন কখন দিতে বলেছিলাম?”
মিহি হতবুদ্ধি হয়ে গেল। চিন্তায় মাথায়ই ছিল না ওর।
কিন্তু তাই বলে রুমে চলে এসেছে! কীভাবে? কেউ দেখেনি?
“কি?” বলতে বলতে আবার ওর কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো এরোন।
মিহি চমকে দরজার সাথে লেপ্টে গেল।
এরোন ওর কাছাকাছি এসে থামলো আর গম্ভীরমুখে তাকিয়ে বলল, “তুমি এমন শুরু করেছ কেনো? না বলে চলে এসেছো। এসে আমার সাথে কনট্যাক্ট অব্দি করোনি! কি হয়েছে?”
মিহি কি বলবে বুঝতে পারলো না। এক হাতে ওড়নাটা চেপে ধরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
“চলে এসেছ কেনো?” আবার প্রশ্ন করলো এরোন।
মিহি কিছু বলতে যাবে তখনি কারো পায়ের আওয়াজ পেল। মিহি চমকে উঠে এরোনের দিকে তাকালো।
এরোন বুঝতে পেরে রুমের লাইটটা বন্ধ করে দরজার কাছ থেকে সরে এক কোনায় দাঁড়াল।
মিহির কাকি দরজা ধাক্কিয়ে বলল, “কি রে আজ কি খাবি দাবি না?”
মিহি কোনোমতে নিজেকে সামলে কাঁপা গলায় বলল, “আ..আজ না। পেট ভরা।”
“দরজা বন্ধ করে কি করছি?” সন্দেহের গলায় বলল মিহির কাকি।
“ড…ড্রেস চেঞ্জ।”
মিহির কাকি ঈষৎ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,”খাবি না তাহলে?”
“ন…না।”
“বুঝিস কিন্তু! গেলাম আমি। রাতে খাবো খাবো বলে জ্বালাবি না একদম।” বলতে চলে গেলো মিহির কাকি।
দরজার কান পেতে চলে যাওয়ার আন্দাজ পেতেই মিহি একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর পাশে তাকিয়ে এরোনকে খুঁজতে। কিন্তু সে নেই।
গেলো কোথায়? ভেবেই চোখ বড়সড় হয়ে গেল মিহির।
“ক…কোথায় আপনি?” গলার আওয়াজ সীমিত করে বলল মিহি।
এরোন মিহির একদম পিছনে দাঁড়িয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “এখানে।”
মিহি ছিটকে সরে এলো। কারণ ওকে এত কাছে আশাই করেনি মিহি।
হৃদ স্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েই চলেছে মিহির।
তবে তা আতংকে।
রুম বলতে গেলে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
লাইটটা জ্বালানো দরকার। তবে জ্বালাতেও ভয় লাগছে মিহির। যদি আবার কেউ দরজার কাছে আসে! দরজার উপরিভাগ অমসৃণ কাচের। বাহিরে থেকে দেখা না গেলেও রিস্ক নেওয়া যাবেনা। যদি অবয়ব বোঝে যায় তাহলেই সব শেষ।
এরোন নিজের ফোনের লাইটটা জ্বালিয়ে লাইটের সুইচের হাত বাড়ালো।
তৎক্ষনাৎ মিহি বলে উঠল, “অফ থাক।”
এরোন হাত সরিয়ে নিয়ে প্রশ্নত্বক দৃষ্টিতে তাকালো।
“আ…আপনি প্লিজ যান। কেউ দেখে নিলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।” হালকা ভয়ের সাথে অনুনয় করে বলল মিহি।
“সব উওর না পেলে আমি যাব না।” সহজ ভাবে উওর দিয়ে দিলো এরোন।
মিহি হাত কচলাতে লাগল। মিহি জানে এভাবে এখানে কিছু বলা ঠিক হবে না। কাল বা পরশু মেশে আবার ফিরে গিয়ে তারপর সব বিষয় জানাতে হবে। তখন ওখানে যত রিএক্ট করার করবে। এখানে পরিবারের সামনে তামাশা করলে সারাজীবন বাবা মায়ের চোখে ছোট হয়ে যাবে ও।
এরোন হাতের তূরী বাজিয়ে বলল, কি?
মিহি হালকা চকিত হয়ে উঠলো। তারপর গোপনে একটা বড় শ্বাস নিয়ে রিনরিনে গলায় বলল, “হ…হঠাৎ বাবা মেশ থেকে বাসায় নিয়ে এসেছিল সেদিন..
“আর ফোন?” মিহির কথার মাঝখানে বলে উঠল এরোন।
“ফ…ফোনের সিমটায় একটু সমস্যা হয়েছিল।” মেঝের দিকে তাকিয়ে কোনোভাবে মিথ্যাগুলোবলল মিহি।
এরোন ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে মিহির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
মিহি থতমত খেয়ে গেল। আর পিছাতে পিছাতে বলল, “এ…এগুচ্ছেন কেনো?”
“তোমার রিজন আর এক্সকিউজ কোনোটাই পছন্দ হয়নি আমার।”
“ম…মানে?”
“মানে এখন পানিশমেন্ট দেবো। আমাকে না জানানোর জন্য।”
শুনেই মিহির মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
“আ..আমি.. ত..।” দেয়ালে পিঠ ঠেকে যেতেই চুপ হয়ে গেল মিহি।
এরোন ওর মুখের দিকে ঝুকতেই ও নাকমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল।
এরোন ওর মুখের উপর ফু দিতেই ও হালকা কেঁপে উঠলো। তাও চোখ মুখ বন্ধই রাখলো। তবে ভয়ে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে গেল।
এরোন মুচকি হেসে বলল,”আমি এক ঘন্টা তোমার সাথে থাকতে চাচ্ছি। এটাই তোমার শাস্তি।”
___________________
বিছানার এক কোনায় পা ঝুলিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে মিহি। আর ওর থেকে দুইহাত দূরে এরোন। সে স্বভাব সুলভ হাসির সাথে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে।
মিহির মাথায় চিন্তারা হানা দিয়ে আছে। এভাবে একা একটা ঘরে একটা ছেলের সাথে থাকাটা মোটেও ভালো দেখায় না। আর কেউ একটু টের পেলেই সব শেষ। সেই চিন্তায় বার বার দরজার দিকে দেখছে মিহি।
মিহি পরেছে মহা জ্বালায়। এরোন বারান্দা বেয়ে উঠেছে ঘরে কিন্তু নামতে নাকি পারবে না।
এখন সবাই ঘুমানো অব্দি এভাবেই বসে থাকতে হবে ওদের।
দুশ্চিন্তায় মিহি ঘামছে তরতর করে।
“ফিরবা কবে তুমি?” এরোন প্রশ্ন করলো।
মিহি অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
“প…পরশুই।”
এরোন মৃদু হাসলো। তারপর কয়েক সেকেন্ড আবার চুপ করে থেকে বলল, “খিদে পেয়েছে আমার।”
মিহি বিষয়টা বুঝলো না। তার খিদে পেয়েছে এতে মিহি কি করতে পারে!
সে প্রশ্নত্মক দৃষ্টিতে এরোনের দিকে তাকিয়ে রইল।
“নিচে যাও আর ডিনার নিয়ে এসো। সকাল থেকে না খাওয়া আমি। তোমার জন্য।” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে অভিযোগী কন্ঠে বলল এরোন।
মিহির মাথায় যেন বাজ পরলো। তবে সেটা এজন্যই যে তাকে এখন ঘর বয়ে খাবার আনতে হবে!
“কিহলো যাও!”
মিহি বাংলার পাঁচের মত মুখ করে ইতস্তত করে উঠে দাঁড়ালো।
এই ছেলের জন্য আজ নির্ঘাত ফাঁসতে হবে।
সবাই ডিনার শেষ করে গেছে মাত্রই। শুধু ওর কাকিই আছে খাবার ঘরে।
সে মিহিকে দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,”খাবিনা নাকি!”
মিহি জিভ দিয়ে ঠোঁট খানিক ভিজিয়ে নিয়ে বলল, “না মানে, আমি এমনিই এসেছি।”
“তা কি কাজে শুনি!” খাবার টেবিল পরিষ্কার করতে করতে বললেন উনি।
মিহি কিছু না বলে ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করতে লাগলো যে কিভাবে নিয়ে যাবে খাবার। সে কখনো রুমে নিয়ে খায় না। আজ এই ছেলের জন্য মহা জ্বালায় পরেছে সে।
মিহি সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলো। আর দেখতে দেখতে সুযোগ পেয়েও গেলো। ওর কাকি রান্না ঘরে থালাবাসন ধুরে যাওয়ার মুহুর্তে ও চট করে একটা টিফিন বক্সে ভাত আর মাছ নিয়ে নিলো। তারপর দ্রুত উপরে উঠে এসে দরজা লাগিয়ে হাপাতে লাগলো। চোরের চেয়েও বড়কিছু মনে হচ্ছে ওর নিজেকে।
নিজের বাসা থেকে কিনা খাবার চুরি করতে হলো আজ!
এরোন দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পেয়ে বেলকোনি থেকে বেরিয়ে এলো।
“হাপাচ্ছো কেনো?” সংকুচিত চোখে তাকিয়ে বলল এরোন।
মিহির বলতে ইচ্ছে হলো,’খাবার অর্ডার করিয়ে আবার ন্যাকামি হচ্ছে!’ কিন্তু বলল না। কথাটা গিলে নিলো।
“আপনার খাবার।” বলে মিহি টিফিন বক্সটা এগিয়ে দিলো।
“খাইয়ে দেও।” দুষ্টু হাসি দিয়ে বললে এরোন।
এটা শুনে মিহি হতবুদ্ধি হয়ে চোখ গোলগোল করে ফেলল।
এরোন মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত থেকে টিফিনবাক্সটা নিলো।
তারপর বাথরুম থেকে হাত ধুরে টিফিনবক্সটা খুলে খেতে শুরু করে দিলো।
মিহি আড়চোখে এরোনের দিকে দেখতে লাগলো। সে খুব মনোযোগের সাথে এমনভাবে খাচ্ছে যেন কত বছর না খাওয়া।
কয়েকগাল মুখে পুড়ে এরোন মিহির দিকে তাকিয়ে বলল “অহ তুমি খাবা না?”
“না, আমার পেট ভরা।” অন্যদিকে তাকিয়ে বলল মিহি।
এরোন আর জোড়াজুড়ি করলো না। সে নিজের মত খেয়ে উঠলো। কারণ সে সত্যিই সকাল থেকে না খাওয়া।
খাওয়া শেষে এরোন বেলকোনিতে চলে এলো। ওর পিছু পিছু মিহিও এলো। তবে খানিক দূরত্বে রেখে দাঁড়ালো।
“গুডনাইট।” মৃদুস্বরে বলল এরোন।
মিহি ভ্রু কুচকে একপলক ওর দিকে তাকালো। হঠাৎ বেলকোনিতে কেনো এসেছে সেটাই বুঝতে পারছে না মিহি।
এরোন বেলকোনির রেলিঙের কাছে এগিয়ে গেল। তারপর মিহির দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল,”বেলকোনির দরজা বন্ধ রাখবা, এভাবে যে কেউ চলে আসতে পারে। বুঝেছো?”
মিহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
এরোন মৃদু হেসে রেলিং টপকে খুব ভালো ভাবেই নিচে নেমে গেলো।
মিহি হা হয়ে এগিয়ে এসে ঝুঁকে নিচের দিকে তাকালো। কারণ ওর মনে হচ্ছে বাসার ডিজাইনই হয়তো এমন ভাবে করা যেন যে কেউ সহজে চুরি করতে আসতে পারে! ঠিক যেমন এই মাত্র রেলিং আর সানসেট ব্যবহার করে এরোন নেমে গেল।
এরোন হাত নাড়িয়ে মিহিকে টাটা দিলো। আর ইশারায় রুমে ঢুকে দরজা আটকাতে বলল।
মিহি দেরি না করে তাই-ই করলো। কারণ আপদ বিদেয় হলে বাঁচে ও।
মিহি যেতেই এরোন একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজের হাতের দিকে তাকালো। হালকা ছিলে গেছে। তবে এতে তার কোনো আফসোস নেই। বরং মুখে এক ফালি হাসি এসে ভিড়েছে তার। কারণ সাতদিনের দুশ্চিন্তার অবসান হলো আজ।
কিন্তু চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ওর মনে পরে গেল যে মিহির নতুন ফোন নম্বরটা নিতে ভুলে গেছে ও।
“শীট।” শব্দটা মুখ দিয়ে বিরবিরিয়ে চিন্তা করলো কাল নিতে হবে। আজ এমনিও অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন চলে যাওয়াটাই শ্রেয়। রাতটা গাড়িতে কাটিয়ে কাল ফোন নাম্বর নিয়ে তবেই ফেরা যাবে।
এরোন সদর্পণে মিহির বাসায় দেওয়াল টপকে বেরিয়ে গেল।
তবে মিহি বা এরোন কেউই জানলো না যে মিহির বাবা নিজের রুমের জালানা দিয়ে পুরো বিষয়টাই দেখলো। এই রাত বিরেতে নিজের মেয়ের রুম থেকে একটা ছেলেকে এভাবে বের হতে দেখে নিমিষেই চোখ মুখ শক্ত করে ফেললেন তিনি।
তবে শুধু এটুকুই নয়, বিকেলের ঘটনাও তার চোখ এড়ায় নি।
(চলবে….)
-গল্পের মোড় ঘুড়তে চলেছে। Be ready!?