#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৬
পুরো এক ঘন্টা চিৎকার চেচামেচি করে থামলো হৈমন্তী। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অচেনা রুমে আবিস্কার করার পর থেকেই এমন চিৎকার জুড়ছে। দরজার কাছে কাজের মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। হৈমন্তীর বহুবার উঠার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারছে না। পা মনে হচ্ছে পাথর হয়ে গেছে। নড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। সামান্য হাড় চোটে গেছে এতেই এমন অবস্থা ভেঙে ঙেলে না জানি কি অবস্থা হতো। লোকটা ওকে না জানিয়ে কোথায় একটা নিয়ে এসেছে বিষয়টা ভেবে ওর মনে মনে প্রচুর ভয় করছে। হাতের কাছে ফোনটা নেই। কি একটা বাজে অবস্থা। এদিকে হৈমন্তীর চিৎকারে কাজের মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে আবির বাড়িতে প্রবেশ করলো। ওকে দেখে কাজের মেয়েটা মাথা নিচু করে বাইরে বেরিয়ে গেলো। আবির ভ্রু কুচকে হৈমন্তীর দিকে তাঁকিয়ে আছে। ওকে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে হৈমী দুবার ঢোক গিলে বলল,
> কোথায় ছিলেন আপনি?
আবির দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,
> বরকে খুব মিস করছিলে বুঝি? আহারে কি মিষ্টি কি মিষ্টি বউ আমার।
হৈমন্তী আগেই রেগে ছিল আবিরের কথা শুনে জ্বলে উঠলো,
> আপনি ভয়ানক খারাপ মানুষ। আমাকে কোথায় এনেছেন? ভাইয়া মিথ্যা বলেনি কাজীরা সত্যি ডাকাত।
আবির উত্তর দিলো না। বাইরে চলে গেলো। ফিরলো খাবারের প্লেট নিয়ে। হৈমন্তী লোকটার কাজকর্ম দেখছে। আবির ওর সামনে বসে বলল,
> এটা তোমার বরের বাড়ি। কতকাল আর পরের বাড়িতে থাকবে। তোমার একটা কৃতকর্মের ফল খুব দ্রুত পেতে চলেছো।তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠো। এভাবে আর কতকাল বরের হাতে খাবে? বরকেও একটু সেবাযত্ন করো। আমারও তো ইচ্ছে টিচ্ছে আছে নাকি?
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে রেগে গিয়ে বলল,
> একদিন একটু বাজে চিকিৎসা করে খোঁটা দিচ্ছেন? খুলে নিন আপনার ব্যান্ডেজ। ভাইয়া ঠিক বলে পরিবারের চাইতে আপনার কেউ হয়না। কোন কৃতকর্মের কথা বলেছেন শুনি?
আবির খাপছাড়া ভাবে বলল,
> কিছুক্ষণ পরেই তোমার শশুর শাশুড়িরা এখানে হামলা দিচ্ছে। বরের সেবাযত্নের খামতি ছিল এবার ষোলো কলা পূর্ণ হবে। আল্লাদ করা ঘুচবে এবার।
হৈমন্তী ভয়ে কুকড়ে গেলো। কাজী বাড়ির লোকজনদের কাজকর্ম সম্পর্কে টুকটাক ভাইয়ের থেকে শুনেছিল। লোকগুলো স্বার্থের জন্য কি না পারে। হৈমন্তীর শুধু ভাইদের কথা ভেবেই কান্না পাচ্ছে। এরা ওকে আটকে রেখে ভাইদের দিয়ে কি কি করবে আল্লাহ ভালো জানে। আবির ওকে ভয় পেতে দেখে বলল,
> এলিডি বাল্বের মতো নিভে গিয়ে কাজ নেই। স্ত্রী লোকের বুদ্ধি ভয়ঙ্কর হয় এটা আগেই জানতাম আবারও প্রমাণ পেলাম। যাইহোক আমার হাতে খাবে নাকি আম্মার আসলে খাবে?
হৈমন্তী কিছু বললো না চুপচাপ খেয়ে নিলো। এখন ঝগড়া ঝামেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এদের মন মতো চলাফেরা করতে হবে। ত্যাড়ামি করা বোকামি। হৈমন্তীকে চুপচাপ খেতে দেখে আবির মলিন হাসলো। মেয়েটার মাথায় এখন কি চলছে ও সামান্য হলেও বুঝতে পারছে। হৈমন্তীর খাওয়া শেষ হলো না কলিংবেল বেজে উঠলো। আবির দাঁত বের করে বলল,
> এসে গেছে।
হৈমন্তী দ্রুত মাথায় ওড়না দিয়ে ঠিকঠাক আছে কিনা চেক করে নিল। আবির বাইরে চলে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হৈচৈ করে এক ঘর মানুষ হৈমন্তীর রুমে ঢুকে পড়লো। হৈমন্তীর অবাক চোখে সবাইকে দেখছে। ওর শাশুড়ি আসমা বেগম বউমাকে জড়িয়ে ধরে এক ঘর কেঁদে নিলেন। হৈমন্তীর চারপাশে মেয়েরা এসে ঘিরে বসে পড়েছে। সবাই নানারকম প্রশ্ন করছে হৈমন্তী শুধু হু হ্যাঁ করছে। হৈমন্তীর শাশুড়ি তাড়াতাড়ি গিয়ে ভাত নিয়ে হাজির হলেন। হৈমন্তী খাবেনা বলতে পারলো না। খেতে হলো। ও খেয়াল করলো ভদ্রমহিলা নিজে হাতে ওকে খাওয়াতে কতোই না তৃপ্তি পাচ্ছে। কিন্তু ওর অবস্থা বেশ খারাপ। কিছুক্ষণ আগেই খেয়েছে। বাইরে আবিরের সঙ্গে ওর চাচার তর্কাতর্কি চলছে। ভেতরে ছেলেরা আসেনি কিন্তু বাইরে থেকে খোঁজখবর নিচ্ছে।
☆☆
আবির সবাইকে নিয়ে ডাইনিং রুমে বসে আছে। আনোয়ার কাজী ছেলের উপরে বিরক্ত। এটা নিজের ছেলে কিনা উনার কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে। দেলোয়ার মির্জা সঙ্গে করে একদল লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসেছে যারা বাড়ির গেটের সামনে পাহারা দিবে। আবির প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে। ওর বাড়িতে কোনো দারোয়ান পর্যন্ত নেই সেখানে একদল লাঠিয়াল বাহিনী। এই বিশাল হাতির খোরাক জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হবে। তিনবেলা রান্নাবান্না করে খাওয়ানো কতটা ঝামেলার বিষয়টা কেউ বুঝতে চেষ্টায় করছে না। আবিরের ঝাড়ি দিয়ে বলল,
> তোমাদের এই হাতি বাহিনী নিয়ে কখন বিদায় হবে? আব্বা আমি কিন্তু ওদের অকারণে খাওয়াতে পারবো না। খানা বাড়িতে পরিণত করতে চাইছো আমার বাড়িটা?
আনোয়ার কাজী চটে গিয়ে ভাইকে নালিশ করলেন,
> ভাইজান শুনলেন ওর কথা? আপনি যায় বলুন এই ছেলে আমার না। কাজীরা কখনও এরকম কিপটেমি করেছে জীবনে?
দেলোয়ার কাজী ভাইকে ইশারা করে থামতে বলে আবিরকে বলল,
> বাপ এটা তুমি কি বলছো? লাঠিয়াল বাহিনী না থাকলে লোকজন বুঝতে পারবে কেমনে তুমি কোন বাড়ির ছেলে? তাছাড়া আমাদের বউমাকে নিয়ে আমাদের একটা ভয় আছে না? শোনো মির্জাদের কিন্তু কিছুতেই এই বাড়ির আশেপাশে ভিড়তে দেওয়া চলবে না। তুমি চিন্তা করোনা। হাসপাতাল আছে না তোমার? নিশ্চিতে কাজকর্ম করো।।
আবির গটগট করে উঠে আসলো। এদের মানা করে লাভ হবে না। যা বলেছে তাই করবে। রফিক বাইরে লাঠিয়ালদের সঙ্গে পরামর্শ করছে। এই বাড়ির আশেপাশে সন্দেহভাজন কাউকে পেলে পিটিয়ে তক্তা বানানো হবে। আবির শুনতে শুনতে বেরিয়ে গেলো। বাড়িতে থাকলেই যখন তখন ঝগড়া লেগে যাবে। বাপ চাচাকে ছোট থেকেই দেখে আসছে। এদের দাপটে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। মানুষকে দেখানোর জন্য এরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
অন্যদিকে হৈমন্তীর বিস্মিত হয়ে চেয়ে আছে শাশুড়ির দিকে। আসমা বেগম পরম মমতার সহিত হৈমন্তীর মাথায় পানি দিচ্ছেন আর এটা ওটা বুঝিয়ে বলছেন। হৈমন্তী চুপচাপ শুনছে। বাড়িটা গমগম করছে মানুষে। হৈমন্তীর ভয়টা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এরা আর যাইহোক ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে না। বরং খুব খেয়াল রাখছে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত সেবাযত্ন তো অত্যাচরের শামিম। হৈমন্তীর বেশ খারাপ লাগছে। তখন যদি ভাইয়াকে না বলতো তাহলে এই পরিস্থিতি তৈরী হতো না। হৈমন্তীর ধ্যান ভাঙলো শাশুড়ির কথা শুনে,
> মা হৈমী আমি তোমাকে দারুন দারুন রান্না শিখিয়ে দিব। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও। বরকে হাত করতে হলে কিন্তু রান্না জানাটা খুব জরুরী।
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে ফেলে। ওর রান্নাবান্নার তেমন ধারণা নেই । টুকটাক পারে। বাড়িতে এতগুলো মানুষ আছে ওকে কখনও রান্নাঘরে দরকার পড়েনি। খুব সখের বসে কিছু রান্না শিখেছিল। সেগুলো শুধু ভাইদের জন্য।
___________________
নব গঠিত দোতলা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরাফাত। ওর বাবা খলিল মির্জ অনেক বছর পূর্বে বেশ সস্তা দামে এই জমিটা কিনেছিলেন। এক বছর আগে থেকে বাড়ির কাজকর্ম শুরু হয়েছে। প্রায় শেষের কাছাকাছি। আরাফাত সব চেক করে নিলো। খুব দ্রুত আসবাবপত্র কিনে বাড়িতে এসে উঠবে। রাজীব ঢাকায় আসার জন্য বারবার শুনছে। আরাফাত মানা করছে। দরকার পড়লে খবর পাঠাবে। এখানে এসে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আরাফাত কথাগুলো ভেবে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে গাড়িতে গিয়ে বসলো। এলোমেলো লাগছে। পুরাতন কষ্ট গুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কাজী বাড়িতে বোন আছে ভাবলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। গাড়ি চলছে শপিংমলের দিকে। কিছু দরকারি জিনিসপত্র লাগবে।বাসা থেকে আসার সময় কিছুই সঙ্গে আনা হয়নি। এক পোশাকে আর কতদিন ঘুরবে। আরাফাত মলের সামনে গাড়ি থামিয়ে ভেতরে চলে আসলো। টুকটাক কেনাকাটা শেষ করে যখন লিফটে উঠার জন্য হাত বাড়ালো ঠিক তখনই একটা মেয়ে ওর সাঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়লো। আরাফাত ভ্র কুচকে ফেলল। বিরক্ত হচ্ছে ওর চেহারাই তা প্রকাশ পাচ্ছে। আরাফাত মেয়েটার দিকে না তাঁকিয়েই পেছনে ঘুরে ফেলতে চাইলো তার আগেই মেয়েটা চিৎকার করে বলল,
> মিস্টার আরাফাত মির্জা সিউর?
আরাফাত ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাঁকিয়ে শক। মূহুর্তেই চোখ বন্ধ করে নিলো। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। কয়েক বছর আগে যাকে যত্ন সহকারে মাটির ঘরে নিজের হাতে রেখে এসেছিল সেই মেয়েটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সেই চোখমুখ নাক সব ঠিকঠাক শুধু হাসিটা একটু আলাদা। সেই মেয়েটা হাসতে জানতো না কিন্তু এই মেয়েটার মুখে হাসি লেগেই আছে। আরাফাতের ধ্যান ঙালো মেয়েটার কথা শুনে,
> আপনি ঠিক আছেন? আমাকে চিনতে পারছেন না? আরে আমি আপনার বোনের ননদ। ভাবিকে আনতে না আপনি গিয়েছিলেন মনে নেই?
আরাফাত বুঝতে পারলো না কিছুই। কাকে আনতে কোথায় গিয়েছিল সব গুলিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এই মেয়েকে নিকটবর্তী কোথাও দেখেনি। আরাফাত জোর করে মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> তোমার মানে আপনার নাম কী? আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না।
> আমি অরিন,কাজী বাড়ির সর্বকনিষ্ঠ বেটি। দেলোয়ার কাজীর মেয়ে। আবির ভাইয়ার বিয়ের পরদিন না আপনি গিয়ে ঝামেলা করলেন মনে নেই?
মেয়েটার শেষের কথায় আরাফাতের মেজাজ খারাপ হলো। মেয়েটা সোজাসুজি ওকে দোষারোপ করছে। কাজীদেরবাড়ির একজনকেও ওর পছন্দ না। যাকে পছন্দ করতো ওই নর পিশাচের দল তাকে খুন করেছে। তবুও এই মেয়েটার উপরে আরাফাত রাগ দেখাতে পারলো না। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। এখুনি চলে যাওয়া উচিত মনে হলো। কিন্তু দুজনেই লিফটের মধ্যে। খুব দ্রুতই লিফটের দরজা খুলে গেলো। আরাফাত চুপচাপ দ্রুতগতিতে বেরিয়ে পড়লো কিন্তু মেয়েটা ওর পিছু পিছু ছুঁটতে শুরু করলো। আরাফাত হুট করে দাঁড়িয়ে পড়তেই মেয়েটা থেমে গিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
> দেখতে একটু সুদর্শন বলে একটা মেয়েকে এভাবে ইগনোর করবেন? আমি আপনার আত্মীয় সেই সঙ্গে একটা মেয়ে। আপনার কি উচিত হচ্ছে আমার সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করা?
আরাফাত গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> আপনার সমস্যা কি ঠিক বুঝতে পারলাম না? আপনি কি আমাকে বোকা পেয়েছেন?কাজীদের সঙ্গে আমাদের কামড়াকামড়ির সম্পর্কে আপনি আত্মীয়তা বলছেন?
> দূর এসব বেশিদিন থাকবে না। সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। আপনি একটা কাজ করেন কাজীদের বাড়ির একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলুন। তাহলে দেখবেন ভয়ে ভয়ে উভয়ই ভালো হয়ে যাবে।
আরাফাতের গলা আটকে গেলো মেয়েটার কথা শুনে। ও কয়েকবার কেশে ফেলল।এই মেয়ের মাথায় যে সমস্যা আছে বুঝতে ওর বাকী নেই। আরাফাত দ্রুতগতিতে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো। অরিন ওর নাগাল পাওয়ার আগেই গাড়ি ছেলে ছেলেটা হাওয়া। আরাফাত বিড়বিড় করে বলল, “কাজীদের মাথায় ছিট আছে। পাবনা ফেরত লোকজন। ”
☆☆
মুখ ভার করে শুয়ে আছে হৈমন্তী। আবির সোফায় বসে ল্যাপটপে মুখ গুজে কিছু একটা করছে। সারাদিনব্যাপী হৈমন্তী খাওয়ার উপরেই ছিল। কোনো সময় একাকি থাকার কোনো উপাই নেই। হৈমন্তী মন খারাপ করে বলল,
> মিস্টার ডাকাত ডাক্তার আমি বাড়িতে যাবো। আপনি প্লিজ পা থেকে এসব খুলে দিন। দেখুন আমি কেমন সুস্থ হয়ে গেছি। শাশুড়ি আম্মা ছাড়া এই বাড়ির সবগুলোতো পাগল। এদের চিকিৎসা করা দরকার। আপনি আমাকে ছেড়ে ওদেরকে দেখুন।
আবির ওর কথা শুনে মুখে তুলে বলল,
> ঘুমিয়ে যাও আমি কাজ করছি। বিরক্ত করবে না।
হৈমন্তীর মেজাজ খারাপ হলো। ও কত ভালো করে লোকটার সঙ্গে কথা বলল আর লোকটা ওকে অপমান করলো। হৈমন্তী কিছুইতে সহ্য করবে না। কথাটা ভেবেই হৈমন্তীর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো। আর সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার দিয়ে বললে উঠলো,
> আম্মা আম্মা কোথায় আপনি? আমি আপনার কাছে যাবো। এই লোকটার কাছে থাকবো না আম্মা।
আবির ওর চিৎকার শুনে দ্রুত ছুটে এসে ওর মুখ ধরলো। ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,
> আরে আমাকে ডোবাবে নাকি? বাড়ি ভর্তি লোকজন। মান সম্মান নিয়ে টানাটানি করছো কেনো?
হৈমন্তী উত্তর দিয়ে পারলো না।মুখ থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু আবির কিছুতেই ছাড়লো না। এই মেয়েকে ওর বিশ্বাস নেই। আবারও চেচামেচি করবে। কিন্তু যা সর্বনাশা হওয়ার আগেই হয়ে গেছে। বাইরে থেকে আওয়াজ হচ্ছে দরজা ধাক্কানোর। আবির রাগী দৃষ্টিতে হৈমন্তীর দিকে তাকিয়ে হুমকি দিল,
> উল্টাপাল্টা কথা বললে কিন্তু খুন করে ফেলবো। ছুরি আর বস্তা রেডি আছে।
আবির কাথাটা বলে দরজা গিয়ে খুঁলে দিলো। বাড়ির অর্ধেক মহিলা দরজার ওপাশে কান লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলতে দেরী হলো কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতে কারো দেরী হলো না।
হৈমন্তী হাপাতে হাপাতে শাশুড়ির হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> আম্মা আমি আপনার সঙ্গে ঘুমাবো। আমি না আপনার মেয়ের মতো?
আসমা বেগম কি বুঝলেন বোঝা গেলো না শুধু গম্ভীর হয়ে আবিরকে বললেন,
> তুমি রফিকের সঙ্গে গিয়ে ঘুমাও। আমি আজ থেকে এখানেই ঘুমাবো। মেয়েটা যতদিন সুস্থ না হচ্ছে ওকে তোমার সঙ্গে রাখা ঠিক হবে না। বাচ্চা মেয়ে।
আবির দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,
> বাচ্চা না ছাই দুদিন পরে বাচ্চার মা হয়ে যাবে। পেটে পেটে শয়তানি বুদ্ধির কারখানা।
আবিরের ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। হৈমন্তী মোটামুটি খুশী। লোকটা সামনে থাকলেই ঝগড়া ঝামেলা পিচু ছাড়ে না। ছেলেদের এমন কূটনীতিক বুদ্ধি মানাই না। আসম বেগম হৈমন্তীর পাশে শুয়ে পড়লেন বাকিরা ফিরে গেলো।
☆☆☆
রফিক একমনে ভিডিও দেখছে। ভোজপুরি গানে অশালীন পোশাকে একটা মেয়ে দাপাদাপি করে নাচছে। রফিকের চোখ দুটো চকচক করছে। রুমের লাইট বন্ধ করা। ডিম লাইটের লাল সবুজ আলো জ্বলছে। দরজা খোলা ছিল আবির চুপচাপ ভেতরে এসে রফিকের ফোনের দিকে উঁকি দিয়ে দৃশ্যটা দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে উচ্চারণ করল,
> নাউযুবিল্লাহ এসব কি রফিক?
রফিক চমকে উঠে ফোনটা হাত থেকে ফেলে দিলো।
ভিডিওটা অবিরাম চলছে। মেয়েটার নাচ থামার লক্ষণ নেই। আবির আগেই রেগে ছিল এবার আরও রেগে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছিস?দেশে গানের অভাব পড়েছে এসব দেখিস তুই? বন্ধ কর বেয়াদব।
রফিক দাঁত বের করে হেসে ফিসফিস করে বলল,
> ভাইয়া আসলে তুমি যতটা খারাপ ভাবছো এটা ততটা খারাপ না। তুমি না ডাক্তার?
> আহাম্মক, ডাক্তার বলে কি আমি এসব দেখি? চাচাকে বলছি অপেক্ষা কর।
রফিক কাচুমাচু হয়ে বলল,
> আর দেখবো না বললাম তো। আজ থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনবো,প্রমিজ।
আবির কথা বাড়ালো না চুপচাপ ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। আজকের রাতটা এখানেই ঘুমাতে হবে। আবির মনে মনে হৈমন্তীকে আচ্ছা করে বকা দিয়ে দিল। মেয়েটার জন্যই ওকে এই অকর্মা রফিকের সঙ্গে ঘুমাতে হচ্ছে।
(চলবে)
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।