দৃষ্টিনন্দনে তুমি পর্ব ৩১

0
457

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩১

জুলির বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি চলছে। ছেলেটার বাবা মা সিডনিতে থাকে। এখানে ও একা থাকে। সেই সুবাদে পুরো বাসা খালি। বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে আনন্দ উৎসব করছে। সকলের হাতে গ্লাস। কোমল পানি বা মদ এখানে বেশ জনপ্রিয়। সব অবাধে মুখে ঢেলে নিচ্ছে সেই সঙ্গে চলছে উদ্দাম নাচ। হৈমন্তীর অস্বস্তি হচ্ছে। জুলি ওর হাত ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে গেলো। আবির হয়তো এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। রোহান আগেই নাচতে নাচতে কোথায় একটা ভিড়ের মধ্যে মিশে গেছে তাঁর চিহ্ন পযর্ন্ত নেই। আবির চুপচাপ হৈমন্তীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মিউজিক চলছে। কথা বললে শোনা যাবে না। তাই ও আর অপেক্ষা করলো না। হৈমন্তীর হাত ধরে টেনে নিলো নিজের বুকের সঙ্গে। তারপর চিৎকার করে বলল,
> বাইরে চলো।
হৈমন্তীর হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু হলো না। শেষমেশ আবির ওকে কাঁধে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো। নাচ গানের ঝামেলায় কেউ ওদেরকে লক্ষ্য করলো না। হৈমন্তী চিৎকার চেচামেচি করছে দেখে আবির ওকে নামিয়ে দিয়ে ওর মুখে হাত দিয়ে আটকে রেখে বলল,
> পাগলামি করোনা না বউ। তোমার এভাবে চিৎকার করতে দখলে পুলিশ রেপিস্ট ভেবে আমাকে তুলে নিয়ে যাবে। তখন মান সম্মান সব শেষ। তুমি তো জানো আমি কতটা পবিত্র। এক বিছানায় ঘুমিয়েও আমি তোমাকে আজ অবধি কিছুই করিনি। ইনোসোন্ট আমি। বাচ্চাদের মতো।

আবির একদমে কথাগুলো বলে থামলো। হৈমন্তীর দম আটকে আসছে। লোকটা এক হাতে ওর মুখ চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে ওকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছে। হৈমন্তী খামটি দিচ্ছে তবুও লোকটা অনড়। হৈমন্তী এবার জোরে ধাক্কা দিলো। আবির ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই হৈমন্তী তেড়ে উঠে বলল,

> কে আপনি? আমাকে এভাবে তুলে এনেছেন কেনো। পুলিশ আর্মি কোথায় আপনারা আমাকে ডাকাতে ধরেছে।

>আমাকে চিনতে পারছো না? রঙিন দুনিয়ায় এসে বরকে ভুলে গেলে? আসো চিনিয়ে দিচ্ছি।

আবির হৈমন্তীকে নিজের বুকের সঙ্গে শক্ত করে ধরে
বলল,

> এবার চিনতে পারছো? সরি হৈমী খুব সরি। ওইদিন আমি বাধ্য হয়ে তোমাকে ওরকম ভাবে চিঠি লিখেছিলাম। বারবার ফুঁপা হুমকি দিতেছিল। তোমাকে যেভাবেই হোক তুলে নিয়ে যাবে। আমার যাইহোক মারা গেলেও কষ্ট হবে না। কিন্তু তোমার কিছু হলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পেতাম না।

হৈমন্তীর রাগ হলো সেই সঙ্গে কান্না পাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে মনের মধ্যে যতরাগ ছিল সবটা কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে। এভাবে কাঁদলে বেশিক্ষণ রাগ থাকবে না ভেবে নিজেকে আবিরের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

> আপনি খুব খারাপ মানুষ। কিছু হলেই বলেন আমাকে ভালোবাসেন না। আমি আপনার বয়সের অনেক ছোট। উপযুক্ত না। আমার কষ্ট হয় না? আপনি আমাকে জীবনেও আর চিঠি লিখবেন না। দুবার চিঠি লিখেছেন। একটা পড়েই আমার এই অবস্থা আরেকটা না জানি কি লেখা আছে। আপনি পাষাণ। আমাকে আপনি স্ত্রী হিসেবে মানেন না। আমিও আর মানবো না।
হৈমন্তী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আবির আবারও ওকে দুহাতে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
> বললাম তো সরি। হৈমী তখন আমি নিরুপায় ছিলাম। অজস্র যন্ত্রণা নিয়ে তোমার কাছে ছুটে এসেছি। তুমি জানো ওরা আমাকে কিভাবে পিটিয়েছে? রুমে চলো শার্ট খুলে দেখালে বুঝবে। ভেবেছিলাম তোমার কাছে হয়তো আর আসা হবে না। সৃষ্টিকর্তা সহায় ছিল তাই এসেছি। কোথায় অসুস্থ বরের সেবা করবা তানা আমাকে দোষারোপ করছো?

আবিরের আক্ষেপ শুনে হৈমন্তীর খেয়াল হলো আবিরের শরীর গরম। ও দ্রুত হাতটা আবিরের কপালে রেখে বলল,
> এতো অনেক জ্বর। বাসাই যেতে হবে। আপনি এই অবস্থায় এসেছেন। একটা দিন অপেক্ষা করা যেতেনা। আমাকে মেরে ফেলার ধান্দা করছেন। ভাবছেন আপনার জন্য চিন্তা করতে করতে আমি হার্ট এটাক করি। তখন আবার বিয়ে করবেন।
হৈমন্তী উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। আবির হাতের বাধনটা আরও শক্ত করে বলল,
> খুন করতেই তো চাই তোমাকে একদম প্রাণে মারতে চাই। কিন্তু তুমি তো ধরা দিচ্ছ না।

হৈমন্তী নিজকে ছাড়িয়ে নিলো। চারদিকে লোকজন যাওয়া আসা করছে। যদিও কেউ ওদের দিকে খুব একটা দেখছে না তবুও হৈমন্তীর বেশ লজ্জা লাগছে। এতক্ষণ রাগ ছিল তাই কি বলেছে বা করেছে মাথায় ছিল না। আবিরের প্রচণ্ড মাথায় যন্ত্রণা করছে চোখ বন্ধ করতে মন চাইছে কিন্তু হৈমীর জন্য ওকে আসতে হলো। ও দ্রুত হৈমন্তীর হাত ধরে একটা উবারে উঠে গেলো। ওদের পাঁচ মিনিট লাগলো বাসাই পৌঁছাতে। কলিংবেল বাজানো লাগলো না। আবেদা মির্জা দরজা খুঁলে বসে আছেন। সঙ্গে উনার স্বামী। দুজনকে এক সঙ্গে দেখে আবেদা মির্জা বিরক্তি নিয়ে বললেন,

> তোমাদের দুজনকেই আজ আচ্ছা করে ধোলাই হবে। সত্যিটা গোপন করেছো কেনো? আমরা বুঝতে পারিনি। মাসুদ না বললে তো জানতেও পারতাম না। আর হৈমী রাগ হয়েছে বলে আমাদের জামাই আদর করা থেকে বঞ্চিত করবে? ছেলেটা মির্জা বাড়ির ছোট জামাই। কতটা আদরের তুমি জানো?কত ভালো একটা ছেলে আমাদের জামাই।
হৈমন্তী মলিন হাসলো ফুপির কথা শুনে। আবেদা মির্জা অতিরিক্ত কথা বলেন এটা উনার মুদ্রা দোষ বলা যায়। একাকি থাকতে থাকতে নিজে নিজেই বকবক করা শিখেছে। হৈমন্তীকে উদ্ধারের জন্য আবির বলল,
> ম‍্যাম ভেবেছিলাম আমি নিজেই বলবো কিন্তু সুযোগ হয়নি। তাছাড়া আমি জুলিকে বলছিলাম কিন্তু ও আপনাকে বলেনি।
আবির ইচ্ছে করে জুলিকে ফাঁসিয়ে দিলো। ওকে সাহায্য করেনি এটা ও এমনি এমনি ছেড়ে দিবে? কখনও না। বউ তো ওর নিজে থেকেই পটে গেছে। আবিরের ধ‍্যান ভাঙলো আবেদা মির্জার কথা শুনে,
> কি ম‍্যাম ম‍্যাম বলছো? ফুপি আম্মা বলবে। আমার ভাইজানের জামাই তুমি। হৈমী আমার মেয়ের চাইতে কম কিসে। তোমরা আমার নিজের মানুষ। আমার আপনজন। রুমে যাও।
হৈমন্তী অনুমতি পেয়ে আর দাঁড়ালো না আবিরকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আবিরকে বিছানায় রেখে বাইরের বের হতে গেলো চিন্তা আবির দিলো না। ঝট করে হৈমন্তীর হাতটা টেনে নিয়ে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে কপালে ওষ্ঠদ্বয় রাখলো। হৈমন্তী চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আবিরের গরম নিশ্বাস পড়ছে ওর সারা মুখজুড়ে। হৈমীর শরীর মৃদু কাপছে। আবির ওকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> বউ সত্যিই তোমাকে আজ খুন করতে মন চাইছে।
হৈমন্তী ঝট করে চোখ খুঁলে ফেলল। লোকটা ওকে খুন করবে কি ভয়ানক কথা। ও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু হলো না। আবির দুপায়ে হৈমন্তীকে আটকে ধরেছে। হৈমী ইচ্ছা করলেও নিছেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পারবে না। হৈমন্তীর ছটফট করা দেখে আবির ধমক দিলো,
> যতদিন এখানে আছি সব সময় আমার সঙ্গে চিপকে থাকবা। পরে আর সুযোগ পাবা না। কয়েক বছরের যত আদর ভালোবাসা আছে তিন মাসে পূর্ণ করতে চাই।
হৈমন্তীর বুঝতে পারলো না আবিরের কথা। সুযোগ পাবে না মানে? হৈমন্তী কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> সুযোগ পাবো না কেনো? কোথায় যাবেন আপনি? আমরা এক সঙ্গে ফিরবো না?
> ওসব ছেড়ে আমার দিকে নজর দাও। বউয়ের চিন্তাই চিন্তাই আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি তোমার নজর কোথায়? চশমা লাগবে আমাকে দেখতে?
> সব সময় এসব আজেবাজে চিন্তা কেনো করেন আপনি? লজ্জা টজ্জা নেই না?
> আমি ডাক্তার মানুষ।লজ্জা শরম আগে থেকেই কম ছিল তোমার প্রমে পড়ার পরে আরও কমে গেছে। তাছাড়া লজ্জা তুমি পাবে আমি কেনো পাবো?

>শুয়ে পড়ুন মাথায় পানি দেওয়া দরকার। আমি খাবার আর ওষুধ নিয়ে আসছি।
হৈমন্তী যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আবির বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে হৈমন্তীকে বিছানায় তুলে দরজা বন্ধ করে দিলো। হৈমন্তী উঠতে চাইলে পারলো না তার আগেই ও কম্বালটা গায়ে নিয়ে হৈমন্তীকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে বলল,
> খাওয়া দাওয়া বহুত হয়েছে আর না। আমি ঠিক নেই। উন্মাদ অসুস্থ যাই বলো আমাকে সুস্থ করা তোমার দায়িত্ব। ভালোভাবে দ্বায়ীত্বটা পালন করো। আর ঘুমাও।

☆☆☆
মাঝরাতে কেক কাটার পরে হঠাৎ রোহানের মনে হলো হৈমন্তীকে ও দেখছে না। জুলি নায়রা ড্রিংকস করে ঢুলছে। ওর মেজাজ খারাপ হলো এই দুটো মেয়ের উপরে। কি দরকার ছিল এসব খাওয়ার। ও বিরক্ত নিয়ে জুলিকে বলল,
> হৈমন্তী কোথায়? তোর কাছে ছিল তাহলে এখন কোথায়?
জুলি ঢুলুঢুলু চোখে বলল,
> ওকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। বরের সঙ্গে মাস্তি করছে। ওদের একটু সময় দাও। খুব কিউট জুটি।
রোহান বুঝতে পারলো এই মেয়ে ড্রিংকস করে ভুলভাল বকছে তাই আর ঘাটালো না। দ্রত ওদেরকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসল। অনেক রাত হওয়ার জন্য কাউকে ডাকতে পারলো না। শুধু শুনলো হৈমন্তী ফিরেছে। তাই যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
_______________
রাজীব ভয়াবহ এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। সত্যি সত্যি দলের ছেলেদের দিয়ে জাফরকে তুলে এনেছে। চয়নিকার মেজাজ খারাপ ছিল আরও খারাপ হলো। ছেলেটাকে সোফায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। ওর জন্য চয়নিকা নাস্তার ব‍্যবস্থা করছে। রাজীব তীক্ষ্ম নজরে তা দেখছে। এখানে ছেলেটাকে আনা হতো না। ওক সোজাসুজি মফস্বলে পাঠিয়ে দেওেয়া হতো কিন্তু চয়নিকা সবটা শুনে নিয়ে রাজীবকে হুমকি দিয়ে ওকে এখানে আনিয়েছে। চয়নিকা নাস্তার ট্রে ছেলেটার সামনে রেখে খুব বিনীতভাবে বলল,
> জাফর ভাই কিছু মনে করবেন না। আসলে আপনার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই মন্ত্রী সাহেবকে বলেছিলাম। আর উনি আপনাকে ধরে এনেছে। খুব ভালোবাসে কিনা।
চয়নিকার চোখেমুখে লজ্জা। রাজীবের ভ্রু কুচকে গেলো। বউ তাঁর বাইরের লোকের সামনে এতো লজ্জা পাচ্ছে কেনো কেন জানে, বিরক্তিকর। ওর সহ‍্য হলো না। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> দেখা শেষ ওকে আমি বিয়ে দিব তাই ধরে এনেছি। মেয়ে ঠিকঠাক আছে। আমার লোকজন অপেক্ষা করছে।
জাফর পানি মুখে নিয়েছিল হঠাৎ রাজীবের কথা শুনে নাকেমুখে উঠে গেলো। অবস্থা খারাপ। চয়নিকা দ্রুত ওর মাথায় হাত দিয়ে থাবা দিতে গেলো রাজীব ওর হাত ধরে নিজেই শক্ত হাতে ইচ্ছে করে জোরে দুটো থাবা দিয়ে বলল,
> দেখে শুনে খাবে না? দ্রুত খাওয়া শেষ করো। পাত্রী নিয়ে চিন্তা নেই। তোমার উপযুক্ত।
জাফর সাহেবের মুখটা এবার দেখার মতো হয়েছে। ছেড়ে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। তাছাড়া বাড়িতে বউ বাচ্চা রেখে ও আবার বিয়ে করবে কোন দুঃখে? এসব এমপি মন্ত্রীদের উপরে ওর বিশ্বাস নেই। যদি সত্যি সত্য বিয়ে করিয়ে দেয় তাহলে কি হবে? বউটা শান্ত হলেও দজ্জাল শাশুড়ি যে ওকে ঝাড়ু পিটা করবে। বড় মেয়েটা সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে। এই বয়সে বিয়ের কথা ও কল্পণাও করতে পারছে না। মান সম্মানের তোয়াক্কা না করে হুড়মুড় করে রাজীবের পা ধরে কেঁদে ফেলল। জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,
> বাড়িতে আমার বউ বাচ্চা আছে প্লিজ ভাই আমার এমন ক্ষতি করবেন না। ছেড়ে দিন। জানিনা আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি। চয়নিকা সরি ম‍্যামকে আমি বহুকাল আগে পছন্দ করতাম কিন্তু এখন আমি আমার বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে আছি। ভাই এমন সর্বনাশ করবেন না।
রাজীব হতভম্ব হয়ে গেলো জাফরের কথা শুনে। চয়নিকা ঠোঁট কামড়ে চোখ ঢেকে নিজেকে আড়ালে করার চেষ্টা করলো। কথায় কথায় চয়নিকা এই জাফরে নিয়ে বহুবার রাজীবকে খোঁটা দিয়েছে। রাজীব এবার বাধ্য হয়ে ওকে তুলে এনেছে। বউয়ের কথা শুনে যে কতবড় ভুল করেছে। এখন বুঝতে পারছে। একটু খোঁজ নেওয়া উচিৎ ছিল। এখন কিভাবে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ছেলেটাকে দুহাতে সোফায় উঠিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল,

> আরে করছোটা কি? আমি তো মজা করছিলাম। দুলাভাই হয়না তাই একটু মজা করলাম। তুমি দেখি সব বিশ্বাস করে নিয়েছো। চয়নিকা তুমি ওর খাবারের ব‍্যবস্থা করো যাও।তারপর রুমে এসো।তোমার হচ্ছে।

চয়নিকা চোখ বন্ধ করে ফেলল। রাজীব গটগট করে উপরে উঠে গেছে। জাফর ওকে যেতে দেখে আর এক মিনিটও অপেক্ষা করলো না। কোনরকম বিদায় নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো বাড়ির দিকে। গেটের কাছে অরিন আর আরাফাতের সঙ্গে লোকটার দেখা হলো। ভেতরে এসে আরাফাত জিঞ্জাসা করতেই চয়নিকা সবটা বলে দিলো। আরাফাত শব্দ করে হেঁসে উঠলো। ওর হাসি থামছেই না। মাসুদ থাকলে আরও ভালো হতো। পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে দিতো। আরাফাত মাসুদের জন্য অপেক্ষা করলো না। দ্রুত ওকে ফোন করে বলে দিলো। মাসুদ এমন একটা দৃশ্য দেখতে না পাওয়ার কষ্টে আফসোস করলো খুব। চয়নিকার লজ্জা করছে। ও রাজীবকে খেপাতে এসব মিথ্যা বলেছে। ভেবেছিল রাজীব খুব জ্বলবে আর ফুলবে এভাবে ও ধরা খেয়ে যাবে বুঝতে পারেনি।।
☆☆☆☆☆☆☆
দেরি করে ঘুম ভাঙলো হৈমন্তীর। হামি ছেড়ে চোখ বন্ধ করেই বিছানায় হাত রাখলো। ওর হাত শূন্য বিছানায় আছড়ে পড়লো।আবির নেই। হৈমন্তী দ্রুত উঠে বসলো। লোকটা কোথায় গেলো কথাটা ভেবে বিছানা থেকে নামতে গেলো তার আগেই আবির বাথরুমে থেকে বেরিয়ে এসে ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> শুভ সকাল।
> শুভ সকাল। কোথায় ছিলেন আপনি? ভেবেছিলাম চলে গেছেন। ভয় পেয়ে গেছি।
আবির মিষ্টি করে হেসে ফোন হাতে নিয়ে বলল,
> তুমি দিনদিন বর পাগল হয়ে যাচ্ছো হৈমী। চোখে হারাচ্ছো। আমি যেখানেই যায় তোমাকে না বলে যাবো না। যদি চিরতরেও হারাই তবুও তোমাকে বলবো বুঝলে?
হৈমন্তী দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আবিরের ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
>হারিয়ে যায় পালিয়ে যায় কিসব বলছেন কাল থেকে? মাথায় কোনো প্লান থাকলে ঝেড়ে কাশুন। তিনবার ক্ষমা করেছি এবার কিন্তু করবো না। মনের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিব।
আবির দুহাতে হৈমীর কোমর জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা আমরা না চাইতেও করতে হয় হৈমী। বউ হচ্ছো কিন্তু বড় হচ্ছো না কেনো? বাদ দাও। ক্ষুধা পেয়েছে গতকাল খেতে দিলে না। বরের এভাবে সেবা করছো তুমি?

হৈমন্তীর রাগ হলো। ফাজিল লোকটা ওকে বাধা দিয়ে এখন নিজেই খোটা দিচ্ছে। হৈমন্তী ওর কথা জীবনে আর শুনবে না। জোরপূর্বক নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। আবির ফোন হাতে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। পরিচিত কয়েকজন বন্ধু আছে এখানে। ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। হৈমন্তীর জন্য হলেও করতে হবে।
রোহান হৈমন্তীর জন্য আজ দ্রুত ঘুম থেকে উঠেছে। নয়তো বেশ লেট করে উঠে। হৈমী কোথায় আছে ভাবতে ভাবতে ডাইনিং রুমে এসে চোখ গোলগোল করে ফেলল। হৈমন্তী আবিরের পাশে বসে ওকে খাবার সার্ভ করছে। এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টা ওর হজম হলো না। হৈমন্তী কেনো এই বাইরের ছেলেটার খাবার এগিয়ে দিবে যত্ন করবে। ওর সহ‍‍্য হচ্ছে না। তাছাড়া এতগুলো মানুষ সব স্বাভাবিকভাবে কিভাবে এসব দেখছে। রোহান খাবার টেবিলে শব্দ করে বসে পড়লো। থমথমে মুখ করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> হৈমন্তী তুমি গতকাল একা কেনো আসলে য‍দি বিপদ হতো? তোমার দেখছি বাইরের মানুষের উপরে খুব দরদ আর ভরসা।
আবির বুঝতে পারলো ওকে খোচা দিয়ে হৈমন্তীকে বলা হয়েছে। এই রোহানের চালচলন একদম ওর ভালো লাগছে না। হৈমন্তীকে যে পছন্দ করে এটা নিশ্চিত কিন্তু যখন শুনবে ও বাইরের কেউ না তখন কেমন হবে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here